পাগল_প্রেমিকা,২৮,২৯

#পাগল_প্রেমিকা,২৮,২৯
#sharmin_akter_borsha (লেখিকা)
#পর্ব_২৮

হাত ছাড়িয়ে বাড়ির দিকে দৌঁড় দিলে পেছন থেকে অভ্র আর নিলয় ও রিমনের সাথে….
দরজার দিকটায় আগুন খানিকটা কম কম রিমন, অভ্র, নিলয় এক সাথে দরজায় লাথি দিলে দরজা ভেঙে ভেতরের দিকে উল্টে পরে। তিনজনে এক সাথে দরজার উপর দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলো। রুমের মধ্যে ঠিক মাঝখানে একটা মেয়ে উপুড় হয়ে পরে আছে। উপর থেকে একটা অর্ধেক কাঠ আঁধা জলন্ত নিচে পরতে যাবে তার আগেই রিমনের চোখে পরে গেলো দৌঁড়ে নিচ থেকে হাত দিয়ে টান দিয়ে সরিয়ে নিলো নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে একটু দূরে বসে পর। চুল দিয়ে মুখটা ঢেকে আছে। হাত দিয়ে চুলগুলো সরিয়ে বৃষ্টি কে দেখে দুইচোখ দিয়ে পানি ছেড়ে দিলো কপালে আলতো পরশ একে দেয় নিজের বুকের সাথে আবারও আগের ন্যায় শক্ত করে জরিয়ে ধরে। তখন অভ্র ও নিলয় রিমনের উদ্দেশ্যে বলে…

‘ এখন চল আমরা বের হই। পরে তো একজনও বের হতে পারবো না। ‘ নিলয় বলল।

‘ বাহিরে একবার চল তারপর যত ইচ্ছে জরিয়ে ধরে রাখিস। অভ্র বলল!

প্রতিউত্তরে রিমন ওদের দুজনের দিকে চোখ বুলালো কিছু না বলেই বৃষ্টি কে পাঁজা কোলে তুলে নেয়।
চারজনে এক সাথে তো বের হওয়া যাবে না আর দু’জন করেও বের হওয়া যাবে না। তাই সবার আগে রিমন বের হল বৃষ্টি কে নিয়ে পেছনে অভ্র আর নিলয়ও বের হয়ে আসল। এই বাড়ির সামনে থেকে চলো গেলো। ক্লাবের সামনে নিয়ে আসলো বৃষ্টির অবস্থা ভালো না। এখনও হুশ ফিরেনি এদিকে রিমি বৃষ্টির এমন অবস্থা দেখে ভয়ে কান্না জুড়ে দেয়। সোহান বলল…

– ওকে এখনই হাসপাতাল নিতে হবে।

রিমন আবারও বৃষ্টি কে পাঁজা কোলে তুলে নিলো। গাড়ির মধ্যে নিয়ে শুয়ে দেয়। গাড়ি চালাচ্ছে সোহান নিজেই রিমন বৃষ্টিকে কোলে নিয়ে বসে আছে।
হাসপাতালের সামনে এসে গাড়ি ব্রেক হল। বৃষ্টি কে আবারও পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে হাসপাতালের ভেতরে ছুটতে লাগল মুখ দিয়ে চেচিয়ে যাচ্ছে..

– কেউ আছে নার্স ডাক্তার!

রিমনের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে দৌঁড়ে আসেন দু’জন নার্স, একজন নার্স বলে উঠলেন!

– হসপিটালে এই মুহুর্তে ইমার্জেন্সি তে একজনই ডাক্তার আছে আমি উনাকে ডেকে নিয়ে আসছি।

দ্বিতীয় নার্স প্রথম নার্সকে থামিয়ে দিয়ে বললেন।
– ডাক্তার আহানের কাছে যেতে হবে না। তুমি গিয়ে ডাক্তার নীলকে ইনফর্ম করো। উনি ওর চেম্বারেই আছে আমি একটু আগেই উনাকে উনার চেম্বারে বসে থাকতে দেখেছি যাও তারাতাড়ি গিয়ে বলো পেসেন্ট এর অবস্থা খুবই ক্রিটিকাল।

– এখনই যাচ্ছি।

বৃষ্টিকে অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে দিলো।
____
নার্স মেয়েটা ছুটে চেম্বারের সামনে এসে বিনা অনুমতি নিয়ে ঠাস করে দরজা খুলে দিলো। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে পরার জন্য রেডি হচ্ছিলেন হুট করে দরজা খুলে ভেতরে চলে আসায় বিস্মিত হয়ে গেল। নার্স এর দিকে ভয়ানক দৃষ্টি নিয়ে তাকালেন। কপালের চামড়া ভাজ পড়েছে নার্স এর এমন কর্মকান্ডে উনি বেশ বিরক্ত হয়েছেন সেটা বুঝাই যাচ্ছে উনার মুখ দেখে। নার্স ডাক্তার নীল এর দিকে তাকিয়ে মুখ কাজুবাজু করে ভয়ে মিশ্রিত কন্ঠে বলল..

– স্যার একজন ইমার্জেন্সি পেসেন্ট আসছে উনার অবস্থা খুবই খারাপ আপনি ছাড়া হাসপাতালে এই মুহূর্তে অন্য কোনো ডাক্তার নেই।

– হোয়াট দ্যা হেল! তোমার সাহস হয় কি করে নক না করে উইথ আউট পারমিশন আমার চেম্বার প্রবেশ করার? টেবিলের উপর হাত চাপটে জোর গলায় চেচিয়ে বললেন ডাক্তার নীল।

দাঁড়িয়ে থাকা নার্স হাল্কা কেঁপে উঠলেন ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে থেকেই বললেন..

– আমাকে মার্জিত করবেন স্যার! পেসেন্ট এর অবস্থা খুব ক্রিটিকাল তাই নক বা পারমিশন নেওয়ার কথা মাথা থেকেই উড়ে গিয়েছিল।

– আমার ডিউটি টাইম শেষ আমি এখন বেরই হচ্ছিলাম ইমার্জেন্সি কেবিন এ গিয়ে ওখানের কাউকে বলো। কাঠ কন্ঠে বলল!

নিজের উপর এক রাশ বিরক্ত হচ্ছে ইচ্ছে করছে নিজের চুল নিজেই টেনে ছিড়তে হাসপাতালে সে অনেক বছর ধরেই আছে মাঝেমধ্যে কোনো ভুলক্রুমে ভুল হয়ে গেলে বাকি সব ডাক্তার রা ভুল ধরিয়ে নেয় বা ক্ষমা করে দেয়। কিন্তু ডাক্তার নীল সবার থেকে আলাদা একদম একজন বদমেজাজি ডাক্তার যার মধ্যে মনে হয় কোনো ফিলিংস নেই একদম একটা হৃদয়হীন ব্যক্তি ভুল হলে ক্ষমা করা তো দূরের কথা। হাজার টা কথা না শুনিয়ে তিনি ছাড়বেন না। বাকি দের সাথে সাধারণ ফ্রিলি ভাবে কথা বলা যায় কিন্তু ডাক্তার নীল এর সাথে নয়। উনি সব সময় রেগেই থাকেন চট চট করে কথা বলেন কথায় কোনো রসকষ নেই। রাগ সবসময় নাকের ডগায় থাকে। উনার সাথে কথা বলতে হলে সবাই দুইবার ভাবে ও হিসেব করে কথা বলে না জানি কখন কিভাবে রিয়েক্ট করে। মিলাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবারও কন্ঠস্বর কঠোর করে প্রশ্ন করল..

– এখনও দাড়িয়ে আছো? ডাক্তার নীল আর কিছু বলার আগেই দরজার সামনে পূর্ণা এসে দাঁড়াল আর মিলাকে উদ্দেশ্য করে বলল।

– তোকে কখন বলেছি স্যারকে নিয়ে যেতে ওইদিকে বৃষ্টির অবস্থা খুব ক্রিটিকাল। পূর্ণা বলল।

ওদিকে কালো ব্লেজার হাতে নিয়ে গায়ে জড়াতে যাবে তখন পূর্ণার বলা কথা শুনে থেমে যায় ডাক্তার নীল। ব্লেজার টা হাতে রেখেই পূর্ণার দিকে তাকালো।

– স্যার যাবে না বলেছেন চল আমরা ইমার্জেন্সি তে গিয়ে দেখি কোন ডাক্তার আছে। মিলা বলল…

দু’জনে হতাশ হয়ে চলে যাবে তখন পেছন থেকে ডাক্তার নীল পূর্ণাকে ডাকে বলল।

– পূর্ণা কি বললে তুমি? ডাক্তার নীল।

– জি স্যার পেসেন্ট এর অবস্থা ক্রিটিকাল! পূর্ণা বলল।

ডাক্তার নীল এবার একটু বেশিই বিরক্তবোধ করলেন আর বিরক্তি তার কথার মধ্যে প্রকাশিত হচ্ছে বললেন.
– নাম কি মেয়েটার? মিলা আসছে পর থেকে ক্রিটিকাল বলে যাচ্ছে এখন পূর্ণা কি একটা পেসেন্ট এর নাম বলল সেটা আবারও শোনার জন্য ডাক্তার নীল প্রশ্ন করল কিন্তু পূর্ণা ও একই কথা বলল এত বোকা হয় কি করে মানুষ?

পূর্ণা ও মিলা দু’জনেই মাথা নিচু করে ফেলল। পূর্ণা ধরেই নিয়েছে এই মিলা এসেছে পরে নির্ঘাত কিছু একটা গোলমাল পাকিয়েছে তাই নীল স্যার এত ক্ষেপে আছে এই মিলাকে তো পরে দেখে নেবে মনে মনে ঠিক করল। মুখ খুলে ডাক্তার এর উদ্দেশ্যে বলল..

– বৃষ্টি..!

বৃষ্টি নাম শুনে বুক চিড়ে এক দীর্ঘ শ্বাস বের হয়ে আসল ডাক্তার নীল এর বৃষ্টি নামটা শোনার পরই উনার স্কুল লাইফের বান্ধবীর কথা মনে পরে গেলো৷ শুধু ভালোবাসি বলেছিল বলে বন্ধুত্বে ফাটল ধরে আর দূরত্ব সৃষ্টি হয়। ডাক্তার নীল এর জীবনে এক জনই মেয়ে ছিল আছে আর সেই থাকবে আর সে মেয়েটা হচ্ছে উনার প্রথম ও শেষ ভালোবাসা উনার স্কুল লাইফের বান্ধবী।
দু’জনের নাম সেম হওয়ায় নীল পূর্ণার উদ্দেশ্যে বলল।

– আমিই দেখবো কোথাও যেতে হবে না কত নাম্বার কেবিনে আছে আমাকে নিয়ে চলো।

– জি স্যার চলুন।

ডাক্তার নীল আগে আগে বেরিয়ে গেলেন পেছনে পেছনে মিলা ও পূর্ণা হাটছে। ডাক্তার নীল এর যাওয়ার দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে মিলা বলল…

– যাবেই যখন তাহলে এতক্ষণ এত কথা শোনানোর কি আছে?

– চুপ থাক উনি শুনে ফেলবে, উনার কান হাতির কান কেও হার মানায় দূর থেকেও সব শুনে ফেলে আর উনাকে বোঝা আমাদের কর্ম নয়। কখন যে কি বলে আর কখন যে কি করে বসে তা নিয়ে আমাদের মাথা না ঘামালেও চলবে এখন চল।

কেবিনের সামনে আসতেই দেখল সবাই এমন ভাবে কান্না করছে জেনো পেসেন্ট মারা গেছে আর এখন তার অন্তিম সংস্কার করবে। আঁড়চোখে সবার দিকে এক নজর তাকিয়ে কেবিনের মধ্যে প্রবেশ করল। পেসেন্ট এর মুখটা বা দিকে ঘুরানো ছিল আর কিছু চুল দিয়েও ঢাকা ছিল তাই ডাক্তার নীল মেয়েটার মুখের দিকে তেমন ভাবে খেয়াল করেনি। ডান হাতের অনেকটা জায়গা আগুনে লেগে পুরে গেছে ভেতরের লাল মাংস উচ্ছে পরছে ইশশ দেখেই শরীর কেঁপে উঠছে। মিলা কেবিনে প্রবেশ করে ঠাই মেরে দাঁড়িয়ে রয়েছে পূর্ণা বৃষ্টি কে সোজা করে শুইয়ে দেয় মাথাও সোজা করে দিয়ে মুখের সামনে থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিলো। এখন বৃষ্টির মুখ পুরো দেখা যাচ্ছে কাত হয়ে যায় মুখ থেকে অক্সিজেন মাস্ক টা ও নড়ে গেছে।
সোহান বলল…

– ওকে আপনারা আইসিইউ তে নিচ্ছেন না কেনো।

– এখানে ডাক্তার কে আপনি না আমি পেসেন্ট এর জন্য কি করতে হবে সেটা আমি বুঝবো। আর যদি আপনারা মাতাবার করেন তাহলে আপনারাই করেন আমি চললাম।

ডাক্তার নীল এর বলা কথাশুনে উপস্থিত সবাই একঢোক পানি বেশি গিলল। মনে মনেই, মিলা ও পূর্ণা এক অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল সবাইকে অবাক করে দিয়ে ডাক্তার নীল আবারও বললেন।

– আমার কাজ আমাকে করতে দিন পেসেন্ট কে আইসিইউতে নিতে হবে না তার দরকার নেই।

বলে পেছনে মাথা ঘুরিয়ে বৃষ্টির দিকে তাকালো। এখন নীল এর মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সোহানের সামনে থেকে সরে বৃষ্টির বেডের কাছে ছুটে গেলো। মুখের দিকে তাকালো কপালে অনেকটা জায়গা ক্ষত রক্ত শুকিয়ে গেছে ক্ষত জায়গা কালো হয়ে গেছে। ডাক্তার নীল নিজের উপর কন্ট্রোল আপা হারিয়ে ফেলল। মিলা ও পূর্ণাকে ধমক দিয়ে বলল..

– তোমরা দু’জন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামশা না দেখে তারাতাড়ি গিয়ে ও.টি রেডি করো আর বৃষ্টি কে ও.টি তে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করো জলদি।

খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে ডাক্তার নীল কে সবাই উনার দিকে ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে তাকিয়ে আছে কিছুক্ষণ আগে বলল আইসিইউতে নিতে হবে না আর এখন উনিই নিয়ে যাচ্ছে আর সবাই কে তারাহুরো করতে বলছে৷ সবার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব।

চলবে?

#পাগল_প্রেমিকা
#sharmin_akter_borsha (লেখিকা)
#পর্ব_২৯
___________
কেবিনে শিফট করা হলো। কিন্তু এখনও জ্ঞান ফিরেনি তবে ডাক্তার বলেছেন কাল সকালের মধ্যে জ্ঞান ফিরে আসবেন। ও.টি থেকে বের হওয়ার পর মিলা ডাক্তার নীল এর উদ্দেশ্যে বলেছিল…

– স্যার আপনি এখন নিশ্চিন্তে বাড়ি যেতে পারেন।

তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো, মিলা ভয় পেয়ে শুকনো ঢোক গিলল। না জানি এবার আবার কি করল? ভালো কথাই তো বলেছে তাতে এত রেগে যাওয়ার কি আছে বুঝতে পারছে না তখন তো বাড়ি যাবে বলে বেরই হচ্ছিল। কথা না বাড়িয়ে চলে যাচ্ছে উদ্দেশ্য বৃষ্টির কেবিন।
পেছন থেকে চেনা কারো ভয়েস ভেসে আসল সে বলল..

– তোর সমস্যা হচ্ছে তুই বেশি কথা বলিস। আর জানিসই তো নীল স্যার বেশি কথা পছন্দ করেন না উনি শান্তিপ্রিয় মানুষ সবসময় চুপচাপ থাকতেই ভালোবাসে আর এটাও তো জানিস সে প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে কথাও বলে না।

– হো হো জানি জানি আর কইতে হইবো না। তুই নীল স্যারের গুনগান গাওয়া শুরু করলে আর থামতি না এখন সর সামনে থেকে না জানি আবার কোথা থেকে কখন চলে আসবে আবারও কটু কথা শুনিয়ে চলে যাবে। উনার কথায় সামনে থাকা মানুষ যে হার্ট হচ্ছে বা হতে পারে সেটা ভাবে না শুধু বলেই যায় বলেই যায় সার্থ্যপর একটা।

– বাই দ্য ওয়ে! তুই যখন নীল স্যারকে ডাকতে গিয়েছিলি তখন উনি এত রেগে ছিল কেনো কি করেছিলি?

– ওই তাড়াহুড়ো করে পারমিশন না নিয়েই উনার চেম্বারে ঢুকে পরে ছিলাম। আর উনি উনার বক্তব্য শুরু করে দিয়েছিলেন ইচ্ছে করছিল তখন।

– কি ইচ্ছে করছিল হা যা করেছে ঠিকই করেছে তোর জন্য পরে আমাকেও ধমক শুনতে হয়েছে।

– হো ভালা হইছে। মিলা মুখ বাকিয়ে বলল।
পূর্ণা আর কিছু না বলে চলে গেলো।

হাসপাতালের বেডের উপর শুয়ে আছে মানে ঘুমিয়ে আছে। পাশেই বসে আছে রিমন রিমি সোহান আর কেবিনের বাহিরে বাকিরা বসে আছে৷ ডাক্তার নীল আসার পর উনাকে সবাই সাইড দেয়। উনি বৃষ্টির চেক-আপ করলেন এখন সব কিছুই ঠিক আছে সবার উদ্দেশ্যে বলল। সবাই এক শান্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
ডাক্তার নীল সবার পরিচয় জানতে চাইল কে কি হয় পরিবারের লোক কে কে আসছে সাথে আগুনে জ্বালিয়ে পুরতে গিয়েছিল কেন? সবটা জানতে চায়। সময় নিয়ে সবাই নিজেদের পরিচয় দেয় এবং ঘন্টাখানেক আগের ঘটনা সবটা উপলব্ধি করে ডাক্তার নীল এর সামনে সে এক ভ্রু কুঞ্চিত করে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে রইলেন। এমন সহজ সরল মেয়ের যে শত্রু আছে বা থাকতে পারে সেটা বৃষ্টি কে দেখে মনেই হচ্ছে না। সারারাত জেগে ছিল ডাক্তার নীল আর রিমন বাকিরা যে যেখানে হেলান দিয়ে বসেছে সেখানেই ঘুমিয়ে গেছে।

ভোর সকালে বৃষ্টির আরও একবার চেক-আপ করে ডাক্তার নীল চলে যায়। সকাল তখন ৮টা বেজে ২০মিনিট মিটমিট করে চোখ মেলে তাকালো নিজের পাশে কাউকে দেখতে পেলো না। কেবিনে বৃষ্টি একা এদিক সেদিক চোখ বুলিয়ে দেখছে কোথায় আছে আছে আর তখন কাল রাতের ঘটনা চোখের সামনে ভেসে উঠল। হাতের মধ্যে ব্যাথা ও প্রচুর জ্বালা অনুভব করছে। হাত নাড়াতে নিলে কেবিনে মিলা পূর্ণা প্রবেশ করে আর বৃষ্টি কে হাতে ধরতে দেখে ফেলে। বৃষ্টি কে থামিয়ে দিয়ে বলে..

– হাতে ধরছো কেনো?
– জ্বলছে! “ধীরে ও শীতল কন্ঠে বলল”
– তুমি টাচ করো না আমি ডাক্তারকে ডেকে নিয়ে আসছি।
– আচ্ছা!

কেবিনের বাহিরে একেকজন আধশোয়া ও বসা অবস্থায় ছিল পূর্ণা বাহিরে গিয়ে বলল..

– পেসেন্ট এর জ্ঞান ফিরেছে আপনারা বাড়ির লোক দেখা করতে পারেন। তবে দূরে থেকে আমি ডাক্তার কে ইনফর্ম করে আসছি।

পূর্ণা চলে গেলে সবাই কেবিনে ঢুকে যায়। বৃষ্টি কে অনেকেই অনেক প্রশ্ন করছে রাতে কি হয়েছিল, বাহিরে একা কেনো বের হয়েছিল, এইসবি জিজ্ঞেস করছে তখন সোহান সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলল…

– আহহ কি শুরু করেছো তোমরা মেয়েটার সবে মাত্র জ্ঞান ফিরেছে আর সবাই এক সাথে জেরা করা শুরু করে দিয়েছো চুপ করো সবাই। সবাইকে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়। বৃষ্টির মাথার হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে। খুব কষ্ট হচ্ছে না তোর?

বৃষ্টি অপলক দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে চোখের পলক ফেলল কয়েকবার। তাতেই সবাই বুঝল ওর কষ্ট হচ্ছে। বৃষ্টি মুখ খুলে বলল!

– হাতে জ্বালা করছে অনেক কিন্তু কেনো? আর আমার হাতে ক্যানোলা কেন?

ইজি চেয়ারে বসে চোখে দুই আঙুল চেপে ধরে রেখেছিল। বেশ চিন্তিত লাগছে কোনো বিষয় নিয়ে অনেক চিন্তা করছে ডাক্তার নীল তখনই দরজায় ডাক পরল। ভ্রু উঁচু করে দরজার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়লেন..

– কে?
– স্যার আমি পূর্ণা! ভেতরে আসবো?
– হ্যাঁ আসো।

পূর্ণা ভেতরে আসলে আবারও প্রশ্ন ছুড়ে নীল..
– কিছু বলবে?

– জি.. জি স্যার! (হাল্কা তোতলিয়ে বলল)

– কি বলতে এসেছো না বলে দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে তোতলাচ্ছো কেন?

– সরি স্যার! একচুয়ালি কেবিন নাম্বার ২০৪ এর পেসেন্ট বৃষ্টি তার জ্ঞান ফিরেছে আর উনি উঠে বলছেন উনার হাত জ্বলছে।

পূর্ণার কথা শুনে ডাক্তার নীল ক্ষেপে জান আর বলেন।
– একজন পেসেন্ট এর হাত জ্বলছে আর তুমি এখানে এসে তোতলাচ্ছো কাজের মধ্যে এত গাফলতি আমি সহ্য করবো না। যাও গিয়ে ইনজেকশন রেডি করো আমি এখনই আসছি।

– আমি এখনই যাচ্ছি। (ডাক্তার নীল এর আড়ালে চোখের পানি মুছে নিলেন)

– হ্যাঁ হ্যাঁ তারাতাড়ি যাও! (অন্য দিকে তাকিয়ে বলল)

চেম্বার থেকে বের হচ্ছে চোখের পানি মুছতে মুছতে এমন অবস্থা দূর থেকে দেখে ফেলল আরহাম। পূর্ণা আনমনে হেঁটে যাচ্ছিল আর বিড়বিড় করে বলছিল তখন সে খেয়াল করেনি আরহাম যে তার পিছু পিছু হাঁটছে। হুট করে আরহাম বলে উঠে…

– তুমি যে বলেছো ডাক্তার নীল এর সম্পর্কে আমি সব শুনেছি!

হঠাৎ পেছন থেকে এমন কথা শুনে বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠে পূর্ণার মনে হচ্ছে বুকের ভেতর থেকে আত্মা টা এখনই বেরিয়ে যাবে। কপাল বেয়ে ফোঁটা ফোঁটা ঘাম পরছে। এক হাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নিয়ে পেছনে তাকালো। হাল্কা হাসার চেষ্টা করে বলল…

– আরে আরহাম হ্যাঁ আপনি?
– ও পূর্ণা কতবার বলেছি তুমি আমাকে স্যার বলবে না। তাছাড়া আমি তোমাদের ডাক্তার বাবুর ফ্রেন্ড এই হাসপাতালের কিছু নই তাই আমাকে স্যার বলা বন্ধ করো। বাদ দাও এইসব কোথা কাঁদছিলে কেনো? চোখের পানি মুছলে দেখলাম।

পূর্ণা: ————-

– আমি সিইওর নিশ্চয়ই নীল কিছু বলেছে তা যাইহোক কি বলেছে বলো। না থাক তোমার বলার ইচ্ছে না থাকলে বলার প্রয়োজন নেই। আর ওর কথায় কিছু মনে করো না। নীল বাহিরে সবার সামনে নিজেকে স্ট্রোং ও কঠোর দেখায় কিন্তু মন থেকে ততটাই দূর্বল ও একা ও এমন নয় যেমন সবাইকে দেখায়। ওর ভেতরেও একটা ছোট হার্ট আছে সেথায় শুধু একটা মেয়ের নামে লিখে রেখেছে। আর তার থেকে নীলকে দূরে পরিস্থিতি ঠেলে দেয়। সে থেকেই নীল এমন নিজেকে সবার থেকে গুটিয়ে নেয়। প্রয়োজন ছাড়া কারও সাথে তেমন কোনো কথা বলে না। এমনকি নিজের বাবা-মা কিংবা ভাই-বোনের সাথেও নয়। কিছু মানুষ বাইরের মানুষের সামনে ইন্ট্রোভার্ট থাকে আর পরিবারের সামনে এক্সট্রোভার্ট কিন্তু নীল সবার সামনে নিজেকে ইন্ট্রোভার্ট রাখতেই পছন্দ করে ঘরে বাহিরে সব জায়গায়। ও ওর মনের কথাও কাউকে বলে না মনের মধ্যেই চেপে রাখে আমি বেস্ট ফ্রেন্ড অথচ আমাকেও বলে না এতবছর ধরে আমরা ফ্রেন্ড সব জানলেও ওই মেয়েটার সম্পর্কে কিছুই জানি না। তবে এটাই জানি আজও সে মেয়েকে ভালোবাসে তাই তোমাকে বলছি ওর ম্যাজাজ সবার সামনেই খিটখিটে রাগ ধমন করতে জানে না তোমাদের সাথে বাজে ব্যবহার করলে মানিয়ে নিও।

– থ্যাংকস আপনাকে বলার জন্য আমরা এইসব কিছুই জানতাম না উল্টো স্যারকে কত ভুল বুঝেছি এখন আমি আসি। ইনজেকশন রেডি করতে বলছে আর স্যার যদি দেখেন এখানে দাঁড়িয়ে গল্প করছি আবারও কথা শুনাবে।

– আচ্ছা যাও নিজের খেয়াল রেখো।

– আপনিও….
___

কেবিনে ঢুকে পূর্ণার থেকে ইনজেকশন হাতে নিলো। বেডের পাশে স্যালাইন চলছিল। স্যালাইনের মধ্যে ইনজেকশন পুশ করে দিলো। রিমনের কল আসলো। কল রিসিভ করে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো। ডান পাশে ঘুরে সবার সাথে কথা বলছিল। মাথা ঘুরিয়ে বা পাশে তাকালে দেখল ডাক্তার বাবুকে সে স্যালাইনে ইনজেকশন পুশ করছে ধীরে ধীরে ডাক্তার নীল এর দিকে ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর বৃষ্টি উচ্চস্বরে হয়ে বলে উঠল…

– নীললল…!
নিজের নামের প্রতিধ্বনি শুনে ঠোঁট বাকা করে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। যা কারো চোখে পরলো না। ইনজেকশন পুশ করা হলে সামনে ছোট টেবিলের উপর হাত থেকে রেখে বৃষ্টির দিকে তাকালো। তখন বৃষ্টি জাস্ট অনুমান করেছিল কিন্তু এখন পুরো চেহারা দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পরে। চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল। বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করছে ডাক্তার নীল।

ডাক্তার নীল এর মুখে হাসি দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো মিলা আর পূর্ণা হা করে তাকিয়ে আছে ডাক্তার নীল এর মুখ পানে। বৃষ্টি বেড থেকে উঠে বসে। বেড থেকে পা জোড়া নামিয়ে দিয়ে উঠতে নিলে পরে যায়। আর তখন ডাক্তার নীল এসে তার বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয়। পরতে দেয় না বৃষ্টি কে তখনই কেবিনে প্রবেশ করে রিমন। বৃষ্টি কে এভাবে ধরে থাকতে দেখে রিমন রগচটা হয়ে পরে দরজা ধরে রেখেই প্রশ্ন ছুড়ে…

– কি হচ্ছে টা কি এখানে?

বাহিরে দরজার দিকে না তাকিয়ে বৃষ্টি কে বিছানার উপর বসিয়ে দিলো ডাঃ নীল, বৃষ্টির পায়ের কাছে এক হাঁটু গেঁড়ে বসে অসহায় দৃষ্টি মেলে প্রশ্ন ছুঁড়ে…

– চিনতে পেরেছিস?

– চিনবো না কেন? তুই হঠাৎ করে উধাও হয়ে গিয়েছিলিস জানিস পুরো শহরে কতবার খুঁজেছিলাম তোকে কোথাও পাইনি। বলেই পেট কাঁদুনি মেয়েদের মতো কেঁদে দেয়। রিমন কেবিনের দরজা ঠাস করে লাগিয়ে দেয় আর সামনে এসে বলে…

– আপনি ওকে এভাবে ধরে ছিলেন কেনো?

বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ডাক্তারের ইউনিফর্মে দুই হাত গুঁজে দিয়ে তেজি কন্ঠে বলল..

– আপনার স্ত্রীর সাথে রোমান্স করছিলাম না পরে যাচ্ছিল তাই বাস শুধু ধরে ছিলাম। কথাগুলো বলে তেজ দেখিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।

সবাই রিমনের দিকে তাকালো কারণ কোনো কিছু না জেনে বলতে নেই। সবার তাকিয়ে থাকা দেখে মাথা ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালো রিমন।
———-

বৃষ্টি নীলকে চলে যেতে দেখে বলল…

– নীল দাঁড়া!

ভ্রু কুঞ্চিত করে বৃষ্টির মুখপানে তাকালো বিস্মিত কন্ঠে প্রশ্ন ছুড়ল…

– তুমি ডাক্তার নীল চৌধুরী কে চিনো? রিমন বলল।

– হ্যাঁ চিনি তো?

– না কিছু না!

আর কেউ টু শব্দ টি করেনি বৃষ্টির শরীর বেশি খারাপ লাগছিল। আর বেশি নাড়াচাড়া করার জন্য হাতের ক্যনলা দিয়ে রক্ত উঠে যা দেখে মিলা এসে বৃষ্টি কে বেডে সোজা হয়ে শুতে বলে। পূর্ণা বাকিদের কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতে বলল।
বিকালের দিকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করা হয়। বৃষ্টি যাওয়ার আগে ডাক্তার নীল এর সাথে দেখা করতে চায়। কিন্তু পূর্ণা বৃষ্টি কে উদ্দেশ্য করে জানায়…

‘ স্যার নেই উনি বাড়ি চলে গেছে ‘

বৃষ্টি হতাশ হলো আহত কন্ঠে বলল!

‘ বাড়ির এড্রেস বা ভিজিটিং কার্ড পাওয়া যাবে? ‘

রিমন চোখ বন্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে।
পূর্ণা ভাবার ভঙ্গিতে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে পূর্ণার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল।

‘ অন্তত ভিজিটিং কার্ডস তো পেতে পারি ‘

‘ সরি! একচুয়ালি স্যার চান…’

আর কিছু বলার আগে মিলা কোথা থেকে এসে উদয় হলো বর বলল।

‘ ডাক্তার নীল স্যারের ভিজিটিং কার্ডস আমি এখনই দিচ্ছি ‘

রিসিপশনের ডেস্কের উপর থেকে একটা কার্ড এনে বৃষ্টির হাতে দিয়ে বলল।

‘ এই যে ভিজিটিং কার্ড হিহি ‘ শেষে একটু অদ্ভুত শব্দ করে হাসলো।
বৃষ্টিও হেঁসে বলল, ‘ শুকরিয়া ‘

হাসপাতাল থেকে বিদায় নিলো। এদিকে পূর্ণা মিলার হাতে চিমটি কেটে বলল..

‘ উড়ে এসে জুড়ে বসেছিস তোকে কে বলছে কার্ড দিতে আমি দিচ্ছিলাম না মানে কি তুই এই টুকু বুঝিসনি? ‘

চিমটি দেওয়া জায়গা গষতে গষতে মিলা বলল।

‘ হ্যাঁ আনি এইটা বুজলাম না তুই কেনো দিচ্ছিলি না কার্ডের তো অভাব নেই। আর কার্ড তো দেওয়ার জন্যই তাই না। আমি এত ভালো ভালো কাজ করি তার পরেও তোদের কারো চোখে লাগে না কথা শুনাতে এক পাও পিছু হস না। ‘

‘ তোর ভালো ভালো কাজ ছোটাবে নীল স্যার হুহ আজকেও কথা শুনবি একটু বেশিই শুনবি। স্যার নিজেই পইপই করে বলেছেন উনার সম্পর্কে কোনো কিছু জেনো ম্যাডামকে বলা না হয়। আর কোনো কিছু জানতে চাইলেও জেনো না বলি এড়িয়ে যেতে বলেছেন। আর উনি হাসপাতালেই উপস্থিত আছে শুধু শুধু আমাকে দিয়ে মিথ্যা কথা বলিয়েছে উনি বাড়ি চলে গেছে৷ উফফ উনাকে বুঝা সত্যি আমাদের কর্ম না ‘

শেষটা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল। পেছনে দাঁড়িয়ে সবটা শুনছিলেন। রাগী কন্ঠে বলল…

– তোমরা দুজনে আমার চেম্বারে আসো এখুনি।

কথাটা বলে চলে গেলো আহ কে শুনপ পূর্ণা, মিলার বুকের ধুকপুকানি। ভেবেই আত্মা শুকিয়ে যাচ্ছে সব কিছু আবার শুনে ফেলেনি তো?
দরজায় কড়া নাড়তে ভেতর থেকে বলল।

– খোলাই আছে ভেতরে আসো!

পূর্ণা: —————
মিলা: —————–
ডাক্তার নীল: ————–

ভাবছেন তো এত শান্ত কেনো একেই বলে ঝড়ের আগের অবস্থা। দুজনের মুখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি পর্যবেক্ষণ করছে। দু’জন ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে এক সাথে দাঁড়িয়ে আছে হা পা কাঁপছে কপাল থেকে ঘাম জড়ছে। ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। নীল এক ধমক দিলে মিলা ব্যা ব্যা করে কেঁদে ফেলে। তা দেখে নীল অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। খিঁচে চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়। দুই আঙুল দিয়ো চোখের উপর আলতো চেপে ধরে কয়েক সেকেন্ড পর দু’জন কে উদ্দেশ্য করে বলে…

‘ চলে যাও আমার সামনে থেকে! ‘

একনজর ডাক্তার নীল এর দিকে তাকিয়ে পেছনে ঘুরে দৌঁড় দিলো। দুজনে ধাক্কাধাক্কি করে এক সাথে বের হতে নিলে দু’জনের গায়ের সাথে ডুসাডুসি লেগে মাটিতে পরে যায়। তা দেখে নীল দরজার দিকে তাকালো মাত্রারিক্ত রাগ নিয়ে তাদের দিকে তাকালে তারা বলে উঠে..

‘ সরি স্যার। ‘

বলেই উঠে দুজনে একসাথে ছুটে পালালো।
চেম্বারে একটা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো আর নিজের প্রতিভ্রম্মের কাছে প্রশ্ন ছুড়ল…

‘ আমাকে কি বাঘ বা ভাল্লুক এর মতো দেখতে যে ওরা আমাকে এত ভয় পায়? ‘
তখন পেছন থেকে বলে উঠল…

‘ তোকে বাঘ বা ভাল্লুকের মতো দেখতে না হলেও তুই বাঘের মতোই… ‘

‘ কি মিন করতে চাচ্ছিস তুই? ‘ ভ্রুকুটি কুঞ্চন করে প্রশ্ন ছুড়ল!

‘ মানে হচ্ছে গিয়ে ‘ আরহাম আর কিছু বলার আগে তাকে চুপ করিয়ে দিয়ে বলল।

‘ হইছে তোর ফাউল কথা এখন চুপ থাক। কি দরকারে আসছিস সেটা বলল ‘

আরহাম: ——-নিশ্চুপ এমন অবস্থা হাতে মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে বৃষ্টি কে ঝাপটে ধরে বিচলিত কন্ঠে প্রশ্ন ছুড়লেন।

‘ কি হয়েছে আমার ছোট বউমার? কপালে হাতে ব্যান্ডেজ কেন? ‘

রিমি প্রতিত্তোরে বলল, ‘ এক্সিডেন্ট হইছে মা ‘

মা বললেব, ‘ তোরা চৌদ্দ গুষ্টি শুদ্ধো ঠিক আছিস শুধু আমার মেয়েটার এক্সিডেন্ট হইছে? ‘

রিমন বলল, ‘ মা তোমাকে পরে সব বুঝিয়ে বলবো এখন ভেতরে তো আসতে দাও ‘

মা বৃষ্টির হাত ধরে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেলেন হল রুমে সোফার উপর বসিয়ে রহিমাকে ডেকে বলল,

‘ রহিমা রে কিচেন থেকে তারাতাড়ি এক গ্লাস লেবুর শরবত বানিয়ে দিয়ে যা রে বৃষ্টির জন্য তারাতাড়ি নিয়ে আয়। ‘

রিমন ভ্রু কুঞ্চিত করে ঠোঁট বাকা করে বলল, ‘ আমরা কি দোষ করেছি যে শুধু ওর জন্য আনতে বললে আমাদের জন্য কেনো বলো নি? ‘

মা রিমনের কথার প্রতিউত্তরে জানালো, ‘ তোদের কারো এক্সিডেন্ট হয় নাই বিন্দাস আছিস তোদের জন্য কিসের শরবত রে? ‘

রিমন ভ্রু কুঁচকে বিস্মিত হয়ে গেল আর বলল!
‘ এবার কি এক গ্লাস শরবত খাওয়ার জন্য এক্সিডেন্ট করতে হবে? ‘

মা রিমনের দিকে অগ্নী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে সে চুপ হয়ে যায়। রহিমা এক গ্লাস শরবত বানিয়ে নিয়ে আসে। আর সেটা মা নিয়ে বৃষ্টি কে খেতে বলল। রিমন রহিমার দিকে তাকিয়ে বলে!

‘ মা বলেছে এক গ্লাস আর তুই এক গ্লাসই নিয়ে আসছি! কিপ্টামির জন্য যদি কোনো এওয়ার্ড দেওয়া হতো নিঃসন্দেহে তুই আর মা’ই পেতি ‘

রহিমা গ্রাম্য ভাষায় বলল, ‘ ওয়াকি কন ভাইজান আমরা কিপটামি হরি না আমরা অপচয়ের বিরুদ্ধে কাম করি। ‘

রিমি বলল, ‘ তোর কথার মানে কি রহিমা আমাদের খাওয়া মানে কি অপচয়? ‘

রহিমা বলল, ‘ ও কি কন আফা আমি এইয়া কহন কইলাম? আপনারা বহুন আমি এহনই শরবত বানাই নিয়া আইতাছি। ‘

রিমন বলল, ‘ থাক তোর আর শরবত বানিয়ে নিয়ে আসতে হবে না। আমার খাওয়ার মুড নেই। ‘

রহিমা: বাঁচা গেলো।

রিমন: এই কথার মানে কি?

রহিমা: কিছু না ভাইজান আমি আহি এহন। কিচেনের দিকে দিলো দৌঁড়!

রিমন রহিমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল।
‘ মাইয়া ডা হেবি কাম চোর ‘

তারপরেই নিজেই জিহ্বায় আলতো কামড় দিয়ে বলে!
‘ আমি রহিমার মতো করে কেনো কথা বলছি? ‘

সামনে থাকা প্রত্যেকটি মানুষ শব্দ করে ফিক করে হেঁসে ফেলে! অপমান বোধ করল তাই সেখান থেকে উঠে রুমের দিকে চলে যাচ্ছে এদিকে বৃষ্টিকে সবাই

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here