#অবহেলার সংসার 🏘️,পর্ব__5
#লেখিকা__(মায়া)
মায়ার চুল এমনিই উঠে আসছে। মায়ার নিজের চুল হাতে নিয়ে তাকিয়ে আছে।
মায়ার আর ইচ্ছে করছে না এখন কাঁদতে।
বড় বড় কয়েক টা শ্বাস নিয়ে মায়া চুল আর আঁচড়ালো না। এমনিই খোপা রেখে দিল।
মায়া বাবার বাড়িতে চলে এসেছে,,, দরজার সামনে অনেক ক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে আছে,,, দরজা তে করাঘাত করার কেন জানি সাহস পাচ্ছে না সে। বুকের ভেতর টা ধুক ধুক ধুক করছে। এত দিন পর নিজের মা বাবার মুখ দেখবে সে। মনের ভিতর এক অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে।
দুটানা ভেঙ্গে দরজা করাঘাত করলো মায়া।
কিছু ক্ষন পর দরজা খুলে দেওয়া হলো। সামনে মায়ার বোন ইয়া দাঁড়িয়ে আছে। মায়া দেখেই এক লাফে মায়া কে জরিয়ে ধরলো আপু তুই আসছিস????
মায়া পরম আদরে ইয়া জরিয়ে ধরলো। মায়া কে ছেড়ে দিয়ে জোরে জোরে মা কে ডাকতে লাগল। মা ও মা দেখ কে এসেছে???
মা!!!!
মায়ার মা রুমি বাহিরে এসে দেখে মায়া এসেছে। রুমি থমকে দাঁড়িয়ে রইল। মায়া দৌড়ে গিয়ে মাকে জরিয়ে ধরলো। মায়ার চোখে পানি। রুমির চোখেও পানিতে ভরে উঠেছে। মায়ার কপালে আলতো করে চুমু দিল রুমি।
কেমন আছিস মা!!!
আমি এক দম ভালো আছি মা। তোমাদের ছাড়া অনেক ভালো আছি। শেষের কথায় মায়ার স্পষ্ট অভিমান লুকিয়ে আছে।
তোমার ও তো খুব ভালো আছো জানি আমি।
ইয়া বলল আমরা এক দম ভালো নেই তোকে ছাড়া আপু। তুই তো ভুলেই গেছিস আমাদের।
তোদের ভুলে যাবো কি বলিস এসব। তোদের ভুলে যাওয়ার আগে আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে।
থাক আর বলতে হবে না। তার জন্যই তো এক বছর পর আসলি আমাদের সাথে দেখা করতে।
কি শুরু করলি ইয়া মেয়ে টাকে আগে ফ্রেশ হতে দে। যাহ আগে ফ্রেশ হয়ে নে। তার পর অনেক কথা হবে। আমি আজ তোর পছন্দের রান্না করবো।
সত্যি মা??? কত দিন পেট ভরে খায়নি জানো। আচ্ছা আচ্ছা। এখন নিজের ঘরে যাহ।
মায়া নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো। অবশ্য এখন এটা তার ঘর নয়। এখন এটা ইয়ার ঘর!!
ঘরের ভিতর প্রবেশ করতেই যেন এক রকম শান্তি লাগা কাজ করলো মায়ার।
আহ্ এই ঘরে না শুলে আমার ঘুমিই আসতো না। অন্য কোথাও ঘুম হয় না বলে কোথাও বেড়াতে গেলে সেইদিনই চলে আসতো।
আর আজ কত দিন কেটে গেছে এই ঘরে ঘুমাই না। মায়া কি ক্ষন ঘর টা ঘুরে ঘুরে দেখলো। সব আগের মতই আছে। শুধু আমিই নেই।
ইয়া পিছন থেকে বলে উঠে। কি এত দেখছিস??? ঘর টা আগের মতই রেখেছি যেই রকম তুই পছন্দ করিস!!! ।
মায়া একটা মুচকি হাসি দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিল। ইয়া দৌড়ে এসে মায়া জরিয়ে ধরলো।
এখন যাহ আগে ফ্রেশ হয়ে আয়। তার পর অনেক গল্প করবো তোর সাথে।
রাত 8টা বাজে,,, এখনো আব্বু কে দেখলাম না। আব্বু একটা কাজে নাকি সকালে বেরিয়ে গেছে। বলে গেছে রাত হবে ফিরতে।
মা রান্না শেষ করছে। আজ নিজেকে মায়ার বড্ড হালকা লাগছে। ঠিক আগের দিনের মত জিবন টা কে লাগছে। ইয়ার সাথে খুনসুটি করছে মায়া।।।
হুট করে সে উঠে বসল চল ইয়া আবার আজ মা কে রান্নার টাইমে জ্বালাবো। নাহ বাবা আমি যাবো না লাস্ট বারের কথা কি তোর মনে নেই??? মা খুন্তি দিয়ে মেরেছিল।
মায়া হো হো করে হাসতে লাগলো। তুই হাসছিস?? হাসবিই তো তোকে তো আর মা মারেনি।
আরে মারবে না আয় আমার সাথে!! নাহ যাবো না। তাহলে তুই থাক আমি একাই গেলাম।
মায়া রান্না ঘরের দরজায় উকি দিল। ঘামে ভেজা মুখ। রান্নার কাজে মা ব্যাস্ত মা।
মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল মা নিমিষেই চোখ জোড়া পানিতে ভিজে উঠলো মায়ার। ফিসফিস করে বলল আই এম সরি মা। তোমার অবাধ্য মেয়েটা কোন দিন তোমার কথা শুনেনি। তাও তুমি কোন দিন আমায় দূরে সরে দাওনি। হাজার ভুল করার পরো কখনো তোমাকে সরি বলা হয়নি। মায়া আর দাঁড়াতে পারলো না।
সোজা ওয়াশরুমে চলে গেল। কেন জানি আবার কাশি টা বেরেছে। হয়তো ডাক্তারের দেওয়া মেডিসিন গুলো না নেওয়ার কারণে।
মুখে হাত দিয়ে কাশছে মায়া হাত টা সামনে ধরতেই দেখলো রক্ত। তারাতারি করে পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিল। বেসিনে তাকালো নাকের নীচে ও রক্ত। মায়া চোখ টা বন্ধ করে নিল। ওয়াশরুমের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে দিয়ে নিচে বসে পরলো।
কলিজা টা ভিষন ভাবে পুরছে। এশার আজানের ধ্বনি কানে আসলো মায়া উঠে দাঁড়ালো। নামাজ পড়ার উদ্দেশ্য ওজু করে নিল।
নামাজ শেষে মুনাজাতে হাত তুললো। অটোমেটিক চোখ দিয়ে পানি টপ টপ করে ঝরতে লাগল।
আত্মহত্যা পাপ বলে কখনো এই মাথা তেই আনিনি,,, লাখ লাখ শুকরিয়া আমার রব,, আমাকে এই রোগ টা দেওয়ার জন্য। আমার আর সহ্য হয় না এই দুনিয়ার। আমার পরিবারের আতিকের পরিবারের সবাইকে তুমি নেক হায়াত দারাস করো। আতিক কে তুমি সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করো। ওকে ভালো রেখো। শয়তানের ধোকা থেকে ওকে বাঁচিয়ে রেখো। আমিন,,,
ফাইজুল ইসলাম মায়ার বাবা বাসায় ফিরেছেন কিন্তু এখনো জানে না মায়া এসেছে।
উনি ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে আসলেন।
খাবার টেবিলে তিন জন সদস্য দেখে ফাইজুল ইসলাম মায়ার দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে রইল। তার চোখের কোনে স্পষ্ট পানি।
মায়া উঠে বাবার সামনে দাঁড়ালো। কেমন আছো আব্বু???
ফাইজুল ইসলাম অভিমানী গলায় বলল আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কখন আসলে???
ইয়া বলে উঠে আপু তো বিকেলে এসেছে।
ভালোই আছো???
মায়া ছোট করে হুমম বলল।।।
সব ঠিক আছে তো শশুর বাড়িতে??? হ্যাঁ সব ঠিক আছে। এত দিন পর কি মনে করে আসলে???
তোমাদের তো আমার কথা মনে পরে না আমার বিয়ের পর তো এক বারো যাওনি আমায় দেখতে।
আমি তো বলেই ছিলাম তোমার শশুর বাড়িতে কখনো আমারা যাবো না।
মায়ার চোখে পানি,,, সে পানি টা মুছে বলল তা বুঝলাম মাসে ও তো একটা ফোন ও করো না কেউ??? যতক্ষণ না আমি ফোন দেয়।
ফাইজুল ইসলাম আর কোন উত্তর দিল না।
খাবার টেবিলে বসে পরলো। মায়া কে ও বসতে বলল। মায়া বসলো না,, শুধু কান্না ভেজা কন্ঠে বলল আমি মারা গেলেও তোমারা যেন ঐ বাড়িতে যেও না।
মায়া আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না সেখানে সোজা ঘরে চলে গেল।
মনে মনে বলছে। তোমারা সবাই আমার জন্য কাঁদবে। খুব করে কাঁদবে। এই অবহেলা অভিমান আর সে দিন থাকবে না। আমি হয়তো সেই দিন কিছুই দেখতে পারবো না
মায়া জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। পিছন থেকে ফাইজুল ইসলামের কন্ঠ পাওয়া গেল। সব সময় রাগ টাই তো দেখাতে পারো খাবারের উপর। তা ছাড়া তো কিছু পারো না।
মায়া ঘুরে তাকালো না। হ্যাঁ সেটাই পারি। আমি তো কেউ নয় তোমাদের।
চল আমার সাথে খেতে। শুনলাম তোমার মা সব রান্না তোমার জন্য করেছে। এখন তুমি না খেতে গেলে কেমন হবে??
খাবার টেবিল টা অনেক দিন পর পূর্ণ হয়েছে।
ফাইজুল ইসলাম মায়া কে তুলে খাওয়াচ্ছে।
রুমি তাকিয়ে দেখছে সব। ইয়া খুনসুটি করে বলছে বড় মেয়ে কে আমাকে ভুলেই গেছে।
আমাকেও তুলে খাওয়াও।
খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে কিছু ক্ষণ। সবার সাথে বসে গল্প গুজব করলো মায়া।
ঘুমামাতে যেতে বলল ফাইজুল ইসলাম।
মায়া ছোট বাচ্চার মত বায়না ধরে বলল। মা আজ কি তুমি আমার সাথে ঘুমাবে। মায়ার দৃষ্টিতে রয়েছে অসহায়ের ছাপ।
মায়া রুমির কলে মাথা রেখে শুয়ে আছে।
মায়া!!! হুমমম কিছু বলবে মা???
তুই ভালো আছিস তো???
মায়া একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল আমি এসেছি সেই কখন আর তুমি কেবল জিজ্ঞেস করছো কেমন আছি???
আগে কেমন ছিলাম জানিনা কিন্তু এখন অনেক ভালো আছি তোমাদের সাথে।
তোর গালে আবছা দাগ কিসের???
মায়া এবার শুকনো ঢুক গিললো হায় আল্লাহ এখন আমি কি বলবো?? মা কে বুঝে গেছে???
চলবে____,,,,,???