দ্বিতীয় জন 💔Season~2,পর্ব পাঁচ
Sumana Easmin
যাজক হিমুর কথা শুনে নিশ্চিত হয়ে বললেন-
“আমি যা ভেবেছিলাম তাই!”
হিমু উৎসুক চোখে বললো-
“কি ভেবেছিলেন বাবা?”
“তোর স্ত্রী মারা যায়নি! কুসুমের আত্মা সাময়িক ভাবে তোর স্ত্রীর শ্বাস-প্রশ্বাস রোধ করে রেখেছিলো। তারপর বর্ষাকে কবর দেওয়ার একটু পরেই ওর জ্ঞান ফিরে যায়। আর তখনি কুসুম আবার ওর শ্বাস-প্রশ্বাস রোধ করে ওকে কুসুমের আত্মার জগতে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গিয়ে বর্ষার আত্মা টাকে বন্দি রেখে ওর দেহে কুসুমের আত্মা প্রবেশ করে।”
“কিন্তু বাবা কুসুমের আত্মা যে এখন বর্ষার দেহে প্রবেশ করে সুস্মিতা সেজে আছে। এমনকি বাবা মাও বানিয়ে ফেলেছে। সেটা কি করে করলো?”
“সুস্মিতার বাবা মা ছোট বেলায় তাদের মেয়েকে হারিয়ে ফেলেছিলেন। কুসুম চিরুনি তল্লাশি করে এমন একজন দম্পতি কে খুঁজতে থাকে যাদের কাছে গিয়ে সে তাদের সন্তান হয়ে থাকতে পারবে। আর সে পেয়েও যায়। এখন সুস্মিতা নামে কুসুম যাদেরকে বাবা মা বানিয়েছে, তারা তাদের হারানো সন্তানকে ফিরে পেয়েছে ভেবে অন্ধের মতো যাচাই-বাচাই না করেই সুস্মিতাকে মেনে নিয়েছে।”
হিমু আতঙ্কিত হয়ে বললো-
“তাহলে কি এখন সুস্মিতার বাবা মাও বিপদের মধ্যে আছে?”
“না! তারা কোন বিপদে নেই। সুস্মিতা রুপি কুসুম ওদের কোন ক্ষতি করবেনা। কারন ওনারা সুস্মিতাকে অনেক ভালোবাসেন।”
“যাক! তবু একটা দিক তো বিপদ মুক্ত! আচ্ছা বাবা কুসুমের আত্মা কি আমার বাবা মার উপরে আক্রমণ করবে?”
“না! সে তোর বা তোর পরিবারের কারো কোন ক্ষতি করবেনা! কারন তার শত্রুতা শুধু বর্ষার সাথে। সে বর্ষাকে সরিয়ে তোর সাথে থাকতে চায়!”
হিমু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো-
“বাবা আমি আমার বর্ষাকে ফিরে পেতে চাই। তার জন্যে আমি আমার জীবন দিতেও রাজি। দয়া করে আপনি আমায় সাহায্য করুন!”
যাজক হিমুর মাথায় হাত রেখে বললেন-
“আমি তোর কষ্ট টা বুঝতে পারছি। আমি তোকে তোর স্ত্রী ফিরিয়ে দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। বাকিটা সৃষ্টিকর্তার হাতে!”
এরপর উনি কিছুক্ষন ধ্যানে মগ্ন হয়ে থেকে বললেন-
“এখন তোকে প্রথমেই একটা কঠিন কাজ করতে হবে!”
“কি কাজ বাবা বলুন!”
“কুসুমকে যেখানে কবর দেওয়া হয়েছিলো সেই জায়গা টা তুই চিনিস?”
“না বাবা চিনিনা। তবে চিনে নিতে পারবো। আপনি বলুন কি করতে হবে?”
“কুসুমের কবর থেকে ওর একটা হাড় আর মাথার একটা চুল আনতে হবে! পারবি?”
“আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো বাবা!”
কথাটা বলেই হিমু যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে পরলো। যাজক ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো-
“তবে মাথায় রাখিস সময় কিন্তু খুব কম। মাত্র 24 ঘন্টা!”
“ঠিক আছে বাবা!”
হিমু প্রথমে বাসার দিকে রওনা দিলো। বাসায় যাওয়ার সাথেই ওর মা রাগান্বিত হয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলো-
“কই ছিলি এতোক্ষণ? তোর বাবা কতক্ষণ থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করে করে চলে গেলো!”
“কেনো মা?”
“কি জানি বলতে পারলাম না। গোসল সেরে আয় খাবার বেড়ে দিচ্ছি!”
হিমু গোসল সেরে খাওয়া দাওয়া করে একটু রেস্ট নিলো। ওর ভেতরে যতোটা টেনশন কাজ করছে তার চেয়ে বেশী আনন্দ কাজ করছে। কারন বর্ষা এখনো বেঁচে আছে। ভাবতেই ওর গায়ের লোম গুলো খুশিতে শিউরে উঠলো।
হিমু ওর বাবা মাকে আগেই ঐসব বিষয়ে কিছুই বললো না। কারন বললে তারা অনেক বেশি দুশ্চিন্তা করবে!
হিমু কুসুমের বাড়ির দিকে রওনা দিলো। সেখানে বাইক নিয়ে পৌঁছুতে প্রায় ঘণ্টা চারেকের মতো সময় লেগে গেলো! সে কুসুমের গ্রামে প্রবেশ করে ভাবলো সুসমি রুপি কুসুমকে একবার ফোন দেওয়া যাক। একবার রিং হতেই সুসমি রিসিভ করলো। হিমু তাড়াহুড়া করে বলে উঠলো-
“কেমন আছো? কি করছো?”
“ভালো নেই! কিছুই করছিনা এমনিতেই শুয়ে আছি। আপনার কোন খবর নেই যে?”
“আমি তোমার ফোনের অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু তুমি তো একবারো ফোন দিলেনা। তাই বাধ্য হয়ে আমিই দিলাম। মিস্ ইউ….!”
সুসমি হিমুর কথার কোন রিপ্লাই না দিয়ে বললো-
“আমরা কি মিট করতে পারি?”
“কবে?”
“আজকেই!”
“আজকে তো আমার শরীর টা খারাপ লাগছে। কাল করি?”
“আচ্ছা!”
বলেই সুসমি লাইন টা কেটে দিলো!
হিমু কুসুমদের গ্রামের এক বয়স্ক মহিলার থেকে কবর জিয়ারতের কথা বলে কুসুমের কবরটা চিনে নিলো।
কবরের উপর আগাছা, ছোট ছোট গাছ গাছরা দিয়ে ঢেকে গেছে। কবরটা গ্রামের রাস্তা থেকে সামান্য দূরে। যে কারনে লোকজনরা রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে হিমুকে দেখতে লাগলো!
দিনের বেলায় কবর থেকে কিছু নেওয়া অনেক রিস্কি হয়ে যাবে। তাই হিমু রাস্তার পাশে এক দোকানে বসে রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে লাগলো।
এরই মধ্যে হিমুকে দেখে রায়ানের এক চেলা চিনতে পেরে রায়ান কে গিয়ে বলে দিলো।
রায়ান মাত্র কয়েকদিন আগেই হসপিটাল থেকে রিলিজ নিয়েছে। ও চোখের অপারেশন করিয়ে নিয়েছে। এখন ওর দুই চোখ ই ঠিক হয়ে গেছে।
এতোদিন হসপিটালে থেকে সে জীবনের বাস্তবতা থেকে অনেক কিছু শিক্ষা নিয়েছে!
রায়ানের চেলা যখন রায়ানকে খবরটা দিতে গেলো তখন সে ওর বাবা মার সাথে বসে গল্প করছে। রায়ানের চেলা ওকে গোপনে ডেকে খবর টা দিয়েই আবার চলে গেলো হিমুকে চোখে চোখে রাখতে!
একটু পর রায়ান গিয়ে দেখলো সত্যি সত্যিই হিমু একটা দোকানে বসে আছে। দোকানের এক পার্শ্বে বাইক টা রেখেছে। রায়ান আর এক মুহুর্ত দেরী না করে হিমুর কাছে চলে গেলো! রায়ানকে দেখেই হিমুর ভেতরে শুকিয়ে গেলো। সে কিছু বলার আগেই রায়ান ওকে জড়িয়ে ধরে বললো-
“কেমন আছেন ভায়া? আমায় চিনতে পেরেছেন?”
হিমু নিজের চোখ-কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না। তাই সে কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইলো।
রায়ান হিমুকে ছেড়ে দিয়ে ওর ঘাড়ে হাত রেখে বললো-
“আমায় চিনতে পারছেন না হিমু ভায়া? আমি রায়ান?”
হিমু এবার অস্পষ্ট ভাবে বললো-
“হ্যাঁ চিনতে পেরেছি! কিন্তু….!”
“কোন কিন্তু নয়। আপনি আমার এলাকায় এসেছেন। আর এইভাবে বাইরে থেকে থেকে চলে যাবেন তা কি করে হয়? চলুন আমার বাসায়!”
রায়ানের চেলা রায়ানের ব্যবহারে যতোটা ভ্যাবাচেকা খেয়েছে হিমুও ততোটাই খেয়েছে। তাই সে ভদ্রতা বজায় রাখার হাসি হেসে রায়ানকে বললো-
“না ভাই যা বলেছেন, তাতেই আমি অনেক সন্তুষ্ট!”
রায়ান দৃঢ়তার সাথে বললো-
“আপনি মনে হয় ভয় পাচ্ছেন আমার সাথে যেতে! আমি আর আগের মতো নেই ভায়া। এতোটুকু বিশ্বাস রাখতে পারেন! আমি জীবন থেকে অনেক কিছু শিখে নিয়েছি! বদলে ফেলেছি নিজেকে!”
হিমু রায়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝলো রায়ান কোন মিথ্যা কথা বলছে না। কারন মানুষের মুখ মিথ্যা কথা বললেও চোখের ভাষা কখনো মিথ্যা আভাস দেয়না!
হিমু রায়ানের সাথে ওর বাসায় চলে গেলো। রাতের খাবার ওর বাসাতেই খেলো। রায়ানের বাবা মা, সেই ফুপি সবার সাথে কথা বললো! রায়ানের ফুপিও আগের থেকে একদম বদলে গেছেন। অনেক ধার্মিক হয়ে গেছেন।
রায়ানের বিয়ের কথা চলছে। সম্ভবত সামনে মাসেই হয়ে যাবে। রায়ান একটা মেয়ের সাথে বহুবার ফিজিক্যালি রিলেশন করছিলো। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঐ মেয়েটাকেই বিয়ে করবে!
রাতে রায়ানের আর হিমুর একই সাথে ঘুমানোর বন্দোবস্ত করা হলো। হিমু সেই সুযোগে রায়ানকে তার জীবনে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা বললো। এমনকি সে এই গ্রামে কেনো এসেছে সেটাও বললো!
সবকিছু শুনে রায়ান ওকে হেল্প করার জন্য রাজি হয়ে গেলো!
[যারা বাস্তবের সাথে মিল রেখে গল্প পড়তে ভালোবাসেন তারা প্লিজ আমার গল্প পড়তে আসবেন না। আমার গল্পে কখনো বাস্তবের সাথে মিল থাকবে আবার কখনো থাকবেনা। গল্প তো গল্পই। সেটা যদি মনের মাধুর্য মিশিয়ে সত্য মিথ্যার সংমিশ্রণ না ঘটাই, তাহলে তো সেটা গল্প হবেনা। বাস্তব ঘটনা বা জীবনি হয়ে যাবে! আর একটা কথা!
একটা গল্প রানিং করলে আর বাকি দুইটার পাঠক মন খারাপ করছে। তাই বাধ্য হয়ে নিজের সবটুকু সময় গল্প তেই ব্যয় করছি। এজন্য আপনাদের কমেন্ট মেসেজর রিপ্লাই করতে পারছিনা। তবে আপনাদের মেসেজ কমেন্ট গুলো কিন্তু আমি ঠিকই পড়ি। আপনারা সুন্দর সুন্দর কমেন্ট করে আমায় সুন্দর ভাবে গল্পটি এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করবেন এই আশায় রাখি!]
To be continue…..