দ্বিতীয় জন 💔 Season~2,পর্ব ছয় (শেষ পর্ব)
Sumana Easmin
রাত ঠিক দেড়টার সময় হিমু রায়ানকে নিয়ে কুসুমের কবরস্থানে গেলো। খুব সতর্ক হয়ে কবরের একপাশ থেকে মাটি সরিয়ে একটা ছোট হাড় আর একটা চুল নিলো। তারপর কবরের মাটি গুলো আগের মতো করে দিয়ে ঐ স্থান ত্যাগ করলো।
রায়ানের বাসায় গিয়ে হিমু আল্লাহর কাছে লাখ শুকরিয়া আদায় করলো। কোন সমস্যা না হওয়াতে।
পরদিন সকালে হিমু রায়ানের বাসায় খাওয়া দাওয়া করে রওনা দিলো।
সে বাসায় না গিয়ে সোজা যাজকের কাছে চলে গেলো। গিয়েই ওনার হাতে কুসুমের হাড় আর চুল তুলে দিলো। উনি সেগুলো হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ চোখ বুঁজে ধ্যানে মগ্ন হলেন।
প্রায় আধাঘন্টা পর উনি চোখ মেলিয়ে হিমুর দিকে তাকিয়ে বললেন-
“তোর শরীরে একটা তাবিজ আছে ঐটা খুলে ফেল।”
হিমু সাথে সাথে ওর শরীর থেকে তাবিজ টা খুলে ফেললো!
উনি আবার চোখ বন্ধ করে ধ্যানে বসলেন। কিছুক্ষণ পর জানালা দিয়ে নিকষ কালো একদলা ধোঁয়া পাকিয়ে পাকিয়ে রুমের ভেতরে প্রবেশ করলো। হিমু কিছুটা নড়ে চরে বসলো।
যাজকের সামনে কিছু কয়লা জ্বালানো ছিলো। আর সেই কয়লার মধ্যে ছোট্ট একটা রুপার কৌটায় কিছু সিঁদুর রাখা ছিলো। ধোঁয়া গুলো ধীরে ধীরে সেই কৌটায় এসে ভরলো। সাথে সাথে যাজক সেই কৌটার মধ্যে কুসুমের চুল আর হাড় রাখলো।
কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে আবার ধোঁয়া গুলো বেরিয়ে ধীরে ধীরে মানুষের রুপধারন করতে লাগলো। কয়েক সেকেন্ড পরেই একটা সম্পূর্ণ মানুষের রুপধারন করলো। কুসুম।
কি বিভৎস দেখতে। শরীরের মাংস গুলো পচে গলে গলে পরে যাওয়ার মতো অবস্থা। সেখানে ছোট ছোট সব পোকা কিলবিল কিলবিল করছে। মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। হিমুর ভেতর শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো। সে আর মাথা উঁচু করার সাহস পেলো না।
যাজক কঠিন কন্ঠে কুসুম কে বললো-
“তুই এমন কেনো করলি বল?”
কুসুম ভয়ংকর ভাবে রেগে গিয়ে বললো-
“সে আমায় তবে হত্যা করেছিলো কেনো? আমি বেঁচে থাকলে এতদিন হিমু আমার হয়ে যেতো!”
হিমু রাগান্বিত হয়ে পুরুষালী কন্ঠে বললো-
“কখনো না। একমাত্র বর্ষা ছাড়া আমার এই মনে আর কারো স্থান নেই।”
কুসুম হিমুর চেয়েও বেশি রাগান্বিত হয়ে বলল-
“তুমি শুধু আমার। আমার না হলে আর কারো হতে দিবোনা!”
হিমু যাজকের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে আর কোন কথা বললো না। কারন যাজক ওকে চোখের কথা বলতে নিষেধ করলো। কুসুমকে যাজক নরম কন্ঠে বললো-
“আমি বুঝতে পেরেছি তুই হিমুকে অনেক ভালোবাসিস। তাই আমি তোকে হিমুর কাছ থেকে আলাদা করতে চাইনা। কিন্তু তুই যেহেতু আত্মা সেহেতু তোর তো একটা শরীরের দরকার।”
কুসুম চেচিয়ে বললো-
“আমি একটা শরীর পেয়েছি। নতুন করে আর কারো শরীরের দরকার নেই!”
যাজক পরামর্শ দেওয়ার মতো করে বললো-
“কিন্তু তুই যার দেহধারন করেছিস, সে তো এখনো বেঁচে আছে। তার একটা ব্যবস্থা না করেই তুই কিভাবে হিমুকে সারাজীবনের জন্য পাবি বল?”
কুসুম ধৈর্য্যহীন হয়ে বললো-
“আমি বর্ষাকে আজ ই চিরবিদায় দিয়ে দিবো!”
যাজক কিছুটা কৌশল করে বললেন-
“তুই যে ভাবেই ওকে হত্যা করনা কেনো! পরবর্তীতে কিন্তু সে আত্মা হয়ে আবার ফিরে আসবে! তখন তুই কি করবি?”
কুসুম স্বাভাবিক ভাবে বললো-
“সেই জন্যই তো ওকে এতোদিন হত্যা না করে বেঁচে রেখেছি। এখন তুমিই একটা উপায় বলো!”
“আচ্ছা ঠিক আছে! আপাতত তুই বর্ষাকে এখানে সশরীরে হাজির কর! তারপর দেখি কি করা যায়!”
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই কুসুম বর্ষাকে সশরীরে উপস্থিত করলো! বর্ষা হিমুকে দেখতে পেয়েই সেন্সলেইস হয়ে গেলো। বর্ষাকে একদম চেনা যাচ্ছে না। মৃত ব্যক্তির মতো হয়ে গেছে। না জানি কুসুম ওকে কতোটা শাস্তি দিয়েছে!
কুসুম বর্ষার দেহত্যাগ করার সাথে সাথে যাজক বর্ষার দেহ মন্ত্র দিয়ে বেঁধে রেখেছিলেন। তাই কুসুমের আত্মাকে যাজক খুব সহযেই বন্দি করতে পারলেন। তিনি নিমিষেই কুসুমের আত্মাকে ভস্মীভূত করে ফেললেন।
কাজ শেষ হতেই যাজক আর হিমু মিলে বর্ষার কাছে গিয়ে ওর জ্ঞান ফেরালো। বর্ষা ধীরে ধীরে চোখ মেলাতেই দেখলো হিমুর হাতে ও মাথা রেখে আছে। বর্ষা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো-
“হিমু আমি কি বাস্তবে আছি?”
হিমু বর্ষাকে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বললো-
“হুম। তুমি আমার খুব কাছে আছো। নিরাপদে।”
কথাটা বলেই সে নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলো না। কান্না জড়ানো কন্ঠে বললো-
“আই লাভ ইঈ বর্ষা। আই মিস ইউ!” তারপর সবার সামনে বর্ষার ঠোঁটে চুমু এঁকে দিলো!
হিমু যাজকের পা ছুঁয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বর্ষাকে কে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
ছয় সাতদিন পর বর্ষা আবার আগের মতো হয়ে গেলো। সুন্দরে পরিপূর্ণ হয়ে উঠলো! হিমুর পরিবারে আবার সেই আগের মতো সুখ শান্তি ফিরে এলো।
সুস্মিতার বাবা মা ও সত্যিটা জানতে পারলো।
বর্ষাকে ফিরে পাওয়ার পর পরই হিমু বর্ষার বাসায় সব খবর জানিয়ে দিলো। ওরা তাদের মেয়েকে ফিরে পেয়ে আনন্দে আটখানা হয়ে গেলো।
সমাপ্ত।
[তিতলীর বুকের উপর থেকে শাড়ির আঁচলটা নামিয়ে দিলো রিশান। সাথে সাথে সে লজ্জায় লাল হয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। রিশানের সেইদিকে কোন খেয়াল নেই। সে তিতলীর শরীরের ঘ্রাণ নিতে নিতে ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। সারা শরীরে আদুরের হাত বোলাতে লাগলো। এতে তিতলী ভিষন অস্বস্তিতে পরে গেলো। সে বুঝতে পারছিলো না কি করবে!
একটু পরেই রিশান ওকে ছেড়ে দিলো। তিতলী অবাক হয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলো-
–“কি হলো? কোন সমস্যা?”
রিশান সে কথার কোন উত্তর না দিয়েই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। তিতলী ওর শাড়ি ঠিক করে নিয়ে বাইরে বেরুতেই দেখলো, সুচি ওর দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
তিতলী মাথা নিচু করে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে ধরলো। আর অমনি সুচি ওর পথ রোধ করে বললো-
–“তোর এতোবড় সাহস হয় কিভাবে? আমার রিশানের সাথে কথা বলার?”
–“কে বলেছে রিশান তোর?”
–“কাকে বলতে হবে? বাড়ির সবাই জানে রিশান আমার হবু বর। ওর সাথে আমার বিয়ে ঠিক করা আছে! এর চেয়ে আর কি প্রমান লাগবে তোর?”
মনের কিনারে 💞
সমাপ্ত