প্রেমের_উড়ান #পর্বঃ৫ #লেখিকাঃদিশা_মনি

#প্রেমের_উড়ান
#পর্বঃ৫
#লেখিকাঃদিশা_মনি

সুহানি তৈরি হচ্ছে এয়ারপোর্টে যাওয়ার জন্য। ইশার ফ্লাইটের সিডিউল আগে ছিল জন্য বেরিয়ে গেছে। সুহানিও সম্পূর্ণ প্রস্তুত নিয়ে নিলো। সুহানি যাওয়ার আগে মনে মনে শুধু একটা দোয়াই করল যেন আজ তাকে আর ধ্রুবর মুখোমুখি হতে না হয়। যেন সে স্বস্তিতে থাকতে পারে আজকের দিনটা। এখন দেখার পালা তার এই প্রার্থনা কাজে লাগে কিনা।

এয়ারপোর্টে পৌঁছে সুহানি তৈরি হয়ে নিল প্লেনে ওঠার জন্য। এমন সময় তার দেখা হয়ে গেল ধ্রুবর সাথে। সুহানিকে দেখে ধ্রুব গম্ভীরভাবে বলল,
‘আজকে কি তুমি সিঙ্গাপুরগামী ফ্লাইটে ডিউটিতে থাকবা?’

সুহানি মাথা কিঞ্চিৎ দুলিয়ে বলে,
‘হুম।’

‘আমি আজ এই ফ্লাইটেরই পাইলট হিসেবে আছি। ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত তাইনা? বারবার আমার সাথেই আসতে হচ্ছে তোমায়।’

সুহানির বেজায় রাগ হলো ধ্রুবর কথাটা শুনে। সে তো চাইছে ধ্রুবর থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকতে কিন্তু ভাগ্য তাকে বারংবার ধ্রুবর দিকেই ঠেলে দিচ্ছে যেন! সুহানি আর কথা বাড়ালো না। চুপচাপ নিজের মতো যেতে লাগল। ধ্রুব সুহানির যাওয়ার পানে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,
‘ভাগ্যকে তুমি বদলাতে পারবে না সুহা। You are my destiny. তাই তুমি চাও বা না চাও ভাগ্য আমাদের ঠিকই মিলিয়ে দেবে।’

অতঃপর ধ্রুবও প্লেনে ওঠার প্রস্তুতি নেয়।

★★★
সুহানি আজকে তার দায়িত্ব খুব ভালোভাবেই পালন করার চেষ্টা করছে। এতে সে সফলও৷ আজ এখনো অব্দি কোন ভুল হয়নি তার। সুহানি ব্যাপারটা নিয়ে দারুণ আনন্দিত।

তবে একটা ব্যাপার নিয়ে সে বেশ চিন্তিত। ফ্লাইটে অবস্থানরত এক মধ্যবয়সী বিমানযাত্রী বারবার সুহানির দিকে অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিল। পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি বুঝতে মেয়েদের সমস্যা হয়না। সুহানিও বুঝতে পারছিল যে লোকটা তাকে বাজে নজরে দেখছে।

ব্যাপারটা ভেবে সুহানি বিরক্ত হলো খুব। বাপের বয়সী একটা লোকের এমন দৃষ্টিতে তার অস্বস্তি প্রখর হচ্ছিল। কিন্তু সে চাইলেও কিছু করতে পারছিল না।

এরমধ্যে সুহানিকে খাবার নিয়ে আসতে হলো সকল বিমানযাত্রীর জন্য। একে একে সবাইকে দেওয়ার পর এবার পালা আসল সেই মধ্যবয়সী লোকটার।

সুহানি ভয়ে ভয়েই লোকটার দিকে এগিয়ে গেল। এইরকম লোকের বিশ্বাস নেই। কখন কি করতে পারে সেটা বলা যেতে পারে না। সুহানি লোকটার কাছে খাবার নিয়ে যেতেই লোকটা সুযোগ বুঝে সুহানির হাতে অশোভন ভাবে স্পর্শ করে।

সুহানি একটা ঝটকা দিয়ে নিজের হাত সরিয়ে নেয় এবং দূরে সরে আসে লোকটার কাছ থেকে। কিন্তু লোকটার এতেও যেন কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তিনি তাকিয়ে আছেন সুহানির দিকেই।

সুহানির ইচ্ছা করছিল ঠা’স ঠা’স করে লোকটার গালে দু’টো চ’ড় বসিয়ে দেওয়ার। সে কোন ঝামেলা চাইছিল না জন্য চুপচাপ দূরে সরে আসে। তবে তার মনে আজকের ঘটনাটা খুব বা’জে প্রভাব ফেলল।

★★★
সিঙ্গাপুরে পৌঁছানোর পর কিছু জরুরি কাজে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে একটু দূরে চলে এলো সুহানি।

একটু সামনে আসতেই সে বুঝতে পারছিল কেউ তাকে ফলো করছে। সুহানির মন অজানা আশংকায় কেপে ওঠে। ভয়ে ভয়ে পিছনে ফিরে তাকাতেই সে দেখতে পায় তখনকার সেই মধ্যবয়সী লোকটা তাকে ফলো করছে। সুহানি লোকটির উদ্দ্যেশ্যে রাগী গলায় বলে,
‘আপনি কি করছেন এখানে? আপনি কি আমায় ফলো করছিলেন নাকি?’

লোকটা বিকট হাসি দেয়। সুহানির কাছে ভীষণ বিশ্রী ঠেকে সেই হাসি। সে লোকটিকে পা’শ কা’টিয়ে চলে যেতে চায় এমন সময় লোকটি তার পথ আটকে বলে,
‘এক রাতের জন্য কত নেবে সুন্দরী? তোমাকে আমার বেশ মনে ধরেছে।’

সুহানি এই মুহুর্তে নিজেকে সামলাতে পারল না। স’পাটে চ’ড় বসিয়ে দিল লোকটির গালে। অতঃপর তার মুখে থু’থু ছিটিয়ে বলে,
‘লজ্জা করে না আপনার নিজের মেয়ের বয়সী একটা মেয়েকে এরকম কু’প্রস্তাব দিতে?’

লোকটি নিজের রুমাল দিয়ে মুখ মুছে বলে,
‘চু”প কর, একদম বেশি তেজ দেখাবি না। তোদের মতো এয়ার হোস্টেজদের আমার চেনা আছে। এত দেমাগ দেখিয়ে কি হবে?তোর কত টাকা চাই সেটা শুধু বল আমায়। ৫ লাখ, ১০ লাখ নাকি ১৫ লাখ? যত টাকা চাইবি ততোই দেব শুধু একটা রা’ত আমাকে উপহার দে।’

সুহানির সহ্যের সীমা পেরিয়ে যাচ্ছিল৷ সে আর কিছু করতে যাবে এমন সময় কোথা থেকে যেন ধ্রুবর আগমন ঘটল। ধ্রুব এসেই কোন কথা না বলে সবার আগে লোকটার নাক বরাবর ঘু’ষি মা’রল। অতঃপর লোকটির কলার ধরে এলোপাতাড়ি মা’রতে মা’রতে বলল,
‘তোর এত বড় সাহস তুই আমার সুহাকে এমন কু’প্রস্তাব দিস। তোকে তো আমি…’

একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি লেগে যায়। আশেপাশের কিছু লোক এগিয়ে এসে তাদের থামায়। লোকটি এই সুযোগে পালিয়ে যায়।

সুহানি খেয়াল করে মা’রামারি করতে গিয়ে ধ্রুবর হাতে আ’ঘাত লেগেছে এবং সেখান থেকে রক্ত বের হচ্ছে। সুহানি তার ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে ফাস্ট এইড বের করে ধ্রুবর কাছে এসে তার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিতে দিতে বলে,
‘আপনার কি দরকার ছিল এভাবে লড়াই করার? আমার সমস্যা আমি নিজেই মিটিয়ে নিতে পারতাম।’

‘ঐ লোকটা তোমাকে এত বা’জে বা’জে কথা বলছিল আর আমি চুপ করে শুনতাম। ওর ভাগ্য ভালো আশেপাশের মানুষ ছুটে এসেছিল। নাহলে আজ আমি ওকে মে’রেই ফেলতাম।’

‘আপনি এত রিয়্যাক্ট করছেন কেন? কে হন আপনি আমার?’

সুহানির এমন কথায় ধ্রুবর বুকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। সে নিজের হাত সরিয়ে নেয়। সুহানি বলে ওঠে,
‘হাতটা সরিয়ে নিলেন কেন? কতোখানি আ’ঘাত লেগেছে। ‘

ধ্রুব তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে,
‘এই আঘা’ত তো শুকিয়ে যাবে কিন্তু আমার মনে যেই ক্ষত তৈরি হয়েছে সেটার কি হবে?’

সুহানি কোন উত্তর দেয়না। ধ্রুব চলে যেতে নেয়। যাওয়ার আগে সুহানির উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘তুমি সত্যি অনেক বদলে গেছ সুহানি। শুধু তোমার একটা জিনিসই বদলায় নি, আর সেটা হলো অকারণে আমাকে কষ্ট দেওয়া।’

ধ্রুব চলে যেতেই সুহামি স্বগতোক্তি করে বলে,
‘আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না ধ্রুব। আমি চাই তুমি ভালো থাকো। তুমি সত্যি অনেক ভালো ছেলে, যে কোন মেয়ের স্বপ্নপুরুষ তুমি। আমি জানি, এতকিছুর পরেও তুমি আমাকে ভালোবাসো। আমি যতোই অস্বীকার করি না কেন আমার মন এটা জানে সেখানে তোমার জন্য ঠিক কতোটা স্থান রয়েছে। কিন্তু কি করব আমি? আমি যে নিরুপায়। তোমার কাছে আমি কখনো ফিরতে পারব না। তাই ভালো এটাই হবে তুমি আমাকে ভুল বোঝো আর আমার থেকে দূরে সরে যাও। এটাই আমাদের দুজনের জন্য ভালো হবে।’

★★★
ধ্রুবর হাতে আ’ঘাত লাগার কারণে তার সকল ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। আপাতত সে সিঙ্গাপুরেই অবস্থান করছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীকাল দেশে ফিরবে।

সিঙ্গাপুরের একটি বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করছে ধ্রুব। স্বীয় ফোন বের করে একটি ছবির দিকে অপলক তাকিয়ে আছে ধ্রুব। ছবিটি ৬ বছর আগের এক ভ্যালেন্টাইন ডের দিন তোলা।

ধ্রুবর মনে পড়ে যায় সে দিনটা সুহানির সাথে কতো আনন্দ করে কা’টিয়েছিল সে। অতীত কতোটাই না মধুর ছিল।

সুহানির একটা ছবি বুকে জড়িয়ে ধ্রুব বলে,
‘তুমি তো আমারই ছিলে সুহানি। আমি তো জ্ঞানত তোমায় কখনো কোন ক’ষ্ট দেইনি। সবসময় তোমার খেয়াল রেখেছি, কিভাবে তোমায় খুশি করা যায় সেটাই শুধু ভেবেছি। তাহলে তুমি কেন আমায় এভাবে দূরে ঠেলে দিলে আমায়? আর কি কখনো কাছে টানবে না?’

কথাগুলো ভেবে কষ্টের সাগরে ডুব দেয় ধ্রুব।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here