জুনিয়র_পদ্ম #পর্ব–১৪,১৫

#জুনিয়র_পদ্ম
#পর্ব–১৪,১৫
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
১৪

জায়ান আর পদ্ম কিছু সময় আগে জেসিদের বাসায় এসে পৌঁছায়।এ বাসায় এসে পদ্ম জানতে পারে জেসির জন্য খুব ভালো একটা বিয়ের ঘর আসছে। কিন্তু জেসি বিয়ে করবে না বলে জেদ ধরে বসে আছে, আর সে জন্যই রফিক জায়ান আর পদ্ম কে আসতে বলেছে। তাঁরা যেন বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করায় জেসি কে।খবর টা শুনার পর থেকে পদ্ম খুব এক্সাইটেড হয়ে আছে,জেসির বিয়েতে কি কি করবে এর মধ্যেই পরিকল্পনা করতে শুরু করে দিয়েছে।কথায় আছে না”যার বিয়ে তার খবর নেই পারা-প্রতিবেশির ঘুম নেই”। এখন দেখা যাচ্ছে কথাটা একদম বাস্তব।
যাই হোক,
জেসি জায়ান পদ্ম কে দেখে খুব খুশি হয়, কাজের মেয়ে সুমি কে দিয়ে অনেক রকমের ফল নিয়ে আসে জায়ান পদ্ম’র জন্য। খেতে খেতে পদ্ম বললো,
–“আপু পাত্র কে একটু দেখো না? তারপর না হয় সিদ্ধান্ত নিবে।আর দেখতে আসলেই তো বিয়ে হয়ে যায় না তাই না। আমাকে কতো সত লোক দেখতে আসছে ভাবতেও পারবে না তুমি।ক‌ই আমার কি অন্য কোথাও বিয়ে হয়েছে বলো?

পদ্ম’র কথা শুনে জেসি নিজের বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
–“আচ্ছা এই ব্যাপার! তোমাদের বাপি আসতে বলেছে তাই তো?তাই বলি হঠাৎ আমাদের বাসায় তোমাদের আগমন। এখন বুঝতে পারছি আসল ঘটনা কোথায়।

মেয়ের কথা শুনে করুন চোখে তাকায় রফিক।জারা দুষ্টুমি করে বলে,
–“বাপি তো ঠিক কাজ করেছে।বুরি হয়ে যাচ্ছো দিন কে দিন! এখন যদি তোমাকে শ্বশুর বাড়ি পাঠানো না হয় তাহলে তো তোমাকে কেউ তাদের ঘরের ব‌উ করবে না বুরি বলবে সবাই। তখন কি হবে বলো তো?

জারার কথা শুনে রেগে যায় জেসি,আর বলে,
–“শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার শখ নেই আমার।তোর ইচ্ছে হলে বলে দে ঐ ছেলের সাথে তোকে বিয়ে দিয়ে দেই।আর আমি সারাজীবন বাপির সাথে থাকবো।

এবার জায়ান বললো,
–“এভাবে তুমি কতদিন থাকবে? পাঁচ বছর দশ বছর? কিন্তু একসময় ঠিক আফসোস করবে তখন নিজের প্রতি নিজের বিতৃষ্ণা চলে আসবে। একাকীত্ব বোধ করতে করতে শেষ শেষ হয়ে যাবে।
–“বাপি তো থাকবে, তাহলে একাকীত্ব বোধ কেন করবো?

রফিক মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
–“মা’রে বাপি তো সারাজীবন বেঁচে থাকবো না। তখন তো আমি মরেও শান্তি পাবো না।
–“বাপি এমন ও হতে পারে আমার মৃত্যু তোমার আগে হয়ে গেল! মৃত্যু তো আর বয়স দেখে হয় না তাই না?

জেসির কথা শুনে পদ্ম জায়ান বুঝতে পারলো, তাকে বুঝানো সহজ কাজ নয়। তাদের অন্য কোন উপায় ভাবতে হবে।
______
জায়ান বসে বসে ফোন স্ক্রল করছে আর পদ্ম পায়চারি করছে, জেসি কে কি করে রাজি করানো যায় ভেবে পায় না সে। পায়চারি করতে পদ্ম বললো,
–“কিছু আইডিয়া দিন না, বসে বসে ফোন ইউজ করলে মাথায় কিছুই আসবে না।

কথাটা শেষ করে পাশে তাকিয়ে দেখে জায়ান নেই! পদ্ম ঠোঁটে আঙুল রেখে ভাবনার ভঙ্গিতে বললো,ইমা,, কোথায় গেলেন উনি? দূর ভাল্লাগে না কচুর মাথা। এতো দুশ্চিন্তা আমার এই ছোট্ট মাথাটা নিতে পারে?

নিজে নিজে খানিকক্ষণ বকবক করে পদ্ম। তখন এসে পদ্ম কে খাটে বসিয়ে হাতে চুড়ি পড়িয়ে দেয়। আজকে চেক শাড়ি পরেছে পদ্ম, হাতে সোনালী এক জোড়া চুড়ি পরেছে,যা দেখে জায়ান অনলাইন থেকে কাঁচের চুড়ি অর্ডার করে আনে।আর এখন হাতে পরিয়ে দিচ্ছে। হলদে ফর্সা রাঙা হাতে ফুটে উঠেছে যেন চুড়ি গুলো। পদ্ম নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলো, চুড়ির শব্দের জংঙ্কারের সাথে পদ্ম’র হাসি ও যেন খেলে যাচ্ছে।জায়ান প্রশান্তির হাসি হাসে, তারপর চুলের খোঁপায় বেলি ফুলের গাঁজরা সেট করে দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে নিয়ে যায় পদ্ম কে। তারপর পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে পদ্ম’র কাঁদে থুতনি রাখে জায়ান।দুই হাত দিয়ে লজ্জায় মুখ ঢেকে রাখে পদ্ম,মাঝে মাঝে আঙুলের ফাঁকে জায়ান কে দেখে যা দেখে বিস্তৃত হাসে জায়ান। একটু পর জায়ান কে চমকে দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পদ্ম বললো,
–“জাযাকা আল্লাহু খাইরন ওয়া দুনিয়া ফিল আখিরাহ।মি.নির্ঘুম।

যে মেয়েটা এতোক্ষণ লজ্জা রাঙ্গা হয়ে ছিল হঠাৎ তার কি হলো কিছুই বুঝতে পারলো না জায়ান।তাই মিনমিন করে জবাব দিলো,
–“ওয়া আনতুম ফা জাযাকা আল্লাহু খাইরন ওয়া দুনিয়া ফিল আখিরাহ।

তারপর জায়ান কে ছেড়ে দিয়ে পদ্ম বললো আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিব, আপনার জন্য‌ই দারুন আইডিয়া খুঁজে পেলাম।জায়ান কিছুই বুঝতে পারলো না, কিসের কথা বলছে পদ্ম। পদ্ম কে খাটে বসিয়ে জিজ্ঞাসা করল জায়ান কি হয়েছে? পদ্ম বললো,
–“জেসি আপু কে বিয়েতে রাজি করানোর আইডিয়া খুঁজে পেয়েছি! আপনি শুধু আমাকে একটু সাহায্য করবেন তাহলেই হবে।
–“কি করতে হবে বলেন?

পদ্ম জায়ান কে সবটা বুঝিয়ে দেয় কি কি করতে হবে।জায়ান সবটা শুনে বললো,
–“এতে কি কোন কাজ হবে বলেন তো?
–“ইনশা আল্লাহ হবে মনে হচ্ছে। তখন আমাদের দুজনকে একসাথে দেখে,জেসি আপু দাড়িয়ে থেকে তাকিয়ে ছিল। তখন মনে হয়েছে এই ভাবেই আমরা বুঝাতে পারবো জেসি আপুকে।
–“আচ্ছা দেখুন কতোটা কাজ হয়, আপনার সাথে রোমান্স করতে আমি এক পায়ে দাঁড়িয়ে।হা হা হা,,,
–“আচ্ছা তো আপনি আছেন সুযোগের সদ্ব্যবহার করার ধান্দায় তাই না?
–“হা হা হা,,,
________
খাবার টেবিলে বসে জায়ান পদ্ম কে খাইয়ে দিচ্ছে।জেসি তা দেখে বললো,
–“পদ্ম তুমি কি অসুস্থ? না মানে জায়ান নিজে না খেয়ে তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছে তাই জিজ্ঞাসা করছি।

পদ্ম খাবার চিবুতে চিবুতে বললো,
–“নিজের হাতে খেতে খেতে আর ভালো লাগে না তা ছাড়া বরের হাতে খাবার খাওয়ার মজাই আলাদা বুঝলে আপু। ইচ্ছে করে সব সময় উনার হাতেই খাবার খাই। তাছাড়া জায়ানের আম্মুর হাতে ও খেতে ভারি মজা। তারপর আব্বু (জায়ানের আব্বুর) যখন আমার জন্য হাতে করে দুটো চকলেট কিনে নিয়ে আসে, তখন আমার কি যে আনন্দ লাগে বলে বুঝাতে পারবো না তোমাকে।
–“আচ্ছা ঠিক খাও তুমি।

জেসি মনে মনে বলে, বললাম একজনের কথা আর ও পুরো পরিবার নিয়ে শুরু করে দিল। জারা বুঝতে পারলো এতে জেসি কিছুটা বিরক্ত ফিল করেছে।তাই মুচকি হাসি দিয়ে জেসির আড়ালে পদ্ম কে লাইক দেয় জারা।আর বুঝায় চালিয়ে যাও আপু,জয় হবেই ইনশা আল্লাহ।
যাই হোক পদ্ম ও হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নয়,সে তার মতো করেই চালিয়ে যেতে লাগলো। খাওয়া শেষে জায়ানের আঙ্গুলে দিয়ে দিল এক কামড়।জায়ান আহ্ শব্দ করে উঠে, এতে করে চোখ ছোট করে তাকায় জেসি।
এদিকে জায়ান ব্যাথা পেলেও পদ্ম কে বলে, –“আমার ও দিন আসবে তখন এই ঋণ শোধ করে দিব।

জারা কৌতুহল নিয়ে বললো,
–“কিসের ঋণ ভাইয়া?
–“এই যে তোমার আপু আমাকে লাভ বাইট দিল সেটা ফেরত দিতে হবে না?

পদ্ম মিছে রাগ দেখিয়ে বললো,
–“এই বাচ্চা মেয়েটা কে কি সব বলছেন আপনি?
–“ওর শিখা উচিৎ তাহলে ভবিষ্যতে জারা ও এরকম ঋন শোধ করতে পারবে।

জারা ও সায় দিয়ে বললো,
–“একদম ঠিক ভাইয়া,সে আমাকে কামড়ে দিবে আমি কি তাকে ছেড়ে দিব নাকি হুহ।

জায়ান ভুল ধরিয়ে দিয়ে বললো,
–“এটা লাভ বাইট বুঝলে নট কামড়া-কামড়ি।
–“জ্বি, ভাইয়া একদম বুজে গেছি।

জেসি খানিক রেগে বললো,
–“মারবো এক চর ফাজিল কোথাকার। নিজের বড় বোনের এখনো বিয়ে হয়নি আর সে কিনা কিসব শিখতে শুরু করে দিয়েছে।

জেসির কথায় মুচকি হাসে জায়ান পদ্ম।আর জারা ভাব নিয়ে বললো,
–“আপু তুমি তো বিয়ে করবে না, ভাবছি ঐ ডাক্তার কে আমিই পটিয়ে বিয়ে করে নিব। আজকাল সচরাচর এরকম ডাক্তার পাওয়া মুশকিল বুঝলে?

জায়ান জারার সাথে তাল মিলিয়ে বললো,
–“জারা আমি তোমার সাথে একমত আছি, তুমি এগিয়ে যাও আমরা আছি তোমার সাথে।

জেসি তাড়াতাড়ি করে খাবার শেষ করে উঠে চলে যায়। তারপর তিন জনে মিলে হাতে হাত মিলিয়ে হাইফাই করে।জারা বলে,
–“আমি কিন্তু বুঝতে পারছি তোমাদের প্লান।

পদ্ম বললো,
–“তাই না পাকা মেয়ে।

তারপর তিন জনে মিলে হাসে। রফিক এসে বললো,
–“তিন জনে মিলে কি নিয়ে এতো মজা করছো শুনি?

জারা সংক্ষেপে সবটা বুঝিয়ে বললো বাপি কে। রফিক শুনে খুশি হয়ে বললো,
–“তোমরা যদি জেসি কে রাজি করাতে পারো তাহলে তোমাদের জন্য পুরস্কার আছে! জানি তোমরা এখন বলবে পুরষ্কার চাই না কিন্তু এটা শুধু পুরষ্কার নয় এতে থাকবে আমার ভালোবাসা।

রফিক সাহেবের এরকম আবেগি কথায় আর কিছু বলতে পারলো না কেউ।
________
ইয়া বড় একটা ডল নিয়ে এসে পদ্ম কে সারপ্রাইজ দিল জায়ান। পদ্ম প্রথমে খুশি হলেও পরে মন খারাপ করে বললো,
–“আব্বু আমার কোন ডল ঘরে রাখতে দিত না বলতো, এগুলোর জন্য ঘরে ফেরেস্তা আসে না এবং কি নামাজ হয় না।
–“আচ্ছা তাহলে আমাকে বেবি দিন তাড়াতাড়ি!
–“মানে? এখন আমি কোথায় থেকে বেবি আনবো?
–“চলুন আপনাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি।

এই বলে পদ্ম কে জায়ান কোলে তুলে নিয়ে রুমে নিয়ে গেল। এদিকে জেসি দাঁড়িয়ে থেকে সবটা শুনলো, কিন্তু তার প্রতিক্রিয়া কি বুঝা যাচ্ছে না।
আসলে জায়ান পদ্ম সবটাই জেসি কে শুনানোর জন্য করলো।

#চলবে,, ইনশা আল্লাহ।

#জুনিয়র_পদ্ম
#পর্ব–১৫
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

বেলা এগারোটা তেরো বাজে,ঘুম ঘুম চোখে শিড়ী দিয়ে নামছে জেসি,নেমে আসে পাশে তাকিয়ে দেখে লোকজন ঘর সাজাতে ব্যস্ত!এভাবে হঠাৎ করে কেন ঘর সাজাচ্ছে? জেসি কিছুই বুঝতে পারলো না। কিচেনে ও দুই জন মহিলা রান্না বান্না করতে ব্যস্ত! রফিক সোফায় বসে পত্রিকা পড়ছে, সেখানে এগিয়ে গিয়ে জেসি জিজ্ঞাসা করলো,
–“বাপি বাসায় আজকে কিছু আছে নাকি? এতো আয়োজন কিসের জন্য?

রফিক পত্রিকার পাতা উল্টাতে উল্টাতে বললো,
–“ডাক্তার ছেলেটা কে আজকে আসতে বলেছি।

জেসি সোফায় বসে কুশন খুঁটতে খুঁটতে ভাবছে, আমি তো কাউকে বলিনি ঐ ছেলেকে আসার ব্যাপারে! তাহলে এরা কিভাবে জানলো?
তখন জারা অনেক গুলো শাড়ি নিয়ে এসে বললো,
–“বাপি দেখ তো কোন শাড়িটা পরবো আমি?

জেসি বললো,
–“শাড়ি পরে কোথায় যাবি তুই?

জারা লাজুক হেসে বললো,
–“কোথায় যাবো? আমি তো আজকে বাড়িতেই থাকবো।ডাক্তার মশাই আসবে আমাকে দেখতে!বাপি বলো না কোন শাড়িটা পরলে ডাক্তার মশাই আমাকে বেশি পছন্দ করবে?

জারার কথা শুনে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায় জেসি।সে ভাবতেই পারেনি এমনটা,জারা যে সত্যি সত্যি বিয়ে করার জন্য এতো লাফাবে। অথচ কাল রাতে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে বিয়ে করবে। এখন নিজের সাথে নিজের রাগ হচ্ছে আগে কেন রাজি হলো না সে? এখন সবাই কে কিভাবে বুঝাবে?এই মেয়ে বিয়ে করবে বলে যেভাবে লাফাচ্ছে।
এতোক্ষণে লোকগুলো বাড়িটা সুন্দর করে গুছিয়ে, সাজিয়ে চলে গেছে।তাই পদ্ম নিচে নেমে আসে। এসে জারা কে বললো,
–“জারা তুমি সবুজ রঙের শাড়িটা পরো। তোমাকে খুব মানাবে এই রঙটাতে।জেসি আপু আমি ঠিক বলেছি না?

জেসি আমতা আমতা করে বললো,
–“ওর কি বিয়ের বয়স হ‌য়েছে নাকি?পুচকি একটা মেয়ে,এখনি বিয়ের জন্য ধেই ধেই করে নাচছে। পদ্ম তুমি ও কি ওর সাথে পাগল হলে?
–“জেসি আপু তুমি বুঝতে পারছ না এরকম ডাক্তার তো সচরাচর পাওয়া যায় না।
–“আমি বুঝতে পারছি না তোমরা ডাক্তারের জন্য এভাবে পাগল হয়েছ কেন? দেশে অন্যান্য ভালো পেশার মানুষ নেই নাকি? এর থেকে কতো ভালো পেশার মানুষ আছে।

জারা বাচ্চাদের মত বায়না ধরে বললো,
–“আপু আমি এই ডাক্তার কেই বিয়ে করবো।

জেসি ধমকের সুরে বললো,
–“বেয়াদব মেয়ে মারবো এক চর, তোর বড় বোন বিয়ে করেছে?যে তুই এভাবে ধেই ধেই করে নাচছিস?
–“তুমি কি বিয়ে করবে নাকি?
–“অবশ্যই করবো!

জেসি মুখ ফসকে বলে ফেলে কথাটা। সবাই বিষ্ময় নিয়ে তাকায় জেসির দিকে। জেসি করুন চোখে তাকায় সবার পানে। রফিক হাসতে হাসতে বললো,
–“এই না হলে আমার মেয়ে,সাবাস বেটি।

জায়ান আর ড্রাইবার বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে ডুকে বাসায়। রফিক কাছে গিয়ে বললো,
–“জায়ান মিষ্টি মনে করে এনেছো তো?
–“জ্বি আংকেল এনেছি।

তারপর জারা কে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“জারা তুমি এখনে দারিয়ে আছো কেন?রুপচর্যা শুরু করে দাও,ডাক্তার যেন এক দেখাতেই পছন্দ করে নেয়।

জেসি কোমরে হাত রেখে বললো জায়ান??
জারা কাঁদো কাঁদো মুখশ্রী করে বললো,
–“ভাইয়া ডাক্তার কে আমার আর পাওয়া হবে না এ জীবনে।
–“কেন কেন?
–“আপুই নাকি ডাক্তার কে বিয়ে করবে।

জায়ান বাজারের ব্যাগ রেখে এসে বললো,
–“থাক দুঃখ করো না, তোমার বোনের আগে বিয়ে দেওয়া উচিৎ বুঝলে দিন দিন তো বুড়ি হয়ে যাচ্ছে।ওর বিয়ে দিয়ে তোমার জন্য কিউট দেখে একটা বর খুঁজে আনবো কেমন?

জেসি বললো,
–“জায়ান ভালো হচ্ছে না কিন্তু, আমাকে কোন দিক থেকে তোমার বুড়ি মনে হয়?

সবাই হাসতে হাসতে শেষ এদের কথাপোকথনে।
________
যথা সময়ে পাত্র পক্ষ দেখতে আসলো জেসি কে। পদ্ম খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দেয় জেসি কে।জারা বোন কে নিয়ে আসে তাদের সামনে। একপর্যায়ে জেসি পাত্র কে দেখে চোখ গুলো বেশ বড় করে তাকায়। কারণ পাত্র হচ্ছে ঢাকা মেডিকেলের ডাক্তার জিসান!জায়ান কে ঘিরে যার সাথে ঝগড়া করে জেসি।
জেসির বিষ্ময় ভরা মুখশ্রী দেখে মুচকি হাসে জিসান। তারপর ভ্রু জোড়া নারিয়ে বোঝায়, কেমন চমক দিলাম বলেন?
অসহায় জেসি সকলের সামনে কিছু বলতে ও পারে না সহিতেও পারে না। জিসানের মা বললো,
–“ভাই আমাদের তো মেয়ে পছন্দ হয়েছে। আপনি যদি অনুমতি দিন তাহলে আমি ওকে আজকেই রিং পড়িয়ে যেতে চাই!

রফিক খুশি মনে সম্মতি দিয়ে দিল। তারপর তিনি ও জিসান কে রিং পড়িয়ে দিলেন। বিয়ের তারিখ ঠিক করা হলো দুই সপ্তাহ পর কারণ জিসান ছুটির জন্য আবেদন করেছে,এর মধ্যে আশা করা যায় আবেদন মঞ্জুর করা হবে। সবশেষে দু’জনকে আলাদা কথা বলতে দেওয়া হয়। রফিক জেসি কে বললো তার রুমে জিসান কে নিয়ে যেতে।জেসি বাদ্য মেয়ের মত তাই করে।
রুমে গিয়ে জেসি মাথা নিচু করে চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকে, এই মুহূর্তে সব লজ্জা গুলো যেন ঘিরে আছে তাকে। জিসান ঘুরে ঘুরে রুমটা এক পলক দেখে নেয়। তারপর বলে,
–“কি বসতে বলবে না?

জেসি কোনরকম বললো,জ্বি বসুন।
জিসান বসতে বসতে বললো,
–“আমি কিন্তু এখন থেকেই তোমাকে তুমি করে বলবো। আমার এতো ঘুরিয়ে কথা বলতে ভালো লাগে না।সব কথা সোজা সাপ্টা । তুমিও বসো?
–“না ঠিক আছে।
–“বসতে বলছি।

হঠাৎ উচ্চ কন্ঠস্বর শুনে বরকে যায় জেসি, সাথে সাথে এক পাশে বসে পরলো।জেসির ভিতু মুখশ্রী দেখে বিস্তর হাসে জিসান।যার কারণে তাকিয়ে থাকে জেসি। জিসান হাসির রেশ ধরেই বললো,
–“সরি একটু ফান করলাম, কিছু মনে করো না যেন। তোমার এই ভিতু মুখশ্রী টা দেখতে আমার সেই লাগে। বিয়ের পর তোমাকে এভাবেই চমকে দিব, তখন আবার রাগ করে বাপের বাড়ি আসা চলবে না কিন্তু।

জেসি চুপটি করে শুনেই যাচ্ছে, লোকটার কথা বলার ধরন খুব সুন্দর।তাই যেন শুনতেই ইচ্ছে করছে।
জিসান আবার বললো,
–“তো তোমাদের বিজনেস কেমন চলছে?কয়েক বছর হলো তুমি নাকি জয়েন করেছো ?
–“জ্বি ভালো।
–“তো বিয়ের পর প্লান কি?
–“কিসের প্লান?
–“এই যে সংসার তার উপর বাবার বিজনেস। কোন টা রেখে কোনটা সামলাবে? দুটো তে তো হিমসিম খেতে হবে।পারবে তো সামলাতে? অবশ্য তুমি চাইলে বিজনেস ছেড়ে দিতে পারো, অবশ্যই আমি ফোর্স করছি না কিন্তু।
–“আমি দুইটাই কনটিনিউ করতে চাই বাকি টা আল্লাহ তা’আলা ভালো জানেন। আমি থাকলে বাপির কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়।তাই আফিস করতে চাই আমি। এতে আপনার ফ্যামিলির কোন প্রবলেম হবে না তো?
–“অবশ্য‌ই না। তুমি নিশ্চয় জানো না আমার মা একজন কলেজের শিক্ষিকা আমার বোন কিছুদিন পর ডাক্তার হবে ইনশা আল্লাহ। সেখানে তোমার কাজ টা অবশ্য‌ই মূল্যায়ন করা হবে আমি কথা দিচ্ছি।

এরকম দুজনের মাঝে অনেক রকম কথা আদান প্রদান হয়। জিসান রা মাগরিব এর আযানের পূর্বেই চলে যায়। বাসায় আনন্দের বন্যা বয়ে যায় যেন। রফিক ঠিক করেন এই খুশিতে গরিব মিশকিন দের এক বেলা খাবার এবং পোশাক বিতরণ করবেন।আর জায়ান পদ্ম’কে পুরষ্কার হিসেবে রাঙামাটি হানিমুনে যাওয়ার সমস্ত বন্দোবস্ত করে দেন এবং আগামীকাল ই র‌ওনা হতে হবে তাদের।যেন জেসির বিয়ের আগেই ফিরে আসতে পারে তারা। পদ্ম খুব খুশি এই প্রথম সে এতো দূরে যেতে পারবে, তার উপর রাঙামাটি ঝুলন্ত ব্রিজে যাওয়ার খুব ইচ্ছে পদ্ম’র। যেখানে সিকান্দার বক্স এখন রাঙামাটি নাটকটা করা হয়েছে।

জারা কে পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয়,ডায়মন্ড ইয়ারিং।
এর মধ্যে রফিক নিমন্ত্রণ কার্ড তৈরি করার জন্য অর্ডার দিয়ে দিয়েছেন।
জাহানারা আহসান বাড়িতে যেন খুশির আমেজ বিরাজ করছে চারিদিকে। রফিক তার মৃত স্ত্রী জাহানারা কে স্মরন করে চোখের পানি ফেলে বলে আজ জাহানারা বেঁচে থাকলে কতো খুশি হতো। সাথে জেসি জারা ও কেঁদে কেটে একাকার। মায়ের আদর পায়নি দুই বোন, একটা আফসোস সারাজীবনের জন্য তাদের রয়ে যাবে।
_______
জেসি বারান্দায় দাঁড়িয়ে কপির মগে চুমুক দিতে দিতে জিসান এর কথা ভাবছে। তখন ফোনে রিং টোন বেজে ওঠে। বারান্দা থেকে রুমে এসে মগটা রাখতে রাখতে কল কেটে যায়।জেসি বারান্দায় আবার পুনরায় ফিরে যেতে নিলে আবার কল বেজে ওঠে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার,কল রিসিভ করবে নাকি ভাবছে। তারপর রিসিভ করে নেয়।ওপাস থেকে কেউ কথা বলছে না দেখে জেসি রেগে গিয়ে বললো,
–“কথা না বলার ইচ্ছা না থাকলে কল করেন কেন?যত্তোসব।

তখন ওপাশ থেকে সালাম দেয়,
–“আসসালামু আলাইকুম।

জেসির কন্ঠস্বর চিনতে ভুল হলো না। কিছু সময় চুপ থেকে জবাব দেয়,
–“ওয়ালাইকুমুস সালাম।

#চলবে,,, ইনশা আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here