Crush Villain,পার্ট ২৪[অতিরিক্ত অংশ]

Crush Villain,পার্ট ২৪[অতিরিক্ত অংশ]
লাবিবা ওয়াহিদ

রুহি আর তিনয় পাশাপাশি হাঁটছে। এতোদিনে দুজনের মাখে বেশ ভালো একটা সম্পর্ক গড়েছে যার কোনো নামই এখন অব্দি প্রকাশ পায়নি। তিনয় বা রুহি জানেনা তাদের মধ্যে ঠিক কোন সম্পর্কটা গড়ে উঠেছে তবে আজ সে রুহিকে না জানিয়েই একটা কাজ করে ফেলেছে। তা অবশ্য রুহিকে জানাবেও না কারণ কাজটা রুহিকে পরীক্ষা করা। রুহি প্রায় তাদের গলির আশেপাশে আসতেই তিনয়কে থামিয়ে দিয়ে বলে,”আমি যেতে পারবো তুমি এখন চলে যাও।”

– না আমি এখানে আছি তুমি যাও।

রুহি মুচকি হেসে গলিতে ঢুকে গেলো। আর তিনয় তার মাকে কল দিলো। একবার রিং হতেই তিনি রিসিভ করে বলে,”হ্যাঁ তিনয় বল!”

– চট্টগ্রাম গেছো?

– হ্যাঁ কখনই তো এসেছি আর এইতো রুহিদের বাসা থেকে কথা বলে বেরোচ্ছি।

– রুহির বাবা-মা মেনেছে?

– মানবে না আবার! আমাদের ছেলে কোন দিক দিয়ে কম হুম? অবশ্যই রাজি হয়েছে।

তিনয় হাসলো তারপর মা মুখ গোমড়া করে বলে,”এখন রুহি মানবে কি না কে জানে!”

– চিন্তা করিও না আমি আছি কি করতে।

– হ্যাঁ তাইতো।

দুজন একসাথে হেসে ফেলে।

রুহি বাসায় আসার পরে সানিয়ার রুমে যায় এবং দেখে সানিয়া যেনো কিছু খুবই মনোযোগ দিয়ে ভাবছে। রুহি সানিয়ার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে বলে,”কিরে আপু কি ভাবছিস?”

– না ভাবছি ওনাকে জ্যাকেট টা কি করে ফেরত দিবো আজ তো ভার্সিটি অফ ছিলো।

– তো ফোন করে আলাদা দেখা কর!

– পাগল না পেট খারাপ যে ওনার সাথে দেখা করতে যাবো?

– তাহলে কালকেই ভার্সিটিতে দিয়ে দিস।

– আচ্ছা।

রাতে,,,

তিনয় ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে এমন সময়ই তার ফোনের রিং বেজে উঠে এবং দেখে রুহির কল। তিনয় হেসে ফোন রিসিভ করে বলে,”হ্যালো রুহি? হ্যাঁ বলো, হঠাৎ এতো রাতে?”

রুহি নাক টেনে কাঁপা সুরে বলে,”বাবা মা আমার বিয়ে ঠিক করেছে তিনয়!”

– ও কংগ্রেস! তা এ নিয়ে এমন কাঁদছো কেন?(ভ্রু কুচকে)

– তো কাঁদবোনা? মা-বাবা আমার পারমিশন ছাড়া কেন বিয়ে ঠিক করবে?

– আচ্ছা বুঝলাম তোমাকে জানানো উচিত ছিলো এখন তাদের বুঝিয়ে বলো।

– অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু তাদের এক কথা এমন ভালো ছেলে তা কোথাও খুঁজে পাবে না।

– ওহ তো কি করার। তো বিয়ে করে ফেলো।

– আমি পারবো না তিনয়!(কাঁদতে কাঁদতে)

– কেন পারবে না? আমি যতোটুকু জানি তোমার কোনো বয়ফ্রেন্ড বা রিলেশন নাই তাহলে এখানে আপত্তি কোথায়?

এবার রুহি চরম রেগে গেলো এবং চেঁচিয়ে বলতে লাগলো,” ওই কুত্তা হারামি তোরে কতোক্ষণ ধরে একটা কথা বুঝানের চেষ্টা করতাসি আর তুই বিয়া করতে কস? তুই কি বুঝোস না তোরে আমি ভালোবাসি তবুও ক্যান বারবার বিয়ে বিয়ে করে প্যানপ্যান করতাছিস! আমি শুধু তোর বউ হমু আর কারো না। যদি আমি তোর বউ হইতে না পারি হয় আমি মরমু আর না তুই! কানে ছিদ্র কইরা শুইনা নে! তোরে ছাড়া আমি কাউরে বিয়া করুম না!”

বলেই খট করে ফোন কেটে দিলো। আর তিনয় হা করে সামনের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে রইলো। যা ভেবেছিলো তার দ্বিগুণ হয়ে তার কাছে ফিরে এসেছে ভাবতেই তিনয় মুচকি হাসলো। রুহি তো আর জানেনা তার বিয়ে ঠিক কার সাথে ঠিক করা!

– আপু ঘুমিয়ে গেছিস?

ফোন ঘাটছিলাম এমন সময়ই জোহানের কন্ঠ শুনে দরজার দিকে তাকালাম। জোহান বালিশ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

– না ঘুমাইনি ভেতরে আয়।

জোহান ভেতরে এসে আমার পাশে শুয়ে পরলো। আমি অবাক হয়ে বলি,”কিরে তুই আমার পাশে এসে শুয়েছিস কেন?”

– তো কি করবো ওই ঘরে ভয় লাগে।

– কেন?(ভ্রু কুচকে)

– কানে কারো পাগলের মতো কান্নার আওয়াজ আসে। এই রাতে কে কাঁদে?

আমি ভাবলাম জোহান আর রুহির ঘরের মাঝখানে জোহানের ঘর। আমি তো কাঁদছি না এর মানে রুহি কাঁদছে? আর এখন যে কাঁদছে এমন নয় সারাদিন লাগিয়ে দরজা বন্ধ করে কেঁদেই চলেছে তবে সেই শব্দ বাইরে পৌঁছায়নি। হয়তো তিনয় কিছু বলেছে তাই হয়তো এভাবে কাঁদছে যার ফলে জোহান ভয়ে আমার ঘরে চলে আসছে। হ্যাঁ আমি তিনয় ভাইয়ের প্লেন সংযোগ আছি। আমি-ই তাকে রুহির বাড়ির এড্রেস দিয়েছিলাম। আমার ধ্যান ভাঙে জোহানের কথায়।

– রুহি আপুর বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো তোর টা কবে খাবো আপু? কতোদিন বিয়ে খাইনা।(মুখ গোমড়া করে)

আমি চোখ বড় করে তাকালাম জোহানের দিকে। তারপর ফিক করে হেসে বলি,”আমার বিয়ে এ জীবনে খেতে পারবি না!”

জোহান ভেংচি কেটে বলে,”জ্বী না আমি জানি তোর বিয়ে খুব শীঘ্রই হবে!”

– তা দেখা যাবে এখন ঘুমা।

দুই ভাইবোন একসাথে ঘুমিয়ে পরে। কয়েক সপ্তাহ এভাবেই কেটে যায়। সানিয়া আয়াফকে জ্যাকেট টা ফিরিয়ে দেয় এবং তিনয়ও রুহিকে সত্যিটা বলে দেয় যার ফলে রুহি রাগ করে ১সপ্তাহ কথা বলেনি। তিনয় আর সানিয়া মিলে ওকে বুঝিয়ে নেয়। তারপর দুই ফেমিলি মিলে কথা হলো যে দুইজনের স্টাডি শেষ হলেই বিয়ে হবে।

একদিন সন্ধ্যায় পড়ছিলাম হঠাৎ রুহি আর আলিজা এসে আমার পিছে দাঁড়ায়। কারো উপস্থিতি টের পেতেই পিছে ফিরে তাকালাম এবং ওদের দেখে ভ্রু কুচকালাম।

– এভাবে দাঁত কেলিয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেন বলতো? মতলব তো ভালো ঠেকছে না।

– আজিব এখানে মতলব আসলো কই থেকে হুম? যাইহোক ঘুরিয়ে পেচিয়ে না বলি শুন আমরা চল বাইরে থেকে ঘুরে আসি।

– আম্মু আব্বুকে কে সামলাবে?

– আমরা অলরেডি তাদের বুঝিয়ে এসেছি।

– তো?

– আর কিসের তো? চল ঘুরে আসি।

– রোজা কোথায়?

– সে আসবে না তার বাবা আসতে দিবে না।

– ওহ আচ্ছা সমস্যা নেই চল।

তারপর আমি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পরি। আমরা তিনজন মিলে আগে কিছু শপিং করলাম, খেলাম তারপর সিনেমা হলে গেলাম আর মুভি দেখলাম। মুভি দেখতে দেখতে রাত ১১ঃ৪৫মিনিট হয়ে গেলো। সত্যি অবাক কান্ড! কিন্তু সবচেয়ে বড় ব্যাপার এতো রাত অব্দি বাসার বাইরে তবুও কেন তার বাবা মা একবারও ফোন দিলো না?

– কি রে কি ভাবছিস?

– হুম… না কিছু না।

হঠাৎ-ই আমাদের সামনে একটা গাড়ি এসে থামলো। গ্লাস খুলতেই দেখলাম নীল ভাইয়া। নীল ভাইয়া আমাদের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,”কি মহামান্য বউ এবং শালীগণ! আসো লং ড্রাইভে যাই।”

– না ভাইয়া এমনিতেই লেট হয়ে গেছে বাসায় না গেলে সমস্যা হবে।

পাশ থেকে আলিজা বলে উঠে,”আরে কিছুই হবে না। আন্টিকে বলে দিসি আজ তুই আর রুহি আমার বাসাতেই থাকবে সো নো টেনশন।”

– বাট..

– নো মোর এক্সকিউজ শালিকা চলো কথা কথা বাড়িয়ো না।

কি করার উঠলাম গাড়িতে। ১০মিনিটের মাঝেই একটা অদ্ভুত ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে আসলাম। জায়গাটা খুব সুন্দর! গাড়ি থেকে নামতেই আলিজা আর রুহি মিলে ডুপ্লেক্স বাড়িতে নিয়ে গেলো টেনে। ভেতরটা দেখে আরও অবাক। মরিচবাতী এবং বেগুনি, সাদা কমবিনেশনে সাজানো বাড়িটা। কোনো দিকে না তাকিয়ে আমাকে একটা রুমে নিয়ে গেলো যেই রুমটায় একটা ইয়া বড় বেগুনি কালারের গাউন রয়েছে। ঝটপট কোনো কথা বলতে না দিয়ে আমাকে এই গাউনটা পরিয়ে দিলো। তারপর টেনেটুনে আমার রুম থেকে বের করলো। আমি এতো প্রশ্নের উপর প্রশ্ন করেই চলেছি তবুও কারো উত্তর দেয়ার সময় নেই। রুম থেকে বের হতেই ডং ডং শব্দ বেজে উঠলো আর সাথে সাথেই লোড শেডিং হলো। আমি অন্ধকারে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। যদি হাঁটছে যাই তাহলে কোন জিনিসের সাথে পেচিয়ে পরি কে জানে, তার উপর এই ভারী গাউন! উফফ বিরক্তিকর। হঠাৎ লাইট চলে এলো আর সাথে সাথেই সবাই জোরে চেঁচিয়ে হাত তালি দিতে দিতে বলে,”হ্যাপি বার্থডে টু ইউ, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ, হ্যাপি বার্থডে টু ডিয়ার সানিয়া, হ্যা..পি বার্থডে টু ইউ!”

বলেই সকলে আমাকে উইশ করা শেষ করলো। এদিকে আমি ভুলেই গেছি আমার জম্মদিনের কথা হাউ ফানি! কোনোবছর ভুলিনা এই বছর কেন ভুললাম বুঝে উঠতে পারছি না। সবাই দুপাশে সাইড হয়ে দাঁড়ালো এবং মাঝে একটা রাস্তা তৈরি হলো। ওই রাস্তা দিয়ে আয়াফ হাতে গিটার নিয়ে গান গাইতে গাইতে আসে,
“Tu itni khoobsurat hai
Fida deedaar pe tere
Muqammal ishq ho mera
Zara sa pyaar toh de de

Falak kadamon pe aa jhuke
Haseen lamhaat woh de de
Tere sang bheeg jaaun main
Kabhi barsaat woh de de
Tere bina jeena pade
Woh pal mujhe naa de

Tu itni khoobsurat hai
Fida deedaar pe tere
Tu hi shaamil raha duaa mein meri
Naam tera rahaa zubaan pe meri
Zikr tera fikr teri har ghadi
dil mein mere…♪♪♪”

সবাই মিলে কড়াতালি দিলো। আয়াফ মুচকি হেসে একটা রিং নিয়ে সানিয়ার সামনে হাটু গেড়ে বসে। সানিয়া সব শুধু হা করে দেখছে। আয়াফ সানিয়ার দিকে রিংটা এগিয়ে দিয়ে তার ল্যাকচার শুরু করতে যাবে ওমনি সানিয়া খপ করে রিংটা নিয়ে বলে,”আমি রাজি!”

আয়াফসহ সবাই শকড! আয়াফ তো এখনো কিছু বলা শুরুই করলো না তাহলে সানিয়া কিসের সম্মতি দিলো? আয়াফ অবাক হয়ে বলে,”রাজি মানে? কিসের জন্য রাজি?”

– বিয়ে অথবা ভালোবাসা! কোনোটা নিয়ে নিশ্চয়ই তো প্রপোজাল দিতেন নাকি যাইহোক আমি রাজি আছি। আগে ছিলেন ক্রাশ ভিলেন এখন হবেন ক্রাশ যখন বর আহা আহা!!

সবাই চরমভাবে বোকা বনে গেলো। আয়াফের চেহারা তো দেখার মতো ছিলো!

চলবে!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here