#পাগল_প্রেমিকা
#পর্ব_৪২,৪৩
#Sharmin_Akter_Borsha
৪২
___________
আমি যখন বারবার হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসতাম জিজ্ঞেস করতাম কে কল দিয়েছে এমন বিহেভ করছো কেনো কি হয়েছে। তখন তুমি কি বলতে অফিস থেকে কল এসেছে অফিসে কাজের চাপে ডিপ্রেশনে আছি। তখন কেনো বলোনি মুনিয়া তোমাকে ব্লাকমেইল করছে, আমি তো তোর সম্পর্কে সবই জানতাম তাহলে লুকানোর প্রয়োজন টা ছিল কেনো? আমাকে তখন বললে আমি এডজাস্ট করে নিতাম কিন্তু এখন আমি এইসব শুনতে চাই না আমি জাস্ট পাগল হয়ে যাবো। তুই আমাকে পাগল করে দিবি।
বলতে বলতে মেঝেতে বসে পরেছে।
ওইদিন মুনিয়া এইবাড়ি থেকে চলে তো গিয়েছিল কিন্তু রিমনের জীবন থেকে যায়নি। সে অতীতে রিমনের যতগুলো মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল সবগুলোকে একে একে খুঁজে বের করল। তাদের সম্পর্ক কেমন ছিল সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে লাগল। কারো সাথেই রিয়েল তেমন সম্পর্ক ছিল না সবাই ছিল অনলাইন গার্লফ্রেন্ড। তবে একজন কে মুনিয়া পেয়ে গেলো যার সাথে রিমনের সাথে মোয়ের সকল ভিডিও ও পিকচার ছিল। সেগুলো মেয়ের ফোন থেকে চুরি করে নেয় মুনিয়া আর সেগুলো দিয়েই রিমনকে প্রতিনিয়ত ব্লাকমেইল করে। সে যদি তার সাথে সম্পর্কে না জড়ায় তাহলে ভিডিও পিকচার গুলো বাড়ি সদ্য সবাইকে দেখিয়ে দিবে। ওইবার তো বৃষ্টির জন্য বেঁচে গিয়েছিল তবে এইবার বৃষ্টি ও ছেড়ে চলে যাবে। কল দিয়ে এইসব বলে কল কেটে দিতো, এতদিন এইসব সহ্য করেছে মুখ বুজে কাউকে কিছু বলেনি। তবে লাস্ট যখন সিদ্ধান্ত নিলো এক দিনের জন্যই তো চায় তারপর তো নিজেই দূরে চলে যাবে সে-ও মুক্তি পাবে। তবে ভাগ্যের কি পরিহাস, কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। বৃষ্টি উপস্থিত হলো হোটেল রুমের দরজার সামনে। যার কাছ থেকে লুকানোর জন্য এত কিছু সে নিজের চোখে দেখেছে।
রিমন বৃষ্টি কে সব বলার পরও বৃষ্টি রাজি হয়নি এ সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার সে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে, আগে Abortion করাবে পরে ডিভোর্স।
রাতে আর কেউই খায়নি। তবে রিমন রুমে বৃষ্টির জন্য খাবার নিয়ে এসেছিল তা বৃষ্টি ‘ খাবে না ‘ বলে ডিরেক্ট মানা করে দেয়। পুরো রাত দু’জনের একজনও চোখের পাতা এক করেনি৷ মাঝরাতে রিমনের ফোনে মুনিয়া কল দিয়েছিল। ফোনের স্কিনে মুনিয়া নামটা দেখে ফোনটা ফ্লোরে ছুঁড়ে আছাড় মারল। ফোন টা মুহুর্তেই ভেঙে গেলো। আছাড় মারার শব্দে বেলকনির দিকে একবার তাকিয়ে বিছানার উপর উপুড় হয়ে শুয়ে মুখে বালিশ চাপ দিয়ে ধরে কাঁদতে লাগল।
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে একটার পর একটা সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে এদিকে বৃষ্টির কান্নার আওয়াজ তার কানে পৌঁছাতে জেনো তার কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে। সে যন্ত্রণা দূর করতে সিগারেট।
কাঁদতে কাঁদতে বিছানার উপর ঘুমিয়ে যায়৷
এক ঘন জঙ্গলে বৃষ্টি খালি পায়ে পরণে সদ্য সাদা শাড়ি বনের মধ্যে একা একা হেঁটে চলেছে৷ কোথা থেকে এক বাচ্চার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে, সে আওয়াজের পেছনে ছুটে চলেছে বৃষ্টি, ঘনজঙ্গলের মধ্যে গেলে দেখে একটা বাচ্চা গায়ে জড়ানো সাদা রঙের এক টুকরো কাপড়। বাচ্চা টা এদিক সেদিক হাত ফেলছে আর ‘ মা মা ‘ বলে কাঁদছে , অপলকভাবে তাকিয়ে রইল বৃষ্টি বাচ্চাটার সৌন্দর্যের দিকে বাচ্চার ডাকে ও তার মুখ দেখে মুগ্ধ হয়েছে সে। বাচ্চা টা সামনে বৃষ্টি কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে। গুটিগুটি পায়ে তার দিকেই হেঁটে যাচ্ছে। বাচ্চা টা বৃষ্টির সামনে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির এক হাতের একটা আঙুল ধরে নিচের দিকে টান দিলো। বৃষ্টি হাঁটু গেঁড়ে বাচ্চা টার সামনে বসল। বাচ্চা টা বলতে শুরু করল, ‘ তুমি আমাকে চিনতে পারছো না মা। আমি যে তোমারি একটা অংশ তোমার মধ্য থেকে আমি বলছি। মা আমাকে মেরে ফেলো না, আমি এই দুনিয়াতে আসতে চাই আমি তোমার কোলে খেলতে চাই আমি তোমাকে মা বলে ডাকতে চাই মা। আমাকে তুমি মেরে ফেলো না আমি তোমারই অংশ তুমি আমাকে পৃথিবীতে আসতে বাধা দিও না মা। ‘
এরই মধ্যে বৃষ্টি ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসল। বুঝতে পারল এতক্ষণ সবটা স্বপ্ন দেখছিল। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সামনে তাকালো সিঙ্গেল সোফার উপর আধশোয়া হয়ে ঘুমিয়ে আছে রিমন। পুরো রাত ঘুমাতে পারেনি। বৃষ্টি ঘুমিয়ে ছিল তার পরপর রুমে এসে বিছানায় মাথার কাছে বসে ছিল।
ফজরের আজানের পরপরই নামাজ আদায় করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় ও নিজের সন্তানের হেফাজত কামনা করে পার্থনা করে। সোফার উপর গা এলিয়ে দিলে চোখ জোড়ায় ঘুম নেমে আসে। বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখে রিমন উঠে গেছে ঘুম থেকে রিমন বৃষ্টির সাথে কথা বলতে আসলে বৃষ্টি রুম থেকে বের হয়ে চলে আসে। রিমনও ফ্রেশ হতে বাথরুমে চলে যায়।
ডাইনিং টেবিলে সকলে একসাথে বসে নাস্তা করছে তখন বৃষ্টি বলল, ‘ আমার সবাইকে একটা কথা বলার ছিল। ‘
বৃষ্টির কথা শুনে মুখের মধ্যে খাবার আঁটকে গেলো রিমন ভেবেছে বৃষ্টি abortion এর কথা বলবে। কিন্তু রিমনকে ভুল প্রমান করে বৃষ্টি বলল।
মা, রিমি, সোহান জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল বৃষ্টির মুখ পানে। মুখটা আগের থেকে শুকনো লাগছে। মা বললেন, ‘ ডাক্তার কি বলেছে মা কাল তো আর আমাকে কিছু জানালে না? ‘
বৃষ্টি নিশ্বাস ফেলে জোর করে হাসার চেষ্টা করে বলল, ‘ ডাক্তার বলেছেন খুশির খবর। ‘
বাস আর কিছুই বলতে হয়নি চেয়ার থেকে উঠে বৃষ্টি কে জড়িয়ে ধরলেন এত আনন্দের খবর টা দেওয়ার জন্য রিমি ও বৃষ্টি কে জড়িয়ে ধরে। সোহান বৃষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে দোয়া করে। সবাই অনেক তাদের খুশির সিমা নেই। সোহান নাস্তা খাওয়া রেখে বাজারের উদ্দেশ্য চলে গেলো৷ এত খুশির একটা সংবাদ মিষ্টি না হলে তো চলেই না। রিমন বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু বৃষ্টি একবারও রিমনের দিকে ফিরে তাকায়নি।
_______
বৃষ্টি বর্ষার ফোনে মেসেজ দিয়ে বলে এই সুখবরটা বর্ষা খুশিতে গদগদকণ্ঠে বাড়ির সকলে বলল। সবাই এখানেও বেশ খুশি হল। বর্ষা বৃষ্টির ফোনে ভিডিও কল দিলো সবাই বৃষ্টির সাথে কথা বলল। তারা যে কত খুশি হয়েছে তা প্রকাশ করল। বৃষ্টি ও তাদের আনন্দে বিমোহিত হলো।
সন্ধ্যার দিকে বেলকনিতে একা একা দাঁড়িয়ে আছে। ঠান্ডা শীতল বাতাস বইছে খোলা চুলগুলো বাতাসে উড়ছে পেছন থেকে গলা জেড়ে কাশি দিলো রিমন। তাতে বৃষ্টির কোনো হেলদোল নেই। পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল, ‘ আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দাও, ‘
অন্য দিকে তাকিয়ে ইতস্ততভাবে বলল, ‘ ক্ষমা যদি নাই করতাম তবে আজ আমি আপনার বাড়িতে থাকতাম না। ‘
প্রত্যত্তরে রিমন কিছুই বলল না, এতটুকুতেই সন্তুষ্ট যে বৃষ্টি Abortion করাবে না৷ যতক্ষণ বৃষ্টি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিল ঠিক ততক্ষণই রিমন বৃষ্টির পেছনে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। ইচ্ছে করছিল তার বৃষ্টি কে জড়িয়ে ধরতে নিজের জীবনের সব থেকে বড় খুশির খবর পেয়েছে তাও আবার এমন পরিস্থিতিতে।
রুমে ঢুকতে যাবে তখন পায়ে পা লেগে পরে যাচ্ছিল পাশে রিমন বৃষ্টির হাত শক্ত করে ধরল। তাতে বৃষ্টি নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, ‘ আমার আপনার সাহায্যের প্রয়োজন নেই। যে হাত দিয়ে অন্য কাউকে স্পর্শ করেছেন সে হাত দিয়ে আমাকে স্পর্শ করবেন না ‘
বলে রুমে চলে যায়। রিমনও সেখানে একমিনিট দাঁড়ায় না। বাড়ি থেকে বের হয়ে পরে খুব স্পিডে বাইক চালাচ্ছে , রাস্তার সামনে মুনিয়া তার গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ির সামনে বাইক থামালো। মুনিয়া সামনে এসে আগের ভিডিও পিকগুলো সেই টপিকনিয়ে আবার ছেড়খানি শুরু করে দেয়। এতে রিমন অতিরিক্ত রেগে যায়৷ উল্টো হাতে মুনিয়ার গালে চড় বসায়, থাপ্পড়ের চটে তাল সামলাতে না পেরে মাটিতে বসে পরে। মাটি থেকে টেনে তুলে কালকের ঘটনা মুনিয়া কে বলে। আর মুনিয়া যথেষ্ট বুদ্ধি মতি মেয়ে৷ বৃষ্টি প্রেগন্যান্ট শুনে থমথমে হয়ে দাঁড়িয়ে রয়। আরও কিছু কথা শুনিয়ে রিমন সেখান থেকে চলে যায়। কিছুদূর যাওয়ার পরই বাইক এক্সিডেন্ট করে সেখানে সবাই এক্সিডেন্ট হয়েছে বলে চেচামেচি শুরু করে দেয়। মুনিয়া দৌঁড়ে গিয়ে দেখে সে তো অন্য কেউ নয় রিমন। ধড়াধড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে, মুনিয়া কি করবে বুঝতে না পেরে বৃষ্টির নাম্বারে কল দেয়। তবে বৃষ্টি কল রিসিভ করে না সেজন্য রিমির নাম্বারে কল দেয়। কল রিসিভ করলে রিমনের অবস্থা বলতে রিমি বাড়ি মাথায় তুলে নেয়। সবাই ছুটাছুটি করে হাসপাতালে আসে সাথে বৃষ্টি ও থাকে। আইসিইউর সামনে মুনিয়া কে দেখে বৃষ্টি নিজেকে শান্ত রাখতে না পেরে গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দেয়। হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল বাকিরা চড় মারার কারণ তারা কেউই আন্দাজ করতে পারল না।
ঘন্টা খানিক পর ডাক্তার এসে বললেন।
চলবে?
#পাগল_প্রেমিকা
#পর্ব_৪৩
#Sharmin_Akter_Borsha
________
ডাক্তার বললেন মাথায় একটু গভীর আঘাত লেগেছে দুই রেস্ট এ থাকবে আমার মনে হয় হাসপাতালে থাকলেই বেশি ভালো হবে। কিছুক্ষণ পর কেবিনে সিফট করা হবে তখন আপনারা সবাই দেখা করে আসবেন। সারারাত সকলে হাসপাতালে ছিল ভোর হতে রিমনের জ্ঞান ফিরে আসল। নার্স মিলি দৌড়ে গিয়ে একজন ডাক্তারকে ডেকে আনলেন। ডাক্তার এসে কিছু চেক আপ করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ এখন কেমন আছেন? ‘
রিমন ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেঁসে বলল, ‘ ফাস্ট ক্লাস ‘
ডাক্তার বের হয়ে চলে গেলে, পরিবারের সকলে কেবিনে ঢুকে প্রবেশ করল। মা রিমনকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। সবাই একে একে শত প্রশ্ন জুড়ে দিলো। সবার শত প্রশ্নের উত্তর দিয়ে এবার সে প্রশ্ন ছুঁড়ল, ‘ বৃষ্টি আসেনি? ‘
মা শাড়ির আঁচল দিয়ে গালে লেপ্টে থাকা পানি মুছে নিয়ে প্রত্যত্তরে বলল, ‘ কাল রাত থেকে আমাদের সাথেই হাসপাতালে রয়েছে তোর এক্সিডেন্টের খবর শুনেছে পর থেকেই কেঁদে যাচ্ছে এখনে বাহিরে বসে কাঁদছে কতবার বললাম আমাদের সাথে ভেতরে আসতে কিন্তু আসলো না।
রিমন এক শ্বাস ফেলে বলল, ‘ তোমরা সবাই বাহিরে গিয়ে বৃষ্টি কে একটু পাঠিয়ে দাও না প্লিজ আমার ওর সাথে একটু জরুরি কথা বলার আছে৷ ‘
তার কথা মতো সকলে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো। বাহিরে এসে বৃষ্টির কাঁধের উপর হাত রেখে বললেন, ‘ মা তোমাকে আমার ছেলেটা কেবিনের মধ্যে যেতে বলেছে যাও মা দেখা করে আসো। ‘
হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে মাথা উপর নিচ নাড়ালো। তারপর উঠে কেবিনের সামনে এসে দাঁড়ালো। দীর্ঘ এক নিশ্বাস ফেলে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল। হাতে মাথায় ব্যান্ডেজ করা। দরজা খোলার শব্দে মাথা তুলে সামনে তাকালো। মাথা নিচু করে ভেতরে আসল। বৃষ্টি কে নিজের পাশে বসতে বলল বৃষ্টি ও নিশ্চুপ হয়ে বসল।
রিমন, ‘ তুমি এখন আমাকে ঘৃণা করো আমার মুখ টাও দেখতে চাও না। চিন্তা করো না আমি খুব তারাতাড়ি দেশ ছেড়ে চলে যাবো তখন আর তোমাকে আমার মুখ দেখতে হবে না। ‘
দেশ ছেড়ে চলে যাবে শুনে মাথা তুলে সামনে রিমনের মুখপানে তাকালো। রিমন আবারও বলতে লাগল, ‘ আজ আমি হয়তো মরে গেলেই ভালো হতো? ‘
আর কিছু বলার আগে বৃষ্টি চেয়ার থেকে উঠে রিমনের বেডের উপর বসে রিমনের বুকে এলোপাতাড়ি ঘুসি দিতে লাগল আর বলল, ‘ মানে কি তোমার এই কথার হাহ তোমার কিছু হয়েগেলে আমি বাঁচবো কিভাবে? আর আমাকে আমাদের সন্তান কে রেখে তুমি কোথায় যাবো কোথাও যেতে দেবো না আমি তোমাকে আমার কাছেই বেধে রেখে দিবো চির জীবনের জন্য কোথাও একচুলও যেতে দিবো না। আমি তোমাকে ভালোবাসি রিমন তুমি কি বুঝো না কেনো তারপরেও আমার সাথে এমন করো তুমি কি ভুলে যাও আমি তোমার জন্য পাগল আঘমি যে তোমার #পাগল_প্রেমিকা তোমাকে ছাড়া আমি যে নিজেকে কল্পনা করতেও ভয় পাই। কেনো প্রতিবার আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা কেনো বলো আমাকে কষ্ট দিতে তোমার খুব ভালোলাগে তাই না। আমার জায়গায় অন্য যেকোনো মেয়ে থাকলে সেও এমনভাবে রিয়েক্ট করতো আমার থেকেও বেশি করতো, কোনো মেয়েই তার স্বামীর ভাগ অন্য মেয়েকে দিতে পারে না আমিও মেয়ে আমি কিভাবে তোমার ভাগ অন্য কাউকে দিবো। তুমি একান্তই আমার আমি যে তোমাকে কারো সাথে শেয়ার করতে পারবো না রিমন। আমি যে আমার থেকেও বেশি তোমাকে ভালোবাসি তুমি কবে বুঝবে আমার ভালোবাসা আমি মরে গেলে তখন বুঝবে। আমি যে পাগলের মতো ভালোবাসি তোমাকে।
কথাগুলো বলছে আর চোখ বেয়ে অশ্রু জড়ছে শেষের কথাগুলো শেষ হতে রিমন একটানে বৃষ্টি কে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় নিজের আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে।
হঠাৎ দরজায় কড়া পরে, ভেতরে আসার পারমিশন দিলে, মুনিয়া কেবিনের মধ্যে ঢুকে, মুনিয়াকে দেখে রিমন বিরক্তিতে কপালের চামড়া ভাজ করে। বৃষ্টি রিমনকে শান্ত করানোর জন্য বলে, ‘ কাল তোমাকে হাসপাতালে মুনিয়াই নিয়ে আসছে। ‘
কথাগুলো কান দিয়ে ঢুকেছে তবে মুখ দিয়ে আওয়াজ বের হয়নি। মুনিয়া রিমনের হাতে পায়ে ধরে ওর সকল কুকীর্তির জন্য ক্ষমা চাইল।
রিমনের চাহনি দেখে মুনিয়া বুঝতে পারে সে তাকে ক্ষমা করেনি তারপরও বলল, ‘ যদি কখনো সম্ভব হয় তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি আর কখনো তোমাদের মাঝে আসবো না, আমি বুঝতে পেরে গেছি তোমাদের জন্ম শুধু তোমাদের জন্যই হয়েছে এখানে তৃতীয় ব্যক্তির কোনো স্থান নেই। অনেক অন্যায় করেছি তোমাদের সাথে দয়া করে ক্ষমা করে দিও, ‘
কথাগুলো বলে কেবিন থেকে বের হয়ে চলে যায়। চোখ দিয়ে পানি জড়ছে হাত দিয়ে গালের অশ্রু মুছতে মুছতে হাসপাতাল থেকে ছুটে বের হয়ে আসল। রাস্তায় হাঁটু গেঁড়ে বসে চিৎকার দিয়ে কাঁদছে, রিমনের প্রতি তার ভালোবাসা মিথ্যে ছিল না। সত্যিই ছিল তবে তাকে পাওয়ার রাস্তা টা ভুল ছিল।
_______
তিনদিন পর রিমন এখন আলহামদুলিল্লাহ সম্পূর্ণ সুস্থ এবং আজকেই বাড়িতে ফিরে আসছে। বাড়িটা আবারও আগের মতো হাসি উল্লাসে মেতে উঠেছে, এবার তো বৃষ্টির খবর আছে রিমন তার পেছনে লেগে থাকে, কোনো কিছু তে হাতই দিতে দেয় না। যা লাগবে শুধু বসে বসে অর্ডার করবে সবাই তার সামনে এনে দিবো। বাড়িতে যতক্ষণ রিমন থাকবে ততক্ষণ তাকে কড়া নজরে রাখবে। রিমন অফিসে চলে গেলেই শান্তি পায়। মন খুলে হাঁটা চলা করতে পারে। চাইলে কাজ করতে পারে ছাঁদে যেতে পারে। টিভি দেখতে পারে ফোন টিপতে পারে। এইসব রিমন থাকলে বৃষ্টি কে করতে দেয় না। দেখতে দেখতে আরও একমাস চলে গেলো। চলে আসল রমজান মাস, রোজার মাস শ্রেষ্ঠ মাস। বৃষ্টি প্রতিবারই রোজা রাখে কোনো বারই মিস হয় না।
তবে এবার রিমন এক কথায় দাঁড়িয়ে আছে রোজা রাখা যাবে না বাকি সব আমল করতে কিন্তু বৃষ্টি কোনো ভাবেই মানছে না।
বৃষ্টি একবার মা’র কাছে তো আরেকবার রিমি ও সোহানের কাছে যাচ্ছে। সবাই মিলে রিমনকে বললে সে অনেক চিন্তা ভাবনা করে রাজি হয়। তবে শর্ত একটাই সম্পূর্ণ বেড রেস্ট থাকতে হবে। আপাতত শর্ত মানা ছাড়া অন্য উপায় নেই।
সেহেরির সময়, বৃষ্টি ঘুমাচ্ছে মুখের উপর ছোটছোট চুলগুলো এসে পরে আসে। রিমন আলতো হাতে চুলগুলো কানের পেছনে গুজে দিলো। কপালে আলতো চুমু একে দিয়ে বৃষ্টিকে সেহেরির জন্য ডাকতে থাকল।
ঘুমে বিভোর কয়েকবার নড়েচড়ে পরে উঠে বসল। ফ্রেশ হয়ে সবাই একসাথে খেতে বসল।
সেহেরি শেষে পুরো রুমে গুনে দশ মিনিট হাঁটতে হলো। হাতে ঘড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল রিমন দশ মিনিট পূরণ হতেই ‘ স্টপ ‘ বলল।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ফজরের আজান পরলো। দু’জনে একসাথে ফজরের নামাজ আদায় করল। বিছানার উপর পা মেলে বসে আছে বৃষ্টি, রিমন হাতে কোরআন শরীফ নিয়ে বৃষ্টির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরল। দোয়া পড়ে কোরআন খুলল, এক এক পাতা পরছে আর পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছে, একটু একটু পড়ছে আর বৃষ্টির পেটের উপর হাত রাখছে। বৃষ্টি মন দিয়ে কোরআন তেলাওয়াত শুনছে, আলতো হাতে রিমনের মাথার চুলে হাত বুলাচ্ছে। খুবই সুন্দর মূহুর্ত বাঁধিয়ে রাখার মতো। বৃষ্টি ঘুমের দেশে তলিয়ে গেছে আধশোয়া হয়ে খাটের সাথে হেলান দিয়ে আছে। কোরআন তেলাওয়াত শেষ করে। বৃষ্টি কে ঠিক করে বিছানায় শুইয়ে দিলো। সারাদিন বৃষ্টি কে জ্ঞান দিতে থাকে, এভাবে বসা যাবে না এভাবে শুয়া যাবে, এভাবে হাঁটা যাবে না আস্তে আস্তে হাঁটতে হবে জোরে চেচিয়ে কথা বলা যাবে। ইফতারির পর, একই কাহিনি এটা খাওয়া যাবে না ওটা খাওয়া যাবে। উফফ রিমনের Over possessiveness বৃষ্টিকে বিতৃষ্ণা করে তুলেছে৷ কোনো ডাক্তারের বউকেও হয়তো ডাক্তার রা এতটা রুটিনের মধ্যে রাখে না। ডাক্তারের কথা ভাবতেই বৃষ্টির এখন ডাক্তার নীল এর কথা মনে পরল। দুই মাস হয়েগেছে গিয়েছে এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ খবর নেই। বৃষ্টি যখনই কল দেয় তখনই ফোন বলে বন্ধ। আজও তাই রাতে ফ্রি টাইমে কল দিয়েছিল আজও ফোন বন্ধই পেলো।
রিমনের অতিরিক্ত Possessiveness দিনদিন বেড়েই চলেছে। এভাবেই রমজান মাস পার হলো। রাত পোহালেই ঈদের দিন। পুরো একটি রাত ছাদে দোলনায় বসে দু’জনে ঈদের চাঁদ দেখতে দেখতে পার করে দিলো। বসে বসে প্লেন করছিল কাল কি কি করবে এমন কোথায় ঘুরতে যাবে। সবকিছুই ঠিক প্লেন মতামত হলো।
ঈদের দিন সবাইকে ঈদ মোবারক জানানো হলো। মা খুশি হয়ে বৃষ্টির হাতে ঈদ বোনাস গুঁজে দিলো। সোহান আর রিমিও ঈদ বোনাস দিলো৷ তাদের কেও সালাম দিলো। খুশি মনে রুমে আসল কিন্তু রিমন রুমে নেই ডেসিন টেবিলের উপর একটা কার্ড। সেটা দেখে টেসিন টেবিলের উপর থেকে কার্ডটা নেয়। খুলে দেখে ভেতরে কচকচে এক হাজার টাকার অনেক গুলো নোট। পাশেই ছোট করে লেখা, – বেগম আপনার ঈদের সালামী।
ঈদ বোনাস তো পেয়ে গেলেন আমাকে সালাম করতে কিন্তু ভুলবেন না। আমি সময়ের আগেই চলে আসবো। শুধু বোরকা ও হিজাব পরে বসে আছে। সেজেগুজে বাহিরে যাওয়া যাবে না তার বউ তার সামনে সেজেগুজে বসে থাকবে কেনো পরপুরুষ কে সৌন্দর্য দেখাতে যাবে এক কথা।
সারাদিন অপেক্ষার করল কিন্তু রিমন ফিরে এলো না আর না আসলো তার কোনো ফোন। একরাশ অভিমান নিয়ে বসে আছে আর তার আসার কোনো খবর এডলিস্ট আসবে না সেটাও ফোন করে বলেনি। অফিসের কাজের চাপে এতটাই মগ্ন হয়ে পরেছিল বৃষ্টি কে দেওয়া প্রমিজের কথা তার মাথা থেকেই বের হয়েগেছে। প্রায় সন্ধ্যা সাতটা বাজে সকল কাজ সম্পূর্ণ করে ইজি চেয়ারে মাথা এলিয়ে দিয়ে বসল। কলার টাই হালকা টেনে ঢিলা করে নিলো। দুই চোখের পাপড়ি বন্ধ করে রাখতে হঠাৎ বৃষ্টি কে দেওয়া কথা মনে পরল। হন্তদন্ত হয়ে গায়ে ব্লেজার টা জড়িয়ে অফিস থেকে বের হলো।
বাড়িতে পৌঁছে সবার দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করল৷ রিমি প্রতিউত্তরে কিছু না বল আঙুল দিয়ে সোজা রুমে ইশারা করল রুমের মধ্যে এসে দেখল অভি মানি বৃষ্টি অভিমান করে নাক ফুলিয়ে আছে৷ মনে হচ্ছে কথা বলবে না তাই সোজা বৃষ্টির সামনে এস হাঁটু গেঁড়ে বসল৷ কানে হাত দিয়ে বারবার সরি বলতে লাগল।
বৃষ্টি রাগ না দেখিয়ে শীতল কন্ঠে বলল, ‘ একবার কল দিয়ে বললেই পারতে তুমি কাজে ব্যস্ত আসতে পারবে না তাহলেই আমি আর অপেক্ষা করতাম না। বলে রিমনের সামনে থেকে সরে রুমে চলে আসল। রিমন সেখানেই বসে রইল। ওইদিকে
#চলবে