আমার হৃদয়ে সে,০২,০৩

আমার হৃদয়ে সে,০২,০৩
#রোকসানা আক্তার
পর্ব-০২

৩.
দুপুর নাগাদ রিমি আপু এবং টিপি বাসায় এসে পৌঁছায়।তাদের সাথে কিছুক্ষণ সাক্ষাৎ করে আবার রান্না ঘরের দিকে ছুটে যাই।রান্নাটা সেই এগোরটার দিকেই চড়াই।অনেক রকমের রান্না ত তাই এখনো শেষ হয়নি। আর মা অভি যাওয়ার পরপরই দারোয়ানকে দিয়ে তখনই বাজারটা করিয়ে আনেন।আমি মাংসটা চুলা থেকে নামিয়ে রাখতেই আমার শাশুড়ী মা কিচেনে আসেন।এসেই বলেন,

“বউমা, আর কি কি রান্না করা বাকি আছে?”
“এইতো সব শেষ মা।আর মাত্র সবজিটা বাকি।”
“আচ্ছা,তাহলে তুমি গোসল করে নামাজটা আগে সেরে নাও।নামাজের দেরী হয়ে যাচ্ছে।আমি নিজেই সবজিটা চড়াচ্ছি।”

তারমানে মা এখন চুলোর আগুনের কাছে যেতে চাচ্ছে।আর তিনি আগুনের কাছে গিয়েছে শুনলে অভি আজ আবার গতকাল রাতের মতন ওরকম অশোচণীয় আচরণ করে বসবে।জানোয়ারদের মতন গালে চড় দিবে।ভেবেই মাকে আমি বাঁধা দেওয়া গলায় বলে উঠি,

“নাহ মা।সবজিটা আমি নিজেই করতে পারবো। নামাজের এখনো আরো পঞ্চাশ মিনিটস সময় আছে।আর সবজিটা করতে ত বিশ মিনিটও লাগবে না।”

মা তারপরও মানতে চাইলেন না।আমিও সে বারণ শুনতে চাইলাম না।ঝটপট ফ্রিজ থেকে সবজি নামালাম।সবজিটা শেষ করতে করতে বলা বিশ মিনিটের জায়গায় ত্রিশ মিনিট লেগে গেল।তারপর আর কি করা! তরহর করে গোসলের দিকে ছুটলাম।গোসল শেষ করে নামাজটা পড়লাম।তারপর নিচে গেলাম।নেমে দেখি আমার শাশুড়ী মা নিজেই রিমা আপু এবং টিপিকে খাবার সার্ভ করছেন।আমিও আর দেরী না করে মাকে হেল্প করতে গেলাম।রিমি আপু বললেন,

“ভাবী?তুমিও আমাদের সাথে তাড়াতাড়ি খেতে বসো।খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। ”

রিমি আপুর কথায় সায় দিয়ে আমি পাশের চেয়ারটায় বসলাম।মার সার্ভ করা শেষ হলে মাও বসেন।সবার খাওয়াদাওয়া শেষ হলে যে যার রুমে আসি।ভীষণ ক্লান্ত শরীর!একটু রেস্ট না হলে পরে হাঁটারও একটু বল পাবো না।সন্ধের দিকে আবার জল খাবার বানাতে হবে।বালিশটা টান দিয়ে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিলাম।চোখদুটো বুঁজার চেষ্টা করলাম।এমন সময় খুট করে দরজা খোলার শব্দ হয়।তাকিয়ে অভি এসেছে।ঘামময় তার সারা শরীরে ক্লান্তির ছাপ লেপ্টে আছে।দেখেই বুঝা যাচ্ছে ভীষণ ব্যস্ততা সামাল দিয়ে ছুটে এসেছে বাসায়।
তবে আজ তাড়াতাড়ি ই ফিরেছে।নাহলে অন্য সময় অফিস থেকে রাত ন’টার দিকে ফিরে।অবশ্যি রিমি আপু এবং টিপি যে আসলো হয়তো তাড়াতাড়ি ফেরার একমাত্র কারণ সেটাই।তাকে আমি হালকা উঠে বসার চেষ্টা করলাম।তৎক্ষণাৎ অভি বলে উঠলো,

“উঠতে হবে না!”

অভি কথা বললো!?তাও আমাকে উদ্দেশ্য করে?কিন্তু অভি ত অফিস থেকে ফিরে কখনো আমার সাথে এভাবে কথা বলে না!উন্মাদ মুখ নিয়ে সোঁজা বাথরুমের দিকে ঢুকে যায়।গত আঁটমাস ধরেই ত এরকম করে আসছে!কিন্তু আজ?আজ কেন বললো?কোনো কারণ নয়তো?আচ্ছা কাল যে আমাকে চড় মারলো সেটার জন্যে নিজে নিজে অনুতপ্ত বোধ করে নয়তো!মুহূ্র্তে সারা শরীর আমার অস্বস্তিতে ভরে যায়। ভাবনার মাঝে “ঠাস” করার শব্দ শুনতে পাই।পাশ ফিরে তাঁকিয়ে দরজা বন্ধ করার শব্দ।অভি বাথরুমে ঢুকেছে।আমি অভির আর বারণ শুনলাম না।শোয়া থেকে উঠে বসলাম।এভাবেই অনেকক্ষণ থাকলাম।এরমাঝে অভি বাথরুম থেকে গোসল শেষ করে ফিরেছে।আমি তার দিকে একফোঁড় তাকালাম।সকালের থেকে তাকে এখন আরো বেশি সুন্দর লাগছে।একদম নেশা ধরানোর মতন।একবার তাঁকালে চোখ ফেরানো ভার!কিন্তু তার উপর আমার কোনো অধিকার নাই ভেবে সাথে সাথে নিষিদ্ধ চোখজোড়া আবার সরিয়ে নিলাম।এমন সময় সেখান থেকেই শব্দ আসে,

” আসলে গত কালরাতের জন্যে আমি সরি।”

আমি আবার মাথা তুলে তাকাই।তাকিয়ে কথাটা অভিই আমাকে বলছে।কিন্তু প্রথমবারের মতন এবার আর অভি কথা বলাতে আমার তীব্র অবাক আর অপ্রস্তুতের ছাপ মুখে ভাঁসে নি।কেনজানি স্থির চোখে অভির দিকে তাঁকিয়ে থাকি!অভিও আমার জবাব পেতে আর দাঁড়ায় নি।সে পেছনে ঘুরতে উদগ্রীব হয়।চলেও যায় কিছুটা।তাও দরজা বরাবর।তবে দরজার বাহিরে তার যেতে পারেনি।তার আগেই কেনজানি আমার স্তব্ধ মুখের বাঁধ ভেঙ্গে শব্দের তরঙ্গ বেরিয়ে আসে।বলে উঠি,

“শুনুন?”

আমার কন্ঠধ্বনি তার কান বরাবর যেতেই তার পায়ের গতি শ্লথ হয়ে যায়।সে সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে যায়।পেছন ফিরে নি।আমি বলে উঠি,

“আপনাকে আমার অনেকগুলো প্রশ্ন করার আছে। আশা করি শুনবেন!শুধু শুনবেন না জবাবও দিবেন!
কী জবাব দিবেন?”

অভি আমার কথায় এবার পেছন ফিরলো।চোখজোড়া তীব্র সংকুচিত করে আনলো।কপাল পুরু করলো আর
ঠোঁটজোড়ায় চাঞ্চল্যকর ফুঁটিয়ে তুললো।এসব ভঙ্গিমায় সে বুঝালো আমি কী জানতে চাই।বললাম,

“আপনি বিয়ের পর থেকে আমার সাথে কেন এরকম করেন?কেন মিসবিহেভ করেব?কেন স্বাভাবিক থাকেন না?আমার কি কোনো দোষ ছিল?নাকি আমাকে আপনার কি স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারেন নি?নাকি আবার আছে কোনো অন্য কারণ!এসবের জবাব চাই আমার!”

অভি এবার কপাল,চোখ,ঠোঁটের ভঙ্গিমা স্বাভাবিকে এনে সোঁজা হয়ে দাঁড়ালো।তারপর দুইহাত পকেটে গুঁজে সুদৃঢ় গলায় বললো,

“জবাব দিতে আমি বাধ্য নই!”
“তাহলে বিয়ে কেন করলেন!বিয়ে করার আগে এসব বলতে পারলেন না আমার বাবাকে?!”

আমার কথা শুনার অভির আর প্রয়োজন বোধ হলো না।চলে গেল সামনে থেকে।আমার দুই চোখ বেয়ে আবারো নোনা জল গড়িয়ে গেল!আমি হালকা অস্ফুট স্বরে ফুঁপিয়ে উঠলাম।এতটা মাস পর সাহস করে এতদিনের মনে চেপে রাখা প্রশ্নগুলো তাকে আজ জিজ্ঞেস করলাম আর এই হলো তার জবাব?এভাবেই কি চলবে সব?এভাবে কী হাঁটবে সামনের পথ ?আমি কী এভাবেই বারংবার লাঞ্চিত,বঞ্চিত,কষ্ট পেয়ে যাবো?খুব জোরে “হা” করে জোরে বড় একটা শ্বাস টেনে নিলাম।বামহাতে দুই চোখের পানি মুছে নিলাম!নাহ এইভাবে আর হবে না!!বহুৎ সহ্য করেছি!

৪.
সকাল ন’টা এখন!কিছুক্ষণ আগে নাস্তা শেষ করলাম।
অভি আঁটটার দিকেই নাস্তা করে অফিসে চলে গেছে।আমি রুমে এসে চেয়ার টেনে টেবিলের সামনে বসলাম।অনেকগুলো তাক তাক করে সাজানো প্যাডের গোছা থেকে একটা প্যাড টানলাম।প্যাডটি অভির পার্সোনাল প্যাড।সে এটাতে মাঝেমধ্যে হালকা পাতলা কিছু লেখালিখি করে।অবশ্যি তার লেখালিখির অভ্যেস আছে তাই।আর সাথে একটা পেন নিলাম।মনোযোগ সহকারে লিখতে বসলাম,

প্রিয় অভি,
আমি আপনাকে কিছু কথা বলতে চাই।আশা করি আমার কথাগুলো মনোযোগ সহকারে পড়বেন।অভি আমি আমাদের বাসায় চলে যাচ্ছি।জানি না আর ফিরবো কিনা।হয়তো কখনো নাও ফিরতে পারি।আপনি এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছেন আমি কেন বাসায় চলে যাওয়ার কথা বলেছি। আর যদি না বুঝে থাকেন তাহলে শুনুন লিখে দিচ্ছি-প্রথমত, আমি আপনার স্ত্রীর অধিকার থেকে বঞ্চিত। আপনার সাথে আমার বিয়ে
হয়েছে আঁট আঁটটি মাস,এই আঁটটি মাসে আপনি কখনো আমার সাথে একটু সময় নিয়ে কথা বলেন নি।আমাকে সবসময় এভয়েড করে চলেছেন।আমি যে আপনার স্ত্রী, স্ত্রী হিসেবে আমারও যে আপনার উপর কিছু অধিকার বা কর্তব্য আছে বা সেইম আপনারও তা আপনার একবারও ভাবার প্রয়োজনই বোধ হয়নি!মনে হয় আমি আপনার স্ত্রী না।আমি অন্যকেউ এরকম ব্যবহার আমার সাথে!

দ্বিতীয়ত,
এসব করার কি এমন কারণ,অভি?আমাকে কি আপনার পছন্দ না?আমি কি আপনার অযোগ্য?নাকি অন্য কোনো কারণ!থেকে গুলো প্রশ্নগুলো!

তৃতীয়ত,

কোনো মেয়ে এভাবে তার স্বামীর বাড়ি চলতে পারে না!কতদিন চলবে,বলুন?একদিন,দুইদিন,তিনদিন….?কিন্তু আমিতো আঁট আঁটটি মাস সব মেনে চলেছি।কাউকে কিছু বুঝতে দিই নি। না আমার ফ্যামিলিকে,আর না আপনার ফ্যামিলিকে।কেন দিই নি জানেন? এই আশায় যে আপনি একদিন আমাকে ঠিকই বুঝবেন!কারণ ধৈর্যের ফল আল্লাহ একদিন ঠিকই দেন!তবে না আজ দেখলাম আমার ধৈর্যটা একটু বেশিই লিমিট ক্রস করে ফেলেছে!

চতুর্থত,

সবকিছুর শেষে আমার কথাগুলো যদি আপনার না ভালো লাগে তাহলে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিতে পারেন।আমি কোনো আপত্তি করবো না।

ভালো থাকবেন!

চিঠিটা লিখা শেষ করা মাত্রই দুই ফোঁটা নোনাজল কাগজের উপর উপচে পড়লো!

চলবে…

(এবার কিছু কথা..!”ফনক” নামটি চেইঞ্জ করে অভি দিলাম।আপনাদের অনেকেরই “ফনক” নামে বিপত্তি ঘটলো।অনেকে এটাও বললেন “ফনক” তো কখনো নাম হয় না।জ্বী “ফনক” নাম হয়।ফরাসি একজন বিমান চালকের নাম ছিল”কর্ণেল রেনা পল ফনক”।আপনি এই নামে গুগলে সার্চ করলে উনার বিস্তারিত সব পেয়ে যাবেন।আর বিস্তারিত বলছি না।)

#আমার_হৃদয়ে_সে
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-০৩

দলা পাঁকিয়ে কান্নাগুলো বেরিয়ে আসতে চায়। মুখ চেপে কান্না থামাই।তারপর প্যাড বন্ধ করে প্যাডটা আগের জায়গায় রেখে দিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াই। ওয়াড্রব থেকে প্রয়োজনীয় জামাকাপড়গুলো বের করে তা ট্রলিতে ঢুকাই। ট্রলি হাতে নিয়ে নিচে নামি। নিচে আমার শাশুড়ি এবং রিমি আপু বসে সোফায় কথা বলতেছেন। আর টিপি পাশে বসে একা একা নিজ মনে খেলা করতেছে।কথার মাঝে শাশুড়ী মা আমার দিকে তাকান।আমার হাতে ট্রলি দেখে বলেন,

“বউমা,কোথাও যাচ্ছ?”

আমি সদৃঢ় কন্ঠে জবাব দিই,
“মা,আপনাকে কালরাত বললাম না আমি আজ একটু আমাদের বাড়িতে যাবো ওই যে ভার্সিটি থেকে আমার সার্টিফিকেটটা তুলতে…?”
“ওহ হ্যাঁ,হ্যাঁ এবার মনে পড়েছে তুমিতো কালরাতই আমাকে বললে।আহারে বয়স!বয়স বেড়ে গিয়েছে তাই কিছুই মনে রাখতে পারছি না দেখছো?”

পাশ থেকে রিমি আপু বলে উঠেন,
“তোমাদের মতন বয়স্কদের এই একটা জাতীয় সমস্যা।একশোবার কোনোকিছু বললে তার খানিক পরই সব ভুলে যাও।এমনভাবে ভুলে যাও যেন ওই বিষয় নিয়ে কোনো একটা শব্দ কেন অক্ষর পর্যন্ত তুলি নি।আমার শাশুড়ি মাও তাই।রাগ লাগে।প্রচন্ড রাগ লাগে।”

“রাগ লাগার কি আছে রিমি?এটা সব বয়স্ক মানুষেরই হয়।তোরা যখন বৃদ্ধ হবি তোদেরও হবে।”
“হ্যাঁ,হবে তো জানি।তখন আবার আমরাও আমাদের ছেলেপুলেদের রাগী রাগী কথা শুনবো।তাদের রাগী লুক দেখবো।তাদের বিরক্তিতে মুখটা তেঁতো হওয়া দেখবো।ওসব ভেবে এখন ত আমার নিজের নিজেরই উপর রাগ লাগতেছে!বৃদ্ধ না হওয়ার যদি একটা পদ থাকতো ইস!”

রিমি আপুর কথায় মনের অজান্তে একটা ফিকে হাসি চলে আসে।তা দেখে,

“ভাবী হেসে না।হেসো না।দুঃখ হয় খুব!”
“দুঃখ করে লাভ নেই, আপু।জীবন এরকমই।পৃথিবীর সব জীবনই একটা নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে চলে।”
“রাইট স্যা।যাইহোক, তোমার লেইট হয়ে যাচ্ছে।সাবধানে যেও ভাবী।”
“আচ্ছা।”
“বউমা?”
“জ্বী,মা?”
“তোমাকে বললাম না অভিকে বলতে সে তোমাকে ড্রপ করে দিয়ে আসতো।এখন একা এক যাবে।একা একা কীভাবে যাবে!আল্লাহর না করুক বিপদেরও ত আবার হাতপা নেই।”
“মা টেনশন করবেন না।ইনসাল্লাহ আমি ঠিকমতো যেতে পারবো।”
“আচ্ছা তাহলে যাও।রাস্তা থেকে বেরুলেই রিক্সা নিয়ে নিবে।”
“জ্বী,আচ্ছা।”

তারপর শাশুড়ী মা এবং রিমি আপুকে সালাম করে বাসার সদর পার হয়ে বাইরে এলেই আবারো আমার অক্ষিযুগল জলেতো ভিঁজে যায়।পেছনে ফিরে তাকাবার একটা টান অনুভব হয়। পেছন ফিরে তাকাই।তাকিয়ে দীর্ঘকায় বাড়িটার দিকে তাঁকিয়ে থাকি। মনের যেই আশা,স্বপ্ন,ভরসা নিয়ে এই বাড়িতে পদার্পণ করেছিলাম আজ সেসব কিছুকে মিইয়ে ফেরত আবার বাপের বাড়ি।আসলে মেয়েদের কোনো স্থায়ী বাড়ি নেই।তারা বাউন্ডুলে। বড়ই অদ্ভুত তাদের জীবন।বড়ই অদ্ভুত তাদের নিয়তি!বুকটা প্রশস্ত ভার হয়ে গেল।আর পারলাম না দাঁড়িয়ে থাকতে।তরহর আবার ঘুরে রিক্সার খোঁজে সামনে কিছুটা হেঁটে গেলাম।কয়েক কদম যেতে একটা রিক্সা পেলাম।উঠে গেলাম রিক্সাতে।

৫.
কলিংবেল চাপতে ভেতর থেকে মা এসে দরজা খুলে দেন।
ট্রলি হাতে আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মার চোখমুখে একরাশ আনন্দ চিকচিক করে উঠে।আহ্লাদিত গলায় বলে উঠেন,
“আরে পারিসা?”

আমি মার এ’কথার কোনো জবাব দিলাম না।মাকে সোঁজা পাশ কেঁটে ট্রলি নিয়ে ভেতরে চলে এলাম।মা আমার পেছন পেছন আসতে আসতে বলেন,
“এসেছিস অভিকে নিয়ে আসিস নি কেন সাথে?অভিকেও নিয়ে আসতিস।”

আমি এবার মার দিকে ঘুরে দাঁড়াই।চোখমুখ শক্ত করে বলি,

“মা আমি আর ওই বাড়িতে যাবো না।”
“ওই বাড়িতে যাবি না মানে?কি বলতেছিস এসব তুই?”
“হ্যাঁ,আমি যাবো না!বাবা অফিস থেকে ফিরলে বাবাকেও তাই বলে দিও ”
“কিন্তু কেন?কেন যাবি না?কি হয়েছে সেটা ত বলবি!”
“কিছু না।তবে এটুকু শুনে রাখো ওই অভির সাথে সংসার করাটা আমার আর হবে না।কিছুতেই হবে না।বহুৎ সহ্য করেছি আমি।সহ্য করতে করতে আমি শেষ হয়ে গেছি।আর পারবো না।”
“কি শেষ হয়ে গেছিস?কি সহ্য করতে পারছিস না?কি বলতেছিস এসব তুই?আসলে হলোটা টা কী বলতো আমাকে?”

বললাম না।জানি মাকে বললে লাভ হবে না।এখন হয়তো আমার কথায় একটু কষ্ট পাবেনও পরে বাবা অফিস থেকে ফিরে যা বলনবেন মাও তখন বাবার তালে তালে তাই বলবেন।রুমে এলাম আমার।দরজা বন্ধ করলাম।মা দরজার ওপাশ থেকে বারকয়েক খটখট করে পরে আর লাভ না হয়ে আশা ছেড়ে দেন।আমি ট্রলি ব্যাগটা টেবিলের পাশে রেখে বিছানার উপর যেয়ে হাঁটু ভাঁজ করে বসি।খুব অস্বস্তি হচ্ছে জানি না বাবা অফিস থেকে ফিরে কেমন রিয়েক্ট করেন।আমার কথা বিশ্বাস করবেন কিনা।
৬.
রাত আঁটটার দিকে বাবা বাসায় ফিরেন।মা যেয়ে দরজা খুলে দেন।আমি জানি এখন বাবা আমার রুমে আসবেন।বাবা বাসায় ফেরা মাত্রই মা যে আমার কথাটা না তুলে থাকবেন না তা আমি নিঃসন্দিহান।হলোও তাই।কিছুক্ষণ পরই বাবা দরজায় করাঘাত করে।আমি নেমে দরজা খুলে দিই।দরজা খোলামাত্রই বাবা ঘর্মাক্ত মুখে বলে উঠেন,

“তোমার মা বললেন তুমি নাকি অভির ঘরে আর যাবে না।তোমার মা কি ঠিক বললেন তা?”

আমি একফোঁড় মার দিকে তাঁকিয়ে নিয়ে মাথা নুইয়ে এবার বাবাকে জবাব দিই,
“হ্যাঁ।”
“কেন?”

চাইলাম বাবার সামনে নিজেকে খুব শক্ত রাখতে চোখের পানি তা আর দিলো না।পানিতে ভরে উঠলো চোখজোড়া।তা দেখে বাবা বলেন,
“তোমাকে কাঁদতে বলিনি।তোমাকে আমার কথার জবাব দিতে বলেছি!”

শাড়ির আঁচল খাঁমচে শক্ত করে ধরে বার কয়েক জোরে শ্বাস নিই।তারপর নিজেকে যথেষ্ট সামলে নিয়ে বলি,

“বাবা,অভিকে তোমরা যেরকমটা ভেবেছো অভি সেরকম নয়।অভির সাথে আজ আমার সাংসারিক জীবনের আঁটমাস শেষ হলো এই আঁটমাসের মধ্যে সে আমার সাথে কখনো ভালোমতো কথা বলেনি।আমাকে ইগনোর করে চলেছে।যদি প্রয়োজন হয় নিজের প্রয়োজনে আমার সাথে কথা বলে।আর না হলে বলে না।বলতে গেলে সে আমার সাথে কোনো কথা বলতেই চায়না।আবার যদি কোনো ভুল করি ওমনি আঙ্গুল তুলে কটু কথা বলে।চিল্লাপাল্লা করে।এমনকি পরসু রাতে আমার গাঁয়ে সে হাত পর্যন্ত তুলেছে।আমি তার সাথে কখনো ই মিসবিহভ করিনি।সবসময় তার কথা মতনই চলেছি।এতকিছুর পরও সে আমার সাথে এরকম করে আসতেছে।সে আমাকে কখনো তার স্ত্রীর অধিকার দেয়নি ।আমি যে তার স্ত্রী।তার উপর যে আমার অধিকার আছে তা সে ভুলেই গেছে।বলতে পারো তার যে স্ত্রী আছে সে তা মনে করতেই চায়না।”

আমার কথাগুলো শুনার পর চোখমুুখ শক্ত করে ফেলেন।ঢগায় এসে পড়া চশমা টা চোখ থেকে খুলে হাতে নেন।চোখের কিণার কাণার তীব্র কুঁচকে এনে বলেন,

“বিয়ের আজ আঁটমাস শেষ হলো।এতটা মাস পর তুমি আজ আমাকে বলতে এসেছো অভি তোমার সাথে মিসবিহেভ করেছে?সে কখনো তোমাকে স্ত্রীর অধিকার দেয় নি?তুমি এখন তার বাসায় আর ফেরত যাবে না!তুমি কি ভেবেছো?তোমার এসব কথা আমরা বিশ্বাস করবো, পারিসা?অভিকে আমি হান্ড্রেডে হান্ড্রেডে চিনি।অভি ওরকম ছেলের মধ্যেই পড়ে না।তুমি নাটক সাঁজাচ্ছো সব!কারণ তুমি বিয়ের সময় আমাকে দমাতে পারো নি।তাই এখন বিয়ের পর চেয়েছো কীভাবে অভির দোষগুলো ধরে অভিকে দমিয়ে তার ঘর থেকে ভার্সিটির ওই হ্যাং ছেলেটার হাত ধরে তারসাথে আবার ফষ্টিনষ্টি করতে পারো।তাই না?”
“বাবা বিশ্বাস করো সেরকন কিছু না।আমি সত্যি বলছি।বিশ্বাস করো বাবা।”
“বিশ্বাস করতাম।কিন্তু তুমি আঁটমাস পরে এসে আমাকে অভির দোষ দেখাচ্ছ তা শুধু অবিশ্বাস নয় তোমার কথাশুনে ত হাসি আসতেছে।আমি আর কোনো কথা শুনতে চাচ্ছি না।যেভাবে এসেছো সেভাবে ভদ্র মেয়ের মতন ফিরে যাও।অভির যাতে আমাকে কল না দিতে হয়।অভি যদি তোমার ব্যাপারে আমাকে কল দেয় তাহলে আমার রাগ সম্পর্কে ত তোমার ধারণা আছে তাই না?”
“আমাকে বিশ্বাস করলে না,না?এই জন্যেই ত তোমাদের আঁটমাস ধরে অভির ওইরকম ব্যবহারের কথা তোমাদের বলিনি।কারণ আমি জানি তোমরা কখনো আমার কথা বিশ্বাস করতে না!”
“শেষ হয়েছে তোমার কথা?শেষ হলে তাড়াতাড়ি ফিরে যাও।”

মা পাশ থেকে বলেন,
“যাবে ঠিক আছে এখন ত রাত।মেয়ে এতরাতে একা একা কীভাবে যাবে।আজ থাকুক।কাল যাক।”

বাবা মার কথার পিঠে আর কিছু বললেন না।অগ্নিশর্মা চোখ মার দিকে তিন সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে নিজের রুমের দিকে চলে যান।বাবা চলে যাওয়ার পর মা বলেন,
“তোর বাবা রাগ করলে করুক,পারিসা।তুই কাল যাস।”
“আমি আর কখনোই যাবো না।ওই আশা ছেড়ে দাও।”

বলে আমার রুমে চলে এলাম।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here