অতঃপর_তুমি_আমি #লেখিকা:#ইশা_আহমেদ #পর্ব_২

#অতঃপর_তুমি_আমি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২

ওয়ামিয়ার এখনো জ্ঞান ফেরিনি।ডাক্তার বলেছে অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে,শরীর ভীষণ দুর্বল।কিন্তু এখন আউট অফ ডেঞ্জার।হুমায়ন শেখ মেয়ের হাত ধরে বসে আছে।মায়া বেগম কেভিনে থাকা সোফায় বসে ঝিমাচ্ছেন।গভীর রাতে জ্ঞান ফিরে ওয়ামিয়ার।জ্ঞান ফিরে নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করে।ওয়ামিয়া নিজের অবস্থা দেখে ঠোঁট টিপে হাসে।

হাত কাটলেও সে রগ কাটেনি।রগের দুই ইঞ্চি উপরে কেটেছে।ওয়ামিয়া জানতো এভাবে কাটলে সে মরবে না।শেহজাদের কাছ থেকে মনের কথা জানার জন্য সে এর থেকেও বড় পাগলামি করতে পারে।এটা তো সামান্য কিছু।ওয়ামিয়া জানে এই খবর শেহজাদের কাছে পৌঁছে গিয়েছে অনেক আগেই।আবার হাসে ওয়ামিয়া।ঘাড় কাত করে পাশে বসে থাকা হুমায়ন শেখ আর মায়া বেগমের দিকে তাকায়।

ওয়ামিয়া অদ্ভুত ভাবে হাসে তাদের দিকে।হুমায়ন শেখ ওয়ামিয়ার হাত ধরেই ঘুমিয়ে আছেন।ওয়ামিয়ার চোখে ঘুম নেই।ঘুম পরিরা আর দেখা দিবে না তার আঁখিতে।নিশ্চুপ হয়ে শেহজাদের কথা ভাবতে থাকে।শেহজাদের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরে ওয়ামিয়া।কেউ একজন কেবিনের বাইরে থেকে গভীর দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে ওয়ামিয়ার পানে।লোকটা চলে যায় এক সময়।সকালে এক ফালি রোদ চোখে পরতেই ঘুম ভাঙে ওয়ামিয়ার।

“মেহেনাজ আম্মা উঠো পরেছো,চলো তোমাকে ফ্রেশ করিয়ে দেই”

মায়া বেগম মেয়েকে ধরে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে ফ্রেশ করিয়ে দেয়।হুমায়ন শেখ গিয়েছেন সকালের নাস্তা আনতে।মায়া বেগম বা হুমায়ন শেখ কেউই ওয়ামিয়াকে এখন এইসব বিষয় নিয়ে কথা বাড়াবে না।বাড়িতে গিয়ে সুন্দরভাবে বোঝাবে মেয়েকে।কেনো করেছে এমন পাগলামি জানতে চাইবে।এমন করার কারণটা কি!তারা কি তাকে খুব কষ্টে রেখেছে যে এই পথ বেঁচে নিলো সে।তার যদি কিছু হয়ে যেতো তাহলে কি করতো তারা দুজন।

“মেহেনাজ আম্মা সকালের নাস্তা নিয়ে এসেছি তোমার প্রিয় পরোটা।খেয়ে নাও আম্মাজান”

ওয়ামিয়া মৃদু হাসে।মায়া বেগম মেয়েকে যত্ন করে খাইয়ে দেন।হুমায়ন শেখ বসে আছেন কেভিনে থাকা সোফায়।মেয়ের দিকে পলকহীন ভাবে চেয়ে আছেন।ভেবে পাচ্ছেন না কেনো করলো মেয়েটা এমন।মাহিম যদি জানতে পারে তাহলে আরেক হুলস্থুল কান্ড বাঁধিয়ে ফেলবে।মাহিমকে না জানানোই শ্রেয়।ছেলেটা যেই কাজে গিয়েছে সেই কাজটা শান্তিতে,কোনো ঝামেলা ছাড়াই করে আসুক।

“আম্মাজান তৈরি হয়ে নাও বাড়ি ফিরতে হবে”

“হ্যাঁ আপনি বাইরে গিয়ে সব কিছু ঠিক করুন আমি মেহেনাজকে তৈরি করে বের হচ্ছি”

মায়া বেগম মেহেনাজকে একটা জামা পরিয়ে দেন।এখন ঠিক আছে ওয়ামিয়া।হুমায়ন শেখ চাইছেন না হাসপাতালে রেখে মেয়ের চিকিৎসা করাতে।না হলে সারা গ্রামে ছড়িয়ে পরবে মাস্টারমশাইয়ের মেয়ে আত্নহত্যা করতে চেয়েছিলো।তার থেকে বড় কথা রাতে মাহিম ফিরবে,সে এই কান্ড দেখলে কি করবে কে জানে!সেজন্যই তাড়াহুড়ো করে বাড়ি ফেরা।হাসপাতালের সব কাজ শেষ করে বের হয় বাড়ির উদ্দেশ্যে।

*****

বাড়িতে ফিরেছে অনেক সময় হলো।উপন্যাসের বই নিয়ে বসেছে ওয়ামিয়া।বাড়িতে ফেরার পথে খুঁজে তার শখের পুরুষকে।কিন্তু তার দেখা পায়নি ওয়ামিয়া।ভাগ্য খারাপ ছিলো।সে বেশ কয়েকদিন বাড়ি থেকে বেরোতে পারবে না।ভাইজানও বাড়িতে ফিরছে।দেখা পাবে না বেশ কয়েকদিন ওয়ামিয়া তার শখের পুরুষের।ওয়ামিয়া মৌরি মরিয়মের প্রেমাতাল উপন্যাস পরতে বসেছে।

কয়েকপৃষ্ঠা পড়ার পরে রুমে ঢোকেন মায়া বেগম।হাতে ফলের প্লেট।বিভিন্ন রকম ফল নিয়ে এসেছেন।ওয়ামিয়ার সামনে রেখে ওর পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।নরম কন্ঠে মেয়েকে বলেন,,,

“মেহেনাজ মা এগুলো খেয়ে নাও।দুর্বল তুমি অনেক।খেয়ে সুস্থ হও।ভাইজান আসলে তার সাথে দুষ্টমি করবে না!”

“আম্মু আমার এগুলো খেতে ইচ্ছে করছে না তুমি নিয়ে যাও।তুমি তো জানো আমার ফল পছন্দ না”

“তোমার শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হয়েছে আম্মাজান খেয়ে নাও।আব্বু এসে যদি তুমি খাওনি তাহলে তো আম্মুকে বকবে তুমি কি চাও বলো?”

“আচ্ছা রেখে যাও খেয়ে নিবো”

মায়া বেগম মিহি হেসে ওয়ামিয়ার কপালে আলতো করে অধর ছুঁইয়ে দিয়ে উঠে পরেন,রুম থেকে বের হওয়ার জন্য।কিছু একটা ভেবে ফিরে আসে আবার ওয়ামিয়ার কাছে।ওয়ামিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আদুরে গলায় জিজ্ঞেস করেন,,

“আম্মাজান তুমি এমন কেনো করেছিলে”

ওয়ামিয়া নিশ্চুপ।চোখ নিচু করে এক দৃষ্টিতে উপন্যাসের বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।মায়া বেগম বোঝেন মেয়ে বলতে চাইছে না।তাই তিনিও আর জোর করলেন না।নিঃশ্বব্দে বের হয়ে যান রুম থেকে।ওয়ামিয়া মায়া বেগমের যাওয়ার পানে তাকিয়ে ফোস করে শ্বাস ফেলে।সত্যি সে জীবনেও বলবে না।এখন শুধু দেখা করার পালা তার শখের পুরুষের সাথে,তার শেহজাদ ভাইয়ের সাথে।কতগুলো দিন লাগবে সুস্থ হতে কে জানে!

*****

“ভাই ওয়ামিয়া মেহেনাজকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে।মাহিম ভাই আজই ফিরবেন তাই হয়তো”

‘ওয়ামিয়া এখন কেমন আছে ইফাজ?বাড়িতে এসেছে কখন!’

‘ভাই অনেক আগেই এসেছে সকালের দিকে হয়তো।আমি সব বিষয় খেয়াল রেখেছি ভাই’

‘এখন যাও তুমি ইফাজ একা থাকতে চাই।ক্লান্ত লাগছে’

ইফাজ বেরিয়ে যায় রুম থেকে।শেহজাদ ক্লান্ত ভীষণ।সোফায় শরীর এলিয়ে দেয়।মাহিম এবার নির্বাচনে দাঁড়াবে।মাহিম রাজনীতিতে কেনো ঢুকছে বুঝতে পারছে না শেহজাদ।রাজনীতি নিয়ে দুই পরিবারের ঝামেলা।তাহলে এখন মাহিম কেনো!শেহজাদ এতো বছর এইসব নিয়েই চিন্তা করে আসছে।কিভাবে এগুলোর সমাপ্তি ঘটাবে।দুই পরিবারকে আবার এক করবে।তবে কিছুতেই তা সম্ভব হচ্ছে না।শেহজাদ এর জন্য নিজের শখটাও,নিজের পেশাটাকেও সরিয়ে রেখেছে।

‘কবে মিটবে এসব,এর শেষ কোথায়!আমি কি তবে পাবো না তাকে।কি করলে শেষ হবে এসব।এগুলো দেখতে দেখতে ভীষণ ক্লান্ত আমি।”

শেহজাদ উঠে দাঁড়ায়।নিজের রুম থেকে বের হয়ে তার আব্বুর রুমের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।শেহজাদ দরজায় টোকা দিয়ে বলে,

‘আসবো আব্বুজান’

মুনতাসিব খান স্ত্রীর ছবি হাতে বসে ছিলেন।ছেলের আওয়াজ পেয়ে চোখ মুছে চশমা পরে নিজেকে স্বাভাবিক করলেন।ছবিটা জায়গা মতো রেখে দিলেন।আগের ন্যায় কঠোর,শক্ত কন্ঠে বললেন,

‘ভেতরে আসো শেহজাদ’

শেহজাদ রুমে প্রবেশ করলো।মুনতাসিব খানকে দেখলো।আজ যেনো নিজের আব্বুজানকে কঠোর,শক্ত লাগছে না।নরম,শান্ত একজন মানুষ মনে হচ্ছে তার কাছে।শেহজাদকে এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেকে কিছুটা অস্বস্তি অনুভব করেন মুনতাসিব খান।সে গলা ঝেড়ে বলে উঠেন,

‘বসো শেহজাদ।এই সময়ে আমার কাছে যে’

‘আব্বু তুমি তো জানো এবার তোমার বিপক্ষে মাহিম দাঁড়াচ্ছে নির্বাচনে।নমিনেশন ও আনতে গিয়েছে।তুমি এতো নিশ্চিতে কিভাবে আছো’

‘শেহজাদ তোমার এখন উচিত নিজের ক্যারিয়ারে ফোকাস দেওয়া।তুমি ডিগ্রি আনতে চাইলে বিদেশে যেতে পারো এবং যদি না চাও তবে গ্রামের হাসপাতালে রোগী দেখা শুরু করো।জানো কত গরীব মানুষ চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে।তুমি জয়েন হও।কম টাকায় গরিব মানুষের চিকিৎসা করো।গ্রামে তেমন ভালো ডক্তার ও নেই।তুমি জয়েন করলে ভালো হবে গরিব দুঃখী মানুষের জন্য।আর নির্বাচন,রাজনীতি আমি সামলে নিবো সেগুলো।তোমার এদিকে আসার দরকার নেই”

‘আমি বুঝতে পেরেছি আব্বু।আমি সামনের মাস থেকেই জয়েন করতে চাইছি’

‘যা ভালো মনে করো।রাজনীতি থেকে দূরে থাকবা শেহজাদ।তুমি আমার একমাত্র ছেলে তোমার মাকে হারিয়েছি এখন তোমাকে হারাতে পারবো না!’

‘আব্বু আমি হাসপাতালে জয়েন করলেও এদিকটাও সামলাবো।আমি তোমাকে একা কিছুতেই ছাড়বো না।এইসব ভাবনা মাথা থেকে বের করে দাও’

‘তুমি বুঝতেছো না শেহজাদ সবাইকে যেমন দেখো সবাই তেমন নয়।রাজনীতি বড় ভয়ংকর জিনিস শেহজাদ,এটা মানুষকে শেষ করে দেয়।তোমার মাকে কেঁড়ে নিলো আমার থেকে’

মুনতাসিব খানের চোখ টলমল করছে।পুরুষ মানুষের সহজে কাঁদতে নেই।সে নিজে ও কাউকে তার চোখের পানি দেখাতে চায় না।ছেলেটাও বুঝতে চাইছে না।হুমায়ন শেখের সাথেও সম্পর্কটা খারাপ হয়েছে কতো বছর হলো।শেহজাদের জেদ,গম্ভীরতা সব সম্পর্কেই অবগত মুনতাসিব।ছেলেকে আর বাঁধা দিতে পারবে না সে বুঝতে পেরেছেন।

‘শেহজাদ এর ভেতরে ঢুকো না সব কেঁড়ে নিবে’

শেহজাদ কিছু বলল না।কিছুক্ষণ আব্বুর দিকে তাকিয়ে বের হয়ে গেলো রুম থেকে।বারান্দায় এসে হাত পা ছড়িয়ে বসে পরলো।সামনের বাড়ির দিকে চোখ পড়লো।আহ কতো স্মৃতি।কিশোর বয়সটা সেখানেই কেটেছে তার।চোখের সামনে এখনো স্মৃতিগুলো জ্যান্ত হয়ে উঠে মাঝে মাঝে।

‘তোমাকে পাওয়ার জন্য কতো লড়াই প্রেয়সী!আমি কি শেষ অবদি পাবো তোমায় আদেও’

#চলবে ইনশাআল্লাহ,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here