দ্বিতীয় জন 💔Season~2,পর্ব চার
Sumana Easmin
হিমু রেস্টুরেন্টে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। একটুপর সুসমি আসলো। সে হুলুদ রঙের একটা শাড়ি পরে এসেছে। সাথে নীর রঙের পার্টস টা হাতে নিয়েছে। রেস্টুরেন্টে ঢুকেই সে হিমুকে খুঁজে নিলো। তারপর হিমুর সামনা সামনি গিয়ে বসলো।
হিমু সুসমিকে দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। কারন ওকে দেখে কখনোই মনে হচ্ছে না যে ও বর্ষা নয়। তার উপরে আবার বর্ষার মতো করেই কাঁটা দিয়ে চুল গুলো বেঁধে রেখেছে। হিমু ওকে দেখে বর্ষাকে দেখার তৃষ্ণাটা নিবারন করতে লাগলো।
হিমুর তাকানোর ধরন দেখে সুসমি কিছুটা নরে চরে বসে বললো-
“আপনি আমায় কি জানি বলতে ডেকেছিলেন!”
হিমু সম্মতি ফিরে পেয়ে বললো-
“ওহ্ হ্যাঁ! তার আগে বলুন কি খাবেন। কিছু একটা খেতে খেতে কথা বলি?”
“নো থ্যাঙ্কস। আমার ভীষণ তাড়া আছে। চটজলদি বাসায় ফিরে যেতে না পারলে বড় কোন সমস্যা বেধে যাবে!”
“ওকে, তাহলে আলোচনা শুরু করে দেই?”
“হুম করেন!”
হিমু সন্দেহের চোখে সুসমির চোখের দিকে তাকিয়ে বললো-
“এখানে তো আপনারা নতুন এসেছেন তাই না?”
“হ্যাঁ, কেনো বলুন তো?”
“না আগে কখনো দেখিনি তো তাই। আপনারা এখানকার স্থানীয় হলে তো অবশ্যই আগে চোখে পরতো। কারন আমি এখানেই বেড়ে উঠেছি!”
“হ্যাঁ, তা ঠিক!”
“আগে আপনারা কোথায় থাকতেন?”
হিমুর প্রশ্ন শুনে সুসমির মুখ শুকিয়ে গেলো। সে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো-
“আমি দুঃখিত। আসলে আমি এই বিষয়ে আপনাকে কিছু বলতে চাচ্ছি না!”
“ওকে। বাট কারন টা জানতে পারি?”
“সরি! সেটাও বলতে চাচ্ছি না!”
“ওহ্! তাহলে আপনার সাথে যে বিষয়টা নিয়ে আমি আলোচনা করতে চাইলাম সেটা নিয়ে আর কিভাবে এগুবো বলেন?”
“এগুতে না পারলে থাক্। কতো কথা আছে! সেগুলো বলুন!”
বলেই সে একটা বাঁকা হাসি দিলো।
হিমু বোকার মতো ওর কথা বুঝতে না পেরে জানতে চাইলো-
“কতো কথা মানে?”
“মানে আগে কোথায় থাকতাম না থাকতাম সেগুলো নিয়ে বেকার আলোচনা না করে আমাদের পারসোনাল বিষয় নিয়ে কথা বলি!”
“পারসোনাল বিষয় মানে?”
“আপনি এমন ছোট বাচ্চাদের মত করে কথা বলছেন কেনো?”
হিমু রাগান্বিত ও বিরক্ত হয়ে বললো-
“তো কিভাবে বলবো?”
হিমু যে ধীরে ধীরে রাগান্বিত হয়ে যাচ্ছে সুসমি সেটা বুঝতে পেরে বললো-
“আচ্ছা ছাড়ুন এইসব কথা। জাস্ট ফান করলাম! আপনার যদি আর কিছু বলার না থাকে তাহলে আমি আসি?”
“হুম! আর কোন কথা বলার নেই। আপনি এখন আসতে পারেন!”
সুসমি হিমুর পাশ দিয়ে চলে গেলো। এতোটাই পাশ দিয়ে গেলো যে ওর আঁচল হিমুর মুখের সাথে ছুঁয়ে গেলো। হিমু সেই আঁচলেও বর্ষার শরীরের ঘ্রাণ পেলো। সাথে সাথে ওর মাথা ভারী হয়ে গেলো।
হিমু প্রায় এক ঘন্টা ধরে রেস্টুরেন্টের ঐ জায়গাতেই চুপচাপ বসে আছে। সে আসলে ভাবছে যে তার সাথে কিছু একটা গন্ডগোল হয়ে যাচ্ছে। যেটা সে বুঝতে পারছেনা। তাছাড়া একটা মানুষের সাথে আর একটা মানুষের এতো কিছুর মিল হয় কিভাবে?
অনেক ভেবে চিন্তে সে ওর পরিচিত এক মৌলভী হুজুরের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।
সন্ধ্যার পর সে ঐ মৌলভীর বাসায় পৌঁছুলো। তারপর ওনাকে সব কথা খুলে বললো! সবকিছু শুনে উনি বললেন-
“হুম। এর মধ্যে অবশ্যই কোন ঘাপলা আছে।!”
“এটার কি কোন সমাধান করা যাবেনা বাবা?”
“হুম যাবে! তবে সেটা অনেক রিস্কি হয়ে যাবে! আর আমাদের ধর্মে ঐ সব নিয়ে কাজ করা কবীরা গুনা। তাই আমি ঐসব নিয়ে কাজ করিনা!”
“আমি আপনাকে ঐসব কাজ করতে জোর করবোনা বাবা। কিন্তু প্লিজ আপনি আমায় কিছু একটা উপায় বের করে দিন!”
মৌলভী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন-
“আমার পরিচিত এক হিন্দু যাজক আছেন। উনি ঐসব বিষয়ে অনেক বিদ্যা অর্জন করেছেন। ওনার অনেক নাম ডাক ও আছে। তবে উনি এখন আর কাজ করেন না। তোমায় ওনার ঠিকানা দিচ্ছি তুমি গিয়ে আমার কথা বলবে! একটু ভালো করে অনুরোধ করবে তাহলেই উনি রাজি হয়ে যাবেন।”
“ঠিক আছে বাবা। আপনার প্রতি আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো!”
তারপর হিমু মৌলভীর পা ছুঁয়ে সালাম করে বিদায় নিলো।
বাসায় গিয়ে হিমু ওর বাবা মাকে সব ঘটনা খুলে বললো। ওনারা হিমুকে বাধা দিলেন ঐ সব করতে। কিন্ত হিমু ওনাদের কথা শুনলো না। সে ঐ ধর্ম যাজকের কাছে গেলো। এবং ওনাকে অনেক ভাবে অনুরোধ করে রাজি করালো। উনি হিমুর থেকে সব ঘটনা শুনলেন এবং হিমুকে সুসমির এক টুকরা কাপড় আনতে বললেন।
হিমু পরে গেলো মহা বিপদে। সে এখন কিভাবে সুসমির থেকে কাপড় নিবে।
রাতে বাসায় গিয়ে সে সুসমিকে কল দিলো। প্রথমবারেই সুসমি রিসিভ করলো। হিমু কি বলবে না বলবে এমন দ্বিধা দ্বন্দ্ব করতে করতে বললো-
“কেমন আছেন?”
“হুম ভালো। আপনি কেমন আছেন?”
“এইতো আছি একরকম! গতকালের ব্যবহারে কি আপনি মাইন্ড করেছেন?”
“না না। একদমই না। হঠাৎই এসব বলছেন কেনো?”
“আসলে সত্যি বলতে কি সেদিনের পর থেকে আপনার চিন্তা ভাবনা আমার মাথা থেকে সরাতে পারছিনা। তাই!”
সুসমি খুশিতে গদগদ করে বললো-
“আমার কি সৌভাগ্য। আপনার মতো এমন হ্যান্ডসাম ছেলে আমায় নিয়ে ভেবেছে!”
“ভাববো না কেন বলুন? আপনার মতো এমন সুন্দরী মেয়ে আমি খুব কমই দেখেছি।”
সুসমি এবার খুশীতে লাল হয়ে কোন কথা বলতে পারলো না।
হিমু সেটা বুঝতে পেরে বললো-
“আমি কি আপনার সাথে ফ্রেন্ডশীপ করতে পারি? ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড!”
“অবশ্যই। কেনো নয়। সে তো আমার সৌভাগ্য!”
সুসমি এমন ভাবে কথা গুলো বললো যেনো সে এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলো!
হিমু বুঝতে পারলো ওর টোপ টা সুসমি গিলে ফেলেছে। তাই সে আবদারের সুরে বললো-
“আমরা কি কাল লং ড্রাইভে বের হতে পারি?”
সুসমি কিছুক্ষণ ভেবে বললো-
“হ্যাঁ, তবে খুব বেশিক্ষণ বাইরে থাকতে পারবো না।”
হিমু ওকে আশ্বস্ত করে বললো-
“আচ্ছা ঠিক আছে!”
পরদিন ওরা ঘুরতে বের হলো। হিমু ইচ্ছে করেই সুসমিকে নিয়ে হাই স্পিডে বাইক চালাতে লাগলো। যাতে সুসমির কাপর বাইকের কোথাও না কোথাও বেজে যায়।
সুসমি শাড়ি পরে ছিলো। তাই সে ভালো ভাবে শাড়ি ঠিক রাখতে পারলো না। কিছুদূর না যেতেই হিমুর মনোবাঞ্ছা পুর্ণ হলো। সুসমির শাড়ির আঁচল বাইকে বেজে গেলো। হিমু তাড়াহুড়া করে বাইক থামালো।
তারপর আঁচল খোলার চেষ্টা না করেই টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেললো। অবশেষে সে পেয়ে গেলো সুসমির কাপড়ের টুকরো। সেদিন আর হিমু ঘুরলো। ঐখান থেকে সুসমিকে ওর বাসার কাছে নামিয়ে দিয়ে হিমু ঐ হিন্দু যাজকের কাছে চলে গেলো।
উনি কাপরের টুকরোটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ চোখ বুঁজে ধ্যানে মগ্ন হলেন। তারপর চোখ খুলে বললেন-
“এই মেয়ে তো এক আত্মা। যাকে হত্যা করা হয়েছিল। সে এখন অভিশপ্ত হয়ে গেছে তার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য!”
“সে কে বাবা?”
“তুই চোখ বন্ধ কর আমি তোর মনের ভেতরে তার চেহারার ছাপ ঢুকিয়ে প্রতিফলিত করছি!”
হিমু চোখ বন্ধ করলো। কিছুক্ষণ সে চোখের সামনে ঘোর অন্ধকার দেখতে পেলো। তারপর সেই অন্ধকার ধীরে ধীরে কেটে গিয়ে একটা মেয়েলি টাইপের অস্পষ্ট মুখচ্ছবি দেখতে পেলো। একটুপর সেটা স্পষ্ট হতে লাগলো। স্পষ্ট হতে হিমু তৎক্ষনাৎ চিনতে পেরে গেলো ফেইস টা। আর সাথে সাথে চোখ মেলালো!”
যাজক কৌতুহলী হয়ে জানতে চাইলেন-
“চিনতে পেরেছিস কে ওটা?”
“হ্যাঁ বাবা। সে আমার পরিচিত একজন। ওর নাম কুসুম। ওকে আমার স্ত্রী বর্ষাই খুন করেছিলো!”
To be continue…..