অবহেলার সংসার 🏘️,পর্ব__1০,11

#অবহেলার সংসার 🏘️,পর্ব__1০,11
#লেখিকা (মায়া)

ঈশান বলে উঠে,, মেয়ের বাসা থেকে একটা সুতোও আমি আমার বাসায় নিবো না। আর আপনারা সখ করে মেয়েকে দিলেও সেই জিনিস টা আমার চাই না।

ঈশান মিতুর বাবার কাছে গেলো,, হাত দুটো ধরে বললেন। আমার শুধু আপনার মেয়ে কে চাই বাবা। দয়া করে কোন কিছুই আর আমার বাসাতে উপহার হিসেবে দিবেন না।

মিতুর বাবা চোখের পানি মুছে ঈশান কে বুকে জড়িয়ে নিল। সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।

মায়ার ঠোঁটের কোণে এক রক্তিম হাসির রেখা,, মায়া নিজে খুব ভালো করে জানে। তাকে বিয়ে দিতে তার বাবার কত টা কষ্ট হয়েছিল। তাই আর অন্য কোন বাবা কে এই কষ্ট দিতে চাচ্ছেন।

ঈশান মায়ার কাছে এসে বলল। আতিক ভাই অনেক লাকি ভাবী সেটা কি তুমি জানো??? থ্যাংক ইউ সো মাচ ভাবী। আমাদের এই লোভী সমাজের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য।

মায়া শুধু মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলল,, আমি এখনো কিছুই করতে উঠতে পারিনি। এসব বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব টা সবাই কে নিতে হবে। যৌতুক তো আস্তে আস্তে উঠে যাচ্ছে যেমন,, তেমন ভাবে এই ডিজিটাল যৌতুক টা কেও গোড়া থেকে উপরিয়ে ফেলতে হবে। নয়লে এক সময় দেখা যাবে মেয়ের বাবা ভয় পাচ্ছে মেয়ে কে বিয়ে দিতে।

মায়ার কথায় সবাই ভিষন খুশি হয়েছে,, কিন্তু দু জন ব্যক্তি ছাড়া। আমেনা,আসমা।

দূর থেকে সাফিক এত ক্ষন সব দেখছিল,, মায়ার কাছে চলে আসলো।

আমি ও কিছু নিবো না ভাবী প্রমিজ!! মেয়ের বাবার এক টাকাও যেন না লাগে বিয়ে দিতে।

মায়া সবার উদ্দেশ্যে ছোট একটা হাদিস বললেন,,, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ননা করেন সেই বিয়ে উত্তম,, যে বিয়ে যত সহজ ও স্বল্প ব্যয়ে হয়,,সে বিয়ে ততই শান্তি ময় ও বরকতময় হয়। (মিশকাত শরীফ) হাদিস নাম্বার ১৯৫৮,,, অর্থাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা দেন বিয়ে তে তোমারা সেই টুকু খরচ করো। যে টুকু খরচ না করলেই নয় ‌।

মায়া, আতিক, সাফিক,আসমা, আনোয়ার, সবাই বিয়ের দিন বাসায় চলে এসেছে। বউ ভাতে তারা থাকবে না বলেছে।

বাসাতে পা রাখতেই,,, আসমা বেগম ক্ষেপে গিয়ে বললেন মায়াকে,, আমার মান সম্মান শেষ করে দিয়ে খুব ভালো কাজ করলে তাই না???

তোমাকে ওতো সাধু সেজে কথা বলতে কে বলেছে?? আমাদের দুই বোনের নাক কাটাতে??

মায়া হতবাক হয়ে আসমা বেগমের মুখের দিকে চেয়ে আছে।

সাফিক আর আনোয়ার সাহেব বললেন।
কি শুরু করলে কি আসমা?? বাসায় পা দিতেই??

মা তুমি কি পাগল হয়ে গেছো??? ভাবী এমন কি বলল যে তোমার নাক কাটা গেল??
ভাবী যা বলেছে ঠিকই তো বলেছে। তোমার নাক কাটা যায়নি মা বরং ভাবী যা বলেছে তা নিয়ে তোমার মাথা আরো উঁচু হয়ে গেছে।

আর আতিকের দিকে তাকিয়ে সাফিক বলল ভাইয়া কে সবাই ভাগ্যবান বলছিল। কিন্তু তোমরা যার জন্য ভাগ্যবান হয়েছো তার কদর এখন দিতে পারছো না। কিন্তু যখন ভাবী থাকবে না তখন বুঝতে পারবে আসলে ভাবী কি ছিল!!!

আর কথায় আছে না সত্যি কথা বললে বন্ধু বেজার!!!

মায়া এক দন্ড সেখানে আর দাঁড়ালো না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘরের দিকে রওনা দিল।

আতিক মায়ার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে,, মনে মনে ভাবছে মায়া কে হারিয়ে যাওয়ার কথা বলল কেন সাফিক???

কয়েক সপ্তাহ কেটে গেছে,, মায়ার শরীর টা আজ অন্যান্য দিনের থেকে বেশী খারাপ। বিছানা থেকে উঠতেই পারছে না।

মায়ার মাথার চুল এখন হয়তো গুনা যাবে। মাথায় টাক হয়ে গেছে,,, মায়া সব সময় হিজাব পড়েই থাকে।

আতিক অফিসে চলে গেছে। মায়া শুয়ে থাকতে দেখে কেন জানি তার খারাপ লাগলো। দিন দিন মেয়েটার চেহারার যে অবনতি হচ্ছে তা কারো চোখেই আড়াল করতে পারছে না কিন্তু এক মাত্র সাফিক জানে কেন তার এমন অবনতি হচ্ছে। নিজের চোখের সামনে মায়া কে মৃত্যুর মুখে ঢলে যেতে দেখে খুব কষ্ট হয় তার।

আতিক মায়া কে অফিস যাওয়ার আগে বলেছিল যে মায়া কে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে। কিন্তু মায়া এক কথায় যাবে না বলে দেয়।

মায়া কে শুয়ে থাকতে দেখে আসমা যেন অগ্নিমূর্তি ধারণ করেছে,,,, হাজার টা কথা শুনালো তাকে।

মায়ার এক দম শক্তি নেই বিছানা থেকে উঠার।

সাফিক মায়ার ঘরে আসে,, হাতে খাবার নিয়ে,, ভাবী উঠো,, খেয়ে নাও,,

মায়া চোখ তুলে তাকিয়ে বলল নাহ ভাই খাবো না আমি তুমি এসব কি জন্য এনেছো?? নিয়ে যাও।

অনেক হয়েছে,, আর নয় অনেক কথা শুনছি তোমার,, উঠো বলছি। সাফিক মায়াকে ধরে বসালো।

হাতে খাবার নিয়ে মায়া কে তুলে খাওয়াচ্ছে। খাবার কেমন যেন লাগছে মায়ার। মুখ খিঁচিয়ে রেখেছে,, মায়া কে জোর করে পুরো টা খাবার খাইয়ে দিল। আসমা দরজার ফাঁক দিয়ে সব দেখছে। কেমন যেন সন্দেহ লাগছে।

মায়া সাফিকের দিকে তাকিয়ে বলল খাবার টা এমন কেন ছিল???

কারন খাবারে তোমার ঔষধ গুরো করে মিশিয়ে দিয়েছিলাম।

মায়া চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল সাফিকের দিকে। মায়া কিছু বলার আগেই সাফিক বলল আর একটা কথা বললে।সবাই কে বলে দিবো কিন্তু!!!

ব্লাকমেইল করছো!??

যা ভাবো তাই,,, কিন্তু এই ভাবে তোমায় শেষ হয়ে যেতে পারবো না ভাবী আমি।।

সাফিক ঘর থেকে বের হয়ে গেল। আসমা দরজা থেকে অনেক আগেই শরিয়ে পরেছে।

সাফিক কে কেমন সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছে আসমা। সাফিক তাতে পাত্তা না দিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল।

আতিক আর আনহা অফিসের কেন্টিনে বসে আছে। আতিক আনমনে কি যেন ভাবছে। আর আনহা ফোন নিয়ে ব্যস্ত। আতিকের দিকে আড় চোখে একবার তাকিয়ে ফোন ব্যাগের ভেতর রাখলো আনহা।

আতিক মায়া কে নিয়ে আকাশ পাতাল ভাবছে। দিন দিন কেন তার শরীরের এত অবনতি হচ্ছে। হ্যাঁ আতিক জানে মায়া কখনো নিজের যত্ন করে না। কিন্তু তার পর ও এত অবনতি এর আগে হয়নি। কিছু দিন পর পর অসুখ বিসুখ হওয়া এই বিষয় টাও কেমন খটকা লাগছে তার। মায়ের কাছ থেকে শুনছিলাম মায়ার রিপোর্ট না কি নরমাল। কিন্তু ওকে কখনো জিজ্ঞেস করা হয়নি আসলে রিপোর্টে কি এসেছে। মায়া এত যে অসুস্থ হয়ে পড়ে তার পর ও ওকে কখনো ঔষধ খেতে দেখেনি আতিক। আজ বাসায় গিয়ে মায়ার রিপোর্ট টা দেখবে আতিক। আর একটা ভালো ডক্টর দেখাতে হবে মায়াকে।
মায়াকে এই ভাবে এক দম ভালো লাগছে না।

আতিক!!! আনহার ডাকে আতিকের হুশ ফিরে। আনহার দিকে না তাকিয়ে বলল। হুমমম বল কি হয়েছে!??

তুমি কি কোন বিষয় নিয়ে আপসেট হয়ে আছো???
কৈ না তো। তাহলে আমি সামনে বসে আছি তোমার আর তুমি এত কি ভাবছো???

ওও তেমন কিছু না এমনিই,, আচ্ছা কি খাবে তুমি বলো। আমি কিছু খাব না।

তোমার সাথে আমার কিছু আর্জেন্ট কথা আছে। হুমমম বলো।

আচ্ছা আমরা বিয়ে করছি কবে?? তুমি মায়াকে ডিভোর্স কি দিবে না নাকি!??

ডিভোর্সের কথা আসতেই আতিক যেন কেমন ঘাবড়ে গেল।

মায়ার সাথে আমি কথা বলেছি তো‌। তিন মাস অব্দি টাইম নিয়েছে। তার পর দেখো কি হয়!!

আনহা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল আর যদি তিন মাস পর ডিভোর্স তোমার না দেয় তো !??

আতিক একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,, চিন্তা করো না‌ । মায়া যখন বলেছে তখন সেই কথার নরচর হবে না।

বাহ এত ট্রাস্ট মায়ার প্রতি???

আতিক আনহার দিকে তাকিয়ে ভালো ভাবে তাকে দেখতে লাগলো। একটা হোয়াইট কালারের মিনি স্কার্ট পড়েছে। চারিদিকে এক বার চোখ বুলালো আতিক। হ্যাঁ কিছু কিছু ছেলে আনহার দিকে কুনজরে তাকাচ্ছে।

আতিকের মেজাজ টা কেমন বিগরে গেল। আচ্ছা আনহা এই সব ড্রেস ছাড়া কি অন্য লং ড্রেস পড়তে পারো না???

আনহা এক বার নিজের ড্রেসের দিকে তাকিয়ে আতিকের দিকে তাকালো। কেন আমার ড্রেসের কি হয়েছে??? ভালো লাগছে না???

চার পাশে একটু তাকাও কেমন ভাবে তাকাচ্ছে ছেলেরা তোমার দিকে।

ওহ এই ব্যাপার,, দেখ যে যেমন সে সেই ভাবেই তাকাবে। আর কথা হলো তাদের তাকানোর জন্য কি আমরা মেয়েরা নিজের পছন্দ মত জামা পড়তে পারবো না নাকি???

তারা নিজের দৃষ্টি কেন নত রাখে না??

আতিক আনহার কথা শুনে শান্ত স্বরে বলল,, ক্ষুর্ধাত প্রানী কে সামনে খাবার রাখলে তারা কি মাথা নিচু করে রাখবে???

আতিক কি বলতে চাচ্ছো তুমি??? আমার বাবা ও কখনো আমার ড্রেস নিয়ে কথা বলেনি আর তুমি বলছো???

আতিক রেগে গিয়ে বলে,,,মানে তোমার বাবা কিছু বলেনি তার জন্য আমি ও কিছু বলতে পারবো না???

দেখ আতিক ছোট কাল থেকে আমি এসব ড্রেস পরে অভ্যস্ত,, আর এতই যখন লং ড্রেস পছন্দ। তাহলে মায়ার মত হিজাবী মেয়েকে ছাড়া আমার উপর নজর পড়লো কেন ??

আতিকের রাগ যেন এবার মাথায় উঠে গেছে,, ভরা ক্যান্টিনেই আনহা কে

চলবে____,,,,,,????

#পর্ব__11
#অবহেলার সংসার 🏘️
#লেখিকা__(মায়া)

সবার সামনে আনহার গালে থাপ্পর বসিয়ে দেয় আতিক।

মূহুর্তের সব কেমন নিরব হয়ে গেছে,, আনহা অশ্রু শিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে আতিকের দিকে। অস্ফুট স্বরে বলল,, তুমি আমাকে মারলে আতিক??? তুমি ঐ মায়া ক্ষ্যাত মেয়েটার জন্য আমাকে মারলে,, ??

আতিকের রাগ যেন তাতেও শেষ হচ্ছিল না। মায়াকে নিয়ে কথা বলার সাহস কয় থেকে পাও তুমি আবার???

আনহা দাঁত পিষে আতিক বলল তুমি এত গুলো মানুষের সামনে আমাকে উপমান করলে??? এর শোধ তো আমি হারে হারে নিবো তোমার থেকে। তোমার বউয়ের জন্য আমার গায়ে হাত তোলা?? এতই যখন ভালোবাসা তার প্রতি!! তাহলে সেই অসুন্দর মেয়েটার কাছেই থাকবে আমার মত সুন্দরী মেয়ের কাছে আসো কেন??

আতিকের ইচ্ছে করছিল আর একটা থাপ্পর দিতে আনহার গালে। কিন্তু এত ক্ষণে ক্যান্টিনের সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখতে আরম্ভ করছে।

তাই সে চুপ করে রইলো। নিজের হাত মুষ্টি বদ্ধ করে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে আতিক। এখানে থাকলে তার রাগ কমবে না বরং বাড়বে। আনহার দিকে এক বার তাকিয়ে বলল। যা করার করে নিও। বাট মায়া কে নিয়ে কিছু বলার সাহস ও করো না।

আতিক গটগট করে হেঁটে চলে গেল। অফিসে গিয়ে নিজের ব্যাগ পত্র নিয়ে বেরিয়ে আসতে লাগল। সবাই আতিকের এই কান্ডে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।

আতিকের কলিগ রিফাত,,, অবশ্য কলিগ বললে ভুল হবে। রিফাত আতিকের ভালো বন্ধু ও বটে।

আতিক এমন ভাবে বেরিয়ে যেতে দেখে রিফাত পিছন থেকে বলে উঠে।

আতিক!!!

আতিক পিছন ফিরে দেখে রিফাত তার কাছেই আসছে।

হ্যাঁ বল কি হয়েছে!?? আরে তুই অফিস পিরিয়ডে এই ভাবে কোথায় যাচ্ছিস।

ভালো লাগছে না বাসায় যাচ্ছি। আর বস কে একটু বলে দিস। রিফাত অন্যমনস্ক হয়ে বলল আচ্ছা ঠিক আছে বলে দিবো।

ঠিক আছে তুই থাক তাহলে আমি যাই। আতিক আবার হাটা শুরু করে,, তখন আবার রিফাত বলে উঠে,, আনহার সাথে কিছু হয়েছে নাকি?? আনহার কথা মনে আসতেই আবার যেন রাগে কাপছে আতিক।

যতটা পারে নিজেকে শান্ত করে আতিক বলল। নাহ কিছু হয়নি। এমনিই ভালো লাগছে না আমার।

রিফাত আতিকের কাঁধে হাত রেখে বলল। দেখ ভাই তোকে এর আগেও হাজার বার বলেছি। কিন্তু তুই শুনিসনি। আবারও বলছি এই আনহার পিছে না পরে। ভাবীর কাছে ফিরে যা। এগুলো সব চেহারার ধোকা ভাই। এই ধরনের মেয়েরা শুধু ফূর্তি করে ভালোবাসে না। তুই ভাবীর সাথে সব ঠিক করে নে প্লিজ। তাতে তুই ও ভালো থাকবি আর ভাবীও।

আতিক রিফাতের কথা মনোযোগ দিয়ে শুধু শুনলো মাথা নিচু করে বেরিয়ে গেল কিছু না বলেই। রিফাত একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে অফিসের ভিতরে গেল।

মায়ার গায়ে হাড়কাঁপানো জ্বর শুরু হয়েছে। সাফিক মায়ার মাথায় পানি ঢালছে। আর বার বার কপালে হাত দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা চেক করছে। কিন্তু জ্বর কমার কোন নাম গন্ধ নেই। জোর করে সাফিক মায়াকে জ্বরের ঔষধ খাইয়ে দিয়েছে।

ভাবী প্লিজ ডাক্তারের কাছে যাবো আমরা চল। জ্বর তো এক দমি কমছে না।

মায়া জোরালো কন্ঠে উত্তর দেয়
আমি ঠিক আছি ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না। তুমি এত উতলা হয়ো না।

হ্যাঁ তুমি তো ঠিকই আছো। তুমি অবাক ঠিক নেই কোন দিন?? কেন নিজেকে এত কষ্ট দিচ্ছো?? ‌প্লিজ ভাবী ডাক্তারের কাছে যায় চল?? আমি ভাইয়া কে একটা ফোন দিয়ে বলি?? মাকে তো বললাম কিন্তু পাত্তাই দিল না।

নাহ আতিক কে ফোন দিতে হবে না। অযথা ওকে বিরক্ত করার প্রয়োজন নেই।

আসমা বেগমের চোখ দিয়ে বিষ পড়ছে যেন। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে সব দেখছে সে।

আসমা মনে মনে বলছে। এখন সব বুঝতে পারছি আমি। এই মেয়ে আমার বড় ছেলে টার মাথা খেয়ে যেমন বিয়ে হয়েছে। তেমন আমার ছোট ছেলেটার ও মাথা খেয়ে বসেছে।

আতিক আজ আসুক এই মেয়ের ব্যাবস্থা আজই করবো আমি।

আতিক সেই কখন থেকে বেল বেজেই যাচ্ছে কিন্তু কারোরই দরজা খুলার হুশ নেই। বেশ কিছুক্ষণ পর আসমা দরজা খুলে দিল।

আসমা কে দরজা খুলতে দেখে আতিক ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো!! আজ তুমি দরজা খুললে যে?? মায়া কোথায় মা??

মায়া নাম শুনার সাথেই আসমা ন্যাকা কান্না শুরু করে দিয়ে বলল,, যে ভাবে ঐ নোংরা মেয়েটা তোর মাথাটা খেয়ে এবাড়ির বউ হয়েছে। এখন ঠিক তেমন করে আমার ছোট ছেলের মাথা টাও চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে।

আসমা বেগমের কথায় ভিষন ভাবে রেগে গেল। কি বলছো কি মা??? মাথা টা কি তোমায় পুরোপুরি খারাপ হয়ে গেছে নাকি!??
মায়াকে নিয়ে এমন কথা কি ভাবে বলছো তুমি???

আমি জানি তোর বিশ্বাস হবে না বাবা। কিন্তু আমার কথা টা তুই শুন,,, সাফিক কিন্তু সব সময় মায়ার হয়ে ফরে কথা বলে‌। আগে পিছে সব সময়,, আজ কি হয়েছে শুন সাফিক নিজে মায়াকে তুলে খাইয়েচ্ছে । আবার এখন গিয়ে ঘরে দেখ তোর বউয়ের মাথায় সাফিক পানি ঢালছে। কি বুঝতে পারছিস এতে???

একে তো আতিকের মাথা রাগে গিজ গিজ করছে তার উপর মায়ার নামে নংরা আরোপ দিচ্ছে আসমা।

অতিরিক্ত রাগে মানুষের সাধারণ বুদ্ধির বিলুপ্ত ঘটে। এক জন অতিরিক্ত রাগী মানুষ একটা পাগল জানোয়ার থেকেও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে। বর্তমান আতিকের অবস্থা একই হয়েছে। অতিরিক্ত রেগে থাকার কারনে সে ভুলে আসমার কথাটা সত্যি কিনা।

কাঁধে থাকা অফিস ব্যাগ টা ছুরে ফেলে দিল আতিক। রাগে কাঁপতে কাঁপতে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো।

ঘরে যেয়ে দেখে। সাফিক মায়ার মাথার কাছে বসে আছে। মায়া কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। আর সাফিক মায়ার কপালে জল পট্টি দিচ্ছে।

আতিক দ্রুত সাফিকের কাছে গিয়ে পাশে থাকা পানির বাটি মাটিতে ছুঁড়ে মারলো। সাফিকে কলার ধরে দাঁড় করিয়ে ইচ্ছে মত মারতে লাগলো। দ্রুত সব কিছু হয়ে গেল যে সাফিকের মাথায় কিছুই ঢুকলো না। মায়া চোখ খুলে দেখে আতিক সাফিক কে মারছে।

আর সাফিক বার বার বলছে ভাইয়া মারছিস কেন আমায়?? ভাইয়া কি হয়েছে???

আসমা সাফিকের চেঁচামেচি তে ঘরে আসে। বড় ছেলের হাতে ছোট ছেলে মার খাইতে দেখে চিৎকার করে বলে উঠে আতিক কি করছিস তুই সাফিক কে কেন মারছিস???

আসমা আতিকের কাছ থেকে সাফিক ছাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর আতিক সাফিক কে এলোপাতাড়ি মেরে চলেছে। মায়া দূর্বল শরীর নিয়ে জলদি করে আতিকের কাছে আসে।

ক‌ি করছো টা কি তুমি??? সাফিক কে মারছো কেন তুমি??? পাগল হয়ে গেছো ছাড়ো ওকে।

আতিক এত ক্ষনে মুখ খোলে‌। আমার বউয়ের দিকে চোখ দেওয়ার সাহস কি করে হয় ওর। সাফিক আতিকের আগা মাথা কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না।

ভাইয়া কি বলছিস এসব??? কি বলছি আমি তাই না?? তুই আমার ঘরে কি করছিস?? আমার বউয়ের জ্বর এসেছে আমি মাথায় পানি দিবো তুই কেন???

আসমা আতিকের গালে কষে থাপ্পর দেয়।

ছেড়ে দে সাফিক কে। মারতে হলে তোর বউকে মার। এই নষ্টা মেয়ে টাই সাফিকের মাথা টা খারাপ করেছে।

আসমার কথায় সাফিক মায়া দু জনেই স্তব্ধ। কি বলছে কি এসব মা তুমি তোমার মাথা ঠিক আছে তো??? তুমি ভাবীর সাথে আমাকে মিলাচ্ছো???

মায়ার মাথাটা কেমন করে উঠলো দেয়ালে পিঠ ঠেকে বসে পরলো। মাথা টা চেপে ধরেই ওয়াশরুমে চলে গেল মায়া। গলগল করে মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে। মায়া ওয়াশরুমের ফ্লোরে বসে পড়লো।

আতিক ঝংকার গলায় বলে। মায়া কে নষ্টা বলার সাহস কি করে হয় তোমার??? ওকে কত টুকু চিনো তুমি!??

ব্যাস ভাইয়া ব্যাস মা তোমাকে উল্টা পাল্টা কি বলেছে না বলেছে আর তুমি না বুঝে খারাপ বানিয়ে ফেললে আমায়???

আসমার দিকে তাকিয়ে সাফিক ছলছল চোখে বললো তুমি কি আমার মা ???

এই সব কিছু হয়েছে এই মেয়ের জন্য?? আতিক একে এই বাড়িতে তুই রাখবি না।

মা চুপ করবে তুমি??? ভাবীর যে এত জ্বর তুমি এক বার এসেছিলে এই ঘরে??? সকাল থেকে যে মানুষ টা বিছানায় পরে আছে এক বারো খোঁজ নিতে এসেছিলে তুমি??? আর ভাইয়া!!! তোর বউ তুই দেখবি। যখন সকালে ভাবীকে পরে থাকতে দেখলি সেই অবস্থায় ছেড়ে অফিস কি করে গেলি???

আসমার দিকে এক নজর দিয়ে বলল আরে এই মহিলা টা আমাদের মা নয়???

মা হলে ভাইদের মধ্যে দন্ড সৃষ্টি করতে পারতো না। সাফিক এই বার কেঁদেই দিয়েছে। সকাল থেকে ভাবীর ভিষন জ্বর। জ্বর থামার নামি নিচ্ছে না। তাই আমি এই ঘরে,, ভাবীর মাথায় পানি দিচ্ছিলাম।

আর তোরা ভাবীর সাথে কি করে মিশাতে পারিস??? আমাকে বড় বোনের মত স্নেহ করে এই মানুষ টা। ছিহ।

আতিক নির্বাক হয়ে সব শুনছে। রাগ কমে যাওয়ায় কারনে সে এখন বুঝতে পারছে কি ভুল করেছে সে।

নিজেই নিজেকে ধিক্কার জানাচ্ছে আতিক। নিজের ভাই কে মায়ার সাথে ছিহ‌।
দুই জনকে তো পানির মতো চিনি আমি ‌।

আতিক সাফিকের কাছে গিয়ে হাত ধরে বলে আমাকে মাফ করে দে ভাই???

সাফিক আতিক কে বুকে জড়িয়ে নেই।

ভাবীর শরীর টা ভিষন খারাপ, ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

মায়ার কথা বলতেই,, আশেপাশে মায়াকে দেখতে পেলো না।

আসমার দিকে তাকিয়ে আতিক বলে মায়া কোথায়???

সারা ঘর খোঁজে না পেয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল আতিক!!! ফ্লোরে মায়াকে পরে থাকতে দেখে চিৎকার করে,,, মায়া!!!!

রক্তে ফ্লোর ভিজে গেছে। পাশেই পড়ে রয়েছে মায়ার অচেতন দেহ।

আতিক মায়ার কাছে গিয়ে ,,,,,

চলবে_____?????

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here