টাইম ট্রাভেল,পর্ব-০১

টাইম ট্রাভেল,পর্ব-০১
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ

–বাবা,প্লিজ মাকে খুন করো না।মা খুব ভালোবাসে তোমায়!!!!

একটা আট-দশ বছরের মেয়ের মুখ থেকে কথাটা শুনে চমকে উঠলাম।আমি এগিয়ে গিয়ে মেয়েটাকে বলি।

—-বাবু,তুমি কি আমাকে কথাটা বললে?

—হ্যাঁ,বাবা।তোমাকেই বলছি।

ভালোই বুঝতে পেরেছি মেয়েটার মাথায় কোনো সমস্যা আছে।নয়তো আমার ভেতরে নিজের বাবার মতো কিছু খুঁজে পেয়েছে তাই এমনটা করছে।

—-আমি তোমার বাবা কেনো হতে যাবো মামনি।আচ্ছা তোমার বাবা কি করে?

—–চাকরি করে!

—-আর দেখো আমি এই ভার্সিটিতে পড়াশুনা করি।তাহলে আমি তোমার বাবা হলাম কিকরে?

—না,তুমিই আবার বাবা!আমি ঠিক চিনতে পেরেছি তোমায়!প্লিজ বাবা মাকে খুন করো না।আমি মাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।(কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো)

—-আচ্ছা কাম অন,তোমার বাবার নাম কি আগে সেটা বলো?

—-অভ্র চৌধুরী।

মেয়েটার মুখ থেকে নিজের নামটা শুনে যেনো আঁতকে উঠলাম।এই মেয়ে আমার নাম জানলো কিকরে?এমনকি পদবী পর্যন্ত।ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি তিন বছর।সেই অনুযায়ী আমার বয়স ২১।এই বয়সে এসে কারোর একটা আট দশ বছরের ধারী মেয়ে থাকা কখনো সম্ভব….!!??আর সবথেকে বড়ো কথা আমার মেয়ে অথচ আমিই জানি না।এটা হয় কখনো।

—-আচ্ছা তোমার দাদা-দাদীর নাম কি মামনী,সেটা জানো তো?

—-কেনো জানবো না,আমার দাদা আরমান চৌধুরী আর দাদী শায়লা বেগম।কি ঠিক বলেছি তো বাবা?

মেয়েটার কথা শুনে আর এক প্রস্থ অবাক হলাম।এ আবার বাবা মায়ের নাম পর্যন্ত জানে।কি অদ্ভুত ব্যপার।আচ্ছা কোথাও এমনটা নয় তো কেউ একে শিখিয়ে পড়িয়ে পাঠিয়েছে আমার কাছে।কিন্তু এটা করে কার কি লাভ।মেয়েটার চোখের জল দেখে একবারেও মনে হচ্ছে না সেটা মিথ্যে।তবে কি এমন লুকিয়ে আছে এর ভেতরে।মেয়েটা নাছোড়বান্দা আমায় ছেড়ে কোথাও যাবে না।অবশেষে বাধ্য হয়ে তাকে নিজের বাসায় নিয়ে আসলাম।কিছু খেতে দিলাম তাকে।মনে হচ্ছে অনেকদিন ধরে খায়নি মেয়েটা।একটা অদ্ভুত টান কাজ করছে মেয়েটার প্রতি আমার।ঠিক যেমনটা কাছের কোনো মানুষের জন্য হয়।খাওয়া দাওয়া শেষে রাতে ঘুমানোর পালা।এবার বায়না ধরলো আমাকে ছাড়া কোথাও ঘুমাবে না।মেয়েটা আমাকে যতোই বাবা বলুক না কেনো।ওর আর আমার বয়সের ব্যবধান মোটেও সেরকম নয়।তাই মেয়েটাকে নিয়ে এক বিছানায় শুতে ভীষণ ইতস্ত বোধ হচ্ছিল।
একটু পরে মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়ে।ঘরের লাইটটা অফ করতে যাবো হঠাৎ একটা জিনিস চোখে পড়লো আমার।মেয়েটার প্যান্টের পকেট থেকে একটা কাগজের মতো কিছু দেখা হচ্ছে।মনে হচ্ছে কোনো পত্রিকার কাগজ।কাজটা বের করে এনে তারপর খুলে দেখতে লাগলাম।

যা ভেবেছিলাম তাই,একটা পত্রিকার কাগজ।কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো কাগজের ওপরে ২০৩২ সাল উল্লেখ করা।তার মানে খবরের কাগজটা ৩২ সাল অর্থাৎ আজ থেকে দশ বছর পরের।এটা দেখে পুরোপুরি মাথা ঘুরে গেলো আমার।বত্রিশ সালের খবরের কাগজ এখন এলো কিকরে।খবরের কাগজে চোখ বোলাতেই যা দেখতে পাই নিজেকে আর স্থির রাখতে পারলাম না আমি।ভয় আর আতংকে হাত পা কাঁপতে লাগলো আমার।

—এ খোদা,এতো আমার ছবি।যেখানে স্পষ্ট লেখা আছ আমি আমার স্ত্রীকে খুন করেছি।আর সেই স্ত্রী আর কেউ নয় আমার বর্তমান গার্লফ্রেন্ড তানিস্কা।এমনকি আট – দশ বছরের একটা মেয়েও আছে আমাদের।মেয়েটার নাম ইলিয়ানা।।মেয়েটার ছবির সাথে এই মেয়েটার চেহারা হুবহু মিলে যাচ্ছে…..

আর কিছু বুঝতে বাকি রইল না।তার মানে ছোট্ট মেয়েটা যা বলেছে সব অক্ষরে অক্ষরে সত্যি।ও সত্যিই আমার মেয়ে।কোনোভাবে ভবিষ্যত থেকে অতীতে চলে এসেছে নিজের মাকে বাঁচাতে!!
যাতে এমন কোনো দূর্ঘটনা না ঘটে।কিন্তু তানিস্কা অর্থাৎ আমার স্ত্রীকে কেনো খুন করতে কেনো যাবো আমি…দশ বছর পরে কি এমন ঘটবে আমাদের ভেতরে?আর এই মেয়েটা ভবিষ্যত থেকে বর্তমানে এলোই বা কিকরে??

এটা ভাবতেই সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে যেতে লাগলো আমার।নিজের শ্বাসপ্রশ্বাস ক্রমশ দ্রুততর হতে থাকে।ভয়ে ভয়ে মেয়েটার দিকে তাকাতে লাগলাম…..

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here