#তুমি_বলে_ডেকো,০৫ শেষ
সবুজ আহম্মদ মুরসালিন
রাসেল তার ঘরে শুয়ে আছে। জ্বর এখনো কমেনি। তবে গতকালের থেকে অনেকটা কম। কিছুটা ভালো লাগছে তার এখন। সে হঠাৎ আনিকাকে তার ঘরে ঢুকতে দেখে চলকে উঠলো। সে আজ সেটাকে তেমন গুরুত্ব দিলো না। আগেও জ্বরের মধ্যে আনিকাকে দেখেছে সে। তার সাথে কথা বলেছে। এবার সে বোকা হতে চায় না। কিছুতেই না।
আনিকা তার দিকে হেঁটে এলো। রাসেল খাটে শুয়ে আছে। কল্পনা হলেও তার বুক ধুপধুপ করছে। কিছুটা কাছে আসতেই সে দেখলো আজ আনিকা শাড়ি পরে এসেছে। নীল রঙের শাড়ি। শাড়িতে ভীষণ সুন্দর লাগছে। নীল রঙে আনিকা সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে। সে যদি আনিকাকে তার জীবনে পায় তাহলে সে সারাজীবন শুধু নীল রঙের জামাকাপড় কিনবে। অন্য কোনো রঙ না। আনিকা মানেই নীল।
আনিকা হেঁটে এসে রাসেলের খাটের একপাশে বসল। তবে কোনো কথা বলল না। রাসেল আজকে তার সাথে কোনো কথা বলবে না ভেবেছে। কিন্তু সে বেশিক্ষণ কথা না বলে থাকতে পারলো না।
সে বলল,
— আজ হঠাৎ নীল শাড়ি পরে আসলেন?
— আপনার পছন্দ বলে।
— আমার সারাবছর জ্বর থাকলেই ভালো হতো।
— কেনো?
— আপনাকে নীল শাড়িতে দেখতে পারবো। এভাবে আমার কল্পনাতে আসতেন।
— শুনুন!
একটা কথা বলতেই আজ নীল শাড়ি পরে এসেছি।
— হ্যাঁ, বলুন।
— আমি অনেক ভেবেছি।
— কী কী ভেবেছেন?
— আমার মনে হয়, আমি আপনাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি!
— আমার কপালে একটু হাত দিয়ে দেখুনতো জ্বর কতটা বেড়েছে?
— হাত দিয়ে দেখা লাগবে না। আপনার জ্বর নেই।
— মিথ্যা বলছেন! আমি জানি, আমি জ্বরের ঘোরে স্বপ্ন দেখছি। অথবা আপনাকে কল্পনা করছি। এবার আমি বোকা হবো না। কিছুতেই না।
রাসেলের কথা শুনে আনিকার মেজাজ খারাপ হলো। সে রাসেলের হাতে জোরে একটা চিমটি কাটলো।
রাসেল ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠে বলল,
— এতো জোরে কেউ চিমটি কাটে? এটা কি সত্যিই বাস্তব? আপনি সত্যি সত্যি এখানে?
আনিকা বিরক্ত হয়ে বলল,
— তাহলে কি মিথ্যে?
— জানিনা।
— আচ্ছা, জানা লাগবে না।
— আপনাকে তুমিতে দেখবো। তুমি করে বলি।
আনিকা হাসিমুখে বলল,
— আপনার ইচ্ছে!
— আমার জ্বর কেটে গেলে, আপনাকে তুমি করে বললেই আপনি রেগে যাবেন না-তো আগের মত?
আনিকা এবার শব্দ করে হেসে দিলো। হাসি মাখা কন্ঠে বলল,
— না, রাগবো না!
— সত্যি? আচ্ছা প্লিজ বলেন না, এটা কি আমার হ্যালোসিনেশন?
— আপনিও না!
— এই যে এখনো আপনি করে বলছেন! তাহলে এটা সত্যিই আমার হ্যালোসিনেশন।
— আচ্ছা, তুমি, তুমি, তুমি! এবার হয়েছে!
— আরো কয়েকবার বলেন প্লিজ। ভীষণ ভালো লাগছে শুনতে।
— তুমি, তুমি, তুমি!
— না এখনো হ্যালোসিনেশনই মনে হচ্ছে আমার।
আনিকা প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে এবার বলল,
— আমি তোমাকে ভালোবাসি!
রাসেলের হঠাৎ কি হলো সে জানেনা। তার সম্পূর্ণ শরীর কেঁপে উঠলো। সে তার নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এটা কি সত্যি? সে উঠে আনিকাকে তাৎক্ষণিক জড়িয়ে ধরে বলল,
— এটা কি সত্যি? আপনি কি সত্যি আমাকে ভালোবাসেন?
আনিকা এবার মহা বিরক্ত। রাসেলের উপর রাগ হচ্ছে। রাসেলের মুখে অলত করে একটা থাপ্পর দিয়ে সে বলল,
— তাহলে কি মিথ্যা? আচ্ছা আমি চলে যাচ্ছি৷
এই বলে আনিকা চলে যাওয়ার জন্য হাঁটা শুরু করতেই রাসেল আনিকার হাত ধরে টেনে নিয়ে বুকের কাছে মাথাটা রেখে বলল,
— শুনতে পাচ্ছো? আমার হৃদয় কি বলছে?
আনিকা উত্তর দিলো,
— সে বলছে, সে পাগলের মত ভালোবাসে আমায়।
সমাপ্ত!