অনুরাগের_প্রহর #মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি #পর্ব_১০

#অনুরাগের_প্রহর
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_১০
________________
শেহরেয়ার দাঁড়িয়ে রাগে ফুঁসছে।মেহরিন এসে তার কাঁধে হাত রেখে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।নিশ্বাস ফেলে বললো,

-“শান্ত হন আপনি।”

-“এতোকিছুর পরে কি শান্ত থাকা যায়!”

-“আপনি অন্য একজনের কথায় নিজের মাকে কেনো অবিশ্বাস করেছিলেন শেহরেয়ার?”

-“এতে আমার কোনো দোষ নেই।সবার প্রতি মায়ের আচরণ,রাজের প্রতি মায়ের ভালোবাসা!এইসব দেখেই ওই শিকদার খানের কথা বিশ্বাস করতে আমি বাধ্য হয়েছি।”

রোজি বেগম যাওয়ার প্রস্তুতি নিলে হেনা সাহেবা বললেন,
-“এখনি চলে যাবি তুই?”

রোজি বেগম’ হেনা সাহেবার হাত ধরে বললেন,

-“হ্যাঁ রে।একবারে যাওয়ার টিকিট কেটে এসেছি।একটু পরেই ফ্লাইট।”

-“রাজকে দেখতে যাবি না একবারও?”

-“ওর মতো ছেলেকে দেখার আমার কোনো ইচ্ছা নেই।আর হেনা বয়স তো অনেক হলো!নিজের বাজে স্বভাবগুলো পাল্টানোর চেষ্টা কর।”

হেনা সাহেবা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালেন।রোজি বেগম যেতে গিয়েও দাঁড়িয়ে পড়লেন।ফিরে এসে মেহরিনের গালে হাত দিয়ে বললেন,

-“বাহ্!কি মিষ্টি মুখখানা।মা আমি তোমার শ্বাশুড়ির মুখ থেকে সবটা শুনেছি। হেনা একটু রাগী তো মানিয়ে নিও!তোমাদের ছেলেকে নিয়ে দুজনে অনেক সুখী হও এই দোয়াই করি।”

-“রাতে খেয়ে যান আন্টি।”

-“না মা।একটু পরে আমার ফ্লাইট।একদম সময় নেই।”

রোজি সাহেবাকে শেহরেয়ার এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিল।

______________________
-“এতোদিনে আসল সত্যটা জানতে পারলাম।তবে রোজি আন্টির কি উচিত হয়েছিল উনার ছেলেকে এভাবে এখানে রেখে যাওয়া!”

শেহরেয়ারের কথা শুনে শেহমীর মির্জা বললেন,

-“নতুন সংসার পেয়ে সে তার পুরনো ছেলেকে ভুলে গেছিল।”

শেহমীর মির্জার কথায় হেনা সাহেবা বাদে ড্রয়িংরুমে উপস্থিত সবাই হেসে দিল।হেনা বেগম বললেন,

-“ও আমাকে কল করে রাজের খোঁজ নিতো!”

সেতারা বেগম এসে হেনা সাহেবার পাশে বসে বললেন,

-“ওই মোবাইল করলেই খালি হয় নাকি বউ!”

হেনা সাহেবা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,

-“মা আমি জানি আপনি আমার এতোদিনের ব্যবহারে অনেক কষ্ট পেয়েছেন।হয়তো আমাকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবেন না।তাও এই বাড়ির সবার সামনে বলছি, মা আমাকে ক্ষমা করে দেন।ছোটবেলা থেকেই বেশ রাগী হওয়ায় কোনটা ঠিক কোনটা ভুল তা না ভেবেই কাজ করে এসেছি।তবে আজ বুঝতেছি।আমি যা করি সেটা আসলে ভুল হয়।”

হেনা সাহেবার কথায় হেসে দিলেন সেতারা বেগম।উনাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন,

-“মা রে তোমারে আমি কখনো আমার ছেলের বউ ভাবি নাই আমার মেয়ে ভাবছি।আমার মেয়ে নাই তোমারে সেই মেয়ের জায়গাই দিছি।আর মায়ের কাছে সন্তানের সব ভুল ক্ষমা হয়ে যায়।তাই তোমার এতো ক্ষমা চাওনের দরকার নাই।কারণ আমি তো তোমার উপরে রাগীই করি নাই কহনো!”

হেনা সাহেবার চোখে পানি চলে আসলো।সেতারা বেগম’ হেনা সাহেবাকে সামনে বসিয়ে বললেন,

-“তবে হ তুমি যদি তোমার পোলার বউয়ের লগে খারাপ ব্যবহার করো তাইলে কইলাম তোমারে আমি কথা শোনামু!কারণ হেয় প্রচুর ভালা মাইয়া।”

হেনা সাহেবা মেহরিনের দিকে তাকিয়ে বললেন,

-“মা জানেনই তো ওর সাথে এমন কেনো করি!

শেহরেয়ার কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বললো,

-“মা আমি ও-কে নিজের ইচ্ছাতেই বিয়ে করেছি সবটা জেনে।তাই তোমার এইসব নিয়ে না ভাবলেও চলবে।”

কথাগুলো বলে শেহরেয়ার বসা থেকে উঠে তার রুমের দিকে চলে গেল।হেনা সাহেবা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেহরিনকে ইশারা করলেন উনার পাশে গিয়ে বসতে।মেহরিন গিয়ে হেনা সাহেবার পাশে বসলো।শেহমীর মির্জা বললেন,

-“হেনা তুমি আর এইসব নিয়ে এখন ঝামেলা করো না।”

হেনা সাহেবা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,

-“তুমি মা-কে নিয়ে একটু রুমে যাও।আমি মেহরিনের সাথে আলাদা কথা বলতে চাই।”

শেহমীর মির্জা কিছু বলতে গেলে মেহরিন ইশারা করে নিষেধ করলো কিছু বলতে।তিনি আর কিছু না বলে সেতারা বেগমকে নিয়ে রুমের দিকে চলে গেলেন।উনারা যেতে হেনা সাহেবা মেহরিনের দিকে তাকালেন।তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে বললেন,

-“তুমি কি শেহরেয়ারকে ভালোবাসো?”

হেনা সাহেবার এমন কথায় মেহরিন বেশ অবাক হলো।সাথে কিছুটা লজ্জাও পেল।মেহরিনের লজ্জামাখা মুখ দেখে হেনা সাহেবা মৃদু হাসলেন।তিনি গলা ঝেড়ে বললেন,

-“তোমার চুপ থাকা দেখেই আমি সবটা বুঝে গেছি।যাও তোমায় আমি মেনে নিলাম।আর তোমার ছেলেকেও!আমার থেকে তুমি আর কখনো খারাপ ব্যবহার পাবে না।আমি তোমার মা হয়ে দেখাবো।”

হেনা সাহেবার কথায় মেহরিনের মুখে হাসি ফুটলো।সে হেনা সাহেবাকে জড়িয়ে ধরলো।হেনা সাহেবাও তাকে হাসি মুখে জড়িয়ে ধরলেন।হেনা সাহেবা মনে মনে বললেন,

-“আমার ছেলে ভালো থাকা মানেই আমি ভালো থাকবো।আর তুমি যেহেতু আমার ছেলেকে ভালোবাসোই তাহলে তো আমি আরো নিশ্চিন্ত।তোমার অতীত যাই হোক!তা নিয়ে আমি আর কোনো প্রশ্ন করবো না।”

_______________________
মুনিয়া পড়তেছে এমন সময় তার মোবাইলে কল আসলো।সে কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো,

-“ওফ!কালকে এমনি এক্সাম।আর এখন আবার কে কল করলো!”

মুনিয়া মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো আননং নাম্বার থেকে কল এসেছে।কলটা কেটে গেল।আননং নাম্বার তাই সে আর কল না দিয়ে মোবাইলটা রেখে দিল।একটু পরে আবার কল আসলো।সে কিছুটা বিরক্তি নিয়ে কলটা রিসিভ করতে ওপাশ থেকে হামিদ বললো,

-“এতোক্ষণ লাগে কল রিসিভ করতে?”

কণ্ঠস্বর শুনেই মুনিয়া বুঝে গেছে এটা হামিদ।সে কিছুটা অবাক হয়ে বললো,

-“আপনি আমার নাম্বার কোথায় পেয়েছেন?”

-“তোমার নাম্বার পেয়েছি রুমির থেকে।”

মুনিয়া মনে মনে বললো,

-“রুমি তোরে খালি পাই!একদম পুকুরে….না না একদম নদীতে নিয়ে চুবাবো।”

মুনিয়াকে চুপ থাকতে দেখে হামিদ বললো,

-“কি হলো চুপ হয়ে আছো কেনো?”

-“আপনি আমাকে কল করেছেন কেনো?”

-“প্রেম করতে কল করেছি।”

-“দেখুন মেজাজ গরম করবেন না।আমার কালকে এক্সাম আছে।”

-“তো!আমার কি?তোমার এক্সাম তা নিয়ে তুমি চিন্তা করবে।আর আমি তো আছি পড়াশোনায় ডিস্টার্ব করার জন্য।”

-“আমি যদি এখন কলটা কেটে দেই তাহলে আপনি কিভাবে ডিস্টার্ব করবেন?”

-“সোজা তোমার বাড়িতে চলে যাবো।”

মুনিয়া চমকে গিয়ে বললো,

-“মানে?”

-“মানে আবার কি!কল না ধরলে তো এটাই করবো।”

-“বাড়ি চিনিয়েও তো ভুল করলাম!”

-“হ্যাঁ!এখন তো একটু কষ্ট করতেই হবে।”

-“দেখুন আমি আপনাকে ভালোভাবে বলতেছি।প্লিজ এখন এইসব বলে জ্বালায়েন না।আমার অনেক পড়া বাকি আছে!”

-“আমার একটা কথা রাখো তাহলে আমি কলটা কেটে দিবো।”

-“কি কথা?”

-“আমাকে ‘তুমি’ করে বলতে হবে।”

-“আমার দুলাভাই আর আপু এখনো একে অপরকে আপনি করে বলে!আর আমি আপনাকে তুমি করে বলবো?যেখানে আমাদের মাঝে কিছুই নেই।”

-“সেটা তাদের ব্যাপার।তারা একে অপরকে প্রচুর সম্মান করে।তুমি এখন ‘তুমি’ করে বলো নাহলে কিন্তু আমি তোমার বাড়ির সামনে গিয়ে আন্দোলন শুরু করবো।”

মুনিয়া রাগে কাঁপছে।কিন্তু তার এখন কিছু করার নেই।তাই সে বাধ্য হয়ে বললো,

-“আচ্ছা ঠিক আছে।এখন কলটা কেটে দেও প্লিজ।”

-“আহ্!শান্তি লাগলো।আচ্ছা ঠিক আছে।তুমি তাহলে পড়াশোনা করো,আমি কল কাটতেছি।”

হামিদ কলটা কেটে দিল।মুনিয়া নিশ্বাস ফেলে পড়া শুরু করলো।

_______________________
বাড়ির সবার ডিনার করা শেষ হলে মেহরিন রুম গেল।সেখানে গিয়ে দেখলো রায়ান বিছানায় ঘুমিয়ে আছে।ওয়াশরুম থেকে পানির আওয়াজ আসছে তাই মেহরিন বুঝতে পারলো শেহরেয়ার ওয়াশরুমে!মেহরিন গিয়ে রায়ানের পাশে বসে তার কপালে একটা চুমু দিল।

মেহরিন ড্রেসিং টেবিলের সামনে গেলো চুল আচ্ছড়াতে!সে সেখানে গিয়ে দেখলো ড্রেসিং টেবিলের একটা ড্রয়ার খোলা।তবে সে এতোদিন ধরে ড্রয়ারটাকে লক করা দেখেছে।শেহরেয়ারকে প্রশ্ন করবে করবে করে আর করা হয়নি!আজকে ড্রয়ারটা একদম খোলা সেখানে কিছু কাজপত্র দেখ যাচ্ছে।সে কাপজপত্রের নিচে হাত দিতে তার হাতে কিছু পেল।হাতে কিছু পেতে সে সেটা বাইরে বের করলো।বের করে দেখলো সেটা একটা বন্দুক।যা দেখে মেহরিনের চোখ কপালে উঠে গেল।

-“এখানে বন্দুক আসলো কোথা থেকে?”

এমন সময় শেহরেয়ার ওয়াশরুম থেকে বের হলো।মেহরিনের হাতে বন্দুক দেখে সে নিম্নস্বরে বললো,

-“শীট!”

শেহরেয়ারকে দেখে মেহরিন তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,

-“এখানে বন্দুক কেনো শেহরেয়ার?”

-“আরে আমি আপনাকে সবটা বলতেছি মেহরিন।”

-এখন কেনো সবটা বলতে চাচ্ছেন?আগে কেনো বললেন না?কি রহস্য লুকিয়ে আছে আপনাকে ঘিরে?”

#চলবে____

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here