#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১১
২৪.
ইরহামরা সবাই পার্কে চলে আসে।গাড়ি থেকে নামতেই আরেকটা গাড়ি এসে থামে তাদের সামনে।গাড়ি থেকে ইয়াদ আর ইলমা নেমে আসে।ইলমা ইরহামকে দেখে দৌড়ে ওকে এসে জড়িয়ে ধরে বলে,,
—“আই মিস ইউ সো মাচ দা ভাই।মনে হচ্ছে তোমায় কত জনম দেখি না আমি”
ইরহাম বোনের কপালে চুমু দিয়ে বলে,,,
—“দা ভাই ও তার ইলুরানীকে মিস করেছে অনেক”
ইলমা তো আরিশাকে পেয়ে ভীষণ খুশি।দুজনই সমবয়সী।একই ক্লাসে পরে।দুজনের তো সেই ভাব হয়ে গিয়েছে।ইরহাম ইলমা আর আরিশার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।আরিশা মেয়েটা ইলমার থেকে ভিন্ন।আরিশা বয়সের তুলনায় যথেষ্ট ম্যাচিউর।আর ইলমা আদরে একেবারে আহ্লাদী বলতে গেলে।
সবাই একসাথে পার্কের ভেতরে ঢোকে।কিছুদূর যেতেই সবার চোখ পরে অর্ষার দিকে।অর্ষা রুশানকে দিয়ে ছবি তুলাচ্ছে নিজের।বিভিন্ন পোজ দিয়ে ছবি তুলছে।রুশান ছবি তুলতে অনেক পছন্দ করে।সেবার এসএসসিতে এপ্লাস পাওয়ার জন্য এটা তার বড় চাচ্চু গিফট করে।এখনো ক্যামেরাটা তার কাছেই আছে।
খুব যত্ন করে রাখে রুশান ক্যামেরাটাকে।ইলমা তো অর্ষাকে দেখে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে।অর্ষা পরতে পরতে বেঁচে যায়।
—“ভাবিমনি কেমন আছো তুমি।কালকে তো কথাই বলতে পারিনি।আম্মু তার আগেই নিয়ে গেলো বাসায়।জানো ভাবিমনি তোমার সাথে কথা বলার জন্য কতোটা ছটফট করেছি আমি”
ইলমার কথায় হাসে অর্ষা।মেয়েটাকে তার ভীষণ পছন্দ।আয়রা আর ইসফাককেও ভীষণ পছন্দ তার।অর্ষা ভেবে পায় না এতো ভালো মনের মানুষের ছেলে কীভাবে এতোটা অসভ্য বজ্জাত হতে পারে।অর্ষা ইলমাকে বলে,,,
—“আমি ভালো আছি মিষ্টি পাখি।তুমি কেমন আছো?আর ছটফট করতে হবে না এখন যতো কথা বলার বলে ফেলো তো”
ইলমা ব/কব/কা/নি শুরু করে দিলো।রুশান তাকিয়ে রইল ছোট্ট মুখশ্রীর পানে।ফর্সা গোলগাল মুখ।বড় ভাইয়ের মতো চোখে চশমা কোমড় ছাড়ানো টেউ খেলানো চুল দেখতে বেশ মিষ্টি লাগছে রুশানের।আগে কখনো এতোটা ভালো লাগেনি কোনো মেয়েকে রুশানের।
একজোড়া চোখ অর্ষাকে দেখতে ব্যস্ত দূরে দাড়িয়ে অর্ষার পানে তাকিয়ে আছে ইয়াদ।হাসি মুখখানা দেখে মনে প্রশান্তি হচ্ছে।প্রেয়শীকে হাসতে দেখলেও হয়তো শান্তি লাগে হোক না কারণটা সে বা অন্যকেউ।ভালোবাসার মানুষটা ভালো আছে এটা মনে করলেও সুখ পাওয়া যায়।
আরিশা এসে ইয়াদের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,,,
—“এই যে মিস্টার হাসিওয়ালা আপনি এখানে ভাল্লুকের মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে আছেন কোনো চলুন সবার কাছে।সবাই অনেক মজা করছে”
ইয়াদ ভ্রু কুচকে তাকায় আরশির পানে।মেয়েটাকে কালকে থেকে তার অদ্ভুত মনে হচ্ছে।হাসিওয়ালা নামটা শুনতেই বিরক্ত হয় সে।এইসব অদ্ভুত নামে কেউ কাউকে ডাকে।
—“হাসিওয়ালা!এটা আবার কেমন নাম মিস আরশি।”
—“আপনি খুব সুন্দর করে হাসেন।আপনাকে হাসলে বেশ লাগে জানেন।আর না হাসলে ভাল্লুকের মতো লাগে সত্যি বলছি”
ইয়াদের হাসি পায়।আরিশা নামক বাচ্চা মেয়েটার কথায়।এতো কষ্টের মধ্যেও হাসি পাচ্ছে ইয়াদের।না হাসলে তাকে নাকি ভাল্লুকের মতো লাগে।ইয়াদ হেসে দেয় কথাটা মনে করতেই।আরশি ইয়াদকে হাসতে দেখে বলে,,,
—“মিস্টার হাডিওয়ালা দেখেছেন আপনাকে হাসিয়ে ছাড়লাম।আর আপনাকে ওমন চুপচাপ থাকলে মানান না বুঝেছেন হাসবেন আপনি।হাসিতেই আপনাকে বেশি মানায়”
কথাটা বলেই আরশি আবারও ইলমা উশার কাছে চলে গেলো।ইয়াদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিড়বিড় করে বলল,,,
—“আমার হাসির কারণ হারিয়ে গিয়েছে যাকে ঘিরে আমার হাসি ছিলো সেই আমার নেই।আসলে সে তো কোনো দিন আমার ছিলোই না।ডুবে ডুবে ভালোবেসেও আমি পেলাম না তাকে।”
২৫.
ইরহাম বোনের আবদারে আইসক্রিম কিনতে গিয়েছিলো।আইসক্রিম এনে ওদের দিকে এগোতেই চমকে উঠলো।সেই চোখ,যে চোখের মায়ায় সে পরেছে।অর্ষা হেসে হেসে কথা বলছে সবার সাথে।ইরহাম অপলকভাবে তাকিয়ে থাকে চোখের দিকে।তার এতো কাছে হৃদহরনী থাকতেও সে তাকে চিনতে পারলো না।
তার সব থেকে অপছন্দের মানুষটাই তার হৃদহরনী।এটা ভাবতেই অবাক লাগছে।সে এতোদিন ঠিকমতো খেয়ালই করেনি অর্ষাকে নাহলে এতোদিনে পেয়ে যেতো হৃদহরনীকে।
ইরহাম গভীর দৃষ্টিতে অর্ষাকে পর্যবেক্ষন করতে থাকে।অর্ষার পরনে লাল চুনরি শিফনের শাড়ি।চোঠে গাড় লাল লিপস্টিক।কপালে ছোট লাল টিপ।কানে মাঝারি সাইজের ঝুমকো আর গলায় হার।চুলগুলো ছাড়া যা বাতাসে উড়ছে।
চোখে কাজল আর মাশকারা দেওয়া।সেদিন সে হুবহু এই চেখ জোড়াই দেখেছিলো তা ইরহাম সিয়র।ইরহামের একটু কেমন কেমন লাগছে।যাকে এতোদিন সে অপছন্দের তালিকায় সবার উপরে রেখেছে নিজের অজান্তেই তাকে ভালোবেসেছে।
ইরহাম অনেক বেশি খুশি হয়েছে কারণ তার ভালোবাসার মানুষটার সাথেই শেষ পর্যন্ত তার বিয়েটা হলো।আল্লাহ হয়তো এটাই চেয়েছিলেন।ইরহাম হাজার শুকরিয়া আদায় করলো।
ইরহাম আইসক্রিম গুলো সবাইকে ধরিয়ে দেয়।ইলমা আর অর্ষা বাচ্চাদের মতো খেতে থাকে।ইরহাম হাসে অর্ষার কান্ড দেখে।এখন বিরক্ত কেনো লাগছে না।কিন্তু ভালোও লাগছে না।
সবাই মিলে সামনে দিকে এগোতে থাকে।রুশান ইরহাম আর অর্ষাকে কাছাকাছি থাকার সুযোগও করে দিচ্ছে।যদিও এতে অর্ষা কিছুক্ষণ পরপর চোখ গরম দিচ্ছে।এতে অবশ্য তার কিছুই যায় আসে না।পার্কটা ঘুরে ঘুরে দেখলো সবাই।
ইরহাম অর্ষার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,,,
—“তুমি আমার এতো কাছে থাকা সত্ত্বেও তোমায় চিনতো পারিনি আমি।সেই তোমাকে খুঁজতে এতো তোলপাড় করলাম কিন্তু সেই তুমি আমার সামনেই ছিলে”
আরিশা আর ইলমা তো ব/কব/ক করেই যাচ্ছে।মুহিব,নাইম,রুশান নিজেদের মতো কথা বলছে।উশা আর অর্ষা তো এক জায়গায় যাচ্ছে তো ছবি তুলেই যাচ্ছে।ইরহাম ইয়াদকে সবার পেছনে আনমনে হাঁটতে দেখে এগিয়ে গেলো তার দিকে।ইয়াদ অর্ষার দিকেই তাকিয়ে ছিলো।
—“কিরে ইয়াদ তুই আসলি অথচ আমার সাথে কথা বললি না কেনো”
—“আসলে ভাইয়া আমি একটু অসুস্থ তাই আরকি।আসতে চাইছিলাম না কিন্তু ইলু রাগ করে বসে ছিলো বলে নিয়ে এসেছি।”
ইরহাম ইয়াদকে অর্ষাকে দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেছে।ইরহাম ভাবে ইয়াদের হয়তো উশাকে পছন্দ হয়েছে।ইয়াদ বলে,,,
—“তোর কি উশা পছন্দ হয়েছে ইয়াদ বারবার তাকাচ্ছিস”
ইয়াদ চমকায়।ইরহাম খেয়াল করেছে তাহলে তাকে।ইয়াদের ভীষণ লজ্জা লাগে।যতই সে অর্ষাকে ভালোবাসুক না কেনো পরিশেষে অর্ষা তার বড় ভাইয়ের বউ।যার দিকে ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকানো যাবে না।কিন্তু বেহায়া মন কি আর মানে!
ইয়াদকে এমন ভাবনায় ডুবে থাকতে দেখে ইরহাম অবাক হয়।যেই ছেলেটা এক মুহুর্তও না হেসে ফাজলামি করে থাকতে পারে না সে এখন চুপচাপ একা একা হেঁটে যাচ্ছে।ইরহামের সন্দেহ বেশ।
—“কিরে কি হলো আবার তোর।”
ইয়াদ চমকে ওঠে।জোরপূর্বক হেসে বলল,,,
—“উশাকে পছন্দ হবে আমার।আমি তো সবাইকেই দেখছিলাম।”
ইরহাম কিছু বলে না।সামনে এগিয়ে যায়।রুহানের সাথে কথা বলার মাঝে রুশান ইরহামকে ডাক দিয়ে বলে,,,,
—“ভাইয়া এদিকে আসুন।”
ইরহাম এগিয়ে যেতেই সবাই মিলে তাকে অর্ষার পাশে দাঁড় করিয়ে দেয়।অর্ষা ইরহামের দিকে তাকায়।ইরহামের পরনে কালো শার্ট।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে চোখের উপর পরে আছে।চশমা তো আছেই সাথে।অর্ষা আবারও ক্রাশ খেলো ইরহামের উপর।আবার নিজেকে নিজেই ধমক দিলো।
ইরহাম অর্ষাকে নিজের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে সবার আড়ালে হাসে।মেয়েটা যে তাকে দেখে ক্রাশ খেয়েছে তা বেশ বুঝতে পারছে।রুশানের কথা অনুযায়ী ইরহাম অর্ষার পাশে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলে,,,
—“এমন তাকিয়ে আছো মনে হচ্ছে খেয়ে ফেলবে।নজর সরাও এটা পাবলিক প্লেস”
অর্ষা দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়।ইরহাম বাঁকা হাসে।অর্ষা যে লজ্জা পেয়েছে বেশ বুঝতে পারছে সে।রুশান বিভিন্ন পোজ দিতে বলছে।অর্ষা ইরহাম তাই করছে।অর্ষার অস্বস্তি হলেও কিছু করার নেই তার।ইরহাম হুট করে অর্ষার কোমড়ে হাত রাখে।অর্ষা কেঁপে উঠে ইরহামের দিকে তাকায়।ইরহাম ও অর্ষার দিকে তাকায়।
রুশান সেই মুহুর্তে ক্লিক করে।ছবিটা অনেক সুন্দর হয়।ইরহাম অর্ষার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে মনে মনে আওড়ায়,,,
—❝আমি তোমার ওই কাজল চোখে দেখেছি আমার সর্বনাশ প্রেয়সী❞
চলবে~