অদ্ভুত_নেশা,পর্ব_০৩
অধির_রায়
রাতে বেলা ছোঁয়া,সিদ্ধার্থ, রিয়া, তপেস রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে আইসক্রিম খেতে খেতে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ছোঁয়ার সাথে যা ঘটে তা দেখার জন্য তারা কেউ প্রস্তুত ছিল না৷
হঠাৎ মাঝ রাস্তায় ছোঁয়া শূন্যে ভাসতে থাকে। সিদ্ধার্থ, রিয়া,তপেস নিজেদের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না৷
— বাঁচাও বাঁচাও!(ছোঁয়া) প্লিজ দাদা আমাকে বাঁচাও
— ছোঁয়া তোর কিছু হতে দিব না। (সিদ্ধার্থ)
— তাদের সবাইকে এখান থেকে চলে যেত বল সুইটহার্ট ( অদ্ভুত লোকটি)
— না চলে যেতে বলবো না। (ছোঁয়া)
— তুমি তোমার দাদার মৃত্যু দেখতে চাও?(অদ্ভুত লোকটি)
— না!
— আমি যা বলছি তাই করো? (অদ্ভুত লোকটি)
–
–
–
–দাদা,রিয়া, তপেস তোমরা এখান থেকে চলে যাও৷ আমার কোন ক্ষতি হবে না।(ছোঁয়া)
— আমি তোকে এখানে এভাবে রেখে কিছুতেই যাবো না (সিদ্ধার্থ)
— আমার দিব্যি রইলো। তুই এখান থেকে চলে না গেলে আমার মৃত দেহ দেখতে পাবি। (ছোঁয়া)
ছোঁয়ার দিব্যির কথা ভেবে সকলে বাড়িতে ফিরে যায়। যাওয়ার পথে সিদ্ধার্থ বার বার পিছনে ফিরে তাকায়৷ এটাই মনে হয় ভাই বোনের ভালোবাসার বন্ধন৷ দাদার মন কি মানতে চায় তার আদরের বোনকে এভাবে রেখে যেতে। মনটা শক্ত করে চোখের জল মুছে বাড়িতে ফিরে যায়৷
— সুইটহার্ট
— আপনি কেন আমার সাথে এমন করছেন?
— সুইটহার্ট তুমি আমার আমানত নষ্ট করেছ?
— কিসের আমানত?
— তোমার সাহস হলো কিভাবে তপেসকে কিস করার?
— তপেসের সাথে আমার বিয়ে ঠিক৷ ২ দিন পর যা সাথে আমার বিয়ে হবে তাকে একটা কিস করেছি সমস্যা কি আপনার?
–তুমি তপেসকে বিয়ে করতে পারবে না।
— কেন? আপনি কে? কেন আমি আপনার কথা শুনবো?
— আমি তোমার স্বামী।
— মানি না আমি আপনাকে স্বামী।
— তুমি মান বা না মান আমার কোন দায়ী নেই। আমি মানি এটাই আমার কাছে বড়।
–যাকে কখনও দু’আঁখিতে দেখিনি৷ মন ভরে আদর করেনি তাকে কিভাবে আমি স্বামী হিসেবে মেনে নিব৷
— আমি তোমার সামনে ঠিক সময় আসবো৷
— এখন আমাকে মাটিতে নামান৷ এভাবে কতক্ষণ ধরে রাখবেন৷
— যতক্ষণ মন চাইবে।
–আমার কষ্ট হচ্ছে!
— তোমার থেকে বেশি কষ্ট আমার হয়েছে। যখন তুমি তপেসকে কিস করেছ!
— আমি ইচ্ছা করে তপেসকে কিস করিনি৷ একটা এক্সিডেনে এমন হয়েছে।
— তাহলে কথা দাও তপেসের সাথে তুমি কথা বলবে না৷
— আমি ১০০ বার বলবো।
১০০ বার কথাটা বলার সাথে সাথে অদ্ভুত লোকটি ছোঁয়াকে ছেড়ে দেয়৷ ছোঁয়া আঁখি বন্ধ করে জোরে চিৎকার করে। কিন্তু ছোঁয়া আঁখি মেলে অন্য জায়গায় নিজেকে আবিষ্কার করে৷
— আমি এখানে কেন? আর আমি পড়ে যাচ্ছিলাম। এখানে আসলাম কিভাবে? সালা ইতর আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে। তোকে আমি ছাড়বো না৷
ছোঁয়া কানের কাছে মধুর কন্ঠ শুনতে পাই ছাড়তে কে বলেছে সারা জীবন আমাকে জড়িয়ে ধরে রেখো।
৭.
ছোঁয়া পিছনে ফিরে কালো কাপড়ে ঢাকা একটা লোক দেখতে পায়। ভয়ে ছোঁয়া চিৎকার করে নিলেই। অদ্ভুত লোকটি ছোঁয়াকে কাছে টেনে নেয়।
— ভয়ের কিছু নেই৷
— কে আপনি?
— তুমি আমাকে দেখতে চেয়েছো তোমাকে দেখা দিলাম।
— আপনি আমার থেকে দূরে থাকেন?
— সুইটহার্ট এভাবে স্বামীকে দূরে রাখা যাবে না৷
— আপনি এখন সশরীরে আছেন৷ আপনি মনে হয় ভুলে গেছেন আমি আপনার এখন কি হাল করতে পারি৷
— কি করবে সুইটহার্ট।
ছোঁয়া ক্ষেপে অদ্ভুত লোকটিকে একের পর এক লাথি চর ঘুমি মেরে যাচ্ছে। কিন্তু কিছুই হচ্ছে না৷ বরং ছোঁয়া ক্লান্ত হয়ে ছেড়ে দেয়৷ ছোঁয়ার মনে হচ্ছিল এতক্ষণ সে তুলোর সাথে ফাইট করলো।
–আমার তো কিছুই করতে পারলে না৷
ছোঁয়া কান্না করতে করতে অদ্ভুত লোকটির পা ধরে বসে ফেলে৷ কিন্তু অদ্ভুত লোকটি অদৃশ্য হয়ে ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরে আবার প্রকট হয়৷
— আপনি কেন আমাকে সাথে এমন করছেন? আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি?
— তুমি আমার কোন ক্ষতি করনি?
— তাহলে কেন আমাকে এই নদীর তীরে নিয়ে আসলেন।আপনিই তো বলেছেন এখানে আমার বিপদ আছে৷
— এখানে তোমার বিপদ শুধু দিনের বেলায় রাতের বেলাতে নয়৷
–কেন?
— কোন প্রশ্ন না করে ওই ঘরে তোমার জন্য নীল শাড়ি রাখা আছে পড়ে নাও৷
নীলা ঘরের দিকে তাকিয়ে অভাগ৷ছোট একটা ঘর নদীর পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে। বাহারী রকমের ফুলে ঘরটা সাজানো৷ ঘরের সামনের দিক প্রাচীন কারুকাজ। শ্বেত পাথের ঘর যেন এই পাশ থেকে ওই পাশ দেখা যায়৷
— কি হলো যাও। এসব পোশাক চেঞ্জ করে আসো।
— আমি
— কোন কথা নয়৷ যা বলছি তাই কর?
ছোঁয়া ভয়ে ভয়ে ঘরে প্রবেশ করে। ভয় কম ইচ্ছাটা বেশি৷ ছোঁয়ার ঘরটা দেখার খুব ইচ্ছা। মন চাইছে ছুটে চলে যেতে। কিন্তু এই শয়তান ভুতটাকে বুঝতে দেওয়া যাবে না।
ছোঁয়া ঘরে প্রবেশ করে অভাগ৷ রুপোর খাট।খাটের এক পাশে রাখা আছে বাহারী রকমের ফুল। ফুলের সৌরভ চারিদিকে মৌ মৌ করছে। অন্য পাশে রাখা আছে ট্রি টেবিল।
ট্রি টেবিলের উপর রাখা নীল শাড়ি, নীল চুড়ি, নীল জুমকো, মেক আপের সামগ্রী। ছোঁয়া এসব কিছু দেখে নিজের লোভ সামলাতে পারলো না৷ সে অতি দ্রুত পড়ে নিল। সে ভুলেই গেছি এখানে অদ্ভুত লোকটি তাকে ধরে এনেছে৷
— আমার নীল পরীকে খুব সুন্দর লাগছে।সুইটহার্ট আমি তোমার প্রেমে তো পাগল হয়ে যাবো।
নাম না নিতেই সালা হুনুমান এসে হাজির৷ আচ্ছা এই সালা আমাকে তার চেহেরা দেখাচ্ছে না কেন? ইভেন তার হাত এবং পা কিছুই দেখতে পাচ্ছি না কেন?আজ আমি তোর সব কিছু জেনে নিবো।
— আমাকে গালি দিয়ে লাভ নেই। তুমি যা মনে মনে বলছো সব শুনতে পাই আমি৷
–আমাকে নিয়ে নদীতে ঘুরতে যাবেন কি?
— হুম,
ছোঁয়া নদীর জলের উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। ছোঁয়া মনে মনে খুব খুশি। নিজেকে খুব গর্বিত মনে হচ্ছে। সে জলের উপর দিয়ে হাঁটতে পারছে৷ কিন্তু পা টা যদি একটু জলের মাঝে থাকতো৷
ঠিক তখনি ছোঁয়ার পা জলের এক ইঞ্চি নিচে চলে যায়। ছোঁয়া পায়ের নিচে জল পেয়ে ছোট বাচ্চাদের মতো লাফিয়ে চলছে৷ কিন্তু তার এই আনন্দ সহ্য হলো না অদ্ভুত লোকটির৷
কিছু সময় পরই নিজেকে কারুকাজ যুক্ত খাটে আবিষ্কার করে৷ তার সামনে রাখা হয়েছে তার ফেবারিট খাবার বিরিয়ানি।
★
অদ্ভুত লোকটির কথা মতো ছোঁয়া বিরিয়ানি খেয়ে নিল। বিরিয়ানির টেস্ট সব থেকে ভিন্ন ছিল। যা বলে ব্যাখ্যা করতে পারব না। জলটাও খুব ভিন্ন ছিল৷ শীতল জল খেয়ে ছোঁয়া খুব তৃপ্তি পেল।
🖤
বিরিয়ানি খাওয়ার পর কিছুতেই ছোঁয়া চোখ মেলে রাখতে পারছে না৷ ঘুমে আঁখি নিজ থেকে বন্ধ হয়ে আসছে৷ ছোঁয়া কথা হলো যেভাবেই হোক এই ভুতটার নাম জেনেই ছাড়বে।
ছোঁয়া ঘুমানোর ২ মিনিট আগে অদ্ভুত লোকটা ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে। ছোঁয়া কথা হলো আজ তার সাথে সহবাস করতে চাইলেও সে বাঁধা দিবে না৷ তাও সে নাম জেনেই ছাড়বে।
–
ঘুম ঘুম আঁখি মেলে আপনার নাম কি?
–
বুকে জড়িয়ে নিয়ে তোমার এখন খুব ঘুম পাচ্ছে তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।
–
বুকের উপর আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে প্লিজ আপনার নামটা বলেন না৷
–
আমার নাম বললে তুমি মনে রাখতে পারবে না। কপোলে আলতু করে কিস করে।
–
আপনি একটা পঁচা। আপনার সাথে কোন কথা নেই। কোন কথা নেই
☆
কোন কথা নেই কোন কথা নেই বলতে বলতে ছোঁয়া অদ্ভুত লোকটির বুকে ঘুমিয়ে পড়ে।
★
সকালে পাখির কিচিরমিচির শব্দে ছোঁয়ার ঘুম ভাঙে। ঘুম থেকে উঠে ছোঁয়া চোখ আকাশ পানে।
আমি এখানে কিভাবে আসলাম। আমি নদীর তীরে সালা লুচ্চা ভুতের সাথে ছিলাম। এখানে আসলাম কিভাবে?হাজারো চিন্তা তার মাথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
ঘুম ঘুম চোখে হাত টানা দিয়ে গায়ের উপর থেকে কম্বল সরিয়ে আরও এক দফা টাস্কি খায়। আজ সে কোন বাঁধা দেয়নি। কিন্তু সালার ভুত তার সাথে সহবাস করেনি। এটা কিভাবে সম্ভব। যে ভুতটা জোর করে সহবাস করে আজ সে সুযোগ পেয়েও সহবাস করলো না৷ ব্যাপার কি?
নিচ থেকে কন্নার আওয়াজে ছোঁয়া নিচে নামে।
ছোঁয়াকে দেখতে পেয়ে ছোঁয়ার মা দৌড়ে ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে। তখন তার মনে পড়ে গেল রাতের ঘটনা৷ আরও অভাগ হয় সে রাতে শাড়ি পড়ে ঘুমিয়েছিল কিন্তু তার দেহে শাড়ি নেই৷ তার পরনে যে পোশাক ছিল সেই পোশাকই আছে।
ছোঁয়া কোন কিছু বিশ্বাস করতে পারছে না৷ তার মনে হচ্ছে ভুত তার উপর জাদু করেছে। যার কারণে ছোঁয়া সব ভুল বাল দেখছে।
— মা তুই ঠিক আছিস তো? তোকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিল ওই ভাবে উড়িয়ে? (ছোঁয়ার মা)
— কই না তো আমি তো সারারাত রুমেই ছিলাম।
— তুই রুমে ছিলি মানে কি? আমাদের সাথে আইসক্রিম খেতে যাস নি৷(সিদ্ধার্থ)
–হ্যাঁ,,,(কিছু বলতে নিবেই তার কানে অদ্ভুত লোকটি ফিসফিস করে বলে উঠে আমার মাথা ব্যাথার জন্য কাল রাতে আমি রুম থেকে বের হয়নি তোদের সাথে আইসক্রিম খেতে কখন গেলাম)
–তাহলে তোর কি রাতের ঘটনা মনে নেই।(সিদ্ধার্থ)
— হ্যাঁ মনে নাই মানে কি? তুই আমার জন্য আইসক্রিম কিনে আনিস নি কেন?(ছোয়া)
— আবোল তাবোল কি বলছিস ছোঁয়া? (রিয়া)
— আমি আবোল তাবোল কি বলিলাম। কাল রাতে প্রচুর মাথা ব্যথার কারণে আমি রুম থেকে বের হয়নি৷ ভেবেছিলাম দাদা আমার জন্য আইসক্রিম কিনে নিয়ে আসবে সেটাই খাবো। কিন্তু রাতে আমার কিছু খাওয়া হলো না৷ আমার প্রচুর ক্ষুধা লাগছে। আমাকে খেতে দাও আগে৷
— তাহলে রাতে আমাদের সাথে কে ছিল?(রিয়া)
— তোদের সাথে আমার আত্মা ছিল। আমি ক্ষুধার জন্য কিছু নিতে পারছি না৷।
☆
সরি আমাকে ক্ষমা করে দিও তোমরা। তোমাদের ভালোর জন্যই আমি মিথ্যা কথা বললাম।।জানি মিথ্যা বলা মহাপাপ। কিন্তু জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে মিথ্যা বললে পাপ হয় না৷
ছোঁয়া আজ হেঁটে হেঁটে ভার্সিটিতে আসছে। ভার্সিটির গেইট দিয়ে প্রবেশ করতেই ,,
চলবে,,