#অগত্যা_তুলকালাম,পর্ব ৩৭,৩৮
নাফীছাহ ইফফাত
পর্ব ৩৭
মায়ের অসুস্থতা দিনদিন বেড়ে যাচ্ছে। বাবার মতে, ঘরে একা থাকতে থাকতে মায়ের এই অবস্থা হয়েছে। আমি মতামত দিলাম, নানুবাড়ি থেকে ঘুরে এলে হয়তো মায়ের মন ভালো হবে। মা আমার মতামতকে বয়কট করে দিলেন৷ নানা-নানু নেই কি হবে ওখানে গিয়ে? নাকীব জানালো, তাহলে খালামণির বাড়ি থেকে ঘুরে এসো। নাকীবের সিদ্ধান্ত মায়ের মনে ধরলো। মা বললেন,
“ঘুরে এসো নয়, তোরাসহ যাবি। খালার চেহারা তো ভুলতে বসেছিস। কতদিন যাস না।”
আমি দোনোমোনো করে বললাম, “মা, অনেক কাজ তো…”
“তোর কাজের আমি গুল্লি মারি।” খালার বাড়ি যাওয়ার কথা শুনে যেন মায়ের শরীরে দ্বিগুণ শক্তি ফিরে এলো। মা সটান উঠে বসলেন।
“কাজ-টাজ ফেলে রাখ। যা, গোছগাছ শুরু কর।”
“মা!” আহত স্বরে ডাকলাম।
“কোনো কথা না, যা বলছি। নাকীব, যা তোর বাবাকে বল আজ রাতের টিকেট কাটতে।”
“আজ রাতেই? মা, সত্যিই আমাদের কাজ আছে।” সুর যথেষ্ট কোমল করে বলে নাকীব।
“আবার তুই শুরু করেছিস? সর তো সামনে থেকে। শুনছো, তুমি কোথায়?” বলতে বলতে উঠে চলে গেলেন মা। আমরা দুজন তাজ্জব হয়ে মায়ের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলাম শুধু। বোনের বাড়ি যাবে শুনেই এতটা সুস্থ, গেলে না জানি কি হয়!
“আপু, মা তো সুস্থ হয়েই গেছে। আমরা তো মায়ের অসুস্থতার কথা ভেবে যেতে চেয়েছিলাম। তো এখন আর যাওয়ার কি প্রয়োজন?”
“সেটাই তো।”
ড্রইংরুমে গিয়ে দেখি বাবা অনলাইনে টিকেট কাটর তোড়জোড় করছেন। জিজ্ঞেস করলাম,
“কয়টা টিকেট কেটেছো বাবা?”
“কাটিনি এখনও। আগে কে কে যাচ্ছে কনফার্ম কর।”
“কিসের কনফার্ম আবার? সবাই যাচ্ছে।” মা চেঁচিয়ে উঠলেন।
“আচ্ছা মা, দাদু কিভাবে যাবে অতদূর ভেবেছো?”
“দাদুকে ফোন দিয়েই জিজ্ঞেস কর।”
নাকীব সত্যি সত্যিই ফোন দিলো দাদুকে। দাদু সাফ জানিয়ে দিলেন তিনি যাবেন না। দাদুর দেখাদেখি বাকিরাও না করে দিলো। আজব ব্যাপার! ওদেরকে রেখে আমরা যাই কি করে? আমিও না করলাম। আমার দেখাদেখি নাকীবও৷ মা গর্জে উঠলেন,
“থাপ্পড় মেরে সবক’টার দাঁত ফেলে দিবো আমি। কেউ না গেলেও তোরা দুটো যাচ্ছিস এটা কনফার্ম। তুমি আগে এই দুটোর টিকেট কনফার্ম করো তো।”
“আরে আজব! আমাদের নিয়ে পড়লে কেন?”
“তোদের নিয়ে না পড়ে কাকে নিয়ে পড়বো? যা রেডি হ, নাহয় সবকটা দাঁত ভেঙ্গে দেবো।”
“মা, একবারও ভেবে দেখেছো দাঁতগুলো কিন্তু তুমি গজিয়ে দাওনি৷ এগুলো আল্লাহ তাঁর নিপুণ কৌশলে গজিয়ে দিয়েছেন। সো, এগুলো তুমি কথায় কথায় ভেঙ্গে দিতে পারো না। কথায় আছে না, দাঁত থাকিতে দাঁতের মর্ম…” গম্ভীর স্বরে বললো নাকীব।
“চুপ কর হতচ্ছাড়া!”
আমরা কেউই বুঝলাম না, মা হঠাৎ করে এত রিয়্যাক্ট করছে কেন। কথা না বাড়িয়ে নিজেদের রুমে চলে এলাম। এসেই নাকীবের মাথায় সজোরে একটা গাট্টা মারলাম।
“তোর জন্য হয়েছে সব। তুই বলেছিস খালার বাড়ির কথা। এখন অতদূর যা।”
“আমি কি জানতাম?”
“তুই কিছুই জানতি না। যা এখন কাজ সামলে নে। ক’দিনের ঝক্কি আল্লাহ ভালো জানে।”
“তুমি আমায় দোষারোপ করছো কেন? আমি একবারও বলেছি আমি যাব?”
“যাবি না তাও তো বলিসনি।”
“এ্যাঁই, যাবো না বলেছি আমি। মিথ্যে বলবে না একদম।” সটান দাঁড়িয়ে আমার দিকে আঙ্গুল তাক করে নাকীব বললো।
“চুপ থাক।”
“উফ আপু! আমরা কেন ঝগড়া করছি?”
“জানি না৷ আচ্ছা যা গিয়ে রেডি হ।”
“হুহ অগত্যা…”
“তুলকালাম।”
আজ রাতে আমরা রওনা হওয়ার কথা। রওনা দেওয়ার আগে আমরা দুজন একবার শান্তি কুঠিরে এলাম। দাদুকে বারবার করে বলে দিয়েছি, যেন সাবধানে থাকে। এই প্রথম ওদেরকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি। বুকের ভেতর অজানা আশঙ্কায় দুরুদুরু করে কাঁপছে। ঝিলিকে আসতে বললাম সাথে, এলো না৷ আমার অবর্তমানে নাকি সে অসংখ্য গল্প শুনে ফেলবে দাদুর কাছ থেকে। বিচ্ছুগুলো শুধুমাত্র দাদুর কাছে গল্প শুনবে বলে যাচ্ছে না। আসার ঠিক আগমুহূর্তে ব্যাপারটা জানলাম৷ মাহফুজ আবরারকে ফিসফিস করে বলছে,
“আপু চলে গেলে সারারাত জেগে গল্প শোনা যাবে। আর কেউ বকবে না আমাদের।”
নাকীবকে বললাম, “যা এক্ষুনি গিয়ে ঠাস করে একটা দিয়ে আয় ওকে।”
নাকীব ভ্রু কুঁচকে তাকালো আমার দিকে। মারামারি ওর স্বভাবে নেই। আমি নিজেই একটা চটকানা মারলাম নাকীবকে। ও বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে থাকলো আমার দিকে।
শান্তি কুঠির থেকে ফিরে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে স্টেশনে চলে এলাম। প্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় ডায়েরিটা নিতে আমার ভুল হলো না। রাত দশটায় ট্রেন ছাড়লো। আলাদা একটা কেবিনে শুধু আমরা চারজন। জানালার সিটটা বরাবরই আমার জন্য বরাদ্দ। যদিও এখানে চারজনই জানালার পাশেই বসেছে। যেহেতু দু’পাশে দুটো করে জানালা৷
খালার বাড়ি গ্রামাঞ্চলে। ট্রেনে করে যেতে হয়। রেলস্টেশনে পৌঁছাতেই লেগে যায় ছয় ঘন্টা৷ ওখান থেকে আরও তিনঘন্টা স্থলপথে ঝক্কিঝামেলা সামলে তারপর নৌপথে আধঘন্টা যাত্রার পর খালার বাড়ি৷ যতই গ্রামাঞ্চলে হোক না কেন খালার বাড়ি কিন্তু বেশ বিলাসবহুল। খালার দুই ছেলে, রানভীর ও তানভীর। বড় ছেলে বিদেশ থাকে পরিবারসহ। ছোট ছেলের এখনও বিয়ে হয়নি। সে মায়ের সাথেই থাকে। খালার বাড়ি যেতে আপত্তি করার প্রধান কারন হলো তানভীর ভাইয়া। জানি না ওখানে পর্দা রক্ষা করতে পারবো কিনা। তানভীর ভাইয়া, খালু প্রত্যেকেই আমার নন-মাহরাম। অথচ দেখা হলে কথা না বলে পারবো না৷ তানভীর ভাইয়াকে যতদূর চিনি সে যথেষ্ট ভালো মনের একজন মানুষ৷ তবুও ভয় হচ্ছে কি হবে এই ভেবে।
রাতের আঁধারে ট্রেন ছুটছে সাঁই সাঁই করে। প্রকৃতির কিচ্ছুটি দেখতে পাচ্ছি না। রাতের ভ্রমণ যদিও আরামদায়ক তবুও যাত্রাপথে যদি সুন্দর প্রকৃতিই দেখা না যায় তাহলে সেই যাত্রা বিফল। বগিতে মৃদু আলো জ্বলছে। বাবা-মা কিছুক্ষণ জানালার বাইরে চোখ রেখে গল্প করেছিলেন। এরপর একটা সময় ঘুমিয়ে পড়লেন। নাকীব মোবাইল টিপছে। আমারই করার কিছু নেই শুধু। জানালা দিয়ে হু হু করে বাতাস ঢুকছে। বাইরে তাকিয়ে আছি নিষ্পলক। পেছনে ফেলে আসছি চেনা শহর। হঠাৎ থমকে গেলাম। কাশবনের মাঝখান দিয়ে ছুটছে ট্রেন। নাকীব হাত দিয়ে দেখালো, ঐ যে আপু নতুন শেইপের বিল্ডিংটা। আমি তাকালাম। মুহুর্তেই আঁধারে অদৃশ্য হয়ে গেল। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জানালায় হেলান দিয়ে তাকিয়ে রইলাম বাইরে। বাবা ঘুমঘুম কন্ঠে ডাকলেন,
“হৃদি, মা জানালা লাগিয়ে দে। বাতাস আসছে, ঠান্ডা লেগে যাবে।”
“আচ্ছা বাবা।” জানালা টেনে দিলাম।
বাবা আবার বললেন, “নাকীব, ঘুমিয়ে পড় বাবা। সকালে অনেক ধকল সামলাতে হবে।”
“অকে বাবা।”
কেবিনের মাঝখানে পর্দা টেনে দিয়ে আমরা নিজেদের কাজ করতে লাগলাম। ঘুম আসবে না জানা আছে। ডায়েরিটা বের করলাম। এটাই পড়ি বসে বসে। ডায়েরি বের করতেই নাকীব তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,
“ছেঁড়া ডায়েরিটা এখানেও নিয়ে আসতে হলো?”
”ছেঁড়া কই?”
“অন্যের ডায়েরি একটা পড়ছো মাসের পর মাস ধরে। আমার হলে একদিনে শেষ হয়ে যেত। আবরারকে দিয়ে দেখতে সে একঘন্টায় শেষ করে ফেলতো।”
“বকবক করিস না৷ বাবা-মা ঘুমাচ্ছে। তুইও ঘুমা।”
“হাহ! ভালো বললে খারাপ হয়।” বড় করে হাই তুলে সিটে হেলান দিয়ে বসলো নাকীব।
আমি চোখেমুখে রাজ্যের বিরক্তি ভাব এনে বলি,
“হাই তুললে যে আসতাগফিরুল্লাহ পড়তে হয় সেটাও ভুলে গেছিস?”
তাৎক্ষণিক হাই গিলে বললো, “উপস স্যরি!”
“আর হাই শয়তানের কাছ থেকে আসে। পারতপক্ষে না তোলাই ভালো।”
“হুম। অকে গুড নাইট।”
“হুম।”
ডায়েরির পাতায় মনোযোগ দিলাম। “ভালোবাসার আরেক নাম অসহায়ত্ব”। অজান্তেই বুক ফুঁড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। রবকে ভালোবাসলে কোনো অসহায়ত্ব কাউকে কাবু করতে পারে না। বরং সমস্ত অসহায়ত্ব দূর হয়ে যায়৷
প্রেয়সীকে ফোনে না পেয়ে শলাবাবুকে ফোন করলাম। সে গিয়ে ফোনটা দিয়ে এলো। কল করতেই থাকলাম দেখি ফোন রিসিভ হচ্ছে না। বুঝতে বাকি রইলো না ফোনটা কার কাছে। অনেকক্ষণ পর রিসিভ হলো। রিসিভ হতেই সমস্ত রাগ উগড়ে দিলাম ওর ওপর।
“কি সমস্যা তোমার? এত দাম বেড়ে গেছে? কি মনে হয় তোমার সাথে কথা বলার জন্য আমি কান পেতে আছি? আমার টাইমের ভ্যালু নেই?”
“কি আশ্চর্য! আমি বলেছি তোমাকে ফোন করতে? আর একজন স্ক্রু ঢিলা মানুষের সাথে তোমার মতো ভালো মানুষ কেন কথা বলবে? হোয়াই? নো নিড!”
আগের দিন রাগের মাথায় ওকে যাচ্ছেতাই বলেছি। তারই ফল ভুগতে হচ্ছে আজ। কন্ঠ মোলায়েম করে বললাম, স্যরি! এরপর দেখা করতে বলায় তার দাম যেন আরও বেড়ে গেল। সে আমাকে আল্লাহ-রাসূলের ভয় দেখাতে লাগলো। আজব! প্রেম করার সময় আল্লাহ-রাসূল কই ছিল? স্বার্থে আঘাত লাগলেই আল্লাহ-রাসূল না? ওর প্রতি তাৎক্ষণিক আমার খুব ঘৃণা জন্মালো ইসলামকে স্বার্থের জন্য ব্যবহার করছে ভেবে। কিন্তু ওর সাথে সাক্ষাৎ এর পর ভুলটা ভাঙলো। ও আসলেই মনে হয় দ্বীনের পথে ফিরছে।
দ্বীনের পথে ফিরছে খুবই ভালো কথা। কিন্তু আমার সাথে দেখা করার পর এমন সব বিষয়ে সে কথা বলতে লাগলো যে আমার মেজাজ তুঙ্গে চড়ে বসলো। পরপর দুটো দিন ওর সাথে আমার ঝগড়া, আমার মতো কার সাথে যেন ওর দেখা হয়েছে সেই ভাবনা, সাথে সেই স্বপ্নটা। আমার মাথার সব চুল ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছিলো। এরমধ্যে বাবা উঠেপড়ে লেগেছে আমায় মাদরাসায় পাঠাবে নয়তো বিজনেসে ঢুকিয়ে দিবে বলে। আবার এখানে এসে ওর মুখেও সেইম কথা। সে নাকি আমায় বিয়ে করতে চায় আর তার জন্য আমার বিজনেস করতে হবে। এতদিনকার সমস্ত সমস্যা যেন রাগ হয়ে ওর সামনেই ফেটে পড়লো৷ একেকটা সমস্যা যেন একেকটা কথার বোম্ হয়ে ওর ওপর গিয়ে ফেটেছে। প্রচন্ড রাগারাগি হলো ওর সাথে। রাগের চোটে ওর বাবা-মাকে নিয়ে পর্যন্ত খারাপ কথা বলে ফেলেছি আমি। এককথায়, আমার নিজের জীবনের সমস্ত রাগ আমি ওর ওপর ঝেড়েছি৷ জানি না সেদিন কি পরিমাণ কষ্ট পেয়েছিলো। আর একটা কথাও না বলে সে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলো। ও চলে যাওয়ার পর মাথায় হাত দিয়ে অনেকক্ষণ বসেছিলাম কাশবনে। ওকে দেওয়া কষ্টে আমি নিজেও মুষড়ে পড়েছি বারংবার। সম্পর্কে ফাটল ধরলো। মানুষ সব সহ্য করতে পারে কিন্তু বাবা-মায়ের অপমান কেউই মেনে নেয় না। আমার নিজেরও বড্ড অহংকার চলে এসেছিলো মনে। ও আমার সব কথা শুনে তো তাই ওকেই যেন রাগ ঝাড়ার জন্য পাই সবসময়। নিজেকে ধিক্কার দেওয়ার সীমা অতিক্রম করলাম। কিচ্ছু ভালো লাগছিলো না। এরমধ্যে বাবা তার এক বন্ধুর ছেলের সাথে আমাকে যেতে বললেন। ছেলে পাত্রী দেখতে যাচ্ছে কয়েকদিনের মধ্যে। ছেলে আবার আমারও বন্ধু। আমার এখন মোটেও সেসবের মুড নেই। তবু বাবার কথা রাখতে যাওয়ার সম্মতি দিলাম সেখানে। আদৌ জানা নেই যাবো কিনা।”
ডায়েরি পড়তে পড়তেই হঠাৎ হাত থেকে ডায়েরি উল্টে পড়ে গেল। ট্রেনে অদ্ভুত একটা শব্দ হচ্ছে। হুড়মুড় করে জেগে উঠছে সবাই। জানালা দিয়ে মাথা বের করে দেখলাম পেছনের বগিতে আগুন লেগেছে। আগুন লেগেছে তারও পেছনের আরও দুই বগিতে। মূলত পেছন দিক থেকে আগুন লাগতে লাগতে তিনটি বগিতেই আগুন লেগে গেছে। আগুনের হলকা আমাদের বগির দিকেই ছুটে আসছে। বুক ধড়ফড় বেড়ে গেল। কি করা উচিত ভেবে পেলাম না। তিন তিনটে বগি পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে। তবে কি এই যাত্রাই জীবনের শেষ যাত্রা? ঝাঁকুনিতে বাবা-মা জেগে আমাদের দুজনকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন। মরলে একসাথে পুরো পরিবার চলে যাবো। জীবনের পাপের অধ্যায়গুলো উল্টেপাল্টে দেখছিলাম। মৃত্যু এত কাছে কখনো ভাবিইনি। আর কিছু ভাবতে পারলাম না প্রচন্ড বিস্ফোরণে কান ঝালাপালা হয়ে গেল।
#Be_Continued_In_Sha_Allah 🥀
#অগত্যা_তুলকালাম
নাফীছাহ ইফফাত
পর্ব ৩৮
চোখ খুলে দেখি ট্রেন ছুটছে দ্রুতগতিতে। বেঁচে আছি কি করে ভেবে পেলাম না। বাবার কাছ থেকে সরে এসে জানালার বাইরে মাথা বের করলাম। আমাদের বগিটাই শেষ বগি। পেছনের তিনটে বগির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া গেল না। হয়তে বিস্ফোরণে তিনটা বগিই উড়ে গিয়েছে। মহান রবের অপার দয়ায় বিমোহিত হয়ে গেলাম। তিনি আমাদের সামনে কিভাবে যেন অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে রেখেছিলেন। চলন্ত ট্রেনেই সিজদাহয় লুটিয়ে পড়লাম। আল্লাহু আকবর বলতে বলতে নিঃশ্বাস আটকে আসছিলো আমার। আল্লাহ এত্ত মহান! আগে শুধু মহান বলতাম, ভাবতাম৷ কিন্তু উপলব্ধি করতে পারিনি কখনো৷ আজ মৃত্যুকে এত কাছ থেকে দেখে তাঁর মহত্ত্ব বুঝতে পেরেছি। কথায় আছে না, মানুষ ঠেকে শিখে। ঠেকায় না পড়লে আল্লাহ চেনা যায় না। সত্যিই আজ আল্লাহকে চিনেছি অন্য আরেকভাবে।
ধকল সামলে উঠতে উঠতে ঘন্টাখানেক লেগে গেল। তারপর আবার সব শান্ত। রাতের আঁধারে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেল সবাই৷ এখন মধ্যরাত। আল্লাহ ডাকছেন আমাদের। আল্লাহর ডাকে সাড়া দিতে আজ তাহাজ্জুদ পড়তে পারছি না। ট্রেনে ওযু করার উপায় নেই। তায়াম্মুমের জন্য মাটি নেই। আসার আগে কিছু মাটি নিয়ে নেওয়া উচিত ছিল। নিচে পড়ে থাকা ডায়েরিটা তুলে ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখলাম। পড়ার মুড চলে গেছে। আল্লাহর যিকর করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম নিজেই জানি না। সকালে যখন ঘুম ভাঙলো তখন বাবা ট্রেন থেকে নামার তোড়জোড় করছেন। ঘুম ভাঙ্গার মিনিট পাঁচেক পরই রেলস্টেশনে আমরা জিনিসপত্র নিয়ে নেমে পড়লাম।
তানভীর ভাইয়া স্টেশনে এসেছে আমাদেরকে নিতে। নাকীবের পিছু পিছু হাঁটছি যাতে ওনার সাথে কথা বলতে না হয়৷ ভাইয়া সবার সাথে কথা বললেন। আমার সাথে কথা বলতে এলেই নাকীব হেসে বলে উঠলো,
“চলেন ভাইয়া, যাওয়া যাক। ওসব বাড়িতে গিয়ে হবে।”
তানভীর ভাইয়া ব্যাপারটা বুঝলেন না। তিনিও হেসে লাগেজ টেনে গাড়িতে উঠাতে লাগলো। তারপর শুরু হলো আমাদের তিনঘণ্টার যাত্রা। তানভীর ভাইয়া ড্রাইভ করছেন, পাশের সিটে বাবা। পেছনের সিটে মা, নাকীব ও আমি। গাড়িতে সবাই কথা বলছে শুধু আমি চুপ৷ কন্ঠস্বরও পর্দার অন্তর্ভুক্ত তাই৷ জানালার বাইরে তাকিয়ে আছি। সদ্য ভোর হতে শুরু করেছে৷ আমাদের আরও আগে আসার কথা থাকলেও ট্রেনে ঝামেলা হওয়ায় দেরী হলো। বাবা হয়তো খালামণিকে জানিয়েছেন ঘটনা৷
গাড়ি ছুটছে আপন গতিতে। শীতল হাওয়ায় নিকাব উড়ে যেতে চাইছে। দূরন্ত বাতাসে চোখ খোলা রাখা দায়৷ বেশ ভালোই লাগছে। গাছের ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে এক চিলতে রোদ। হয়তো সূর্য উঁকি দিচ্ছে পূব আকাশে।
তানভীর ভাইয়ার ঠিক পেছনে বসে আমি। আমার জানালার গ্লাস খোলা রাখায় হয়তো ওনার সমস্যা হচ্ছিল। তিনি মোলায়েম কন্ঠে বললেন,
“হৃদি, গ্লাস কি আরেকটু উঠিয়ে দিবে?”
আমি বিনাবাক্যে গ্লাস খানিকটা তুলে দিলাম।
সকাল সাতটা নাগাদ আমরা পৌঁছালাম ঘাটে। এখান থেকে বাকী পথ নৌকায় পাড়ি দিতে হবে। তানভীর ভাইয়া আমাদেরকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি দিয়ে এলেন তার বন্ধুকে। গাড়ি অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরিয়ে বাড়ি নিতে হবে। সে রাস্তা বহুদূর গিয়ে বাড়ির পথ ধরেছে৷ যেতে লেগে যাবে আরও প্রায় ৩/৪ ঘন্টার মতো৷ তবে গাড়িটা এখানেই কোথাও গ্যারেজে রাখে। বাবাকে এসব কথা বলছিলেন তানভীর ভাইয়া। শুনতে শুনতে বেশ হাঁপিয়ে উঠছি৷ এতদূরে মানুষ থাকে? ধুরর! কোন কুক্ষণে যে নাকীব খালার বাড়ির কথাটা বলেছিলো। যত্তসব!
নাকীব ফিসফিস করে বললো, “কি এত বিড়বিড় করছো?”
তানভীর ভাইয়া আগেই নৌকায় উঠে পড়েছেন৷ তারপর মাকে টেনে তুললেন তিনি। এরপর বাবা গেল, তারপর তিনি স্বাভাবিকভাবেই আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন। নাকীবকে ঠেলে দিয়ে বললাম, “সবই তো জানিস।”
ও হাসতে হাসতে ভাইয়ার হাত ধরে এক চোখ টিপে আমার দিকে হাত বাড়ালো৷ ওর হাত ধরে নৌকায় পা রাখলাম।
নৌকাতেও আমরা দুজন পাশাপাশি বসেছি। মায়ের পাশে তানভীর ভাইয়া, মাঝখানে বাবা। নাকীবকে বললাম,
“তানভীর ভাইয়া যতক্ষণ আমার আশেপাশে থাকবে ততক্ষণ তোর মনোযোগ যেন আমার দিক থেকে না সরে।”
“হ্যাঁহ! বডিগার্ড রাখছো আমাকে?”
“খুব তো বড় গলায় বলিস বাবা-মায়ের অবর্তমানে তুই নাকি আমার গার্জিয়ান?”
“হুহ! দেখছো না শুরু থেকে সামলে আসছি? বাবা-মা কিছু করেছে? ওরা চক্ষুলজ্জার ভয়েও তানভীর ভাইয়াকে কিছু বলবে না।”
আমাদের কথা বলার মাঝখানেই তানভীর ভাইয়া আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“হৃদি দেখছি বরাবরই চুপচাপ৷ এসে পর্যন্ত একটা কথাও বলেনি।”
নাকীব আমার দিকে তাকালো আর ফিক করে হেসে বললো,
“লাষ্টটাইম যখন আপনাদের দেখা হয়েছিল তখন নাকি ঝগড়া করেছিলেন? সেই রাগ রয়ে গেছে বোধহয় মনে।”
তানভীর ভাইয়া একটু লজ্জা পেলেন মনে হয়৷ মা বললেন,
“তোদের তো এই ঝগড়া, এই মিল। সেসব ধরে বসে থাকলে হবে হৃদি?”
আরে ধুর! আমি আবার সেসব কবে ধরে বসে থাকলাম? আমার তো মনেই ছিলো না ওনার কথা। ওনার সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিল অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে থাকতে বোধহয়৷ কবেকার কথা আমার মনেও নেই। তবে হ্যাঁ, ছোটবেলা থেকে আমাদের মধ্যে ঝগড়াটা লাগতো প্রচুর। তানভীর ভাইয়া সারাক্ষণ আমার পেছনে লেগে থাকতো আর কাঁদাতো আমায়৷ খালামণি তো প্রায়ই বলতেন,
“তানভীর বোধহয় আজীবন তোর পিছেই লেগে থাকবে রে হৃদি।”
তানভীর ভাইয়া আমায় ঠিক নামে ডাকতো না কখনোই। সবাই হৃদি ডাকলে সে ডাকবে জেদি বলে। খুবই বিরক্তিকর একটা ব্যাপার। তবে তার ব্যক্তিত্ব প্রতিনিয়ত মুগ্ধ করে আমায়। দুষ্টামির সময় দুষ্টামি কিন্তু একবার গম্ভীর হয়ে গেলে ওনাকে বোঝে এমন সাধ্য নেই কারো। তবে উনি শুধু আমাকেই ক্ষেপাতো এবং আমার সাথেই যত দুষ্টামি করতো৷ আমাদের আরও খালাতো, মামাতো ভাইবোন থাকলেও তাদের সবার সাথে তিনি খুব একটা মিশতেন না। জাস্ট হাই, হ্যালো সম্পর্ক সবার সাথে। নাকীবের সাথেও ওনার খুব একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নয়।
“এ্যাঁই হৃদি, কখন থেকে কথা বলে যাচ্ছি। তোর কোনো সাড়া নেই কেন?”
“ও ভাবছে মা, ভাবতে দাও৷ ওর বিরাট বড় সাম্রাজ্য আছে ওগুলো তো ফেলে এসেছে। খাজনা আদায় করেনি বলে ক’দিন পর বোধহয় অন্য রাজা ওর সম্পত্তি দখল করতে আসবে৷ খাজনা কিভাবে আদায় করবে সেই চিন্তায় ব্যস্ত আমাদের চিন্তিত মহারাণী।” বাদাম ছিলে চামড়াগুলো হাত থেকে ফু দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে একমুঠো বাদাম মুখে পুরে দিয়ে বললো নাকীব।
সবাই হো হো করে হাসতে লাগলে ওর কথায়। যেন খুব মজার জোকস বলেছে। তানভীর ভাইয়া না থাকলে নিশ্চিত একটা কিল খেতো আমার। অসভ্য ছেলে!
আমাদের নামার সময় হয়ে এলো। নৌকা থেকে নামার সময় যথারীতি হাত বাড়িয়ে দেয় তানভীর ভাইয়া৷ তিনি সবাইকেই আসলে নিজে হাতে ধরেই নামাচ্ছেন। অন্য কোনো উদ্দেশ্যে আমার দিকে হাত বাড়াচ্ছেন তেমনটা নয়৷ নাকীব হেসে আমার হাত ধরে বললো,
“ছোট হয়েও সেই ছোটবেলা থেকে ওকে টানছি ভাইয়া। মাঝখান থেকে আপনি আর কষ্ট করবেন কেন? আমিই তুলি।”
কথাটা যদিও খোঁচা মারা তাও নাকীবের বুদ্ধির তারিফ করতে হয়৷ নৌকা থেকে নেমে অল্প কিছুটা হেঁটে তারপর খালামণির বাসা। নাকীবের পাশাপাশি হাঁটছি৷ ও সারাক্ষণ কার সাথে যেন চ্যাট করছে। বুঝলাম না, হঠাৎ কার সাথে এত কথা বেড়ে গেল। আর এখানে আসার পর থেকে দেখছি ও শুধু আমায় খোঁচাচ্ছে। একবার সুযোগ পেয়ে নিই মজা দেখাবো তোকে। চুইংগাম চিবাতে চিবাতে চ্যাট করছে নাকীব৷ আমার দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে বললো,
“এত খেয়াল রাখছি তাও আমায় মজা দেখাতে ইচ্ছে করছে তোমার? যাও সরে দাঁড়ালাম। তানভীর ভাইয়া তোমায় মজা দেখাক।”
বলেই সরে দাঁড়ালো। তানভীর ভাইয়াকে গিয়ে বললো,
“ভাইয়া, আপনার সাথে নাকি আপুর কথা আছে।”
“কি অসভ্য!” বিড়বিড় করে বললাম।
তানভীর ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “কথা বাড়ি গিয়ে হবে জেদি। স্যরি, হৃদি। এই তো কাছেই, চলে এসেছি।” মায়ের লাগেজটা টানতে টানতে দ্রুত সামনে অগ্রসর হলেন তানভীর ভাইয়া।
তানভীর ভাইয়া চলে যেতেই ধুম করে একটা কিল বসিয়ে দিলাম নাকীবের পিঠে। ও সাথে সাথে চেঁচিয়ে বললো,
“মা, দেখো না আমায় কত জোরে একটা কিল বসিয়ে দিলো।”
“কেন রে হৃদি? বেড়াতে এসে এমন করছিস কেন? তানভীর দেখলে কি বলবে?”
আমি কিছু বলার আগেই নাকীব বললো,
“তানভীর ভাইয়া ওকে জেদি বলেছে সেই রাগ আমার ওপর মিটাচ্ছে আর কি!”
আমি রাগে আর কোনো কথাই বললাম না। বাবার পাশাপাশি হাঁটতে লাগলাম। বাবাকে বললাম,
“বাবা, তোমাদের কথা রাখতে তো এসেছি। পর্দা মেইনটেইন করতে পারবো তো?”
“ইন শা আল্লাহ পারবি।”
“বাবা, তোমরা আমায় তানভীর ভাইয়া কিংবা খালুর সাথে কথা বলতে বাধ্য করবে না বলো?”
“আচ্ছা।”
নাকীব তখনই আসে আমার কানের পাশে বাবল ফুলালো। আমার হিজাবে লেগে গেল ওর চুইংগাম। আমি ওকে ধাক্কা দিতেই ও হাসতে হাসতে মায়ের পাশে চলে গেল। আমি আর্তনাদ করে বললাম,
“বাবা, আমার নতুন হিজাব! তোমার ছেলেটা এত অসভ্য হলো কবে বলতো?”
“বাদ দে তো। ওকে কখনো এত উৎফুল্ল দেখিনি আগে। এত দুষ্টুমি করতেও দেখিনি। এখানে এসে হয়তো ওর মনটা একেবারে ভালো হয়ে গেছে।”
“হুম।”
“ছেলেটা আমার ছোটবেলা থেকেই বুঝে বেশি। কখনো দুষ্টামি করেনি, কোনোকিছু নিয়ে উচ্চবাচ্য করেনি। আজ একটু দুষ্টুমি করছে, করতে দে।”
খালার বাড়িতে এলাম অবশেষে। সেই পুরোনো আমলের মস্তবড় জমিদার বাড়ি। পলেস্তারা খসে খসে পড়ছে দেয়াল থেকে। জমিদার বাড়ির সাথে ভালোই খাপ খেয়েছে সেগুলো। বাড়ির চারপাশে শ্যাওলা, লতাগুল্ম দিয়ে ভরপুর। বলা যায়, নির্জনে বহু জায়গাজুড়ে শুধুমাত্র এই একটা প্রাসাদ দাঁড়িয়ে আছে একাকী। বাইরে থেকে ভিউটা অসাধারণ।
বাড়ি ঢুকতেই খালামণি হৈহৈ রৈরৈ শুরু করে দিলেন। দু’বোনের জড়াজড়ি পর্ব চললো অনেকক্ষণ। বাবা আর খালুরও বেশ জমে গেল। খালুর বড় ভাইও আছেন সাথে। খালুর চেয়ে বেশি খালুর বড় ভাইয়ের সাথে ভাব হয়ে গেল বাবার। খালামণি সবার সাথে কথা বলে তারপর এলেন আমার এবং নাকীবের দিকে।
“নাকীব তো দেখি আমাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিস বাবা। তোকে কোলে নিয়ে হিসু করিয়েছি ক’দিন হলো? এখনো স্পষ্ট মনে আছে আমার।”
নাকীব লজ্জায় লাল হয়ে গেল। আমি ভেতরে ভেতরে হাসিতে ফেটে পড়লাম।
“ওমা! কত বড় হয়ে গেছিস রে তোরা। হৃদি, তোকে তো সেদিনও আমি কোলে নিয়ে হাঁটছিলাম। ওমা! তুই এতবড় হয়ে গেলি? ক’দিন পর তো বিয়েও দিয়ে দিতে হবে।”
আমি লজ্জাসূচক হাসি হাসলাম।
আমাকে হাসতে দেখে বললেন, “লজ্জাও পাচ্ছিস দেখি। লজ্জা পেয়ে কি হবে? ক’দিন পর তো আমার কাছেই থাকবি।”
আমি মুখ তুলে তাকালাম। কথাটা ঠিক বুঝিনি তাই। খালামণি তানভীর ভাইয়াকে টেনে এনে আমার পাশে দাঁড় করিয়ে দিলেন। ধাক্কা খেয়ে তিনি মোটামুটি আমার হাতের সাথে ঠেসে দাঁড়ালেন। মুহুর্তেই আমি খানিকটা সরে দাঁড়ালাম। তানভীর ভাইয়াও রীতিমতো ছিঁটকে দাঁড়ালেন। বুকের ভেতর ধড়ফড় করছে। কি হচ্ছে এসব? এসেই ফেৎনার জালে জড়িয়ে গেলাম মনে হয়।
খালামণি আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন,
“ভালোই মানাবে। শোন তানভীর, এতদিন পিছে লেগেছিস এবার তো পাশাপাশি চলতে হবে। বুঝলি?”
তানভীর ভাইয়া কি বুঝলো আমি জানি না। তবে আমার যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে। এসব প্ল্যান কবে থেকে চলছে? মায়ের অসুস্থতা, আমাদেরকে বাড়িতে ডেকে আনা, বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান করা, সব বাদ দিয়ে খালার বাড়িতে আসা এসবই কি প্ল্যানের অন্তর্ভুক্ত? আর নাকীব? সে-ও কি এসবের সাথে শামিল? নাকীবই তো প্রথমে খালামণির বাড়ি আসার কথা বললো।
#Be_continued_In_Sha_Allah 🥀