টুয়েন্টি_মিনিটস (চ্যাপ্টার-০২),পর্ব:-০১

#টুয়েন্টি_মিনিটস (চ্যাপ্টার-০২),পর্ব:-০১
লেখা: ShoheL Rana শামী

সন্ধ্যা। সড়কের বাতিগুলো ধীরে-ধীরে জ্বলে ওঠছে। হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহনগুলো রাস্তার জ্যাম কাটিয়ে ছুটে চলার চেষ্টায় আছে। সন্ধ্যার এই সময়টাতে শহরের এই জায়গাটায় সবসময় জ্যাম লেগে থাকে। বাতাসে কেবল যানবাহনের শব্দ আর মানুষের কোলাহল ভাসে। হঠাৎ করে কেউ গ্রাম থেকে এসে এই পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে অনেকদিন লেগে যাবে নিশ্চিত। তবে শহরের মানুষগুলো এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এই পরিবেশে তাদের কোনো বিপরীত প্রতিক্রিয়া নেই। উলটো হঠাৎ করে কোনোদিন এই কোলাহল থেমে গেলেই ওরা চমকে যাবে। আশেপাশের উঁচু-নিচু বিল্ডিংগুলোতে আলো জ্বলে উঠতে লাগলো। হঠাৎ করে পুরো শহরটাকে মনে হতে লাগলো ছোট্ট একটা গ্যালাক্সি। বিল্ডিংগুলোকে মনে হতে লাগলো এক একটা নক্ষত্র।

সড়কের পাশের একটা পাঁচতলবিশিষ্ট ভবনের গায়ে বড়ো বড়ো অক্ষরে লেখা ‘স্বপ্না ম্যানসন।’ ভবনটার দ্বিতীয়তলার একটা কক্ষের জানালা দিয়ে ব্যস্ত সড়কের দিকে তাকিয়ে আছে রাহাত খান। ভবনটার মালিক সে। বয়স ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ হবে। শহরে আরও দুটো ভবন আছে তার। স্ত্রীর নামেই এই ভবনটার নাম রাখে সে ‘স্বপ্না ম্যানসন।’

‘স্যার, আপনার চা।’ তেরো বছর বয়সী কাজের মেয়েটা চায়ের কাপ হাতে ঢুকলো ভেতরে। স্বপ্নার কাছে অনেকক্ষণ আগে চা চেয়েছিল রাহাত। এককাপ চা পাঠাতে তার এতক্ষণ লাগলো! স্বপ্না বুঝি ইদানীং তার প্রতি কেয়ারিং কমিয়ে দিচ্ছে। অথচ সে পুরো একটা ভবন স্বপ্নার নামে করে দিয়েছে।

‘রেখে চলে যা।’ দৃষ্টি না ফিরিয়েই বললো রাহাত। স্ত্রীর প্রতি অভিমান করে সে আর ছুঁয়েও দেখলো না চায়ের কাপটা। একধ্যানে চেয়ে রইলো ব্যস্ত সড়কের দিকে। সড়কের জ্যামটা আরও বাড়তে লাগলো। কিছুটা দূরে ঘনঘন সাইরেন বাজাচ্ছে একটা পুলিশ-ভ্যান। সামনের যানবাহনগুলো যথাসম্ভব সরে গিয়ে পুলিশ-ভ্যানটাকে পথ করে দিলো চলে যেতে। স্বপ্না ম্যানসনের সামনে এসে থামলো পুলিশের গাড়িটা। রাহাত কক্ষ থেকে বের হয়ে নিচে নামতে চাইলে স্বপ্না তার পথ আটকালো।

‘কোথায় যাচ্ছ? চা খেয়েছ?’ শাড়ির আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে জিজ্ঞেস করলো স্বপ্না।

‘খাইনি এখনও। নিচে পুলিশ আসছে। একটু দেখা করে আসি।’ স্বপ্নাকে পাশ কাটিয়ে সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত নিচে নেমে এলো রাহাত। কলিং বেল বেজে ওঠল। রাহাত গিয়ে দরজা খুলতেই কয়েকজন পুলিশ সদস্য ভেতরে ঢুকল। পুলিশ অফিসার সঞ্জু রাহাতের সাথে হ্যান্ডশেক করে বললো, ‘আমরা এসেছি নাজমুল হত্যাকাণ্ডের একটু তদন্ত করতে।’

‘জি জি, বসুন।’ রাহাত সবাইকে আসন দেখিয়ে বসতে বললো। অফিসার সঞ্জু বসলেও তার অধীনস্থ পুলিশ সদস্যরা সৌজন্য দেখিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

‘তারপর বলুন, অফিসার…’ পায়ের উপর পা তুলে সিনা টান করে বসলো রাহাত।

‘আপনার কাউকে সন্দেহ হয় কি না এই খুনের ব্যাপারে?’

‘এমন কেউ তো নেই সন্দেহ করার। নাজমুল আমাদের গেইট-কিপার। নাইট ডিউটিতে ছিল সে। কার সাথে তার শত্রুতা থাকতে পারে?’

‘আপনার সাথে কারও শত্রুতা নেই তো?’

‘আমার সাথে? হা হা হা।’ কিছুটা উচ্চস্বরে হাসলো রাহাত। ‘আমার সাথে কার শত্রুতা থাকবে ওখানে? আমি জায়গাটা লিজ নিয়েছি কয়েকমাস হলো সবে। ওদিকে আমার যাওয়া হতো না কখনও। জায়গাটা নেয়ার পর থেকে যাওয়া আসা হচ্ছে।’

‘এমন নয়তো, জায়গাটার উপর অন্য কারও লোভ ছিল?’

‘না, না, না, এমন কেউ নেই। আমি খোঁজ খবর নিয়েই জায়গাটা লিজ নিয়েছি। আর আমার সাথে কারও শত্রুতা থাকলে, বেচারা একজন গেইট-কিপার কী দোষ করলো? তাকে এভাবে খুন হতে হলো কেন?’

‘আচ্ছা, আমরা একবার জায়গাটা সরেজমিনে দেখতে চাই। আপনার সহায়তা আশা করছি।’

‘জি জি, অবশ্যই। আমি আমার অ্যাসিস্ট্যান্টকে বলে দিবো, সে আপনাদের সহায়তা করবে।’

‘আচ্ছা, আমরা ওঠি তবে…’ সঞ্জু উঠতে চাইলে, রাহাত বাধা দিয়ে বলে, ‘একটু… একটু অপেক্ষা করুন। আপনাদের
একটা জিনিস দেখানোর ছিল। একটা ফুটেজ।’ বলতে বলতে রাহাত ফোনে কাকে যেন কল করে বললো, ‘হ্যাঁ, ফুটেজটা হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাও।’ ফোন রেখে দিলো রাহাত। সঞ্জুর উদ্দেশ্যে বললো, ‘দুই মিনিট অপেক্ষা করুন। এখনই পাঠাচ্ছে। আমার নতুন অফিসটা ঘটনাস্থলের বিপরীত পাশে, দেখেছেন নিশ্চয়ই?’

‘হ্যাঁ।’ মাথা দুলালো সঞ্জু।

‘ওখানের একটা সিসি ক্যামেরায় না-কি কিছু একটা ধরা পড়ে। এই যে, এই যে, পাঠিয়েছে ফুটেজটা। দেখুন…’ বলেই ফুটেজটা চালু করে মোবাইলটা সামনে ধরলো রাহাত। স্ক্রিনে দেখা গেল রাত দুটোর সময় কেউ একজন দেয়াল এবং কাঁটাতার টপকে রাহাতের লিজ নেয়া জায়গাটাতে ঢুকছে। কয়েকবার ফুটেজটা প্লে করে দেখলো ওরা। কিন্তু, লোকটার চেহারা স্পষ্ট না। তাই বোঝা গেল না কে সে। রাহাত মন্তব্য করলো, ‘স্পষ্ট-ই বোঝা যাচ্ছে, লোকটা দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে, তারপর হয়তো নাজমুলকে খুন করে বের হয়ে আসে।’

‘কিন্তু, লোকটার বেরিয়ে আসার ফুটেজটা নেই কেন?’

‘দুঃখিত, আমাদের অফিসের সিসি ক্যামেরাটা আসলে এক সাইডে। জায়গাটার গেইট পর্যন্ত কাভার হয় না। নতুন অফিস, এখনও সিসি ক্যামেরা সব জায়গায় সেটআপ করা হয়নি। বুঝেনই তো…’

‘আচ্ছা, এবার ওঠি। প্রয়োজনে আপনার সাথে আবারও কথা বলা যেতে পারে। আর ফুটেজটা আমার ফোনে দিন।’

রাহাত ফুটেজটা সঞ্জুর ফোনে পাঠালে, সঞ্জু বেরিয়ে গেল সঙ্গীদের নিয়ে।

ভোরের শীতল হাওয়ায় ‘মর্নিং ওয়াক’ করা রহমান সাহেবের নিত্যদিনের রুটিন। বয়স পঞ্চান্ন ছুঁই ছুঁই। তবে নিয়মিত শরীরচর্চার কারণে বয়সটাকে তিনি ত্রিশেই যেন আটকে রেখেছেন। মাথার কাঁচাপাকা চুলগুলো না দেখলে কেউ বিশ্বাসই করবে না তিনি পঞ্চাশোর্ধ্ব লোক। ভোর হলেই তিনি বেরিয়ে পড়েন হাঁটতে। রহমান সাহেবের সকল গুণে গুণান্বিত আরেক ব্যক্তি হলেন সিরাজ সাহেব। রহমান সাহেবের বন্ধু তিনি। তিনিও এই সময়টাতে হাঁটতে বের হয়েছেন। তারপর মুখোমুখি দেখা। বন্ধুকে দেখে রহমান সাহেব প্রথমে না দেখার ভান করে চলে যেতে চাইলে সিরাজ সাহেব ডাক দিলেন, ‘রহমান, কী ব্যাপার বলো তো, আজকাল তুমি দেখি আমার কাছ থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে থাকতে চাও?’

রহমান সাহেব গতি থামিয়ে সিরাজ সাহেবের মুখোমুখি দাঁড়ালেন। তারপর বললেন, ‘আসলে, তোমার আর তোমার পরিবারের সাথে যে অন্যায়টা আমরা করেছি, তারপর আর মুখোমুখি হওয়ার সাহস পাই না।’

‘আরে সেসব আমরা কবেই ভুলে গেছি। আমার মেয়ের এখন ভালো একটা ঘরে বিয়ে হয়েছে। সুখে আছে সে।’ রাস্তার একটা বেঞ্চিতে পাশাপাশি বসতে বসতে বললেন সিরাজ সাহেব।

‘তারপরও, ওই সময় আমরা খুব অন্যায় করেছি তোমার মেয়ের সাথে। আমার ছেলে রিহানের সাথে ওর এনগেজমেন্ট হওয়ার কথা ছিল। তারপর ছেলেটার যে হঠাৎ কী হলো…’

‘বাদ দাও তো ওসব। তোমাদের কারও উপর আমাদের আক্ষেপ নেই। রিহানের কী খবর বলো। বিয়ে-শাদি করবে বলে চিন্তাভাবনা করছে?’

‘ওর বিয়ে হয়ে গেছে।’ মুখ নিচু করে বললেন রহমান সাহেব।

‘বিয়ে হয়ে গেছে?’ কিছুটা চমকে ওঠলেন সিরাজ সাহেব। ‘কবে বিয়ে হলো? কিছু জানতেই পারলাম না!’

‘সে অনেক কথা।’

‘মেয়ের নাম কী?’

‘সুফিয়া।’

‘বাড়ি কোথায়? বংশ পরিচয় কী?’

‘বংশ পরিচয় ভালো। জমিদার ঘরের মেয়ে। কিন্তু মেয়ে এই সময়ের না।’

‘মানে?’

‘মানে মেয়ে না-কি ১৯৪৩ সালের।’

‘রহমান, তুমি ঠিক আছো তো? কী সব আবোলতাবোল বলছো?’

‘আবোলতাবোল না৷ যা শুনেছি তাই বলছি। মেয়ে এই সময়ের কেউ নয়। আর কিছু বলতে পারছি না আমি, বাড়িতে গিয়ে নিজেই দেখে এসো একদিন।’ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন রহমান সাহেব। তারপর উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললেন, ‘ভালো লাগছে না আজ আর। বাসায় চলে যাই। সময় করে একদিন বাসায় এসো। আমার ছেলে আর ছেলের বউকে দেখে যেয়ো।’ বলেই হনহন করে চলে যেতে লাগলেন রহমান সাহেব। অবাক দৃষ্টিতে সিরাজ সাহেব তাঁর দিকে চেয়ে রইলেন। ভেবে পাচ্ছেন না তিনি, রহমানের হঠাৎ কী হলো?

‘সুফিয়া… সুফিয়া…’ কয়েকবার সুফিয়ার নাম ধরে ডাকলো রিহান। সুফিয়া এসে দরজার চৌকাঠে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। একটা কালো শাড়ির সাথে কালো রঙের ফুলহাতা ব্লাউজ পরে আছে সে। খোপায় গুঁজানো এক গোছা গাজরা ফুল। ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে হাত দুটো বুকের সাথে ভাজ করে সে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করলো, ‘কী মশাই?’

‘অফিসে যাওয়ার জন্য বের হবো। তোমার চেহারাটা দেখে গেলে কাজে আর ক্লান্তি লাগে না।’

‘ইশ! অফিসে যেন কেউ আবার আমার স্বামীটাকে বউ পাগলা বলে না বসে।

‘আরে অফিসের কেউ এখনও তোমার কথা জানে না। আমাদের বাচ্চাটা জন্ম নিক, তারপর অফিসের সবাইকে একদিন দাওয়াত দিবো।’ এগিয়ে গিয়ে রিহান সুফিয়ার পেটে হাত বুলালো। তারপর নিচু হয়ে পেটের উপর চুমু খেলো।

‘হয়েছে, এখন অফিসে যাও। দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।’ রিহানের চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে বললো সুফিয়া। রিহান উঠে দাঁড়িয়ে সুফিয়ার কপালে চুমু খেয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘বাবা ফিরেছে?’

‘হ্যাঁ, ফিরেছে।’

‘বাবা-মার যত্ন নিয়ো। ওরা হয়তো তোমাকে এখনও মেনে নিতে পারছে না।’

‘কীভাবে মানবে? ছেলের চেয়ে প্রায় সত্তর বছরের বড়ো একটা মেয়েকে?’

রিহান সুফিয়াকে ড্রেসিং মিররের সামনে দাঁড় করিয়ে বললো, ‘দেখো তো, তোমার বয়স কত?’

সুফিয়া রিহানের দিকে ঘুরে বললো, ‘বয়স বাড়েনি আরকি, হুট করে ১৯৪৩ সাল থেকে চলে এসেছি।’

‘আমার জাস্ট সত্তর বছর আগে জন্ম নিছো, সত্তর বছর বড়ো তো আর নও। আমাদের বাচ্চাটা জন্ম নিলে, সব ঠিক হয়ে যাবে। হুমম?’ সুফিয়ার মাথা দুপাশে আলতো করে ধরে আশ্বস্ত করলো রিহান। তারপর তাকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেল সে।

অফিসে ইউসুফ সাহেবের মুখোমুখি বসে আছে রিহান। কী যেন প্রয়োজনে ডেকেছে তাকে। রিহানকে বসিয়ে রেখে একটা ফাইল দেখছিলেন উনি। হঠাৎ মাথা তুলে তিনি রিহানের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘কী রিহান সাহেব, বসে থাকতে বোরিং লাগছে?’

‘না, না স্যার, একদমই না।’ মৃদু হাসলো রিহান।

‘কফি পাঠাতে বলি তোমার জন্য।’ বলেই বেল চাপলেন ইউসুফ সাহেব। রিহান বিব্রতবোধ করে বললো, ‘স্যার, আপনার সামনে কফি খাবো?’

‘আরে সমস্যা নেই। তোমার জন্য একটা সুখবর আছে। একটু অপেক্ষা করো, ফাইলের কাজটা শেষ করি।’

অফিসের পিয়ন এসে ভেতরে ঢোকার অনুমতি চাইলো। ইউসুফ সাহেব পিয়নকে এক-কাপ কফি আনতে বললেন রিহানের জন্য। রিহান মনে মনে ভাবতে লাগলো, বস আবার তাকে কী সুখবর দেবে? কিন্তু কিছুই ভেবে পেল না সে। একটু পর পিয়ন এসে কফি দিয়ে গেল। কফিতে চুমুক দিয়ে রিহান তার বসের উদ্দেশ্য বললো, ‘স্যার, একটা প্রশ্ন করতে পারি?’

‘হুমম… করো।’

‘আপনার বয়স তো আনুমানিক সত্তর-পঁচাত্তর হবে। আপনি এবার একটু কাজ থেকে ছুটি নিতে পারেন না?’

‘সেই বন্দোবস্ত-ই তো করতে যাচ্ছি।’ বলেই ইউসুফ সাহেব একটা কাগজে সাইন করে রিহানের দিকে এগিয়ে দিলেন। রিহান অবাকদৃষ্টিতে কাগজটার দিকে কয়েকমুহূর্ত চোখ বুলিয়ে বসের দিকে তাকালো। ইউসুফ সাহেব তার সংশয় দূর করতে বললেন, ‘অবাক হওয়ার কিচ্ছু নেই, এখন থেকে আমার চেয়ারে তুমিই বসবে। এই পুরো অফিসটা তুমিই সামলাবে।’

‘কিন্তু স্যার, আমি কেন? শুনেছি আপনার দু’জন ছেলে আছে। তাদের কাউকে…’

রিহানকে বাধা দিয়ে ইউসুফ সাহেব বললেন, ‘তাদের নিজস্ব ব্যাবসা আছে, পেশা আছে। তারা ওইদিকটা সামলাক, আমারটা তুমি সামলাও। তোমাকে দায়িত্বটা দেয়ার কারণ কী জানো?’

আগ্রহদৃষ্টিতে তাকালো রিহান। ইউসুফ সাহেব পুনরায় বললেন, ‘কারণ, চট্টগ্রামে তুমি যে প্রজেক্টের কাজে গিয়েছিলে, প্রজেক্টটা সফল হয়েছে। এজন্য তোমার একটু প্রমোশনের দরকার ছিল।’

‘তাই বলে এতবড়ো প্রমোশন। আমি কি সামলাতে পারবো স্যার?’

‘অবশ্যই পারবে। তোমার মাঝে সেই সৎ সাহস আছে।’

‘স্যার, আপনাকে৷ একটা কথা বলবো বলবো করে আর বলা হয়নি।’

‘কী কথা?’

‘চট্টগ্রামে আমি যখন যাই, সেই সময় আমার উপর বেশ কয়েকবার হামলা হয়। ওখানে তো আমার কোনো শত্রু ছিল না। তবে কারা ছিল ওরা? আমার মনে হয় প্রজেক্টের সাথে ওদের কোনো সম্পর্ক ছিল।’

‘চট্টগ্রাম থেকে ফেরার পর আর কোনো হামলা হয়েছে?’

‘না।’

‘তাহলে ভুলে যাও ব্যাপারটা। অনেকদিন যেহেতু হামলা হয়নি, তবে আর হবে না হয়তো।’

‘কিন্তু স্যার, ব্যাপারটা আমার মাথা থেকে সরছে না। কেন শুধু শুধু আমাকে মারতে চাইলো ওরা।’

‘কী জানি, কোনো হাইজ্যাকার হবে হয়তো। ওসব ভুলে এখন নতুন দায়িত্ব পালনে মনোযোগী হও। তোমাকে আগামীকাল সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে আমি ছুটি নেবো।’ মৃদু হাসলেন ইউসুফ সাহেব।

‘জি স্যার।’ বলেই উঠে দাঁড়ালো রিহান। তারপর বসের রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

একটা কালো মার্সিডিজ এসে থামলো থানার সামনে। রাহাত নিজেই ড্রাইভ করে এসেছে। পাশে তার স্ত্রী স্বপ্না বসা ছিল। গাড়ি থেকে নেমে দরজা লক করতে করতে রাহাত স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বললো, ‘তুমি একটু বসো, আমি এখনই আসছি।’ বলেই দ্রুতপায়ে ঢুকে গেল রাহাত থানার ভেতর। অফিসার ইনচার্জ সঞ্জুর মুখোমুখি হলে, সঞ্জু তাকে বসতে বলে। রাহাত বসতে বসতে জিজ্ঞেস করে, ‘অফিসার, হঠাৎ ডেকেছেন আমায়। কোনো তথ্য পেয়েছেন? না-কি অন্যকিছু?’

সঞ্জু কয়েকমুহূর্ত ঠোঁট কামড়ে স্থির হয়ে বসলো। তারপর বললো, ‘রাহাত সাহেব, আমরা ফুটেজটা নিয়ে দুদিন স্টাডি করি। আরও বিভিন্ন জায়গা থেকে কয়েকটা ফুটেজ সংগ্রহ করি। এতে ছেলেটার পরিচয় জানতে পারি। ছেলেটার নাম রিহান। ছেলেটাকে আরও বিভিন্ন সময় আশেপাশে ঘুরতে দেখা গেছে। আমরা খুব তাড়াতাড়ি ছেলেটার সব তথ্য বের করে নিবো। কিন্তু, আপনাকে যে জন্য ডাকা, রিহান নামে কারও সাথে আপনার পরিচয় আছে কি না, বা কোনো শত্রুতা? এই যে তার ছবি…’ বলেই ফোনে একটা ছবি জুম করে রাহাতকে দেখালো সঞ্জু। কয়েকমুহূর্ত ছবিটার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ে রাহাত, ‘না, চিনি না।’

‘ঠিক আছে, আমরাই বের করবো বাকিটা। আর আমরা আরেকবার ঘটনাস্থলে যাবো, আপনার উপস্থিতি আশা করছি।’

‘শিওর। আপনারা যাওয়ার আগে আমাকে জানাবেন।’ সঞ্জুর সাথে হ্যান্ডশেক করে ওঠে দাঁড়ালো রাহাত। ঘড়িতে টাইম দেখে নিলো সে। না, স্বপ্নাকে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। দ্রুতপায়ে হেঁটে আবারও গাড়িতে উঠে বসলো সে। স্বপ্নার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। স্বপ্না থানায় আসার কারণ জিজ্ঞেস করলে, রাহাত বর্ণনা করতে করতে গাড়ি স্টার্ট দিলো। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো, যেভাবেই হোক, রিহানকে পুলিশের আগে খুঁজে বের করতে হবে।

[[চলবে…]]

(প্রথম পর্ব পড়ে অনেকগুলো প্রশ্ন মাথায় আসতে পারে, তাই বলবো- ধৈর্য ধরে বাকি পর্বগুলো পড়তে। আর গল্পটির ব্যাপারে মতামত দিতে ভুলবেন না। আপনাদের একটি কমেন্ট আমাকে গল্পটি চালিয়ে যেতে হয়তো উৎসাহ দেবে। ধন্যবাদ সকলকে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here