my_unexpected_love
part_12
Arohi_Ayat
.
– আর যদি আমি বলি আমি তোমাকে ভালবাসি না!!?
আমি এই কথাটা বলতে ভাইয়া কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল
– তার মানে তুই কি সত্যি আমাকে ভালবাসিস না!
এইবার আমি কিছু বলার সাহস পেলাম না৷ ভাইয়া কিছুক্ষন চুপ করে থেকে তারপর আমাকে ছেরে দিয়ে বলল
– দেখ যা বলার পরিষ্কার করে বল,, নাহলে,,,,,,,!
– নাহলে?
ভাইয়া আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে তারপর বেড থেকে নিজের ফোনটা নিয়ে কানে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে মাইশাকে বলল
– মাইশা,, কি যেন বলছিলে তুমি?
আমি ভ্রু কুচকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি৷ ভাইয়া কি করতে চাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না৷ এমন কেন করছে ভাইয়া? আমার সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে৷ আর এখন ভাইয়া মাইশাকে কি বলবে বুঝলাম না? আমি শুধু ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি৷ ওইপাশ থেকে মাইশা কি বলছে শুনতে পারছি না কারণ ভাইয়া স্পিকার অফ করে দিয়েছে৷ ভাইয়া আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মাইশাকে আবার বলল
– তুমি আমাকে ভালবাসো মাইশা তাই না? তাহলে কালকে দেখা হচ্ছে প্যারিসে! আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে!
এটা বলে ভাইয়া কল কেটে আমাকে বলল
– তুই আমাকে ভালবাসিস না ফাইন! তাহলে কালকে থেকে তুই আর আমার লাইফে ডিস্টার্ব করতে পারবি না! না তোর এই চেহারা আমাকে দেখাবি আর না আমাকে আর দেখবি!!
এটা বলে ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে চলে গেলো রুম থেকে৷ আর এইদিকে আমার মাথা ঘুরে যাচ্ছে৷ কি হলো কিছুই বুঝলাম না ভাইয়া এমন কেন করলো? আমি কি করেছি? আমি ঘুরে দাঁড়িয়ে আছি৷ আমার শরিরে কেন যেন শক্তি নেই৷ এখন কি করা উচিৎ বুঝতে পারছি না৷ ঘুরে তাকানোর পর্যন্ত শক্তি পাচ্ছি না৷ চোখ দিয়ে পানি গরিয়ে পরছে৷ হঠাৎ আওয়াজ পেলাম বাহিরে বৃষ্টির মান বেরে গেছে আরও,, সাথে আমার কান্নার মানও বেরে গেলো৷ আমার এমন ভাবে কান্না আসছে যেন বুক ফেটে যাবে কিন্তু তবুও কেন যেন জোরে কান্না করতে পারছি না৷ কেন যেন সাহস হচ্ছে না গলা ছেরে জোরে কান্না করার৷ এক রাতেই আমার সাথে কি হয়ে গেলো বুঝা মুশকিল হয়ে গেছে৷ মাথায় কিছুই কাজ করছে না৷ আমি নিচে বসে পরলাম৷ বেডের সাথে হেলান দিয়ে হাটুতে মুখ গুজে কান্না করতে লাগলাম৷
”
চোখ খুলতে দেখলাম আমি নিচে বসে আছি সেই ভাবেই৷ সকাল হয়ে গেছে,, আমি ঘুমিয়ে পরিছিলাম কান্না করতে করতে কখন আমি নিজেও জানি না৷ চোখ খুলার পর মাথাটা এত ব্যাথা শুরু হয়েছে৷ আমি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছি চোখ বন্ধ করে৷ আমি উঠে ওয়াশ্রুমে গিয়ে মুখে পানি দিলাম,, চোখ গুলো লাল হয়ে আছে৷ আয়নার দিকে তাকিয়ে আছি এক দৃষ্টিতে৷ মনে করছি কালকে রাতের কথা৷ চোখে হালকা হালকা ভেসে আসছে ৷ কালকে রাতে ভাইয়া এমন রেগে ছিল কেন? আর এমন রিয়েক্ট করলো কেন? এখনো মাথায় আসছে এই কথাটা৷ ভাইয়া অনেক বেশি রিয়েক্ট করে ফেলেছে কালকে রাতে! কিছুই ত হয় নি এমন তাহলে আমার সাথে এমন করলো কেন? আর ভাইয়া বলেছিলো ভাইয়া আমাকে ভালবাসে?? আমি চোখ দুটো ঘসে আবার আয়নার দিকে তাকালাম৷ সত্যি ভাইয়া এই কথাটা বলেছিলো যে ভাইয়া আমাকে ভালবাসে? নাকি ভাইয়ার কথার মানে অন্য কিছু ছিল? আমি অনেক কনফিউশান এ আছি কারণ ভাইয়া এই কথাটা এমন ভাবে বলেছে যে আমার তখন মাথায় কিছু ঢুকেই নাই৷ একবার বলেছিলো যে আমাকে ভালবাসে কিন্তু বার বার একটা কথাই বলছিলো আমার নাকি সব দোষ! আমার জন্য নাকি ভাইয়া এমন পাগল হয়েছে কিন্তু আমি কি করেছি? আর আমাকে বার বার বলছিলো যেন আমি বলি যে আমি ভাইয়াকে ভালবাসি,, কিন্তু আমি এই কথাটা কেন বলতাম? আমি কি ভালবাসি নাকি ভাইয়াকে?? আর আমি যখন না বলে দিলাম যে আমি এই কথাটা বলবো না তখন ভাইয়া এমন ভাবে রিয়েক্ট করলো যে,,,,,,,! মুখে আরেকবার পানি ছিটেয়ে বেরিয়ে এলাম৷ মুখ মুছে নিচে গেলাম৷ ভাইয়ার রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় একটু উকি দিলাম কিন্তু রুম ত বন্ধ৷ আমি নিচে যেতে দেখলাম মা নাস্তা রেডি করছে৷ আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে মাকে বললাম
– মা! তুমি কবে এলে?
মা বলল
– সকালেই এসে পরেছি! আয় আগে খেতে বস!
আমি টেবিলে বসতে বসতে বললাম
– ওহ! ভাইয়া কি আজকেও সকাল সকাল নাস্তা করেই চলে গেছে নিজের মিটিংয়ে??
মা বলল
– মানে কি? তুই এটা জিজ্ঞেস করছিস কেন? তুই জানিস না নিশান চলে গেছে?
সাথে সাথে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো৷ আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম
– কি???? চলে গেছে? কবে?
মা ভ্রু কুচকে বলল
– আমি ত নিজেও জানি না! আমি ত এসে দেখি নিশান নেই,, আমি ওকে কল করতে ও বলল ও নাকি সকালেই চলে গেছে? আর তুই কি কিছু জানিস না? আমি ভেবেছি তোকে বলে গেছে!!!
আমার মাথাটা এখন চক্কর খাচ্ছে যেন আমি নাগর দোলায় বসে আছি৷ মাথায় জোরে জোরে দুইটা বারি দিলাম হাত দিয়ে যেন আমার জ্ঞান ফিরে আসে৷ আমার সাথে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না মনে হচ্ছে স্বপনের জগতে আমি!! আমি চেয়ারে বসে পরলাম৷ কিছুক্ষন চুপ করে বসে থেকে ভাবছি ভাইয়া কি সত্যিই চলে গেছে? কালকে রাতে ভাইয়া মাইশার সাথে কথা বলছিলো যে ভাইয়া মাইশার সাথে প্যারিসে দেখা করবে? আমি চোখ বড় বড় করে ফেললাম এটা ভেবে তার মানে কালকে রাতে ভাইয়া মাইশার প্রপোসাল এক্সেপ্ট করে ফেলেছে?? আর আমি না বলেছি এই জন্য!! ভাইয়া বলেছিলো আমাদের নাকি আর কখনো দেখা হবে না!!! কান্না এসে পরছে৷ অনেক কান্না এসে পরছে এটা ভেবেই৷ সামনে মা আছে কান্না করা যাবে না৷ না না না নিশা স্টপ! আর একটু হলেই চোখ দিয়ে পানি পরে যাবে অলরেডি চোখ টলটল করছে৷ আমি তারাতাড়ি ঠোট কামরে ধরলাম যেন কান্না না আসে! নিজের রুমে দৌড়ে গিয়ে ফোন নিয়ে ভাইয়ার নাম্বারে কল দিলাম৷ ভাইয়ার ফোন সুইচড অফ! এখন কি করবো আমি? চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছে৷ আমি মাইশাকেই কল করলাম৷ মাইশা কল রিসিভ করলো৷ আমি তারাতাড়ি জিজ্ঞেস করলাম
– হ্যালো! মাইশা আপু! ভাইয়া কি তোমার সাথে?
– নিশান ত আমার সাথে না!
– কোথায় তুমি?
– আমি ত প্লেনে আছি!
– তুমি কি জানো ভাইয়া কোথায়? আর ভাইয়ার ফ্লাইট কবে?
– হ্যা,,নিশানের ফ্লাইট ত বিকেল বেলা ৫টার সময়! কিন্তু কেন?
– না,,, ওইযে ভাইয়ার একটা ইম্পর্ট্যান্ট জিনিস রেখে চলে গেছে! এইবার নিতে না পারলে পরে আর নিতে পারবে না!!
– ওহ আচ্ছা!
কল কেটে চোখের পানি মুছে ভাবছি,, ভাইয়ার ফ্লাইট যদি বিকেল বেলা হয় তাহলে ভাইয়া এখন কোথায় গেছে? ভাইয়া যাওয়ার আগে আমার ভাইয়ার সাথে কথা বলতে হবে৷ ভাইয়া এখন কোথায় যেতে পারে? আমি বসে বসে ভাবছি৷ ফোন নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে মাকে বললাম
– মা আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি এসে পরবো!!
এটা বলে ব্যাগ নিয়ে বের হলাম৷ বাসা থেকে বের হয়ে একটা রিকশা নিয়ে প্রথমে সেই রেস্টুরেন্টে গেলাম যেখানে ভাইয়া সবসময় মিটিং করে৷ রেস্টুরেন্টের ভিতিরে গিয়ে একটা ওয়েটারকে জিজ্ঞেস করতে ওয়েটার বলল আজকে নিশান স্যার এখানে আসে নি! আমি মন খারাপ করে সেখান থেকে বের হয়ে গেলাম৷ আমি এখন কোথায় খুজবো ভাইয়াকে? রেস্টুরেন্টের বাহিরে দাঁড়িয়ে এটা ভাবছি৷ ফোন অন করে দেখলাম এখন মাত্র ১১টা বাজে ভাইয়ার ফ্লাইট আরো ৬ঘন্টা বাকি আছে৷ ভাইয়া এই ৫ঘন্টা কোথায় যাবে? ভাইয়ার ফোনে বার বার ট্রায় করছি কিন্তু ফোন বন্ধ বলছে৷ কি মুশকিলে পরেছি৷ বড় একটা নিশ্বাস ছেরে একটা রিকশা নিয়ে আমার ফ্রেন্ড মারিয়ার বাসায় গেলাম৷ ভাইয়া আর কোথায় যেতে পারে আমার জানা নেই৷ আমি কি করবো এখন? এক মাত্র মারিয়া আছে যে আমাকে কিছু বুদ্ধি নাহয় একটু স্বান্তনা দিতে পারবে!
”
মারিয়ার সাথে বসে আছি৷ আমার মনটা অনেক খারাপ৷ বার বার ঘরির দিকে তাকাচ্ছি৷ অলরেডি ১২টা বেজে গেছে আর পাচ ঘন্টা পর ভাইয়ার ফ্লাইট! এই পাচ ঘন্টায় আমি ভাইয়াকে কোথায় খুজবো? মারিয়াকে এক মাত্র আমি আমার মনের কথা সব বলি! মারিয়াও শুনে অনেক অবাক হয়েছে আর চিন্তায় পরেছে! আমি মারিয়াকে বললাম
– প্লিজ ইয়ার কিছু বল আমি কি করবো? মনে হচ্ছে যেন আর পাচ ঘন্টা পর আমার দম বন্ধ হয়ে যাবে! এই পাচ ঘন্টায় আমার কিছু করতে হবে! আবার ভাইয়ার ফোনও বন্ধ! জিবনে প্রথম আমার মাথায় এত টেন্সন! আমি নিজেও জানি না কি করবো অসহায় হয়ে গেছি!
মারিয়া বলল
– তুই ত জানিস না যে ভাইয়া কোথায় যেতে পারে তাহলে আর কিছু করার নেই!! যদি জানতি তাহলেও খুজা পসিবল ছিল! কিন্তু,,,,,,হু! আমিও বুঝতে পারছি না কি করার! একটা রাস্তাই আছে যদি আমরা ফ্লাইটের আগেই এয়ারপোর্টে যেতে পারি তাহলে হয়তো যদি ভাইয়াকে পেয়ে যাই?
আমি বললাম
– আমরা দুইজন এয়ারপোর্টে যাবো? তাও এয়ারপোর্টে গিয়ে ভাইয়াকে কোথায় খুজবো? যদি না পাই?
– না চাইলে চেষ্টা করতে পারি! আর তুই যদি না চাস তাহলে আর কিছুই করার নেই আর কোনো উপায়ও নেই! ভাইয়া চলে যাবে আর তুই এখানে একা বসে থাকবি!
আমি চুপ করে বসে আছি৷ কি করবো বুঝতে পারছি না৷ আমি একটু ভেবে বললাম
– চল আমি যাবো এয়ারপোর্টে!
”
আমি আর মারিয়া বের হয়েছি এয়ারপোর্টে যাওয়ার উদ্দেশ্যে! আমার অনেক ভয় করছে যদি ভাইয়াকে না পাই!! অনেক চিন্তা আসছে মাথায়! এয়ারপোর্টে পৌছাতে আমি আর মারিয়া ভাইয়াকে খুজতে লাগলাম৷ আমি এখনো বার বার ভাইয়ার ফোনে কল করছি কিন্তু বার বার বন্ধই বলছে৷ আমি এটাও জানি না এত বড় জায়গায় এত মানুষের ভিরে কিভাবে ভাইয়াকে খুজবো?? ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখলাম এখন ৪:৩৮বাজে আর কিছুক্ষন পরেই ফ্লাইট! পাগলের মত অনেক খুজলাম এইদিক ওইদিক ভাইয়াকে কিন্তু ভাইয়ার একটু ঘ্রাণও পেলাম না৷ এখন আর পারছি না কান্না এসে পরছে৷ ইচ্ছে করছে এই এয়ারপোর্টে মাঝখানেই বসে পরি আর গলা ফাটিয়ে কান্না করে দেই! আর মাত্র ১০ মিনিট বাকি ফ্লাইট ছারতে! এখন মনে হচ্ছে না যে আর সম্ভব ভাইয়াকে পাওয়া! আমি দাঁড়িয়ে পরলাম৷ চোখে পানি টলটল করছে৷ মারিয়া বলল
– ওইযে দেখ ওইদিকে আয়!
আমি মারিয়ার হাত ধরে বললাম
– দাড়া! চল বাসায় চলে যাই! কারণ আর পাওয়া সম্ভব না ভাইয়াকে! ভাইয়া নিশ্চয়ই প্লেনে উঠে গেছে!
এটা বলে সাথে সাথে কান্না করে দিলাম৷ মারিয়া আমার হাত ধরে বলল
– নিশা!!
চলবে,,,,
( ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ❤️)