অতঃপর_তুমি_আমি #লেখিকা:#ইশা_আহমেদ #সূচনা_পর্ব

“আমি আপনাকে ভালোবাসি শেহজাদ ভাই।প্লিজ এবার আমায় ফিরাবেন না।বড্ড ভালোবাসি আপনাকে।আপনি ব্যতিত অন্য পুরুষের সান্নিধ্য কল্পনাও করতে পারি না আমি”

শেহজাদ নড়েচড়ে বসলো।তার সামনে থাকা নিষ্পাপ মুখের অধিকারীনি রমনীর পানে এক পলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।বেশিক্ষণ চেয়ে থাকলে হয়তো চোখ সরাতে পারবে না।তার যে সাধ্য নেই সামনে থাকা রমনীর দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকার।

“কি হলো শেহজাদ ভাই কথা বলছেন না কেনো?আমি ভালোবাসি আপনায়”

“এটা আবেগ ওয়ামিয়া এই বয়সে এমন একটু আধটু হয়ে থাকে।ইনশাআল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে ভেবো না।পড়াশোনায় মনোযোগী হও।”

ওয়ামিয়া রেগে গেলো।চোখে অশ্রুকণা টইটম্বুর হয়ে আছে।হয়তো বৃষ্টির মতো যখন তখন ঝপ করে নেমে পরবে।ওয়ামিয়া রাগলো বটে কিন্তু নিজেকে শান্ত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে গেলো।

“আপনি এমন কেনো শেহজাদ ভাই।একটু ভালোবাসলে কি হয়।আমি কি এতোটাই দেখতে খারাপ?”

শেহজাদ তাকালো ওয়ামিয়ার দিকে।ওয়ামিয়া আগুন সুন্দরী এক কথায়।যেমন ফর্সা তার তেমনি গঠন।এই মেয়েকে একবার কেউ দেখলে আর চোখ ফেরাতে পারবে না।কিন্তু শেহজাদ নিরুপায়।সামনে রমনী তাকে ভালোবাসলে ও সে নিজের কাছে বন্ধী করে রাখতে পারবে না।ওয়ামিয়া রূপেও যেমন আগুন সুন্দরী গুনেও সে অন্যন্যা।

“তুমি বুঝছো না ওয়ামিয়া।এই পরিস্থিতির মাঝে তোমায় বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না।তোমার আব্বু কখনো মানবে না।আর না আমার।তোমার ভাইয়া জানতে পারলে সমস্যা হবে ওয়ামিয়া”

শেহজাদের থেকে আশাহত বানী পেয়ে ওয়ামিয়ার চোখ থেকে টুপটাপ পানি গড়িয়ে পরলো।ওয়ামিয়া দু’হাতে দ্রুত মুছে নিলো।শেহজাদকে সে নিজের চোখের অশ্রু দেখাতে চায় না।তাই তো তাড়াহুড়ো করে মুছে ফেললো চোখের অশ্রুকনা গুলো।শেহজাদ দেখলেও এমন ভান করলো সে যেনো কিছুই দেখেনি।

“শেহজাদ ভাই আব্বু আর ফুপার এই রেশারেশির জন্যই আপনি আমায় গ্রহন করছেন না তাই না।আমি একটু শান্তি চাই শেহজাদ ভাই।আর কত!আপনার বুকে মাথা ঠেকিয়ে শান্তিতে সারা জীবন থাকতে চাই”

ওয়ামিয়ার কন্ঠে অসহায়ত্বের চাপ।কিন্তু তবুও শেহজাদের মন গললো না।শেহজাদ নিশ্চুপ নিরুত্তর।দৃষ্টি তার অন্য দিকে।ওয়ামিয়ার নিষ্পাপ মায়াবী মুখের দিকে তাকাতে চায় না শেহজাদ।সে আর মায়ায় জড়াতে চায় না।মায়া বড্ড খারাপ জিনিস।ওয়ামিয়াকে কিছু বলতে না দেখে তাড়া দিয়ে বলে,,,

“তুমি চলে যাও ওয়ামিয়া এখান থেকে।কেউ দেখলে ব্যাপারটা বিশ্রি হয়ে যাবে।আমি চাইছি না তুমি আর আমার সাথে এভাবে দেখা করো।গ্রামের লোকজন উল্টাপাল্টা ভাবে বিষয়টা রটিয়ে দেবে।তোমার ভাই জানলে ব্যাপারটা আরো বিশ্রি হয়ে পরবে ”

“শেহজাদ ভাই ভালোবাসায় এতো যন্ত্রনা কেনো বলতে পারেন।আমি কেনো এই যন্ত্রনায় ভুগছি।ভালোবাসা কি তবে ভুল শেহজাদ ভাই”

“ভালোবাসা ভুল নয় ওয়ামিয়া তবে ভুল মানুষকে ভালোবাসাটা ভুল।তুমি ভালো মেয়ে জীবনে অনেক ভালো কাউকে ডিজার্ব করো।এই সব পাগলামি ছাড়ো”

ওয়ামিয়া কিছুক্ষণ শেহজাদের র্নিলিপ্ত কঠোর শক্ত মুখের দিকে চেয়ে রইলো।বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে কিছু একটা ভাবলো।ভয়ংকর ভাবনা তার মাথায় এসে হানা দিলো।যা করার পর হয়তো শেহজাদ তাকে ভুল বুঝবে কিন্তু তার কিছু করার নেই।ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার জন্য না হয় কিছুটা সময় খারাপ হলো ভালোবাসার মানুষের চোখে।

“এরপর যা হবে খুব ভয়ংকর হবে শেহজাদ ভাই।আপনি আমাকেই বিয়ে করবেন শেহজাদ ভাই।আমার জীবনে আপনি ব্যতিত অন্য কোনো পুরুষের আগমন আমি হতে দিবো না।আপনিই প্রথম এবং আপনিই শেষ”

ওয়ামিয়া নিকাব নামিয়ে দৌড়ে সেখান থেকে চলে যায়।শেহজাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে।ওয়ামিয়া নামক রমনীকে যে পছন্দ করে না তা না।ওয়ামিয়া এমন একটা মেয়ে যাকে কেউ ভালো না বেসে থাকতে পারবে না।সেও এর ব্যতিক্রম নয়।কিন্তু পরিস্থিতি এখন অনেক ভিন্ন।শেহজাদ হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ায়।খালের কিনারা ঘেষে এলোমেলো পায়ে পাড়ি দেয় নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে।

****

ওয়ামিয়া এলেমেলো পায়ে বাড়িতে এসেই নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে বসে আছে।ওয়ামিয়ার মা মায়া বেগম এসে ডেকে গিয়েছেন অনেকবার।বেশ চিন্তিত সে।মেয়েটার হুট করে কি হলো কে জানে।বান্ধবীর বাড়ি থেকে ফিরেই এমন করছে।ছেলেটাও নেই যে কিছু করবে।এর মাঝেই বাড়িতে প্রবেশ করেন হুমায়ন শেখ।মায়া বেগম স্বামীকে বাড়িতে ঢুকতে দেখেই তাড়াহুড়ো করে রান্না ঘরে চলে যান।শরবত বানিয়ে এনে হুমায়ন শেখের হাতে দিয়ে বলে,,,

“আসসালামু আলাইকুম।আপনি এতো তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এলেন যে”

হুমায়ন শেখ শরবত টুকু শেষ করে স্ত্রীর হাতে দিয়ে মৃদু হেসে বলে,,,

“ওয়ালাইকুম আসসালাম।আজকে কাজ শেষ বুঝলে মায়া তাই তো এতো দ্রুত আসতে পেরেছি।তা আমার আম্মা জান কোথায়?”

“আর বলবেন না সেই যে বান্ধবীর বাড়ি থেকে এসে সেই রুমে ঢুকেছে এখনও বের হয়নি”

“আচ্ছা তুমি নিজের কাজে যাও আমি দেখছি কি করা যায়”

মায়া বেগম নিজের কাজে চলে যান।হুমায়ন শেখ কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে মেয়ের রুমের সামনে আসেন।দরজায় অনেকবার কড়াঘাত করার পরে ও ওয়ামিয়া দরজা খোলে না।হুমায়ন শেখ চিন্তায় পরে যান।মেয়েটা কিছু উল্টা পাল্টা করলো না নাতো।আগে তো এমন করেনি।হুমায়ন শেখ হাঁক ছেড়ে স্ত্রীকে ডাকেন।মায়া বেগম ও দ্রুত চলে আসে।

“কি হয়েছে আপনি এমন চিল্লাচ্ছেন কেনো মাস্টারমশাই”

“মায়া আমার মেয়েটা দরজা কেনো খুলছে না।ও তো আমার গলা শোনার সাথে সাথেই দরজা খুলে দেয়।তাহলে আজ কেনো এমন করছে”

“আপনি দয়া করে দরজাটা ভেঙে ফেলুন মাস্টারমশাই।আমার ভীষণ ভয় করছে।মাহিমকে ফোন করবো?”

“না দরকার নেই ছেলেটা একটা কাজে গিয়েছে।এখন ফোন করে বিরক্ত করার প্রয়োজন নেই।জানো তো বোনের কিছু হলে সে সব কাজ ফেলে আসতে রাজি”

মায়া বেগম মাথা নাড়ান।হুমায়ন শেখ স্ত্রীর কথায় দরজা ভাঙার চেষ্টা করতে থাকেন।অনেক সময় যাবত চেষ্টা করার পরে সে দরজা ভাঙতে সক্ষম হয়।এক প্রকার দৌড়ে রুমে ভেতরে ঢোকে মায়া বেগম।রুমের ভেতরে আসতেই হতভম্ব হয়ে দু’জনে তাকিয়ে থাকেন।

ওয়ামিয়ার হাত থেকে রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে।হুমায়ন শেখ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে।তার আদরের একমাত্র কন্যা যে এমন কাজ করবে কখনো ভাবতে পারিনি হুমায়ন শেখ।ঘোর কাটতেই দ্রুত মেয়ের কাছে ছুটে যায়।এলোমেলো ভাবে পরে আছে ওয়ামিয়া মেঝেতে।হুমায়ন শেখের পাগলের মতো অবস্থা।পাশেই ছোট একটা ব্লেড পরে আছে।

****

“শেহজাদ ভাই মাস্টারমশাইের মেয়ে ওয়ামিয়া মেহেনাজ নাকি আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছে!”

শেহজাদ স্তব্ধ।এমন খবর শুনবে সে কল্পনা ও করতে পারিনি।তাহলে কি সেই সময়ে ওয়ামিয়া ভয়ংকর কিছুর মানে এটার কথাই বলেছিলো।শেহজাদের নিজেকে অসহায় লাগছে ভীষণ।ওয়ামিয়ার সম্পর্কে এমন খবর শুনে শেহজাদের আশেপাশের সব কিছু ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।

“শেহজাদ ভাই কোথায় হারালেন?”

ইফাজের কথায় শেহজাদের ঘোর কাটে।শেহজাদ নড়েচড়ে বসে।চেয়ারম্যানের ছেলে হওয়ায় গ্রামের অল্প বয়সী ছেলেরা বেশ সম্মান করে শেহজাদকে।হয়তো ইফাজ তাদের কাছ থেকেই শুনেছে।শেহজাদও তাদের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে।অস্থির লাগছে ভীষণ।বারবার মন বলছে ছুটে ওয়ামিয়ার কাছে যেতে।কিন্তু পরিস্থিতি এতোটাই খারাপ যে যাওয়ার কোনো পথ নেই।

“এই খবর কি পুরো গ্রামবাসী জানে ইফাজ”

ইফাজ চমকায়।শেহেজাদকে সে খুব সম্মান করে।এমন শান্ত র্নিলিপ্ত কিভাবে আছে বুঝতে পারছে না ইফাজ।প্রেয়সীর গভীর ক্ষতও কি তাকে কাবু করতে পারিনি।এতোটাই কঠোর,পাথর মনের অধিকারী এই লোক।সে হলে তো শত বাঁধা বিপত্তি না মেনে ছুটে যেতো।হয়তো এর জন্যই সে শেহজাদ ইমতিয়াজ খান আর সে ইফাজ আবরার।

“না ভাই কেউই জানে না আমাকে তো অর্নব বলেছে।সবাই জানে অসুস্থ হয়ে পরেছে মাস্টার মশাইের মেয়ে তাই শহরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাকে”

“ওহ” কথাটা বলেই সে ছাদে থাকা চেয়ারে বসে গা এলিয়ে দিলো।ইফাজ হতাশ হলো।ইফাজ শেহজাদকে দেখে চলেছে।এতোটা কঠিন মানুষও হয়।ওয়ামিয়া শেহজাদকে যে কতটা ভালোবাসে তার প্রমান ইফাজ আগেও পেয়েছে।এগুলো কেউ না জানলেও সে জানে।খুব ভালো করেই জানে সে।ইফাজ শেহজাদের ফুফাতো ভাই।এই গ্রামেই থাকে।ইফাজ নিঃশব্দে স্থান ছাড়ে।ইফাজ যেতেই শেহজাদের চোখ থেকে টুপ করে কয়েক ফোঁটা পানি পরে।দ্রুত মুছে নেয় শেহজাদ।চাঁদ তারা ভর্তি আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,,

❝তুমি আমার সেই শূন্যতা প্রেয়সী,
যা পুরো পৃথিবী দিলেও পূরন হবে না❞

#চলবে ইনশাআল্লাহ,

#অতঃপর_তুমি_আমি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#সূচনা_পর্ব

আসসালামু আলাইকুম।নতুন গল্প নিয়ে হাজির হয়েছি।আশা করি সবার ভালো লাগবে।ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here