Crush Villain,পর্ব ২৭,২৮
লাবিবা ওয়াহিদ
পর্ব ২৭
মধ্যরাত।অন্ধকারের চাদরে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছে প্রকৃতি। রাত্রিজাগা পাখি এদিক সেদিক উড়ে বেড়াচ্ছে। চাঁদটা যেনো লজ্জা পেয়ে মেঘগুলোর আড়ালে লুকিয়ে আছে। আবছা আবছা কুয়াশা আছে সাথে রয়েছে চারপাশে শীতল হাওয়া। দুপাশে গাছপালা এবং তার মাঝে হাইওয়ে রোড। হাইওয়ে রোড কে আলোকিত করেছে রাস্তার ধারের একেকটা ল্যাম্পপোস্ট।লোকজন নেই বললেই চলে। চারপাশে শুনশান নিরবতা! শুধু ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ছাড়া দূর-দূরান্তে আর কোনো শব্দ নেই। সেই হাইওয়েতেই চলে যাচ্ছে দুইজন যুবক-যুবতী। যুবতী বিয়ের কনের সাজে রয়েছে যেনো বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়ে প্রেমিকের সাথে রাত্রি ভ্রমণে বেরিয়েছে। মেয়েটি ভয় ভয় চোখে চারপাশটা দেখছে। গাছপালা গুলো তার কাছে অনেকটা ভূতের মতো লাগছে। সামনের প্রেমিক হেসে বলে,”উফফ সানি তুমিও না! বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়েছো আর এখন এই সামান্যতে ভয়ে মরে যাচ্ছো?”
– তুমি চুপ করো! তোমার লজিক তোমার পকেটে ঢুকিয়ে রাখো আমাকে শোনানো লাগবে না!
– ওহ রিয়েলি?(হেসে) তাহলে চলো তোমায় এই জঙ্গলে রেখে আমি চলে যাই।
সানিয়া পেছন থেকে আয়াফকে ঝাপটে ধরে রাগি কন্ঠে বলে,”এক কিলে তোমার লাইফ হ্যাল করে দিবো! আ…কিইইইইল!!!!”
আয়াফ মুখ গোমড়া করে বলে,”মায়ের জ্বালায় বউয়ের কাছে এই আকিল নামটা এভাবে শোনা লাগছে!”
সানিয়া ফিক করে হেসে দেয় আর আয়াফ গাল গুলিয়ে বাইক চালাচ্ছে। সানিয়া তা বুঝতে পেরে পরম আবেশে আয়াফকে জড়িয়ে ধরে পিঠে মাথা দিয়ে চোখ বুজে থাকে। মুহূর্তে-ই আয়াফের রাগ গলে গেলো তবুও বুঝতে দিলো না। সানিয়া বলে,”এখন আমরা কোথায় যাচ্ছি?”
– আমার বাসায়! মা বাবা কাজি নিয়ে বসে আছে নাকি এমনটাই জানালো!
– ওরিম্মা! আমার শাশুড়ী শশুড় তো দেখছি অনেক ফাস্ট!
– তা তাদের পুত্রবধূ এতো ফাস্ট হলে তারা কেন হবে না?
সানিয়া হেসে দেয়। শহরের কাছাকাছি আসতেই হঠাৎ দূরে দেখতে পায় একটা টঙ। তআ দেখতে পেতেই সানিয়া বলে উঠে,”আয়াফ ওই টঙ এ চলো গরম গরম চা খাবো!”
– হোয়াট! এই ফুটপাতের আনহাইজিনিক চা খাবা? এসব খাওয়ার দরকার নেই বাসায় চলো মায়ের হাতের চা তৃওতি করে খেয়ো!
– না আমি টঙের চা-ই খাবো! নিকুচি করেছি তোমার আনহাইজিনিকের দাদার নাম!
– সে তুমি যাই বলো না কেন আমি তোমাকে খেতে দেবো না।
সানিয়া গাল ফুলিয়ে বলে,”আপনি যাবেন নাকি আমি বাইক থেকে লাফ দিবো!”
– এই না, না!
– তাহলে যাবেন কি না?
– ওকে যাচ্ছি।
বলেই বাইক টঙ এর সামক্নে পার্ক করলো। তারপর আয়াফ চলে গেলো চা আনতে। স্নাইয়া চেঁচিয়ে বলে,”এইযে শুনছেন?”
আয়াফ সানিয়ার দিকে ফিরতেই সানিয়া আবার চেঁচিয়ে বলে,”দুই কাপ আনবেন!”
সানিয়ার কথামতো আয়াফ দুইকাপই আনলো। সানিয়া এক কাপ হাতে নিয়ে তৃপ্তি করে খেতে লাগে আর আয়াফ কেমন মুখ করে তাকিয়ে আছে সানিয়ার দিকে। সানিয়া আয়াফকে খেয়াল করতেই বলে,”দাঁড়িয়ে আছেন কেন খেয়ে নিন জলদি করে গরম গরম নয়তো মজা লাগবে না!”
– কিহ আমি খা…(সানিয়া চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই) আচ্ছা আচ্ছা খাচ্ছি।
বলেই এক চুমুক দিলো আয়াফ। আয়াফ নিজেই অবাক হয়ে গেলো এমন টেস্ট পেয়ে। আয়াফ এক ঢোকেই পুরোটা খেয়ে ফেলে। সানিয়া হেসে হেসে বলে,”কি মজা পেলেন তো?”
– হুম অনেকটা। অনেক বড় অভিজ্ঞতা হলো। যাইহোক আর খাবা?
– নাহ আপনি কাপগুলো দিয়ে আসুন।
– আচ্ছা।
বলেই আয়াফ চলে গেলো। ফিরে এসে বাইক স্টার্ট দেয়। এভাবেই খুনশুটি করতে করতে দুজন প্রায় রাত ১ঃ৪৭ মিনিটে আয়াফের বাসায় পৌঁছায়। সানিয়া ভেতরে গিয়ে দেখে আরাভ জুরাইজ পায়চারি করছে। আয়াফের মা এক সিঙ্গেল সোফায় নিশি আপু আর রোজার সাথে বসে আছে আর কাজী সাহেব ঘুমে ঢুলছে। মেইন গেইটের সামনে নীল, যাহির আর তিনয় দাঁড়িয়ে ছিলো। আয়াফকে পেতেই একসাথে এসেছে। আরাভ জুরাইজের হঠাৎ দরজার দিকে চোখ যেতেই বলে,”আরে ওইতো ওরা চলে এসেছে।”
আরাভ জুরাইজের কথা সকলের ঘুম, চিন্তা ছুটে যায় এবং সাথে সাথেই দরজার দিকে তাকালো। আয়াফ তাড়া দিয়ে বলে,”ডেড এতো সময় নেই তাড়াতাড়ি যা ব্যবস্থা করার করো অনেক টায়ার্ড আমরা।”
– হ্যাঁ তাতো বটেই। তোরা আয় বস আর কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করুন।
আরাভ জুরাইজের কথা শুনতেই সে বিয়ে পড়ানো শুরু করে আর আয়াফ সানিয়া কাজির অপজিটে বসে। অবশেষে বিয়ে সম্পন্ন হলো সকলে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠে। তবে সানিয়া কবুল বলতে কিছুটা দেরি করেছিলো। বিয়ে শেষ হতেই আয়াফের মা নিজহাতে খুবই যত্ন করে সানিয়াকে আর আয়াফকে খাইয়ে দিলো। সানিয়া মুগ্ধ হয়ে তার শাশুড়ীকে দেখছে। এত্তো ভালো মানুষ আদৌ কি আছে?
খাওয়ার পর্ব শেষ হতেই আয়াফের মা বলে উঠে,”আজ আয়াফ আর সানিয়া আলাদা ঘরে ঘুমাক। ওর পরিবার থেকে মতামত নিয়েই একসাথে থাকবে।”
এই কথায় আয়াফ এবং সানিয়া উভয়ই সম্মতি দিলো। তারপর আয়াফ নিজের ঘরে চলে গেলো আর সানিয়া নিশির সাথে একটা রুমে চলে গেলো। আজ নিশির সাথেই সানিয়া ঘুমোবে। অনেকদিন পর শান্তির ঘুম দিবে সে।
পরেরদিন,,
মাহিদের মা জুঁই গালে হাত দিয়ে শোকাহত হয়ে বসে আছে। দূরে নিলুফা তার ছোট বোনের সাথে স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।অন্যপাশের এক সোফায় সানিয়ার বাবা চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা লাগিয়ে পত্রিকা পরছে। তার ভাব দেখে মনে হচ্ছে যেন কিছুই হয়নি সবটা স্বাভাবিক। নানুও চুপ করে তার বড় ছেলের বউয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। রুহি আলিজা ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে ড্রয়িং রুমে এসে সবার কান্ড দেখছে। আত্নীয়-স্বজন কেউ-ই নেই একমাত্র ওরা বাদে। কিছুক্ষণ পর নতুন বউয়ের মতো সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসে মুনতাহা। ঠোঁটে লেগে আছে তার এক তৃপ্তিময় হাসি। জুঁইয়ের গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে মুনতাহার হাসি-খুশি মুখ দেখে।মুনতাহা মিষ্টি হেসে বলে,”তা মা নাস্তার ব্যবস্থা হয়েছে নাকি আমি নাস্তা বানাবো!”
জুঁই রেগে চেঁচিয়ে বলে,”কোন মুখে তুমি আমায় মা বলো হ্যাঁ?”
– আমার মুখে।(মজা নিয়ে)
– বেয়াদব মেয়ে একটা! কই থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসলো আমার ছেলের জীবনে খবরদার আমাকে কখনো মা বলবা না নয়তো তোমার ঘাড়ে মামলা চাপিয়ে দিবো!
– হাহা শাসুমা! পুরান আমলের ডায়লগ দিলে হয়? আর আপনি আমার ঘাড়ে মামলা নয় আমি আপনার ঘাড়ে মামলা দিবো যদি শাশুড়ী হয়ে বউ নির্যাতন করতে আসেন। জানেন তো আমার বাবা একজন পুলিশ অফিসার?(ডেবিল হাসি দিয়ে)
জুঁই আবার চুপসে গেলো। মনের ঝাল এই মুনতাহার উপর ঝাড়তে পারেনা এইটাই তার বড় কষ্ট। গতকাল বিয়ে হওয়ার পর থেকেই মুনতাহা তাকে এই থ্রেডের উপরেই রাখছে। তাই না পারছে সইতে না পারছে কিছু বলতে। মুনতাহা হেসে নিলুফার দিকে এগিয়ে বলে,”ফুপি আমি কি নাস্তা বানাবো?”
সানিয়ার মা তার ভাবির দিকে একপলক তাকিয়ে বলে,”না নাস্তা আগেই বানিয়েছি তুমি এক কাজ করো মাহিদকে ডেকে আনো ততোক্ষণে আমি খাবার ডাইনিং এ সাজাচ্ছি।”
– আচ্ছা ফুপি।
বলেই মুনতাহা তার শাশুড়ীর দিকে একপলক তাকায়। তার শাশুড়ী তার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে দেখে মুনতাহা মুচকি হেসে চোখ টিপ মারলো। তারপর উপরে চলে গেলো। দূরে দাঁড়িয়ে রুহি আর আলিজা মুখ টিপে হাসছে।
নিলুফা খাবার বাড়ছে তখনই জুঁই রেগে বলে,”তোমার মেয়ে পালিয়ে গেছে সেদিকে চিন্তা না করে তুমি এই মেয়েকে নিয়ে পরে আছো? সামান্য খোঁজ কেন নিচ্ছো না যে মেয়ে কোথায় আছে?”
নিলুফা কিছু বললো না কারণ সে অনেকটা জানে মুনতাহা তাকে অনেক আপডেট দিয়েছে তাই এই মুহূর্তে তার মেয়ের চিন্তা নেই। সে মনে করে পালিয়েছে বেশ করেছে। এটা শুধু নিলুফার ভাবনা নয় উপস্থিত সবার ভাবনা একমাত্র জুঁই বাদে। নিলুফা কিছু বলছে না দেখে জুঁই আবার বলে,”আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি নিলু!”
– আমার মেয়ের উপর আমার ভরসা আছে ঠিক ফিরে আসবে তাই আপাতত ওকে নিয়ে আমার চিন্তা নেই।
– বিয়ে টা যে তোমার মেয়ে করলো না, এখন কি তুমি ওরে ঘরে জায়গা দিবা?
– অবশ্যই না দেয়ার কি আছে?
– আমার মেয়ে হলে তো আমি ওকে মেরে মাটিতে পুতে রাখতাম আর তুমি কি না গর্ব করে বলছো ওকে বাসায় রাখবে?
– আপনার আর আমার মাঝে এইটুকুই তফাৎ। আল্লাহ হয়তো এই কারণেই আপনাকে মেয়ে দেননি কিন্তু আমাকে দিয়েছে।
– অপমান করছো আমায়?
– যা ইচ্ছা ভাবতে পারেন। তবে কন্যাসন্তান আল্লাহ’র রহমত। আর আল্লাহ’র রহমত মাটিতে পুতে রাখার মতো গাছের আগাছা না। আপনি নিজেও একজন মেয়ে তাই ভেবেচিন্তে কথা বলবেন। আপনারা জোর করেছেন দেখেই পালিয়েছে।
– ওওও আচ্ছা তার মানে পালাতে তুমি সাহায্য করেছো তাইনা?
– না তা করিনি তবে মনে হচ্ছে আমি করলে দ্বিগুণ স্বস্তি পেতাম! এখন আল্লাহর কাছে শুকুরিয়া যে দুটো ভাই-বোনের পবিত্র সম্পর্ক নষ্ট করেন নি।
– নিলুফা!!(উঠে দাঁড়িয়ে)
জুঁই আরও কিছু বলতে নিলেও পারলো না কারণ মাহিদ আর মুনতাহা ততোক্ষণে চলে এসেছিলো। জুঁই শুধু এইটুকু-ই রাগি সুরে বলে,”বিকালে বউভাতের পর যাতে তোমাদের এবাড়িতে না দেখি!”
– থাকার প্রশ্নও উঠে না।
এই উত্তর পেয়ে জুঁই রেগেমেগে ভেতরে চলে গেলো। নিলুফা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভাবলো এই ব্যবহার টা তার আগে করা উচিত ছিলো। যদি করতো তাহলে হয়তো এই দিন দেখতে হতো না। হ্যাঁ সে কথা দিয়েছিলো তবে তার কথার কারণে ২টা নয় ৪টা জীবন নষ্ট হতো। জীবন নষ্টের কাছে একটা কথা ভাঙ্গা তেমন কিছু না। আর এখানে তার কোনো দোষ নেই কারণ যা করার ছেলেমেয়েরাই করেছে।
নিলুফা মুনতাহাকে খাবার দিতে দিতে বলে,”আলিজা, রুহি তোরাও এসে বস খেয়ে নে।”
আলিজা, রুহি এসেও খেতে বসে গেলো। নিলুফা আবার বলে,”হ্যাঁ রে মুনতাহা মা সানিয়া এখন কোথায়?”
– ফুপি নো চিন্তা এখন সে তার শশুড়বাড়িতেই আছে।
নিলুফা ভ্রু কুচকে বলে,”শশুড়বাড়ি মানে?”
– তোমার মেয়ে বিয়ে করে ফেলেছে।(আলিজা)
নিলুফা আর কিছু বললো না। নিলুফাকে চুপ থাকতে দেখে রুহি বলে,”খালামনি তুমি কি সানিয়ার উপর রেগে আছো?”
– না। তবে বেশ অনুতপ্ত।
বলেই স্বামীর দিকে তাকালো। সানিয়ার আব্বু তার দিকে তাকিয়ে ছিলো। নিলুফা তাকাতেই চোখ দিয়ে আশ্বাস দিলো।
[সকলের মনে এখন প্রশ্ন জাগলো কিভাবে কি হলো তাইতো? তাহলে চলুন ফ্লাসব্যাক পড়ে আসি।]
রোজার বিয়ের প্রায় এক সপ্তাহ পর,,
চলবে!!!
Crush Villain
লাবিবা ওয়াহিদ
পর্ব ২৮
সানিয়া ভার্সিটির জন্য রওনা হচ্ছিলো এমন সময়ই নিলুফা এসে তাড়া দিয়ে বলে,”তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে আমরা এখনই চট্টগ্রাম যাবো!”
– এখন মানে কি? আমার ক্লাস আছে না?
– কিছুদিন যাওয়া লাগবে না তাড়াতাড়ি করতে বলেছি করবি।
– কিন্তু এতো তাড়াহুড়ো কিসের মা? ভার্সিটি থেকে এসে গেলে হয়না?
– না হয়না জলদি করে জামাকাপড় গুছিয়ে নে।
বলেই মা বলে গেলো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে। আমি আর কি করবো কাধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে লাগেজে জামা ভরতে শুরু করলাম। এসবের ফাঁকে আয়াফকেও মেসেজ করে জানিয়ে দিলাম আমি কিছুদিনের জন্য চট্টগ্রাম যাচ্ছি তাই আসতে পারবো না। আয়াফ তখনই সাথে সাথে মেসেজ দিয়ে বলে,”সাবধানে যেও সানি!”
মেসেজ দেখে মুচকি হাসলাম। তারপর লাগেজ নিয়ে সবাই একসাথে বেরিয়ে পরলাম। দুপুর তিনটায় গিয়ে আমরা পৌঁছালাম। তখন ছিলো লাঞ্চ ব্রেক মাহিদ ভাইয়ের তাই সেও ছিলো। আমাকে দেখে গাট্টি মেরে বলে,”কিরে পেত্নি এই ভরদুপুরে কই থেকে উদয় হলি?”
আমি বিরক্ত হয়ে বলি,”উফফ ভাইয়া তুইও না সারাক্ষণ আমার পিছে লেগে থাকিস!”
– কিন্তু আমি তো তোর পিছে দাঁড়িয়ে আছি!
চোখ গরম করে তাকালাম মাহিদ ভাইয়ের দিকে। আমার চোখ রাঙানো দেখে ফিক করে হেসে দেয়।
সানিয়ার মা আর বাবা এসব দেখে মুখ গোমড়া করে রইলো। এই ভাই-বোনের পবিত্র সম্পর্ককে কিনা অন্য সম্পর্কে জোড়া লাগাতে চাচ্ছে? এমন হলে নিজেদের কখনোই ক্ষমা করতে পারবে না।
সেদিনকার মতো পুরো দিন কেটে যায়। পরেরদিন হঠাৎ মা এসে বলে,”সানিয়া শপিং এ যাবো রেডি হয়ে নে।”
– হঠাৎ শপিং কেন মা?
তখনই বড় মামী ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে,”বারে! সামনে বিয়ে আর আমরা শপিং করবো না? হ্যাঁ রে নিলু সানিয়াকে কিছু বলিস নি?”
নিলুফা চোখ ছোট করে ফেলে। সানিয়া অয়াবক হয়ে বলে,”বিয়ে মানে কার বিয়ে?”
– কার আবার তোর আর মাহিদের। যাইহোক তাড়াতাড়ি আয় অপেক্ষা করছি।
বলেই বড় মামী চলে গেলো। আমার মাথায় যেনো বাজ পড়লো! যাকে ছোট থেকে বড় ভাইয়ের জায়গা দিয়ে এসেছে তার সাথে বিয়ের প্রশ্ন-ই উঠে না। মাহিদ ভাইয়ের জন্য তো মুনতাহা আপু আছে আর আমার জন্য আয়াফ। না আমি কিছুতেই এই বিয়ে হতে দেবো না। বড় ভাইকে কেউ কখনো বিয়ে করে? মরে যাবো তবুও এই বিয়ে করবো না। এইসব চিন্তা করতে করতেই চোখ বেয়ে পানি পরে গেলো। মায়ের দিকে ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,”কিভাবে পারবে মা বড় ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে দিতে?”
মা আমার পাশে বসে বলে,”আমার হাতে কিছুই নেই যে মা। ছোটবেলায় তোর মামীকে কথা দিয়েছিলাম তার ছেলের বউ হিসেবে তাদের ঘরে তুলার জন্য। আমি কি করবো বল এখন পরিস্থিতি বাইরে!”
– সামান্য কথার জন্য তুমি আমার জীবন নষ্ট করে দিতে চাইছো?
– কিছুই তো করার নেই মা একটু বুঝ।
– পারবো না আমি এই বিয়ে করতে! এই বিয়ে আমি করবো না।
মা এতোক্ষণ ঠান্ডা মাথায় কথা বললেও এখন চোখ রাঙিয়ে বলে,”এখানে তোর পারমিশন নিতে আসছি না। বিয়ে তো তোকে করতেই হবে!”
বলেই মা আমাকে বাইরে থেকে আটকে রেখে চলে গেলো। এদিকে আমি ফ্লোরের এক কর্ণারে বসে কাঁদতে লাগলাম। কাঁদতে কাঁদতে সারাদিন চলে গেলো। খাবার দিয়ে গেলেও আমি খাবার মুখে তুলি না। এভাবেই কিছুদিন কেটে যায়। আজ আমার গায়ে হলুদ কিন্তু আমি হলুদে এলার্জি বলে কাটিয়ে নেই। মা বুঝতে পারলেও কিছু বলেনি। সেদিন রাতে মা এসে বলে,”তুই এমন কেন করছিস বল তো?”
– আমি একজনকে ভালোবাসি,(আনমনে)
নিলুফা চোখ বড় বড় করে সানিয়ার দিকে তাকায়। তারপর বলে,”আগে কেন বলিস নি?”
– আগে বললেও শুনতে বুঝি? এতোদিন ধরে বুঝাতে চাচ্ছি কেন বুঝোনি?
– তোর মামীর কাছে কথা দিয়েছি আ…
– মামী এখন তোমার মেয়ের চেয়েও বড়? বাহ! কি সুন্দর পরিচয় দিলে তোমার মা! আমি মরে যাবো তাও এই বিয়ে করবো না!
★
আয়াফ ফোনে কথা বলে পিছে ফিরতেই দেখতে পায় মুনতাহাকে। মুনতাহা হাঁপাচ্ছে! তারপর হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,”ভাইয়া আপনার সাথে কথা আছে!”
– কি কথা?
মুনতাহা সব বললো তারপর কাঁদতে লাগলো। আয়াফ চিন্তিত হয়ে বলে,”তোমার বয়ফ্রেন্ডের ছবি দেখাও তো!”
মুনতাহা সাথে সাথে-ই ফোন বের করে ছবি দেখালো। একটা ছবিতে মাহিদের সাথে সানিয়াও আছে তা দেখে আয়াফ চোখ বড় করে বলে,”এই মেয়েটা এখানে কি করছে?”
মুনতাহা ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে নাক টেনে বলে,”এটা ওর ফুপাতো বোন সানিয়া। ওর সাথেই তো বিয়েটা হচ্ছে!”
তৎক্ষনাৎ আয়াফের মাথায় বাজ পরলো! সানিয়ার বিয়ে তাও তার ভাইয়ের সাথে? এ কি ঝামেলা। মুনতাহা কাঁদতে কাঁদতে বলে,”প্লিজ এই বিয়েটা আটকাও ভাইয়া দোহাই লাগে!”
– বিয়ে আটকাতে হবেই যে আমার মুন! নইলে আমি কি নিয়ে বাচবো!(আনমনে)
– মানে?(কান্না থামিয়ে)
– সানিয়া আমার ভালোবাসা।
অবাক হয়ে তাকায় মুনতাহা। তারপর কিছুক্ষণ কথা বলে আয়াফসহ মুনতাহা চললো নিজের বাসায়। আয়াফ চায় যাতে মুনতাহার ফেমিলি আগে থেকেই রাজি হয় কারণ প্লেন ফেমিলির সাপোর্ট পাওয়া প্রয়োজন। মুনতাহার বাসায় গিয়ে মুনতাহার বাবা এবং মাকে ঠান্ডা মাথায় বুঝায়। মুনতাহার মা বাবা আয়াফকে নিজের ছেলের মতোই ভাবে তাই তারা রাজি হয়ে যায়। এরপর থেকে আয়াফের প্লানিং শুরু হয়। আয়াফের প্লেন যোগ দেয় আলিজা, নীল, যাহির, তিনয়, রুহি এবং আবরার। মাহিদকেও বলে রাখে এতে করে সে কিছুটা স্বস্তি পায় এবং ওদের কথামতো কাজ করাও শুরু করে।
বিয়ের দিন,,
সানিয়া জোহানকে ধরে কেঁদেই চলেছে আর জোহান নিজের বোনকে কোনোভাবে হাসানোর চেষ্টা করছে কিন্তু বারবার তার প্রচেষ্টা বিফলে যাচ্ছে। সানিয়া কেঁদে কেঁদে চিন্তা করছে আয়াফের কথা। মা তার ফোনটাও কেড়ে নিয়েছে যার কারণে একটু কথাও বলতে পারছে না। কেন জানেনা নিজেকে তার অপরাধী মনে হচ্ছে। এমন সময়ই দরজা খুলে রুহি আর আলিজা ভেতরে ঢুকে। আলিজাকে দেখে তাকে জড়িয়ে ধরে ডুঁকরে কেঁদে উঠে। আলিজা সানিয়ার পিঠে হাত বুলিয়ে বলে,”শান্ত হ সানিয়া এই বিয়ে আমরা হতে দেবো না!”
কান্না থামিয়ে আলিজাকে ছেড়ে অবাক হয়ে বলে,”মানে কি করে?”
– রুহি দরজাটা ভালো করে লাগিয়ে দে তো..
রুহি মাথা নাড়িয়ে দরজা লাগাতে গেলেই নিলুফা এসে আটকায়!
– কি ব্যাপার কি দরজা কেন লাগাচ্ছিস?
রুহি শুকনো একটা ঢোক গিলে কিছু বলতে আবে তার আগেই আলিজা বলে,”আসলে আন্টি সানিয়া বারবার রুম থেকে বেরিয়ে যেতে চাচ্ছে তো তাই আর কি!”
জোহান কিছু বলতে নিলেও সানিয়া তার মায়ের আড়ালে জোহানের মুখ চেপে ধরে। নিলুফা চোখ গড়িয়ে তাকিয়ে বলে,”ঠিক আছে তোমরা চলে এসো। রুহি আলিজাকে তোর রুমে নিয়ে যা জার্নি করেছে কিছুটা রেস্ট নিক।”
রুহি মাথা নাড়িয়ে আলিজাকে নিয়ে চলে গেলো। আর নিলুফা জোহানকে সানিয়ার কাছে রেখে দরজা লাগিয়ে চলে গেলো। জোহান সানিয়ার চোখের জল মুছে বলে,”তুমি কেঁদো না আপু দেখবা সব ঠিক হয়ে যাবে।”
জোহানের এই ছোট কথায় কেন যেন সানিয়া ভরসা পেলো। তাই একটা মলিন হাসি দিয়ে ভাইটাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়। যতোই দুজনের মাঝে ঝগড়া হোক না কেন দুইজনের ভালোবাসা যে অফুরন্ত।
সন্ধ্যায়,,
সানিয়াকে জোর করে সাজিয়ে দিলো আলিজা আর রুহি। সানিয়াকে আজ বিয়ের সাজে সেই লাগছে একেবারে চোখ ফেরানো দায়! সানিয়াকে সাজাতে সাজাতেই ৮টা বেজে যায়। ৯টায় বিয়ে পড়ানো হবে। ঘরোয়াভাবেই বিয়েটা হচ্ছে। তেমন আত্নীয়-স্বজন নেই বললেই চলে। সানিয়াকে সাজিয়ে রুহি আর আলিজা চলে গেলো। আর এদিকে সানিয়া ভাবছে কি করবে এখন, পালাবে যে তারও সব রাস্তা বন্ধ। হঠাৎ তার রুমের দরজা খট করে খুলে যাওয়ার শব্দ শুনতে পায় এবং তড়িঘড়ি করে দরজার দিকে তাকায় এবং দেখে একটা মেয়ে তাও বোরকা পরিহিত ভেতরে প্রবেশ করছে। দরজা লাগিয়ে তার মুখোশ খুলে সানিয়ার দিকে তাকাতেই সানিয়া মেয়েটার চেহারা দেখে বোকা বনে গেলো।
★
নিলুফা সানিয়ার রুমে এসে সানিয়াকে নিয়ে যেতে লাগে। মেয়ে যে ইয়া বড় ঘোমটা দিয়ে আছে এটা দেখেই কেন জানেনা তার মনে একটা প্রশান্তি ছেঁয়ে গেলো। সানিয়াকে মাহিদের পাশে বসানো হয়। মাহিদ চুপসে আছে যেনো বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। কাজি বিয়ে পরানো শুরু করে। মাহিদ আগে কবুল বলে তারপর সানিয়ার বলার পর্ব আসতেই কাজির কানে কানে কবুল বলে আসে৷ এটা দেখে সকলে অবাক হলেও পরে কিছু বললো না কারণ তারা জানে সানিয়া কতোটা দুষ্টু প্রকৃতির। হুজুর আলহামদুলিল্লাহ পড়তেই সকলে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠে। তারপর রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করলো। কাজি সাহেব রেজিস্ট্রি পেপার হাতে নিয়ে একটা চেক দিতেই চোখ বড় বড় করে সানিয়ার বড় মামাকে জিজ্ঞেস করে,”কনের নাম কি?”
– সানিয়া ইবনাথ! কেন কাজি সাহেব?
– কিন্তু এখানে তো অন্য নাম!
সকলে হতভম্ব হয়ে যায় মাহিদ, রুহি আর আলিজা ছাড়া। সানিয়ার বড় মামা কাজির হাত থেকে কাগজটা কেড়ে নিয়ে দেখে অন্য নামে সাইন করা। মুনতাহা!
বলেই চোখ বড় বড় করে মুনতাহার দিকে তাকায়। মুনতাহা নিজের ঘোমটা উঠিয়ে মাথায় দিয়ে বলে,”কেয়সা লাগা মেরি ডোজ শশুড় আব্বা?”
জুঁই রেগে বলে,”এই মেয়ে কে তুমি সানিয়া কই?”
– সানিয়া সানিয়ার জায়গাতেই আছে। আর সাসুমা আমি আপনার ছেলের পাঁচটা না দশটা একটামাত্র বউ তাইনা জামাইসাব!
মাহিদ বোকার মতো মাথা নাড়ালো। জুঁই মুনতাহার হাত ধরে বসা থেকে উঠিয়ে একটা চড় দিতে গেলেই মাহিদ হাত ধরে বলে,”একদম আমার স্ত্রীর গায়ে হাত দেবেনা!”
– তুই একটা বাইরের মেয়েকে নিজের বউ মানছিস?(অবাক হয়ে)
– হ্যাঁ মানছি কারণ বিয়ের আগে আমি ওকেই ভালোবাসতাম আর তোমরা কিনা নিজের বোনের সাথে বিয়ে দিতে চাচ্ছিলে এই তোমাদের মন-মানসিকতা!! তোমাদের কারণেই কতো ভাই-বোনের পবিত্র সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে তা কি জানো! ছিহ ঘেন্না লাগছে তোমাদের প্রতি বিশেষ করে তোমার প্রতি মা! কারণ আমি জানি তুমি বেশি লাফাইসো সানিয়ার সাথে বিয়ে দেয়ার জন্য তাই সকলে বাধ্য হইসে!!
সবাই মাথা নিচু করে থাকলেও জুঁই রাগে ফুলছে। মাহিদের কথা বলা শেষ হতেই এবার মুনতাহা বলা শুরু করে,”মাহিদের কথা শেষ এবার আমি বলি। এইযে মিসেস সাসুমা! ভুলেও আমার উপর নির্যাতন করার চেষ্টা করবেন না। আমি আর পাঁচটা মেয়ের মতো না যে সব মুখ বুজে মেনে নেবো! আমার বাবা পুলিশ অফিসার তাই বুঝতেই পারছেন আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করলে আপনার কি হাল হতে পারে। যাইহোক এখন বরণ করে ঘরে তুলুন সাসুমা!”
মুনতাহার কথায় যেনো জুঁইয়ের গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। একপ্রকার বাধ্য হয়ে মুনতাহা বাড়ির বউ হিসেবে বরণ করে নেয়। আলিজা আর রুহি ততোক্ষণে ওদের বাসর সাজিয়েও চলে এসেছে মুনতাহাকে নিয়ে যেতে। মুনতাহাও মুচকি হেসে চলে গেলো কেউ আটকালো না।
তখন মুনতাহাই বোরকা পড়ে সানিয়ার ঘরে গিয়েছিলো। মুনতাহার বোরকা খুলতেই সানিয়া দেখে একই রকম বিয়ের লেহেঙ্গা। মুনতাহার বোরকা সানিয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,”এই বোরকা পরে বাড়ির পেছন দিকে চলে যাও আয়াফ ভাই সেদিকেই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।”
আয়াফের কথা শুনে সানিয়া মাথা নাড়িয়ে তৎক্ষনাৎ বোরকাটা পরে নেয়৷ তারপর আস্তে করে বাহিরে বের হতেই দেখে রুহি আর আলিজা দাঁড়িয়ে। দূরে নীল আর যাহির। ওদের দেখে যেনো সানিয়া স্বস্তি ফিরে পেলো। ওরা খুবই সাবধানে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। সবাই ব্যস্ত থাকায় মেইন দরজার দিকে কারোই নজর ছিলো না। সানিয়ার জায়গায় মুনতাহা ইয়া বড় একটা ঘোমটা দিয়ে চুপচাপ বসে থাকে।
সানিয়া বাড়ির পেছন দিকে গিয়ে আয়াফকে দেখে যেন তার প্রাণ ফিরে পেলো। দৌড়ে গিয়ে আয়াফকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। আয়াফও যেন সানিয়াকে নিজের বুকে পেয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। তারপর সানিয়ার কানে ফিসফিসিয়ে গান গায়,
♥♥অনেক সাধনার পরে আমি..
পেলাম তোমার মন!
পেলাম খুঁজে এই ভুবনে..
আমার আপনজন♥♥
গান শুনে সানিয়ার কান্না বন্ধ হয়ে লজ্জাতে পরিণত হয়। হুট করে যাহিরের কন্ঠ পেতেই সানিয়া আয়াফকে ছেড়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। যাহির বলে,”তোদের রোমান্স শেষ করে তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে পর।”
ওদের কথার মাঝেই আড়ালে গিয়ে সানিয়া বোরকাটা খুলে ফেলে তারপর দেখে আয়াফের গাড়ির সাথে বাইকও আছে। সানিয়া আয়াফের কাছে গিয়ে আবদারের সুরে বলে,”নীল ভাইয়ার বাইকে চড়েই ঢাকা যাবো।”
আয়াফ সানিয়ার বিয়ের সাজে দেখে হা করে তাকিয়ে রয়। ততোক্ষণে সানিয়া নীলকে বলে দেয় যে তারা বাইকে করে ফিরবে তাই নীলরা যেনো আয়াফের গাড়িতে করেই যায়। নীল বাইকের চাবি সানিয়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো। ততোক্ষণে বাড়ির ভেতর থেকে চেঁচামেচির শব্দ শোনা গেলো এর মানে নিশ্চয়ই বিয়ে কমপ্লিট। আয়াফ তাড়াতাড়ি করে সানিয়াকে বসিয়ে বাইক স্টার্ট দিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করে।
বর্তমান
চলবে!!!
(গঠনমূলক মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম)