#তুমি_বলে_ডেকো,০৪
সবুজ আহম্মদ মুরসালিন
আনিকা প্রচন্ড রাগ করে রাসেলের সাথে দীর্ঘ দিন কথা বলল না। রাসেল প্রতিদিনই কয়েকবার করে সরি বল গেছে। সে ভুল করেছে। তার বুঝতে ভুল হয়েছে। সে বিভিন্ন কথা বলে আনিকাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে। এক সময় গিয়ে আনিকার রাগ কমে আসে। সে ক্ষমা করে দেয় রাসেলকে।
আনিকার সাথে ভুল বোঝাবুঝিটা মিটে যাওয়ার পরে সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে গেলো রাসেলের। সবকিছু ঠিকঠাক চলছে। রাসেলের অফিসের ব্যস্ততা বেড়ে গেলো, সেই সাথে সময় খুব দ্রুত চলে যেতে লাগলো। সে অনিকাকে আবারো ঘুরিয়ে পেচিয়ে কয়েকবার বোঝাতে চেয়েছে যে সে তাকে ভালোবাসে। কিন্তু সে সরাসরি বলার সাহজ পেলো না। কিন্তু রাসেলের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলো। আনিকা কিছুতেই বুঝছেই চাচ্ছে না।
সেদিনের রাসেলের মেসেজের উত্তরটা আনিকা এক মাস পড়ে দিলো। তারা কথা বলছিল। হঠাৎ আনিকা রাসেলকে বলল,
— স্বপ্নে কাউকে ছুঁতে নেই। কারণ সেটা বাস্তব না। আর যেটা বাস্তব না যার অস্তিত্ব নেই। তাই সেটা ভেবে সময় নষ্ট করা উচিত না আমাদের।
মেসেজটা রাসেল পড়ল। তার ইচ্ছে হলো আনিকার সাথে এটা নিয়ে ঝগড়া করতে। কিন্তু কয়দিন আগেই আনিকার সাথে সবকিছু স্বাভাবিক হয়েছে। তাই সে চায়নি আনিকা আবার তাকে ভুল বুঝুক।
আনিকা আগের চেয়ে অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। আরো একমাস কেটে গেলো। এখন সে নিজ থেকে রাসেলকে মেসেজ দেয়। কথা বলে। তারা হঠাৎ করে দেখা করে। রাসেল এটা ভালো লাগে। আনিকা তাকে একটু একটু পছন্দ করা শুরু করেছে। এটুকুই রাসেলের জন্য অনেক। সে এতেই খুশি।
রাসেল সেদিন আনিকার সাথে দেখা করার জন্য পার্কে বসে ছিলো দুই ঘন্টা। আনিকা বলেছিল সে আসবে। কিন্তু সে আসেনি। দুই ঘন্টা পর আনিকা মেসেজ দিয়ে জানিয়ে দিলো সে একটা কাজে আটকে গেছে। আজকে কোনো ভাবেই আসতে পারবে না। রাসেলের মন খারাপ হলো। মন খারাপ করে সে পার্কের ব্যাঞ্চে বসে রইল। কিছুক্ষণ পর আকাশ ভেঙে বৃষ্টি শুরু হলো। রাসেল কোথাও গেলো না। সে সেখানেই বসে রইল যতক্ষণ না বৃষ্টি থামল।
পরের দিন সকালে রাসেল আনিকাকে মেসেজ দিলো
— কোথায় আপনি?
— বাসায়!
— এতো দ্রুত পৌঁছে গেছেন?
— হ্যাঁ।
— এতোটা পথ এতো কম সময়ে পৌঁছে গেলেন কীভাবে?
— এতোটা পথ, মানে?
— আপনারআমার বাসা থেকে আপনার বাসাতো অনেকটা দূর। ঘন্টাখানেক সময় তো লাগবেই পৌঁছাতে।
— আপনার বাসা! মানে কি বলছেন?
— একটু আগেই না আপনি আমাদের বাসায় ছিলেন! কফি খেলাম, আড্ডা দিলাম?
— আপনি কি আবার জ্বর বাধিয়েছেন?
— না তো, তবে শরীর কিছুটা গরম।
— থার্মোমিটার আছে?
— কেনো থাকবে না। আপনিই তো গিফট করেছিলেন। সেবার যখন সুস্থ হলাম তারপর আমাদের দেখা হওয়ার দিন আপনি থার্মোমিটার উপহার দিয়ে বলেছিলেন, আবার জ্বর হলে যেনো আবোলতাবোল না ভাবি। কোনো কিছু কল্পনা না করে বসি।
— শরীরের তাপমাত্রা একটু মেপে জানান।
— ১০৪°
— আবার জ্বর বাধিয়েছেন কিভাবে?
— গতকাল আপনি এলেন না। বৃষ্টি শুরু হলো। আমিও ভিজলাম যতক্ষণ বৃষ্টি ছিলো।
— এরকম পাগলামি কেউ করে? ইচ্ছে করেই করেছেন নিশ্চয়ই? আপনি কি আসলেই পাগল?
রাসেল কোনো উত্তর দিলো না। সে চুপচাপ রইল।
— আপনার জ্বর বাধাতে ভালো লাগে?
— উঁহু!
— উঁহু কি? শুনুন, ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাবেন ঠিকমতো। খাবেন তো?
— উঁহু।
রাসেল আর কিছুই লিখলো না। তার সাথেই কেনো এমন হলো আবার? সে নিজের উপর মহাবিরক্ত। ধুর! সবকিছু আজাইরা। বেঁচে থাকতে আর ভালো লাগে না।
অনেকটা সময় পর সে আনিকাকে মেসেজ করতে গিয়েই সে চোখে অন্ধকার দেখল। অজ্ঞান হয়ে গেলো কি-না বোঝা গেলো না৷ তবে রাসেল ঘুমিয়ে গেলো গভীর ঘুমে।
চলবে…