my_unexpected_love
part_9,10
Arohi_Ayat
part_9
ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে নাকি এই কথাটা নিয়ে অনেক চিন্তায় আছি৷ জানি না সারা দিন এইটাই মাথায় আসছে৷ বারান্দায় বসে বসে ফুল গাছে পানি দিচ্ছি আর ভাবছি ভাইয়া এইভাবে কারো সাথে বেশি কথা বলে না কাউকে এত পাত্তা দেয় না আর কখনো একটু কারো কথায় হাসেও না৷ সেই ভাইয়া আজ কিভাবে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো বুঝলাম না? আর শুধু হাসলো না আমার জন্য গিয়ে আইস্ক্রিমও নিয়ে এলো! তারপর আবার রেস্টুরেন্টে সেই ছেলেটার সাথে কথা বলায় এত রেগেও গেলো৷ আর আমাকে আজকে ভাইয়া তার সাথে নিয়ে গেছে এইজন্যই যেন আমি দেখে বুঝি যে ভাইয়া আর তার ক্লাসমেটের মধ্যে বিজনেসের বিষয় ছাড়া আর কিছুই নেই৷ আর এই বিষয়টাই আমার অনেক ভালো লেগেছে কারণ ভাইয়া চায় না যে তার আর আমার মাঝে কোন মিসান্ডার্সটেন্ডিং হোক! আবার ভাইয়া আমাকে অনেক কেয়ারও করে কিন্তু কেন করে? ভাইয়া কি আমাকে ভালবাসে নাকি এটা শুধুই বোনের প্রতি একটা ভাইয়ের কর্তব্য পালন করছে? শুধু এই কথাটা নিয়েই আমি কনফিউশনে আছি,, কারণ নিশান আমার খালাতো ভাই হয় আর এখানে তার এত কিছুতে হয়তো সাধারণ ভাইয়ের দায়িত্বও থাকতে পারে৷ এখন এইটা ত আমি আর জানি না,, হয়তো আমি ভুল ভাবছি! আর এখন যদি নিশান আমার ভাই না থাকতো তাহলে ত আমি সিউর বুঝতেই পারতাম যে ও আমাকে ভালোবাসে!!! আমার বার বার চোখে নিশান ভাইয়ায়ার সেই মুচকি হাসিটাই ভেসে আসছে বুঝলাম না! উফফ আমিও ত আবার একটা কথা মাথায় ঘুরলে সেটার জবাব না জানা পর্যন্ত শান্তিতে থাকতে পারি না! না আমি নিশান ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করবো এই বিষয়টা হুম,, নাহলে যদি তার ব্যাপারে আমার এই ভুল ধারণা লেগে থাকে? আমি ত ভাইয়াকে সবসময় ভাইয়ার চোখেই দেখেছি এখন বিষয়টা ক্লিয়ার না করলে পরে আমি নিজেই পাগল হয়ে যাবো!!!
”
রাতে ডিনারের সময়,,, আমার নিজের অনিচ্ছায়ই বার বার চোখটা ঘুরে ফিরে ভাইয়ার দিকে যাচ্ছে৷ বুঝলাম না এই প্রথম ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে একটু অন্য রকম লাগছে ৷ মনে হচ্ছে যেন এটা আমার ভাই না দুরের কোন মানুষ! এই খাওয়ার সময়ও শান্তি পেলাম না মাথায় এখনো ওই কথাটা ঘুরছে৷ এতদিন তেমন কোন কথা ভাইয়াকে নিয়ে এত ভাবি নি কিন্তু এই প্রথম একটা প্রশ্নও হঠাৎ কিভাবে যেন মাথায় ঢুকেছে ভাইয়াকে নিয়ে তাই এখন এমন ফিল হচ্ছে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে৷ আর ভাইয়া শান্তিতে খানা পিনা করছে৷ ভাইয়ার মাথায় কোন চিন্তা নেই আর আমার মাথায় এত চিন্তা! আমি ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করবোতো কথাটা দাড়ানা তারপর ভাইয়ার মাথায়ও চিন্তা ঢুকিয়ে দিব!!
খাবার শেষ করে নিড়বের সাথে গিয়ে সোফায় বসলাম টিভি দেখার জন্য৷ ভাইয়াও এসে সোফায় বসলো কিন্তু ভাইয়া টিভি দেখছে না ফোন টিপছে৷ আমি নিড়বের থেকে রিমোট কেরে নিয়ে বললাম
– হয়েছে তোর! সারা দিন টিভি আর কম্পিউটার গেমস খেলা ছাড়া কি আদৌ তোর কোন কাজ আছে! আইলসা পোলা!
নিড়ব বলল
– ওহো তুই ত একেবারে কাজ করে উল্টিয়ে ফেলেছিস! রিমোট দে আমি দেখছিলাম!
– কেন রিমোট আর টিভি কি শুধু তোর নামে লিখা? যা এখান থেকে রুমে গিয়ে গেমস খেল!
– আমি কেন যাবো? তুই তোর রুমে গিয়ে ভুতের ছবি দেখ! তাছাড়া তোরও ত কোন কাজ নেই! সারা দিন ত ঘুরে বেরাস কোন কাজ করিস না আর খালি আহান ভাইয়ার সাথে ঘুরতে চলে যাস!
আমি বড় বড় চোখ করে বললাম
– নিড়ব!! এইসব কি ধরনের বেয়াদবি? আমি তোর বড় বোন আর আহান এর সাথে ঘুরতে যাই মানে কি? তুই জানিস না আহান আমার ফ্রেন্ড! ওকে নিয়ে একটাও আজে বাজে কথা বলবি না! আমি কিন্তু আম্মুকে বিচার দিব!
হঠাৎ নিশান ভাইয়া এসে আমার হাত থেকে রিমোট টেনে নিয়ে নিড়বের হাতে ধরিয়ে দিল৷ তারপর আমাকে ধমক দিয়ে বলল
– কি? তুই এত বড় হয়ে ছোট ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করছিস? তুই নিজেই ত একটা বেয়াদব! ননসেন্স কোথাকার!
আমি হা করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি৷ কিছুই বুঝলাম না! ভাইয়া চলে গেলো সেখান থেকে৷ ভাইয়া যেতেই রেগে জলে উঠলাম৷ আমি নিড়বের দিকে তাকিয়ে বললাম
– তুই না,,, দাড়া তোর খবর নিতে হবে!!
এটা বলে আমিও সেখান থেকে চলে এলাম৷ সিরি দিয়ে উঠতে উঠতে ভাবছি এখন মাথাটা গরম আছে এক কাজ করি এখনি ভাইয়াকে গিয়ে জিজ্ঞেস করি এই ব্যাপারটা কারণ এখন মাথা গরম থাকা অবস্থায় সাহস করে জিজ্ঞেস করতে পারবো নাহলে পরে যদি আবার সাহস না পাই৷ আমি সোজা ভাইয়ার রুমে গেলাম৷ ভাইয়ার রুমে গিয়ে কিছু না বলেই বেডে বসে পরলাম৷ ভাইয়া ফোন চার্জে দিয়ে আমার দিকে তাকালো ভ্রু কুচকে বলল
– কি? এইভাবে আমার রুমে এসে বসেছিস কেন?
এতক্ষন ত মাথা গরমই ছিল কিন্তু হঠাৎ এমন ভাইয়ার সামনে আসতে আবার ঠান্ডা হয়ে গেছে সাথে আমিও ঠান্ডা হয়ে গেছি কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারছিনা৷ ভাইয়া আমার সামনে এসে বলল
– কি হয়েছে? মুখে তালা কেন?
আমি বললাম
– আব,,,তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে এসেছি!
ভাইয়া আমাকে বলল
– দাড়া!
আমি কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে তারপর উঠে দাড়ালাম৷ ভাইয়া রেগে বলল
– আজকে রেস্টুরেন্টে যেই ছেলের সাথে কথা বলছিলি ওই ছেলের নামই কি আহান?
– নাহ! ওই ছেলেকে ত আমি চিনিও না! কিন্তু আহান আমার ফ্রেন্ড! তুমি জিজ্ঞেস করছো কেন?
ভাইয়া চোখ বন্ধ করে বড় একটা শ্বাস নিয়ে বলল
– তাহলে আহান কে?
আমি অবাক হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি৷ ভাইয়া এমন করছে কেন বুঝলাম না! আমি বললাম
– আহান আমার ফ্রেন্ড! কি হয়েছে? তুমি এমন রেগে যাচ্ছো কেন বুঝলাম না? আচ্ছা আমি তোমাকে এখানে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে এসেছিলাম আগে সেটার উত্তর দাও আমি নাহয় পরে তোমাকে আহানের ব্যাপারে বলবো!!
– তুই আমাকে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে এসেছিস! এমন কি প্রশ্ন তোর যে বারবার জিজ্ঞেস করতে এসে পরিস?!
আমি এইবার বলেই ফেললাম
– হ্যা আমার প্রশ্ন আছে আর আমি জানতে চাই তুমি আমাকে ভালবাসো নাকি??
এটা শুনে মনে হয় ভাইয়ার মাথা থেকে রাগ নেমে গেলো৷ ভাইয়া শান্ত ভাবে বলল
– কি? তুই এটা জিজ্ঞেস করছিস কেন?
– এইভাবেই তুমি জাস্ট উত্তর দাও!!
ভাইয়া এক ভ্রু উচু করে বলল
– কিন্তু হঠাৎ কেন জিজ্ঞেস করছিস? আর এই “ভালবাসো নাকি” এইটার মানে?
আমি বললাম
– মানে তুমি যে আমার এত কেয়ার করো আবার কোন ছেলের সাথে কথা বললেই যে রেগে যাও তাই জিজ্ঞেস করছি তুমি কি আমাকে ভালবাসো?
ভাইয়া বেডে বসে দুই হাত বেডের উপর রেখে বলল
– তুই আসলেই একটা গবেট! কে বলেছে তোকে যে কাউকে একটু কেয়ার করলেই তাকে ভালোবেসে ফেলা লাগে? আর তুই ছেলেদের সাথে কথা বললে আমি রেগে যাই এটা তোকে কে বলেছে? আসলে আমি রেগে যাই না আমি ত জানি যে তুই একটা গবেট তাই তোকে ছেলেদের থেকে দূরে থাকতে বলি!!
– তার মানে তুমি আমাকে ভালবাসো না?
আমি ভ্রু কুচকে বললাম৷ ভাইয়া বলল
– কেন তুই আমাকে ভালবাসিস নাকি?
হঠাৎ আমি হকচকিয়ে গেলাম৷ আমি আমতা আমতা করে বললাম
– জীবনেও না! আমি কি বলেছি এইটা?! আমার শুধু একটা প্রশ্ন এইভাবেই মাথায় এসেছিলো তাই জিজ্ঞেস করেছি!
এটা বলে রুম থেকে বের হয়ে এলাম৷ নিজের রুমে গিয়ে ভাবছি ভাইয়া ত বলেই দিল যে ভাইয়া আমাকে ভালবাসে না তার মানে আমি ভুল ছিলাম৷ কিন্তু আমার মনে যে এই প্রশ্নটা একবার ঢুকেছে এখন ত মনে হয় না এইটা মাথা থেকে যাবে কারণ এই প্রশ্নটা মাথায় আসার পর থেকে জানি না কেন ভাইয়ার প্রতি অন্য কিছু ফিলিং আসে মনে৷
চলবে,,,,
my_unexpected_love
part_10
Arohi_Ayat
.
২দিন ধরেই দেখছি ভাইয়া বার বার বাহিরে চলে যায় আবার রাতে লেট করে বাসায় ফিরে৷ আর বাসায় ত খুব কম টাইমই থাকে শুধু সকাল বেলা নাস্তা করে এরপর বাহিরে চলে যায় আবার রাতের বেলা ফিরে৷ আর যতক্ষনই বাসায় থাকে ফোন নিয়ে ব্যাস্ত৷ মা যদি ভাইয়াকে কিছু জিজ্ঞেস করে যে কোথায় যাচ্ছিস? তাহলে ভাইয়া একটা কথাই বলে যে বিজনেসের কাজে ব্যাস্ত সে৷ আর আগে ত ভাইয়া যাও আমার সাথে যতটুকু হলেও কথা বলতো কিন্তু এখন এমন ব্যাস্ত যে আমার সাথে কোনো কথাই বলে না৷ ২দিন ধরে আমাদের মাঝে কোন কথাই হয় নি৷ আমি ভাইয়াকে সামনে পেলে কিছু জিজ্ঞেস করতে গেলে বা কোন কথা বলতে গেলেও কেন জানি থেমে যাই কথা মুখ দিয়ে বেরই হয় না ভাইয়ার সামনে৷ কেন যেন সাহস পাই না কথা বলার৷ আর ভাইয়া নিজে থেকে ত কথা বলেও না৷ আমার ভাইয়াকে সামনে দেখলে ইচ্ছা হয় যেন ভাইয়ার সাথে একটু কথা বলি কিন্তু ভাইয়ার কোন এট্যানশনই নেই আমার উপর৷ আমার মনে হয় যেন ভাইয়া আমাকে ইগনোর করছে কিন্তু পরে আবার আমি ভাবি যে এখানে ইগনোর করার ও কিছু নেই৷ হতে পারে কাজে ব্যাস্ত আর এমনও ত কথা না যে ভাইয়ার এট্যানশন সারা দিন আমার উপরই থাকবে! কিন্তু তবুও আমার খারাপ লাগে কেন যেন৷ ভাইয়া যখন সকালে নাস্তা করেই চলে যায় আবার যখন রাতে আসে কেন যেন আমি ভাইয়ার অপেক্ষায় বসে থাকি!
”
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে সোফায় বসে আছি৷ বার বার সিরির দিকে তাকাচ্ছি৷ যে ভাইয়া কখন নামবে নিচে এই অপেক্ষায়৷ প্রতি দিন ভাইয়া এমন ড্যাশিং লুক নিয়ে সিরি দিয়ে নামে যে আমার চোখ সেখানেই আটকে যায়৷ তখন কেন যেন একটা কথাই মাথায় আসে আর অনেক রাগ লাগে,, যে ভাইয়া এইভাবে মারাত্মক লুক নিয়ে ওই মাইশার সাথে কাজ করতে যায়,, হুহ! কাজে যাবে এইভাবে যাওয়ার কি আছে? কই আজকে ভাইয়া আসছে না কেন? আজকে এত দেরি লাগছে কেন? আজকে কি একেবারে পার্লার থেকে সেজে গুজে নামবে? উহ! বুঝলাম না কিছু! আমিই গিয়ে দেখি ভাইয়া কি করে!
আমি ভাইয়ার রুমে গেলাম৷ রুমে উকি দিতেই দেখলাম ওই উনি ফোনে কথা বলতেই ব্যাস্ত! সারা দিন ফোন ফোন ফোন! একবার এই ফোনটা হাতে পেলে আচরে ভেংঙে ফেলবো!!! আমি দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলাম৷ ভাইয়ার নজর পড়লো আমার উপর৷ ভাইয়া কল কেটে আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো৷ আমি বললাম
– আজকেও কি তোমার কাজ আছে?
– হুম!
এটা বলে ভাইয়া অন্য দিকে ঘুরে নিজের কাজ করতে লাগলো৷ আমি ভাইয়ার পিছনে গিয়ে আবার জিজ্ঞেস কিরলাম
– তুমি কি প্রতিদিন মাইশা,, আপুর সাথেই কাজ করো?
– হু!
ভাইয়া আমার দিকে না তাকিয়ে উত্তর দিচ্ছে৷ আমি কতক্ষন চুপ থেকে আবার বললাম
– আচ্ছা রাতে তুমি এত লেট করে আসো কেন?
ভাইয়া কিছু বলল না নিজের কাজ নিজে করছে৷ আমি আবার জিজ্ঞেস কিরলাম
– আচ্ছা সারা দিনই কি তোমার কাজ?
এইবারও ভাইয়া কিছু বলল না৷ আমি আবার বললাম
– ওহ তুমি ত এখানে কাজের জন্য আছো তাই না? কাজ আছে অনেক তাই না? আচ্ছা তোমার কি অনেক বেশি কাজ যে রাতে আসতে লেট হয়!? দুপুরেও ত খেতে আসো না! তুমি কি,,,,,৷
ভাইয়া হঠাৎ ঘুরে আমার দিকে তাকালো৷ আমি চুপ হয়ে গেলাম৷ ভাইয়া রুড চেহারা নিয়ে বলল
– তুই এখানে কেন এসেছিস? যে কাজের জন্য এসেছিস সেটা বল! ফালতু পেচালের টাইম নেই! আর,,,,,৷
ভাইয়ার কথার মাঝখান দিয়ে আমি বললাম
– আচ্ছা তুমি দেখি আমার সাথে এখন কথা বলো না! তুমি কি ওইদিন আমি যে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে তুমি আমাকে ভালবাসো কিনা এই কথা নিয়ে মাইন্ড করেছো আমার সাথে?
ভাইয়া চোখ বন্ধ করে তারপর বলল
– উহ! অনেক কথা বলিস! কোন কাজ না থাকলে যা এখান থেকে!
– কেন?
– আজব আমার রুমে তোর কি কাজ? বের হো! আমার রেডি হতে হবে আজকে একটা মিটিং আছে লেট হয়ে যাবে!
এটা বলে আমাকে ঠেলে রুম থেকে বের করে দরজা বন্ধ করে দিল৷ আমি বড় একটা নিশ্বাস ছেরে নিচে চলে গেলাম৷ কি আর করার হয়তো ভাইয়ার অনেক কাজ আমার শুধু শুধু গিয়ে এইভাবে ডিস্টার্ব করা ঠিক না!!
একটু পরে ভাইয়া রেডি হয়ে নিচে নেমে নাস্তা করে চলে গেলো৷ আর আমি সোফায় বসে এতক্ষন ভাইয়াকেই দেখছিলাম৷ একেবারে ভাইয়ার দরজা পর্যন্ত যাওয়ার সময়ও৷
”
রাতের বেলা,,,,
রুমে বসে আছি৷ এখন ৯টা বাজে ভাইয়া আসবে আরো দেরিতে ৷ আমি বারান্দায় বসে ফোন চালাচ্ছি৷ হঠাৎ নিচে থেকে মার আওয়াজ শুনে৷ বারান্দা থেকে বের হয়ে ভালো করে শুনার চেষ্টা করলাম যে মা কি জন্য চিল্লাচ্ছে৷ পরে রুম থেকে বের হয়ে সিরির সামনে দাঁড়িয়ে দেখলাম নিশান ভাইয়া সোফায় বসে আছে৷ দেখে অসুস্থ মনে হচ্ছে আর পাশেই মা আর মাইশা দারিয়ে কথা বলছে৷ আমি তারাতাড়ি নিচে গেলাম৷ ভাইয়া নিজের পায়ে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে সোফায় হেলান দিয়ে আছে৷ আমি মাইশাকে দেখে জিজ্ঞেস করলাম
– কি হয়েছে আপু? ভাইয়ার এই অবস্থা কেন?
মাইশা বলল
– জানি না,, আমরা মিটিং থেকেই ফিরছিলাম হঠাৎ নিশানের পায়ে ব্যাথা উঠেছে! তাই আমি তারাতাড়ি বাসায় নিয়ে এলাম!
মা আমাকে বলল
– নিশা,, তুই আর নিড়ব ওকে একটু ধরে ওর রুমে নিয়ে যা আমি গরম পানি করে নিয়ে আসছি!
আমি আর নিড়ব ভাইয়ার দুই হাত ধরে খুব সাবধানে ভাইয়াকে রুমে নিয়ে শুয়ে দিলাম৷ ভাইয়া ব্যাথায় চোখই খুলতে পারছে না৷ আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি,, কি হলো ভাইয়ার বুঝলাম না এমন ব্যাথা কিভাবে হলো? আমি ভাইয়ার সামনে বসে ভাইয়াকে জিজ্ঞেস কিরলাম
– তুমি ঠিক আছো? আজকে সকালে ত ঠিকই ছিলে হঠাৎ কি হলো তোমার? পায়ে ব্যাথা কিভাবে পেলে?
ভাইয়া মনে হয় এখন কিছু বলতেও পারছে না৷ শুধু ব্যাথায় আহ আহ করছে৷ আমার হঠাৎ মনে অনেক ভয় ঢুকে গেলো৷ সকালে ত ঠিকই ছিল ভাইয়া৷ আমি ভাইয়ার পায়ে হাত দিতেই ভাইয়া আহ্ করে উঠলো৷ আমি তারাতাড়ি হাত সরিয়ে ফেললাম৷ আর নিজেও ভয় পেয়ে গেলাম৷ আমি তারাতাড়ি নিচে গিয়ে মার থেকে গরম পানি নিয়ে এলাম ভাইয়ার পায়ে ছ্যাক দেওয়ার জন্য৷ ভাইয়ার পা দেখে মনে হচ্ছে না নতুন কোন ব্যাথা পেয়েছে৷ মা আন্টিকে কল করলো৷ আমি উপরে গিয়ে ভাইয়ার পায়ে ছ্যাক দিলাম এতে ব্যাথা একটু কমবে৷ একটু পরে মা উপরে এসে রুমে এলো৷ মা বলল
– আমি তোর আন্টির সাথে কথা বললাম৷ তোর আন্টি ত বলল যে এইটা নাকি ওর একবার এক্সিডেন্ট হয়েছিলো তখন ও পায়ে ব্যাথা পেয়েছিলো অনেক জোরে৷ এটা নাকি ওই ব্যাথাই,, মাঝে মাঝে বেশি কাজ করলে ওর পায়ে ব্যাথা উঠে যায়!
মার কথা শুনে ভাইয়ার দিকে তাকালাম৷ ভাইয়া চোখ বন্ধ করে আছে৷ আমি মাকে বললাম
– মা তুমি একটু সুপ বানিয়ে নিয়ে আসো!
মা বলল
– আচ্ছা তুই একটু দেখিস ওকে!
এটা বলে মা চলে গেলো৷ আমি ভাইয়ার পায়ে ওয়াটার পট টা দিয়ে ছ্যাক দিতে লাগলাম৷ কিছুই বুঝলাম না ভাইয়ার এই অবস্থা দেখে অনেক খারাপ লাগছে৷
”
মা সুপ বানিয়ে নিয়ে এসে ভাইয়াকে খাওয়ে দিল৷ আর আমি পাশেই বসেছিলাম৷ মা ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলো
– বাবা এখন একটু কমেছে ব্যাথা?
ভাইয়া বলল
– হুম!
আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি করুন দৃষ্টিতে৷ ভাইয়া একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলল৷ মা রুম থেকে চলে গেলো৷ ভাইয়া বেডের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে৷ আমি কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে তারপর ভাইয়ার কপেলে আলতো করে হাত রাখতে ভাইয়া চোখ মেলে তাকিয়ে বলল
– কি করছিস?
আমি আমতা আমতা করে বললাম
– আব,,,দেখছিলাম জ্বর এসেছে কিনা!?
ভাইয়া কিছু বলল না৷ আমি ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম
– তুমি ঠিক আছো? এত কাজ করেছো বলে তোমার পায়ে ব্যাথা উঠেছে! এখন তুমি আর বাহিরে যাবে না রেস্ট নিবে বাসায় বসে!
ভাইয়া আমার দিকে তাকাতে আমি হকচকিয়ে গিয়ে বললাম
– আমি না মা বলেছে এই কথা,, মা তোমাকে বাহিরে যেতে না করেছে! আর আমি জানি তুমি আমার কথা শুনবে না তাই আমি বলবোও না তোমাকে কিছু!
ভাইয়া বেড থেকে উঠে দাড়ালো৷ আমি ভাইয়াকে ধরতে গেলে ভাইয়া বলল
– দাড়া তোর ধরতে হবে না,, এখন আমি ঠিক আছি! আচ্ছা তুই এখন রুম থেকে যা!
– কেন ,, তোমার যদি কিছু প্রয়োজন হয়?
ভাইয়া দুই কমোরে হাত গুজে বলল
– নিশা! আমি কোন রোগী না যে তুই নার্স এর মত আমার সারা রাত খেদমত করবি! যা রুমে গিয়ে ঘুমা!!
ভাইয়ার কথা শুনে চলে গেলাম রুমে৷ ভাইয়া নিজেই যখন বলেছে ঠিক আছে আর কি করার!
”
সকালে,,,,,
ভাইয়া সিরি দিয়ে নামতে দেখলো মা রেডি হয়ে বসে আছে৷ আমি মার পাশেই দারিয়ে আছি৷ ভাইয়া নিচে নামতে মা বলল
– কিরে ঠিক আছিস বাবা?
ভাইয়া বলল
– হুম! কিন্তু তুমি কোথায় যাচ্ছো?
আমি বললাম
– মা একটু তার চাচাতো বোন অসুস্থ দেখতে যাচ্ছে!
মা নিশান ভাইয়াকে বলল
– তুই বাসায় থাকিস কোথায় যাবি না৷ নিশাও বাসায় আছে৷ আর আমি নিড়বের সাথে যাচ্ছি৷ আজকেই এসে পড়বো!
ভাইয়া আমার দিকে একবার তাকিয়ে বলল
– ওহ আচ্ছা ঠিক আছে৷ তুমি যাও!
এটা বলে ভাইয়া সোফায় বসে পড়লো৷ মা চলে যেতে আমি দরজা বন্ধ করে ভাইয়ার কাছে এসে বললাম
– টেবিলে তোমার ব্রেকফাস্ট রাখা আছে খেয়ে নাও!
ভাইয়া কিছু বলল না গিয়ে টেবিলে নাস্তা করা শুরু করলো৷ আমিও কিছু বললাম না৷ নাস্তা করা শেষ করে ভাইয়া সোজা নিজের রুমে চলে গেলো৷ যাওয়ার আগে আমাকে বলল
– আমি রুমে যাই,, আজকেও একটা মিটিং আছে৷ আমাকে ডিস্টার্ব করবি না ওকে!
আমি কিছু বললাম না ভাইয়া চলে গেলো নিজের রুমে৷ আর আমি সারা দিন ভাইয়াকে ডিস্টার্ব ও করলাম না৷ একা একাই বসে রইলাম৷
সন্ধাবেলা,,,,
ভাইয়া এখনো নিজের রুমেই বসে আছে৷ শুধু মাত্র দুপুরে আমি খাবার নিয়ে ভাইয়ার রুমে গিয়েছিলাম৷ রুমে গিয়ে দেখি ল্যাপটপে ভাইয়া কাজ করছে৷ তাই আমি কিছু বলি নি শুধু খাবারটা টেবিলের উপর রেখে চলে এসেছি৷ আমার মনেই হয় নি সারা দিন যে ভাইয়া এখানে আছে৷ আমি একাই বসে ছিলাম তাই মনে হয়েছে যেন আমি বাসায় একাই৷ আর আমি বুঝলাম না একেবারে একটা মিটিং কি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হয়? যাই হোক আমি ত আর এইসব কিছু জানি না৷ টিভি ছেরে হাতে রিমোট নিয়ে এইসব ভাবছিলাম৷ একটু পরে দেখলাম ভাইয়া আসছে৷ ভাইয়া এসে আমার পাশেই বসে পরলো৷ আমি কিছু বললাম না৷ ভাইয়া বলল
– তুই এখনো টিভি দেখছিস? বাহিরে কি ঝড় শুরু হয়েছে দেখেছিস? আন্টি কবে আসবে?
আমি ভ্রু কুচকে বললাম
– বাহিরে ঝড় শুরু হয়েছে? আমি ত জানিও না! আচ্ছা দারাও আমি মাকে কল করি!
আমি মাকে কল করতে মা ফোন রিসিভ করলো৷ আমি জিজ্ঞেস করলাম
– তোমারা আসবে কবে? বাহিরে নাকি ঝড় হচ্ছে?
মা বলল
– হ্যা! অনেক ঝড় হচ্ছে,, আচ্ছা শোন আজকে মনে হয় আমি আসতে পারবো না৷ এমনিতেই ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে আবার তোর আন্টিরও শরিরটা অনেক খারাপ আমার আজকে থাকতে হবে এখানে! আমি কালকে এসে পড়বো! তুই থাক একটু আজকে রাতে একা,, আর একা কই নিশান আছে না? ভয় পাস না! আর নিশানকে একটু দেখিস!!
– আচ্ছা! মা ঠিক আছে!
এটা বলে কল কেটে ভাইয়ার দিকে তাকালাম৷ ভাইয়া ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকাতে আমি বললাম
– আজকে নাকি মা আসতে পারবে না বাসায়!!
চলবে,,,,,,,
( ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ❤️)