#আমার_একলা_আকাশ
#পর্ব_১১
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_________________
আদনানের ব্যক্ত করা প্রতিটি শব্দ, বাক্য একটা ঘোরের মাঝে প্রাপ্তিকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। হাজারও না বলা কথাগুলো কণ্ঠনালিতে এসে আটকে গেছে। অপ্রত্যাশিত জিনিস পেলে আনন্দে মানুষ কী করবে, না করবে যেমন ভেবে পায় না; প্রাপ্তিরও হয়েছে এখন সেই দশা। মনে মনে ভয় পাচ্ছে আবার আদনানের সামনে সে কেঁদে না ফেলে।
প্রাপ্তি নিরব ভূমিকা পালন করাতে আদনানের বুকের ভেতর দাহ শুরু হয়। সে ভয় পেতে শুরু করে। প্রাপ্তি কি তাকে ঘৃণা করে? সে ভীতকণ্ঠে জানতে চাইল,
‘তুই কি আমায় ভালোবাসিস না হূরপরী?’
প্রাপ্তি নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে। কোনোমতেই এখন কান্না করা চলবে না। সে আদনানের গভীর আবেগময় দৃষ্টিতে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারল না। তার মাথা নুইয়ে ফেলা, তিরতির করে কাঁপান্বিত ঠোঁট এবং অশ্রুসজল নেত্রদ্বয়-ই স্পষ্ট প্রকাশ করে দিচ্ছিল, আজও প্রাপ্তি আদনানকে ঠিক কতটা ভালোবাসে। এই নিরব সম্মতিটুকুই আদনানকে আনন্দিত করে তোলে। সে প্রাপ্তির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
‘পাগলী!’
__________
রাত ১টা ১০ মিনিট
গভীর রাত না হলেও রাত্রির সময়টা নেহাৎ-ই কম নয়। নেত্রপল্লবদ্বয় আজ কিছুতেই একত্রিত হচ্ছে না। এমন নয় যে, আজই এমন হচ্ছে। এর পূর্বেও প্রাপ্তি রাত জেগেছে। অসংখ্য রাত্রি তার নির্ঘুম কেটেছে। ফ্যামিলি ক্রাইসিসের পর আদনানের চাইতেও বেশি রাত জাগার কারণ ছিল তার বাবা-মা। বাবার শুকনো মুখটা চোখের সামনে দৃশ্যমান হতেই তার ঘুম ভেঙে যেত। তবে আজ রাত জাগার অন্যতম এবং শুধুমাত্র কারণ হচ্ছে আদনান। তার বিশ্বাসই হচ্ছে না আদনানও তাকে ভালোবাসে। কেমন যেন ঘোর ঘোর লাগে। স্বপ্নও বোধ হয় এতটা সুন্দর হতে পারে না। প্রাপ্তি আদনানকে কোনো উত্তর দেয়নি। তখন একটা কথাও সে বলতে পারেনি। আদনানও কোনো রকম জোর করেনি। এমনকি সে তার প্রশ্নের উত্তরও চায়নি। শুধু জিজ্ঞেস করেছিল,
‘বাড়ি যাবি এখন?’
প্রত্যুত্তরে প্রাপ্তি শুধু উপর-নিচ মাথা ঝাঁকিয়েছিল। এরপর বিনা বাক্যব্যয়ে একটা রিকশা ঠিক করে দুজনে বাড়িতে ফিরেছে। প্রাপ্তিকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে তৎক্ষণাৎ-ই আবার চলে গেছে আদনান। এদিকে বাড়িতে ফেরার পথ থেকে জাগতিক কোনো কিছুই প্রাপ্তিকে স্পর্শ করতে পারছিল না। সে আদনানের ভাবনায় বিবশ হয়ে ছিল। রাতে খাওয়া-দাওয়ার পাট চুকিয়ে যখন ঘুমানোর জন্য বিছানায় এসেছে তখন আনন্দের পাল্লা উড়ে গিয়ে সেখানে স্থান করে নিয়েছে ভয়াবহ ভীতি। প্রাপ্তিদের অবস্থা এখন আর আগের মতো নেই। আদনানের বাবা কি দুজনের বিয়েটা কখনো মেনে নেবে? এই ভীতিটাই তার পুরো আনন্দকে মাটি করে ফেলেছে। অস্থিরতায় না ঘুম আসছিল আর না একটু স্থির হয়ে বসে থাকতে পারছিল। রাত এগারোটা নাগাদ আদনান পাঁচ বার কল করেছিল। প্রাপ্তি কী বলবে অথবা কী কথা বলা উচিত এসব ভেবে না পেয়েই ফোন আর রিসিভ করেনি। তবে এখন মনে হচ্ছে কথা বলাটা ভীষণ জরুরী। সে বালিশের কাছ থেকে ফোন নিয়ে আদনানকে টেক্সট করল,
‘ঘুমিয়ে পড়েছ?’
প্রায় এক মিনিট পর আদনানের রিপ্লাই আসে,’এখনো না। তুই ঘুমাসনি কেন?’
‘ঘুম আসছে না। ফ্রি আছো?’
‘আছি। কথা বলবি?’
‘হুম।’
‘দশ মিনিট সময় দে।’
‘ঠিক আছে।’
প্রাপ্তি ফোন হাতে নিয়ে বসে রইল। আর একটু পরপরই ফোনে সময় দেখতে লাগল। দশ মিনিটের আগেই আদনান ফোন করে। প্রাপ্তি কল রিসিভ করে বলল,
‘হ্যালো?’
ওপাশ থেকে আদনান বলল,’আমি তোর বাড়ির সামনে।’
প্রাপ্তি আঁৎকে উঠে বলে,’কী! কেন? বাসায় কেন এসেছ?’
‘তুই-ই না বললি কথা বলবি?’
‘কথা বলব বলেছি। কিন্তু দেখা করব তো বলিনি।’
‘মুখ না দেখে কথা বলতে আমার ভালো লাগে না।’
প্রাপ্তি কিয়ৎক্ষণ নিরব থাকে। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে,’ঠিক আছে। সোজা ছাদে যাও। আমি আসছি।’
আদনান কল কেটে ছাদে চলে যায়। প্রাপ্তি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো একটু পরিপাটি করে। তার এখন আত্মা কাঁপছে। সামনা-সামনি আদৌ এসব কথা বলতে পারবে কিনা কে জানে!
ত্রস্ত পায়ে সে ছাদের দিকে এগোতে থাকে। ছাদের মাঝ বরাবর স্থানে আদনান আকাশের দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে। চারদিকে পিনপতন নিরবতা থাকায় সহজেই প্রাপ্তির উপস্থিতি টের পায় আদনান। পিছু ফিরে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে প্রথমেই বলে,
‘আজ আকাশে চাঁদ নেই।’
এ কথার কী উত্তর দেওয়া যায় প্রাপ্তি ভেবে পেল না। তাই চুপ করে থাকাকেই শ্রেয় মনে করল। আদনান এবার গুটি গুটি পায়ে ছাদের রেলিঙের কাছে গিয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। প্রাপ্তিও তাকে অনুকরণ করে।
‘বলতে পারবি আকাশে আজ চাঁদ নেই কেন?’ জানতে চাইল আদনান।
প্রাপ্তি একবার আকাশের দিকে তাকাল। চাঁদ নেই তবে তারা আছে। তারার উজ্জ্বলতা আজ অনেক কম। কেমন যেন টিমটিম করে জ্বলছে বলে মনে হচ্ছিল। সে গোপনে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
‘না।’
আদনান হেসে বলে,’আমিও জানি না।’
আবারও নিরবতা। নখ দিয়ে নখ খোঁচাচ্ছিল প্রাপ্তি। আদনান শান্তকণ্ঠে বলল,’সমস্যা নেই। আকাশের চাঁদ না থাকলে নেই। জমিনের চাঁদ তো আছে।’
প্রাপ্তি বুঝতে না পেরে অন্ধকারের মাঝেই আদনানের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছে। মৃদু হাসে আদনান। অন্ধকারে চোখ সয়ে গেছে এখন। প্রাপ্তির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘বুঝিসনি?’
দু’দিকে মাথা নাড়ায় প্রাপ্তি। স্মিত হেসে আদনান বলে,’জমিনের চাঁদ তুই। আমার ব্যক্তিগত চাঁদ।’
‘আমার কোনো আলো নেই।’
‘চাঁদেরও নিজস্ব কোনো আলো নেই জানিস না?’
প্রাপ্তি চুপ করে থাকে। আবারও কিছুক্ষণ নিরবতা। মনে মনে গুছিয়ে রাখা কথাগুলো বলার জন্য প্রস্তুত হয় প্রাপ্তি। গলা পরিষ্কার করে থমথমে কণ্ঠস্বরে বলে,
‘তুমি আমায় সত্যিই ভালোবাসো?’
‘মিথ্যে ভালোবাসার কারণ কী হতে পারে?’
‘করুণা, দয়া।’
‘করুণা করে কিংবা দয়া দেখিয়ে বড়ো জোর কিছুদিন ভালোবাসার অভিনয় করা যায়। কিন্তু ভালোবাসা যায় না।’
এবার সে একটুখানি থেমে কেমন আবেগমাখা স্বরে প্রাপ্তিকে বলে,’আমার ভালোবাসা নিয়ে তুই সন্দিহান প্রাপ্তি? যাচাই করতে চাস?’
‘এমন কিছু নয়।’
‘তাহলে কি তুই আমায় ভালোবাসিস না?’
সকল সংকোচের ইতি ঘটে আদনানের এই প্রশ্নে। প্রাপ্তির গলা ধরে আসে। হুটহাট এভাবে কান্না কেন পায় কে জানে! সে দু’পা এগিয়ে যায় আদনানের কাছে। মাঝখানের দূরত্বটুকু দূর করে দেয়। তার পেলব উষ্ণ দু’খানা হাত আদনানের গালে রাখে। বড্ড দুঃসাহসিক কাজ ছিল এটা প্রাপ্তির মতো মেয়ের কাছে। তবে এই মুহূর্তে ভীতি, জড়তা, সংকোচ কোনো কিছুরই বালাই নেই প্রাপ্তির। সে যে আদনানকে কতটা ভালোবাসে এটাই আদনানকে উপলব্ধি করানোর জন্য তার মাঝে ব্যাকুলতার সঞ্চার বৃদ্ধি পেতে থাকে। সে বিমর্ষ হয়ে বলে,
‘আমি তোমায় কতটা ভালোবাসি আর কী করে বোঝাব? আমার চোখের ভাষা কি তুমি বোঝো না? আমার হৃদয়ের ব্যাকুলতা কি তুমি শোনো না? কী পরিমাণ নিখাদ ভালোবাসা শুধুমাত্র তোমার জন্যই আমার মনের মাঝে রয়েছে সেটা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। আমিও তোমাকে ভালোবাসি আদনান।’
প্রাপ্তির চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে। অশ্রু চিকচিক করছে আদনানের চোখের কোণে। সে প্রাপ্তির এক হাতে ধরে আলতো করে চুমু খায়। প্রাপ্তি ঠোঁট উলটিয়ে কেঁদে বলে,
‘একবার জড়িয়ে ধরব তোমায়?’
আদনান হেসে দু’হাত প্রসারিত করে। প্রাপ্তিও স্মিত হাসে। আদনানের বুকে মাথা রেখে বলে,
‘কিছু কথা বলার আছে তোমায়। যেগুলো তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলা সম্ভব নয়। তাই তোমার বুকটাই আমার জন্য এখন নিরাপদ স্থান।’
আদনান বুঝতে পারছে না প্রাপ্তি এমন কী কথা বলতে চায়। সে মৃদুস্বরে বলল,’নির্দ্বিধায় বল।’
‘দেখো আমাদের পরিবারের বর্তমান অবস্থা তো তুমি ভালো করেই জানো। আমরা এখন নিঃস্ব। কিছুই নেই আমাদের। আবার আমার বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় এমনিতেও আমার খুঁতের শেষ নেই এখন। এতকিছু মেনে নিয়েও কিন্তু আমাদের এক হওয়াটা সহজ নয়। তোমার বাবা কি মানবে আমাদের সম্পর্ক? তুমি তোমার বাবাকে কতটা সম্মান ও শ্রদ্ধা করো তা আমি জানি। ছোটো।থেকেই তো দেখে আসছি। আমি তোমার ক’দিনের ভালোবাসা মাত্র। এই ভালোবাসার জন্য সারাজীবনের শ্রদ্ধাটুকু কখনো নষ্ট কোরো না। আমি জানি, তুমি বাবা-মায়ের আদর্শ সন্তান। আমার এসব বলার কোনো প্রয়োজনই ছিল না। শুধু বলছি এ কারণেই যে, কোনো ভুল সিদ্ধান্তের চিন্তা-ভাবনা যেন তোমার মাথায় উদয় না হয়। আর তুমি এটাও জেনে রাখো, এমন পরিস্থিতিতে তোমার ওপর আমার কোনো ক্ষোভ জন্মাবে না। অন্যতম একটা সত্য কথা হলো, তোমার পরিবার যদি আমায় না মানে তাহলে আমার পরিবারও কখনো আমায় তোমার হাতে তুলে দেবে না। কোনো পরিবার কি দেয় বলো? আমিও চাই না আমার বাবা-মায়ের দিকে কেউ আর কখনো আঙুল তুলুক।’
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলেই থামল প্রাপ্তি। আদনান কিচ্ছু বলতে পারল না। কিচ্ছু না! শুধু এতক্ষণ যেমন আলগা করে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে রেখেছিল; এবার বাঁধন শক্ত করেছে।
সে প্রাপ্তির মাথায় হাত বু্লিয়ে বলল,’আমি আজ বাবা-মাকে বলব সব।’
.
.
সকাল আটটার দিকে ঘুম ভাঙে আদনানের। ভোর প্রায় চারটা অব্দি প্রাপ্তির সাথে গল্প করে বাড়িতে ফিরেছে। ঘুমিয়েছে দেরি করে তাই ঘুম ভেঙেছেও দেরি করে। সে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেতে বসে। রুমানা বেগম ছেলের প্লেটে খাবার তুলে দিয়ে বলেন,
‘চোখ লাল হয়ে আছে কেন? ঘুম হয়নি?’
আদনান মৃদু হেসে বলে,’নাহ্!’
‘তো এত রাত জাগার কারণ কী?’ জিজ্ঞেস করলেন আসাদ রহমান।
আদনান ইতস্তত করে বলল,’এমনি আব্বু।’
‘এটা ঠিক নয়। প্রোপার ঘুম না হলে সারাদিন ঠিকঠাক কাজ করতে পারবে না। তাই টাইম টু টাইম খাওয়াটা যেন ইম্পোর্ট্যান্ট; তেমনই প্রোপার ঘুমও ইম্পোর্ট্যান্ট। এখন থেকে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর চেষ্টা করবে।’
‘জি আব্বু।’
‘কাজ কেমন চলছে? অফিসের সব ঠিকঠাক।’
আদনান মাথা নাড়িয়ে বলল,’হ্যাঁ।’
তবে যেটা বলার জন্য এত উশখুশ করছিল সে কথাটাই সে বলতে পারছিল না। কী করে যে নিজের বিয়ের কথা নিজেই বলবে বুঝতে পারছে না। আসাদ রহমানের খাওয়া শেষ। তাই তিনি হাত ধুয়ে রুমে চলে যান। একটু রেস্ট নিয়ে রেডি হয়ে তারপর অফিসে যাবেন। মাকে একলা পেয়ে হাত চেপে ধরে আদনান।
রুমানা বেগম ভ্রুঁ কু্চকে বলেন,’কী হয়েছে?’
‘বসো এখানে। কথা আছে।’
রুমা বেগম পাশের চেয়ারটিতে বসলেন।
‘এবার বল কী বলবি?’
মায়ের সাথে সে ভীষণ ফ্রি হওয়া সত্ত্বেও খুব সহজেই কথাটি বলতে পারল না। একটুখানি সময় নিয়ে বলল,’মা, আমি প্রাপ্তিকে ভালোবাসি।’
রুমানা বেগমের বিস্ময়ের শেষ নেই। তিনি বিস্মায়ভূত হয়ে ছেলের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকি আছেন। আদনান ফের বলল,’আমি ও-কে বিয়ে করতে চাই। তুমি প্লিজ বাবাকে একটু বলো।’
তিনি অবিশ্বাস্যকণ্ঠে জানতে চাইলেন,’তুই সত্যিই প্রাপ্তিকে ভালোবাসিস?’
‘হ্যাঁ।’
‘কবে থেকে হলো এসব?’
‘কী হবে? আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি। আর তাই আমি চাই, প্রাপ্তিকে বিয়ে করতে।’
রুমানা বেগম থম মেরে বসে রইলেন। মায়ের এমন মুখাবয়ব দেখে আদনান একটু চিন্তিতস্বরে বলল,
‘কী হয়েছে মা? প্রাপ্তিকে কি তোমার পছন্দ নয়?’
‘কীসব বলছিস! প্রাপ্তিকে কেন আমার পছন্দ হবে না? আমি ও-কে কতটা ভালোবাসি তা কি তোর অজানা। ও যদি তোর বউ হয় তাহলে আমার চেয়ে খুশি কেউ হবে না। কিন্তু সমস্যা তো তোর বাবাকে নিয়ে।’
‘তুমি আব্বুকে বুঝিয়ে বলতে পারবে না?’
‘আমার বলতে তো আপত্তি নেই। কিন্তু তিনি আমার কথা শুনলেই হয়।’
‘তুমি এখনই আব্বুকে গিয়ে বলো।’
‘এখনই?’
‘হ্যাঁ, এখনই। এই সময়েই তার মেজাজটা ঠাণ্ডা থাকে। আমি এখানে অপেক্ষা করছি। তুমি গিয়ে বলো।’
ভয়ে ভয়ে রুমানা বেগম নিজেদের রুমে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণ পায়চারি করে, কিছুক্ষণ উঠে, বসে। পানি পান করে। স্বামীর সাথে কথা বলে একটু সহজ হওয়ার চেষ্টা করে এবং সুন্দর করে প্রাপ্তির সাথে আদনানের বিয়ের প্রসঙ্গও তোলেন। এই প্রসঙ্গ ওঠা মাত্রা বক্রদৃষ্টিতে স্ত্রীর দিকে তাকান আসাদ রহমান। রাগে গজগজ করে বলেন,
‘শেষমেশ বান্ধবীর মেয়েকে বাড়ির বউ করে আনার ফন্দি করছ?’
রুমানা বেগম ভয়ে ভয়ে বলেন,’আসলে আদনান প্রাপ্তিকে ভালোবাসে।’
‘এ কথা আদনান তোমাকে বলেছে?’
‘হ্যাঁ।’
‘ডাকো ও-কে।’
আদনানকে ডাকতে হয়নি। বাহির থেকে তার কথাবার্তা অল্পবিস্তর শোনা যাচ্ছিল। তার ডাকতে বলার কথাটির জোর এত বেশি ছিল, যা আদনান স্পষ্ট শুনতে পেয়েছে। ছেলেকে দেখে তার রাগ যেন তরতর করে বাড়তে থাকে। তিনি রাগান্বিত কণ্ঠে বলেন,
‘তুমি নাকি প্রাপ্তিকে বিয়ে করতে চাও?’
মাথা নাড়ায় আদনান। তিনি আগের চেয়েও বেশি রাগ দেখিয়ে বললেন
‘তোমার রুচি দেখে আমি অবাক হচ্ছি। দিনদিন এত অধঃপতন? ঐ মেয়ের চরিত্র কেমন জানো না তুমি?’
‘আব্বু তুমি ওর ব্যাপারে সম্পূর্ণ না জেনেই এসব বোলো না প্লিজ!’
‘আচ্ছা যাও আমি আর কিছুই বলব না। শুধু এইটুকুই বলি, আমি ও-কে তোমার বউ করে আনব না। ওদের স্ট্যাটাসের সাথে আমাদের যায় না। তোমার যদি আমার অবাধ্য হয়ে ও-কে বিয়ে করতে হয় তাহলে করো। এখন তোমার যদি মনে হয় বাবাকে দরকার নেই; ওই মেয়েকেই তোমার দরকার তাহলে আমার বিরুদ্ধে যেতে পারো। আমি বেঁচে থাকতে এই সম্পর্ক মানব না।’
চলবে…