দ্বিতীয় জন 💔Season~2,পর্ব তিন
Sumana Easmin
হিমু দীর্ঘ এক মাস পর আজ বাসা থেকে বের হলো। সে একাই বাইক নিয়ে লং ড্রাইভে বের হয়েছে।
তার মাথায় শুধু বর্ষার সাথে কাটানো স্মৃতি গুলো আঁচর কাটছে।
কিছুদূর পথ না যেতেই সে পেছন থেকে একটা মেয়ের চিল্লানোর আওয়াজ শুনতে পেলো। পেছনে ঘুরে তাকাতেই দেখলো হুবহু বর্ষার মতো দেখতে একটা মেয়ে ওকে ওর নাম ধরে ডাকছে। আসলে সে সুসমি ছিলো।
হিমু বাইক টা একটু স্লো করতেই সুসমি ওর কাছে চলে আসলো। হিমু অবাক হয়ে সুসমির দিকে তাকিয়ে বললো-
-“কে আপনি?”
সুসমি অবাক হয়ে বললো-
-“কে আপনি মানে? আপনি আমায় চিনতে পারছেন না?”
-“না!”
-“সত্যিই চিন্তে পারছিনা?”
-“বলছি তো না! তবে আপনার সাথে আমার খুব কাছের একজনের চেহারার যথেষ্ট মিল পাচ্ছি!”
সুসমি কাঁদো কাঁদো গলায় বললো-
-“শুধু এতোটুকুই?”
হিমু বিরক্ত হয়ে বললো-
-“আচ্ছা আপনি আমায় মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে এসব কি শুরু করলেন বলুন তো? মানুষ জন সব দেখছে যে!”
-“দেখুক! তাতে আমার কোনই সমস্যা নেই।”
-“কিন্তু আমার সমস্যা আছে। পথ ছাড়ুন।”
সুসমি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো সেখানেই থাম্বার মতো দাঁড়িয়ে রইলো। আর হিমু ওর পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।
হিমু রাতে বাসায় ফিরলো। অনেক ঘোরাঘুরি করে ওর মনটা একটু ফ্রেশ লাগছে, কিন্তু বর্ষার স্মৃতি সেই ফ্রেশনেচ টাকে নষ্ট করে ঢেকে রেখেছে। সে রাতের খাবার সেরে বিছানায় শুয়ে পরলো। একটু পর ওর মা দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে রুমে ঢুকতেই হিমু বিরক্ত হয়ে বললো-
-“মা প্লিজ নিয়ে যাও! আমি এসব খেতে পারবোনা।”
-“পুরোটা খেতে হবেনা, অন্তত এক চুমুক খেয়ে নে বাবা!”
-“না মা এক চুমুক ও খেতে পারবোনা। প্লিজ তুমি জেদ করোনা!”
হিমুর মা আর কোন কথা না বাড়িয়ে চলে গেলেন। হিমু চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু তার চোখে কিছুতেই ঘুম আসলো না। সে বর্ষার সাথে কাটানো প্রথম রাতের কথা মনে করতে লাগলো। কতোটা জোর জবরদস্তি করে সে ঐ রাতে ওর সাথে মিলিত হয়েছিলো। মুলত বর্ষাকে কষ্ট দেওয়ার জন্যই সে অমন করেছিলো। সে যদি জানতো বর্ষাও ওকে ভালোবাসে, তাহলে সে কখনোই বর্ষার শরীরের উপর অমন অত্যাচার করতো না।
হিমুর চোখের কোনা বেয়ে জল গড়িয়ে পরতে লাগলো। বর্ষার সাথে কাটানো প্রতিটা অন্তরঙ্গ মহুর্ত সে মনে করতে লাগলো। অজান্তেই ওর ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।
সে ফোন টা হাতে নিয়ে গ্যালারি থেকে বর্ষার ছবি বের করে দেখতে লাগলো। একটা ছবি ভালো করে না দেখতেই ওর চোখটা আবার ঝাপসা হয়ে গেলো। ও ছোট বাচ্চাদের মতো বর্ষার ছবির উপরে হাত বোলাতে বোলাতে কান্না করতে লাগলো।
অথচ সে এর আগে বহু কারনে বহু বার অনেক কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু এভাবে কখনো কাঁদেনি। এমনকি রায়ান যখন ওকে বেধরক ভাবে পিটিয়েছিলো তখনো ও এমন ভাবে কাঁদেনি।
সে আজ রাস্তায় যখন সুসমিকে দেখেছিলো তখন খানিকটা ভরকে গিয়েছিলো। হুবহু বর্ষার মতো দেখতে। তবু ওর একবারের জন্যও মনে হয়নি বর্ষার যায়গায় ওকে বসাবে। ও বর্ষাকে এতোটায় ভালোবাসে যে বর্ষার মতো দেখতে হুবহু কাওকে এনে দিলেও সে তাকে বর্ষার যায়গায় বসাতে পারবেনা।
হিমু চোখ মুছে বাইরে গিয়ে দাঁড়ালো। যেখানে বেলকনী থেকে সোজা আকাশ দেখা যায়। সে আকাশের দিকে চুপচাপ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
হঠাৎই সে অনুভব করলো তার পুরো শরীরে ঠান্ডা বাতাস ছড়িয়ে পরছে। সে সামান্য কেঁপে উঠে চারপাশ তাকালো। পরক্ষণেই সে আবার মাথা উঁচু করে চোখ বন্ধ করে রইলো।
সে গভীর ভাবে চারপাশের শব্দ, বাতাস, প্রকৃতি অনুভব করতে লাগলো।
এভাবে কয়েক মিনিট থাকার পর সে খেয়াল করলো তার কানের কাছে কেউ ফিসফিস করে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে। সে আরো গভীর ভাবে সবকিছু অনুভব করতে লাগলো। সে সাথে সাথে বর্ষার ভয়েজ শুনতে পেলো। বর্ষা বিমর্ষ কন্ঠে বললো-
-“হিমু? তুমি আমার জন্য যতো বেশি ভেঙে পরছো আমি ততোই বেশি কষ্ট পাচ্ছি। প্লিজ তুমি এমন ভাবে ভেঙে পরিওনা। আমি তোমার খুব আশেপাশেই আছি। তুমি আমায় খুঁজে নাও। আমায় সব অশুভ শক্তি থেকে মুক্ত করে তোমার কাছে নিয়ে যাও।!”
শেষ কথা গুলো বর্ষা কান্না জড়ানো কন্ঠে বললো। হিমু তৎক্ষনাৎ চোখ মেলে চারপাশে তাকালো। কিন্তু কোথাও বর্ষাকে দেখতে পেলোনা।
সে রুমে এসে বর্ষার কথা গুলোর চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে লাগলো। এমনকি বর্ষার মারা যাওয়ার ঘটনার পর থেকে প্রত্যেক টা ঘটনা সূক্ষ্ম ভাবে বিশ্লেষণ করতে লাগলো।
সারারাত ভেবে ভোর রাতের দিকে সে একটা গোপন সূত্র খুঁজে পেলো। সে নিজেকে মানসিক ভাবে শক্ত করে তার মিশনে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।
দুপুরের দিকে হিমুর ঘুম ভাঙলো। সে লাঞ্চ সেরে বাইরে বেরুলো। যেখানে ওর সুসমির সাথে দেখা হয়েছিলো। সে তাড়াহুড়া করে ঐ রাস্তা ধরে যেতে লাগলো। কিন্তু গন্তব্য স্হলে গিয়ে কাওকে দেখতে পেলোনা। সে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে অপেক্ষা করলো কিন্তু সুসমির দেখা পেলো না।
অগ্যতা সে বাসায় চলে আসলো। রাতে ডিনার করার সময় সে ওর মাকে বললো-
-“জানো মা, কাল একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে আমার সাথে!”
ওর মা অবাক হয়ে বললো-
-“কি ঘটনা শুনা?”
-“কাল বড় রাস্তার মোড়ে হুবহু বর্ষার মতো দেখতে একটা মেয়ের সাথে আমার দেখা হয়েছিলো। সে আমায় দাঁড় করিয়ে কি সব উল্টা পাল্টা কথা বলছিলো। আমি তার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারলাম না!”
হিমুর মা স্বাভাবিক ভাবেই বললো-
-“আরে ও তো সুস্মিতা। ওর বাবা একজন ব্যাংকার। ওরা ঐদিকে থাকে!”
-“ওহ্, তাহলে এর আগে আমি ওকে কখনো দেখিনি কেনো?”
-“দেখেছিস কিন্তু তোর মনে নেই।”
-“কিভাবে, কবে?”
হিমুর মা তখন হিমুকে সব ঘটনা খুলে বললো। হিমু কিছুটা মনে করতে পারলো আর কিছুটা তার মাথায় অস্পষ্ট রয়ে গেলো। কিন্তু সে তবু অবাক হয়ে ওর মাকে জিজ্ঞেস করলো-
-“কিন্তু মা সেগুলো তো বর্ষা মারা যাওয়ার পর। বর্ষা বেঁচে থাকতে তাকে আমি কখনো দেখিনি কেনো?”
এবার হিমুর মা নিরাশ হয়ে বললো-
-“তোকে আমি কি উত্তর দিব বল? আমি নিজেই তো ওকে আগে কখনো দেখিনি! শুনছিলাম ওর বাবা কিছু রিলেটিভস্ নিয়ে কোথায় থেকে জানি এখানে ট্রান্সফার হয়ে এসেছে। এখানে একটা ফ্ল্যাট ও কিনে নিয়েছে!”
-“ওহ্ আচ্ছা!”
হিমু আর কোন কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে রুমে চলে গেলো। সে সুসমিকে মেইন টার্গেট হিসেবে বেছে নিলো।
পরদিন সে সুসমির বাসার সামনে গিয়ে সুসমিকে নাম ধরে ডাকতে লাগলো। সুসমি তখন চুল আঁচরাচ্ছিলো। সে হিমুর ভয়েজ শুনেই চিরুনি, কাঁটা ফেলে দিয়ে বেলকনীতে দৌড় দিলো। সুসমিকে বেলকনীতে দেখে হিমু বললো-
-“এই যে সুস্মিতা ম্যাডাম শুনছেন? আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো?”
সুস্মিতা ঈশারাই হিমুকে ফোন দিতে বললো!”
কিন্তু হিমু কিছুই বুঝতে পারলো না। সে ড্যাবড্যাব চোখে তাকিয়ে রইলো। শেষে সুসমি উপায় না দেখে একটা টুকরা কাগজ বেলকনী থেকে হিমুর দিকে ছুঁড়ে দিলো।
হিমু কাগজ টা হাতে নিয়ে ভাজ খুলে দেখলো সেখানে একটা ফোন নাম্বার লিখা আছে। আরর নিচে ছোট্ট করে লিখা, প্লিজ আপনি এখুনি বাসার সামনে থেকে চলে যান। নইলে বাবা রাগ করবে!
হিমু বাইক নিয়ে সোজা একটা রেস্টুরেন্টে চলে গেলো। সেখানে গিয়ে সুসমি কে কল দিলো। কয়েকবার কল দেওয়ার পর সুসমি রিসিভ করলো। সে রিসিভ করতেই হিমু বললো-
-“আমি মেসেজ করে আপনাকে একটা ঠিকানা পাঠিয়ে দিচ্ছি। আপনি এখুনি রওনা দিন। প্লিজ? আপনার বাসা থেকে এখানে আসতে প্রায় পনেরো-বিশ মিনিট সময় লাগবে! আপনার সাথে আমার খুব জরুরী কথা আছে। আজই! আপনি প্লিজ না করবেন না!”
কথাটা বলেই হিমু লাইন কেটে দিলো।
To be continue….