ভালোবসায়_ভেজা_সন্ধ্যে,৩৪,৩৫

#ভালোবসায়_ভেজা_সন্ধ্যে,৩৪,৩৫
#রোকসানা_রাহমান
পর্ব (৩৪)

একদলা অশ্রুর টুকরো জড়ো হয়ে আছে রিপ্তির চোখের দু’কোণে। গাল বেয়ে পড়তে চেয়েও যেন পড়ছেনা। চোখের পানিগুলোও আজ দ্বিধান্বিত। কোন নামে ঝরে পড়বে? অনুভবের ভাষায় প্রকাশিত মর্মপীড়ার নাকি তাহার অনুপস্থিতে নিজের সাথে ঘটিত মর্মপীড়ার! ছলছল নয়নে লেখাগুলোর দিকে আর তাকিয়ে থাকতে পারেনা রিপ্তি। নাক টেনে হালকা ফুপানির সুর তোলে। চোখের পল্লভজোড়ার ঘন ঘন পাল্লা ফেলে পিষে দেয় নামহীন অশ্রুর টুকরোগুলো। চিঠিটা আগের মতো ভাজ করে মহসীনের দিকে তাকায় রিপ্তি। সাথে সাথে কপাল কুঁচকে আসে। মানুষটা তার পাশে বসে ছিলো কিন্তু ঘুমিয়ে গেলো কখন? রিপ্তির বিস্ময়দৃষ্টি নিজের কোলের উপর। বিড়বিড় করে বললো,জাগ্রত অবস্থায় আমার হাতটা ছোয়ার বাহানাও তো করোনি কখনো তাহলে এই নিদ্রাপুরুষ সেজে সোজা কোলে ঠাঁই নিলে? বাব্বাহ!

রিপ্তির কোমলদৃষ্টি মহসীনের ঘুমন্ত মুখটায়। একটা নব শিশু দশমাস মায়ের পেট থেকে পৃথিবীতে ভূমিত হলে তখন সে যতটা নিষ্পাপ থাকে,চেহারায় স্নিগ্ধ,মসৃণ,ললিত,পবিত্র দ্যুতি থাকে, মহসীনের মুখটায় ঠিক তেমনি পবিত্র জ্যোতি দেখতে পাচ্ছে রিপ্তি। মহসীনের মুখের নিষ্পাপের গাঢ় মেদুরে হাত বুলাতে ইচ্ছে হয় রিপ্তির। কিন্তু বুলায় না। আলতো করে কোল থেকে মহসীনের মাথাটা সরিয়ে দিলো। মাথার নিচে বালিশ গুজে দিলো। চুলে আঙুল ডুবিয়ে বিড়বিড় করে বললো, তুমি এতো ভালো কেন,মহসীন?

একহাতে চিঠি আরেক হাতে নয়নের বিষজল নিয়ে নিজের রুমে ছুটে আসে রিপ্তি। কি করবে সে? কাকে রেখে কাকে বেছে নিবে? এ কেমন পরিস্থিতির মধ্যে আটকে গেলো! এই সংশয়াকুল কি কাটিয়ে উঠতে পারবে সে? রিপ্তি বিছানা ছেড়ে মেঝেতে বসে পড়ে। ছুড়ে ফেলে দেয় হাতের চিঠিটা। চাপা আর্তনাদে বাবাকে স্মরণ করে! মনকে শান্ত করার প্রবল চেষ্টা। এভাবে বিবাগী হলে যে তার চলবে না জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটা তাকেই নিতে হবে। রিপ্তি আবার চোখের জল মুছে নিলো। ওয়াশরুমে গিয়ে মুখ ধুয়ে এলো। মাথাটাও অর্ধেক ভিজিয়ে নিয়েছে। তবে তোয়ালে দিয়ে মুছা হয়নি। ফলে মাথার ঠান্ডা পানি এঁকেবেঁকে কপালে,কপাল ছাড়িয়ে চোখে,চোখ ছাড়িয়ে গালে,গাল ছাড়িয়ে থুতনি,অবশেষে গলায় গিয়ে ঠেকছে। নরম পানি আর নরম ঘাম সব মিলেমিশে রিপ্তির শরীরটা ভিজে চিপচিপে। এমন সিক্ত শরীরেও চলছে অস্থিরতার তুমুল ঝড়। বুকের ভেতরে তপ্ত অশান্তির ঝড়টা থামাতে জানালা খুলে দেয় রিপ্তি। তখনি,

♪ যে ক’টা দিন তুমি ছিলে পাশে,
কেটেছিলো নৌকার পালে চোখ রেখে,,
আমার চোখে,ঠোঁটে,গালে তুমি লেগে আছো,,(গান)

রিপ্তির অশান্ত মন হঠাৎ করেই অন্বেষী হয়ে উঠে। চোখজোড়ায় ফুটে উঠে চঞ্চলতা! জানালার সাথে মুখটা ল্যাপ্টে বাইরে তাকালো রিপ্তি। চাপাকন্ঠে ডেকে উঠলো,

“”অনুভব!””

সাথে সাথে কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পায় রিপ্তি। চড়কিবেগে পেছন ঘুরতেই মহসীনকে দেখতে পেলো। হাতের ইশারা বাইরে রেখে বললো,,

“” অনুভব এখনো যায়নি,মহসীন। ঐতো ওর ভাঙাকন্ঠের গান শুনতে পাচ্ছি আমি। তুমি শুনছো?””

মহসীন এক পলক বাইরে তাকিয়েই রিপ্তির দুই বাহু আকড়ে ধরে। নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে শীতল কন্ঠে বললো,,

“” কেউ নেই ওখানে। তোমার মনের ভুল।””
“” আছে। অপেক্ষা করছে। ও তো বললো,আমার জন্য অপেক্ষা করবে।””

মহসীন আর কিছু বলছেনা। শান্তদৃষ্টি রিপ্তির উপর। নিষ্পলকে বেশ খানিকটা সময় পার করলো। রিপ্তির বাহু ছেড়ে দিলো। রিপ্তি কিছু বলবে তার আগেই মহসীনের হিসসসধ্বনি!

রিপ্তি চুপ করে মহসীনের দিকে তাকিয়ে আছে। মহসীন ওর ডানহাতের বৃদ্ধাআঙুলটাতে কলমটা চেপে ধরে আছে। হাত কাঁপছে তার। হঠাৎ করে শক্তি হারিয়ে ফেললো কি! নাকি লিখতে ভুলে গিয়েছে? রিপ্তির আগ্রহমাখা মুখটার দিকে চেয়ে থেকেই মহসীন কলম চালালো,,

*যাও!*

লেখাটিতে চোখ পড়তেই রিপ্তির সম্বিৎ এলো। এতোক্ষণ কি বিড়বিড় করছিলো? কার নামে কার কাছে? যে মানুষটা নিঃস্বার্থে এতোগুলো দিন তাকে আগলে রেখেছে? যত্নে রেখেছে?

মহসীন রিপ্তির গালদুটো নিজের হাতের আঁজলে নিয়ে মোলায়েমসুরে বললো,,

“” বেশি ভেবো না,রজনীগন্ধা! তাহলে ভাবনার জালে এমনভাবে ডুবে পড়বে যে আর উঠতে পারবেনা। আমার বিশ্বাস অনুভবের কাছে তুমি ভালো থাকবে।””

রিপ্তির চোখজোড়া মুহুর্তেই টয়টুম্বর,বর্ষার পুকুরের ন্যায়। ঝাপসা চোখে বিস্ময় আর মুগ্ধতা! একটা মানুষ কি করে এতোটা স্বার্থহীন হতে পারে। কি করে?

মহসীন রিপ্তির গালদুটো গভীর ছোয়ায় চেপে ধরে বললো,,

“” তোমার কষ্ট আমি আর দেখতে পারছিনা,রজনীগন্ধা! অনুভবই তোমার সুখ বন্দী করেছে। যাও,তার কাছ থেকে নিজের সুখটাকে মুক্ত করো। আর সময় নিও না।””

রিপ্তির অস্ফুটধ্বনি,,

“” কিন্তু তুমি..””

মহসীন হাসে,ঠোঁটের হাসি নয়,চোখের হাসি। রিপ্তির গাল ছেড়ে হাতদুটো নিজের চোখের সামনে মেলে ধরে বললো,,

“” আমার ভালোবাসা তোমার এই দুই হাতেই সীমাবদ্ধ। আমার অনুভূতি গুলো তোমার এই হস্ত ডায়রীতেই স্মৃতি হয়ে জমে থাকবে। অদৃশ্য লেখাগুলোকে পড়ার জন্য আলো নয়,আমাকে স্মরণ করলেই ভেসে উঠবে।””

মহসীন কথার মাঝেই রিপ্তির হাতদুটো নিজের গালে ছুয়িয়েছে। আবেশে চোখদুটো বন্ধ করে মিহি কন্ঠ ছাড়ে,,

“” যাও,আমার ভালোবাসার বেড়াজাল থেকে তোমায় মুক্তি দিলাম। চিরতরে!””

রিপ্তি ফুপিয়ে উঠে। ক্রন্দনরত অবস্থায় চাপা আর্তনাদ ছাড়ে,,

“” কোথাও যাবো না আমি। তোমাকে একা রেখে কিভাবে যাবো?””

মহসীনকে আর কিছু বলতে দেয়না রিপ্তি। দৌড়ে বিছানায় চলে যায়। মহসীন ওর দিকে এগিয়ে গেলে,রিপ্তি চিৎকার ছুড়ে,,

“” মহসীন,আমার রুম থেকে যাও। এখনি! আমি আর একটা কথাও শুনতে চাইনা।””

~~~

হাতে কফি নিয়ে উদাসীন রিপ্তির দিকে চেয়ে আছে রুবিনা। মুখটা ফ্যাকাসের রূপ ধরেছে। চোখের উপর-নিচ ফোলা,কাধছাড়া চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পিঠ ছড়িয়ে আছে। এমন উদাসীন মেয়ের হাতে কফির মগটা মানাচ্ছেনা। অন্যকিছু থাকার প্রয়োজন! তাহলেই না চিত্রশিল্পী নিখুতভাবে এই উদাসী মায়াবীনীর পূর্ণরূপটা ফুটিয়ে তুলতে পারবে।

মেয়েটা তাকে কথা দিয়েছিলো এক বিকেলে দেখা করবে। বলবে অনেককিছু। সেই কথা রাখতেই কি হঠাৎ করে উদয় হলো?

নীল আর ধূসরসাদা রঙটা মিলেমিশে একাকার দিবার শেষ প্রহরের আকাশটি। সেখানেই রিপ্তির চোখের একস্থির দৃষ্টি। তার মনে হচ্ছে আকাশ নয়,নিজের অনুভূতিকে দেখতে পাচ্ছে। অনুভব আর মহসীনের প্রতি দুটো ভিন্নরঙ তার অনুভূতিতে মিশে গিয়েছে। এই মিশ্রণ আলাদা করা কি আদৌও সম্ভব? না কখনোই না। তাই ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতেই রুবিনার কাছে আসা। মহসীনের পবিত্র অনুভূতির সামনে নিজের মিশ্র অনুভূতি নিয়ে হাজির হয়ে নিজেকে ছোট করতে চায়না। উচিতও না!

“” কোথায় হারালি?””

রুবিনার কন্ঠে হালকা কেঁপে উঠে রিপ্তি। আজকাল সে জেগে থেকেও যেন জেগে নেই। রুবিনার দিকে ঘুরে দাড়ায় রিপ্তি। সামান্য হেসে বললো,,

“” তোকে অনেক কিছু বলার আছে।””
“” তাহলে বলছিস না কেন? তোর মধ্যে লুকিয়ে থাকা রহস্যটা আমারও জানার খুব কৌতুহল। শুরু কর।””

রিপ্তি ছাদের কার্নিশ ছেড়ে রুবিনার পাশে দাড়ালো। ওর সীমাহীন কৌতুহলে ম্লান হেসে কথার চড়কি ঘুরাতে থাকে। নিজের জীবনের শুরু থেকে রুবিনার কাছে আসার আগমুহুর্ত পর্যন্ত যা যা ঘটেছে সবটাই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বলে যাচ্ছে। রুবিনাও কথার ফাঁকে ফাঁকে চেহারা ভাবভঙ্গি তুলে ধরছে। কখনো বিস্ময়ে চোখদুটো বড় বড় করছে,কখনো ভয়ে সিটিয়ে যাচ্ছে,কখনো বিরক্তে নাক সিটকাচ্ছে। পরিশেষে মাথা উপর-নিচ দুলিয়ে জ্ঞানীভাব ধরে বললো,,

“” তাহলে এখন কি করবি ঠিক করেছিস?””

রিপ্তির ভাবলেশহীন উত্তর,,

“” মহসীনের বিয়ে দিবো।””

রুবিনা চকিতকন্ঠে বললো,,

“” কি!””
“” হুম। ওর জীবনের অর্ধেকটা বছর একাকিত্বে কেটেছে। সুখ,দুঃখ,বিপদ-আপন,রাগ,অনুরাগ,অভিমান সবকিছু নিজের একাকিত্ব ছাড়া আর কাউকে শেয়ার করতে পারেনি। শেয়ার করার মতো কেউ ছিলোই না। তবে এখন কেউ থাকা দরকার। বয়সের সাথে সাথে ওর সহনশক্তিটাও কমে এসেছে। ধীরে ধীরে আরো কমে যাবে। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবে। এমন অবস্থায় পাগলও হয়ে যেতে পারে। যা আমার পক্ষে সহ্য করা সম্ভব নয়। সেজন্যই এই সিদ্ধান্তে এসেছি। ওর এমন একজনকে খুব প্রয়োজন যে চব্বিশটা ঘন্টা ওর আশেপাশে থাকবে। ওর মধ্যে থাকা কঠোর আত্মবোধটা গুড়িয়ে দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিবে। নিজের অনুভূতিগুলোকে ভাগ করতে শেভাবে!””
“” তাহলে সেই মানুষটা তুই কেন হচ্ছিস না?””

রিপ্তি চোখ রাখে রুবিনার প্রশ্ন রাখা মুখটার দিকে। তারপর সহজগলায় বলে,,

“” যে কারণে তুই, ইমরান ভাইকে জীবনসঙ্গী বানাসনি!””

রিপ্তির মুখে ইমরান নামটা শুনতেই বেশ ঘাবড়ে যায় রুবিনা। নিজেকে গুটিয়ে নিতে চাইলে রিপ্তি ওর ডান হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বললো,,

“” তোর আর ইমরান ভাইয়ের বিয়েটা ফ্যামিলি থেকে ঠিক হলেও তুই খুব খুশি ছিলি। ইমরান ভাইও। তোদেরতো গায়ে হলুদও হয়েছিলো। কিন্তু বিয়েটা আর হয়নি। কেন?””

রুবিনা ভীতকন্ঠে বললো,,

“” তুই কি করে জানলি?””
“”আমি অল্প সময় তোদের বাসায় থাকলেও তোর বাবার সাথে কিন্তু খুব ভালো সম্পর্ক তৈরী হয়েছিলো আমার। উনার কাছ থেকেই অনেকটা শোনা। তবে উনি যেটা জানতেন না সেটা জানতে ইমরান ভাইয়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আজ সকালেই।””
“” কি জানতে?””
“” বিয়ে ভাঙার মূল কারণ। বিয়েতো তুই ভেঙে দিয়েছিলি। কিন্তু দুই পরিবার জানে ইমরান ভাই ভেঙেছেন।””

রুবিনা হচকচিয়ে গিলো। রিপ্তির হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিতে চাইলে,রিপ্তি আরো শক্ত করে চেপে ধরে বললো,,

“” মহসীনের মতো তোর অভ্যন্তরেও একি খুত বাস করছে। ইমরান ভাই এটা জেনেও তোকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলো। তবুও তুই ফিরে এসেছিলি কেন? তোর সেই ফিরে আসার কারণের জন্যই মহসীনকে বিয়ে করবো না। আমি জানি ও আমাকে অনেক সুখে রাখবে। চোখ থেকে একফোটা পানি পড়ার আগেই মুছে নিবে। কিন্তু আমি যদি ওর মতো স্বার্থহীন হতে না পারি? যদি ভুল করেও আমার কন্ঠ থেকে এমন একটা বাক্য বের হয়ে যায়,যাতে ও নিজের খুতটা স্পষ্ট দেখতে পায়? হয়তো নিজের আঘাতটা সয়ে নিবে কিন্তু সাথে সাথে অপরাধীতায় ভুগবে। আমার চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারবে না। তখন ওর মনে একটা কথাই বাজবে,ওর জন্য আমার ভবিষ্যৎ,সুখ আল্হাদ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আমি হয়তো চাইবো ওকে আঘাত না করে কথা বলতে। ওর ত্রুটিটা সামনে না আনতে। কিন্তু কতটা পারবো? কত বছর? মেজাজের উপর কি নিয়ন্ত্রণ থাকে? তাছাড়া আরেকটা কারণও আছে। মহসীন হলো পবিত্র ফুল আর আমি অনুভবের ছোয়ায় অপবিত্র হয়ে গিয়েছি। ও যখন আমাকে ভালোবেসেছিলো তখন আমিও পবিত্র ছিলাম। এখন নেই। এখন তুই বল,একি বাগানে কি একটি পবিত্র ফুলের সাথে আরেকটি অপবিত্র ফুল থাকতে পারে? তাহলে যে বাগানের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে। ওর সাথে ওর মতো একটি পবিত্র ফুল প্রয়োজন। আর সেটি তুই!””

বিস্ময়ে রুবিনা চোখ কপালে তুলে বললো,,

“” তোর মাথা ঠিক আছে?””
“” এতো অবাক হওয়ার কি আছে? তোকে বেছে নেওয়ারও কারণ আছে। আমি মহসীনকে সম্পূর্ণরূপে চিনি। তবুও ওকে বিয়ে করার সাহস পাচ্ছিনা। কেন? কারণ মুখ ফসকেও যদি ওকে আঘাত দিয়ে ফেলি। তাহলে ভাব অন্য কোনো মেয়ের উপর কিভাবে ভরসা রাখবো? মহসীনের মতো তুইও ঠিক একি রোগে ভুগছিস। যার মানে, না তুই ওর খুতের উপর আঙুল তুলতে পারবি না মহসীন। আর সবথেকে ভালো ব্যাপারটা হলো,তোরা দুজন অসম্পূর্ণ হয়েও দুজন দুজনকে বিয়ে করে সম্পূর্ণ হয়ে যাবি। বিয়ের পর তোদের মতো আরেকটি অসম্পূর্ণ মানে কোনো অনাথ অথবা বাবা-মা নেই এমন অসহায় বাচ্চাকে এডপ্ট করে নিবি। তাহলে হলো না,তিনটি অসম্পূর্ণ প্রাণের একত্রে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সুখি পরিবার। যেখানে কারো উপর কারো দায় থাকবে না। যা থাকবে তা নিজের প্রয়োজন,নিজের প্রাপ্তি আর অঢেল ভালোবাসা।””

রুবিনা হা’করে রিপ্তির দিকে চেয়ে আছে। রুবিনার মুখের ভঙ্গি দেখে রিপ্তির ঠোঁট টিপে হাসলো। নিজের হাতে ওর ঠোঁটদুটো এক করে দিয়ে বললো,,

“” এমন ভাব ধরার কি আছে? আমি কি খারাপ কিছু বলেছি? কত পুন্যের কাজ হবে ভাবতো!””
“” তুই তো খুব ধূর্তমেয়ে!””

রিপ্তির স্বাভাবিক গলা নরম হয়ে আসলো। অনুরোধের সুর তুলে বললো,,

“” রাজি হয়ে যা না,প্লিজ!””
“”আগে তো তোর সব ধূর্তগিরি শুনি তারপর বলছি।””
“” ধূর্তগিরি?””
“” হুম,এতক্ষণ তো মহসীন স্যার আর আমার ভবিষ্যতের পরিকল্পনা বললি এখন তোরটা বল। তোর কি হবে? তুই কি করবি?””

রিপ্তি বাঁকা হাসি দিলো। রুবিনার পাশ থেকে সরে গেলো। আকাশপানে মুখ করে উদাসী গলায় বললো,,

“” প্রায়শ্চিত্ত করবো। নিজেকে শুদ্ধীকরণ করবো। যে কালিতে কলঙ্কিত হয়েছি,সেই কালি দিয়ে কলঙ্ক মোচন করবো!””
“” এতো হেয়ালি করছিস কেন? সরাসরি বল।””

রিপ্তি চট করে চপালতার রূপ নেয়। রুবিনার দু কাধে মালার ন্যায় হাত রেখে দুষ্টুমী করে বললো,,

“” সে পরে দেখবি,আগে আমার দুটো সম্পদকে দুজনের কাছে আমানততো রাখতে দে!””
“” রিপ্তি,মানছি তোর চিন্তা-ভাবনাটা মন্দ না কিন্তু..””
“” কোনো কিন্তু না। তুই শুধু হ্যা বল,বাকিটা আমি সামলে নিবো। প্লিজ! একমাত্র তোর হাতেই মহসীনের অনুভূতিগুলোকে আমানত রাখতে চাই। আমি জানি তুই সযত্নে সংরক্ষণ করবি!””

~~~
আজ ইউনিভার্সিটিতে জরুরি মিটিং এ উপস্থিত ছিলো মহসীন। মিটিংয়ের মধ্যেই রিপ্তির কল আসে। রিসিভ করতে পারেনি। মিটিং শেষে কলব্যাক করতে গিয়ে দেখে রিপ্তির মেসেজ। দুটো মেসেজ,একটাতে ঠিকানা দেওয়া অপরটাতে লেখা,যত দ্রুত সম্ভব সেই ঠিকানায় যেন চলে যায়। রিপ্তির সাথে ওখানেই দেখা হবে। মহসীন খানিকটা বিচলিত হয়েই সেই ঠিকানায় হাজির হয়েছে। আড়ষ্ট আর সংশয় নিয়ে গেটের সামনে দাড়াতেই রিপ্তির আগমন ঘটলো। মহসীন দ্রুত রিপ্তির কাছে ছুটে গিয়ে বললো,,

“” এতো জরুরী তলব? তুমি ঠিক আছো তো?””

উদ্বিগ্নতায় মহসীনের কপালে ভাজ পড়েছে। রিপ্তি সেই ভাজগুলোতে গাঢ়দৃষ্টি রেখে মিষ্টি হাসলো। যার মানে এই-আমি ভালো আছি। মহসীন সস্থির নিশ্বাস ফেললো। রিপ্তি চট করে মহসীনের একটা হাত ধরে বাড়ীর ভেতর হাটা ধরেছে। কয়েক কদম এগিয়ে মহসীনের কৌতুহল মুখটায় আড়চোখে তাকালো। মনে মনে বিড়বিড় করে বললো,একদিন তোমার মনে হয়েছিলো তুমি আমার অযোগ্য তাই আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলে। আজ আমার মনে হচ্ছে আামি তোমার অযোগ্য তাই নিজ ইচ্ছায় তোমার থেকে দুরে চলে যাচ্ছি!

~~~
তাড়াহুড়ায় সবকিছু ঠিক হওয়ায় তেমন কোনো আয়োজন হয়নি রুবিনার বিয়েতে। মায়ের একটা শাড়ী পড়িয়ে হালকা মেকাপ করে দিয়েছে রিপ্তি। ছোট্ট ড্রয়িংরুমের দুপাশে সোফার সজ্জায় বসার ব্যবস্থা। সেখানেই রুবিনাকে বসানো হয়েছে। মহসীনকে দরজার সামনে দেখতেই রুবিনার বুক শুকিয়ে এলো। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। শাড়ীসহ হাঁটু কাঁপছে। রুবিনা দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো। তার মনে হলো মহসীন তার সামনে এসেই ধমকে উঠবে। কঠিন সুরে বলবে,,

“”এই মেয়ে তোমার সাহস কি করে হলো আমাকে বিয়ে করার? একজন এসে বললো বিয়ে করে নাও আর অমনি ড্যাংড্যাং করে বিয়ের পিড়িতে বসে গেলে? তুমিতো দেখছি বিয়েলোভী!””

রুবিনা কল্পনার মধ্যেও কেঁপে উঠলো। হঠাৎ পুরুষগন্ধে পাশে তাকালো। মহসীন তার পাশেই বসেছে। অনেকটা দুরত্ব রেখে। তার পাশেই রিপ্তি। রুবিনার দিকে তাকায়নিএখনো। ইশারায় রিপ্তিকে কিছু জিজ্ঞেস করছে। সেদিকে রিপ্তির কোনো খেয়াল নেই। সামনে বসে থাকা কাজী সাহেব একটা পেপার এগিয়ে দিলো মহসীনের দিকে। বেশ সংকোচসহিত পেপারটা নিলো মহসীন। পেপারে মোটা কালি লেখার দিকে চোখ পড়তেই আৎকে উঠলো। সোফা ছেড়ে উঠে পড়বে তখনি রিপ্তির হাত পড়লো মহসীনের উরুতে। নরম হাতটার শক্তচাপ উপেক্ষা করে দাড়াতে পারছে না মহসীন। বিস্ময় নিয়ে রিপ্তির দিকে তাকিয়ে আছে। রিপ্তির চোখও মহসীনের চোখে। গাঢ়কন্ঠে বললো,,

“” সাইন করো,মহসীন!””

চলবে

#ভালোবসায়_ভেজা_সন্ধ্যে
#রোকসানা_রাহমান

পর্ব (৩৫)

রুবিনা কল্পনার মধ্যেও কেঁপে উঠলো। হঠাৎ পুরুষগন্ধে পাশে তাকালো। মহসীন তার পাশেই বসেছে। অনেকটা দুরত্ব রেখে। তার পাশেই রিপ্তি। রুবিনার দিকে তাকায়নিএখনো। ইশারায় রিপ্তিকে কিছু জিজ্ঞেস করছে। সেদিকে রিপ্তির কোনো খেয়াল নেই। সামনে বসে থাকা কাজী সাহেব একটা পেপার এগিয়ে দিলো মহসীনের দিকে। বেশ সংকোচসহিত পেপারটা নিলো মহসীন। পেপারে মোটা কালি লেখার দিকে চোখ পড়তেই আৎকে উঠলো। সোফা ছেড়ে উঠে পড়বে তখনি রিপ্তির হাত পড়লো মহসীনের উরুতে। নরম হাতটার শক্তচাপ উপেক্ষা করে দাড়াতে পারছে না মহসীন। বিস্ময় নিয়ে রিপ্তির দিকে তাকিয়ে আছে। রিপ্তির চোখও মহসীনের চোখে। গাঢ়কন্ঠে বললো,,

“” সাইন করো,মহসীন!””

মহসীনের নির্লিপ্তদৃষ্টি রিপ্তির উপর। এতো শান্ত চাহনিটাও সহ্য করার শক্তি পাচ্ছেনা রিপ্তি। দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো। আড়ালে চোখ মুছে নিলো। কষ্টমিশ্রিত শুকনো ঢোক গিলে ঠোঁটদুটো প্রসারিত করে মহসীনের দিকে তাকালো। মহসীনের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,,

“” তোমাকে সম্পূর্ণ করতেই আবারো তোমার দুয়ারে পা রেখেছিলাম মহসীন। আমিতো নামমাত্র উপলক্ষ্য! এমনটাতো হওয়ারই কথা ছিলো। সৃষ্টিকর্তাতো আগে থেকেই সব লিখে রেখেছিলেন।””

মহসীন চোখ বন্ধ করে ফেললো। বুকের শ্বাসটা আটকে রেখে রিপ্তির হাতের উপর নিজের হাতটা রাখে। কিছু বলতে চাইলেও বলতে পারেনা। পাশ থেকে রিপ্তির অসহায়গলা,,

“” রুবিনাও যে তোমার ত্রুটিসঙ্গী। রাঙিয়ে নাও না দুজনের জীবন সংসার!””

মহসীন রুবিনার দিকে তাকালো। সে মাথা নিচু করে আছে। চেহারাটা ঠিক বুঝা যাচ্ছেনা। বুঝা গেলেই কি দেখার প্রয়োজন পড়তো? রিপ্তির হাত থেকে নিজের হাতটা সরিয়ে নেয় মহসীন। চাপা নিশ্বাস ছেড়ে নিজের বুক পকেটের কলমটা হাতে নেয়। পেপারে সাইন করতে করতে বিড়বিড় করলো,এই কলমের কালি দিয়েই তোমার হাতে অনুভূতির লিখন রূপ দিয়েছিলাম আজ এই কলম দিয়েই অন্য মেয়ের সাথে নিজের বৈবাহিক রূপ আঁকতে শুরু করলাম! কতটা নিখুত হবে জানিনা। তবে আপ্রাণ চেষ্টা থাকবে।

~~~

অফিস থেকে বের হতেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি থমকে দিলো অনুভবকে। রাস্তায় পা রাখতে গিয়েও পিছিয়ে এসেছে। নিজেদের অফিস ভবনের নিচেই ঠাঁই নিলো। তার মতো আরো অনেকেই দাড়িয়ে আছে। সবারই বাড়ি যাওয়ার বড্ড তাড়া। বিরক্তে একেকজনের মুখ থেকে বের হয়ে আসছে নানা বিরক্তিকর তপ্ত অপ্রসন্নবাক্য। অনুভব এক ঝলক সবার দিকেই নজর ঘুরিয়ে আনলো। নিজের শরীরে অপ্রস্তুতে গোটা কয়েক বৃষ্টির ফোঁটার দিকে কিঞ্চিৎ বিরক্তি দৃষ্টি। হাত দিয়ে ঝেড়ে ফেলতে গিয়ে থমকে যায়। হারিয়ে যায় গভীর স্মৃতিতে। আনমনেই তাকায় হাত ঘড়িটির দিকে। ঠোঁটে ম্লান হাসি ঝুলিয়ে বিড়বিড় করে,আমার ভালোবাসার ভেজা সন্ধ্যের লগ্নটা কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হবে। কেমন হবে সেটা ভিজে ভিজে উপভোগ করলে? কিন্তু তুমিহীনা কি তুলবে শিহরণের উত্তপ্ত সুর! উপভোগটা ফিকে হলেও লোভ সামলাতে ইচ্ছে করছেনা। দেখিইনা তুমিহীনা বৃষ্টিভেজাটা বুকে কেমন ঝড় তুলে।

অনুভব আর সময় নষ্ট করেনা। পায়ে পায়ে হেঁটে যায় ভেজা রাস্তায়। বাসা থেকে অফিসটা খুব একটা দুরে নয়। হেঁটে গেলে দেড়ঘন্টা কি দুঘন্টা সময় লাগবে। অনুভব ফুটপাত ধরে হাঁটা শুরু করেছে। আজ সে হাঁটবে। মনের রানিকে নিজের অস্তিত্বে উপলব্ধি করবে ঝরে আসা বৃষ্টির কণায়।

পাক্কা দু’ঘন্টা পর বাড়িতে পৌছিয়েছে অনুভব। বড্ড ক্লান্ত সে। শরীরটা আর এক সেকেন্ডও দাড়িয়ে থাকতে নারাজ। দুর্বলতায় কঠিন নিষেধাজ্ঞা। এভাবে একনাগাড়ে এতোটা সময়,এতোটা পথ কখনোই হাঁটেনি অনুভব। মনে হচ্ছে পায়ের গোড়ালি এখনি ফেঁটে পড়বে,ছিটকে বের হবে টকটকে লাল রক্ত! অনুভব নিজের রুমে যাওয়ারও ধৈর্য্য ধরতে পারলোনা। ভেজা কাপড় নিয়েই ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে পড়লো। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে শরির এলিয়ে পড়ে সোফার পার্শ্বতে। চোখটা লেগে এসেছে প্রায় তখনি ভারী নারীকন্ঠ,,

“” জামা পাল্টে আসুন। টেবিলে খাবার বেড়ে দিচ্ছি!””

অনুভব ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো,,

“” একটু ঘুমাই। ক্লান্ত লাগছে খুব।””

পাশ থেকে আর কোনো উত্তর আসেনি। অনুভব ধরফরিয়ে উঠে। দ্রুত সচেতনী চোখ রাখে চারপাশে। আশেপাশে কাউকে দেখতে না পেয়ে হাঁকডাক তুলে,,

“” আম্মু?””

অনুভবের মা রান্নাঘর থেকে ছুটে আসেন। উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন,,

“”কি হয়েছে,বাবা?””

মায়ের প্রশ্নের জবাবে কি বলবে বুঝে উঠতে পারলো না অনুভব। এক মুহুর্তের জন্য মনে হলো রিপ্তি এসেছিলো তার পাশে। নিজের মধুরকন্ঠে কথা পেরেছিলো তার কাছে। আসলেই কি তাই নাকি ঘুমেরঘোরে ভুলভাল শুনেছে?

“” কিছুনা। আমি গোসল করে আসছি।””

অনুভব দ্রুত সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়। দোতলার শুরুর দিকের প্রথম রুমটা তার। নিজের রুমের দরজা খুলতে গিয়ে দেখে অন্ধকারে ডুবে আছে রুমটা। সন্ধ্যা শেষ হয়ে রাতের শুরু হয়েছে সবে। সাধারণত এই সময় পুরোবাড়িতেই লাইট জ্বলে থাকে। সে রুমে কেউ থাকুক বা না থাকুক। আর তার রুমেতো লাইট জ্বালানোর জন্য রাত-দিনের অপেক্ষা রাখেনা কারণ,এখানে তার বুকের ধমনিটা থাকে। তার জীবনের সবটা সময়েই আলো দিয়ে ভরিয়ে দিবে সে। ভুলক্রমেও অন্ধকারকে ছুতে দিতে চায়না। অনুভব অস্থিরতা নিয়ে লাইটের সুইচে হাত রাখে। অন্ধকার রুম আলোয় সজ্জ্বিত হতেই অনুভব ভুত দেখার মতো চমকে উঠে। চমকটা এতোটাই কম্পন তুলেছে যে সাথে সাথে লাইটটা বন্ধ করে দেয় অনুভব। কি দেখলো এটা? কাকে দেখেছে? সত্যিই রিপ্তি? অনুভব অন্ধকারেই আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে। কিছুক্ষণ আগে ফুটে উঠা বিস্ময়চিত্রটা আবারও কল্পনায় সাজায়। এক মুগ্ধময়ী নারী। যার কোলে ফুটফুটে শিশু। সে নরম তুলতুলে হাত-পা নাচিয়ে দুগ্ধপানে তৃষ্ণা মেটাচ্ছে। মায়ের কোলে ওম খুজে নিতে একটি হাত দিয়ে ওড়না আকড়ে ধরে আছে। গালদুটোতে নিশ্চয় নুরানি হাসির আভা ফুটেছে? নাহ! মুখটা সে কল্পনা করতে পারছেনা। কল্পনায়তো তা আসে যা সে দেখেছে। মুখটাতো সে দেখেনি। ঢাকা ছিলো যে!

অনুভব চোখ খুলে ঘুটঘুটে অন্ধকারে দুটো প্রাণের উপস্থিতি অনুভব করতে চায় কিন্তু সাহস হয়না। হয়তো এটাও তার ভ্রম! আজ কি খুব বেশিই মায়াকন্যাকে মনে পড়ছে? অনুভব পুনরায় লাইটের সুইচে হাত দিলো। কিন্তু আলো জ্বালালো না। ভ্রমটা কাটিয়ে তুলতে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। সিড়ি বেয়ে নিচে নামে। কয়েকবার বড় বড় দম টেনে আবার উপরে উঠে। রুমে আলো জ্বালিয়ে নিশ্বাস আটকে পেছন ঘুরতেই কর্কশকন্ঠ,,

“” মাথায় কি ছিট আছে? একবার লাইট জ্বালাচ্ছেন তো আরেকবার নিভাচ্ছেন।””

অনুভবের ডান হাতটা বুকের বা-পাশে শক্ত চাপ দেয়। উফ! হার্ট-অ্যাটাকটা মাঝপথেই আটকে গেলো। ব্যথাতুরকন্ঠে বললো,,

“” তুমি?””

কোলের বাচ্চাটাকে বিছানায় শুয়িয়ে অনুভবের সামনে এসে দাড়ায় রিপ্তি। তাচ্ছিল্যমেখে বললো,,

“” অন্য কাউকে ভাবছিলেন নাকি?””

অনুভবের দ্রুত প্রশ্ন,,

“” তুমি এখানে কি করছো?””

রিপ্তি চোখ তুলে তাকায়। অনুভবের প্রশ্নের মানে খুজছে। মানেটা আন্দাজ করতে পেরে বললো,,

“” চলে যেতে বলছেন?””

অনুভব একটু পাশঘুরে দাড়ায়। অন্যদিকে দৃষ্টি রেখে আঁটকন্ঠে বলে,,

“” যদি বলি তাই!””

অনুভব চুপ। অপেক্ষা করছে পাশে থাকা রমনীর কন্ঠের। কি হবে তার উত্তর? অনুভবের অধির অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আর কোনো কন্ঠ ভেসে উঠেনা। অনুভব আর অপেক্ষা করতে পারলো না। আগের ন্যায় ফিরতি ঘুরে দাড়ালো রিপ্তির দিকে। কিন্তু একি! মেয়েটা কোথায় গেলো? মাত্রইতো এখানে ছিলো। তবে কি এটাও তার দিবা স্বপ্নের ঘোর? কিন্তু তার কাছে সবটাই জীবন্ত মনে হয়েছে। অনুভব সাত-পাঁচ ভাবনার মধ্যেই দৌড়ে নিচতলায় ছুট লাগায়। অর্ধেক সিড়ি ভাঙতেই সদর দরজা ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া মেয়েটিকে দেখতে পেলো। তারমানে এটা স্বপ্ন নয় বাস্তব! অনুভব দ্রুত সিড়ি ভেঙে বাইরে বেরিয়ে আসে। রিপ্তি ততক্ষণে বাড়ির বাইরের প্রাঙ্গন শেষে মূল ফটকের কাছাকাছি। তবে গেইটটা ছোয়ার আগেই দুটি হাত তার কোমড় আঁকড়ে ধরেছে। অনুভবের বুকের ছোয়া নিজের পিঠদ্বয়ে মিশে যাচ্ছে। রিপ্তি ছুটার জন্য চেষ্টা করতেই অনুভবের ফিসফিসধ্বনি,,

তুমি আমার,শখের হাড়ি
এমনে তোমায় কেমনে ছাড়ি!!(রোকসানা)

রিপ্তি ক্ষনিকের জন্য শান্ত হলেও পরক্ষণেই অশান্ত হয়ে উঠে। আপ্রাণ চেষ্টা লাগাচ্ছে নিজেকে ছাড়ানোর। অনুভব আরো শক্ত করে চেপে ধরেছে রিপ্তিকে। সম্পূর্ণরূপে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো,,

“” আরে ওটা মজা করে বলেছিলাম। আমার রাগিনীর রাগটা দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিলো খুব। তাই বলে সত্যি সত্যি চলে যাবে? তোমার রাগতো দেখি দিনে দিনে আকাশ ছুয়ো হচ্ছে।””

রিপ্তি সর্বশক্তি প্রয়োগ করে নিজেকে ছাড়াতে সফল হলো। তবে আর সামনে এগুচ্ছেনা। অনুভবের মুখোমুখি হয়ে দাড়িয়ে আছে। আর্দ্র কন্ঠে বললো,,

“” আমি আপনার বাচ্চার মা হতে পারি কিন্তু আপনার বউ নই। তাই যখন-তখন জড়িয়ে ধরার আগে বউ বানানোর কার্যকলাপ শুরু করুন। যত শীঘ্রই সম্ভব।””

অনুভব সম্মতি জানিয়ে রিপ্তির দিকে এগুলে,রিপ্তি আরেক কদম পিছিয়ে গিয়ে বললো,,

“”আপনার সাথে রোমান্স করার জন্য আসিনি,নিজেকে শুদ্ধ,পবিত্র করতে এসেছি। এতোগুলো দিন যে কলঙ্কের কালি নিয়ে ঘুরেছি তা মোচন করতে এসেছি। আর,আমার বাবাইটাকে দেখতে এসেছিলাম। আমি আজই নরসিংদী চলে যাবো।””

~~~
বসার রুমে বসে আছে মহসীন। হাতে একটি বই। মনোযোগের পুরোদমটাই বইয়ের দিকে থাকলেও তা বার বার কেটে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে রুবিনা সারা রুমে ঘুরঘুর করছে। তার ইচ্ছে হয়েছে ঘুরঘুর করতে করতেই পারে। এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নিয়ে মহসীনের। কিন্তু কঠোর মাথাব্যথা তার পায়ের ভারী নুপুরের শব্দে। যার তীব্র শব্দ এড়িয়ে মহসীন বইটা পড়তে পারছেনা। যার ফলস্বরূপ মাথাব্যথাটা নুপুর ছাড়িয়ে রুবিনার ঘুরঘুরেই পড়ছে। বিরক্তে বইটা বন্ধ করে ফেললো। সাথে সাথে শব্দ গায়েব। মহসীন একবার এদিক ওদিক উকি দিলো। না,কোথাও মেয়েটাকে দেখতে পারছেনা। তাহলে শব্দটা এলো কোথা থেকে? মহসীন আবারও মনোনিবেশ করলো বইয়ে। সাথে সাথেই পাশ দিয়ে কেউ হেঁটে গেলো। মহসীন আর দমে থাকতে পারছেনা। গলা ছেড়ে বললো,,

“” হয় এক জায়গায় স্থির হয়ে বসো,নাহয় নুপুরজোড়া খুলে রাখো রুবিনা।””

রুবিনা থমকে গেলো। মিটিমিটি হাসলো। সাথে সাথেই মুখ বাকিয়ে মনে মনে কথা শুরু করলো,টিভির সামনে বসে বই পড়া? টিভির গটগট শব্দে উনার কোনো সমস্যা হয়না আমার হাঁটাতে সমস্যা? রুবিনা নুপুর খুললো না। ইচ্ছে করেই আরো জোরে শব্দ তুলে মহসীনের পাশে বসলো। মহসীন একবার চোখ তুলে তাকিয়ে আবার বইয়ে মনোযোগ দিলো। তক্ষণি রুবিনা প্রশ্ন করে বসলো,,

“” আপনি এতো বিরক্তিকর কেন,বলুনতো?””

মহসীন ভ্রূ উচিয়ে তাকালো। কিছু বললো না। দৃষ্টি সরিয়ে নিতে চাইলে রুবিনা আবারও প্রশ্ন করলো,,

“” আপনি এতো গুমরোমুখো কেন?””

মহসীনের ভ্রূজোড়া কিঞ্চিৎ কুঁচকালো। ছোট্ট জবাবে বললো,,

“” জানিনা।””

রুবিনা আগ্রহ নিয়ে বললো,,

“” কেন জানেন না? স্যারদেরতো সব জানার কথা।””

মহসীন বই নিয়ে উঠে পড়লো। যেতে যেতে বললো,,

“স্যাররা ব্যক্তিগত বিষয় স্টুডেন্টদের সামনে তুলে ধরতে চায়না,তাই তারা সব জানেনা।””

মহসীন চলে গেলো। রুবিনা মুখভার করে বসে রইলো। বিড়বিড় করে বললো,আপনি এমন কেন? আমার সাথে একটুও গল্প করেন না। রুবিনা দুঃখ দুঃখ মুখ নিয়ে নুপুরজোড়া খুলে ফেললো। রান্নাঘরে ঢুকতেই মহসীন দৌড়ে এলো,,

“” কি করছো?””

রুবিনা চুলায় আগুন জ্বালাতে জ্বালাতে বললো,,

“” বই পড়ছি।””
“” মানে?””

রুবিনা কপটরাগ দেখিয়ে বললো,,

“” আমি ঠিক করেছি আগামী দু’ঘন্টা আপনার মুখ দেখবো না।””

মহসীন আর কিছু বললো না। রুবিনা ইনিয়েবিনিয়ে কি বুঝাতে চাচ্ছে বুঝে নিলো। রান্নাঘর ছেড়ে চলে গেলো।

খাবার টেবিলে বসে আছে মহসীন। রুবিনা তার পাশে দাড়িয়ে। ঠোঁটে জোর পূরক হাসি ঝুলছে। মহসীন ভাতের বোলে চামচ ঢুকাতেই নিচ থেকে পোড়াভাত উকি দিলো। মহসীন সহজগলায় বললো,,

“” তুমি রাধতে পারো না?””

রুবিনা মহসীনের থেকে একটু দুরত্ব তৈরী করে ভীতকন্ঠে বললো,,

“” পারি কিন্তু..””
“” কিন্তু?””

রুবিনা আর কিছু বলছেনা। মহসীনও আর কথা বাড়ালো না। নিজের প্লেটে ভাত নিয়ে বললো,,

“” বসো।””
“” কেন?””
“” ভাত খাবে।””

রুবিনা আরেকটু দুরে সরে দাড়ালো আড়ষ্ট কন্ঠে বললো,,

“” আমি পরে খাবো। এখন আমার ক্ষিধে নেই।””

মহসীন আরেকটি প্লেটে ভাত বেড়ে রুবিনার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,,

“” আমি বসতে বলেছি।””

রুবিনা সাথে সাথে বসে পড়লো। ভাত মাখতে গিয়েই চাপা আর্তনাদ ভেসে আসলো ‘আহ!’

মহসীন নিজের ভাত ছেড়ে উঠে পড়লো। রুবিনার হাতটা ধরেই ধমকে উঠলো,,

“” হাত পুড়লো কি করে?””

সাথে সাথে রুবিনার চোখে বর্ষণ শুরু হয়ে গেছে। কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বলছে,,

“” রান্না করতে গিয়ে।””
“” তোমাকে আমি রান্না করতে বলেছিলাম?””
“” না।””
“” তাহলে রান্না করতে গেলে কেন?””

রুবিনা মাথা নিচু করে ফেললো।

~~~
“”কাল গায়ে হলুদ আর তুই আজ বলছিস? এখন কত রাত দেখতে পারছিস? যাবো কি করে?””

রুবিনার করুণকন্ঠে ভালোবাসার ছোয়া পায় রিপ্তি। ঠোঁটে ফুটে আবেশের হাসি। হাসিটা রেখেই বললো,,

“” এতো চিন্তা কিসের? তোদের তো আর আসতে বলছি না।””

রুবিনা কঠিনকন্ঠে বললো,,

“” যাবো না মানে? তোর বিয়ে আর আমি যাবো না?””

রিপ্তি মাথা দুলিয়ে হাসে। তাকে আর কিছু বলতে হয়না। রুবিনা নিজেই বললো,,

“” এইভাবে উনাকে দুরে ঠেলে দিচ্ছিস?””
“” হুম। আমার থেকে যত দুরে থাকবে তত কষ্টনামক পীড়াটা থেকেও দুরে থাকবে।””

রুবিনা চুপ। রিপ্তিও চুপ। মোবাইলের মধ্যেই দুজনের নিস্তব্ধতার সুর বাজছে। নিরবতা ভাঙলো রুবিনা,,

“”তুই যে বিয়ে করছিস উনি জানেন?””
“” হয়তো জানেন। আর না জানলেই কি তার বউতো জানে,সেই জানিয়ে দিবে।””

রিপ্তির মুখে ‘বউ’ শব্দটা যেন রুবিনার হৃদপিন্ডে গিয়ে আঘাত হানলো। সত্যিই কি আমি উনার বউ হতে পেরেছি না কোনোদিন হতে পারবো? উনি মেনে নিবেনতো আমায়? রিপ্তির কথার প্যাচে পড়ে কি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি? উনার বুকের ভালোবাসার সমুদ্রের ঢেউগুলো যে রিপ্তির নামে আচড়ে পড়ে,সেখানে আমার অস্তিত্বের ছায়া ফেলতে পারবো তো?

রুবিনা ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাড়ালো। নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। হঠাৎ করেই ঠোঁটে লিপস্টিক লাগানো শুরু করেছে। আপনাকেতো আমার কাছে ধরা দিতেই হবে। আপনি যত আমাকে এড়িয়ে যেতে চাইবেন আমি তত আপনাকে কাছে টেনে নিবো। আমি হলাম আপনার চুম্বকবউ!

“” রুবিনা?””

মহসীনের আকস্মিক কন্ঠে রুবিনা ছিটকে উঠেছে। হাতের লিপস্টিক মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। রুবিনার এমন হকচকিয়ে যাওয়া কান্ডে মহসীনের প্রশ্নবিদ্ধ চাহনি। রুবিনা নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,,

“” কিছু বলবেন?'”‘

মহসীনের কোনো সাড়া নেই। ধীরপায়ে রুবিনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রুবিনার একদম নিকটে এসে দাড়ালো। চোখের পূর্ণদৃষ্টি রুবিনার ঠোঁটে। রুবিনা ভীতভঙ্গিতে কিছু বলতে চাইলো,তার আগেই ওর ঠোঁটে হাত পড়েছে মহসীনের। ঠোঁটের পাশে ছড়িয়ে থাকা লিপস্টিক মুছে দিতে দিতে বললো,,

“” মাথা থেকে বদবুদ্ধী সব ঝেড়ে ঘুমোতে যাও। কাল থেকে রেগুলার ক্লাস করবে।””

রুবিনা চুপচাপ বিছানার একপাশে শুয়ে পড়লো। মহসীন নিজের বালিশ ঠিক করে অন্যপাশে শুয়ে বললো,,

“”পড়ালেখায় মন দাও। তোমার বইগুলো কি তোমাদের বাসা থেকে এনে দিবো নাকি নতুন কিনে দিবো?””
“” আমি আর পড়বো না।””

মহসীন রুবিনার দিকে ঘুরলো। চকিতকন্ঠে বললো,,

“”কেন?””
“” আমার ভালো লাগেনা।””

মহসীন তাৎক্ষনিক উঠে পড়লো। সোজা হাঁটা ধরেছে বুকসেল্ফের দিকে। একটি পুরোনো ডিকশনারী বের করলো। সাথে খাতা কলম নিয়ে বললো,,

“”উঠো।””

রুবিনা সংকোচ নিয়ে উঠে বসলো। মহসীন ওর হাতে খাতা,কলম,ডিকশনারীটা দিয়ে বললো,,

“” এখান থেকে পাঁচশত ওয়ার্ড মিনিং শিখে এই খাতায় লিখবে। তারপর ঘুমাবে।””

~~~

গায়ে হলুদের পর্ব শুরু হবে বিকেলে কিন্তু ভোর হতেই শোরগোল শুরু হয়ে গিয়েছে। বাবা নেইতো কি হয়েছে? বাবার মতো ভাইতো আছে? একমাত্র বোনের বিয়ে বলে কথা! পারলে নিজের গ্রাম ছেড়ে আশেপাশের সব গায়ের লোকদের দাওয়াত দেয়।

সারারাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারেনি রিপ্তি। ভোরের দিকেই চোখটা লেগে এসেছিলো। কিন্তু ঘুমটা হলোনা। এখান থেকে ওখান থেকে নানানজনের হাঁকডাকে ঘুম তার হাওয়া। অনিচ্ছাসত্ত্বেও বিছানা ছাড়তে হয়। জানালার সামনে দাড়াতেই মিন্মির কন্ঠ,,

“” মন খারাপ?””
“” না।””
“” তাহলে?””

রিপ্তি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,,

“” যে পাপটা ঢাকতে এতোকিছু করলাম তাতো সবার সামনেই চলে আসবে,ভাবি। হ্যা,অনুভবের সাথে বিয়ে হচ্ছে কিন্তু কথাটা তেমনি হবে,বিয়ের আগে বাচ্চা! সবাইতো আমাকে খারাপই ভাববে। আর আমাকে খারাপ বলা মানেইতো বাবাকে অপমান করা। কিছুই ঠিক হয়নি,ভাবি!””

রিপ্তি ভাবিকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো। চোখের পানি পড়বে পড়বে ভাব,তখনি,,

“” ঐ ছেরি এগুলা কি হুনতাছি?””

পরিবানুর কথার ঝংকারে রিপ্তির চোখের পানি মিলিয়ে গেলো। ভীতকন্ঠে বললো,,

“” কি?””
“” অনুভব নাকি বিয়াইত্তা।””

নানির প্রশ্নে রিপ্তি আর মিন্মি দুজনেই অবাক। নান গড়গড় করে বললেন,,

“” বউ নাকি আরেক ব্যাটার লগে পালাইয়া গেছে? বাচ্চাডাও নিয়া যায় নাই। এমন পাষান্ড মাইয়ারেতো থাবড়ানো দরকার। গাছের লগে বাইদা পিডানোর দরকার। আর তোকেও বলিহারি,অমন বিয়াইত্তা পোলারে ক্যান বিয়া করতে অইবো? দুনিয়াই কি পোলার অভাব পড়ছে?””

রিপ্তি আর মিন্মি একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করছে। মিন্মি বললো,,

“” নানি,তোমাকে এগুলো কে বলছে?””
“” আর কে কইবো? অনুভবই কয়ছে। এমনভাবে কইতাছিলো যেন বউ পালানো গর্বের কেচ্ছা!””
“”ওহ!””

মিন্মির ‘ওহ!’ শব্দটায় তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন পরিবানু। ধমকে উঠে বললেন,,

“” রাসেল রে কও এই বিয়া ভাঙতে। পোলারও দোষ আছে,নাইলে বউ পালাইলো ক্যান?””

রিপ্তি ঠোঁটটিপে হাসছে। নানির কাছে আহ্লাদীসুর তুলে বললো,,

“” সত্যি বিয়ে ভেঙে দিবো?””

নানি কিছুক্ষণ ভাবলেন। আচমকা বললেন,,

“” না থাক। বাচ্চাডারে যত্ন কইরা পালিশ,মেলা সওয়াব পাবি।””

নানি চলে যেতেই জানালার কাছ থেকে অনুভবের কন্ঠ,,

“” কেমন খেল খেললাম বলো,তোমাকে বকা খাওয়ালাম আবার তোমার বাবার সম্মানও বাঁচালাম!””

রিপ্তি ঠোঁট বাকিয়ে জানালা বন্ধ করে দিলো।

~~~
বউসাজে অনুভবের রুমে বসে আছে রিপ্তি। তখনি ফোনটা বেজে উঠলো। রুবিনার কল। রিপ্তি মাথার ঘোমটা খুলে বললো,,

“” কেমন আছিস?””

রুবিনা কাঁদোকাঁদো গলায় বললো,,

“” এ তুই কার সাথে বিয়ে দিলি আমায়? আগেতো একঘন্টা প্রাইভেট পড়তাম আর এখনতো চব্বিশ ঘন্টায় প্রাইভেট পড়তে হচ্ছে। এইজন্যই শিক্ষককে বিয়ে করতে হয়না। তারমধ্যে কথা না বলে থাকতে থাকতে আমার পেট ফেটে যাওয়ার অবস্থা। তুইতো জানিস আমি কথা বলতে কত পছন্দ করি!””

রুবিনার কথায় খিলখিলিয়ে হেসে উঠে রিপ্তি। সাথে সাথে মোবাইলের অপরপাশ থেকে মহসীন বললো,,

“” অনেকদিন পর তোমার প্রাণবন্ত হাসি শুনলাম,রিপ্তি। হৃদয় ঠান্ডা করে দেওয়ার মতো সুর।””

রিপ্তির হাসিখুশি মুখটায় আধার নেমে এলো। শান্তকন্ঠে বললো,,

“” বউয়ের সামনে অন্যনারীর হাসির প্রশংসা? তার মুখের দিকে তাকাও,কতটা কষ্টা পাচ্ছে দেখতে পারছো? কোনো মেয়েই স্বামীর মুখে অন্যনারীর প্রশংসা সহ্য করতে পারেনা। সে যতই সংবেদনশীল…””

রিপ্তির কথার মাঝেই আচমকা অনুভব ওকে ঝাপটে ধরায় হাত থেকে ফোনটা পড়ে গিয়েছে। রিপ্তি বিরক্ত নিয়ে বললো,,

“” উফ! দেখছেননা ফোনে কথা বলছি? ছাড়ুনতো।””
“” বললেই হলো নাকি?এখন তুমি আমার বাচ্চার মা সাথে আমার বউ। এতো সহজেই ছেড়ে দিবো? কতকাল পর তোমাকে কাছে পেলাম!””

রিপ্তি রাগে ফুসতে ফুসতে নিজেকে ছাড়ালো। বিছানায় পড়ে থাকা মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো লাইনটা এখনো কাটেনি। মহসীন কি সব শুনেছে? রিপ্তি কলটা কেটে দিয়ে কাঠগলায় বললো,,

“” তুমি আমাকে ততদিন স্পর্শ করতে পারবেনা যতদিননা মহসীন রুবিনাকে স্পর্শ করবে!””

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here