#ধূসর_শ্রাবণ💚 #লেখিকা:#তানজিল_মীম💚 #পর্ব-২১

#ধূসর_শ্রাবণ💚
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💚
#পর্ব-২১
________________

বিস্মিত ভরা চেহারা নিয়ে তাকিয়ে আছে নির্মল হিয়ার দিকে। সে ভাবে নি এই মুহূর্তে হুট করে কোথা থেকে হিয়া এসে তাঁকে জড়িয়ে ধরবে। নির্মল বেশ অবাক হয়েই আবারো প্রশ্ন করে বসলো হিয়াকে বললো,

‘ কি হয়েছে তোমার?’

এবারও নিশ্চুপ হিয়া। হিয়াকে চুপ থাকতে দেখে আবারো বলে উঠল নির্মল,

‘ কি হলো তুমি কথা বলছো না কেন?’

প্রতি উওরে নির্মলের দিকে নিশ্চুপে থাকায় হিয়া। যা দেখে বলে নির্মল,

‘ তুমি না বললে আমি বুঝবো কি করে?’

নির্মলের কথা শুনে হিয়া হতাশা ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ আপনি আমায় কখনো ছেড়ে যাবেন না তো,নির্মল?’

এবার নির্মল সত্যি হতভাগ। এই নির্ঘুম রাতে হুট করে হিয়ার এমন অদ্ভুত কথা শুনে যেন সত্যি নির্বিকার নির্মল। নির্মল বিস্ময় ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ তুমি এতরাতে এই কথাটা বলার জন্য এখানে এসেছো হিয়া?’

‘ আপনি আমার প্রশ্নের উত্তরটা দিন না প্লিজ?’

‘ কি উওর দিবো এটা কোনো প্রশ্ন হলো।’

বিরক্ত হলো হিয়া। এই লোকটা সোজা কথাটা সোজা ভাবে বলতে পারে না কেন? হিয়া কিছুটা বিরক্তির স্বর নিয়েই বললো,

‘ আপনাকে যে প্রশ্নটা করেছি তাঁর হ্যাঁ বা না বলতে পারছেন না কেন?’

নির্মল চুপ রইলো। কিছু বললো না। নির্মলকে চুপ থাকতে দেখে বেশ নির্বিকার স্বর নিয়ে বললো হিয়া,

‘ কি হলো আপনি কথা বলছেন না কেন?’

হিয়ার কথা শুনে শীতল দৃষ্টিতে তাকালো নির্মল হিয়ার দিকে। তারপর ওর দু’গাল চেপে ধরে শীতল কন্ঠে বললো,

‘ কি হয়েছে তোমার?’

নির্মলের কাজে হিয়া ছলছল চোখে নির্মলের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আপনি আমায় ছাড়া অন্য কোনো মেয়েকে কখনো ভালোবেসে ফেলবেন না তো নির্মল?’

হতাশ নির্মল। এই মেয়ের নির্ঘাত মাথা খারাপ হয়ে গেছে না হলে কিসব ভুললাম বকছে। নির্মল হতাশা ভরা চেহারা নিয়েই বললো,

‘ তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে হিয়া কি সব উল্টো পাল্টা বকছো?’

‘ আপনি আমার কথার সরাসরি জবাব কেন দিচ্ছেন না বলুন না আমায় ছাড়া অন্য কোনো মেয়েকে কখনো ভালোবাসবেন না।’

এবার নির্মল কিছু একটা ভেবে বলে উঠল,

‘ ভালোবাসলেই বা কি তুমি তো আমায় ভালোবাসো না।’

নির্মলের কথা শুনে বুকটা ছ্যাত করে উঠলো হিয়ার। ফট করেই আবারো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সে নির্মলকে তারপর কান্না ভেঁজা কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ এভাবে বলবেন না আর কে বলেছে আমি আপনায় ভালোবাসি না। আমিও আপনায় ভালোবাসি নির্মল।’

বলতে বলতে কেঁদে ফেলে হিয়া। হিয়ার কান্ডে যেন চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম নির্মলের। চটজলদি হিয়াকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আরে তুমি কাঁদছো কেন আমি তো মজা করে বলেছিলাম।’

‘ এমন মজা কখনো করবেন না নির্মল আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, কেন হচ্ছে জানি না কিন্তু কষ্ট হচ্ছে। বুক চিঁড়ে কান্না পাচ্ছে।’

বলেই কাঁদতে লাগলো হিয়া। হিয়ার কান্ডে নির্মল বিস্মিত। তক্ষৎনাত হিয়াকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো নির্মল,

‘ ঠিক আছে ঠিক আছে আর কাঁদতে হবে না আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসবো না। আর এখন তুমিও তো আমায় ভালোবাসো বললে তাহলে বিয়েটা করে ফেলি।’

নির্মলের কথা শুনে হিয়া কান্না ভেঁজা কন্ঠ নিয়েই বললো,

‘ আপনায় আমি বিয়ে করবো কেন?’

‘ যা বাবা এক্ষুনি তো বললে তুমি আমায় ভালোবাসো তাহলে বিয়ে করবে না কেন?’

‘ ভালোবাসি বলেছি বিয়ে করবো এমনটা তো বলে নি।’

হতভাগ নির্মল। খানিকটা বিরক্ত নিয়ে বললো সে,

‘ বিয়ে না করলে আমিও অন্য কোনো মেয়েকে ভালোবেসে ফেলবো তারপর কাঁদলেও আমাকে পাবে না।’

নির্মলের এবারের কথা শুনে আরো উচ্চস্বরে কেঁদে উঠলো হিয়া। হিয়ার কান্ডে আশেপাশে তাকালো নির্মল। এতরাতে হিয়ার এমন পাগলামি দেখে সত্যি নিরাশ নির্মল। নির্মল হিয়ার মুখ চেপে ধরে বললো,

‘ হুস এত জোরে কাঁদছো কেন আশেপাশের লোকজনকে কি জানাতে চাইছো আমরা এখানে আছি।’

হিয়া শুনলো। থেমে গেল নিরালায়। হিয়াকে থামতে দেখে নির্মলও মুখ থেকে হাত সরিয়ে বললো,

‘ একদম কাঁদবে না, আর কখন থেকে উল্টো পাল্টা বকে চলেছো, তুমি জানো না এই নির্মল হিয়া ব্যতিত অন্যকাউকে চায় না। তাই চুপ থাকো আর হ্যাঁ তুমি চাও বা না চাও খুব শীঘ্রই আমরা বিয়ে করছি।’

হিয়া ধমকালো সত্যি তো এতক্ষণ যাবৎ কি সব পাগলামি করলো সে। মাথার তারগুলো বোধহয় সত্যি ছিঁড়ে গিয়েছিল তাঁর। ছিঃ ছিঃ নিশ্চয়ই রাতের বেলা তাঁকে ভূতে ধরেছিল। হিয়াকে চুপ থাকতে দেখে আবারো বলে উঠল নির্মল,

‘ কি হলো কিছু বলছো না কেন?’

প্রতি উওরে নির্বিকার হয়ে বললো হিয়া,

‘ কি বলবো?’

‘ কিছু বলতে হবে না। শুধু এটা বলো আজ রাতে কি এখানে থাকার পরিকল্পনা করছো? বাড়ি যাবে না নাকি আমাকে ছাড়া আর থাকতে পারছো না।’

বলেই হেঁসে ফেলে নির্মল। নির্মলের হাসিতেই চোখ আঁটকে যায় হিয়ার। লোকটা কি সুন্দর হাসে। হিয়াকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিজের হাসি থামিয়ে বললো নির্মল,

‘ কি দেখছো?’

নির্মলের কথা শুনে হিয়া আনমনেই বলে উঠল,

‘ আপনাকে।’

সঙ্গে সঙ্গে চমকালো নির্মল। মুচকি হাসলো নীরবে। দূরত্ব কমিয়ে কাছাকাছি হলো দুজন। নির্মল হিয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে শীতল ভেজা কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ তুমি যে আমাতে বড় আসক্ত হয়ে গেছো তা কি তুমি জানো?’

চমকে উঠলো হিয়া। নির্বিকার চোখে তাকালো সে নির্মলের চোখের দিকে। হিয়া তাকাতেই আবারো বলে উঠল নির্মল,

‘ এত প্রেমে পড়লো না প্রিয়দর্শিনী পড়ে কিন্তু বিপদে পড়ে যাবে।’

প্রতিবার নির্মলের এমন শীতল ভেজা কথা শুনে চুপ থাকলেও এবার আর চুপ থাকলো না হিয়া। আনমনেই বলে উঠল সে,

‘ আপনি পড়েছেন কি বিপদে?’

হাসলো নির্মল তারপর বললো,

‘ পড়েছি বলেই না তোমায় সাবধান করছি।’

আবারো থমকে গেল হিয়া। এই লোকটার সাথে কথা বলে কোনো কালেই পেরে উঠে নি হিয়া। আজও তাঁর ব্যতিক্রম কিছু হলো না। থেমে গেল হিয়া আর কিছু বললো না। এমনতেও নিজের পাগলামিতে নিজেই লজ্জিত আজ!’

_____

আকাশটা কালো। মেঘ ঝমেছে অল্প। যদিও সময়টা বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যার কাছাকাছি। চারপাশে শীতল ভেজা বাতাস বইছে খুব। গাছের পাতারাও নড়েচড়ে উঠছে বারংবার। এসবের ভিড়েই বেলকনিতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে বর্ষা। নির্বিকার সে। চোখের পানি শুকিয়ে গেছে অনেক আগেই। বুকের ভিতর দক দক করছে সাথে চিনচিনে ব্যথা অনুভব হচ্ছে খুব। বর্ষা কল্পনাও করতে পারে নি শুভ্র তাঁকে ঠকাবে। অবশ্য ঠকাবে বললে ভুল হবে শুভ্র তো কোনোদিন তাঁকে ভালোই বাসে নি। বিয়ের আগেই তো ডিভোর্স নিয়ে কথা বলেছিল। এবার বর্ষা বুঝতে পেরেছে শুভ্র কেন বিয়েটা করতে চাই নি। শুভ্র তাঁকে ঠকায় নি, শুভ্র তো এই বিয়েটাই করতে চায় নি তাহলে শুভ্র কি করে ঠকালো। পরিবারের চাপে পড়ে তাঁকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছে একপ্রকার বলা যায়। এই মুহূর্তে বর্ষার মনে হচ্ছে শুভ্র সেদিন ফিরে না আসলেই ভালো হতো। কিন্তু সেদিন তো শুভ্র চলে যাওয়াতে বড্ড অভিমান হয়েছিল তাঁর বেলা। বর্ষা ভাবলো অনেক কিছু ভাবলো। মাথার ভিতর হাজার হাজার কথা যেন কিলবিল করছে তাঁর। শুভ্র তাঁকে ঠকায় নি, শুভ্রের দোষ দিলে একদমই ভুল হবে। তাঁর কোনো রাইট নেই শুভ্রকে কিছু বলার। সব গল্পই যে বিয়ের পর তাঁর স্বামী তাঁর স্ত্রীকে ভালোবাসবে এমনটা নাও হতে পারে। দু’দিন আগেও শুভ্রের আচরনে মনে হয়েছিল বর্ষার শুভ্র হয়তো নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছে তাঁকে। কিন্তু না তাঁর ধারণা ভুল ছিল শুভ্র কোনো কালেও তাঁকে ভালোবাসে নি হয়তো কোনোদিন ভালো বাসবেও না। এমন সময় সেখানে দৌড়ে আসলো শুভ্র। বর্ষার দিকে এগিয়ে এসে হতভম্ব গলায় বললো সে,

‘ বর্ষা?’

সাথে সাথে ছলছল চোখে পিছন ঘুরে তাকালো বর্ষা। বর্ষাকে তাকাতে দেখে শুভ্র বলে উঠল,

‘ তুমি যা দেখেছো,

আর কিছু বলার আগেই হাত দেখিয়ে থামিয়ে দেয় বর্ষা শুভ্রকে। তারপর বলে,

‘ আমি কি আপনাকে কিছু বলেছি শুভ্র তাহলে কইফয়েত কেন দিচ্ছেন?’

‘ কিন্তু বর্ষা?’

‘ আপনার কোনো দোষ নেই শুভ্র সব দোষ আমার। আর তার থেকেও বড় কথা আমি হলাম আপনার জীবনের উটকো ঝামেলা। আমার জন্য আপনি কতবার আঘাত পেয়েছেন বলুন তো।’

‘ তুমি আমায় ভুল বুঝছো বর্ষা?’

‘ ভুল ঠিক জানি না। আমার এখন ভালো লাগছে না আমি রুমে গেলাম।’

এতটুকু বলে চলে যেতে নেয় বর্ষা। বর্ষাকে যেতে দেখে শুভ্র হাত ধরে বসে বর্ষার তারপর বলে,

‘ আমার কথাটা তো শুনবে একবার।’

‘ আপনাকে কিছু বলতে হবে না শুভ্র।’

‘ তুমি আবারো আমায় ভুল বুঝছো বর্ষা আমার কথাগুলো শুনলে আমি জানি তুমি বুঝবে আমায়। তাই প্লিজ একবার আমার কথাটা শোনো।’

শুভ্রের কথা শুনলো এবার। নির্বিকার স্বরেই বললো সে,

‘ ঠিক আছে বলুন তবে,

‘ আসলে বর্ষা হয়েছে কি?’

শুভ্র আর কিছু বলার আগেই সশব্দে ফোনটা বেজে উঠল তাঁর। সঙ্গে সঙ্গে চমকে উঠলো শুভ্র তক্ষৎনাত ফোনটা হাতে নিলো সে হসপিটাল থেকে ফোন এসেছে। শুভ্র একবার বর্ষা তো একবার ফোনটার দিকে তাকাচ্ছে। বর্ষা বুঝলো বিষয়টা। নিজের হাতটা শুভ্রের থেকে ছাড়িয়ে বললো,

‘ আমরা পরে কথা বলবো।’

এতটুকু বলে তক্ষৎনাত জায়গা ত্যাগ করলো সে। আর শুভ্রও পুরো হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষন এরই মাঝে ফোনটা কেটে আবারো বেজে উঠলো। শুভ্র নির্বিকার হয়েই ফোনটা তুলে বললো,

‘ আসছি আমি।’

____

মাঝপথে কেটে যায় কয়েকটা দিন। এই কয়েকদিনে শুভ্র বর্ষার দূরত্ব বেড়ে গেছে আরও। কারো সাথেই কথা হয় না তেমন। শুভ্র অনেকবার অনেক কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারে না। যার দরুন দূরত্ব যেন আগের চেয়েও বেশি৷ বেড়ে গেছে তাদের। পরিস্থিতি এমন যে শুভ্র চাইলেও কিছু করতে পারছে না।’

এয়ারপোর্টে নিজের ব্যাগপত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বর্ষা। আজ বাংলাদেশ যাবে সে। এখানে থাকলে দম বন্ধ হয়ে মারা পড়বে। শুভ্রকে দেখলেও ভীষণ কষ্ট হয় তাঁর। আর বাড়ি থেকে খবর এসেছে দাদুর শরীরটাও নাকি ঠিক নেই। তাই অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলো ‘বাংলাদেশ যাবে বর্ষা। তারপর শুভ্রকে মুক্তি দিয়ে দিবে। এভাবে তো আর চলতে দেয়া যায় না।’

নানা কিছু ভেবে তপ্ত নিশ্বাস ফেলে ঢুকে পড়লো বর্ষা এয়ারপোর্টের ভিতর।’

গাড়ি করে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাচ্ছে শুভ্র। মনটা আজ ভীষণ ফুড়ফুড়ে লাগছে তাঁর। অবশেষে নিজের ঝামেলা মিটিয়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছে সে। শুভ্র ভেবে নিয়েছি আজই বর্ষাকে সবকিছু বলে তাদের দূরত্ব হাঁটিয়ে তাঁর মনের কথা বলবে বর্ষাকে। অনেক হয়েছে আর নয়?’

নানা কিছু ভেবে ফোনটা হাতে নিলো শুভ্র তারপর মেসেজ লিখলো বর্ষাকে,

‘ আমি আসছি! তোমাকে আমার মনের সব কথা আজই বলবো বোকারানি। হসপিটালের মেয়েটা কে ছিল? কেন আমি বিয়ের দিন ফিরে এসেছিলাম? কেন তোমায় বিয়ে করেছি সব বলবো আমি। অনেক হয়েছে দূরত্ব আর নয়। এবার সব শেষ করার সময় এসেছে অপেক্ষায় থেকো, আমি আসছি?’

বলেই মেসেজটা পাঠিয়ে দিলো শুভ্র বর্ষার নাম্বারের।

অন্যদিকে, মেসেজ এসেছে ঠিকই কিন্তু সেটা দেখার আগেই নিজের মোবাইলটা অফ করে ব্যাগে ভরে নিলো বর্ষা। তারপর এগিয়ে গেল সে নিজের গন্তব্যের দিকে….

#চলবে….

[ ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে। আর হ্যাঁ রহস্যের জট কিন্তু এবার খুলে দিবো অপেক্ষায় থেকো সবাই]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here