অদ্ভুত_নেশা,পর্ব_০৬
অধির_রায়
ছোঁয়া সকাল বেলা নিজের রুমে এসেই ছোঁয়ার চোখ আকাশ পাণে৷
ছোঁয়ার সমস্ত রুমের জিনিস এখানে সেখানে ছড়ানো ছিটানো। কোন কিছুর আস্ত রাখেনি৷ ছোঁয়ার বুঝতে দেরি হলো না এটা কার কাজ। এ কাজ সালার ভুত অধির ছাড়া কেউ করতে পারে না৷
ছোঁয়া নিজের রুমে এসে নিজের জিনিস গুলো আগের মতো করে গুছিয়ে রাখে। যেন কেউ বুঝতে না পারে এখানে কিছু হয়েছে৷ এমনেই বিয়ে বাড়িতে অনেক চলে আসবে একটু পর৷
ছোঁয়া টেবিলের বই গুছতে গিয়ে একটা চিরকুট পায়৷ ছোঁয়া ভাবে চিরকুট টা পড়বে না৷ কিন্তু মন তো মানে না অবশেষে ছোঁয়া চিরকুটটা খোলেই ফেলল
প্রিয়তমা ❤
তুমি কিন্তু ভুল করতেছে৷ সে ভুলের কোন ক্ষমা হয় না৷ তুমি ভেবেছো তুমি তোমার মা বাবার সাথে ঘুম আসলে তুমি আমার কাছ থেকে মুক্তি পাবে। আমি তোমাকে কোনদিন মুক্তি দিব না৷ তুমি মিশে আছো আমার হৃদপিণ্ডে৷ তুমি আমার নিঃশ্বাস। তোমাকে ছাড়া আমি অচল৷ আমি যদি তোমাকে না পায় তাহলে তোমাকে কেউ পাবে না৷ আমি ওই ডাব্বুওয়ালা তপেসকে দেখে নিব৷
আমি জানি তপেস খুব ভালো ছেলে। তুমি তাকে বুঝিয়ে বললে সে ঠিক বুঝবে। কিন্তু তুমি তপেসকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে রাজি হবে না৷ ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই তপেসকে মেরে ফেলবো না৷ তপেসকে আমি বুঝিয়ে দিব। তোমার জীবন থেকে দূরে সরে যেতে। সে ঠিক তাই করবে৷
আর আমার কাছ থেকে দূরে থাকার শাস্তির জন্য অপেক্ষা কর।
ইতি
অধির🖤
ছোঁয়া চিরকুটটা দুই থেকে তিন বার পড়ে। সে তেমন কিছুই বুঝতে পারে না৷
ছোঁয়া ভাবতে পারছে না অধির তার কাছ থেকে কি চায়৷ সে কেন তার পিছনে পড়ে আছে।আমি একটা মানব। আর সে একটা ভুত। আমরা কোনদিন এক হতে পারব না৷ এই সামান্য কথাটা বুঝতে পারছে না কেন?
কেন সে আমার সাথে এমন করছে৷
ছোঁয়া এসব ভেবে যাচ্ছে। আর চোখ দিয়ে অনবরত জল ঝড়ে যাচ্ছে। চোখের জল মুছে।
— কেন আমার এত কাষ্ট হচ্ছে। এটা কি অধিরের জন্য। নাকি তপেসের জন্য৷ সে বলল তপেসকে মেরে ফেলবে না৷ আমি জানি অধির আমার সাথে যা কথা বলে তাই করে৷ এটা আমি নিশ্চিত যে অধির তপেসকে মারবে না৷ মনে মনে ছোঁয়া অন্য মনস্ক হয়ে ভাবতে থাকে।
১৪.
— কিরে ছোঁয়া এভাবে বসে বসে কার কথা ভাবছিস?রিয়া রুমে প্রবেশ করতে করতে বলে উঠে।
— কই কারো কথা ভাবি না৷ তুই কখন আসলি?
— অনেক আগেই এসেছি৷ কিন্তু আমি তোকে অনেক ক্ষণ থেকে লক্ষ্য করছি তুই কিছু একটা ভাবছিস তাই বিরক্ত করতে চায়নি৷ কিন্তু তুই যে এত ভাবছিস তোকে ডেকেও সাড়া পাচ্ছি না৷
— তুই আমাকে ডেকেছিস? কিছুটা অবাক হয়ে।
আমি এত ভাবনার মাঝে ঢুবে ছিলাম। কোনদিকে আমার মন ছিল না৷ আমার চিন্তার কারণ রিয়াকে বলা যাবে না৷ সে আমাকেই সামলাতে হবে।
— হ্যাঁ এত কার কথা ভাবছিস?
— আসলে তোদের কথাই ভাবছিলাম।
— আমাদের কথা কেন?
– আমার শুধু মনে হচ্ছে তোদের আমি চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলবো।
— আরে বোকা তোর আর আমার প্রতিদিন দেখা হবে ভার্সিটিতে।
— হুম হবে তো৷
— বাংলার পাঁচ করে মুখ কালো করে রাখলে তোকে ভালো লাগে না৷ প্লিজ এবার একটু হাসতে পারিস৷
–ছোঁয়া মুচকি হেঁসে চল আমরা ছাঁদে যায়।
তুই কিছুই জানিস না রিয়া৷ আমার জীবনে একটা বড় সত্য হলো যে আমি এখন আর ভার্জিন নয়৷ আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে একটা অতৃপ্ত আত্মা আমার সাথে সহবাসে লিপ্ত হয়েছে৷ জানলে তুই আমাকে হাসতে বলতে পারতি না৷ কিন্তু আমি নিরুপায় তোদের এসব কথা বলতে পারব না৷ পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস৷ সত্যি বলছি তোদের আমি খুব ভালোবাসি। তোদের ভালোবাসার জন্য আমি সব করতে পারি৷ তোদের বাঁচানোর জন্য অধিরকে মানা করতে পারি নি। মনে মনে ছোঁয়া কথাগুলো। কখন যে তার চোখে জল এসে পড়েছে ছোঁয়ার জানা নেই৷
— কি রে ছোঁয়া তুই কান্না করিস কেন?
— কই আমি কান্না করি৷
— আমাকে মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে তুই ভাবছিস আমি চোখের জল চিনি না৷
— আসলে চোখে কিছু একটা পড়েছে৷
— আবারও মিথ্যা কথা বলিস কেন?
— তুই এখন ছাঁদে যাবি এত প্রশ্ন করিস না তো?
— কথা কাটানোর চেষ্টা করবি না৷
— যখন তোর বিয়ে হবে তখন বুঝতে পারবি। এখন তোর বিয়ে না তাই তুই আমার কষ্ট বুঝতে পারছিস না৷
— হয়েছে তোর এত উপদেশ আমার কাছে আসবে না৷ আমি জানি তোর সাথে কোনদিন কথা বলে পারি নি আজও পারবো না৷
–
–
–
ছোঁয়া আর রিয়া ছাদেঁর রিলিং বেড়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদেরকে দূর থেকে চোখ বন্ধি করে রাখছে.
— রিয়া তোকে একজন দূর থেকে দেখছে।
— কে দেখছে?
— কেউ না।
— তাহলে তুই যে বললি।
— ওই দিকে তাকিয়ে দেখ কিছু বুঝতে পারিস কি না?
— কি বুঝবো?
— আগে তুই তাকিয়ে দেখ?
রিয়া ছোঁয়ার কথা মতো তার দেখানোর দিকে তাকিয়ে শকট। রিয়াকে চোখ বন্ধি করে রাখছে আর কেউ না সিদ্ধার্থ। রিয়াও সিদ্ধার্থের দিকে তাকিয়ে তার চোখে বন্ধি হয়ে যায়।
ছোঁয়া রিয়াকে হালকা করে ধাক্কা দিয়ে।
— কি করে কই হারিয়ে গেলি?
— কই হারিয়ে যাবো?
— আমি কিন্তু সব দেখে ফেলছি?
— কি দেখে ফেলছিস?
— তুই যেভাবে আমার দাদার দিকে তাকিয়ে ছিলি মনে হচ্ছে তুই আমার দাদাকে গিলে খাবি৷
— তোর দাদাকে আমি কেন গিলে খেতে যাবো৷ তোর দাদাই তো আমাকে দেখে যাচ্ছে।
— আর তুই?
— আমি মুটেও দেখি নি৷
— তাহলে এতক্ষণ কাকে দেখছিলি।
— আমি নীলাকাশ দেখছিলাম।
— তাহলে তুই নীলাকাশ দেখ আমি চললাম।
ছোঁয়া কিছুটা ক্ষেপে চলে যায়। রিয়ার পিছন পিছন চলে যেতে নেয়৷ ছাঁদের দ্বারের কাছে আসতেই সিদ্ধার্থ দ্বার আটকে দাঁড়ায়৷
— কোথায় যাও মহারানী?
— আপনি আমার পথ আটকালেন কেন?
— আমার মন আটকাতে বলেছে তাই আটকিয়েছি।
— আমার পথ ছাড়েন?
— না ছাড়বো না।
— আমি কিন্তু?
— কি করবে?
— দেখে যান৷
রিয়া সিদ্ধার্থের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমি কিন্তু আপনাকে?
— আমাকে,,সিদ্ধার্থ রিয়ার কোমরে হাত দিয়ে।
সিদ্ধার্থ রিয়ার কোমরে হাত দিতেই রিয়া কেঁপে উঠে। এই প্রথম কোন ছেলে রিয়ার এত কাছে এসেছে। রিয়ার বুকের ভিতর হার্ট বিট বেজে যাচ্ছে।দেহের রক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে। রক্তের সঞ্চালন বেড়ে যায়।
সিদ্ধার্থ রিয়ার এত কাছে যে রিয়া নিজেকে ছাড়াতে পারছে না৷ সিদ্ধার্থের গরম নিঃশ্বাস রিয়ার মুখের উপর পড়ছে। রিয়াও যেন একটা ঘুরে চলে যাচ্ছে। রিয়া কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।
১৫.
ছোঁয়া খুব খুশি রিয়াকে তার দাদাট কাছে রেখে এসেছে বলে। ছোঁয়া চোখের ইশারায় তার দাদাকে সব বলে দে৷ছোঁয়া তোর কোন জবাব নেই৷ ছোঁয়া নিজেকে নিয়ে এমন গর্ব করছে যেন ছোঁয়া মহাভারত জয় করে ফেলেছে।
ছোঁয়া খুশি মনে গান গেয়ে মনের সুখে নেচে নেচে নিচে নামছে। অন্য দিকে তপেস ছোঁয়ার সাথে দেখা করার জন্য ছাঁদে যাচ্ছে। তপেস ফোনে ফ্রী ফাইয়ার খেলতে খেলতে এগিয়ে যাচ্ছে। ছোঁয়া আবোল তাবোল গান বলে নিচে নামছে৷ হঠাৎ করেই ছোঁয়া আর তপেসের সংঘর্ষ লাগে৷ দু জনেই ছিটকে পড়ে যায়।ভাগ্য ভালো তারা কেউ সিঁড়িতে ধাক্কা খায়নি সিঁড়ি বাকে ধাক্কা লাগাতে তাদের জীবন এই যাত্রায় বেঁচে যায়৷ ভাবা যায় যদি তারা সিঁড়িতে ধাক্কা খেতে তাহলে দুজনের মাঝে একজন সিঁড়ি বেড়ে নিচে পড়ে যেত৷ যার ফলে অকাল মৃত্যু হতো।
ছোঁয়া চোখ বন্ধ করে,কোন সালা আমাকে ধাক্কা দিলি। তোর চোখ কি হাতে নিয়ে ঘুরিস? আল্লাহ আমার কোমরটা ঠিক রেখে। আমি এত সহজে হার মানবো না৷ প্লিজ তুমি আমার কোমর ঠিক রেখে।
কুত্তা, তুই কোনদিন বিয়ে করতে পারবি না৷ তোর বউ হবে কালাচাঁদ। তুই হবি উগান্ডা৷ সরি তুই বিয়েই করতে পারবি না৷
তপেস ছোঁয়ার এসব কথা শুনে কি বলবে তা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে৷ সে মেয়ে সব সময় সবাইকে সম্মান দিয়ে কথা বলত। আজ সেই মেয়ে কাউকে গালি দিচ্ছে৷ নাকি আমি স্বপ্ন দেখছি৷ (মনে মনে)
তপেস নিজের হাতে নিজেই চিমটি কাটে স্বপ্ন নাকি বাস্তব। হাতে ব্যথা পাওয়ায় সে বুঝতে পারে এটা বস্তব৷ তপেস আবুলের মতো করে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে আছে৷
ছোঁয়া এখন চোখ বন্ধ করে রেখেছে৷ তার সামনে কে দাঁড়িয়ে সে জানে না৷ সে একা একা বকেই যাচ্ছে। তপেস আপন মনে ছোঁয়ার ডিজিটাল গালি শুনে যাচ্ছে।
— ব আকার ল আমাকে তুল? ছোঁয়া হাত বাড়িয়ে দিয়ে।
তপেস ছোঁয়ার হাত ধরে ছোঁয়াকে দাঁড় করাই৷ ছোঁয়া পিন পিক করে চোখ খোলে৷ চোখ খোলেই তার চোখ কলকাতার রসে গোল্লায়। (ছোঁয়ার মেনে বেজে যাচ্ছে আমি কলকাতার রসে গোল্লা)
— কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
— আপনি এখানে কি করছেন? ন্যাকা সুরে বলে।
— তোমার পবিত্র গালি শুনতেছি।
— পবিত্র গালি কোনটা৷
— ব আকার ল।
ছোঁয়া জিহ্বায় কামড় দিয়ে মনে মনে আমি নিজের অজান্তেই কি না কি বলে ফেলেছি৷
— প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেন৷ আমি না জেনেই এসব বলে ফেলছি৷
— এভাবে নাচতে নাচতে আসছিলে কেন? কোম দিকে দৃষ্টি নাই কেন?
— আপনি যেহেতু আমাকে দেখেছেন সো সাইট দিতে পারতেন। তাহলে তো আমি আপনার সাথে ধাক্কা খেতাম না৷ আমার তো মনে হচ্ছে ধাক্কা খেয়ে পেট ভরে গেছে৷ আর খাবার খেতে হবে না৷
— কি বলছো আবুলের মতো?
— আবুল আপনার থেকে ভালো আছে। আমি চললাম৷
ছোঁয়া এক পা বাড়াতেই তপেস ছোঁয়াকে (রহস্য)
চলবে,,,