Crush Villain,পর্ব ০৭
লাবিবা ওয়াহিদ
(শেষের নোট পড়বেন দয়া করে)
পতেঙ্গা পৌঁছে বিচের কাছে এসে চোখ বন্ধ করে কয়েকবার লম্বা শ্বাস নিলাম। ইশশ কি অপরূপ সৌন্দর্য। নাকে সমুদ্রের ঘ্রাণ বারি খাচ্ছে। চারপাশে শো শো বাতাস বইছে। নিস্তব্ধতা এবং চারপাশে হইহৌল্লোর মাঝেও সমুদ্রের ডাক শোনা যাচ্ছে। দূরে নৌপুলিশরা বিভিন্ন শিপ দেখাশোনা করছে। আমার থেকে কিছুটা দূরে মাহিদ ভাইয়া কার সাতগে যেনো কথা বলছে। নিশ্চয়ই মুনতাহা ভাবির সাথে। মুনতাহা আপু হচ্ছে আমার মাহিদ ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড। অনেক ভালোবাসে দুজন দুজনকে। আমার বেশ ভালো লাগে ওদের কাপলটা! খুবই আন্ডাস্টেন্ডিং একটা কাপল! মুনতাহা আপুর সাথেও দেখা হয়েছে তখন তার ব্যবহার দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারিনি। তবে মাহিদ ভাই আমার বেলায় খুব ত্যাড়ামি করে। তাইতো ওর ত্যাড়ামি ছুটাইতে মুনতাহা আপুর কথা বলে থ্রেড দিয়ে যা ইচ্ছা করাই। হঠাৎ দূরে দেখলাম অনেক মেয়েরা গোল হয়ে দাঁড়িয়েছে আর কেমন চেঁচাচ্ছে। আমি ভ্রু কুচকে সেদিকে তাকালাম এবং আগ্রহ জাগলো কি হচ্ছে তা দেখার জন্য। ভাইয়াকে ডাক দিতে যাবো দেখি ভাইয়া কথা বলতে বলতে অনেকটা দূরে চলে গেছে। আমি আর তাকে ডিস্টার্ব না করে মেয়েদের দিকে ছুটলাম। মেয়েদের ঠেলে সামনে তাকিয়ে আমি যেনো বরফে পরিণত হলাম। আমার সামনে আর কেউ না আয়াফ আর তার বন্ধুরা। আয়াফ আজ কালো শার্ট আর কালো জিন্স পরেছে। বাতাসে তার এলোমেলো চুল উড়ছে। আর সবসময়ের মতোই তার সেই কিলার হাসি। না চাইতেও ডান হাত বুকের বা পাশে চলে গেলো। হায়য়য়! এই ছেলেটাকে কালো ড্রেস-ই বা কেন পরে উফফফফফ খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে এতোটা কিলার লুক!
★
নীল এদিকে ইউটিউবে বক্তব্য ছাড়ছে এটা সেটা নিয়ে। আর আয়াফ সে জোর করে ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে। আয়াফ ভেবেছিলো আজ সে একা একটু ঘুরবে! তা আর হলো কই। এতোগুলা মেয়ে যেভাবে গোল হয়ে দাঁড়িয়েছে তার আর একা ঘুরার কুল হলো না। তার উপর নীলের লাইভ দেখে চট্টগ্রামের আরও অনেক মেয়েরা এসে জড়ো হচ্ছে। এসব ভাবার কারণে আয়াফের খেয়ালই নেই যে তার সামনেই সানিয়া দাঁড়ানো। নীল শেষে বলে উঠে,”সো গাইস এখন আর কথা কিসের লেট’স স্টার্ট!”
বলেই আয়াফকে চোখ দিয়ে ইশারা করলো গান গাওয়ার জন্য। আয়াফ নরমালি বলে,”কোন গান গাইবো?”
সবাই জোরে বলে উঠে,”প্রেম তুমি!”
আয়াফ আর কিছু বললো না গিটারে টোন বাজানো শুরু করে। আমি সব ভুলে বেশ উৎসুক হয়ে আছি আয়াফের গান শোনার জন্য। কতো অপেক্ষায় ছিলাম একবার লাইভলি আয়াফের গান শুনবো আজ হয়তো তা পূরণও হবে। আয়াফ গান শুরু করে,
“আমার কল্পনা জুড়ে,
যেই গল্পেরা ছিলো
আড়ালে সব লুকোনো!
সেই গল্পেরা সব..
রঙিন হলো পলকে,
তোমাকে হঠাৎ পেয়ে যেনো…।”
হঠাৎ সামনে আয়াফের নজর গেলো এবং দেখতে পেলো সানিয়াকে। আয়াফ আনমনে সানিয়ার দিকে আবার গাইতে শুরু করে,
“প্রেম তুমি, আসবে এভাবে
আবার হারিয়ে যাবে ভাবিনি,
আজও যে সে পথ, শুধু নেই তুমি..
বলো কোথায় আছো অভিমানী(২)”
টোন বাজছে আর আমি যেনো আয়াফের যেই বাদামী চোখের মণিতে হারিয়ে যাচ্ছি। আর তার আগে আমি মুগ্ধ! পাগল করা চাহনী। সবাই মনোযোগ গান শুনছে আর কেউ কেউ তো আয়াফকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। আয়াফ আবার শুরু করে,
“সব থেকেও কি যেনো নেই,
তোমাকে তাই খুঁজে প্রতিখনে,,
আমার ভালোলাগা গুলো সব..
তোমায় ভেবে সাজে রোজ রোজ এই মনে,
প্রেম তুমি আসবে এভাবে,
আবার হারিয়ে যাবে ভাবিনি
আজও যে সে পথ, শুধু নেই তুমি..
বলো কোথায় আছো অভিমানী!!”
আমার দিকে তাকিয়েই আয়াফ গান শেষ করলো। সবাই জোরে কড়তালি দিলো। আয়াফ সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। আবার কি ভেবে যেনো আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো। প্রথমে ভেভেছিলো সে ভুল দেখছে কিন্তু না সে ভুল দেখছে না সত্যি-ই সানিয়া তার সামনে। কিন্তু সানিয়া এখানে আসলো কি করে? যদি লাইভ থেকে দেখেও থাকে এতো জলদি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসা সম্ভব না। এসবই ভাবছিলো হঠা মানিশা বলে উঠে,”দোস্ত hamdard’ গান টা শুনা ওইটা তোর কন্ঠে বেশ ভালো লাগে।”
মানিশার কথায় সবাই একসাথে বলে উঠে,”ইয়েএএএস!”
আয়াফ কিছু না বলে গিটারে টোন দেয়া শুরু করে। আমি চোখ বন্ধ করে সফট মিউজিক উপভোগ করছি। আয়াফ শুরু করলো,
Pal.. do pal.. ki hi kyun hai zindagi
Is pyar ko hai sadiyan kaafi nahin
To khuda se maang loon
Mohlat main ek nayi
Rehna hai bas yahan
Ab door tujh se jana nahin..
Jo tu mera hamdard hai
Jo tu mera humdard hai
Suhana har dard hai..
Jo tu mera humdard hai
Teri muskuraahatein hain taakat meri
Mujhko inhee se ummid milee
Chahe kare koi sitam yeh jahan..
Inmein hi hai sada hifazat meri
Zindghani badi khoobsurat huyi
Jannat ab aur kya hogi kahin
Jo tu mera humdard hai
Jo tu mera humdard hai
Suhana har dard hai…
Jo tu mera humdard hai
গান শেষ হতেই সবাই ইয়েএএ বলে চেঁচিয়ে জোরে হাততালি দিতে লাগলো। যেই আয়াফ সানিয়ার দিকে তাকালো দেখতে পেলো এক যুবক সানিয়ার হাত ধরে ভিড় ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। কেন জানি না আয়াফের মাথায় রাগ চড়ে বসলো কিন্তু প্রকাশ করলো না। কাল ভার্সিটি যাক তারপর আয়াফ সানিয়াকে বুঝাবে কতো ধানে কতো চাল!
—
আমি মনোযোগ দিয়ে গান শুনছিলাম এমন সময়ই কেউ হাত ধরতেই ঘাবড়ে গেলাম এবং পিছে ফিরে দেখি মাহিদ ভাই। আমি হাফ ছেড়ে বাচি এবনভ বলি,”কি হলো এভাবে টানছিস কেন তুই?”
– কতো রাত হয়েছে খেয়াল করিছিস? দেরি করে গেলে তো ঝাটাই খাবো চল এখানে থেকে!
– আরে আরে আমার তো গানই শোনা হলো না!
– পরে শুনিস!
বলেই একপ্রকার টেনে আমায় ভিড় ঠেলে বাসায় নিয়ে গেলো। রাগে দুঃখে ক্ষোভে রাতে ডিনারই করলাম না রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ি।
পরদিন,
আয়াফ বারবার ঘড়ি দেখছে আর ফাস্ট ইয়ারের ক্লাসের দিকে তাকাচ্ছে। আয়াফকে বারবার ঘড়ি দেখতে দেখে যাহির বলে,”কিরে এতো ঘড়ি দেখছিস কেন?”
– এমনি।
কিছুক্ষণ পর ক্লাস শেষ হলো আর সবাই আস্তে আস্তে বেরোতে থাকে কিন্তু সানিয়াকে দেখা গেলো না। সবার শেষে রোজা আর আলিজা কথা বলতে বলতে বের হচ্ছে কিন্তু তাদের সাথেও সানিয়াকে না দেখে আয়াফ ভ্রু কুচকালো। আয়াফ কিছু না বলে রোজা আর আলিজাকে ডেকে পাঠালো। আয়াফের এমন কান্ডে অবাক হয়ে গেলো তার বন্ধুরা। আয়াফের সাথে তিনয়, যাহির আর নীল আছে। নিশি, মানিশা আয়াফদের এক বছরের জুনিয়র তাই তাদের এখন ক্লাস চলছে। রওজা এসে বলে,”ডেকেছেন ভাইয়া?”
আয়াফ ইনিয়ে বিনিয়ে বলে,”হ্যাঁ ডেকেছি তা তোমাদের ওই স্টুপিড ফ্রেন্ড কোথায়?”
রোজা আর আলিজা একে অপরের দিকে তাকায় অবাক হয়ে। তারপর আলিজা বলে,”ইয়ে মানে ভাইয়া আপনি কি সানিয়ার কথা বলছেন?”
আয়াফ মাথা নাড়ায়। রোজা হেসে বলে,”আজ সানিয়া এবসেন ছিলো ভার্সিটি আসেনি।”
আয়াফ দ্বিধা ছাড়াই বলে উঠে,”কেন?”(অবাক হয়ে)
—” আচ্ছা এই মেয়েটা কি কালকের সেই ছেলেটার সাথেই…. মেয়বি বাট শিওর হওয়া জরুরি!!”(মনে মনে আয়াফ)
– আমরা তো সঠিক জানিনা।
– ফোন দেও ওকে!
সবাই অবাক হয়ে আয়াফের দিকে তাকালো। যে কিনা সানিয়াকে সহ্য-ই করতে পারে না আর আজ তার এতো প্রশ্ন! যাহির ফিসফিস করে নীলকে বলে,”কিরে আজ সূর্য কোন দিক দিয়ে উঠলো?”
– তোর বগোল তলায়!
যাহির নাকমুখ খিচে বলে,”ইয়াক কি বলিস এসব!”
– তাহলে তুই জিগাস ক্যান সূর্য কোন দিকে উঠসে! তুই কি অন্ধ দেখোস না কই উঠসে?
– আহা আহা কুল ব্রো! আই জাস্ট…
– চুপ!!!
নীলের ধমকে আর কিছু বললো না যাহির। এদিকে তিনয় ওদের কথা শুনে মুখ টিপে হাসছে। রোজা বলে,”এ.. এ..খন ফোন দিবো?”
আয়াফ মাথা নাড়ায়। রোজা আর উপায় না পেয়ে সানিয়াকে ফোন দেয় কিন্তু রিসিভ হয়না। আয়াফ বলে,”আবার দাও আর হ্যাঁ অবশ্যই লাউড স্পিকার দিয়ে!”
রোজা মাথা নাড়িয়ে আবার কল দেয় লাউড স্পিকার দিয়ে! সানিয়া বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। হঠাৎ ফোনের শব্দ আর ভাইব্রেশনে ঘুমের মাঝেই ভ্রু কুচকালো। যখন ভাইব্রেশন আর শব্দটা তীব্র হয় তখনই সানিয়ার মাথা ধরে গেলো তাই আর উপায় না পেয়ে ভ্রু কুচকে চোখ বুজেই হাত দিয়ে এদিকে সেদিক খুঁজে অবশেষে পেলো। তারপর নাম্বার না দেখেই রিসিভ করে রাগানবিত কন্ঠে বলে,”কোন ইন্দুরের ছাও রে এত্তো সকালে আমারে ডিস্টার্ব করোস?”
রোজা একবার আয়াফের দিকে তাকায়। সকলে বুঝে যায় সানিয়া ঘুমাচ্ছিলো। আয়াফ চোখের ইশারায় কথা বলতে বলে। রোজা বলে,”সানিয়া আমি রোজা!”
সানিয়া বিরক্তির সুরে বলে,”তোর আবার কোন জামাই পলাইসে?”
রোজা কি বলবে বুঝে উঠতে পারলো না। এই সানিয়া তো মাতালের থেকেও ঘুমন্ত অবস্থায় বেশি ভয়ানক। রোজা অসহায় দৃষ্টিতে আয়াফের দিকে একবার আরেকবার আলিজার দিকে। যাহির, নীল আর তিনয় হাসি থামাতে পারলো না তাই তারা কিছুটা দূরে গিয়ে জোরে জোরে হাসতে থাকে। আয়াফ চোখ গরম করে ওদের দিকে তাকায় কিন্তু তবুও ওরা হাসি থামাতে পারছে না।”
রোজার হাত থেকে আলিজা ফোনটা নিয়ে বলে,”ওই ফাইজলামি কম কর! আগে বল তুই ভার্সিটি আসিস নি কেন?”
– আমি কি ভার্সিটির ওয়াশরুমে বসে আছি যে বললেই টুপুস করে ভার্সিটি চলে আসবো?
এবার আয়াফের রাগ চরম পর্যায়ে চলে গেলো। ঘুমন্ত অবস্থায় এসব আজাইরা প্যাচাল মানুষ কিকরে করে ভাই? আয়াফ চেঁচিয়ে ধমক দিয়ে বলে,”কথাকে অলয়েজ এতো প্যাঁচাও কেন?”
আয়াফের ধমক খেয়ে সানিয়া লাফ দিয়ে উঠে বসে। ঘুম জানালা দিয়ে পালিয়ে গেলো তার। তারপর ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো নাহ এটা তো রোজারই নাম্বার তাহলে আয়াফ চেঁচালো কোথা থেকে? সানিয়া কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,”আআআলিজা ওই ভিভিভিলেইন টটটা কি তোর আশেপাশে আছে?”
আলিজা সাথে সাথে আয়াফের দিকে তাকালো। আয়াফ ততক্ষণে নিজের রাগ কান্ট্রোল করে ইশারায় বলে যেনো আয়াফের কথা সে না জানে। আলিজা বুঝতে পেরে আমতা আমতা করে বলে,”কককই মাথা কি তোর গেলো নাকি আয়াফ ভাই কোথা থেকে আসবে?”
সানিয়া হাফ ছেড়ে বাচে। আয়াফ রাগে ফুসছে সানিয়া তাকে “ভিলেইন” বলায়। আলিজা আবার বলে,”ভনিতা না করে বল কেন আসিসনি ভার্সিটিতে?”
– ঢাকা থাকলে তো যাবো। দুইদিন ভার্সিটি যাবো না!
– কেন কেন কই আছিস তুই??
– চট্টগ্রাম।
বলেই আরও কিছু বলতে নিলো তখনই মাহিদ চেঁচিয়ে সানিয়াকে দরজা খুলতে বলছিলো। সেই কন্ঠ ফোন ভেদ করে আয়াফ, আলিজা আর রোজার কানেও গেলো। সানিয়া পরে কথা বলবো বলে ফোন কেটে দেয়। আয়াফ মনে মনে ভাবছে,”ওও আচ্ছা তাহলে আমার সন্দেহই ঠিক, ওই ছেলেটার সাথে একই বাড়িতে….. আই ডোন্ট কেয়ার। জাহান্নামে যাক ওই মেয়ে!”
আয়াফ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,”থ্যাংকস তোমরা এখন নিজ নিজ বাসায় যাও।”
আয়াফের এমন বিহেভে রোজা আর আলিজা আগা মাথা কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা। হ্যাবলার মতো এদিক সেদিক তাকিয়ে চলে যায়। ওরা চলে যেতেই নীল কাজ আছে বেরিয়ে গেলো। নীল চলে যেতেই যাহির আয়াফকে পেঁচার মতো ধরলো।
– কিরে তুই হঠাৎ ওই মেয়েকে নিয়ে লাগলি কেন ওই মেয়ে আসলো কি আসলো না তাতে তোর কি?
আয়াফ কোনোরকম রিয়েকশন না নিয়ে বলে,”কিছু না!”
– কিছু না বললেই হলো নাকি? যাহির আমার তো মনে হচ্ছে তলে তলে কিছু একটা তো হচ্ছে।
– জাস্ট শাট আপ।
– ওয়াই ব্রো হি ইজ রাইট কজ আই হেভ এগ্রি উইথ হিম!
– listen i have no interest in her so you guys stop this topic!(রেগে)
যাহির আর তিনয় যা বুঝার বুঝে গেলো তাই তারা আর কিছু বললো না। আয়াফ রেগে সেখান থেকে হনহন করে চলে গেলো।
★
– ওই ছ্যাড়া তুই সক্কাল সক্কাল আমারে জ্বালাতে আসছোস ক্যান?
– তুই দরজা খোল চিংগাম!
– খবরদার আমারে চিংগাম ডাকবি না নইলে তোর ঘাড় থেকে তোর মগজ আলাদা করে দিবো।
– কিসের পড়াশোনা করোস তুই? ওয়ান টু এর বাচ্চারাও জানে মগজ ঘাড়ে না মাথায় থাকে!
– কিন্তু তোর মাথায় কোনো কালেই মগজ ছিলো না সব গলে ঘাড়ে চলে আসছে তাই তোর এতো ভিমরতি!(দরজা খুলতে খুলতে)
– কি বললি তুই? কিসের ভিমরতি?(রেগে)
– এইযে রাত জাইগা ছাদে উড়তে উড়তে প্রেম করোস!
বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। তখনই আমার চুল টেনে দিয়ে মাহিদ বলে,”ওও আচ্ছা তাই? আমার প্রেম দেখে তোর জ্বলে তাইনা?”
– উফফফ ছাড় ভাইয়া! তোর প্রেম দেইখা আমি ক্যান জ্বলতে যাবো?
– এইযে তোর মতো পেত্নির দিকে কেউ ফিরেও তাকায়না তাই প্রেমও করতে পারোস না।
আনার চুল মাহিদের হাত থেকে ছাড়িয়ে কিছুটা দূরে গিয়ে বলি,”আমার কপালে রাজকুমার আছে বুজ্জোস! আর মুনতাহা আপুর কপাল তো পুড়সে তোর মতো জঙ্গলি হনুমানরে চুজ করে!”
মাহিদ রেগে বলে,”কি বললি তুই? আমি জঙ্গলি বানর?”
– বানর না হনুমান!
– পেত্নি ডাইনি আজ তোরে তো আমি…
বলেই আমার দিকে তেড়ে আসছে আমি দৌড়ে নিচে গিয়ে বড় মামীর পিছে গিয়ে লুকালাম আর বাচ্চা বাচ্চা ফেস করে বললাম,”মামী দেখো না তোমার ওই হিজলা ছেলেটা আবার আমাকে মারতে আসতাসে!”
জুই হেসে দেয় তারপর আবার চোখ গরম করে মাহিদের দিকে তাকিয়ে বলে,”মাহিদ তোর সাহস তো কম না তুই আমার মেয়েটারে মারতে আসিস! হাত পা ভেঙে ঘরে বসিয়ে দিবো তোকে!”
– কিন্তু মা…!
– কোনো কথা না যা তোর বাবা তোকে তার অফিসে যেতে বলেছে সেখানে গিয়ে কাজ কর আজাইরা বাসায় বসে থাকতে হবে না তোকে।
মাহিদ মাথা নাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বকতে বকতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। আমি এদিকে মুখ টিপে টিপে হাসছি। এমন সময়ই মা এসে বলে,”কিরে সানিয়া তুই এখনো ফ্রেশ হসনি? কয়টা বাজে দেখেছিস যা তাড়াতাড়ি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয় খেতে বসবি!”
আমি মাথা নাড়িয়ে উপরে চলে আসলাম ফ্রেশ হতে। জুঁই হেসে হেসে নিলুফাকে বলে,”দেখেছো ননদী.. ছেলে মেয়ে দুটোকে কতোটা মানিয়েছে?”
– হুম কিন্তু ভাবি ওদের ভাইবোনের সম্পর্কটা অন্য সম্পর্কে নিয়ে যাওয়া টা কি ঠিক হবে?
– আলবাদ হবে! ওরা দুজন-দুজনার জন্যই তৈরি!
– কিন্তু ওদের মারামারি ঝগড়াঝাটি…
– চিন্তা করিও না বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে আরতো মাত্র এক বছর বাকি!
– কিন্তু….
– দেখো ননদী তুমি কিন্তু কথা দিয়েছো। কথার খেলাফ আমি পছন্দ করিনা তা তো তুমি জানো-ই তাই আর কথা বাড়িয়ো না। মাহিদ সবদিক দিয়েই পারফেক্ট তোমার মেয়ের জন্য। আর আমার মাহিদের জন্য এর চেয়ে ভালো মেয়ে আমি কোথাও খুঁজে পাবো না।
ভাবীর কথায় আর কিছু বলতে পারলো না নিলুফা। শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে। জানেনা আল্লাহ তাদের ভাগ্যে কি রেখেছে।
★
রোজাকে বিদায় দিয়ে আলিজা রিক্সা খুঁজছে কিন্তু একটাও পাচ্ছে না। এই ফাটা রোদে হেঁটে বাসায় যাওয়াও কষ্টকর। তার উপর আলিজার বাসা এতোটাও কাছে নয়। শটকার্টে হেঁটে গেলে ১ ঘন্টা তো লাগবেই। এমন সময়ই নীল বাইক নিয়ে আলিজার সামনে দাঁড়ালো। নীলকে চিনতে আলিজার সময় লাগলো না সে হেসেই বলে,”আরে তুমি? তুমি না তোমার বন্ধুদের সাথে চিলে?”
– হুম ছিলাম এখন বাইকে উঠো! আমি তোমায় ড্রপ করে দিয়ে আসি।
আলিজাও মুচকি হেসে নীলের পিছে গিয়ে বসলো। নীলও মুচকি হেসে বাইক স্টার্ট দেয়। কিছুটা দূরে গিয়ে একটা চকলেট শপের সামনে এসে থামে। আলিজা অবাক হয়ে বলে,”এখানে কেন?”
– চকলেট ডে তে তো তোমায় চকলেট দিতেই পারি?
আলিজা হেসে বলে,”ওহ কাম অন নীল, আজ এপ্রিলের ১৮ তারিখ চকলেট ডে কই থেকে আসলো?”
নীল বলে,”যাক ধরতে পেরেছো আমার ভুল! এখন ম্যাডাম আসেন আমি শপে ঢুকি?”
আলিজা মাথা নাড়িয়ে বাইক থেকে নেমে পরে। নীল আলিজাকে একটা ইয়া বড় ডেইরি মিল্ক চকলেট কিনে দেয়। আলিজা তো সেই খুশি।
চলবে!!