অনুরাগের_প্রহর #মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি #পর্ব_১৮

#অনুরাগের_প্রহর
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_১৮
________________
শেহরেয়ার আর মেহরিনকে পাশাপাশি দেখে মৃদু হাসলো হামিদ।কফির ট্রেটা টেবিলে রেখে বললো,

-“বাহ্!এতো তাড়াতাড়ি মিল হয়ে গেল?”

শেহরেয়ার মেহরিনের কাঁধে হাত রেখে বললো,

-“ভালোবাসার মানুষের সাথে আর কতদিন ভুল বোঝাবুঝি পুষে রাখবো বল!তাই আগের দিন ঝামেলা হলো পরের দিনই মিটমাট করে নিলাম।”

-“ভাবি….শেহরেয়ার সবার কাছে সিংহ হলেও আপনার কাছে বিড়াল!”

হামিদের কথা শুনে মেহরিন হেসে দিল।শেহরেয়ার হামিদের পিঠে একটা কিল দিয়ে বললো,

-“তুই কি হবি দেখবো!”

-“এখনি তো ইঁদুর হয়ে গেছি।আর কি হওয়ার বাকি আছে!”

শেহরেয়ার ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“তার মানে তোর মনের ভিতরে কারো আত্মার স্থানা তৈরি হয়েছে।”

হামিদ মুচকি হেসে বললো,

-“সে তো কবেই!”

শেহরেয়ার চোখ রাঙিয়ে বললো,

-“আর তা আমি জানি না!”

-“তুই জানলে চাকরি থাকবে না।”

মেহরিন ভ্রু উঁচিয়ে বললো,

-“কেশটা কি হামিদ ভাই?”

হামিদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

-“ভাবি আমি মুনিয়াকে ভালোবাসি।আমার মনে হয় ও আমাকে ভালোবাসে কিন্তু মুখে স্বীকার করে না।”

শেহরেয়ার আর মেহরিন দুজনেই অবাক হয়ে হামিদের দিকে তাকিয়ে আছে।শেহরেয়ার কপাল কুঁচকে বললো,

-“বাহ্ আমার শালিকার উপরেই আক্রমণ করলি তাহলে!”

-“কি করবো বল!তোর শালিকা এতো সুন্দর!”

মেহরিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

-“বর্তমানের ঝামেলাটা মিটুক।তারপর আমি বাবার সাথে কথা বলে আপনার আর মুনিয়ার বিয়ের ব্যবস্থা করবো!”

শেহরেয়ার অবাক হয়ে বললো,

-“তুমি এতো সহজেই রাজি হয়ে গেলে মেহরিন?”

-“রাজি না হওয়ার কি আছে?হামিদ ভাই কত ভালো লোক!”

-“আহা ভাবি!প্রশংসা শুনে বুকটা ভরে গেল।”

হামিদের কথা শুনে শেহরেয়ার আর মেহরিন হেসে দিল।মেহরিন কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললো,

-“শেহরেয়ার তুমি এখন বাড়িতে যাও!”

-“ওই বাড়িতে আমি আর যাবো না।”

মেহরিন শেহরেয়ারের কাঁধে হাত দিয়ে বললো,

-“সবাই চিন্তা করতেছে শেহরেয়ার।আচ্ছা চলো আমিও তোমার সাথে যাচ্ছি।আজকেই ডিএনএ টেস্ট করার ব্যবস্থা করতে হবে।”

শেহরেয়ার কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

-“আচ্ছা চলো।”

-“আমার আজকে একটা মিটিং আছে।নাহলে আমিও যেতাম!”

শেহরেয়ার হামিদের কাঁধে হাত দিয়ে বললো,

-“সমস্যা নেই।মেহরিন তো আমার পাশেই আছে।সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ!”

-“একদম স্ত্রীর বাধ্য স্বামী!”

তিনজন একসাথে হেসে দিল।শেহরেয়ার আর মেহরিন একসাথে মির্জা বাড়িতে গেল।শেহরেয়ার আর মেহরিনকে একসাথে দেখে বাড়ির সবার মুখে হাসি ফুটলো।শেহমীর মির্জা মেহরিনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন,

-“মা তুই ফিরে এসেছিস?”

মেহরিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

-“না বাবা।আমি এসেছি শুধু মাত্র শেহরেয়ারের জন্য।”

শেহমীর মির্জা এসে মেহরিনের মাথায় হাত রেখে বললেন,

-“মা রে আমার উপর রাগ করিস না।”

-“বাবা আপনার উপরে রাগ করিনি।তবে আপনি যা করেছেন সেটা ঠিক করেননি।”

-“আসলেই চাচু!তোমার ওই মেয়েকে এই বাড়িতে রাখা উচিত হয়নি।”

শুভর কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে শেহমীর মির্জা বললেন,

-“শেহরেয়ারকে বলো সত্যিটা প্রমাণ করতে।তাহলেই তো সবটা ঠিক হয়ে যায়।”

শেহরেয়ার পকেটে হাত ঢুকিয়ে বললো,

-“সত্যিটা প্রমাণ না করলেও তোমার আমার উপর বিশ্বাস রাখা উচিত ছিল বাবা।থাক এইসব নিয়ে আর কথা না বলি।শুভ তুই রুশমি আর তিহা আপুকে ডাক দে।”

শুভ গিয়ে রুশমি আর তিহাকে ডেকে আনলো।তিহা শেহরেয়ারের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,

-“পালিয়ে গিয়েছিলি নাকি?”

শেহরেয়ার মৃদু হেসে বললো,

-“আমি কোনো অন্যায় করেনি যে পালিয়ে যাবো।আমার মানসিক শান্তি আমার কাছে ছিল না বলেই চলে গেছিলাম।কিন্তু সে এখন আমার পাশেই আছে।তাই এখন আমি পরিপূর্ণ।”

কথাগুলো বলে শেহরেয়ার মেহরিনের দিকে তাকালো।মেহরিন মুচকি হেসে বললো,

-“এখানে যারা খুশি হয়েছেন আমি চলে যাওয়ায় তাদের জন্য এক গামলা সমবেদনা!আমি এই বাড়ি থেকে গিয়েছি শুধুমাত্র রুশমি ম্যাডামের সাথে এক বাড়িতে থাকার ইচ্ছা নেই বলে।”

শেহরেয়ার শ্বাস ফেলে বললেন,

-“আর আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছি এই সমস্যা সমাধানের।”

শুভ এসে শেহরেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে বললো,

-“ভাইয়া এখন বল কি সিদ্ধান্ত নিলি?”

শেহরেয়ার রুশমির দিকে তাকিয়ে বললো,

-“ডিএনএ টেস্ট করাবো।”

ডিএনএ টেস্ট এর কথা শুনে রুশমি কিছুটা ঘাবড়ে গেল।নিজেকে সামলে বললো,

-“আমি ডিএনএ টেস্ট করাতে দিব না।”

শেহরেয়ার ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“কেনো?”

রুশমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

-“এই ছোট বাচ্চা কে নিয়ে ডিএনএ টেস্ট করাবি?মাথা ঠিক আছে তোর শেহরেয়ার?”

শেহমীর মির্জা বললেন,

-“তেমন কিছুই হবে না।টেস্ট টা করাতে দেও তুমি।”

তিহা কিছুটা উচ্চস্বরে বললো,

-“রুশমি টেস্টটা করাতে দেও।তাহলেই তো রুশি যে শেহরেয়ারের মেয়ে সেটা প্রমাণ হবে।”

রুশমির মুখে ভয়ের ছাপ।সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

-“আমি কোনোভাবেই এই টেস্ট করাতে দিব না।”

মেহরিন রুশমির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,

-“কিন্তু কেনো?”

তিহা অবাক হয়ে বললো,

-“তুমি কেনো টেস্ট করাতে চাচ্ছো না?”

রুশমি কিছুটা উচ্চস্বরে বললো,

-“কারণ বাচ্চাটা শেহরেয়ারের না।”

বাড়ির সবার মুখে হাসি ফুটলো।শুধুমাত্র তিহা বাদে।সে চমকে গিয়ে বললো,

-“কি বলছো তুমি এইসব?”

রুশমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

-“হ্যাঁ এটাই সত্যি।রুশি শেহরেয়ারের মেয়ে না।আমি এটা বলেছিলাম যেন আমার মেয়ে একটা সুন্দর জীবন পায় তাই।রুশির বাবা দুই মাস আগে রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে।আমরা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিলাম।দুই বাড়ির কেউ আমাদের বিয়ে মেনে নেয়নি।অনেক কষ্টে সংসার চালিয়েছি দুজনে মিলে।কিন্তু ও মারা যাওয়ার পরে আমার রুশিকে নিয়ে চলতে খুবই কষ্ট হচ্ছিলো তাই প্লান করে তিহা আপুকে সবটা বলে এই বাড়িতে এসেছি।তিহা আপু এইসব কিছুই জানতো না।”

রুশমির কথা শুনে সবাই হতবাক।শেহরেয়ার ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“ওর বাবা কে?”

-“রিয়াদ।”

-“আমাদের ডিপার্টমেন্টের রিয়াদ?”

-“হ্যাঁ!”

-“ও মারা গেছে!আর আমি তা জানিই না।”

-“ওর সাথে তোদের তেমন ফ্রেন্ডশিপ ছিল না।তাই হয়তো জানতে পারিসনি!”

তিহা এক দৃষ্টিতে রুশমির দিকে তাকিয়ে আছে।নিজেকে সামলে বললো,

-“তা তুমি যে ওই অনুষ্ঠানের রাতের কথা বলেছিলে।সেটা কি ছিল?”

রুশমি কিছু বলার আগে শেহরেয়ার বললো,

-“আমি বলতেছি।ভার্সিটিতে আমাদের ফেয়ারওয়েলের দিন হঠাৎ করে রুশমি অজ্ঞান হয়ে যায়।তাই আমি ও-কে রেস্ট রুমে নিয়ে যাই।ডাক্তারকে কল করেছিলাম কিন্তু উনি আসতে পারেনি ব্যস্ত থাকায়।উনি আমাকে বলেন চোখে পানি ছিটা দিতে।অনেকক্ষণ ওর চোখে পানি ছিটা দেওয়ার পরে জ্ঞান ফিরে।তারপরে আমরা দুজনকে ওই রুম থেকে একসাথে বের হতে দেখে অনেকেই অনেক কিছু ভেবে নেয় নিজের মতো।আর রুশমি সেটার সুযোগ নিয়েছে।”

তিহা গিয়ে ঠাস করে রুশমির গালে একটা চ*ড় মেরে বললো,

-“তোমাকে বিশ্বাস করে আমি কতটা ভুল করেছি তা তো আজ বুঝলাম।আঙ্কেল-আন্টি আমাকে ক্ষমা করে দেন।আমি আজ রাতের ফ্লাইটে সিঙ্গাপুর চলে যাচ্ছি।ভেবেছিলাম আপনাদের জানাবো।কিন্তু তার মাঝে এতোকিছু ঘটে গেল।”

শেহমীর মির্জা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,

-“তুমি তো কিছু জানতে না।আমি চাই তোমার ভবিষ্যৎ সুখময় হোক।আমাদের ভুলে যেও না আবার সিঙ্গাপুরে গিয়ে।”

-“আপনাদের আমি কখনোই ভুলতে পারবো না।”

তিহা গিয়ে শেহরেয়ারের হাত ধরে বললো,

-“ভাই আমাকে ক্ষমা করে দিস।”

-“আপু তোমার ক্ষমা চাওয়ার দরকার নেই।তুমি তো রুশমির কথায় এইসব করেছো।এখন বলো এই রুশমির কি করা যায়!”

-“তোমাদের আমাকে কিছু করা লাগবে না।আমি এমনিই আর কিছুদিনের অতিথি।মাথা ব্যথা করার কারণে কিছুদিন আগে টেস্ট করিয়েছিলাম।আজকে তার রিপোর্ট পেয়েছি।আমার ব্রেইন ক্যান্সার হয়েছে।এখন কোনো চিকিৎসা করার টাইমও নেই।আল্লাহ আমাকে আমার মিথ্যা কথা বলার শাস্তি দিয়েছেন।তোমাদের কাছে একটাই চাওয়া যেই কদিন বেঁচে থাকি আমাকে এখানে একটু থাকতে দেও।আর আমার মেয়েটাকে মানুষ করার দায়িত্বটা নেও।”

সবাই নিশ্চুপ!নিরবতা ভেঙে হেনা সাহেবা বললেন,

-“তোমার এই কথা যদি মিথ্যা হয়?”

তিহা পাশে থেকে বললো,

-“না আন্টি ও মিথ্যা বলছে না।কারণ আমি ও-কে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম।আর রিপোর্ট গুলোও দেখেছি।”

মেহরিন গিয়ে রুশমির কাঁধে হাত রেখে বললো,

-“তুমি এই বাড়িতেই থাকো।আর তোমার মেয়েকে নিয়ে চিন্তা করো না।ওর দায়িত্ব আমাদের।”

শেহরেয়ার অবাক হয়ে বললো,

-“মেহরিন তুমি কি এই সিদ্ধান্ত ভেবেচিন্তে নিয়েছো?”

-“হ্যাঁ।”

শেহরেয়ার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

-“ঠিক আছে।তোমার যা মনে হয় করো।”

(অসুস্থতার কারণে পর্বটা দিতে অনেকটাই দেরি হয়েছে।তার জন্য ক্ষমা প্রার্থী।)

#চলবে____

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here