অগত্যা_তুলকালাম,পর্ব ২৫,২৬

#অগত্যা_তুলকালাম,পর্ব ২৫,২৬
নাফীছাহ ইফফাত
পর্ব ২৫

কয়েকদিনের মধ্যেই ঝিলিসহ সবাই আমাদের মনে জায়গা করে নিলো। বাচ্চাগুলো আসলে খুবই ভালো। শুধু যত্নের অভাবে আর অবহেলায় রাস্তাঘাটে যা পায় তাই খেয়ে বড় হচ্ছিলো। ক্ষুধার জ্বালায় হয়তো চুরিও করেছে। বুয়া ওদের সবাইকে সুন্দর করে গোসল করিয়ে ব্রাশ করিয়ে দিলো। তারপর নতুন পোশাক পরার পর ওদেরকে দেখে চিনতেই পারছিলাম না আমি। কি যে সুন্দর আর ফুটফুটে দেখাচ্ছিলো ওদেরকে। কোনো ধনী বাড়িতে জন্ম হলে হয়তো সবসময় ওরা এমনই থাকতো।

বিকেলে ওদের সাথে বসে নাস্তা করছিলাম। একপর্যায়ে বললাম,
“আচ্ছা, তোমরা কখনো চুরি করেছো?”
“অনেকবার করছি।”
“অনেকবার? কি বলো? কেন করেছিলে?”
“আমরা যে বস্তিতে থাকতাম ওখানে কুলসুম আপা আর মাহফুজ ভাই মিইল্যা একমাস সময় নিয়া সুন্দর করে একটা ঘর বানাইছিলো। যেদিন বানানো হইলো তার ফরদিন নেতার দলবল আইসা ভাঙচুর করে গেলোগা। এরপর আর ঘর বানাইনাই। ঝুপড়ি বানাইয়া আছিলাম। সারাদিন কাগজ টোকাইতে থাকতাম কিন্তু বেচতে পারতাম না৷ না খাইয়া থাওন লাগতো। ফুটপাতের দোকান থেইকা মাঝেমধ্যে কিছু দিলে খাইতাম নইলে উপোস তাকতাম। তহন সুযোগ পাইলে চুরি কইরা খাইতাম।” আবির বললো।

আহারে! বাচ্চাগুলোর কত নির্মম জীবন। এদিকে আমরা একটার ওপর পাঁচটা খাবার খাচ্ছি। না খেলে বাবা-মা জোর করে খাওয়াচ্ছে। কত খাবার আবার ফেলেও দিচ্ছি। আর ওরা খেতেই পায় না।

আমি বললাম, “তোমরা অনেক কষ্ট করেছো। জানো রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও দরিদ্র ছিলেন কিন্তু তিনি ছিলেন বিশ্বজাহানের নেতা। তারপরও তিনি অত্যন্ত দরিদ্রের সাথে জীবন কাটিয়েছেন। তিনি নিজের সব সম্পদ অনায়াসে বিলিয়ে দিতেন। যদি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে একটি কেজুর থাকতো, তবে কেউ যদি সেটাও চাইতো তিনি দিয়ে দিতেন। এতই দয়ালু ছিলেন। তিনি কখনো ভরপেটে খাবার খেতেন না। আর জানো, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি পেট ভর্তি করে খানা খাশ তার ঐ পেট আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট পাত্র। [১] তোমরাও এতদিন অজান্তেই রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ করেছো। দারিদ্র্যের জীবন কাটিয়েছো৷ জানো, দরিদ্ররা ধনীদের বহু বছর আগেই জান্নাতে যাবে।”
“জান্নাত কি?” ঝিলি বললো।
“দুনিয়ার জীবনে আল্লাহর ইবাদত করলে, রাসূলের অনুসরণ করলে আল্লাহ শেষ বিচারের দিন যে চিরস্থায়ী সুখের ঠিকানা পুরস্কার হিসেবে দিবেন তাই হলো জান্নাত।”
“আমরাও যাবো?” আবরার বলে।
“হুম। যদি ভালো কাজ করো, আল্লাহকে স্মরণ করো, রাসূলকে অনুসরণ করো তবেই…”
সবাই বেশ মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শুনলো। ওদেরকে মাগরিবের আযান না হওয়া পর্যন্ত জান্নাত- জাহান্নাম নিয়ে গল্প শোনালাম, সত্য গল্প।

পরদিন আমাদের বাসা থেকে খানিকটা দূরে ওদের জন্য সুন্দর একটা আধপাকা বাড়ি কিনে দিলেন বাবা। আমিও অনলাইনে বিজনেস শুরু করেছি। এখনও তেমন চলছে না৷ তবে যেটুকু আয় হচ্ছে তা দিয়েই আমি ছোট্ট কুঠিরটা সাজাচ্ছি। প্রথম উপার্জন দিয়ে আমি বানালাম বাড়িটার জন্য একটা নেমপ্লেট। নেমপ্লেটে লেখা “শান্তি কুঠির”। আসতে-যেতে সেই নামটা দেখে কি যে শান্তি লাগে আমার। বারবার মনে হয়, ইস! আমার প্রথম উপার্জন।
আপাতত বাচ্চাগুলোর আর্থিক দায়িত্ব নিয়েছেন বাবা আর খাওয়ানোর দায়িত্ব নিয়েছেন মা। আর ওদের খেলার সাথী হয়েছে নাকীব। মাঝখান থেকে আমি বাদ পড়ে গেছি। আমি ও নাকীব অবশ্য সারাদিনই শান্তি কুঠিরেই থাকি। ওখানে আমার একটা রুম আছে৷ বইয়ের একটা সেলফ রাখা হয়েছে, সেলফে যদিও তেমন বই নেই এখনো। সেলফের সামনে চেয়ার টেবিল। তার পাশেই নামাজের সরঞ্জাম।
পুরো বাড়িতে চারটা বেডরুম। আহামরি কোনো রুম নয় সেগুলো। ঘরটা আধপাকা। মাথার ওপরে টিনের চাল। যখন বৃষ্টি পড়ে কি যে মধুর লাগে সেই ঝুপ ঝুপ বৃষ্টির ছন্দময় শব্দ শুনতে। প্রায় রাতে তো আমি ওখানেই থেকে যাই বাচ্চাগুলোর সাথে। মাঝেমধ্যে নাকীবও থাকে। ইদানীং আমার আসল বাড়ি হয়ে উঠেছে শান্তি নীড়।

ওদেরকে পেয়ে আমি অন্যকিছু পুরোপুরি ভুলে গেলাম। এতসব কিছুর মাঝেও মাঝেমধ্যে রাফিনকে এত মনে পড়ে যে নিজেকে সামলানো কষ্টকর হয়ে ওঠে। প্রায়ই রাতে বেশি মনে পড়ে ওর কথা। তখন আমি নামাজে দাঁড়িয়ে যাই। সত্যি বলতে, নামাজ পড়ার পর নিজেকে এত হালকা লাগে মনে হয় আল্লাহকে পেলে দুনিয়া তো কিছুই না। রাফিন তো কোন ছাড়।

এর মাঝে হঠাৎ একদিন রাফিন আমাকে ফোন দেয়। দু’বার কল দেওয়ার পর রিসিভ করি। ও সালাম দিয়ে মোলায়েম কন্ঠে বলে,
“কি খবর তোমার?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তোমার?”
“আলহামদুলিল্লাহ।”

তারপর দুজনই চুপ। ও বললো,
“আমি ভেবেছিলাম তুমি ফোন রিসিভ করবে না।”
আমিও স্বাভাবিকভাবেই বললাম,
“কোনো দরকার ভেবে রিসিভ করেছি।”

এরপর ও মাদরাসার কথা বললো, ওর অসুস্থতার কথা বললো, আরও কত কি বললো। কোনো কথাই আমার কানে ভালোভাবে পৌঁছালো না। কারণ তখন আমি আল্লাহর ভয়ে কাঁপছিলাম। আবার পরপুরুষের সাথে কথা বলছি৷ আমি তো তওবা করেছিলাম। রাফিন অনেকক্ষণ ধরে কথা বলেই চলেছে। ওর সুখ-দুঃখের সব কথা। আমি বারবার ফোন রাখার পায়তারা করছিলাম। ও বুঝতে না পেরে কথা বাড়িয়েই চলেছে। এত কথা রিলেশনে থাকাকালীন ও কখনোই বলেনি। তাহলে কি মিস করছে আমাকে? একপর্যায়ে আমি বললাম,
“এখন রাখছি আমি। নামাজ পড়বো।”
“ওহ শিউর শিউর। আগে বলবে না?” বলে ও নিজেই রেখে দিলো।

আমি আবার তওবার নামাজ পড়লাম। এরপর আমার আবার খারাপ লাগা শুরু হয়।

সেদিন সন্ধ্যায় ঝুম বৃষ্টি নামে। বৃষ্টি নামার আগমুহূর্তে ফেসবুকে হঠাৎ একটা কবিতা খুঁজে পাই। এমন একটা কবিতা যেটা পুরোপুরি আমার সাথে মিলে যায়৷ ওটা পড়ার পর প্রায় দু’ঘন্টা আমি থ মেরে বসেছিলাম। বারবার শুধু কবিতাটা পড়েছি। পড়তে পড়তে মূখস্ত হয়ে গেছে আমার। কবিতার নাম “হারাম সম্পর্কে ইতি”। লিখেছেন, মারদিয়া রুহিন মারজুখা”।

আজও আমি বাচ্চাদের কুটিরেই ছিলাম। বৃষ্টি নামতেই দাওয়ায় গিয়ে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আবৃত্তি করলাম কবিতাটা।

আমার ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি
তোমার কলিজা পোড়া ঘ্রাণ,
নিষিদ্ধ আবেগে টেনেছি সীমানা
রব্বের কাছে সঁপেছি এই প্রাণ।

ফাগুনের আগুনে হারিয়ে ছিলাম
ভয়ংকর রাতের অতল অন্ধকারে,
খুঁজে ফিরেছি সুখের আঙিনা
ছেড়ে রব্বের গোলামী বারেবারে।

তুমি অভয় দিয়ে বলেছিলে
এ হাত ছাড়বে না কভু,
বোকা হেসে আমিও সম্মতি দিয়েছি
আসুক না শত বাধাবিপত্তি তবু।

দিন বদলেছে, সময় ফুরিয়েছে
বোধদয় হয়েছে আজ,
কুঁকড়ে মরছে হৃদয় জমিন
তাড়িয়ে ফিরছে লাজ।

সীমালঙ্ঘন তো অনেক হয়েছে
এবার তবে নীড়ে ফেরা হোক,
হৃদয় আরশীতে শত ব্যথা সয়েও
অনুভব হয়না আর কোনো শোক।

রব্বের পথে চলতে চাই সদা
ফিরতে চাই না অতীতে,
জানি! আসবে অনেক ঝড়ঝাপটা
তবু চলবো নিজ গতিতে।

কবিতাটা বিড়বিড় করে বারবার পড়লাম। সেদিন রাতে গা কাঁপিয়ে জ্বর এলো আমার৷ বাবা এসে বাসায় নিয়ে গেলেন আমাকে।

জ্বর হলে আমার আর হুঁশ থাকে না। সারাক্ষণ মায়ের পাশ ঘেঁষে শুয়ে থাকি, মাকে বিছানা থেকে এক মিনিটের জন্যও দূরে সরতে দিই না। দুনিয়ার কোনোকিছুর প্রতি আমার আর খেয়াল থাকে না। সেরকম দূর্বিষহ মুহুর্তে আমার রাফিনকে মনে পড়তে লাগলো। বারবার হারাম ভুলে গিয়ে ওকে টেক্সট করতে ইচ্ছে করছিলো। ঐ যে বলে না, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। সারাদিন শুয়ে-বসে অলস সময় কাটানোয় শয়তান ওয়াসওয়াসা দিচ্ছিলো আমাকে।

আমার মন বলছে, রাফিন যদি আমার জন্য ওয়েট না করে? যদি অন্য কাউকে বিয়ে করে নেয়? একটা ফোন করে বা টেক্সট করে কি বলবো, আমার জন্য ওয়েট করতে? আমাকে ছাড়া যেন কাউকে বিয়ে না করে সেই কথা কি বলে রাখবো?
আবার মাঝেমধ্যে মনে হয়, ওকে একটা কিছু গিফট পাঠাই। যেমন; কুরআনুল কারিম, তাফসীর কিংবা কোনো ইসলামিক বই। নিজের মনকে বোঝাই, এগুলো দেওয়া তো গুনাহের না। এগুলো দিলে বরং সওয়াব৷ আচ্ছা, আমি নাহয় নিজের নাম প্রকাশ করবো না।

আবার যখন খানিক সময়ের জন্য জ্বর নেমে যায় তখন ভাবি, আমি যদি রাফিনকে বলেও রাখি আমার জন্য অপেক্ষা করতে, আল্লাহ যদি না চান তাহলে কি কখনো আমাদের বিয়ে সম্ভব? এই ভেবে নিজেকে আগের অবৈধ ভাবনার জন্য ধিক্কার দিই৷ আবার গিফটের ব্যাপারটা ভাবি এইভাবে, কুরআন গিফট দেওয়া সওয়াবের কাজ, তবে এমন কাউকে নয় যাকে দিলে মনে অন্যকিছুর উদ্ভব হবে। যেমন; আমি রাফিনকে কুরআন গিফট দেওয়ার কথা ভাবলেও মনের ভেতরে একটা সুপ্ত বাসনা কাজ করছিলো। মন বলছিলো, যদি গিফট পাঠাই ও তো একটাবার আমার সাথে কথা বলবে। সেটা যে কারণেই হোক না কেন? গিফট কে পাঠিয়েছে সেটা শিউর হতেও তো ও আমাকে ফোন করতে পারে। এই অবৈধ চিন্তার কারণে হুঁশ আসার পর আবার নিজেকে ধিক্কার জানালাম। শয়তান যখন মানুষকে কোনোভাবেই দমাতে না পারে তখন সে হারামকে হালালভাবে উপস্থাপন করে। আমার বেলায়ও তাই হয়েছে। আসতাগফিরুল্লাহ পড়তে থাকলাম। কিন্তু দিনশেষে জ্বরের ঘােরে আবার সেই অবৈধ চিন্তা আমার মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকলো।

বাকি সময় বাচ্চাদেরকে নিয়ে থাকলেও জ্বরের ঘোরে আবার রাফিনের ভাবনা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। শত চেষ্টা করেও ভুলে থাকতে পারি না। ওর কথা ভাবলেই বুক-পেট মুচড়ে ওঠে। পেট মুচড়ে উঠে পেট খারাপ হয়। মনটা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। একপর্যায়ে বাবা সিদ্ধান্ত নিলেন অসুস্থতা কাটাতে কোথাও বেড়াতে নিয়ে যাবেন। ছোটফুফি বললেন, ফুফির শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যেতে। ফুফির বাড়ির আশেপাশে অগণিত পাহাড়। পাহাড় আমার খুবই ভালো লাগে। তাই আমিও রাজি হয়ে গেলাম যেতে। ফুফির বাড়িতে ফুফি, ফুফা এবং ফুফির শ্বাশুড়ি ছাড়া আর কেউ নেই। খুব অল্প মানুষ। তাই আমরা সবাই ঝিলিদেরকে সহ নিয়ে পরদিনই ফুফির বাড়ি চলে গেলাম।

#Be_Continued__In_Sha_Allah ❣️

#অগত্যা_তুলকালাম
নাফীছাহ ইফফাত

পর্ব ২৬

ফুফির বাড়িতে যাওয়ার পর পরই শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টির মধ্যেই ছাদের দোচালা ঘরে কিছুক্ষণ বসেছিলাম। বৃষ্টিতে ভিজতে কড়া নিষেধ করেছেন মা। তাই বাধ্য হয়ে বৃষ্টি দেখছি। দুপুর হয়ে আসছে। তাই আমিও ছাদ থেকে নেমে নামাজের প্রস্তুতি নিলাম।

বিকেলবেলা ফুফির রুমে বসেছিলাম। নাকীব বাচ্চাদেরকে নিয়ে বালিশ খেলা খেলছে। আমাকে দিয়েছে মিউজিক বাজানোর দায়িত্ব। আমার মোবাইলে কয়েকটা সূরা এবং দোয়া ছাড়া বেশি কিছু নেই। কিছুদিন আগে সব গান ডিলিট করে দিয়েছিলাম। কারণ জেনেছি মিউজিক শয়তানের সুর। তাই কুরআনের আয়াত-ই প্লে করলাম। “লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন” বিপদের সময় পড়ার দোয়া।
আবির বললো, “আপু, গান বাজাও না। এগুলোতে তো ফিল আসে না।”

আমি চোখ রাঙ্গিয়ে বললাম, “আর কক্ষনো এরকম বলবে না। এটা কুরআনুল কারিমের আয়াত। বিপদে-আপদে মানুষ এই দোয়া পড়ে। এটাকে বলা হয় দোয়া-ইউনুস।”
আবির দৃষ্টি নামিয়ে বললো, “আচ্ছা আর বলবো না।”
“শোনো, তোমরা ইউনূস (আঃ) এর নাম শুনেছো?”
কেউ বললো হ্যাঁ, কেউ বললো না।

আমি ওদেরকে ইউনুস আঃ এর ঘটনাটা বললাম এইভাবে,
“ইউনূস (আঃ) হচ্ছেন আল্লাহর নবী। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, আর ইউনুস ছিল পয়গম্বরদের একজন। যখন সে পালিয়ে যাত্রী বোঝাই নৌকায় গিয়ে পৌঁছালো। অর্থাৎ তিনি আল্লাহ তায়ালার হুকুম না মেনেই অন্যত্র হিজরত করলেন। পথের মধ্যে সমুদ্র পড়লে তা পাড়ি দেয়ার জন্য একটি জাহাজে উঠেন। জাহাজটি মাঝ সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড়ে পড়ে। তখন জাহাজের চালক ধারণা করে যে, জাহাজে কোনো অপরাধী আছে। যে কারণে জাহাজটি বিপদে পড়েছে। পরে তখনকার নিয়ম অনুযায়ী অপরাধীকে চিহ্নিত করতে লটারির ব্যবস্থা করা হয়। লটারিতে বারবার হজরত ইউনুস (আ.) নাম উঠে। অতঃপর লটারিতে অকৃতকার্য হলো। তখন বাধ্য হয়েই তাঁকে সমুদ্রে ফেলে দিয়ে জাহাজটি বিপদ থেকে রক্ষা পায়। তখন আল্লাহর আদেশে বিরাট একটি মাছ তাঁকে গিলে ফেলে। তবে আল্লাহ তায়ালার রহমতে ওই মাছ ইউনুস (আ.)-কে হজম করতে সমর্থন হয়নি। তখন মাছের পেটে বসে তিনি উদ্বিগ্ন না হয়ে আল্লাহর ওপর ভরসা রেখেছেন। ভরসা রেখে অনবরত এই দোয়া পড়ে গেছেন। দোয়াটা পড়ার কারণেই তিনি মুক্তি পেয়েছেন মাছের পেট থেকে। আল্লাহ তায়া’লা বলেন,
“অতঃপর যদি সে আল্লাহর গুণগানকারীদের অন্তর্ভুক্ত না হত। তাহলে সে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত মাছের পেটেই থাকতো।” [১]
হজরত ইউনুস (আ.) মাছের পেটে থাকা অবস্থায় যে দোয়াটি পড়েছিলেন তার অর্থ হচ্ছে-
“আপনি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই। আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। অবশ্যই আমি পাপী।” (সূরা : আল আম্বিয়া, আয়াত : ৮৭)।

ঘটনা শুনে সবাই বেশ অনেকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। নাকীব বললো,
”দেখলে তো এই দোয়াটা পড়ে কতবড় বিপদ থেকে ইউনুস (আঃ) রক্ষা পেয়েছেন? তোমরাও বিপদে পড়লে দোয়াটা পড়বে। আল্লাহর ওপর ভরসা করবে, কখনো উদ্বিগ্ন হবে না। আর কখনো ভাববে না তোমরা একা, অবশ্যই আল্লাহ আমাদের প্রত্যেকের সাথে আছেন।”

আমি বললাম, “আর কখনো গানের কথা বলবে না। গান কে শোনে জানো? গান শোনে শয়তান। গান হচ্ছে শয়তানের সুর। শয়তান আল্লাহকে বলে, মুমিনদেরকে আপনি আযান দান করেছেন, তবে আমার জন্য কি? আল্লাহ বলেন, গান-বাজনা। সুতরাং তোমরা সবসময় গান-বাজনা থেকে দূরে থাকবে। শয়তান যাবে জাহান্নামে আর আমরা তো জান্নাতে যেতে চাই। তাহলে আমরা কেন শয়তানকে অনুসরণ করবো? আমরা সবসময় একমাত্র আল্লাহর আনুগত্য করবো এবং রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ করবো, বুঝেছো?”

সবাই এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শুনছিলো। কথা শেষ হওয়ার পর বললো,
“বুঝতে পেরেছি। আমরা আর কখনো গানের কথা বলবো না, শুনবো না।”
“আলহামদুলিল্লাহ। এবার খেলা শুরু করো। আমি প্লে করছি।”

দোয়াটা প্লে করে জানালার দিকে তাকিয়েছি। ওদের খেলা শুরু হয়েছে। আমার সেদিকে তাকানো বারণ। নাহয় আমি নাকি পক্ষপাতিত্ব করে বসবো। জানালা দিয়ে তাকাতেই আমরা বুকের ভেতর থেকে কলিজাটা বেরিয়ে আসতে চাইলো। একটা ছেলে দাওয়ায় বসে আছে হুবুহু রাফিনের ভঙ্গিতে। দেখতেও অনেকটা রাফিনের মতো। আমার মাথায় আবার রাফিনের ভাবনা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম সেদিকে।

একগাদা ছেলেমেয়ে চেয়ার পেতে বসেছে ছেলেটার চারপাশে। মাঝখানে ছেলেটার হাতে মোবাইল। মোবাইলের ঠাস ঠাস আওয়াজটা আমার কান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে। এতই কাছে বসেছে ছেলেটা। আমি নিশ্চিত পাবজি খেলছে। এই শব্দ আমার খুব চেনা। এই দৃশ্যও যে আমার খুব চেনা। আমার চোখ ছলছল করে ওঠে।

নাকীব ডাক দিলো, ”এই আপু, আর কতক্ষন? মিউজিক বন্ধ করো।”
নাকীবের ডাকে সম্বিৎ ফিরে পেয়ে দ্রুত মিউজিক বন্ধ করলাম। আবরার এসে ফোন কেড়ে নিয়ে বললো,
“তোমার আর বাজাতে হবে না। এ্যাঁই ভাইয়া, আমি খেলবো না, মিউজিক বাজাচ্ছি। তোমরা খেলো।”

ওরা ওদের মতো খেলা শুরু করলো, আমি জানালায় তাকিয়ে রইলাম।

হঠাৎ সেদিনের মতো ঝুম বৃষ্টি নামে। সবাই যে যার বাসায় হুড়মুড় করে চলে যায়। ছেলেটাও চেয়ার নিয়ে ঢুকে পড়ে। এরপর ফোন হাতে দাওয়ায় এসে বসে। টিনের চালে বৃষ্টি গড়িয়ে পড়ে। ছেলেটা রাফিনের মতো অতটা স্মার্ট না। সেন্ডো গেঞ্জির সাথে লুঙ্গি পড়েছে। তাও বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে ছেলেটাকে। হয়তো রাফিনের মতো দেখতে বলে আমার তাকে সুন্দর মনে হচ্ছো। কিছুক্ষণ পর আমাকে অবাক করে দিয়ে রাফিনের সাথে দেখা হওয়ার দিনের শেষ সিনটাও ছেলেটা ঘটিয়ে ফেললো।
সে দাওয়ায় বসে থেকে থেকে হাঁক ছাড়তে থাকলো, “এই মুট্টিয়া” বলে।

আমার তখন পাগলপ্রায় অবস্থা। বুকের ভেতর কে যেন হাতুড়ি পেটাচ্ছে। চোখ বেয়ে অশ্রুর ঢল নেমে আসতে চাইছে। রাফিনকে ভুলতে এখানে এসেছিলাম। অথচ এখানে এত ভয়াবহ হৃদয়কাড়া সিন অপেক্ষা করছিলো আমার জন্য কে জানতো?
ফুফি সবার জন্য ছোলা বুট ভাঙ্গা নিয়ে আসে। সবাই হৈ হৈ করে খেতে বসে। বৃষ্টির দিনে বুট ভাঙ্গা খাওয়ার মজাই আলাদা। আমার পেট মুচড়ে ওঠে আবার। বুট ভাঙ্গা খাওয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। আমি অপলক নয়নে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছি। রাফিনকে ভোলা দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে। প্রায়ই কাঁদতে কাঁদতেও কাঁদছি না। এত কষ্ট কেন হচ্ছে ওকে ভুলতে? এতদিন তো ঠিকই ছিলাম। এখন কেন আবার ওর ভাবনারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে? কেন ওকে ভোলাটা এত বেশি কঠিন মনে হচ্ছে? মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করে, সব দোষ রাফিনকে দিয়ে আমি নির্ভার হই। কেন ও আমাকে বিয়ে করলো না? বিয়ে করলে তো এত কষ্ট পেতে হতো না। সব দোষ ওকে দিয়েও আমি নির্ভার হতে পারি না। আমার তো ঠিকই ওর জন্য কষ্ট হয়।

সেদিন রাতে আবার গা কাঁপিয়ে জ্বর হয় আমার। ফুফির শ্বশুর বাড়িতেই অসুস্থতা বেড়ে যায়। ফুফি চিন্তিত হয়ে বললেন,
“এতদিন যাবৎ অসুস্থতা কমছে না কেন?”
“তোর কথায় তো ঘুরতে নিয়ে এলাম। এখন এখানে এসেও আবার একই অবস্থা।” বাবা বললেন।
“চিন্তা করবেন না ভাইয়া। কাল বিকেলে পাহাড়ে নিয়ে যাবো। ওর নিশ্চয়ই ভালো লাগবে।” ফুফা বললেন।

অসুস্থতা কাটাতে আবার পরদিন ফুফি পাহাড়ে নিয়ে যায় আমাদেরকে। ফুফা সাথে আসেননি। ফুফা গায়রে মাহরামদের সামনে আসেন না। আমরাও ফুফার সামনে যাই না। জঙ্গল ভেদ করে পাহাড়ে খানিকটা উঠতে না উঠতেই চারপাশ অন্ধকার হয়ে এলো। আমরা ভাবলাম, হয়তো মেঘ করেছে, বৃষ্টি নামবে না। এমন তো কত হয়। কিন্তু আমাদেরকে ভুল প্রমাণিত করে বড় বড় ফোটার অবারিত বৃষ্টি ঝরতে শুরু করলো। আমরা আবার বাড়ির দিকে ছুট লাগালাম। শেষ রক্ষা আর হলো না। তুমুল বৃষ্টি বর্ষণ হতে শুরু করলো।

আমরা প্রায় মিনিট দুয়েক ছুটেছি বৃষ্টির মধ্যেই। নাকীব ও মাহফুজ গাড়ির ব্যবস্থাও করতে চেয়েছে কিন্তু নির্জন সেই সন্ধ্যায় একটা গাড়িও চলছিলো না৷ সামনে উঁচু টিলার উপর একটা বাড়ি দেখতে পেয়ে আমাদের সবাইকে নিয়ে ঐ বাড়িতে ঢুকে পড়লেন ফুফি। সবাই ঢুকে পড়েছে বাড়িতে, সবার পেছনে আমি। আমি পা দিতেই থমকে গেলাম। আবার সেই ছেলেটা। ছেলেটার দিকে তাকিয়ে সামনে এক পা বাড়াতেই উঁচু টিলার কর্দমাক্ত মাটিতে পা দিয়ে পিছলে পড়ে গেলাম। ঘরটা ছিল দোচালা। সামনে খোলা বারান্দার মতো চারপাশে বেড়া দেওয়া মাটির ঘর। হাতের নাগালে বেড়া থাকায় সেগুলো ধরে নিজেকে সামলাতে চাইলাম কিন্তু পারলাম না৷ একহাতে বেড়া ধরে রাখা অবস্থায় একপাশ হয়ে পড়ে গিয়ে আমার পিঠ ঠেকলো বেড়ায় গিয়ে। একদম শুরু থেকেই আমার যেমন ছেলেটার দিকে নজর ছিল, তেমনই ছেলেটারও। তাই সবার প্রথমে আমাকে ধরতে সে-ই এগিয়ে আসে। সে আমাকে ধরার ঠিক আগমুহূর্তে নাকীব এসে অন্য পাশ দিয়ে আমাকে টেনে তুলে আনে। আমি লজ্জিত ভঙ্গিতে হাসার চেষ্টা করলাম, নিকাবের আড়ালে, সবার অলক্ষ্যে…

দোচালা বাড়িটায় সামনে টিনের ছাদ দেওয়া আর চারপাশে বেড়া দিয়ে ঘেরাও করে রাখা জায়গাটা আমার এত সুন্দর লাগলো যা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাড়িটা অন্য বাড়ির তুলনায় অনেকটা উঁচুতে। হয়তো এই এলাকায় অল্প বৃষ্টিতেই পানি উঠে যায়। এরমধ্যেই দেখলাম বাড়ির সামনে প্রায় পুকুরের মতো হয়ে গিয়েছে। ওখানে টুপটাপ বৃষ্টির ফোটা ঝরে পড়ছে। অন্ধকার নেমে আসছে দ্রুত। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হওয়ায় আরও অন্ধকার দেখাচ্ছে।

এরমধ্যেই বাড়ির মালকিনের সাথে মা ও ছোটফুফি আড্ডা জুড়ে দিয়েছেন। বাচ্চারা সব কি যেন খেলায় মেতেছে। আমি বেড়ায় হাত রেখে বৃষ্টির পানে তাকিয়ে রইলাম। ছেলেটা আমার ঠিক বিপরীত পাশে কোমড়ে দু’হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে সামনে তাকিয়ে আছে। এই মুহুর্তে ছেলেটার পরনে বেশ সুন্দর পোশাক। একদম রাফিনের গেটআপ। ব্ল্যাক জিন্সের সাথে হোয়াইট টি-শার্ট এবং উপরে ব্লু শার্ট, শার্টের সবগুলো বোতাম খোলা। সে শার্টটাকে পেছনে সরিয়ে কোমড়ে হাত রেখে দাঁড়িয়েছে।

টিনের চালে ঝুম বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির মধ্যেই আমি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকি। বারবার মনে হয়, পরপুরুষের দিকে তাকানোই তো যিনা, চোখের যিনা। আমি জেনেশুনে যিনা করছি? এটা ভেবে কিছুক্ষণের জন্য মুখ ফিরিয়ে নিই। পরক্ষণেই আবার তাকিয়ে ফেলি। বারবার বিবেকে বাধা দিচ্ছে হারাম বলে। কিন্তু আমার অসুস্থ মন মানছে না। বারবার রাফিন ভেবে দৃষ্টি চলে যাচ্ছে অচেনা সেই ছেলেটার দিকে। ফোন বের করে গ্যালারিতে ছবি দেখতে গিয়েও দেখলাম না। বুক ফেটে কান্না আসছে। বেড়ার শক্ত কাঠিতে হাত রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলতে থাকলাম,

প্রিয়,
উদাসী বিকেলে হঠাৎ বৃষ্টি নামলে কি তোমার আমাকে মনে পড়ে?
মনে পড়ে মেঘলা বিকেলে ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে দুজনের বলা কথাগুলো?
নাকি আজও বিরক্ত হও বৃষ্টি নামলে?
যেভাবে বিরক্ত হতে আমি কথা বলতে চাইলে?

ইতি
তোমার অপ্রিয়, বৃষ্টিপ্রিয় মিষ্টি মেয়ে…

কান্না আর বাঁধ মানে না। আশ্রয় নেয়া বাড়িটা থেকে ছুটে বৃষ্টিতে নেমে গেলাম। ছাড়ার সময় বুঝতে পারিনি রাফিনকে ভোলা এত কঠিন হবে আমার জন্য। একটা অবৈধ সম্পর্কের জন্য কেন এত মন পুড়ছে আমার? আমার সাথে সাথে ভিজতে থাকে আমার অসহায় মন আর চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে অবাধ্য নোনা জল। তবে এই জল রাফিনের জন্য না। স্বয়ং প্রভুর কাছে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে আমি রাফিনকে চাইলাম। বৃষ্টির সময়ে করা দোয়া কখনো বিফলে যায় না। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃষ্টি হলেই পড়তেন, ”আল্লাহুমা সাইয়্যিবান না’ফীয়ান।” অর্থাৎ, “হে আল্লাহ! মুষলধারে উপকারী বৃষ্টি বর্ষন করুন।” [ বুখারী ২/৫১৮ ]
বৃষ্টি হলেই রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানি ধরতেন আর বলতেন, “এই পানি মাত্র আল্লাহর কাছ থেকে আসছে।” এরপর তিনি দোয়া করতেন। [ মুসলিম ১৯৬৮ ]

আমিও দোয়াটা পড়লাম প্রথমে। এরপর ভিজতে ভিজতে দোয়া করলাম,
“ইয়া রব! রাফিন যদি আমার জন্য কল্যাণকর হয়, আমি যদি ওর জন্য কল্যাণকর হই তবে আমাদের মিলিয়ে দাও। দেরী হোক, তাও আমাদের এক করো যদি তুমি কল্যাণকর মনে করো আমাদের এই মিলন। নিশ্চয়ই তুমি উত্তম পরিকল্পনাকারী। তুমি এমন কিছুই পরিকল্পনা করে রেখেছো যাতে আমাদের দুজনেরই কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তাও আমি তোমার কাছে চাই, শুধু তোমার কাছেই চাই রাফিনকে। তোমার কাছে তো চাইতে বাঁধা নেই। আমার তো চাওয়ার মতো আর কেউ নেই, হাত পাতার মতো কোনো জায়গা নেই তুমি ছাড়া। তোমার তো আরও অনেক সৃষ্টি আছে আমি ছাড়া, কিন্তু আমার তো কেউ নেই তুমি ছাড়া। আমার কাছ থেকে দূরে সরে যেও না আল্লাহ। তোমার ওপর আমি পূর্ণ আস্থা রাখলাম প্রভু। রাফিনকে তুমি আমার করে দাও।”

বৃষ্টির পানির সাথে সাথে আমার অশ্রুগুলোও ঝরতে থাকলো। সেদিন আমার জ্বর পুরোপুরি নেমে গিয়েছিল। জ্বর নামার পর আবার বোধোদয় হলো। আরেকবার ছেলেটার মুখোমুখি হওয়ার আগেই দ্রুত নিজের বাড়িতে চলে আসলাম। ওমুখো আর নয়। রাফিনকে আমার ভুলতেই হবে।

সুস্থ মস্তিষ্কে দোয়াটা আবার পরিবর্তন করে বৃষ্টিতে দাঁড়িয়েই বললাম,
“ইয়া আল্লাহ, আগের ভুলভাল দোয়ার জন্য আমি ক্ষমা চাইছি৷ আপনি গফুর ও গাফফার। আমাকে ক্ষমা করে দিন৷ আমি সুস্থ মস্তিষ্কে আপনার কাছে চাই, রাফিন যদি দুনিয়া ও আখেরাতে আমার জন্য কল্যাণকর হয় তবেই ওকে আমার করে দিন। নয়তো ওর দিক থেকে আমার মন ঘুরিয়ে নিন। ওকে ভুলিয়ে দিন, আমার মন থেকে সরিয়ে দিন। অকল্যাণ কিছু আপনি আমার এই জীবনে রাখবেন না ইয়া রহমান৷ আমাকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আমি পাপী, আমি আমার অপরাধ স্বীকার করছি।”

#Be_Continued__In_Sha_Allah ❣️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here