#আরেকটি_বার
#পর্বসংখ্যা_২৫
#Esrat_Ety
(২য় অংশ।)
(প্রথম অংশের লিংক কমেন্টে।)
নাবিল শর্মী আর শায়মীর ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে ডাকে,”আসবো আমি?”
শর্মী পড়ার টেবিলে। শায়মী শুয়ে ছিলো। সে উঠে বসে,
“আয়।”
নাবিল ঘরে ঢোকে। তার হাতে একটি প্যাকেট।
শায়মী বলে,কি তোর হাতে ওটা?
_একটা হকি ম্যাচ জিতে আসলাম। ভাবলাম তোদের ট্রিট দেই।
শর্মী লাফিয়ে ওঠে। দ্রুত এসে নাবিলের হাত থেকে প্যাকেটটা নিয়ে বলে,”কি এনেছো ভাইয়া? ”
_ ওয়েসক্যাফে থেকে বারবিকিউ চিকেন ফ্রাই আর বার্গার।
শর্মীর চোখ খুশিতে চকচক করে ওঠে। শায়মী বলে,”ঠিকাছে। তবে এখানে চারটা প্যাক কেনো? দাদু তো খায় না,পাপা তো বাড়িতে নেই। ছোটো চাচ্চু আর অন্তরা চাচী নেই, আমীরুন খালামনি নেই।
নাবিল ফোন হাতে নিয়ে গা ছাড়া ভঙ্গিতে বলে,”কেনো। তোদের ছোটো মা আছে না? সেও তো দাবী করে সে এই পরিবারের লোক। দিয়ে দিস একটা প্যাকেট।”
কথাটি বলে নাবিল মোবাইলে মনোযোগ দেয়। শায়মী আর শর্মী একে অপরের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।
নাবিল ওদের দিকে তাকায়।
ধ’ম’কে বলে,”অতো হাসতে হবে না! কিছু খেতে দেওয়া আর মা ভাবা এক না। যা গিয়ে দিয়ে আয়। ডেকে এখানে আনিস না আবার। আসলেই বকবক করে জ্ঞান দিতে দিতে আমার মাথা ব্যাথা করে দেবে। পাপার সাথে থাকতে থাকতে পাপার মতো হয়ে গিয়েছে।
শায়মী আর শর্মী হাসতেই থাকে। শায়মী শর্মীকে একটা প্যাকেট দিয়ে বলে,”যা গিয়ে দিয়ে আয়।”
শর্মী প্যাকেট টা নিয়ে চলে যায়। পাঁচ মিনিট পর আবার ফিরে আসে।
নাবিল বলে,”কি? আমার কথা শুনে নেয়নি?”
শর্মী মাথা নাড়ায়, শুকনো গলায় বলে,”দরজা দিয়ে উকি দিয়ে দেখি আন্টি শুয়ে শুয়ে কাঁদছে। আমি আর ডাকিনি।”
নাবিল শায়মী একে অপরের দিকে তাকায়। নাবিল অবাক হয়ে বিরবির করে বলে,”সমস্যা কি এই পাগল মহিলার!”
***
রওশান আরা লিভিং রুমে বসে আছে।
রাওনাফ আজ বেশ রাত করে ফিরেছে, মাকে দেখে বলে,”কি ব্যাপার! এতো রাতে এখানে বসে আছো যে! রাতে খেয়েছো সবাই?”
“হু। খেয়েছি। বৌমা খায়নি শুধু।”
রাওনাফ বলে,”কেনো?”
_জানিনা সন্ধ্যা থেকে ঘরে শুয়ে আছে। গিয়েছিলাম। বললো মাথা ব্যাথা। চোখ ফুলে আছে। দেখে তো মনে হয় কেঁদেছে।
রাওনাফ তার মায়ের দিকে তাকায়।
রওশান আরা বলে,”বৌমা তোর থেকে কষ্ট পাচ্ছে না তো!”
_কি বলছো মা তুমি। আমি কেনো কষ্ট দেবো?
_এইযে তুই দিনের ষোলো ঘন্টা বাইরে বাইরে থাকিস। বৌমার দিন কিভাবে কাটে জানতে চাস?
রাওনাফ উঠে দাঁড়ায়। সে উর্বীর কাছে যাবে।
রওশান আরা বলে,”বড় খোকা।”
রাওনাফ দাঁড়িয়ে পরে,”হু মা।”
_বৌমাটা বড্ড ভালো মেয়ে। অবহেলা করিস না। জানি তুই শিমালাকে ভালোবাসিস। কিন্তু উর্বীও তোর স্ত্রী।
রাওনাফ মায়ের কথার জবাব না দিয়ে চলে যায়।
দরজা খুলে রাওনাফ ভেতরে ঢোকে। উর্বী ঘর অন্ধকার করে শুয়ে আছে।
রাওনাফ বাতি জ্বালিয়ে দেয়।
উর্বী উঠে বসে। তার চোখে মুখে সংকোচ। সে তার মুখ হাসি হাসি করার চেষ্টা করে।
রাওনাফ ফ্রেশ হয়ে একটা সাদা রঙের পাঞ্জাবি পরে। তারপর এসে তার কাছে এসে বসে। উর্বী তাকিয়ে বলে,”খেয়ে এসেছেন তাই না?”
“হু।”
“দাঁড়ান বিছানা গুছিয়ে দেই। ”
উর্বী উঠে দাঁড়ায়। রাওনাফ উর্বীর হাত টেনে ধরে বসিয়ে দেয়।
সরাসরি উর্বীর চোখে চোখ রেখে বলে,”কি হয়েছে? ”
_কই। কিছু নাতো !
_মা বললো তুমি অসুস্থ।
_হ্যা ঠান্ডা লেগে মাথা ধরেছে।
_ঠান্ডা লেগে মাথা ধরেছে নাকি কেঁদে কেঁদে মাথা ধরিয়েছো।
উর্বী রাওনাফের দিকে তাকায়। সে কি বলবে কিচ্ছু খুঁজে পাচ্ছে না।
রাওনাফ বলে,”মা তোমার জন্য কত চিন্তা করছে তুমি জানো? মা ভাবছে আমি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছি।”
উর্বী চুপ। রাওনাফ বলতে থাকে,
“বলো আমাকে। কিসের জন্য কষ্ট পাচ্ছো ?”
আনরোমান্টিক রাওনাফ খুবই দরদ নিয়ে জানতে চায়। কিন্তু বোকা উর্বী বলে না সত্যিটা। সে শুধু রাওনাফের দিকে তাকিয়ে বলে,”কখনো যদি আমি বুঝে যাই আপনার আমার প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মেছে সেদিন আমি বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই হারিয়ে ফেলবো। আমি ম’রে যাবো। এতো টা অসম্মানিত আমি কখনোই হতে চাইবো না।”
রাওনাফ তাকিয়ে থাকে। উর্বী চুপচাপ। রাওনাফ কিছুক্ষণ পর একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বলে,”ওঠো।”
উর্বী নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,”কোথায় যাবো?”
_ওযু করে এসো।
উর্বী তাকিয়েই থাকে। রাওনাফ গম্ভীর হয়ে বলে,”যাও বলছি!”
উর্বী চুপচাপ ওযু করতে চলে যায়। রাওনাফ ঘরের মেঝেতে দু’টো জায়নামাজ বিছিয়ে দেয়। উর্বী মাথায় ঘোমটা টেনে বেরিয়ে আসে। রাওনাফ বলে,”চলো দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করি।”
উর্বী চুপচাপ মাথা নাড়ায়। তারপর দাঁড়িয়ে যায় স্বামীর কিছুটা পেছনে বিছিয়ে রাখা জায়নামাজে। আদায় করে নেয় নফল নামাজ।
মোনাজাত শেষ করে রাওনাফ উর্বীর দিকে ঘুরে বসে। উর্বী তার দিকে তাকিয়ে আছে। রাওনাফ বলে ওঠে,”অস্থিরতা কমেছে কিছুটা?”
উর্বী মাথা নাড়ায়। রাওনাফ বলে,”এবার বলো। এমন অস্থিরতায় কেন ভুগছো? তোমার কেন মনে হচ্ছে আমার তোমার প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মাবে?”
উর্বী চুপ করে থাকে। রাওনাফ বলতে থাকে,”সরাসরি বলবে। আমার আচরণে তোমার মনে হচ্ছে আমি তোমায় এভয়েড করি? উদাসীন, কিংবা এখনও আমি দোটানায় রয়েছি এই সম্পর্কটা নিয়ে। এমনটা মনে হচ্ছে?”
উর্বী কোনো জবাব দেয়না। রাওনাফ আবারও বলে ওঠে,”স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটা ঠিক কিরকম জানো মৃদুলা উর্বী? একটা দালানের মতো। একটা উঁচু দালান তৈরি করতে যেমন শুরুতেই এর ভিতটা মজবুত করতে হয় তেমনি স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের বেলায়ও তাই। আর এই সম্পর্কের ভিত মজবুত করা মানে কি বোঝায় জানো? একে অপরের প্রতি নির্ভরতা তৈরি করা, বিশ্বাস জন্মানো, আস্থা জন্মানো। শরীরি ভালোবাসা সেখানে অনেক পরে আসে উর্বী। ঐ শারীরিক বন্ধন ঐ দালানে ঢালাইয়ের মতো কাজ করে। আমি অপেক্ষা করেছি আমাদের দুজনের ভিতটা তৈরি করার, মজবুত করে। তোমার প্রাপ্য অধিকার না দিয়ে তোমাকে আমি অসম্মান করতে চাইনি মৃদুলা উর্বী। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমি তোমাকে অসম্মান করেই ফেলেছি। আ’ম সরি!”
উর্বী উঠে দাঁড়ায়। জায়নামাজ গুছিয়ে রেখে রাওনাফের দিকে তাকিয়ে বলে,”ছিঃ ছিঃ। আমি কখনোই এমনটা ভাবি নি। কখনোই না।”
রাওনাফ তাকিয়ে আছে। উর্বী বলতে থাকে,”আমি আপনার মতামতকে সম্মান করি। আমিতো বরং সম্মানিত হয়েছি এটা ভেবে কেউ আমার মনটাকে সময় দিয়েছে, আমার শরীরটাকে প্রাধান্য দেয়নি। কেউ আমার মনটাকে আটকে ফেলেছে আমার শরীর না আটকানোর প্রয়াশ করেই।”
দু’জনেই চুপচাপ। রাওনাফ উর্বীর কিছুটা কাছে এগিয়ে আসে। উর্বী চোখ তুলে একবার রাওনাফের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। রাওনাফ বলে,”অনেকটাই সময় নিয়েছি আমি মন আটকাতে তাইনা?”
_হ্যা। ছয় মাস তিন দিন। আর আমি?
উর্বী জানতে চায়?
রাওনাফ ম্লান হাসে, হেসে বলে,”ছয় মাস তিন দিন।”
উর্বী চুপ। রাওনাফ ধীরে ধীরে বলে,”বলো। কি ভাবছো এখন!”
_নির্ভরশীল হয়ে পরেছি। ভিতটা খুব মজবুত ঠেকছে।
রাওনাফ হেসে উর্বীকে কাছে টানে। উর্বী চুপ। রাওনাফ বলতে থাকে,”আর?”
_জানতে পেরেছি আপনাকে।
_আমাকে?
_হু।
_কি? আমি কি?
উর্বী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে রাওনাফের চোখে চোখ রাখে। ঐ দু’টো চোখের সরল দৃষ্টি দেখে সে নির্দ্বিধায় বলতে থাকে,”আমার নষ্ট জীবনের ভজন শুনে কান না পচিয়ে ফেলা লোক, সবকিছু আমাদের ছিলো না,তবে আরেকটি বার সব আমাদের হোক।”
রাওনাফ হেসে বলে,”পোয়েট্রি?”
উর্বী মাথা নাড়ায়। অস্ফুট স্বরে বলে,”প্রেম বন্দনা। একটা আর্জি।”
রাওনাফ হেসে উর্বীকে কোলে তুলে নেয়। উর্বী আপ্লুত হয় আবেগে। তাকিয়ে থাকে সরল চিত্তের মানুষটার দিকে। মনের প্রজাপতি গুলো নির্বিঘ্নে উড়ে বেড়াচ্ছে। আজ কেউ তাদের আস্কারা দিচ্ছে। লাই দিচ্ছে তাদের। রঙ বেরঙের রঙিন স্বপ্ন চোখের সামনে ভাসছে। একটা সংসারের স্বপ্ন, ভালাবাসাময় সংসার। উর্বীর ভীষণ প্রত্যাশিত, ভীষণ কাঙ্খিত।
অতশত ভাবতে ভাবতেই মাথার নিচে বালিশ ঠেকে তার। বিছানার চাদর খামচে ধরে নিজের লজ্জামাখা মুখটা ঘুরিয়ে নেয়। এতক্ষণ যার চোখে সরাসরি চোখ রেখে কথা বলেছে, এখন পারছে না চোখ মেলাতে। আর এই অবাধ্য প্রজাপতি গুলো একটু বেশিই উড়ছে, বেসামাল। রাওনাফ উর্বীর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে উর্বীর ডান হাত টেনে চুমু খায় হাতের পিঠে।
উর্বী আষ্টেপৃষ্ঠে রাওনাফকে জরিয়ে ধরে। মুখ লুকায় রাওনাফের বুকে। তার এই আবেগী মুহুর্তে সে লুকাতে চায় ঐ মুখটা ঐ প্রশস্ত, বিশ্বস্ত বুকে।
রাওনাফ হাত বুলিয়ে দেয় উর্বীর মাথায়। দৃষ্টি দিয়ে দৃষ্টি থেকে অনুমতি নেওয়া হয়, মন দিয়ে মন থেকে অনুমতি নেওয়া হয়।
পবিত্র ভালোবাসা-বাসিতে আবেশিত হওয়ার আগে রাওনাফের চোখে ভেসে ওঠে তরুণী শিমালার হাস্যোজ্জ্বল ছবিটা। খিলখিলিয়ে হাসি শুনতে পায় সে। মুহুর্তেই অস্বস্তিতে, আত্মগ্লানিতে ছেয়ে যায় তার মুখ। থেমে যায় সে। উর্বী চোখ মেলে তার দিকে তাকায়। রাওনাফ উঠে বসে। অস্বস্তি পুরো শরীরে ছড়িয়ে পরেছে।
উর্বী উঠে বসে। রাওনাফের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বোকা উর্বী পড়ে ফেলে রাওনাফকে। পেছন থেকে আঁকড়ে ধরে নরম গলায় বলে,”ঠকাচ্ছেন না আপনি নাবিলের মাকে। ঠকাননি আপনি। প্লিজ নিজেকে ছোটো ভাববেন না। আমি ছোটো হবো তাতে।”
রাওনাফ ধীরে ধীরে ঘুরে উর্বীর দিকে তাকায়। উর্বী তার দিকে তাকিয়ে আছে। রাওনাফ বলতে থাকে,”যেটা শিমালার জন্য আছে সেটা শুধু শিমালার। আমি যেটা তোমায় দেবো সেটা শুধু তোমার থাকবে উর্বী। আমি শিমালা বা উর্বী কাউকেই অসম্মান করতে পারবো না।”
উর্বী হাসে। বলে,
“জানি তো। আপনি শিমালাকে অসম্মান করলে একজন নারী হিসেবে আমিও অসম্মানিত হতাম। ঠুনকো লাগতো এই সম্পর্ক। ”
কথাটা বলে উর্বী রাওনাফের হাত টেনে নেয়। হাতটা নিজের মাথায় রেখে নরম গলায় বলে,”আমি চাই আপনি নাবিলের মাকেও সম্মান করবেন। আর আমাকেও। আপনি আরো সময় নিন। আপাতত আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিন। এটুকুই যে অনেক সম্মানের।”
রাওনাফ তাকিয়ে আছে উর্বীর মুখের দিকে। বলে ওঠে,”তুমি আমায় জাজ করবে?”
_কখনোই না। সময় নিতে চান আরো?
রাওনাফ মাথা নাড়ায়, অস্ফুট স্বরে বলে,”আজ যদি আমি তোমাকে ফিরিয়ে দিই সেটা হবে তোমার প্রতি আমার চরম অসম্মান। আমি তো বললাম, আমি শিমালা বা তুমি কাউকেই অসম্মান করতে পারবো না।
উর্বী তাকিয়ে আছে। রাওনাফ উর্বীর মাথাটা নিজের বুকে ঠেকিয়ে বলে,
_দুজনেই আমার কাছে খুব সম্মানের।
উর্বী চুপ করে আছে। রাওনাফ ধীরে ধীরে উর্বীর কপালে চুমু খায়। উর্বীর গাল আগলে ধরতেই সে টের পায় তার হাত ভিজে গিয়েছে। উর্বীর চোখে পানি। রাওনাফ চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলে,”চলো বারান্দায় বসি।”
দু’জনে পাশাপাশি একটা বেঞ্চিতে ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে আছে। আকাশে ঝলমলে এক চাঁদ, দু’জনেই তাকিয়ে আছে সেদিকে। রাওনাফ এক হাত দিয়ে আগলে ধরে রেখেছে উর্বীকে। উর্বী ধীরে ধীরে এলিয়ে দেয় তার মাথাটা রাওনাফের কাঁধে। রাওনাফ মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,”মন খারাপ করে দিয়েছি তোমার?”
_মন ভালো করে দিন তবে।
_কিভাবে?
_একটা গান গেয়ে।
_গান? আর আমি? এটা একটু বেশি আশা করে ফেললে না উর্বী।
_হ্যা করেছি। জানেন আমি দীর্ঘ ছয় বছর কোনো গান শুনিনি। ভালোবাসার গান।
রাওনাফ চুপ করে থাকে। উর্বী বলে,”প্লিজ গান। সত্যি বলছি, আমার মন ভালো হয়ে যাবে।”
_আমি বড্ড বেসুরো।
_দরকার নেই সুরের।
রাওনাফ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সংকোচ কাটিয়ে গাইতে শুরু করে,”এখন অনেক রাত। আমার কাঁধে তোমার নিঃশ্বাস,আমি বেঁচে আছি তোমার ভালো বাসায়।”
উর্বী রাওনাফের কাঁধ থেকে মাথা উঠিয়ে রাওনাফের দিকে তাকায়। রাওনাফ লজ্জিত ভঙ্গিতে বলে,”বলেছিলাম না আমি বেসুরো। বাদ দাও।”
উর্বী রাওনাফের হাত টেনে ধরে। ধ’ম’কের সুরে বলে,”গান বলছি।”
রাওনাফ হাতের দিকে তাকিয়ে উর্বীকে আগলে নেয়, তারপর গাইতে শুরু করে, “ছুঁয়ে দিলে হাত। আমার বৃদ্ধ বুকে তোমার মাথা চেপে ধরে টলছি কেমন নেশায়।”
উর্বী আকরে ধরে থাকে রাওনাফকে। রাওনাফ গাইতে থাকে,”কেন যে অসংকোচে অন্ধ গানের কলি,
পাখার ব্লেডের তালে সোজাসুজি কথা বলি।
আমি ভাবতে পারি নি,
তুমি বুকের ভেতর ফাটছো আমার
শরীর জুড়ে তোমার প্রেমের বীজ।”
বোকা উর্বীর চোখ বেয়ে পানি পরতে থাকে। প্রাপ্তির আনন্দে। রাওনাফ হাত বাড়িয়ে পরম যত্নে সেই পানি মুছিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে কবিতার মতো করে বলে ওঠে,
“আমি থামতে পারি নি,
তোমার গালে নরম দুঃখ
আমায় দুহাত দিয়ে মুছতে দিও প্লিজ।”
উর্বী আর অপেক্ষা করে না। রাওনাফকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁ’দে ওঠে। রাওনাফ একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে। উর্বীর কান্না থামার অপেক্ষা না করেই উঠে তাকে কোলে তুলে নেয়। সমস্ত পিছুটান,গ্লানি কাটিয়ে শুরু করতে যাচ্ছে নতুন এক অধ্যায়। কপালে চুমু এঁকে উর্বীর ভেজা চোখের পাতায় চুমু খায়। উর্বীর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,”কাঁদবে না। আমি আছি। আমি থাকবো।”
চলমান…..
কমেন্ট, কমেন্ট, কমেন্ট।