পাগল_প্রেমিকা #পর্ব_৪১

#পাগল_প্রেমিকা
#পর্ব_৪১
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
__________
আজ কয়েকদিন যাবৎ শরীর টা ভালো নেই। কিছুতেই ভালো লাগছে না, কোনো কিছু খেতেও ইচ্ছে করছে। শুধু মনে হচ্ছে কিছু একটা খেলে ভালো লাগতো তবে সেটা কি জানা নেই। আজ বাহিরে অনেক রৌদ, গরমে ঘা থেকে ঘাম ঝড়ছে অস্তিত্ব ফিল হচ্ছে। রুমের এ.সি টাও জেনো এই গরমের কাছে হার মেনে গেছে। সকালে একবার গোসল করেছে, দুপুরে গরম সহ্য করতে না পেরে তখনও করেছে। বিকালে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ভাবছে এখন আরও একবার করবে কি না? এতবার গোসল করলে তো ঠান্ডা লেগে যাবে। সময় খুব তারাতাড়ি ঘনিয়ে যায়। দেখতে দেখতে একমাস চলে গেলো এতে কোনো সন্দেহ নেই। ভালো আছে খুব সুখেও আছে, সে চিন্তাও কখনো করেনি রিমনের সাথে তার সংসার জীবন এত ভালো কাটবে সবই আল্লাহর দোয়ায়। কিন্তু মাঝেমধ্যে ওর ফোনে একটা কল আসে আর সে কলটা আসার পরপরই তার মুখের অঙ্গিরা পাল্টে যায়।
মাঝ রাতেও লক্ষ্য করি সে রুমের মধ্যে পায়চারি করছে অথবা আমার ঘুমের ডিস্টার্ব জেনো না হয় সেজন্য বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এত কোলাহল কিসের জন্য জানতে বড্ড ইচ্ছে করে কিন্তু সে আমাকে বলে না। তাই আমারও যে শরীর খারাপ আমিও তাকে বলিনা। কিন্তু আজ শরীর টা বড্ড বেশিই খারাপ লাগছে চিন্তা করছি একবার হাসপাতাল যাবো।

মা রুমের মধ্যে বসে সুপারি কাটতে ছিলেন, তখন আমি তার রুমে গিয়ে বললাম।
‘ মা একটা কথা ছিল ‘

আমার ডাক শুনে সুপারি কাটা বন্ধ করে মাথা তুলে আমার দিকে দেখল জবাবে জানালেন, ‘ কি বলবে বলো মা ‘

আমি তার পাশে বসে বললাম, ‘ মা আমার শরীরটা ভালো নেই, কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ অনুভব করছি। আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে একটু ডাক্তারের কাছে হসপিটাল যেতে চাচ্ছি। ‘

আমার কথা শুনে মা সুপারি কাটার সরতা নিচে রেখে আমার কপালে হাত দিয়ে বিচলিত হয়ে উঠে বিস্মিত স্বরে বলল, ‘ সে কি মা কবে থেকে শরীর খারাপ লাগছে আগে কেনো বলোনি। তাইতো মুখটা এমন চুপসে গেছে, তুমি একা যেতে পারবে মা? জানোই তো আমার পায়ের জন্য বাহিরে হাঁটা চলা তেমন করতে পারি না। তুমি বরং অপেক্ষা করো রিমন আসলে ওকে সাথে করে নিয়ে যেও ‘

‘ তার কোনো প্রয়োজন হবে না মা আমি একা যেতে পারবো এমনিতেও উনি সারাদিন অনেক কাজের মধ্যে থাকেন সবসময়ই টেনশনে থাকেন বাড়িতে আসলে একটু রেস্ট নিবেন। আমি ততক্ষণে চলে আসবো। ‘

‘ আচ্ছা মা তাহলে যাও সাবধানে যেও, আর টাকা আছে তোমার কাছে না থাকলে দাঁড়াও আমি দিচ্ছি। ‘

‘ না মা থাক আপনাকে আর কষ্ট করে উঠতে হবে না আমার কাছে টাকা আছে। ‘

‘ আচ্ছা তাহলে রাস্তা ঘাট দেখে শুনে যেও! ‘

‘ ঠিক আছে মা আসি আল্লাহ হাফেজ ‘

‘ আল্লাহ হাফেজ ‘
______
দীর্ঘ চারঘন্টা ধরে হাসপাতালে বসে আছে। এত সিরিয়াল যা বলার বাহিরে একবার তো ইচ্ছে করেছিল বাড়ি ফিরে যেতে কিন্তু কিছুক্ষণ আগেও শরীর বেশ খারাপ হয়ে যায়। তাই না গিয়ে বসে বসে অপেক্ষা করছে।

অবশেষে নিজের সিরিয়াল আসলো বলে অস্থির নিশ্বাস ফেলে ডাক্তারের চেম্বারে প্রবেশ করল। মহিলা ডাক্তার সালাম দিলো, ‘ আসসালামু আলাইকুম। ‘

ডাক্তার বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে সালামের জবাবে বলল, ‘ ওয়া-আলাইকুমুস- সালাম ‘

ডাক্তার বৃষ্টির কাছে তার অসুবিধা গুলো জানতে চাইলো। বৃষ্টি ও সব কিছু খুলে বলল কখন থেকে ও কেমন কেমন লাগে সব কিছুই বলল। ডাক্তার গম্ভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে গুরুগম্ভীর কন্ঠে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ল, ‘ লাস্ট কবে পিরিয়ড হয়েছিল। ‘

বৃষ্টি হতভম্ব হয়ে চুপ করে রয়। হঠাৎ এই প্রশ্ন শুনে আতঙ্কে আঁতকে উঠল। ডাক্তারের দিকে করুণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল, ‘ কেনো ডাক্তার এই প্রশ্ন কেনো করছেন? আমার কি কঠিন কোনো রোগ হয়েছে? ‘

বৃষ্টির প্রশ্ন ডাক্তার হেঁসে ফেললেন আর হাসি দিয়েই বললেন, ‘ আপনার সবগুলো সিম্পটম শুনে মনে হচ্ছে আপনি প্রেগন্যান্ট এখন লাস্ট পিরিয়ড কবে হয়েছে জানলে আমি আপনাকে, কিছু টেস্ট সহ আল্ট্রাসোনোগ্রাফী করার জন্য ও লিখবো। তাই লাস্ট ডেট বলেন। ‘

বৃষ্টি বর্তমানে মনে হচ্ছে ও আকাশে শূন্যে ভাসছে কি বলল ডাক্তার প্রেগন্যান্ট মানে কি সত্যি লাইক সিরিয়াসলি?

বৃষ্টি কে থমথমে হয়ে বসে থাকতে দেখে ডাক্তার আবারও প্রশ্ন ছুড়ল এইবার বৃষ্টি ডেট বলল। ডাক্তার সিওর হওয়ার জন্য কিছু টেস্ট লিখে দিলেন আর বললেন। এখনই টেস্ট গুলো করে আমাকে দেখাবেন তারপর আমি ঔষধ লিখে দেবো। চেম্বার থেকে বের হয়ে টেস্ট গুলো করানোর জন্য ফাইল হাতে নিয়ে চলে গেলো।
দুই ঘন্টা পর, ডাক্তারের চেম্বারে আবারও গেলো। সবগুলো টেস্ট রিপোর্টে ডাক্তার ভালো ভাবে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন। অন্তিমে ডাক্তার মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল, ‘ কংগ্রাচুলেশনস আপনি মা হতে চলেছেন। ‘

বৃষ্টি অবাক নয়নে ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে রইল। চোখের কার্নিশ বেয়ে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরল। তার জেনো মনে হচ্ছে ডাক্তার অন্য কিছু বলেছে আর সে অন্য কিছু শুনেছে। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের জল মুছে নিলো আর বলল, ‘ আপনি সত্যি বলছেন ডাক্তার আমি সত্যি মা হতে চলেছি? ‘

ডাক্তার হাসি মুখে চোখ জোড়া একবার বন্ধ করে মাথা উপর নিচ করল। মানে সত্যি সে মা হতে চলেছে। খুশিতে আত্মহারা হয়ে বৃষ্টি ডাক্তারকেই উঠে জড়িয়ে ধরল। ডাক্তার বৃষ্টির অনূভুতির কদর করে পিঠে দুইবার হাত বুলিয়ে দিলেন। মা হওয়া যে একটা নারীর কাছে কতটা আনন্দের সেটা বলে বোঝানো যাবে না।

ডাক্তারকে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুছে নিয়ে বলল, ‘ সরি ডাক্তার নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি!’

ডাক্তার বললেন, ‘ ইট’স ওকে এইসময় এমনটাই এখন বসুন আমি মেডিসিন গুলো লিখে দিচ্ছি টাইমলি খাবেন আর কিছু রুলস ফলো করবেন। ‘

ডাক্তারকে ধন্যবাদ জানিয়ে চেম্বার থেকে বের হলো। ঔষধ গুলো কিনে গাড়িতে উঠতে যাবে তখন ছোটো একটা মেয়ে এসে বলল, ‘ আপু একটা ফুল নিননা একটা ফুল মাত্র দশ টাকা। ‘

এত ছোট একটা মেয়ে এর এখন স্কুলে পড়ার বয়স আর এ এখন রাস্তা ঘাটে ফুল বিক্রি করছে। মেয়েটার মুখের দিকে তাকাতে বৃষ্টির বুকের ভেতর দুমড়ে মুচড়ে উঠল চোখ ভাড়ি হয়ে গেলো নোনা জলে। মেয়েটার থুতনিতে হাত রেখে বলল, ‘ তোমার কি খিদে পেয়েছে? ‘

সত্যি মেয়েটার প্রচুর খিদে পেয়েছে কিন্তু খাওয়ার জন্য টাকা নেই, অনেকের কাছে একটু খাবার চেয়েছিল কেউ দেয়নি। চোখ বেয়ে দুই ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরে করুণ কন্ঠে বলে, ‘ গরিবের খিদে লাগে না আপু, ‘

মেয়েটার কথায় এবার আর বৃষ্টি চোখের পানি ধরে রাখতে পারল না। মাটিতে হাঁটু গেঁড়ে বসে মেয়েটা নিজের আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল। সামনে এসে থাকা এলোমেলো চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে পেছনে ঠেলে দিলো। ঔষধগুলো আর ফাইলগুলো গাড়ির মধ্যে রেখে ড্রাইভার কাকা কে আর একটু অপেক্ষা করতে বলে পাশেই একটা খাবার হোটেলে গেলো। টেবিলে বসে কিছু খাবার অর্ডার দিলো। ওয়েটার খাবার এনে টেবিলের উপর রাখল, মেয়েটা সবগুলো খাবারের উপর একবার তাকিয়ে বৃষ্টির দিকে তাকালো৷ বৃষ্টি মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল, ‘ তুমি একা খাবে নাকি আমি খাইয়ে দেবো? ‘

মেয়েটা চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলল, ‘ আজ পর্যন্ত আমাকে কেউ খাইয়ে দেয়নি। ছোটো থেকেই কুড়িয়ে ভিক্ষা করে খাই। ‘

বৃষ্টি মেয়েটার নাম জিজ্ঞেস করল, মেয়েটা বলল, ‘ আমার নাম মাসাল! ‘

আর কিছু না বলে বৃষ্টি মাসালকে খাইয়ে দিতে লাগল, সেও কাঁদছে আর খাচ্ছে তবে এ কান্না কষ্টের নয় সুখের জীবনে প্রথম এত ভালোবাসা আদর দিয়ে কেউ খাইয়ে দিচ্ছে।

হোটেলের বিল মিটিয়ে রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টের নিচে দু’জনে বসে আছে৷ মেয়েটা বলল, ‘ আপনি অনেক ভালো। ‘

প্রত্যত্তরে মুচকি হেসে মেয়েটার কপালে আলতো চুমু একে দিলো আর বলল, ‘ তুমি কি জানো আজকে আমার জন্য পৃথিবীর সবথেকে বেশি খুশির দিন ‘

মাসাল জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল, বৃষ্টি এবার বলল, ‘ কারণ আমি যে আজ জানতে পেরেছি আমি মা হতে চলেছি। আর আজকের এই খুশি আমি তোমার সাথে শেয়ার করলাম। ‘

মাসাল ও খুশি প্রকাশ করল, মাসালের কাছে দশটা ফুল ছিল৷ দশটা ফুল ধরেই বৃষ্টি নিয়ে নেয় রিমনকে সারপ্রাইজ দিবে সাথে গুড নিউজ বলার সাথে ফুলগুলো দিবে ভেবে। দশটা ফুলের দাম একশো টাকা৷ বৃষ্টি ব্যাগ থেকে দুটো পাঁচশ টাকার নোট বের করে একটা মেয়ের ডান হাতে রেখে বলল, ‘ এটা তোমার মালিককে নিয়ে দিবে। ‘
বাকি পাঁচশ টাকার নোট মাসালের আরেক হাতে গুঁজে দিয়ে বলল, ‘ এটা তুমি তোমার কাছে রাখবে তাকে বলার বা দেখানোর প্রয়োজন নেই যখন যা খেতে ইচ্ছে করবে টুপ করে খেয়ে নিবে ঠিক আছে৷ ‘

মাসাল মাথা উপর নিচ নাড়িয়ে বলল, ‘ ঠিক আছে ‘

বৃষ্টি এবার বলল, ‘ এখন যে আমাকে যেতে হবে প্রিয় মাসাল আমার শাশুড়ী মা হয়তে আমার জন্য চিন্তা করছেন। ‘

মাসাল মুচকি হেঁসে বলল, ‘ তুমি সত্যি অনেক ভালো আপু৷ আল্লাহ সব সময় তোমার ভালো করবেন। আল্লাহ হাফেজ ‘

বৃষ্টি মাসালের কপালে আবারও চুমু একে দিয়ে সেখান থেকে উঠে চলে যায়। ফোন গাড়িতেই রেখে গিয়েছিল। সিটে বসে ফোনে হাত দিতে দেখল, 10 মিসড কল মার নাম্বার থেকে, সাথে সাথে কল বেক করে বলল, ‘ মা আর জাস্ট কয়েকমিনিট পর আমরা চলে আসছি। এই তো গাড়িতে উঠেছি, আচ্ছা মা আপনি আপনার খেয়াল রাখুন আমরা আসছি চিন্তা করবেন না। ‘

বলে কল কেটে দিলো, কিছুদূর আসার পর দেখল একটা আবাসিক হোটেলের সামনে রিমনের বাইক একনজর দেখে বৃষ্টি ড্রাইভার কে তড়িঘড়ি করে বলল, ‘ ড্রাইভার কাকা গাড়ি থামাও ‘

গাড়ি ব্রেক করল বৃষ্টি ড্রাইভার কে বলল, ‘ কাকা ওইটা তোমার ছোট সাহেবের বাইক না? ‘

ড্রাইভার হোটেলের গেইটের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ হো ম্যাডাম ওইতো ছোট সাহেব হোটেলে ঢুকতাছে ‘

গাড়ির উইন্ড দিয়ে তাকিয়ে দেখল হ্যাঁ ওটা রিমন কিন্তু এই রাতে এখানে কেনো এখন তো বাড়িতে থাকার কথা রাত বাজে আটটা, গাড়ি থেকে নেমে রিমনের পেছনে আসল। রিসিপশনে আসতে দেখল হোটেলের একটা রুম বুক করা৷ নামটা দেখে একটু রাগ লাগল।

রিসিপশনে একটা লোককে জিজ্ঞেস করল৷ ‘ এখন নেভি ব্লু কালারের শার্ট পরে একটা লোক এসেছে সে কোন দিকে গেছে? ‘

‘ পাঁচ মিনিট সময় দেন ম্যাম একটু চেক করে বলছি। ‘

দুই তলা রুমের বেলকনি থেকে রিমনের পেছনে বৃষ্টি কেও হোটেলে ঢুকতে দেখে ঠোঁট বাকা করে হাসি দিলো।

রিমন কে খুঁজতে বৃষ্টি এইরুম অব্ধি নিশ্চয়ই আসবে। তা ভেবেই দরজা আলকা খোলা রেখে দিয়েছে। দরজা একটু খোলা আছে সেটা রিমন খেয়াল করেনি। সে ভেবেছিল দরজা ও আঁটকেছে।
পাঁচ মিনিট পর লোকটা বলল, ‘ ম্যাম স্যার সম্ভবত দুই তলার ২০৪ নাম্বার রুমে গেছেন। ‘

বৃষ্টি আর কিছু না বলে হেঁটে লিফটের সামনে দাঁড়ালো তবে লিফটের নিচে নামার খবর নেই। আর তিনমিনিট পর দশ তালা থেকে লিফট নিচে আসলো একে একে সবাই বের হলো। যারা যারা উপরে যাবে এবার তারা উঠে পরল। লিফটে উঠে একে চাপলো।
লিফট থেকে বের হয়ে রুম নাম্বার ২০৪ খুঁজতে লাগল। একদম কর্নারে রুম ২০৪ রুমের সামনে এসে দেখল রুমের দরজা হালকা চাপানো আটকানো নয়। স্বাভাবিক ভেবেই দরজা ঠেলে দিয়ে সামনে তাকালো। যা দেখল বৃষ্টি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, নিজের স্বামীকে অন্য একটা মেয়ের সাথে অন্তরঙ্গতায় দেখে কোনো মেয়েই ঠিক থাকতে পারে না আর মেয়েটা হয় যদি সেই চেনা পরিচিত। মেয়েটা আর কেউ নয় স্বয়ং মুনিয়া।

চোখের কার্নিশ বেয়ে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পরছে। পলকহীনভাবে তাকিয়ে আছে। রুমটার মধ্যে অধিকাংশ জিনিস পত্র সাদা রঙের, বিছার উপর চাদর বালিশের কভার রুমের পর্দা সব কিছুই সাদা। আর এই সাদা চাদরের উপর দু’জন নারী পুরুষ নিজেদের ওষ্ঠকার্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না বৃষ্টি। থমথমে হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শরীরের সবটুকু শক্তি জেনো বিলীন হয়ে গেছে হাত পা নাড়াতে পারছে না। মনে হচ্ছে এখনই পরে যাবে৷ কোনো কিছু ভাবতেই পারছে না। শুধু চোখ জোড়া মেলে তাকিয়ে আছে। মুনিয়া সবই জানে বৃষ্টি এখানে এসেছে সেটা ও অনেক আগেই বুঝতে পেরেছে ও চেয়েছিল এমতাবস্থায় বৃষ্টি ওদের দু’জনকে দেখুক আর সেজন্যই দরজা খুলে রেখেছিল। এতক্ষণ না দেখার ভান করল এখন দরজার দিকে তাকিয়ে ইতস্ততভাবে বলল, ‘ বৃষ্টি? ‘

মুনিয়ার মুখে বৃষ্টি নাম শুনে থেমে গেলো রিমন পেছনে দরজার দিকে তাকালে দেখল থমথমে হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বৃষ্টি চোখ দিয়ে অনাবৃত অশ্রু জড়ছে। রিমনের সাথে চোখাচোখি হতেই নিজের অস্তিত্বে ফিরে এলো। পরে যাচ্ছিল বলে রুমের দরজা শক্ত করে চেপে ধরল। চোখ জোড়া খিচে বন্ধ করে নেয়৷ দুই হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে গালে কষছে কিন্তু কোনো ফায়দা হচ্ছে না অশ্রু আজ কোনো বাধা মানছে না জোরেই যাচ্ছে,
কোমড় পর্যন্ত বিছানার চাদর পেচিয়ে নিচে নেমে দাঁড়ালো। রুমের মধ্যে মুনিয়া ও রিমনের দিকে এক নজর তাকিয়ে সেখান থেকে ছুটে গেলো। পেছন থেকে রিমন ডেকেছিল তবে বৃষ্টি কোনো তোয়াক্কা করেনি। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিজের শার্ট প্যান্ট পরিধান করে হোটেল রুম থেকে বের হলো। মুনিয়া খাটের উপরে চাদর গায়ের সাথে পেচিয়ে বসে ডেভিল হাসি হাসছে এক প্রকার হাসি থামিয়ে বলল, ‘ প্লেন সাকসেসফুল! ‘
বলে আবারও হাসতে লাগল, ‘ এবার বৃষ্টি তোমাকে রিমনকে ছেড়ে যেতেই হবে। ‘

গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দিতে বলে, কান্না করছে দেখে উনি জিজ্ঞেস করলেন ‘ এভাবে কান্না করছো কেনো? ”
এমন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করায় বৃষ্টি বলে, ‘ প্লিজ কাকা আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিন। ‘
প্রতিত্তোরে আর কিছু না বলে গাড়ি স্টার্ট দেয়। বাড়ির সামনে এসে কলিংবেল চাপলে রহিমা দরজা খুলে দেয় তবে বৃষ্টি ওড়নার আঁচল দিয়ে চোখ মুখ ঢেকে রুমে চলে আসে। গাড়ির মধ্যে ফাইল ঔষধ রেখে আসে বলে ড্রাইভার রহিমার হাতে সেগুলো দিয়ে বলে, ‘ এইগুলো ম্যাডামের, গাড়িতে ভুলে গিয়েছে রুমে পৌঁছে দিয়ে আসো। ‘

রহিমা মাথা নাড়িয়ে সেগুলো নিয়ে রুমের সামনে আসে দরজা খোলাই ছিল, রুমে ঢুকে সোফার উপরে ঔষধ গুলো রেখে চলে যায়। বিছানার উপর বসে কাঁদছিল তখনই ভমি ভমি ভাব হয় তাই দৌঁড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
কিছুসময় বাধ বাইক এসে বাড়ির সামনে থামে আবারও কলিংবেল বাজে রহিমা আবারও দরজা খুলে দেয়। হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসছে রিমন। বিছানার উপর বসে কাঁদছে সে, যাবার সময় রহিমা দরজা হাল্কা চাপিয়ে গিয়েছিল, রিমন এসেই দরজা ধাক্কা দিয়ে রুমে ধুঁকল। দরজা খোলার শব্দে বৃষ্টি মাথা তুলে দরজার দিকে তাকালো। এক নজর তাকিয়ে ঘৃণায় চোখ নামিয়ে নিলো। রিমন দরজা ভেতর থেকে আটকে দিয়ে বৃষ্টির পায়ের সামনে বসে বলতে লাগল, ‘ ভুল বুঝো না বৃষ্টি আমাকে বিশ্বাস করো আমি ইচ্ছে করে করিনি দেড় মাস ধরে মুনিয়া আমাকে ‘

আর কিছু বলার আগে রিমনকে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দিয়ে চেচিয়ে বলল, ‘ ভুল বুঝবো না ভুল বুঝার বাকি আছে আমি নিজে চোখে দেখেছি তোকে ওই মেয়ের সাথে নষ্টামি করতে এখন বলছিস ভুল না বুঝতে ছিহহ আমার নিজের উপর ঘৃণা হচ্ছে ইচ্ছে করছে পানিতে ডুবে মরে যাই। ‘

রিমনব ‘ বৃষ্টি ‘ বলে চেচিয়ে বলল, ‘ এমন করে প্লিজ বলো না। আমি তোমাকে সবটা এক্সপ্লেইন করছি বৃষ্টি শুনো প্লিজ। ‘

নিজের থেকে ধাক্কা দিয়ে কিছু টা দূরে সরিয়ে দিয়ে বলল, ‘ কোনো কিছু শুনতে জানতে চাই না। তোকে নিজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেও ঘৃণা হচ্ছে ‘

বলে পেছনে মাথা ঘুরে পরে যেতে নিলে রিমন বৃষ্টি কে জড়িয়ে ধরে নেয়। টেবিলের উপর এত ফাইল আর ঔষধ দেখে বলে উঠে, ‘ তুমি কি অসুস্থ এত ঔষধ কেনো? ‘

টেবিলের উপর তাকিয়ে ঔষধের প্যাকেট ধরে মেঝেতে ছুড়ে মারল। ট্যাবলেটের হাতার সাথে দুইটা কাঁচের ঔষধের বোতল ছিল সেগুলো ভেঙে গুঁড়িয়ে গেলো। কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে বসে পরল চিৎকার দিয়ে বলল, ‘ চাই না আমার কোনো ঔষধ লাগবে না আমার কোনো ঔষধ আমি না আমি এই বাচ্চা কোনো নষ্টার বাচ্চা আমি জন্ম দেবো না। আমি Abortion করাবো। হ্যাঁ আমি Abortion-ই করাবো চাই না আমার এই বাচ্চা ‘

রিমন হতভম্ব হয়ে বৃষ্টির সামনে এসে গালে হাত ছুঁয়ে বলল, ‘ তুমি বৃষ্টি প্রেগন্যান্ট? ‘

বৃষ্টি রিমনের হাত ছাড়িয়ে দিয়ে বলে, ‘ টাচ্ করবি না তুই আমাকে নষ্টা, হ্যাঁ আমি প্রেগন্যান্ট কপাল খারাপ আমার যে তোর মতো নষ্টার সন্তান আমার গর্ভে, আমি এই বাচ্চা রাখবো না। আমি থাকবে না তোর সাথে আর কোনো মতেই না তোর কোনো অংশ ও আমার সাথে রাখবো না। ‘

বলে পেছনে ঘুরে চলে যেতে নিলে পেছন থেকে ছুটে এসে রিমন বৃষ্টি কে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে নিজের আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘ আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দাও বৃষ্টি আমার ভুলের শাস্তি আমাদের সন্তান কে দিও না প্লিজ। ‘

‘ আমি তোর কোনো কথা শুনবো নাহহহহ, আমি এি বাচ্চা রাখবো না তুই ছাড় আমাকে ‘

‘ আমার কথা একটি বার শুনো প্লিজ তারপর যা ইচ্ছা করো তবে বাচ্চার কোনো ক্ষতি করো না বাচ্চা টা তো আর কোনো দোষ করেনি। যা করার আমি করেছি। ‘

‘ তুই ছাড় আমাকে ‘

রিমন বৃষ্টি কে জড়িয়ে ধরে রেখেছে ঝাপ্টাঝাপ্টি বাধ দিয়ে হাত দুটো ছেড়ে দিয়ে কেঁদে চলেছে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here