Crush Villain,পর্ব ২১,২২

Crush Villain,পর্ব ২১,২২
লাবিবা ওয়াহিদ
পর্ব ২১

আবরার শান্ত দৃষ্টিতে মানিশার দিকে কিছুক্ষণ তাকুয়ে থাকে তারপর বলে,”তাহলে যখন আমি প্রস্তাব রাখলাম তখন কেন রাজি হলে না? আর এখন কি এমন হলো যে এতো সহজে রাজি হয়ে গেলে?”

মানিশা সাথে সাথেই মাথা নিচু করে ফেলে। তারপর বলে,”আমি চাইনি আপনি আমার মতো একজন ধর্ষিতা কে বিয়ে করে নিজের লাইফ হ্যাল করুন! আমি চাইনি আমার গায়ে লাগা কলঙ্ক আপনার গায়ে লাগুক! আপনি পূর্বে অনেক কষ্ট করেছেন কি করে পারতাম আপনার খুশিতে জল ঢেলে দিতে? আপনাকে দেয়ার মতো আমার কাছে কিছুই অবশিষ্ট নেই।”

আবরার নিজেকে শান্ত করে মানিশার পাশে গিয়ে বসে তারপর দুইহাত দিয়ে মানিশার দু’গাল ধরে মাথা উচ্য করে। তারপর নিজের কপালে সাথে মানিশার কপাল লাগিয়ে চোখ বুজে ফেলে। মানিশাও চোখ বুজে আবরারের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে থাকে। আবরার ঠান্ডা কন্ঠে বলা শুরু করে,”আমার পাশে যখন কেউ ছিলো না তখন আল্লাহ আমার পাশে কাউকে দাঁড়ানোর জন্য তোমায় আমার কাছে পাঠিয়েছিলো। তুমি আমায় সঙ্গ দিয়েছো, বন্ধুত্বপূর্ণ একটা মিষ্টি সম্পর্ক উপহার দিয়েছিলে, তুমি আমায় সাহস জুগিয়েছিলে সরলতার পিছের রূপটা আমার সাথে যারা অন্যায় করেছে তাদের দেখাতে, তাদের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াতে, ভরসা জুগিয়েছে নিজের প্রতি, চিনিয়েছো এই স্বার্থপর দুনিয়া। কি করে তোমাকে জীবনসঙ্গী না করে থাকি বলো? তোমার মতো করে কেউ-ই কখনো আমায় বুঝেনি। তুমি আমারটাকা প্যসা খুঁজোনি! যদি খুঁজতে তাহলে সেই ঢিলা ফতুয়া পরিধান করা অবস্থায় আমার পাশে দাঁড়াতে না। আর তোমার অতীত! তুমি ধর্ষিতা তো নিজের ইচ্ছায় হওনি তোমাকে জোর-জবরদস্তি করা হয়েছিলো! আর তোমার অতীত কি তা আমি কখনো জানতে চাইনি আর জানতেও চাইবো না! আমি শুধু আমার আগামীদিন গুলো তোমার সাথে কাটাতে চাই! আমরা পবিত্র বন্ধনে জড়াতে চাই। ভালোবাসি যে আমি তোমায়! বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি দয়া করে নিজের অতীত আমাদের মাঝে টেনে এসে আমায় দূরে সরিয়ে দিয়ো না। বড্ড কষ্ট হয়।”

মানিশা ছলছল দৃষ্টিতে আবরারের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা এবং মৃদ্যু গলায় বলে,”আ.. আই লা.. লাভ… ইউ আবরার!”

আবরারও আস্তে করে বলে,”আই লাভ ইউ টু, আই কান্ট লিভ উইদাউট ইউ!”

অবশেষে মানিশা এবং আবরারের বিয়ে সম্পূর্ণ হয়। তাদের বিয়ের সাক্ষি ছিলো মানিশার সকল বন্ধুরা সাথে সানিয়া, আলিজা আর রোজা। তখন নেহাল মানিশাকে ফোন করেছিলো। নেহাল বলেছিলো,”ওহ বেইবি আই এম ওয়েটিং ফর ইউ ডার্লিং! ভার্সিটি থেকে বের হও আজই আমরা দুজন মিলে এঞ্জয় করবো! কাম বেইবি কাম!”

এই কথাতেই মানিশা ভয় পেয়ে যায় তাই সে আবরারকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিছুদিন পর মানিশা আর আবরার হেসে হেসে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলো ওমনি নেহাল মানিশার সামনে এসে রাগান্বিত কন্ঠে বলে,”আমি বলেছিলাম না আমার সাথে মিট করতে এখন আবার কোন নাগর নিয়ে ঘুরছো তুমি?”

নাগর কথাটায় আবরারের রাগ চেপে বসে। সে বেশ ভালোভাবে বুঝে নেয় এটাই নেহাল আর তার জীবনসঙ্গিনীর কালো অতীতের বড় কারণ! আবরার সাথে সাথে নেহালের ডান চোখ বরাবর গুসি দেয় আর নেহাল ছিটকে পরে চোখে হাত দিয়ে। মানিশা আবরারকে থামিয়ে দেয়। তাই সে নেহালের গায়ে হাত না তুলে চেঁচিয়ে বলে,”মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ! উই আর হাসবেন্ড ওয়াইফ সো মুখ সামলে কথা বলবি! আর তোর মুখ থেকে কি-ই বা এক্সেপ্ট করা যায়। এনিওয়েস! তোরে যদি ওর ধারে কাছেও দেখি না তাহলে তোরে শেষ করে দিতে দু’বারও ভাববো না চলো মানিশা!”

বলেই আবরার মানিশার হাত ধরে টেনে নিয়ে অন্যদিকে চলে গেলো। নেহাল সেখানে বসেই চোখে হাত বুলাতে বুলাতে হেসে বলে,”নো চিন্তা বস! মার খাওয়ার ইচ্ছা নাই আমার তার চেয়ে বরং আরেকটা ফুল খুঁজে নিবো! আর এমনিতেও তোমার ফুলের মধু খাওয়া আমার শেষ!”

বলতে বলতেই সামনে তাকায় এবং দূরে দেখে রোজাকে। রোজাকে দেখে মুচকি হাসলো নেহাল! অনেকদিন ধরে রোজাকে পটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে নেহাল কিন্তু কিছুতেই এই মেয়ে পটছে না। কি যে করবে কে জানে। আপাতত তার বাসায় যাওয়া উচিত ভেবেই নেহাল নিজের ফ্লাটের দিকে রওনা হলো।

ফ্লাটে ঢুকে দেখে আরাভ জুরাইজ সোফায় বসে আছে। নেহাল আরাভ জুরাইজকে দেখে মুচকি হাসে তারপর বলে,”আরে ডেড! তোমার ওই অকর্মা ছেলেকে ছেড়ে হঠাৎ আমার কাছে আসলে যে? ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলো নাকি?”(হেসে)

– শাট আপ নেহাল! এন্ড আমি তোমার বাবা নই কয়বার বলবো?

– তো আমার মা মারা যাওয়ার পর আপনি কেন এতো আমার খাতির করেন? নিশ্চয়ই আপনি আমার বাবা সো… যাইহোক যতোই মিথ্যা বলুন না কেন আমি জানি আপনি-ই আমার বাব!

আরাভ জুরাইজ একটা দীর্ঘঃশ্বাস ছাড়েন। এই ছেলেকে আজ অব্দি বুঝাতে পারলো না সে তার মায়ের আপন ভাই সম্পর্কে তার মামা লাগে। কিন্তু এই ছেলেও যে নাছোড়বান্দা আরাভ জুরাইজকেই তার বাবা ভেবে বসে আছে। নেহাল হেসে বলে,”আচ্ছা ডেড তোমার ওই অহংকারী বউ কি তোমার সম্পত্তি লুফে নিয়েছে? নিতেও পারে স্বাভাবিক!চলো বাপ বেটা মিলে ওই বাড়ি আক্রমণ করি কি বলো?”(হেসে হেসে)

– নেহাল!!

বলেই আরাভ জুরাইজ হাত উঠালো কিন্তু চড় মারতে পারলেন না। চড় মারার আগেই তার চোখের সামনে তার নিষ্পাপ বোনটার চেহারা ভেসে উঠেছে। নেহাল আগের মতোই হেসে হেসে বলে,”আমি জানি তো তুমি আমায় মারতে পারোনা কারণ তোমার ১ম বউয়ের একটামাত্র ছেলে বলে কথা! যাইহোক আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি তারপর দুই বাপ বেটা মিকে ওই বাড়ি আক্রমণ করবো! জাস্ট টেন মিনিট ডেড!”

বলেই নেহাল দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গেলো। আরাভ জুরাইজ ধপ করে সোফায় বসে ভাবতে লাগে নেহালের মেন্টালি প্রব্লেম দিনদিন বেড়েই চলেছে। তার একটাই কারণ ছোট থেকে সে অনেক একাকিত্ব সময় কাটিয়েছে ভালোবাসা বলতে কারো কাছেই পায়নি। অতিরিক্ত একঘেয়ে থাকায় আজ তার এই অবস্থা। তার অজান্তেই নেহাল আরাভ জুরাইজকে বাবা ধরে বসে আছে তার ফলে আরাভ জুরাইজের ওয়াইফ এবং আয়াফের প্রতি আরও তীব্র ক্রোধ তার ব্রেইনে আরও বেড ইফেক্ট ফেলেছে। আরাভ জুরাইজ নেহালকে কিছু বলেনা কারণ সে নিজেই সাইকোলোজিস্ট এবং নেহালের চিকিৎসা তিনি নিজ হাতে করছেন।

এসব ভেবেই দীর্ঘ একটা শ্বাস নেয় আরাভ জুরাইজ। জানেনা নেহাল আদৌ সুস্থ হবে কিনা কারণ এখন নেহালের মেন্টালি প্রব্লেম সীমানার বাইরে চলে গেছে।

– আলিজা!

– জ্বী ভাইয়া কিছু বলবেন?

– তোমার সাথে সানিয়াকে দেখছি না যে? আজ কি আসেনি?

– নাহ।

– কেন?(ভ্রু কুচকে)

– আসলে ভাইয়া সানিয়ার ছোট থেকেই একটা স্বপ্ন ছিলো যে সে নিজের একটা লাইব্রেরি থাকবে। এন্ড তার কাজ গত ৭মাস আগে ধরেছিলো। কাজ এখন প্রায় শেষের দিকেই ছিলো কিন্তু……

– কিন্তু.?

– হুট করেই কিছু সমস্যার কারণে লাইব্রেরির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তার জন্য সে খুব ডিপ্রেসড! নিজেকে ঘরবন্দি করে রেখেছে তাই আজ ভার্সিটি আসবে না।

– ওহ আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যাও ক্লাসে।

আলিজা সম্মতি জানিয়ে চলে গেলো আর আয়াফ সেখানে দাঁড়িয়ে কি যেনো একটা ভাবলো তারপর সানিয়াকে কল করলো!

বেলকনিতে বসে নিজের গাছগুলোতে হাতবুলাচ্ছি মন খারাও করে। হঠাৎ ফোন আসলো। আমি উঠে দাঁড়িয়ে রুম থেকে ফোন আনতে গেলাম। ফোনের শব্দ “ক্রাশ ভিলেইন” নামটা ভেসে উঠতেই আমার মাথায় রাগ চড়ে বসলো। এর জ্বালায় কি একদিনও ভার্সিটি অফ করতে পারবো না অসহ্য! তবে আজ যতো যাইহোক আমি কিছুতেই বাসা থেকে বের হবো না হুহ! মিগের মুল্লুক পাইসে নাকি আমাকে এএএহ তার এক দুই কথার থ্রেডে বুঝি ভার্সিটি চলে যাবো? একদমই না!!

এভাবে প্রায় কয়েকবার ফোন করলো কিন্তু আমি রিসিভ করলাম না। হুট করেই টুংটাং শব্দ হলো আমি ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম ভিলেইন টার মেসেজ। মেসেজে ক্লিক করে দেখি ভিলেইন টার থ্রেড! যা লিখেছে তা হলো,”Jodi aj Varsity na asho tahole tomar basay giye tule anbo mone rekho!!”

আমিও ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে নিজের মনে মনে ভাবি, এএএএহ আইসে আমার থ্রেডওয়ালা। তোমার থ্রেডে আমি ভয় পাইনা চান্দু তাই এইসব কইয়া লাভ নাই হুহ! আবার আরেকটা মেসেজে বললো,”5 Min er moddhe tmr phn ba msng a ‘Hea’ jeno shunte pai nyto…..janoi to ki korbo!”

এবারও দেখেও না দেখার ভান করে ফোনটা টেবিলের উপর রেখে বেলকনিতে এসে নিজের গাছের ফুলগুলো থেকে নকে ঘ্রাণ নিতে থাকি। এভাবে অনেকক্ষণ কেটে যায় হঠাৎ গাড়ির হর্ন কানে আসে আর আমি চট করে উঠে দাঁড়াই। বেলকনির রেলিং ধরে নিচের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম আয়াফের গাড়ি। এর মানে কি সত্যি সত্যি-ই চলে আসছে আল্লাহ! এখন কি হবে মা বা আমার শ্রাদ্ধেয় চাচিরা যদি দেখে ফেলে কেলেঙ্কারি ঘটে যাবে। হঠাৎ-ই ফোন বাজার শব্দ কানে আসতেই দৌড়ে রুমে আসি এবং ফোন রিসিভ করি। আয়াফ সাথে সাথে বলে,”তোমার বাড়ির নিচে পর্যন্ত তো চলে আসলাম এখন কি উপরে এসে শাশুড়ীকে এসে সালাম দেবো!”

– ওই একদম না আর খবরদার আমার মাকে শাশুড়ী বলবেন না!

– আজিব আমি কখন বললাম তোমার মা আমার শাশুড়ী? আমি তো বললাম যে…

আমি কপাল চাপড়ে বলি,”হইসে আপনার এই ফালতু লজিক শোনার ইচ্ছা বা সময় কোনোটাই আমার নাই!”

– তাহলে তাড়াতাড়ি আসো নয়তো জানোই তো আমি কি জিনিস! যা বলি তা আমি করেই ছাড়ি!

আমি ফোন কেটে রাগে ফসতে লাগলাম! হঠাৎ মাথায় আইডিয়া আসে তারপর শয়তানি একটা হাসি দিয়ে মেসেজ করে বলি,”আপনি যান আমি আসছি!”

তৎক্ষনাৎ মেসেজ আসলো,”Tomake niyei ami zabo!”

– আচ্ছা তাহলে এই গলি থেকে বেরিয়ে রাস্তার মোড়ে গিয়ে দাঁড়ান কারণ এখানে আমার কোনো রিলেটিভ আমাকে আপনার সাথে দেখলে সমস্যা হতে পারে।

– Okay as your wish!

আমার মুখে এক চিলতে হাসি! এই ভিলেনটার দফারফা করেই আমি ছাড়বো আজ নয়তো আমার নাম সানিয়া নয়!

আমি বেলকনি থেকে উঁকি দিয়ে দেখলাম ভিলেনটা চলে যাচ্ছে নাকি? হ্যাঁ সে যাচ্ছে ইয়েস!

চলবে!!!

Crush Villain
লাবিবা ওয়াহিদ
পর্ব ২২

আমি রেডি হয়ে রাস্তার মোড়ে গেলাম। ভিলেনটা সেখানেই আছে। আমি ডেবিল হেসে হাতে থাকা পিনটা নিয়ে চুপিচুপি আয়াফের গাড়ির পেছনে এলাম তারপর এদিক সেদিক তাকালাম। নাহ তেমন কেউ নেই। সেই সুযোগ বুঝে পিনটা দিয়ে আয়াফের টায়ার ফুটো করে দিলাম। ব্যাস আমার কাজ শেষ! ভেবেই হেসে হাত ঝাড়ার মতো করে তাড়াতাড়ি একটা রিকশা নিয়ে সেটায় উঠে ফুট টা উঠিয়ে মুচকি মুচকি হেসে যাচ্ছি। আয়াফের গাড়ি ক্রোস করতেই আমি মাথাটা পিছে নিয়ে “এই ভিলেইন” বলে চিল্লালাম! আয়াফ তৎক্ষনাৎ সামনে তাকালো। আমি মুখ ভেঙচিয়ে চলে আসলাম। উফফ কি যে শান্তি লাগছে বলা মতো না। কথায় আছে না “শয়তানের বিচার আল্লাহ-য় করে!”

আয়াফ গাড়ি স্টার্ট দিতে চেয়েও পারলো না। পারবে কি করে, সানিয়া তো আগেই টায়ার পাঞ্চার করে গেছে। আয়াফ “শিট” বলে গাড়ির স্টায়ারে জোরে চাপড় মারলো। আয়াফ গাড়ি থেকে বেরিয়ে টায়ারের দিকে রেগে তাকালো। টায়ার পাঞ্চার! আয়াফের বুঝতে বাকি রইলো না এই অকাজ কার!

আমি রিকসা ভাড়া মিটিয়ে আমার প্রিয় নদীর তীরে এসে চুপচাপ বসে রইলাম বেশ শান্তি লাগছে। নদীর তীরে এক ঠান্ডা বাতাস যা মনকে ফুরফুরে করে তুলছে। চারপাশটা সবুজে ঘেরা। প্রকৃতির সৌন্দর্যে আমি বরাবরের মতো মুগ্ধ। কি আছে এতে? জায়গাটাতে সৌন্দর্য যেনো ঢেলে ঢেলে দিয়েছে সৃষ্টিকর্তা। হঠাৎ পিছে পায়ের শব্দ পেতেই আমি পিছে তাকালাম এবং দেখলাম আয়াফ দাঁড়িয়ে। ভয়ে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম তারপর আমতা আমতা করে বললাম,”আ..আ..আপনি এখানে?”

– কেন? কি ভেবেছিলে আমি তোমার অকাজের জন্য চুপচাপ বসে থাকবো?

– মামামানে? আয়ামি? আমি আবার কি করলাম?

– কিছু করোনাই তাইনা? আসো তোমায় দেখাই তুমি কি করেছো।

বলেই আয়াফ সানিয়ার হাত ধরে নদীতে নামার কাঠের সিঁড়িতে নিয়ে এসে সানিয়ার এক হাত ধরে নদীতে ফেলে দিবে এমন ভাবে ধরে ধরে রেখেছে। এদিকে সানিয়া তো ভয়ে শেষ! এমনেই সাঁতার জানেনা আয়াফ ছেড়ে তো ব্যাস কাম তামাম হয়ে যাবে তার! সানিয়া চেঁচিয়ে বক্লে,”এই কি করছেন কি? ছাড়েন আমাকে প্লিজ পানিতে ফেলবেন না প্লিজ!”

– ও বলছো ছেড়ে দিতে? ঠিক আছে ছেড়ে দিচ্ছি।

বলেই আয়াফ হাত কিছুটা আলগা করতেই সানিয়া নিজের দুইহাত দিয়ে আয়াফের হাত চেপে ধরে বলে,”এই না! ছাড়লে আমি পানি পরে যাবো! উঠান আমাকে।”

– আগে বলো টায়ার কেন পাঞ্চার করেছো তুমি? আর সবচেয়ে বড় কথা তুমি আমায় ভেঙ্গিয়েছো এতো সাহস বেড়েছে কবে থেকে শুনি?

– আজিব তো বললাম না আমি টায়ার পাঞ্চার করিনাই কেন এক কথা বারবার কেন বলেন অদ্ভুত তো?

– তোমাকে নদীতে বিসর্জন দিলেই তোমার ঘাউড়ামি কমবে!

– নিজেই তো ঘাউড়া নাম্বার ওয়ান আমাকে বলেন কেন(আয়াফ সানিয়াকে কিছুটা পানির দিকে ঝুকে দিতেই) এই না না… ফেলবেন না আমি কিছু বলিনি, আমি বলিনি!(কাঁদো কন্ঠে)

– তাহলে স্বীকার করো আমার টায়ায়ের পাঞ্চার তুমি করেছো তাহলেই উঠায় দিবো তোমায়!

– আচ্ছা যান স্বীকার করলাম আমি-ই করেছি এবার তো উঠান প্লিজ?

আয়াফ লম্বা হাসি দিয়ে সানিয়াকে ফেলে সানিয়ার মাথা পানিতে চুবালো। সানিয়া তো সেই রেগে গেলো! সেও আয়াফের ঘাড় ধরে পানিতে নামিয়ে কয়েকবার চুবিয়ে বললো,”আপনি আমাকে একবার চুবাবেন আমি আপনাকে ১০বার চুবাবো!””

আয়াফ সানিয়াকে বেশ খানিক সময় চুবিয়ে বলে,”তোমার ঘাউড়ামি আজ আমি ছুটিয়েই ছাড়বো!”

দুইটার জেদে দুজনেই দুজনকে চুবিয়ে পানি খায়! বেশ কিছুক্ষণ পরে দুজনেই হাঁপাতে হাঁপাতে উঠে রোদে ঘাসের উপর বসলো! সানিয়া শীতে থরথর করে কাঁপছে তা দেখে আয়াফ গাড়ি থেকে নিজের জ্যাকেট এনে সানিয়ার গায়ে জড়িয়ে দেয়। সানিয়া প্রথমে নিতে না চাইলেও শেষে আয়াফের জোড়াজুড়িতে বাধ্য হয় কারণ ভেজার কারণে জামা গায়ের সাথে লেগে গেছে এটা খারাপ দেখায়। আয়াফ নিজের রুমাল দিয়ে নিজের চুলগুলো মুছে নেয় যাতে করে তার ঠান্ডা না লাগে। নিজের মোছা শেষ হলে সানিয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,”তুমি চাইলে ইউস করতে পারো আমি কিছু মনে করবো না!”

সানিয়া ভেংচি কেটে অন্যদিকে ফিরে বলে,”আপনার ব্যবহার করা জিনিস দিয়ে আমি মুছবো না!”

আয়াফ হেসে বলে,”আমার ইউস করা জ্যাকেটই এখন তোমায় গায়ে!”

সানিয়া নাক ফুলিয়ে আয়াফের দিকে তাকিয়ে বলে,”এখন এটা নিয়ে আমায় খোটা দিচ্ছেন?”

– একদমই না।(হেসে)

– আমি বাসায় যাবো!

– তো চলেন ড্রপ করে দেই!

আয়াফ আর সানিয়া সেইখানে আর না থেকে গাড়িতে উঠে বসে। আয়াফ সানিয়াকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে বলে,”জ্যাকেট পরেই চলে যাও কিছু মনে করবো না তবে জ্যাকেট ধুঁয়ে কালকে ভার্সিটিতে দিয়ে দিবা!”

সানিয়া কিছু বলে না চুপচাপ জ্যাকেট গায়ে জড়িয়েই চলে গেলো। আয়াফ কিছুক্ষণ আগের ঘটনা মনে করে ব্লাশিং হতে লাগলো তারপর টেডি স্মাইল দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে নিজেও চলে গেলো। সানিয়া লিফটে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ আগের ঘটনা ভেবে চলেছে। ৪র্থ ফ্লোরে আসতেই লিফটে উঠলো সানিয়ার শ্রাদ্ধেয় চাচী। চাচী সানিয়াকে এ অবস্থায় দেখে নাক সিটকে বলে,”এই মেয়ে এ তোমার কেমন চলাফেরা? এমন ভেজা ভিজেছো জামাকাপড় শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। এ নিয়ে ছেলেদের সামনে দিয়ে হেটে আসছো তুমি ছিহ! বলি লজ্জা শরম কি কিছু নেই তোমার? আবার তোমার গায়ে তো দেখছি একটা ছেলের জ্যাকেট। কার সাথে ফষ্টিনষ্টি করে আসছো বলো তো?”

এরকম আরও বিস্রি কথা শুনাতে থাকেন সানিয়ার চাচী! এসব শুনে সানিয়ার চোখ বেয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পরছে। সে কতোটুকু জানে সানিয়ার বিষয়ে যার জন্য এতো কথা শুনাচ্ছে এই মহিলা? এমন কথা শুনতে শুনতেই ৮ম ফ্লোরে চলে এলো। দুইজনই লিফট থেকে এসে দাঁড়ায়। এখনো কথা শুনিয়েই চলেছে শুনিয়েই চলেছে চাচী। সানিয়া কিছু না বলে বাসায় ঢুকে দৌড়ে উপরে চলে যায় কাঁদতে কাঁদতে!

– আপনার সমস্যা কি বলুন তো? এতো কেন পিছে লেগে আছেন? সবকিছুর একটা লিমিট থাকে!(চোখ রাঙিয়ে)

– আই লাভ ইউ কয়বার বলবো? প্লিজ এক্সেপ্ট মি প্লিজ!

বলেই কয়েক কদম এগিয়ে গেলো নেহাল রোজার দিকে। রোজা কয়েক কদম পিছে গিগে বলে,”একদম আমার ধারে কাছে আসবেন না!”

– কেন এলে কি হবে যাইহোক তুমি যদি সোজা কথায় রাজি না হও আমার কাছে অন্য উপায় আছে।(হেসে)

– আপনি যা করার করুন আপনি আপনাকে ভয় পাইনা!

বলেই রোজা নেহালের পাশ কেটে চলে যায় আর নেহাল সেখানে দাঁড়িয়ে হেসে হেসে বলে,”আয়াফ তোর বোন তোর কলিজার টুকরাতে যে আমি….”

বলেই হাসতে লাগে নেহাল তারপর চলে গেলো নিজ গন্তব্যে।

– সানিয়া তোর চাচী কি বলে গেলো? তুই কার জ্যাকেট গায়ে দিয়েছিস?

আমি আগের মতোই চুপ আছি কিছু বলছি না। তা দেখে মা আবার প্রশ্ন করলো,”কি হলো সানিয়া উত্তর দে এটা কার জ্যাকেট?”(ধমক দিয়ে)

মায়ের ধমকে কেঁপে উঠি। তারপর কাঁপা গলায় বলি,”আমি নদীর পারের দিকে গিয়েছিলাম। হঠাৎ ভুলবশত এক ছেলের সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যাই নদীতে সে-ই আমায় এই জ্যাকেট দিয়েছে যাতে আমায় লাজ-লজ্জায় পরতে না হয়!”

আমার কথায় মা কিছুটা স্বস্তি অনুভব করলো তারপর শান্ত কন্ঠে বলে,”এখন থেকে সাবধানে চলাচল করবি আর তোর চাচীদের থেকে একদম দূরে থাকবি! তারা শুধু পারবে তোকে কথা শুনাতে, কাজ করতে নয়! জানিস তো আমাদের সমাজ কেমন, নিজের ঘরে কিছু হলেও অন্যের ঘরের মেয়েকে কথা শোনাতে ভুলে না। এই মহিলা গুলা তোর ভালোটা দেখবে না সবসময় তোর খারাপ দিকটা নিয়েই এলাকা ছড়াবে। যাইহোক সাবধানে থাকবি আর আমি তোকে চুপ থাকতে শিখাইনি, ঠিক সময়ে ঠিক কথাটাই শুনিয়ে দিবি নাহলে এরা মাথায় চড়ে বসে।”

আমি মাকে জড়িয়ে ধরে বলি,”আম্মু জানো তুমি আমার বেস্ট আম্মু। তোমার থেকে আমি অনেক উপদেশ পাই। তবে তুমি তো আমায় চেনোই আমি কেমন!”

– হুম তবে আরেকটা কথা বলে রাখি যদি কোনো সম্পর্কে জড়াস তাহলে অবশ্যই আমাকে জানাবি কেমন?

আমি মাথা নাড়িয়ে বলি,”তোমার কাছে অনেক কথাই শেয়ার করি এটা শেয়ার করবো না ভাবলে কি করে?”

মা হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”পাগলি মেয়ে আমার!”

– হুম।

মা চলে যেতেই দরজা লাগিয়ে জ্যাকেট টার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস নেই। তারপর নিজের অজান্তেই হেসে জ্যাকেটের কাছে গিয়ে জ্যাকেটটা নাকের সামনে ধরে আয়াফের বডির স্মেল নিতে থাকি। মাতাল করা স্মেল উফফ! এমন মিষ্টি পারফিউম ইউস করে, আচ্ছা পারফিউমটার নাম কি কোন ব্রান্ডের?

গভীর চিন্তায় মগ্ন আমি আর সেটা হলো এইটা কোন ব্রান্ডের পারফিউম। পরে সব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে জ্যাকেট টা জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরি।

এদিকের সব কুকীর্তি রুহি আয়াফকে বলে দেয় কারণ রুহির কাজ-ই এটা। আয়াফ ওকে বলেছে প্রতি ঘন্টার আপডেট যেনো তাকে দেয়। আয়াফ রাগে ফুসতে ফুসতে ভাবে,”কুটনি মহিলা সাহস না কম না আমার জিনিসকে এতো বাজে কথা শোনানো! দাঁড়াও না তোমার হাল আমি বেহাল করে ছাড়ছি!”

সন্ধ্যায়,

কলিংবেলের আওয়াজে মিসেস সেলিনা(সানিয়ার বড় চাচী) রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে নিজের ছেলে সাজেদকে বলে,”সাজেদ দেখ তো কে এসেছে?”

সাজেদের কোনো সাড়া নেই দেখে মিসেস সেলিনা বুঝলো সাজেদ বাসায় নেই। আবার কলিংবেল বাজতেই নিজের মেয়ে আয়শাকে বে যেনো দরজা খুলে দেয়। সেও সম্মতি জানিয়ে দরজা খুলে। দরজা খুলে হা করে তাকিয়ে আছে সামনের ছেলেটির দিকে। মিসেস সেলিনা বিরক্তি নিয়ে কিচেন থেকে এসে দরজার সামনে দাঁড়াতেই দেখলো তার ছেলে সাজেদের সাথে একটা নতুন ছেলে। ছেলেটাকে সে কখনো দেখেনি কিন্তু দেখতে মাহ শা আল্লাহ। আয়শা এখনো হা করেই তাকিয়ে আছে দেখে সাজেদ ধমক দিয়ে বলে,”কি হইসে কি হ্যাঁ করে কি দেখছিস হ্যাঁ যা ভেতরে গিয়ে পড়তে বস!”

আয়শা হা করে তাকাতে তাকাতেই ভেতরে চলে গেলো। আয়শা এবার এসএসসি দিবে আর সাজেদ সানিয়ার ১ বছর জুনিয়র। সাজেদ ছেলেটাকে সম্মানের সাথে ভেতরে নিয়ে সোফায় বসালো আর মাকে বললো অতিথির জন্য ঠান্ডা পানীয় কিছু আনতে। মিসেস সেলিনা মাথা নাড়িয়ে কিচেনে একপ্রকার দৌড়ে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর সাজেদকে ডেকে বলে,”এই ছেলেটা কেরে?”

– আয়াফ ভাই। একদিন আমি এক্সিডেন্ট করতে নিছিলাম সেই আমাকে বাচিয়েছিলো।

– ওও তা ছেলের বাবা মা কি করেন? আর ছেলেটা কি করে?

– এবার মাস্টার্সে পড়ছে আরাভ জুরাইজের একমাত্র ছেলে উনি!

আরাভ জুরাইজ নাম শুনে মিসেস সেলিনা যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে। আরাভ জুরাইজের বেশ নামডাক আছে তাই সেলিনাও তাকে বেশ ভালো করে চিনে। এখন তার পরিকল্পনা কোনোভাবে নিজের মেয়েকে এই আয়াফের গলায় ঝুলিয়ে দিলেই সে রাজরানী হয়ে যাবে।

চলবে!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here