অরুর সংসার,পর্ব_২
লেখিকাঃনিশি কথা
ভোরের আলো চোখে পরায় ভাবনাত জগৎ এ ছেদ পরলো অরুর। নির্ঘুম সারা রাত কাটিয়েছে অরু কিন্তু
তার বুকের উপর অয়ন এখনো অঘোরে ঘুম।……….
|
||
|||
অরুর শরীর খুব ব্যাথা হচ্ছে,সরাতে চাচ্ছে সে অয়নকে তার বুক থেকে কিন্তু পারছে না।।।।
খানিকক্ষণ চেস্টার পর সে সক্ষম হল।অয়ন পাশ ফিরে ঘুমালো।অরু ওঠার চেস্টা করছে কিন্তু শরীরে মিনিমাম শক্তি তার নেই। থাকবেই বা কি করে বিয়ের অনুষ্ঠানের সম্পন্ন করে রাত ১১ টায় বাড়ী ফিরেছিল তারা, বিয়ের টেনশনে আর লজ্জার খাতিরে তেমন কিছু খায় ও নি।এর উপরে খালি পেটে তার বরের শারীরিক অত্যাচার!!!…
অরু আর কান্না করলো না।কান্না করার শক্তিও নাই এখন তার। বিছানা থেকে উঠে নিচে পরে থাকা শাড়ী টা কোনমতে গায়ে জরিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল সে।….
তখন বাজে সকাল ৬ টা। ওয়াশরুমে ঢুকে আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করলো অরু।………….. না শরীরের খুব কম সংখ্যক জায়গা আগের মত ক্লিন আছে আর বাকি সব জায়গায় দাগ, রক্ত জমাট বাধা। না দাগ বললে ভুল হবে এগুলা তার স্বামির ভালবাসার চিহ্ন…..কামড়,খামচির দাগ না এগুলো আদর অয়নের…..
১ঘন্টার ধরে শাওয়ার নিল অরু। তারপর নিজেকে হালকা গোলাপি আর সাদা পাড়ের মনিপুরি তঁাত শাড়ি তে জরিয়ে নিল।রাতের গয়না গুলা আবার পোরে নি। হাতে গোলাপি, সাদা রেশমী চুরি পরে নিল।…… ট্রি কোয়ার্টার ব্লাউজ আর চুরি তে হাতের দাগ গুলা ঢেকে গেল আর শাড়ি তে বুকের সহ সারা শরীরে দাগ ঢেকে গেল। ভেজা চুলগুলা দিয়ে পিঠের দাগগুলা ঢেকে গেলেও বাধ সাধলো ঠোটে সেই দাগ। লোয়ার লিপ্সে রক্ত জমাটা বেধে লাল টুকটুকে হয়ে ছিল ফুলে….. হা এখানেই তো গতকাল তার বর কামড় বসিয়ে দিয়েছিল………. কোন উপায় নেই অরুর স্বামির দেওয়া এই দাগ ঢাকার……….
তার উপর অনেক বেশি ক্ষুধা পেয়েছে অরুর। বমি এসে যাচ্ছে ক্ষুধার ঠেলায়। কেবল ঘড়ী তে বাজে ৭:১৫… কেউ কি উঠেছে বাড়ীর? কোন সাড়া শব্দ পাচ্ছে না অরু।….. দরজার কাছে দাড়িয়ে ভাবছে সে যে ঘর থেকে বের হবে কি হবে না….বের হয়ে কি ই বা বলবে যে তার ক্ষুধা পেয়েছে???? কি ভাববে সবাই যে নতুন বউ বাড়ী আসছে একদিন ও হয় নি এখনই খাই খাই করছে!।:|
এমন নানান কথা ভাবতে থাকলো অরু! কোন উপায় ই না পেয়ে সাহস করে রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলো………………. নেমে যা ভেবেছিল তাই….! কেউ ই ওঠে নি শুধু বাড়ীর কাজের বুয়ারা ছাড়া!!! যে যার মত ঘরের কাজ করছে… অরুর দিকে তাকানোর সময় ই নেই কারো…….. আজ অরুর শাশুড়ি যদি থাকতেন তাহলে তার নজরে ঠিক ই হয়তো অরু পরতো…. কিন্তু তার শাশুড়ি নেই কে??? শুনেছিল মারা গেছে কিন্তু মারা গেলেও তো তার প্রসংগ একবার না একবার উঠার কিথা? কই?? কেউ ই বলে না তাকে নিয়ে কিছু….. তার উপর বাড়ীতে এক ছবি টাঙানো কিন্তু অরুর শাশুড়ির কোন ছবি নাই! নাকি হয়তো আছে!!! অরুর চোখে পড়ে নি!!!! পরবেই বা কিভাবে অরুর তো ভালকরে বাড়ী টা দেখাই হয় নি এখনো। আসা থেকেই তো নিজের ঘরে…….
……………
সেলিনা : আরে নতুন বউ? এত সক্কালে এইখানে কি????????? কিছু কইবা??????
অরু: জি মানে…. (অরু মাথা নিচে করে ফেলল)
সেলিনা : কও কও কিছু লাগবো নি? শরম কইরো না…..
অরু: অরু মাথা নিচু করেই বলল খালা আমার না খুব ক্ষুধা লেগেছে………
|`
||“`
|||““
||“`
|`
♣♠♣♠♣♠♣♠♣♠
হাসপাতালে মনমরা হয়ে বসে আছে জয়া। আজ বাকি দিনের তুলনায় আগেই এসেছে হাসপাতালে। সিজার ছিল একটা! কাজ সেরে কেবল এসে বসল নিজের কেবিনে! কিছুতেই তার মন বসছে না।ঘড়িবসবেই বা কি করে। গতকাল সারা দিন অয়মকে দেখে নি সে।লোক টা কেন গতকাল আসল না!! সে কি বোঝে না যে রোজ তাকে না দেখলে জয়ার চলেই বা।বড্ড বেশি ভালবাসে যে সে অয়ন কে।ঘড়ির দিক নজর গেল কেবল বাজে সকাল ৭:৪০.! অয়ন তো ৯:৩০ এ আসে রোজ। ঠিক ৯:৩০.!!!১মিনিট ও লেট হয় না তার!! সময়ের বিষয়ে সে অনেক সচেতন…! তাই তো চিন্তা করতে হয় না জয়ার। কিন্তু গতকাল যখন ৯:৩০ বেজে আরো ৩০ মিনিট পার হয়ে গেল জয়ার অস্থিরতা যেন বেড়েই যাচ্ছিল…… যখন সারাদিন পার হয় রাত ৯:৩০!”! জয়া তো পাগলপ্রায়……. ফোন যে করবে তার ও তো অধিকার নেই জয়ার। অয়ন যদি কিছু মনে করে…… ভাবতেই মন খারাপ হয়ে গেল জয়ার
..
Π জয়া বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে। এই তো গত বছর আপোলো হাসপাতাল এ জইন্ট করেছিল গাইনোক্লোজিস্ট হেসেবে। হাসপাতালে তার অনেক নাম ডাক ১ বছরের মাঝেই। অনেক মেয়েরা তো এপয়েন্ট হবার আগেই বলে দেয় যে সিজার করালে ডঃজয়া শেখ এর কাছেই করাবে……… MBBS পাশ করার পর জয়ার বাবা মিঃআফজাল শেখ কত বললেন বিদেশ যেতে… সে যায় নি…তিনি এও বলেছিলেন যে তিনি ১বছরের মাঝে জয়াকে জয়ার নিজের হাসপাতাল তৈরী করে দেবেন, তাতেও জয়া নারাজ।সে Apollo তে ই জইন করবে….. যেদিন জয়া interview দিতে ১ম হাসপাতালে ঢুকেছিল সেদিন interview room এ প্রথম দেখে অয়ন কে। অয়ন এর এটিটিউট, কথা বলার ভঙ্গী দেখে ফুল ক্রাশ খেয়েছিল জয়া অয়নের উপর। সেই ক্রাশ ই ১বছরের মাথায় ভালবাসায় পরিণত হয়েছে যে কবে জয়া বোঝে নি। জয়া শুধু এটুক জানে রোজ অয়ন কে না দেখলে, কাজের সূত্রে ১ঘন্টা অয়নের সাথে না কাটালে তার ভাল লাগে না।………….. Π
[]আজ কি অয়ন আসবে? নাকি আজ ও আসবে না??….. জানা নেই জয়ার[]
|||
|
|
♠♣♠♣♠♣♠♣♠♣(সেলিনা অল্প করে খিচুড়ি, দিন ভাজি, আচার দিল অরুকে খেয়ে…অরু সাথেসাথে খেয়ে নিল সব)
সেলিনা: ইশ রে মাইয়াডার খুব ক্ষুধা লাগছিল রে…ঠিক ই খায় নাই তো রাতভোর কিছু। সাহেব, অয়ন বাবা, অহনা মা সবাইই ই তো রাইতে কিছু না কিছু খাইছে! মাইয়াডারে তো সাধে নাই।……… (মনেমনে)
সেলিনা: নতুন বউ এই বাড়ী তে সক্কলে ঠিক ৮:৩০ টায় রুম থেইকে বাইর হয়।৯ টার মদ্ধি বাইর হইয়ে যায় যে যাইর কাজে।৮টায় রানতি যায় মিনু। রান্না কইতে ওই চা, বেরেড বাটার আর জুস।
আপনি ওগো লগে আবার খাইয়েন।এই খিচুরি আমি ফিরিজ থেইকা বের কইরা গরম কইরা দিছি। নুতন বউ এই খাওয়াইছি হুনলে সাহেব রাগ করবে……
(অরু মাথা নারিয়ে সন্মতি দিল,উঠে হাত ধুয়ে নিজের রুমে যাবে বলে সিঁড়ি তে পা বাড়ালো)
৮:৩০ নাগাদ আয়নের ঘুম ভাঙ্গল…… ঘুমঘুম চোখের মবাইল অন করে ৮:৩০ বাজে দেখে মেজাজ সেই বিগরে গেল অয়নের!!! এত লেট কিভাবে উঠলো সে! ধপ করে উঠে বসলো সে। গায়ের চাদর সরায় উঠতে যাবে হাত আটকে গেল তার। রাতের কথা মনে পরলো অয়নের। ওহ এখন তো সে বিবাহিত।ভোরের দিকে ঘুমানোর পর ও সেই শান্তির ঘুম হয়েছে মেয়েটার বুকে। পাশে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটা নেই………. গেল কই??
হুট করে চোখ গেল সামনের স্কাঊচ এর দিকে।কুরিয়েমুরিয়ে শুয়ে আছে অরু নামের মেয়েটা…….
তার বউ। ভেজা চুল গুলো কয়েকটা সামনে এসে কপাল ঢেকে গেছে..দুধে আলতা গায়ের রং,গোলগাল দেখতে। অরুকে দেখে অয়নের রাগ যেন নিমিষেই চলে গেল।….
বিছানা থেকে উঠে টাওয়াল টা নিজের কোমরে জড়িয়ে অরুর কাছে গেল। ভাল করে কিছুক্ষন অরুকে দেখে ওর চুল গুলা মুখ থেকে সরাতে যাবে আবার মনে পরে গেল যে সে লেট হচ্ছে…তাড়াতাড়ি আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে গেল শাওয়ার নিতে।।।।।
শাওয়ার নিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হয় অয়ন।অরু এখনো ঘুমাচ্ছে! ঘুমাবেই বা না কেন সারারাত তো অয়ন তাকে ঘুমাতে দেয় নি…….! অয়ন সুট, প্যান্ট, সু পড়ে রেডি হয়ে নিল। এমনিই অনেক হ্যান্ডসাম অয়ন তার উপর অফিসের ড্রেসাপে তাকে আরো হ্যান্ডসাম লাগে।।।অয়ন ঘড়ি হাতে পড়তে পড়তে অরুর দিক তাকাতেই অরুর ঘুম ভেংগে গেল। অরু চোখ খুলে তাকাতেই সামনে তার স্বামিকে দেখতে পেল একদম টিপটপ অবস্থায়…. অয়নকে দেখে কিছুটা হা করেই তাকায় ছিল অরু… অয়ন অরুকে উদ্দেশ্য করে বলল….
অয়ন: এদিকে আসো
অরু:………….
অয়ন : কই? কুইকক…..
( অরু ধীর পায়ে অয়নের কাছে গেল)
(অয়ন নিজের ওয়ালেট টা পকেটে ঢুকিয়ে অরুর দিক তাকালো…..অরুর কোমরে হাত দিয়ে ওকে নিজের কাছে নিয়ে এলো)(অরু হাত পা কাঁপছে, তার থেকে বেশি কাঁপছে অরুর ঠোট জোরা আর অয়ন সেদিকই তাকিয়ে আছে ) (অয়ন তার এক হাত দিয়ে অরুর ঠোটের কাটা স্থান স্পর্শ করলো, অরু কেঁপে উঠলো! ব্যাথা যে ওখানটায়!!!)
অয়ন: বাহ বেশ সুন্দর লাগছে তোমার গোলাপি ঠোটে আমার বাইট এর স্পট টাহ! সো হট!♥(বলে অরুর ঠোটের ওই জায়গার ছোট্ট করে একটা চুমু দিল…………. ♥♥ অরু আবারো কেঁপে উঠলো! চোখ জোড়া বড়বড় করে তাকিয়ে আছে অরু!! ওর ঠোট কাপাও বন্ধ হয়ে গেছে এবার।)
[]অরু ভাবছে এএএএ কোন অনুভুতি♥♥♥♥♥ কই গতরাতে তো এই মানুষটাই সারা রাত ধরে অরুর শরীরের এমন কোন জায়গা নেই যে ছোঁয় নি, চুমু দেয় নি…এমন অদ্ভুত অনুভুতি তো হয় নি অরুর তখন !!! এখনের ছোঁয়ায় অরু প্রথম একটু ভালবাসা পেল যা কাল রাতে ছিল না []
(অরুর এমন চোখ গোলগোল করে তাকিয়ে থাকা দেখে অয়ন ভ্রু কুছকে বলল……..)
অয়ন : আজ তোমার চক্করে আমি উঠতে লেট করলাম!! আমার কেরিয়ার লাইফে এই ফাস্ট!
(অরু কিথাটা শুনে বোকার মত তাকিয়ে আছে আয়নের দিকে)
অয়ন: আর কি যেন বলছিলে রাতে? অহ হা “আমার একটু সময় চাই, অগুলো করেন না,আমাকে সময় দিন এসবের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে ব্লা ব্লা ব্লা”
অরু হয় তুমি বোকা নয় অনেক বেশি চালাক। অবশ্য মেয়েদের বোঝা অসম্বব! নাটকে তো তোমরা নাম্বার ১! তোমাদের কোনটা আসল ব্যক্তিত্ব আর কোনটা নকল বোঝা অসম্বব…..
অরু:………
( অয়নের কথা গুলা যেন অরুর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে! কি বলছেন উনি এসব? আগা মাথা কিছুই বুঝছি না মনেমনে বলছে অরু)
অয়ন: যাক।।.<অয়ন অরুর কোমর ছেড়ে দিয়ে একটু দুরে দাড়ালো >.. অয়ন:তোমরা কেমন আমার তা বোঝার বুন্দুমাত্র ইচ্ছাও নেই। লুক ৯:৩০ বাজে <ঘড়ির দিকে ইশারা করে>এখন থেকে রাত ১০ পর্যন্ত হিউজ টাইম তোমার কাছে। যত সময় চাই এই খাপ খাওয়াতে নিয়ে নেও। আমি ফিরে তোমার ঢং দেখবো না, তোখন আমার তোমাকে চাই।। i mean to say তোমার শরীর টাকে! be prepared!!!!!!!!
(কথাটা বলে অয়ন রুম থেকে বের হয়ে গেল মোবাইল নিয়ে)(অরু অয়নের প্রথম কথাগুলা না বুঝলেও শেষ কথাগুলা খুব ভাল করে বুঝেছে তাই নিঃশব্দে চোখ থেকে পানি ঝড়াচ্ছে)
[]
[]
[]
…
ওদিকে জয়ার মন খারাপ এখন অস্থিরতায় পরিণত হয়েছে….
অস্থিরতা বললে ভুল হবে চরম অস্থিরতা!!! ৯;৩০ তো কখন পার হয়ে গেছে!! কই? অয়ন তো এলো না………..
সে কি তাহলে আজ ও আসবে না? কি হয়েছে তার?……. জয়ার চোখ বেয়ে ২ ফোটা পানি গরিয়ে পরলো……. তাহলে কি আজ ও অয়নের দেখা মিলবে না?………
.
চলবে………….