অবহেলার সংসার 🏘️,পর্ব__8,9

#অবহেলার সংসার 🏘️,পর্ব__8,9
#লেখিকা_(মায়া)
08

মায়া চট করে সাফিকের হাত থেকে মেডিকেল রিপোর্ট টা নিয়ে নেয়!!

মায়া চোখে মুখে ভয়ের ছাপ,,, এই টা কোথায় পেলে তুমি??? ভাবী??? মেডিকেল রিপোর্ট টা নরমাল তাই নাহ???

মায়া শুকনো ঢুক গিললো। সাফিকে কেন পাঠালো ঘরে নিজের কপাল নিজেরই চাপরাতে ইচ্ছে করছে। রিপোর্ট টা কোন সেভ জায়গাইতে রাখা উচিৎ ছিল???

কি হলো ভাবী চুপ করে আছো কেন???
সাফিক প্লিজ চুপ করো।
চুপ করবো কেন তোমার ক্যান্সার পজেটিভ এসেছে!! আর তুমি এই কথা টা সবার থেকে লুকিয়ে গেছ??? কেন? সবাই কে বলিয়ে বেরিয়েছো রিপোর্ট নরমাল।

চল আমার সাথে সবাই কে বলে দেয় যে তাদের বউ মা নিজের শরীরে মরনব্যাধী পুষে রেখেছে। এই সংসার থেকে সে ছুটি নেওয়ার ফন্দি আঁটছে। মা কে বলতে হবে তো এবার কি করে রান্না করবে সংসার কিভাবে চলবে!!

সাফিকের চোখ ছলছল করছে মেয়ে মানুষ হলে হয়তো এত ক্ষনে কেঁদেই দিতো। কি হলো ভাবী চুপ করে আছো কেন??? চল আমার সাথে এই ব্রেকিং নিউজ টা সবাই কে দিতে হবে তো না কি??

আমরা কাউকেই কিছু বলছি না সাফিক তুমিও বলবে না আর আমিও বলবো না। কেন ??? ওদের বলা উচিৎ এটা।

নাহ বলা উচিৎ নয় তোমার কি মনে হচ্ছে আমি চাইলে সবাই কে বলে দিতে পারতাম না?? অবশ্যই পারতাম। কেন বলিনি জানো। কারন আমার কারো সহানুভূতির চাই না।

সাফিক প্রশ্ন মূর্ত চেহারা বানিয়ে বলে সহানুভূতি মানে??? তুমি কি মনে করছো আমি যদি আমার ক্যান্সারের কথা সবাইকে বলি যে আমার বেঁচে থাকার চান্স মাত্র ২০%
ওরা আমায় অবহেলা করবে?? নাহ তারা আমায় দয়া দেখাবে। আমাকে ভালোবাসা দেখাবে। যেই ভালোবাসার জন্য কাঙ্গাল ছিলাম সেই ভালোবাসা তারা আমায় দিবে।

তার পর আর কি আরো ২০ বছর বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা জন্মাবে। এই ইচ্ছে প্রতি নিয়ত আমায় কুড়ে কুড়ে খাবে। আমার মৃত্যুর কথা শুনলে আমার শত্রু ও আফসোস করবে।

আমাদের এই দুনিয়ার মানুষ না বড্ড বোকা এরা আপন মানুষ,, সত্যি ভালোবাসা,,সৎ মানুষ এদের কদর দিতে জানে না। এদের নিজের কাছে রাখতে জানে না।

কিন্তু এরা হারিয়ে ফেলার পর বুঝতে পারে আসলে মানুষ টা কি ছিল আমাদের জীবনে।

তুমি কি ভাবছো যে তুমি মারা গেলে এরা পস্তাবে!?? তোমার জন্য আফসোস করবে??
কিচ্ছু আসবে না যাবে না এদের!!

নিজের পরিবারের কথা টাও কি ভাববে না??

নাহ আমি কারো কথা ভাবতে চাই না আমি শুধু মুক্তি চাই।

ভাবী তুমি কি পাগল হয়ে গেছো?? কেন এমন করছো??

মৃত্যু ছাড়া যে পসিবল নয় তোমার ভাই কে ছেড়ে থাকা।

এত কেন ভালোবাসো ঐ অপদার্থ টা কে। যে তোমাকে ভালোই বাসে না?? অনেক হয়েছে এখন বল তোমার অবস্থা কেমন??! তুমি তো ডাক্তারের কাছে আর যাওনি। তোমার শরীরের কি অবস্থা এখন???

হঠাৎ মায়ার কাশি উঠে। ভিষন ভাবে কাশতে থাকে সে মুখে হাত দিয়ে কাশছে। ভাবী তুমি একটু দাড়াও আমি এখনি পানি নিয়ে আসছি।

সাফিক দৌড়ে নিচে যায় পানি নিয়ে আসার জন্য। মায়া এখনো কাশছে তার দম বন্ধ হয়ে আসছে যেন। ছাদের রেলিং ঘেঁসে বসে পরে সে। হাতে রক্তের দাগ তারাতারি করে ওড়না দিয়ে মুছতিছে মায়া একটু দূরে সাফিক পানির বোতল হাতে দাঁড়িয়ে আছে।

ধীর পায়ে হেঁটে গেল মায়ার কাছে হাঁটু গেড়ে বসে পরলো সাফিক। মায়ার দিকে বোতল এগিয়ে দিলো । পানি টা খেয়ে নাও। পানি ঢক ঢক করে খেয়ে নিলো মায়া। সাফিক রুমাল বের করে মায়ার হাতে দিয়ে বলল নাকের রক্ত টাও মুছে নাও ভাবী।

মায়া ততক্ষনাত নাকে হাত দিয়ে দেখে রক্ত। অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো সাফিকের দিকে।
তুমি আমায় কথা দাও বাসার কাউকে বলবে না। কিন্তু ভাবী??? আমার কসম লাগে‌ সাফিক!!!

সাফিকের চোখে পানি,,, সে আর এক দন্ড দাঁড়াতে পারলো না সেখানে। দ্রুত নিচে চলে গেল।।।

মায়া কিছু ক্ষণ আনমনে রেলিং ঘেঁসে বসে রইলো।

রাতের রান্না করছে মায়া ৫ টা বাজে। আসমা বেগম হুকুম দিয়ে গেলেন ২কাপ চা আর নাস্তা দিয়ে যেতে তাদের ঘরে।

মায়া চা নাস্তা নিয়ে শাশুড়ীর রুমের দিকে পা বাড়ালো তখনই বাসার কলিং বেল টা বেজে উঠল। ঘর থেকেই আনোয়ার আওয়াজ করে বলল দরজা টা খুলে দাও বউ মা। মায়া নাস্তা নিয়ে ঘরে প্রবেশ করল। আসমা দরজা খুলে দাও আগে গিয়ে। আচ্ছা মা দিচ্ছি।

দরজা খুলে দেখে আসমা বেগমের বোন আমেনা খালা দাড়িয়ে আছে। আসসালামু আলাইকুম খালা কেমন আছেন??? একটু ভাব নিয়ে উত্তর দেয় খালা ভালোই আছি এত ক্ষন লাগে দরজা খুলে দিতে। মাফ করবেন খালা। হ্যাঁ দরজা থেকে সরে দাও নাকি ভিতরে আসতে দিবে না নাকি???

মায়া মাথা নিচু করে দরজা থেকে সরিয়ে পরে। ভিতরে খালা চলে যাওয়ার পর মায়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজা লক করে দিয়ে রান্না ঘরে চলে যায়।

আমেনা খালা অনেক অহংকারী ধনী। হুট করে ধনী হয়ে গেলে মানুষ অনেক অহংকারী হয়ে যায়। মানুষ কে মানুষ মনে করতে চায় না যাকে বলা হয় আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ অবস্থা।

উনি আবার এমনি এমনি আসেন না কোন কারণ নিশ্চয়ই আছে। গ্যাস ওফ করে ফ্রিজ থেকে ফল বের করল মায়া। নাস্তা রেডি করে মায়া চলে গেল।

নাস্তা দেখে খালা কিছু টা দেমাগ নিয়ে বলল এসবের কি দরকার ছিল?? আমি কি না খেয়ে এসেছি নাকি?? মায়া এবার মুখ খুলে বলল বাসায় মেহমান আসলে তাহলে কি জিজ্ঞেস করা উচিত নাকি আপনি বাসা থেকে খেয়ে বের হয়েছেন তো?? না আসলে আমি নাস্তা দিতে চাচ্ছি তো এই আর কি?? আর কেউ না কারো বাসায় উদ্দেশ্যে বের হলে যে খেয়েই বের হয়।

মায়ার কথা শুনে খালা রাগে ফুঁসছে। আর আনোয়ার মিটি মিটি করে হাসছে।

আসমা বেগম কিছু টা রাগ দেখিয়ে বলল কি হচ্ছে কি কারো সাথে এই ভাবে কথা বলতে হয়??? মা বাবা কি কথা বলাটাও শিখায়নি???

মা বাবা আমাকে অনেক কিছুই শেখাতে ভুলে গেছেন। আপনিই শিখে দিয়েন। কারন মেয়ে হয়ে পি এইচ ডি করে বিয়ে হলেও শশুর বাড়িতে আবার নতুন করে A B C শিখানো হয় তাই নয় কি।

মায়া আসমা কে কিছু বলতে না দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। নিজেই নিজের মন কে বলছে অনেক হয়েছে মায়া আর নয় এসব অন্যায় সহ্য করার। আর এত সহ্য করে টা হবে। এই সংসার তো আমার থাকবে না। এবার আর অন্যায় সহ্য করবো না আমি। চাই না আমার ভালো বউয়ের উপাধি। কি হবে এই উপাধি নিয়ে??? অবহেলা ছাড়া যেখানে কিছুই নেই।

খালা সন্ধ্যা হতে হতে চলে গেছেন। এসেছিল তার এক মাত্র ছেলে ঈশানের বিয়ের দাওয়াত করতে। ৭দিন বাদে বিয়ে। সহ পরিবার নিয়ে যেতে হবে।

রাত ৯টা বাজে আতিক এখনো বাসায় ফিরেনি। মায়া কল দিচ্ছে অনেক ক্ষন ধরে। কিন্তু ঐ যা হয় কেটে দিচ্ছে বার বার ফোন।

রাগ করে মায়া মেসেজ পাঠালো। আমার ফোন রিসিভ কর নয়লে আনহার নাম্বারে কল দিবো। ভাবিস না নাম্বার নেই আমার কাছে ভাব মারছি না এই দেখ নাম্বার ০১৩*******

মেসেজ যাইতে দেড়ি ফোন ব্যাক করতে দেড়ি হলো না আতিকের।

ফোন রিসিভ করেই মায়া হো হো করে হাসতে লাগলো। ফোনের ওপাশ থেকে আতিকের রাগী কন্ঠ ভেসে আসলো,,, হাসছো কিসের জন্য??? আর বার বার কল কেন দিচ্ছো???

১০মিনিটের মধ্যে তোকে আমি বাসায় দেখতে চাই। নয়লে তুই চিন্তা ও করতে পারবি না তোর কি হাল করবো!!! ব্লাকমেইল করছো??? যা ভাবিস তাই। ১০ মিনিট তো ১০ মিনিট ১ সেকেন্ড দেরি হলে থাপ্পর দিবো।

আতিক আধা ঘন্টা পর বাসায় ফিরলো । দরজা খুলল না মায়া। কলিং বেল বেজেই চলেছে। আসমা বিরক্ত হয়ে চিৎকার করে বলল মায়া কে এসেছে দরজা খুলে দাও কত ক্ষন ধরে বেল বাজছে। মায়া ১০মিনিট পর দরজা খোলে দিল। আতিক সামনে বিরক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ।।

আতিক কিছু বলার আগে থাপ্পর দিল মায়া। ৪_৫টা থাপ্পর খেয়ে আতিক গালে হাত দিয়ে মায়ার দিকে অস্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে আছে। আতিক হুংকার করার আগে। মায়া আনহা আর আতিকের কিস করা ছবি সামনে ধরলো। দাঁত কিলিয়ে মায়া বলল চিৎকার চেঁচামেচি করার চেষ্টা ও করো না। বলেছিলাম ১০ মিনিটের ভিতর বাসায় আসতে???

আতিক রাগে গজগজ করতে করতে রুমে চলে গেল। মায়া টেবিলে খাবার সাজিয়ে আতিক কে ডাকতে গেল।

ঘরে গিয়ে দেখে আতিক অফিস ব্যাগ জামা কাপড় ছরিয়ে ছিটিয়ে রেখেছে। মায়ার মাথায় রক্ত উঠে গেছে। ঐ হারামি ঘর গোছাতে কি কষ্ট হয় না??? সালা এখনি সব ঠিক করে রাখ!!! আতিক ওয়াশরুম থেকে মুখ মুছতে মুছতে বের হলো। মায়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

ঐ চোখ নিচে নয়লে চোখ খুলে মারবেল খেলবো!!! মায়া কে এক হাত দিয়ে নিজের কাছে টেনে নিলো আতিকের নিঃশ্বাস মায়ার মুখে আঁচরে পরছে। মায়া অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আতিকের দিকে।

দাঁতে দাঁত পিষে আতিক বলল। এক দম চুপ বাড়াবাড়ি ভালো লাগছে না।

আতিকের কাছ থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে মায়া আতিকের কাঁধে দুই হাত রাখলো মায়া।

বাড়াবাড়ির তো কিছুই দেখিসনি জান্টু।
এবার দেখবি। এখন কোন কথা ছাড়া আমার সাথে খেতে যাবি। অনেক ক্ষুধা লাগছে আমার। তোর খেতে ইচ্ছে না করলেও খাবি আজ।

আতিক গোমরা মুখ করে বসে আছে খাবারের টেবিলে। মায়া গুন গুন করে গান গাইতিছে আর ভাত বেড়ে দিচ্ছে।

🎼🎼🎶🎵 ঠুকরাকে মেরা পিয়ার মেলা ইনতেকাম দেখেগি🎼🎶🎵 মায়া চোখ টিপ দিলো আতিকের দিকে তাকিয়ে!!!

একটু কাছে এসে আতিকের কানে ফিসফিস করে বলল 🎼🎼🎶 নাফরাত কোন আব মেরি সুভো সাম দেখেগি🎶🎶

চলবে____????

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন 🥰❤️
#পর্ব_9
#অবহেলার সংসার 🏘️
#লেখিকা (মায়া)

এখন আতিক খুব একটা রাত করে বাসায় ফিরে না। মায়ার ফোন পাওয়ার আগে বাসায় হাজির হতে হয়।

সবই মায়ার ব্লাকমেইলের কাজ। খাবার টাও এখন রোজই খেতে হয়। ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও।

রাতের খাবার দাবার শেষ করে যে যার ঘরের উদ্দেশ্যে চলে যায়।
মায়া ঘরে প্রবেশ করেই ওয়াশরুমে চলে যায়। আতিক খাটে বসে মনোযোগ দিয়ে ফোন টিপছে।

কিছু ক্ষন পর মায়া বের হয়ে আসলো,, ঐ মিস্টার আতিক কেমন লাগছে আমাকে???

আতিক মায়ার দিকে তাকাতেই চোখ দুটো বড় বড় করে নিলো। এই কি পড়েছো এসব???

কেন কি পড়ছি?? ওয়েস্টার্ন ড্রেস। কেন ভালো লাগছে না আমায়???

আতিক দৌড়ে গিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে আসলো। মাথা কি গেছে তোমার??,

নাহ আগে বল আমায় কেমন লাগছে???
মায়া সব ড্রেস পড়ে সবাই কে মানায় না!!

ওহো আনহা কে মানায় বুঝি ভ্রু দুটো কুঁচকে মায়া জিজ্ঞেস করে।

আতিক কোন উত্তর দিল না। মায়া আবার বলল,,, আতিক আমি যদি ঈশানের বিয়েতে এই সব ড্রেস পরি কেমন লাগবে???

আতিক তিক্ত নজরে বলে আমার মান সম্মান শেষ করার ইচ্ছে হয়েছে???

কেন আমেনা খালার ছেলের বিয়ে,,, বড় লোক দের বিয়েতে তো এসব ড্রেসই পরা হয় তাই নয় কি???

মায়া এসব কি শুরু করেছো??? যাও এসব ড্রেস খুলে আসো। মায়া কিছু ক্ষণ আতিকের দিকে তাকিয়ে বারান্দায় চলে গেল। আতিক নিজেও পিছন পিছন উঠে মায়ার কাছে গেল। কি বললাম ড্রেস টা খুলতে বলছি আমি???

মায়া শান্ত স্বরে বলল যখন আনহা কে নিয়ে এসব ড্রেস পরে কফি হাউজে পার্কে ঘুরে বেড়াও তখন তোমার মান সম্মান যায় না???

যখন মেয়েটার শরীরের ভাজ দেখে অনেক ছেলেরা তাকে দিয়ে গিলে ফেলে তখন মান সম্মান যায় না। তা যাবে কেন সে তো তোমার সম্মানের সাথে জরিয়ে নেই,, জরিয়ে তো আমি আছি তাই না। শুধু মান সম্মানে জরিয়ে আছি অস্তিত্বে নেই।

আতিকের হাত ধরে নিয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড় করালো।

সত্যি করে বলোতো এই সব ড্রেস আপে আমাকে ভালো লাগছে না??? আতিক আয়নার দিকে তাকিয়ে মায়ার প্রতিবিম্বের তাকালো। হ্যাঁ সত্যিই তাকে ভালো লাগছে। চোখ ফেরানো দায় হয়ে পড়ছে।

আসলে কি জানো আতিক তুমি সৌন্দর্যে মরেছো ভালোবাসাই নয়। মায়া আর কোন কথা না বলে ওয়াশরুমে চলে যায়। এবং ড্রেস চেঞ্জ করে সাধারণ ড্রেস পরে বের হয়। আতিক মায়ার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।

মায়া আতিকের কাছে গিয়ে বলল প্রেম জাগছে নাকি আমার প্রতি??? প্রেম জাগলে কিচ্ছু করার নেই। দূরেই থাকো আমার থেকে।
মায়া কথা টা শেষ করে খাটে গিয়ে শুয়ে পড়ে।

আতিক তখন বলে আচ্ছা তোমার ডাক্তারের সাথে কি হয়েছে???

ডাক্তারের কথা শুনে মায়ার বুকটা ধ্বক করে উঠলো। কেন ডাক্তারের সাথে আবার কি হবে??

তোমার সেই ডাক্তার গত কয়েক দিন ধরে শুধু ফোন দিয়ে যাচ্ছে। কেন বলতো???

মায়া লাফ দিয়ে উঠে বসে,, ভয়ে ভয়ে বলল আচ্ছা ফোন রিসিভ করছিলে??? আতিক মায়ার দিকে তাকিয়ে বলল ওতো টাইম নেই আমার তোমার ডাক্তারের ফোন রিসিভ করার।

আতিকের কথায় মায়া হাফ ছেড়ে বাঁচলো যেন। তার পর বলল ধন্যবাদ ফোন না রিসিভ করার জন্য।

মায়া শুয়ে পরে আবার আনমনে ভাবতে থাকে,,, ডাক্তারের কাছে থেকে সেই আসা হয়েছে আর যাওয়া হয়নি। কোন মেডিসিন ও মায়া নেইনি। মাস পার হয়ে যাওয়ায় কয়েক দিন ধরে মায়া কেও বারংবার ফোন করেছিল। কিন্তু মায়া কি বলবে না বলবে এই ভেবে ফোন রিসিভ করেনি।তাই হয়তো আতিক কে ফোন দিয়েছিল।

মায়ার শরীর ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে,, কিন্তু কাউকেই কিচ্ছু বুঝতে দিচ্ছে না। সাফিক দিনের মধ্যে বেশ কয়েক বার মায়া কে বলবে ডাক্তারের কাছে যেতে। কিন্তু মায়া এক কথায় বলে দেয়। তুমি আমাকে জোর করলে আমার মরা মুখ টাও দেখতে পারবে না বলে দিলাম। এই বাড়ি থেকে মৃত্যুর আগে চলে যাবো কিন্তু। সাফিক আর কিছু বলার সাহস পায় না।

ঈশানের বিয়ে!! আর মাত্র দুই দিন বাকি আছে। মায়ার শরীর টা অনেক টা খারাপ লাগছে। তার ইচ্ছে করছে না বিয়েতে যেতে। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। আসমা বেগম কে না যাওয়ার কথা বলতেই কথা শুনাতে এক চুলও ছাড় দেননি।

কেন বাপু শরীর খারাপ নিয়ে বাবার বাড়িতে সফর করে আসতে পারলে আর আমার আত্মীয়ের বাসায় যেতে পারবে না???

মায়া আর বিপরীতে কোন কথাই বলেনি। শুধু হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে বলেছে সে যাবে।

____________
বিয়ে বাড়ীতে বর যাত্রী তে এসেছে সবাই,,বিয়ে টাও সুষ্ঠু ভাবে হয়ে গেছে। মেয়ের নাম মিতু,, মধ্যবিত্ত পরিবারের এক মাত্র সন্তান।

মিতুর সাথে ঈশানের সম্পর্ক করে বিয়ে। আমেনা এই বিয়েতে একে বারে নাকচ ছিলেন। কারন তিনি তার ছেলের জন্য তাদের মত স্টাটাসের মেয়ে খোঁজতেন। কিন্তু ঈশানের জেদের কাছে হার মেনে নিতে বাধ্য হন আমেনা খালা।

আমেনা,আসমা,, আরো গুটি কয়েক মহিলা নানা গল্প গুজব করছে। সেখানে মেয়ে পক্ষের লোকজন ও রয়েছে। মায়া একটু দূরে দাঁড়িয়ে তাদের গল্প শুনছে। তার মন এক দম এখানে টিকছে না। আতিক নিজেও কোথায় গেছে জানি না।

মেয়ে পক্ষ থেকে এক জন মহিলা বলল ঈশান আর মিতু কে কিন্তু খুব সুন্দর মানিয়েছে ভাবী।

আমেনা খালা উত্তর দেয়। হ্যাঁ যা বলেছেন আপনি,,, আর গহনায় ভরিয়ে দিয়েছি আমরা তার জন্য আরো সুন্দর লাগছে মায়া কে।

আর এক জন মহিলা বললেন কিন্তু মেয়ের বাসা থেকে তো কম কিছু যাচ্ছে না বলেন ভাবী। আপনাদের ঘর ফার্নিচারে ভরে দেওয়া হচ্ছে। ছেলে কে আবার কার দেওয়া হচ্ছে।

আসমা বেগম বললেন হ্যাঁ কিন্তু আমরা তো যৌতুক নিচ্ছি না। বিনা যৌতুকে মিতু কে নিয়ে যাচ্ছি।

আসমা বেগমের কথা কেড়ে নিয়ে আমেনা বললেন হ্যাঁ আর ছেলে আমার ইন্জিনিয়ার,, দেখতেও মাসাআল্লাহ। আর মেয়ের বাসা থেকে যা দিচ্ছে তা তো আমরা চাইনি মেয়েকে সখ করে তারা দিচ্ছে। এবং এখন থেকে তো মেয়ের সব দায়িত্ব আমারা পালন করবো মেয়ের পরিবারের সব দায় ভার শেষ।

মায়া এত ক্ষন তাদের কথা চুপ চাপ শুনছিল। কিন্তু শেষের কথা শুনে সে আর চুপ থাকলো না। তাদের কাছে এগিয়ে গেল এবং বলল। এখন আমি কিছু কথা বলবো তা একটু নিরব হয়ে শুনুন তাঁর পর আপনারা কথা বলবেন।

মায়া বলতে আরম্ভ করলো,, আপনি কি বললেন খালা?? যে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিলেই সব দায় ভার শেষ হয়ে যায়???
আসলেই কি হয়ে যায়?? নাকি আরো বেড়ে যায়???

আসমা বেগম কিছু টা গরম মেজাজ নিয়ে বলল কি বোঝাতে চাচ্ছো তুমি???

যদি দায় ভার শেষ হয়ে যায় তাহলে এই ফার্নিচার ছেলে কে গাড়ি উপহার কেন দিতে হচ্ছে। অবশ্য এসব কে উপহার বলে না। এগুলো হলো ডিজিটাল যৌতুকের স্টাইল। মেয়ে কে যৌতুক ছাড়া বিয়ে দিচ্ছেন। আবার বলছেন সখ করে মেয়ের বাবা যা দিবেন যা নিতে রাজি!!!

অবশ্য এই দোষ টা না কারোর নয় এই দোষ টা হলো আমাদের লোভী সমাজের। বিয়ে হওয়ার সাথে সাথে কিছু প্রতিবেশী আছে যারা গিয়ে মেয়েকে জিজ্ঞেস করে বাবার বাড়ি থেকে কি কি দেওয়া হলো??? ছেলে এত ভালো জব করে তাকে গাড়ি দেওয়া হলো না কেন??. এটা তো তার প্রাপ্য।

কেন মেয়ের বাসা থেকে এসব দিতে হবে। তাদের কলিজা টা কে আপনাদের হাতে তুলে দিচ্ছে তার পর ও জিজ্ঞেস করেন কি কি দিলো মেয়ের বাসা থেকে। আপনাদের তো আবার কমন কথা আছে যে মেয়ের সুখের জন্য এত টুকু বাবা মা করতে পারবে না???

আচ্ছা আপনারা ছেলেদের কষ্ট করে মানুষ করেন আবার পড়া শুনা শিখান। আর এক জন মেয়ে কে কষ্ট করতে হয় না বড় করতে??

আপনারা নিজেও এক জন মেয়ে আপনারা কি জানেন না?? এক জন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে কে বিয়ে দিতে বাবা মায়ের কত কষ্ট করে করতে হয়। এই যে বিয়ের জন্য এত আয়োজন করা হয়েছে। আপনারা তো খেয়ে দেয়ে যে যার মতো চলে যাবেন। কিন্তু এক বার খোঁজ নিয়ে দেখবেন মেয়ে কে বিয়ে দিতে আগে পিছে তিনি কত ঋন করে বসেছেন।

ধনী কিংবা গরীব কেন বিয়েতে এত রেওয়াজ রীতি??? আপনারা তো ফ্রি ফ্রি এক জন মেয়ে পাচ্ছেন সারা জীবনের জন্য। এর বেশী কি চান।

আর প্রতি ঈদের উপহার দেওয়া নেওয়ার যে রীতি চালু হয়েছে তা বাদিই দিলাম। খুঁটিনাটি জিনিস গুলোর কথা তো ধরাই রইলো।

ছেলে ভালো জব করে বলে তাহলে সে কি পারবে না নিজের সামর্থ্য দিয়ে গাড়ি কিনতে। আর ফার্নিচার কি আপনাদের ঘরে নেই??

যে বউয়ের বাসা থেকে ফার্নিচার দিতে হবে সেগুলো নিতে হবে???

আসলে আমাদের সমাজ অন্য মানুষের মাথার বেল ভেঙ্গে খেতে ভালোবাসে। কিন্তু তারা ভুলেই যায় তাদের ঘরেও মেয়ে আছে।

বদলান এই রেওয়াজ রীতি। বিয়ে টা কে সহজ করুন। মেয়ের বাবার উপর একটু রহম করুন।

এত ক্ষন চুপচাপ মায়ার কথা শুনছিল মায়া। বিয়ে বাড়ীটা নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। সবাই মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মিতুর বাবার চোখে পানি। আতিক নিজেও মায়ার কথায় শকড ব
হয়ে গেছে। কিন্তু আমেনা আর আসমা রাগে ফুঁসছেন।

মিতু আর ঈশান নিজেও স্তব্ধ হয়ে গেছে। ঈশান তখন বলতে শুরু করে,,,,___

চলবে____

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন 🙂🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here