মনসায়রী পর্ব-৩৮

মনসায়রী
পর্ব-৩৮

চুলায় মাংস বসিয়ে, জুস বানিয়ে দুপুরের ঘরের দিকে ছুটলো তনয়া। গোসল করে বেরিয়েছে দুপুর। চুল মুছতে মুছতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছে সবে। তনয়া হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলো, দুপুরের হাত থেকে তোয়ালেটা নিয়ে বলল,

‘তাড়াতাড়ি করে জুসটা খাও। আমি চুল মুছে দিচ্ছি। ‘

দুপুর একটু হেঁসে বলল,

‘এতো তাড়াহুড়ো করছো কেনো ভাবি? হলুদ তো সন্ধ্যায়। এখন দুটো বাজে সবেমাত্র। ‘

তনয়া চুল মুছতে মুছতে বলল,

‘বোকা মেয়ে! পার্লারে গেলে কতো সময় লাগবে জানো? কিছু খেতেও পারবেনা সাজানোর সময়। এখন খেয়ে নাও ঠিক মতো। ‘

দুপুর জুস খেয়ে বলল,

‘ভাবি, পার্লারে না গিয়ে বাসায় সাজলেও তো হয়। ‘

‘নারে পাগলী, বিয়ে আর হলুদ এই দুটো তো জীবনে একবারই আসে। ‘

বলার পর তনয়ার মুখটা ছোটো হয়ে গেলো। দুপুর বুঝতে পারলো কেনো। তনয়া ভাবির বিয়ের সময় হলুদ, বিয়ের অনুষ্ঠান কিছুই হয়নি। যদিও টাকার অভাবের কারণে নয়। তখন চাইলেই অনুষ্ঠান করা যেতো। কিন্তু, শিহাব রাজি ছিলো না বলে পরিবারের মানুষকে সাথে নিয়ে শুধু তিন কবুল বলে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে হয়েছে৷ তনয়া চলে যাচ্ছিলো। দুপুর বলল,

‘ভাবি শোনো। ‘

তনয়া ফিরে আসলো। কী হয়েছে জিজ্ঞেস করলো।

‘ একজনকে ভালোবেসে কতো কষ্ট পাচ্ছো। এতো অবহেলা! এতো অনটনের সংসার! কখনো ইচ্ছে করে না সব ছেড়ে পালিয়ে যেতে। আমি হলে বোধ হয় তাই করতাম৷ ‘

তনয়া হেঁসে উঠলো। দুপুরের গালে হাত বুলিয়ে বলল,

‘কাউকে যখন আমরা খুব ভালোবাসি তখন তার দেয়া সব কষ্ট, অবহেলাও যত্ন করে বুকে জমিয়ে রাখি। আর এক টুকরো আশা বাঁধি, একদিন ঐ মানুষটাও আমাদের ভালোবাসবে। ‘

দুপুর শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। তনয়া ভাঙা গলায় বলল,

‘দুপুর বোন, তোমাকে সবসময় আমার ছোট্ট বোনের মতোই দেখেছি। নতুন জীবনে পা দিতে যাচ্ছো। এতোদিন তোমার যে জীবন ছিলো তা আর থাকবেনা। নতুন সংসারে গিয়ে যদি দেখো, যে মানুষটার জন্য সব ছেড়ে গেছো সেই মানুষটা তোমাকে দু চোখে দেখতে পারেনা তখন কতোটা কষ্ট হয় তা তুমি এখনো বুঝবেনা। মাঝে মাঝে মনে হয় কী জানো তোমার অভিশাপেই আমি আজ পর্যন্ত শিহাবের ভালোবাসা পাইনি। আমার উপর থেকে এই অভিশাপ তুমি তুলে নাও দুপুর! দয়া করো। ‘

কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বললো তনয়া। দুপুর বিস্মিত হয়ে বলল,

‘তুমি কী আমার আর শিপুদার ব্যাপারে কিছু জানো ভাবি? ‘

তনয়া চোখ মুছে মাথা নাড়িয়ে বলল,

‘হ্যা, আজ থাক ওসব কথা। তুমি আমাকে ক্ষমা করো দুপুর। আমি যদি জানতাম এসব, তাহলে কখনো শিহাবকে বিয়ের জেদ ধরতাম না। এখন মানুষটাকে বিয়ে করেছি। ছেড়ে কীভাবে চলে যাই বলো! ‘

দুপুরের চোখ ভিজে আসলো। সে কোনো কথা না বলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তনয়াকে। তনয়ার চোখ মুছে দিয়ে বলল,

‘আমি মনে কোনো ক্ষোভ রাখিনি ভাবি। সবটাই ভাগ্য। আমি চাই শিপুদা তোমাকে খুব ভালোবাসুক। ‘

তনয়া মুচকি হেসে দুপুরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কাজে চলে গেলো। দুপুর দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মনে মনে ভাবলো, কথাটা বোধ হয় সত্যি যে-

“তুমি যদি কখনো কাউকে চেয়েও না পাও, বুঝে নিও তোমার থেকেও কেউ তাঁকে তীব্রভাবে চেয়ে নিয়েছে খোঁদার কাছে।”

হয়তো দুপুরের থেকে বেশি তনয়া শিহাবকে চেয়েছিলো বলেই সে পেয়ে গেছে!

বন্ধুর সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে ছাঁদে এসে দাঁড়িয়েছে সায়র। কথা বলা শেষ করে ফোনটা পকেটে রাখতে নিয়েও রাখলো না। মনে মনে ভাবলো, এখন নিশ্চয়ই দুপুর পার্লারে আছে। ভিডিও কল করে সাজটা সবার আগে দেখে নিলে কেমন হয়! তাঁর হবু বউকে দেখার অধিকার তো সবার আগে তারই তাইনা!

হেঁসে উঠলো সায়র আনমনেই। তারপর হঠাৎ মনে পড়লো দুপুর বাটন ফোন ইউজ করে। ইশশ! আগে কেনো কথাটা মনে পড়লো না! তাহলে তো একটা স্মার্ট ফোন পাঠিয়ে দেয়া যেতো। এখন একটা সুন্দর মুহূর্ত মিস হয়ে গেলো। সায়র ঠিক করলো আজ রাতেই সে দুপুরের জন্য একটা স্মার্ট ফোন পাঠিয়ে দেবে। আরো প্রয়োজনীয় যা আছে সব কিনে পাঠাবে।

ছাঁদ থেকে নেমে যাচ্ছিলো সায়র। আচমকা একটা মেয়েলি শরীর সায়রকে পেছন থেকে জাপটে ধরলো। সায়র ছাড়াতে নিলে তা আরো শক্ত হয়ে গেলো। সায়র বুঝতে পারছেনা কী করবে। সায়র কিছু করতে নিলে মেয়েটা চিৎকার দিয়ে বলল,

‘এই বিয়েটা তুমি করতে পারোনা সায়র! আমাকে এভাবে ধোঁকা দিয়ে ছেড়ে যেতে পারবেনা তুমি! ‘

চলবে –
লেখায়-নাঈমা হোসেন রোদসী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here