#অগত্যা_তুলকালাম,পর্ব ৫৫
নাফীছাহ ইফফাত
আমার বিদায়ের তোড়জোড় চলছে বাসায়। হুলস্থুল একটা ভাব সারা বাসাজুড়ে। এদিকে চেয়ার টানছে তো ঐদিকে টেবিল সরাচ্ছে। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে কোথাও আবার কারো সাথে কারো ধাক্কা লেগে যাচ্ছে। সবাই মিলে একসাথে কথা বলছে। সারাবাড়ি শব্দে গমগম করছে। রুমে একা বসে কান পেতে এসব শুনছিলাম তখনই নাকীব এলো। এসেই দরজা আটকে দিলো। আমি বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়লাম। নাকীব কিছুক্ষণ দরজার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে রইলো। পরক্ষণেই দ্রুত পায়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। খানিকটা হতবিহ্বল হয়ে পড়ে যেতে চাইলাম। মুহুর্তেই বুকের ভেতর অজানা ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো।
“তোমার রুম এখন আমার হয়ে যাবে। বিছানা এলোমেলো করে রাখলে কেউ বকা দিবে না। আমি খুব খুশি।”
নিজেকে সামলাতে কষ্ট হলো খুব। কান্না বিজড়িত কন্ঠে বললাম,
“কে বললো বকা দিবো না? ভিডিও কলে প্রতিদিন আমার রুম দেখবো আমি। এলোমেলো করলেই এসে কান মলে দেবো। অতদূরে না কিন্তু।”
“তোমার সবগুলো বই পড়বো, তারপর জায়গামতো রাখবো না। যখন যেটা ইচ্ছে সেটায় হাত দিবো।”
“দিস।”
“বাবা-মা ঝগড়া করলে কার সাথে প্ল্যান করবো?”
“আমি কি মরে যাচ্ছি নাকি? ফোনে প্ল্যান করা যায় না?”
“সিচুয়েশন তো বুঝবে না তুমি।”
“বুঝবো।”
“শান্তি কুঠিরে সারারাত সবাই জেগে থাকলেও আর কেউ বকবে না।”
“তুই সামলাবি সব, তুই বকবি।”
“আমি তোমার মতো খারাপ না।”
আমি চুপ করে থাকলাম। নাকীবই আবার বললো,
“আমি কিন্তু রাতে তোমার বিছানায় শুবো আজ থেকে।”
“আচ্ছা।”
নাকীব ধরা গলায় বললো,
“এভাবে কাকে জড়িয়ে ধরবো আমি? কাকে দুঃখ বোঝাবো? কার চোখের ভাষা পড়ে সব বুঝে ফেলবো? কাকে বোকা বলবো? পৃথিবীতে তো তোমার চেয়ে বোকা আর কেউ নেই। আর আমার তো তুমি ছাড়া আর কোনো ভাইবোন নেই। আমরা এত কম কেন আপু? আর কেউ নেই কেন আমাদের?”
নাকীব আমাকে ছেড়ে দিয়ে দরজার দিকে চলে গেল। কেউ কারো দিকে তাকালাম না আমরা। দুজনের চোখ-ই জলে টইটম্বুর। নাকীব চোখের কার্নিশ মুছে দরজার হুক খুলতে খুলতে বললো,
“তুমি চলে গেলে আমি কার সাথে থাকবো আপু? কার সাথে কথা বলবো?”
“তোর তো আমাকে লাগে না এখন। অনেক বন্ধু আছে না?”
“তুমি তো নেই।”
গলায় কাটার মতো কি যেন বিঁধে আছে। কোনো কথা-ই আর বেরুচ্ছে না মুখ দিয়ে। গলার স্বরও কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।
বড়আপ্পি, ছোটফুফি ও সোহা এলো আমাকে নিতে। দুজন মিলে আমাকে বোরকা পরিয়ে দিলেন। তারপর নতুন করে আবার হিজাব পরানো হলো। এবার সব সাজ ভেতরে লুকিয়ে পড়েছে। বরযাত্রী অপেক্ষা করছে বাইরে। শেষমেশ এই বাড়ি থেকে আজ আমার বিদায়। ছোটবেলা থেকে যেখানে বেড়ে উঠেছি সেখান থেকে আজ বিদায় নেওয়ার পালা। এত ব্যাথা! আজ শুধু আমার পরিবারের জন্য না; আমার ঘর, আমার জিনিসপত্র, এই বাড়ির প্রত্যেকটা জিনিসের জন্য আমার বুক পুড়ছে। এমনকি টেবিলের ওপর রাখা ফুলদানিটার জন্য, দরজার কাছে রাখা পাপোশটার জন্যও। ঐ পাপোশটারও জায়গা আছে এই বাড়িতে অথচ আমার-ই চলে যেতে হচ্ছে। এই বাড়িতে আর কখনো কারো বিদায় হবে না। আমি-ই শেষ। বাকীরা কি সুন্দরভাবে থাকবে এখানে। শুধু আমি থাকতে পারবো না। এটাই জগতের নিয়ম! এখান থেকে গিয়ে বিরাট অট্টালিকায়ও আমার মন টিকবে না, অতটা শান্তি পাবো না যতটা আমার ছোট্ট ঘরটায় পেতাম। হয়তো একদিন ছোট্ট ঘরটায় আর সেই আনন্দ পাবো না, শান্তি পাবো না যতটা রাফিন নামক মানুষটার ঘরে পাবো। ঐ ঘরটা আমার হয়ে যাবে তখন। মানুষের মন কি সুন্দরভাবে পাল্টে দেয় আল্লাহ। যদি ‘ভুলে যাওয়া’ ব্যাপারটা পৃথিবীতে না থাকতো আমরা কেউই কখনো সুখী হতে পারতাম না।
মা-বাবা সবাই একে একে এসে আমাকে স্বান্তনা দিলেন।জড়িয়ে ধরে কাঁদলেনও খানিকক্ষণ। তাঁরা কি বললেন কিছুই শুনলাম না আমি। আমি তখন পুরোপুরি ঘোরের মধ্যে। চোখজোড়া ঝাপসা, কাউকে ভালোভাবে দেখছিও না আমি। ছোটফুফি এসে খানিকক্ষন জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন। আমার তো চোখের বহমান ধারা বন্ধ-ই হচ্ছে না। ছোটফুফিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলাম।
“নিজের দ্বীনকে ধরে রাখিস। কোনো বিপদে, কোনো ধাক্কায় কখনো ভেঙ্গে পড়িস না। মনে রাখবি, আল্লাহ সবসময় সাথে আছেন।” মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন ছোটফুফি।
সারাবাড়ি চোখ বুলিয়েও নাকীবকে কোথাও পেলাম না।বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম,
“বাবা, নাকীব কোথায়?”
“কোথাও তো দেখছি না ওকে। কোথায় গেল কে জানে।”
বাবা রাফিনের হাতে আমার হাত তুলে দিলেন। তারপর একগুচ্ছ নাসীহাহ দিলেন। রাফিন আমাকে সাথে নিয়ে গাড়িতে উঠলো। গাড়িতে আর কেউ উঠেনি ড্রাইভার ছাড়া। রাফিন তখনও আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। কান্নার দমকে বারবার পুরো শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে আমার। গাড়ি চলতে শুরু করে। বুকের ভেতর হু হু করা দুঃখরা কান্না হয়ে গড়িয়ে পড়ছে। গাড়ির জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছি। প্রিয়জনেরা ক্রমশ দূরে চলে যাচ্ছে, ঝাপসা হয়ে আসছে তাদের অবয়ব। একসময় তারা পুরোপুরি দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে গেল। আমার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো অশ্রুর লম্বা টান।
রাফিন বিড়বিড় করে বললো, “আমি কখনোই তোমাকে বিদায় দিতে পারবো না। বিদায়ে এত কষ্ট!”
গাড়ি মেইন রোডে উঠতেই রাফিন ড্রাইভারকে বললো,
“গাড়ি থামাও।”
ড্রাইভার সাথে সাথেই গাড়ি একপাশে নিয়ে গিয়ে থামালো। রাফিন আবার বললো,
“নামো।”
ড্রাইভার নামলো, সাথে ও নিজেও নামলো। তারপর ড্রাইভারের সাথে কিসব কথাবার্তা বললো। এরপর দেখলাম ড্রাইভার চলে যাচ্ছে। আমি চোখ মুছে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলাম। রাফিন এসে আমার সাইডের দরজা খুলে দিয়ে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। আমি কোনোকিছুই না বুঝে ওর হাতে হাত রেখে সাবধানে বেরিয়ে এলাম। অদ্ভুত অনুভূতিতে সারা শরীরে শিহরণ বয়ে গেল। বিয়ের পোশাকটার ভারে দাঁড়াতেই পারছি না আমি। রাফিন আমার হাত ধরে আলগোছে সামনের সিটে বসালো আমাকে। তারপর সে নিজে ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসলো। স্টিয়ারিং-এ হাত রেখে একবার তাকালো আমার দিকে।
“শেষ কান্না সেরে ফেলা হোক। শেষ হলে বলা হোক। এই জীবনে আর কখনো কাঁদতে দেওয়া হবে না এই প্রতিজ্ঞা করলাম।”
রাফিনের দিকে না তাকিয়েই চোখ মুছে ফেললাম। চোখ মুছে সামনে তাকাতেই দেখি গাড়িতে লম্বা একটা ব্যানার। তাতে লেখা, “নন-মাহরাম ট্যাগ মুছলো অবশেষে।”
আমি ওর দিকে তাকালাম। ছেলেটা এত পাগল কেন? অবৈধ সম্পর্কে যা করেনি বৈধ সম্পর্কে এসে একনিমেষে তারচেয়েও হাজারগুণ করে দেখালো। এবার বোধহয় ওকে পুরোদমে ভালো না বেসে পারবো না। আচ্ছা, এখন কি ও আমাকে ‘ভালোবাসি’ বলবে? নাকি বলবে, ভালোবাসি বললে কম ভালোবাসি মনে হবে?
সে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে একটানে তাদের বাড়িতে নিয়ে এলো।এই প্রথম এ-বাড়ির সামনে আমি। ঠিক রাফিনের বলে দেওয়া বিবরণের সাথে মিলে যায়। নীল-সাদা উঁচু দালান। রাফিন নিজে এসে আমার গাড়ির দরজা খুলে হাত বাড়িয়ে দিলো আমার দিকে। আবার ওর হাত ধরে বেরিয়ে এলাম। মৃদু পায়ে হেঁটে আমরা লিফটে উঠলাম। লিফটে ওঠার পর রাফিনকে দেখলাম ভালোভাবে। একসময় যাকে দেখে চোখ নামিয়ে ফেলতে হতো আজ তাকে মনভরে দেখলেও ক্ষতি নেই বরং লাভ আছে। আচ্ছা, স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকা সুন্নাত তাহলে স্বামীর দিকে তাকিয়ে থাকাটা কি? সুন্নাত হবে হয়তো। একই তো হওয়ার কথা। আমি আগের মতো রাফিনের দিকে চোখ পড়তেই চোখ নামিয়ে নিলাম। পরক্ষনেই আবার তাকালাম এই বলে, “আমার একমাত্র আপন পুরুষকে দেখার অধিকার সবচেয়ে বেশি তো আমার।” আমার মতো ওর দিকে আর কেউ তাকাবে না, অন্তত আমার দৃষ্টিতে। সাদা শেরওয়ানিতে ওকে শুভ্র, বিশুদ্ধ প্রেমিক মনে হচ্ছে। সাদা পাগড়িতে মনে হচ্ছে কোনো অচিন দেশের রাজা। আচ্ছা, সেই অচিন রাজ্যের নাম কি? শুভ্রাচিনপুর? আমি সেই রাজ্যের মহারাণী, রাফিন মহারাজা। সাদার রাজ্যে বসবাস আমাদের। যখন লিফট থামলো পুরোপুরি ধবধবে সাদা পোশাকের আমরা দুজন ধবধবে সাদা টাইলসে পা রাখলাম। অবশ্য আমার সাদা তো কালোর আড়ালে ঢাকা পড়েছে এখন। রাফিন এখনও বউ সাজে আমাকে দেখেইনি।
ছোটআপ্পি ও খালামণি বাসায় ছিলেন। খালামণি আমাকে ভেতরে নিয়ে গেলেন। রুমের সামনে এনে বললেন,
“শেষমেশ হয়ে গেলি তো আমার ছেলের বউ? আজ থেকে কিন্তু আমি তোর শ্বাশুড়ি।”
আমি বৃথা হাসার চেষ্টা করলাম। এই মুহুর্তে আমার মোটেও হাসি পাচ্ছে না। বুকের ভেতরটা হাহাকার করছে।শেষমুহুর্তে নাকীবকেও পেলাম না। ওর কথা খুব মনে পড়ছে।
“যা, এটা ফাইয়াজের ঘর। আজ থেকে তোরও ঘর।”
খালামণি আস্তে আস্তে বললেন,
“আজ আর তুই আছিস বলে ওকে অন্যরুমে শিফট করতে হবে না।”
আমি খুকখুক করে কাশলাম। খালামণি ভেতরে নিয়ে গিয়ে খাটে বসালেন। একদমই সাদাসিধে ঘর। কোনো সাজসজ্জা নেই। এই বাড়ি দেখে মনে হচ্ছে না এখানে সদ্য বিয়ের মতো একটা বিশাল ব্যাপার ঘটে গেছে। আসার সময় গাড়িটাও দেখলাম একদম স্বাভাবিক, কোনো সাজসজ্জা করেনি। ঘরেও কোনো সাজসজ্জা নেই। বিছানায় সাদা একটা বেডশীট বিছানো। রুমের শেষপ্রান্তে পড়ার টেবিল-চেয়ার পাতা। এই রুমটা কম করে হলেও আমার রুমের সমান চারটা রুমের মতো হবে। এত্ত বিশাল ঘর রাফিনের? তবে ঘরে আহামরি কোনোকিছুই চোখে পড়লো না। যাকগে! আহামরি কোনোকিছুর দরকার নেই আমার। খুব সাধারণ থাকতেই ভালো লাগে। খালামণি আমার হিজাব, বোরকা খুলতে সাহায্য করলেন।
“কত জায়গায় পিন মেরেছিস বলতো? খুঁজেও তো কুল পাচ্ছি না। কে সাজিয়েছে রে তোকে?”
“শাওন আর সোহা।”
“মেকআপে পাক্কা মনে হয় ওরা।”
“হয়তো।”
ছোটাপ্পি এলেন তখনই। বললেন,
“চাচী, আমি করে দিচ্ছি। আপনাকে ফাইয়াজ ডাকছে, যান।”
ছোটাপ্পিকে আমার শুরু থেকেই কেমন যেন একটু অহংকারী মনে হয়। এই এতদিনেও তিনি আমার সাথে একটাও কথা বলেননি বলে বোধহয়৷ মুহুর্তেই নিজেকে মনে মনে ধিক্কার দিলাম, একজনের সম্পর্কে বাজে ধারণা করায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ‘তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। কারণ ধারণাভিত্তিক কথা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। [১] তিনি এসে একেকটা পিন খুলতে লাগলেন। তারপর আমার ধারণাকে সমূলে পাল্টে দিয়ে তিনি আমার সাথে আড্ডায় মেতে উঠলেন।
“ফাইয়াজ কিচ্ছু সাজাতে দেয়নি। ও বলেছে খুব সাধারণ একটা বিয়ে হবে। বিয়েতে বাড়ি সাজবে না, ঘর সাজবে না, গাড়ি সাজবে না। সাজবে শুধু যাদের বিয়ে হচ্ছে তারা অর্থাৎ বর-কনে। তোমাকে যেমন জাঁকজমকপূর্ণ করে সাজিয়েছে তেমন-ই সেও সেজেছে। সাজার পর কি বলেছে জানো?”
“কি?”
“বলেছে এটা তার আসল সাজ নয়। তার আসল সাজ সাজবে পরে, তোমার সামনে।”
আমি খুকখুক করে কেশে বললাম,
“এটাও বলেছে?”
“ও আমাকে আর আপ্পিকে সব বলে। তবে আপ্পিকে বলে গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো। আমার সাথে সব দুষ্টুমিমার্কা কথা বলে।”
আমার আবার নাকীবের কথা মনে পড়ে গেল। নাকীবও তো আমার সাথে দুষ্টুমি করে, গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে। আমাদের দুজনের তো আমরা ছাড়া কেউ নেই। গুরুত্বপূর্ণ হোক কিংবা দুষ্টামি সবই আমরা একে-অপরকে বলি। তাই হয়তো আরও বেশি মিস করছি। কি করছে এখন নাকীব?
রাফিন হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকে বললো,
“এ্যাই আপ্পি, আপ্পি ওর বোরকা খুলো না কিন্তু।”
“কেন?” ছোটাপ্পি চমকে বললেন। আমিও চমকে কেঁপে উঠলাম।
“কেন মানে? তুমি ওর সাজ দেখতে চাও? তুমি কি ওর বর?” একদম বাচ্চাদের মতো বললো রাফিন।
ছোটাপ্পি রাফিনের মাথায় গাট্টা মেরে বললেন, “বিয়ে করে পুরো পাগল হয়ে গিয়েছিস তুই। যা, খুললাম না আমি।”
ছোটাপ্পি চলে গেলেন। রুমে শুধু আমি ও রাফিন। ছোটাপ্পি দরজায় উঁকি দিয়ে বললেন,
“তোরা খেয়ে এসেছিস তো?”
“না, খাইনি। খাবার প্যাক করে দাও।”
“প্যাক করবো কেন? টেবিলে বেড়ে দিই।”
“বললাম তো প্যাক করো।”
“কোথাও যাবি?”
“পালিয়ে যাবো। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালিয়ে বিয়ে নিষিদ্ধ করেছেন, বিয়ে করা পালানো তো নিষিদ্ধ করেননি। তাই আমরা বিয়ে করে পালাবো, হ্যাপি? যাও, খাবার প্যাক করো।”
ছোটাপ্পি চলে গেলেন। রাফিন কিছুক্ষণ ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর দরজা বন্ধ করলো। তারপর আবার দাঁড়িয়ে রইলো। কিছুক্ষণ মাথা চুলকালো। শেরওয়ানির টপ বোতামটা খুলে ঢিল করলো। আবার লাগালো। চুল ঠিক করলো। গলা খাঁকারি দিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। ওর অবস্থা দেখে আমারই ঘাম বেরিয়ে যাচ্ছে। ও যদি এতটা নার্ভাস হয়, আমার তো এতক্ষণে অজ্ঞান হয়ে অ্যাম্বুলেন্সে থাকার কথা। আমিও ঢোক গিললাম বারকয়েক। রাফিন টেবিলের দিকে এগিয়ে গেল। আমি আঁড়চোখে ওকে দেখছিলাম শুধু। অবৈধ একজন আমার জন্য একনিমেষেই বৈধ হয়ে গেছে; মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে। আমার ভারী অবাক লাগছে। রাফিন চেয়ার টেনে বসে টেবিল থেকে হাঁতড়ে একটা প্যাড বের করলো। তারপর খসকস করে কি যেন লিখলো। লিখে খানিকক্ষন সেটা চোখের সামনে ধরে রাখলো। তারপর আলতো পায়ে হেঁটে এসে আমার হাতে কাগজটা দিয়ে রীতিমতো ছুটে পালালো রুম থেকে। ও যাওয়ার পর ওর দেওয়া কাগজটা খুললাম।
“বোরকা খুলে শুধু হিজাব করে নাও। আমরা বেরুবো।”
ওর কথামতো বোরকা খুলে চুপচাপ বসে আছি। ধীরে ধীরে সারাবাড়ি নিশ্চুপ হয়ে গেল। ঘড়ির টিক টিক শব্দ শোনা যাচ্ছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ইতিমধ্যেই একটা পঁয়ত্রিশ বাজে। রাফিন কোথায়? ঘরে আসছে না কেন? আমার কি করা উচিত? প্রচুর ক্লান্তি লাগছে। আমি কি ঘুমিয়ে পড়বো? উঁহ!
#Be_Continued_In_Sha_Allah ❣️
রেফারেন্স:
[১] বুখারী