তুমি_বলে_ডেকো,০১

#তুমি_বলে_ডেকো,০১
সবুজ আহম্মদ মুরসালিন

রুমের দরজা জানালা সব বন্ধ। বাইরে থেকে কোনো বাতাস রুমে প্রবেশ করতে পারছে না। বাইরে ঝড় হচ্ছে। বাতাসে রুমের জানালার থাই গ্লাসটা কেপে কেপে উঠছে। জানালা ভেঙে বাতাস ঢুকে পড়বে এরকম মনে হচ্ছে।

রুমের মধ্যে উদ্ভব গরম। জানালা খুলে দিলে বাইরের ঠান্ডা বাতাস এসে রুমটাকে নিমিষেই শীতল করে দিতে পারবে। কিন্তু রাসেল জানালা খুলছে না। তার ইচ্ছে করছে না। তার মন ভাল নেই। কিছুই ভালো লাগছে না। মনটা বড়ই বেপরোয়া। কখনো কথা শুনতেই চায় না।

রুমে বাতাসের একমাত্র উৎস ফ্যান। ফ্যান ঘুরছে৷ রাসেলের তবুও প্রচন্ড গরমে ঘামছে। সে কিছুক্ষণ আগেই প্রচন্ড শীতের কারণে কম্বল জড়িয়েছে গাঁ’য়ে। ৫ মিনিট না যেতেই এখন তার আবার প্রচন্ড গরম লাগছে। জ্বরটা কি কমেছে? নিজের কপাল ছুঁয়ে সে বোঝার চেষ্টা করলো।

রাসেল দুইদিন ধরে অসুস্থ। ভীষণ অসুস্থ। এই প্রচন্ড ঠান্ডা আবার কিছুক্ষণ পরেই প্রচন্ড গরম লাগছে তার। কম্বল সড়িয়ে উঠে বিছানার উঠে বসল। বাইরে তাকালো। কী ঝড়? সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দিবে এইবার। জানালা দিয়ে সে একটা আম গাছের দিকে তাকালো। এমনি গাছের একটা ডাল ভেঙে নিচে পড়তেই বিকট শব্দ হলো। তার অসহ্য লাগছে।

সে আবার শুয়ে পড়লো। এখন তার আবার শীত লাগছে। এই গরম এই শীত। তার ভালো লাগছে না। মাথা ব্যথাটাও বাড়ছে। ক্ষুধা লেগেছে। ঘরে কিছুই রান্না করা নেই। সে ব্যাচেলর মানুষ। তার বাবা-মা গ্রামে থাকে। সে এই ফ্লাটে তার অফিসের এক কলিগের সাথে শেয়ারে ভাড়া থাকে। ছোটখাটো একটা ফ্লাট। দুই রুম। দুইজনের চলে যায়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তার বন্ধু ছুটি নিয়ে গ্রামে গেছে। সে থাকলে তাকে কিছু রান্না করতে বলা যেতো।

রাসেল খাওয়া চিন্তাটা দূরে সরিয়ে দিলো। এখন খাওয়ার চিন্তা করলে তার আরো বেশি ক্ষুধা লাগছে। অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে কিছুটা নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লো। সে ঘুমিয়েছে কি-না সে জানেনা। তবে ফোন বেজে উঠলে তার ঘুম ভেঙে গেলো। সে ফোন হাতে নিয়ে তাৎক্ষণিক দেখল আনিকার মেসেজ দিয়েছে। আনিকার মেসেজ দেখে তাৎক্ষণিক মন ভাল হয়ে গেলো রাসেলের। এই কয়দিন অসুস্থতার মধ্যে আনিকার মুখ বারবার ভেসে উঠেছে তার চোখের পাতায়৷ ফোন হাতে নিয়ে লক খুলতেই দেখলো আনিকা লিখেছে,

— কেমন আছেন?

রাসের উত্তর দিলো,
ভালো নেই।

— কেনো? কি হয়েছে আপনার?

— শরীর খুব খারাপ তবে আমি মনে হয় খুব খুশি।

আনিকা কিছুটা অবাক হলো। সাথে সাথেই সে জিজ্ঞাসা করলো,
— কি, কি হয়েছে আপনার? কবে থেকে আপনি অসুস্থ?

রাসেল উত্তর দিলো,
— জ্বর হয়েছে। মারাত্মক। ভয়ংকর। কিন্তু একটা কারণে আমি খুশি।

আনিকা অবাক হলো। কৌতুহল হয়ে জানতে চাইলো,
— জ্বর হলে কেউ খুব খুশি হয়?

রাসের উত্তর দিলো,
— আমি হই।

রাসেলের কথা আনিকা বুঝছে না। সে আরো খানিকটা অবাক হলো। কি আবল তাবোল বলছে রাসেল। সে মনে মনে ভাবলো।।সে ফিরতি মেসেজ দিয়ে প্রশ্ন করলো,
— কেনো হন?

রাসেল অনেকটা সাহস সঞ্চয় করে একটা অদ্ভুত মেসেজ দিলো। সে জানেনা, আনিকা কি মনে করবে। হয়তো জ্বরের কারণে তার চিন্তা করার ক্ষমতা কমে এসেছে। সে এতোকিছু না ভেবে মেসেজ করলো আনিকাকে। সে লিখলো,
— আমার জ্বর হলে মাঝে মধ্যে মনে হয়,
“আপনি আমাকে ভালোবাসেন!”

আনিকা আর কোনো মেসেজ দিলো না৷ রাসেলও কোনো মেসেজ দিলো না। দু’জনেই নিশ্চুপ। রাসেল জানলো না ওপাশে আনিকার কি ভাবছে। আনিকার মেসেজ অপেক্ষায় থাকতে থাকতে রাসেল আবার তন্দ্রাঘোরে চলে গেলো। ডুবিয়ে গেলো গভীর ঘুমে।

আনিকার সাথে রাসেলের পরিচয় হয়েছে ৬ মাস আগে। রাসেলের তার এক কলিগের অ্যানিভার্সারি তে গিয়েছিলো। সেখানেই আনিকার সাথে রাসেলের প্রথম পরিচয়। আনিকার ফেসবুক আইডি নিয়ে আসে তার বন্ধুর কাছ থেকে। তারপর সে বাসায় এসেই আগে আনিকাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। আনিকা ঘন্টাখানেকর মধ্যে একসেপ্ট করে। তারপর প্রথমদিকে ফেসবুকে তাদের টুকটাক কথা হয়। তাদের মধ্যে একটা ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। মাঝে মাঝে তারা দেখাসাক্ষাৎ করে। আড্ডা দেয়। চা খায়।

রাসেল একটা সময় অনুভব করে সে আনিকাকে ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু একটা অজানা ভয় তার মধ্যে কাজ করে। সে নিজের মনের কথা মুখ ফুটে কখনো আনিকাকে বলতে পারে না তার ভালোবাসার কথা। সে অনেক বার ভেবেছে বলবে কিন্তু সে বারবার ব্যর্থ হয়েছে৷ একটা সময় ভেবেছে বন্ধু হয়েই থাকা যায়। তার এতো সাহস নেই যে যে আনিকাকে প্রপোজ করতে পারে। এছাড়া আরেকটা ভয় তার মধ্যে কাজ করে। যদি তাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায় তাহলে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাবে। সে না হয় একতরফা ভাবেই ভালোবেসে গেলো। মানুষটকে ভালোবাসাই গুরুত্বপূর্ণ। ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কাউকে ভালোবাসলে সেখানে ভালোবাসাটা একটা লেনদেনের মত হয়ে যায়। ভালোবাসলেই যে সেও ভালোবাসবে এটা কখনো ঠিক না। তাই রাসেল আনিকাকে শুধু ভালোবেসে যাবে। আনিকা তাকে ভালো-না-বাসলেও সে ভালোবাসবে।

চলবে…!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here