টাইম_ট্রাভেল,পর্ব-০২

#টাইম_ট্রাভেল,পর্ব-০২
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

আমার পাশেই শুয়ে থাকা ইলিয়ানার দিকে ভয়ে ভয়ে তাকাতে লাগলাম…..একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিলো নিজের ভেতর।
ও আমার নিজের মেয়ে।যার কিনা বর্তমানে পৃথিবীতে কোনো অস্তিত্ব নেই,অথচ সে আমার সামনেই আছে।মেয়েটার মাথায় হাত দিয়ে একটু আদর করে দিলাম,মনের অজান্তেই চোখ থেকে দুফোঁটা জল ওর গালের ওপরে গিয়ে পড়লো।অমনি ইলিয়ানার ঘুম ভেঙে যায়।

—-বাবা,তুমি এখনো ঘুমাও নি?

—–না,মা।ঘুম আসছে না….

—-একটা কথা বলি বাবা….

—-হুমমম

—-তুমি মাকে মারবে না তো?মায়ের কিছু হয়ে গেলে আমার কি হবে বাবা।আমায় আদর কে করবে…..??

ইলিয়ানার প্রশ্নের কি উত্তর দেবো আমি নিজেও বুঝতে পারছি না।তাই চুপ করে রইলাম।ততক্ষণে ইলিয়ানা আমার কোলের ওপর মাথা রেখে শুয়ে পড়েছে।হঠাৎ আমার মাথায় একটা বুদ্ধি খেললে গেলো।ইলিয়ানা তো ভবিষ্যত থেকে এসেছে।আমি ওর মাকে খুন করেছি ও বারবার এটাই বলছিলো।কিন্তু তার আগে তানিস্কা আর আমার ভেতরে কি এমন ঘটবে এটা তো লিয়ানার জানার কথা।কায়দা করে ওর মুখ থেকে সেটা জানতে হবে আমায়।তারপরে সেই অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ ফেলতে হবে।

—-আচ্ছা মা,একটা কথার উত্তর দাও তো?তোমার আর আবার মায়ের সম্পর্ক ঠিক কেমন?আমাদের ভেতরে কি কখনো ঝগড়া হয়?

—-আগে তো হতো না,এখন রোজ হয়।তুমি আর মাকে আগের মতো ভালোবাসো না..!তুমি আমাকেও ভালোবাসো না!

—ঝগড়া হয়,কি নিয়ে ঝগড়া হয় আমাদের?তুমি কি কিছু জানো এই ব্যপারে!

—-না,আমি তো এতোকিছু জানি না।তবে একটা লোক আসতো প্রায় আমাদের বাসায়।তারপর মা আমায়…..

—মা কি তোমায়??

—-মা আমায় পড়তে বলে ঐ লোকটার সাথে তার রুমের ভেতর চলে যেতো।তারপর দরজা বন্ধ করে দিতো।আমি ডাকলেও দরজা খুলতো না….জানো তো বাবা তখন মায়ের ওপর খুব রাগ হতো আমার।

—-তুমি আগে আমায় কিছু বলেছো এই ব্যপারে?

—-না।

—-কেনো?

—-মা বারণ করতো,আমি বলতে চাইলে ভয় দেখাতো আমায়।
তারপর কী হয়েছিলো জানো বাবা?একদিন ঐ লোকটা আবার বাড়িতে আসে।তখন মা বাড়িতে ছিলো না।আমি একা ছিলাম।লোকটা আমার মুখ চেপে ধরে মায়ের ঘরে নিয়ে যায়।তারপর আমার গায়ের সব জামাকাপড় খুলে নেয়।তারপর নিজের গায়ের জামাকাপড় খুলে ফেললো।আমি চিৎকার করে তোমায় আর মাকে ডাকছিলাম।এরপর লোকটা একটা কাপড় দিয়ে আমার মুখটা বন্ধ করে দেয়….তারপর…..

—-থাক মা,আর কিছু বলতে হবে না তোমায়।এবার চুপ হয়ে যাও তুমি….

আমার আর কিছুই বুঝতে বাকি রইলো না।সেই লোকটার সাথে আমার স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্ক থাকবে এমন নয় সে কিনা আমার ফুলের মতো নিষ্পাপ মেয়েকেও ধর্ষণ করবে।হয়তো সেই জের ধরেই তানিস্কার সাথে ঝামেলা হবে আমার।নাহ,এই মূহুর্তে ইলিয়ানাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস হচ্ছে না আমার।বাবা হয়ে নিজের মেয়ের মুখে তার ধর্ষণের বিবরণ কিকরে শুনি।যদিও লিয়ানাকে বাস্তবে আমি এখনো জন্ম দেয়নি।কিন্তু এটা তো ঠিক ও আমারই মেয়ে।বর্তমান পৃথিবীতে আর কয়েকদিন পরেই হয়তো জন্ম হবে ওর।তারপরে ও ধীরে ধীরে বড়ো হতে থাকবে।এরপর ওর বর্ননা করা সেই বিভীষিকাময় দিনগুলো আসতে থাকবে পর্যায়ক্রমে।কিন্তু আমি যে সেটা হতে দেবো না।যেকরেই হোক এসব আটকাতেই হবে আমায়।সেই ব্যক্তি যদি বেঁচেই না থাকে,তাকে আমি এক্ষুনি শেষ করে দেই না থাকবে সে,না আমার স্ত্রীর সাথে কেউ অবৈধ সম্পর্ক করতে পারবে,না আমার মেয়েকে তার হাতে নিজের সম্ভ্রম হারাতে হবে।এই মূহুর্তে সেই ব্যক্তিকে আইডিনটিফাই করাটা সবথেকে বেশি জরুরী আমার জন্য।কিন্তু সমস্যা হলো একটাই,লিয়ানা কিছুতেই সেই ব্যক্তির চেহারা মনে করতে পারছে না।আমি যতোবারই জিজ্ঞেস করছি সবকিছু নাকি ঝপসা হয়ে আসে ওর কাছে।অনেক চেষ্টা করেও সেই ব্যক্তির কোনো ক্লু ও দিতে পারলো না আমায়।আর আমিও ওকে আর বেশী চাপ দিলাম না।এমনিতেই ছোটো মানুষ,শুধু শুধু এতো প্রেসার দিয়ে কি লাভ?
কিন্তু যাই হোক না কেনো,ঐ লোককে খুঁজে বার করবোই আমি,তারপর এমন কাজ করবো যাতে সে ভবিষ্যতে আমার কোনোধরনের সর্বনাশ করার সুযোগ না পায়।এখন বসে বসে উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই আমার কাছে।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো আমার।স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েই দেখি আমার ছোটো ভাইয় অনুভবের ফোনকল।ফোনটা রিসিভ করলাম।

—কিরে অনুভব,এতো রাতে মনে করলি কি দেখে?

—কাল আমি তোর বাসায় আসছি ব্রো।শুধু আমি না আব্বুও আসবে আমার সাথে।

—আচ্ছা।আয় তাহলে।আর হ্যাঁ,আম্মা কেমন আছে?

—আম্মা ভালোই আছে।শোন কালকে তোর বাসায় আসছি আমার ফেভারিট মাটন বিরিয়ানি যেনো এসেই রেডি পাই।নয়তো আমি মাথা ফাটাবো তোর!

—বড্ড পাকা হয়ে গেছিস,বড়ো ভাইয়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় শেখাতে হবে দেখছি?

—-আচ্ছা শেখাস।আমায় মারবি তাই তো।মার।তার পরিবর্তে দুবেলা তোর হাতের মাটন বিরিয়ানি খাওয়ালেই হবে।

এই বলে অনুভব হাসতে হাসতে ফোনটা কেটে দিলো।সত্যিই পাগল ছেলে একটা।আমায় ছাড়া কিছু বোঝে না বেচারা।এখানে এলে একেবারে আঠার মতো লেগে থাকে।কালকে আসছে বাসায়, তার মানে কয়েকটা মাথা চিবিয়ে শেষ করে দেবে আমার।সেসব না হয় ঠিক আছে।কিন্তু ইলিয়ানা.. .?লিয়ানার বিষয়ে বাবা আর ভাইকে কি বলবো আমি।এটা বলবো ও আমার মেয়ে….?যে কিনা ভবিষ্যত থেকে অতীতে ফিরে এসেছে।এটা বললে নিশ্চিত একঘন্টার ভেতরে নিজেকে কোনো মেন্টাল হাসপাতাল বা অ্যাসাইলামে দেখতে পাবো এইটুকু নিশ্চিত।যেকরেই হোক ওদের কিছু একটা বলে পুরো বিষয়টা কাটিয়ে নিতে হবে।
_________

পরেরদিন সকালবেলা অনুভব আর বাবা আমার বাসায় এসে উপস্থিত হলো।আমি ওদের নিয়ে বাসায় ঢুকছি তখন দেখতে পাই ইলিয়ানা রুমের জানালা দিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।ওকে কতোবার বলেছি লুকিয়ে থাকতে।এখনই যদি বাবা ভাইয়ের সামনে ধরা পড়ে যায় ম্যানেজ করা খুব কঠিন হয়ে যাবে।ওদের ড্রয়িংরুমে বসিয়ে তাড়াতাড়ি নিজের রুমের দিকে গেলাম।ভেতরে ঢুকেই দেখি ইলিয়ানা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে।রীতিমত ও ভয়ে কাঁপছে।

—একি,মা।তুমি কান্না করছো কেনো,কি হয়েছে?

—- বাবা, আমার মনে পড়েছে।ঐ লোকটার চেহারা মনে পড়েছে আমার।(ইলিয়ানা কাঁদতে কাঁদতে আমায় বললো)

—মনে পড়েছে,বলো কে সে…. তুমি জানো আমি তোমার মুখ থেকে এটা শোনার জন্য সেই রাত থেকে অপেক্ষা করে আছি..

—-ঐ লোকটা আর কেউ নয়।অনুভব চাচ্চু।ওটা অনুভব চাচ্চু ছিলো বাবা।যে আমাদের বাসায় এসে মায়ের সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করতো।আর আমাকে ব্যথাও দিয়েছিলো।বাবা এই পঁচা চাচ্চুটা আবার কেনো এসেছে আমাদের বাসায়…

লিয়ানার মুখের কথা শুনে এক ঝটকায় যেনো ওর থেকে দূরে সরে গেলাম আমি।এটা কি শুনলাম আমি….?আমার ভাইয়ের সাথে কিনা আমার স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্ক…..ছি! ছি! ছি!..এমনকি সে আমার বাচ্চা মেয়েটাকেও….হে খোদা!এবার কি করবো আমি,কারদিকে যাবো….????

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here