দ্বিতীয় জন 💔Season~2,পর্ব এক

দ্বিতীয় জন 💔Season~2,পর্ব এক
Sumana Easmin

সুস্মিতা বেলকনীতে দাঁড়িয়ে থেকে পড়ছে আর মাঝে মাঝে পায়চারী করছে। ওদের ফ্ল্যাট টি দোতলা। মেইন রোডের পার্শ্বেই। নিচের রুম গুলো সব ভাড়া দেওয়া আছে। আর উপরের রুম গুলোতে ওরা কিছু রিলেটিভস্ নিয়ে থাকে।

পড়তে পড়তে সে কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলো হিমু বাইক নিয়ে ওদের বেলকনীর ঠিক সামনাসামনি এসে দাঁড়ালো। সে ঐ দিকে একপলক তাকিয়েই আবার পড়তে শুরু করলো।

কয়েক দিন ধরেই হিমু ওকে ফলো করছে। বাসার সামনে, কলেজ গেটে, রাস্তাঘাটে সব যায়গায়। তার একটায় কথা সুস্মিতা নাকি তার স্ত্রী। আর সুস্মিতার নামও নাকি বর্ষা।

সে আড়চোখে তাকিয়ে দেখলো হিমু আজ কয়েকটা ছেলেপুলে সাথে করে নিয়ে এসেছে। এতোদিন সে একা একাই ফলো করতো। কিন্তু আজ দলবল নিয়ে এসেছে নিজের বীরত্ব দেখাতে।

নিচ থেকে হিমু গলা বাড়িয়ে সুস্মিতাকে বললো-
“এই যে ম্যাডাম? আপনাকে কতক্ষন থেকে কল করছি। একটু রিসিভ করলেও তো পারেন!”
সুস্মিতা রাগ করার বদলে অবাক হয়ে গেলো। দুইদিনের মধ্যেই নাম্বার ও কালেক্ট করে ফেলেছে? কেমনে সম্ভব?
সে বিরক্ত হয়ে ওর মাকে চিল্লানি দিয়ে ডাকতে লাগলো। ওর মা চলে আসতেই সে বলতে শুরু করলো-
“মা তোমায় বলেছিলাম না, একটা ছেলে আমায় সবসময় ফলো করে? নিচে দাঁড়িয়ে থাকা সবথেকে লম্বা যে ছেলেটাকে দেখছো ঐটাই সেই ছেলে। শুধু তাই নয়, ও আমার ফোন নাম্বারটাও ও কিভাবে জানি কালেক্ট করেছে!”
শিউলী বেগম রাগান্বিত হয়ে হিমুর দিকে তাকিয়ে বললেন-
“এই ছেলে? তোমার সমস্যা কি?”
হিমু ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো-
“আন্টি আপনি আমায় বলছেন?”
“হ্যাঁ তোমায় বলছি। তা তোমার সমস্যা টা কি বলো দেখি?”
হিমু লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে কোন উত্তর না দিয়ে, সোজা বাইক স্টার্ট করে ওর দলবল নিয়ে চলে গেলো।

সুস্মিতা কিছুক্ষণ পর রুমে গিয়ে ফোন হাতে নিতেই দেখলো একটা আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে। সে ওপেন করতেই দেখলো তাতে লেখা-
“এই বর্ষা? তুমি আমায় এভাবে ইগনোর করছো কেনো বলোতো? আমার খুব খারাপ লাগছে! নিজের স্বামীকে কি কেউ এভাবে কষ্ট দেয়?”
মেসেজ টা পড়ে সুস্মিতা প্রচন্ড রেগে গিয়ে নাম্বার টা ব্লাক লিস্টে রেখে দিলো।

পরদিন সকালে সে কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিল এমন সময় আবার একটা আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ আসলো।
সে ওপেন করে দেখলো তাতে লেখা আছে “এই বর্ষা? আজ কলেজে যাবে না?”

সুস্মিতা ফোন সুইচড অফ করে কলেজ যাওয়ার জন্য রওনা দিলো। তার বাসা থেকে কলেজ টা একটু দূরেই হয়ে যায়। প্রথমে একটা রিকশা নিয়ে বাস স্ট্যান্ডে যেতে হয় তারপর বাসে করে কলেজ যেতে হয়।

সে রিকশা থেকে নেমে বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দাঁড়ালো। এক মিনিট না হতেই সে দেখলো হিমু বাইক নিয়ে তার দিকেই এগিয়ে আসছে। সে তাকে দেখেও না দেখার ভান ধরে মাথা নিচু করে রইলো।

একটু পর হিমু সুস্মিতার সাইডে এসে বাইকটা স্ট্যান্ড করে রাখলো। তারপর ওর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বললো-
“এমন ভাবে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছো যেনো মনে হচ্ছে আমার আসা দেখতেই পাওনি!”
সুস্মিতা রাগান্বিত হয়ে বললো-
“আচ্ছা আপনি এতো আমার পিছে পরছেন ক্যান, বলেন তো? আপনার সমস্যা কি?”
হিমু মাথা নিচু করে বললো-
“বউয়ের পিছে পরবো না তো কার পিছে পরবো?”
“বউ মানে?”
“বউ মানে বউ। কতোবার করে বলবো তুমি আমার বউ!”
সুস্মিতা রাগে দাঁত দাঁত চেপে বললো-
“আপনি প্লিজ আমার চোখে সামনে থেকে কেটে পড়ুন। আমার খুব অসহ্য লাগছে।”
হিমু খুব নরমাল ভাবে বলল-
“বউকে একলা ফেলে রেখে কেমনে যাই বলো?”
“না হলে কিন্তু আমি চিৎকার করে লোকজন ডাকবো।”
“বাইকে ওঠো। আমি কলেজে নিয়ে গিয়ে রেখে আসছি।”

“আপনার শখ দেখে তো আমি বাঁচিনা। আমি অতো বড় ঠেকাই পরিনি, যে আপনার বাইকে করে কলেজ যেতে হবে!”
হিমু নির্দেশের স্বরে বললো-
“যা বলছি তাই করো। নইলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে। যতো সময় নিবে ততো বেশি মানুষজন তোমায় দেখবে। আর ততো বেশি আমার রাগ বাড়বে!”
সুস্মিতা তবু বাইকে উঠলো না। সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। আর হিমু যা তা বলতে লাগলো। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরো যখন বাস আসলো না তখন সে বাধ্য হয়ে রিকশা নিয়ে বাসায় চলে গেলো।

💔💔💔💔
হিমুর ব্রেইন ড্যামেজ হওয়ার তিন মাস হয়ে গেলো। সে সবকিছুই ঠিক ঠাক মতো করতে পারে। শুধু বর্ষার মৃত্যু টা মেনে নিতে পারেনা। ওর ধারনা বর্ষা এখনো বেঁচেই আছে। কেউ বর্ষাকে ওর কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছে। যেদিন সে সুস্মিতাকে দেখেছিলো সেদিন থেকে ওর ধারনা টা বিশ্বাসে পরিনত হয়ে গেছে। তারপর থেকে সে আর কারো বুঝ মানেনা। নিজে যেটা মনে মনে কল্পনা করে সেটাই ঠিক ভাবে।

শেষে সুস্মিতার এমন অবস্থা হলো যে সে রুম থেকেই বের হতে পারতো না। হিমু সবসময় ছায়ার মতো হয়ে ওকে ফলো করতো। ফলে সুস্মিতার বাবা মা ওর রুম থেকে বের হওয়া টোটালি বন্ধ করে দিলো।

এভাবেই কিছুদিন কেটে গেলো। হিমু সুস্মিতাকে দেখতে না পেয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলো। সে ধৈর্য্য হারা হয়ে সিদ্ধান্ত নিলো যে সে সুস্মিতাকে তুলে আনবে তার বাসায়।

যেমন ভাবা তেমন কাজ। সে টাকা দিয়ে ছেলেপুলে ঠিক করলো। কথামতো তারা সেদিন সন্ধ্যায়ই সুস্মিতার বাসায় গিয়ে এটাক করলো।

সুস্মিতা তখন পড়ছিলো। ওর সামনে এইচএসসি পরীক্ষা। বাসায় অপরিচিত ছেলেপুলের কন্ঠস্বর শুনে সে দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে গেলো। গিয়ে সে যা দেখলো তা দেখার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা। ওর বাবা মার মাথায় কয়েকটা ছিলো পিস্তল ধরে আছে। আর কয়েকটা ছেলে তন্ন তন্ন করে কাকে যেনো খঁজছে। সুস্মিতাকে দেখা মাত্রই কালো ও মোটা টাইপের একটা ছেলে চিল্লিয়ে বললো-
“বস্, আর খুঁজতে হইবোনা। খাদ্য আপনের চোখের সামনেই দাঁড়ায় আছে।”
লিডার ছেলেটি সুস্মিতাকে দেখা মাত্রই বলল-
“ওহ্, তাহলে তুই সে! যাকগে। কোন কথা বলবিনা। সোজা আমার ছেলেদের সাথে বাসার নিচে নেমে যাবি। আর ওরা যা যা করতে বলবে তাই করবি। নয়তো দেখতেই পাচ্ছিস আমি কি কি করতে পারি।”

সুস্মিতা ভেতরে ভেতরে ভয়ে কাঁপতে লাগলো। কিন্তু সেটা বাইরের কাউকে বুঝতে না দিয়ে বললো-
“আপনাদের যা বোঝাপড়া করার আমার সাথে করুন। আমার বাধা মাকে এর মধ্যে টানবেন না প্লিজ!”
লিডার টাইপের ছেলেটি রাগান্বিত হয়ে বললো-
“বেশি কথা না বাড়িয়ে যা করতে বলছি তাই কর।”

সুস্মিতার বাবা মা ঐ ছেলেগুলোকে অনেক রিকোয়েস্ট করলো কিন্তু ওরা কোন কথা শুনলো না। শেষে উপায় না পেয়ে সুস্মিতা ওদের কথা মতো নিচে যেতে লাগলো।

To be continue…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here