তোমাকে,পর্ব 11.1,12,1
অনিমা হাসান
পর্ব 11.1
আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই অনিমা I সামনের দিকে তাকিয়েই বলল মুনির
কি বললে ? অনিমা হতভম্ব হয়ে গেল I মুনির ওকে এই কথা বলতে এখানে নিয়ে এসেছে এটা ও ভাবতে পারছেনা
মুনির এবার অনিমার দিকে ফিরল তারপর বলল
তুমি ঠিকই শুনেছো
অনিমা চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল তারপর উল্টো দিকে ফিরে হাঁটা দিলো
অনিমা দাঁড়াও
অনিমা দাঁড়ালো না, নেমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো I মুনির এগিয়ে এসে অনিমার হাত ধরল
আমার কথা এখনো শেষ হয়নি I তুমি চলে যাচ্ছ কেন ?
এ ধরনের অবান্তর আলোচনা চালিয়ে নিতে চাইছিনা তাই
কোনটা অবান্তর ?
তোমার কেন মনে হল তুমি দয়া করতে চাইলেই আমি সেটা নেব ?
মুনির অনিমার আর একটু কাছে এগিয়ে এলো I অনিমর মনে হল ওর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে I এই লোকটা এত কাছে আসছে কেন ? কি সমস্যা ?
আমি তোমাকে দয়া করছি না অনিমা তোমার কাছে দয়া চাইছি I তুমি কি দয়া করে আমাকে আমার বাকি জীবনটা তোমার সঙ্গে কাটাতে দেবে ?
অনিমার ভেতর হঠাৎসবকিছু কেমন ওলট পালট হয়ে গেল I বহু বছরের জমে থাকা কান্নাটা দলা পাকিয়ে গলার কাছে উঠে এল I অনিমা দুইহাতে মুখ ঢেকে কান্নায় ভেঙে পড়ল I কি আশ্চর্য এতো কান্না ও জমে ছিল ওর ভেতরে I
মুনির ওকে বাধা দিল না I কাঁদতে দিল I তারপর আস্তে আস্তে ওর কাছে এগিয়ে এলো ওর মাথার উপর হাত রেখে বলল
সব ঠিক হয়ে যাবে I আমি সব ঠিক করে দেবো I আমার উপর একটু ভরসা রাখো I
অনিমা হঠাৎ করে নিজেকে সামলে নিল I চোখ মুছে নেমে যেতে লাগলো I মুনির দেখল অনিমা যেন ঠিক নিজের মধ্যে নেই I এলোমেলো পা ফেলছে I মুনির এগিয়ে গিয়ে ওর হাতটা ধরল I দুজন ট্রেইল এ নেমে এল পাথরের ঢাল বেয়ে I অনিমা বারকয়েক চেষ্টা করল হাতটা ছাড়িয়ে নিতে I মুনির ছাড়লো না I গাড়িতে উঠে ও সারা পথ অনিমা চুপ করে বসে রইল বাইরের দিকে তাকিয়ে I একটা কথাও বলল না I গাড়ি যখন বাড়িতে এসে থামল তখন নেমে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে গেল I দরজাটা বন্ধ করে দিল সশব্দে I মুনির কিছু বলল না I হাসল শুধু একটু নিঃশব্দে I
পর্ব 11.2
একটা গান শোনাবে অনিমা ?
তুমি ব্যান্ডের গান ছেড়ে এসে আমার বোরিং গান শুনতে চাইছো
তোমার গান মোটেও বোরিং না
মুনির যখন অনিমাকে ওর বাসায় নামিয়ে দিয়েছিল তখন দুজনেই একেবারে ভিজে জবজবে I অনিমা বলল
তুমিতো একেবারে ভিজে গেছোI এই অবস্থায় স্টুডেন্টের বাসায় যাবে কি করে ?
আজকে আর যাওয়া হবে না I আমি হলে ফিরে যাবো
এই অবস্থায় এতটা পথ গেলে তোমার ঠাণ্ডা লেগে যাবে I তুমি উপর চলো আমি তোমার কাপড় শুকানোর ব্যবস্থা করে দিচ্ছি
না আজকে আর যাব না
অনিমার প্রচন্ড রাগ হলI ও তীব্র কন্ঠে বলল
ঠিক আছে তুমি চলে যাও
মুনির যাবার জন্য পা বাড়াতে গিয়ে দেখল অনিমা ভেতরে যাচ্ছে না ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে
তুমি ভিতর যাও অনিমা
না আমি যাবো না এখন , এখানে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজবো
জেদ করোনা , কদিন আগেই তোমার জ্বর এসেছিলো
বৃষ্টিতে ভিজলে কি শুধু আমারই জ্বর হবে ?
মনির হাল ছেড়ে দিল I এই অভিমানী মেয়েটার সাথে ও কখনো পেরে ওঠে না
আচ্ছা চলো উপরে যাচ্ছি
ওরা যখন বাসায় ঢুকলো তখন হাসান সাহেব তৈরি হয়ে বের হচ্ছিলেন I অনিমা কে এ সময় এই অবস্থায় একটা ছেলের সঙ্গে বাসায় ঢুকতে দেখে বেশ অবাক হলেন I মুনির ও একটু অপ্রস্তুত হলো I অনিমা খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল
বাবা , ও মুনির আমাদের ক্লাসের সেকেন্ড বয় I ওয়েদার খারাপ বলে আমাকে পৌঁছে দিতে এসেছিল I টুর এর দিন ও আমাকে পৌঁছে দিয়েছিল I
থ্যাঙ্ক ইউ মনির I অনেক কষ্ট করলে I
না আঙ্কেল , কষ্ট কি ? অনিমা আমাদের ক্লাসের এসেট , ওর প্রতি আমাদের একটা রেস্পন্সিবিলিটি আছে I
হাসান সাহেবের ছেলেটাকে খুব পছন্দ হল I যেমন সুন্দর দেখতে তেমনি ভালো রেজাল্ট I
আজকে আমি একটু বাইরে যাচ্ছি I একদিন সময় করে এসো আলাপ করব I অনিমা তুমি আবরারের ঘর থেকে ওকে শুকনো জামাকাপড় এনে দাও I তুমি কিন্তু খেয়ে যাবে মনির কেমন ?
জি অবশ্যই আঙ্কেল I
ঠিক আছে থাকো তাহলে
হাসান সাহেব চলে গেলে অনিমা মুনিরকে শুকনো জামা কাপড় এনে দিল I ওকে চেঞ্জ করতে বলে নিজে ও উপরে চলে গেল চেঞ্জ করতে I
অনিমা দের বারান্দাটা অনেক বড় I একপাশে একটা বড় দোলনা রাখা I মাঝখানে একটা বড় টেবিল I তার উপর অনেকগুলো বনসাই I দেখে বোঝা যায় কেউ খুব যত্ন করে রেখেছে এদেরকে I মুনির চেঞ্জ করে বের হয়ে বারান্দায় অনেকক্ষণ গাছগুলো দেখল I সবকিছুতেই রুচির ছাপ I মুনির টেবিলে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বাইরের বৃষ্টি দেখছিল I ঠিক তখনই অনিমা ঢুকলো কফির মগ নিয়ে I
অনিমাএকটা ফুল ফুল স্কার্ট পড়েছে সঙ্গে সবুজ টপস I একটা লাল রঙের শাল জড়িয়েছে I ওকে দেখতে কিশোরী মেয়েদের মত লাগছে I ভেজা চুলে চিকন আভা I মনির মুগ্ধ হয়ে গেল দেখে I এত স্নিগ্ধ সৌন্দর্য সচরাচর দেখা যায় না I অনিমা মুনির কে কফির মগ দিয়ে রেলিঙে হেলান দিয়ে দাড়াল মুখোমুখি Iমুনির কে এইরকম পোষাকে আগে কখনো দেখিনি অনিমা I মুনির একটা কফি কালারের টিশার্ট পড়েছে সঙ্গে ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট চেক ট্রাউজার I ভেজা চুলগুলো পেছনের দিকে ঠেলে দিয়েছে I ওকে একদম অন্যরকম দেখাচ্ছে I অনিমা ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে থাকলো I দুজনেই মনেই তখন অনেক না বলা কথা ভিড় জমিয়েছে I কেউই কিছু বলতে পারছেনা I অবশেষে মুনির বলল
একটা গান শোনাবে অনিমা
এনি রিকোয়েস্ট ?
না তোমার যেটা ইচ্ছা
উইথ মিউজিক আর উইদাউট ?
না তোমার কন্ঠ এমনি সুন্দর মিউজিক দিয়ে আড়াল করো না
ঠিক আছে I তাহলে আমার একটা প্রিয় গান করছি
অনিমার অনেকদিন থেকে ইচ্ছে করছিল মুনিরকে এই গানটা শোনাতে I আজকে এমন ভাবে পারবে সেটা ও ভাবেনি I অনিমা গান শুরু করলো
এমন দিনে তারে বলা যায়,
এমন ঘনঘোর বরিষায়।
এমন দিনে মন খোলা যায়–
এমন মেঘস্বরে বদল-ঝরঝরে
তপনহীন ঘন তমসায়
এমন দিনে তারে বলা যায়
সে কথা শুনিবে না কেহ আর,
নিভৃত নির্জন চারিধার।
দুজনে মুখোমুখি, গভীর দুখে দুখি,
আকাশে জল ঝরে অনিবার–
জগতে কেহ যেন নাহি আর ॥
সমাজ সংসার মিছে সব,
মিছে এ জীবনের কলরব ।
কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে
হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব–
আঁধারে মিশে গেছে আর সব
তাহাতে এ জগতে ক্ষতি কার,
নামাতে পারি যদি মনোভার ।
শ্রাবণবরিষনে একদা গৃহকোণে
দু কথা বলি যদি কাছে তার,
তাহাতে আসে যাবে কিবা কার
ব্যাকুল বেগে আজি বহে বায়,
বিজুলি থেকে থেকে চমকায় ।
যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে
সে কথা আজি যেন বলা যায়–
এমন ঘনঘোর বরিষায় –
এমন দিনে তারে বলা যায়।
মনির স্তব্ধ হয়ে গেল গান শুনে I প্রশংসা করতেও ভুলে গেল I ঘোর কাটছে না যেন কিছুতেই I মুনির এর কফি শেষ হয়ে গেছে অনেকক্ষণ I কাপটা নামিয়ে রাখতেও ভুলে গেছে I অনিমা ধীরে ধীরে কাছে এগিয়ে এল I মুনির এর হাত থেকে কাপটা নিয়ে টেবিলের উপর রাখল I অনিমা চলে যাচ্ছে না I ওখানে দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে I মুনির দেখল অনিমা ওর খুব কাছে দাঁড়িয়ে আছে I ওর শরীর থেকে একটা মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসছে I মুনিরএর হঠাৎ খুব ইচ্ছে হলো অনিমাকে একবার ছুঁয়ে দেখতে I খুব ইচ্ছে হলো ওর মুখটা দুই হাতের মধ্যে নিয়ে একটু আদর করে দিতে I হঠাৎ করেই বজ্রপাতের শব্দে মুনির সম্বিত ফিরে পেল I এসব কি ভাবছে ওI এই মেয়েটা ওকে বিশ্বাস করে এখানে নিয়ে এসেছে I ওর বাবা ভরসা করে একা বাড়িতে মেয়েকে রেখে গেছেন I অনিমা ওকে ঘৃণা করবে , কোনদিন ওর মুখ দেখতে চাইবে না I আর এক মুহূর্ত এখানে থাকলে সব ওলট-পালট হয়ে যাবে I মুনির উঠে দাঁড়ালো তারপর বিদ্যুৎবেগে ওর জামা কাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল I মুহূর্তে চেঞ্জ করে বেরিয়ে বলল আমাকে যেতে হবে I অনিমা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল I মুনির অনিমা থেকে বিদায় নিল না একবার তাকালো পর্যন্ত না আমি যাচ্ছি বলে গেট খুলে বেরিয়ে গেল I অনিমা কিছুক্ষণ ওর যাত্রা পথের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল তারপর দুইহাতে মুখ ঢেকে কান্নায় ভেঙে পড়ল I
লেখনীতে অনিমা হাসান
তোমাকে
পর্ব 12.1
অনিমা অনেকক্ষণ ধরে শাওয়ার নিল I এখনো ওর মাথা ঝিমঝিম করছে I বিকেলের ঘটনাটা মনে হচ্ছে কোন দুঃস্বপ্ন I মুনিরকে বলতে হবে এই বাড়ি ছেড়ে দিতে I ও একটা কমিউনিটির মধ্যে বাস করে I আশেপাশের লোকজন এসব জানতে পারলে নানান কথা হবে I মুনির এখন বিয়ে করতেই পারে I ওর এমন কিছু বয়স হয়নি I তাছাড়া ও সিঙ্গেল I ও চাইলে যে কাউকে বিয়ে করতে পারে I ইউনিভার্সিটি তে অনেক মেয়েই ওর জন্য পাগল, এমনটা শুনেছে অনিমা I এটা সত্যি একটা সময় ওর জন্য তীব্র অনুভূতি ছিল অনিমার মনে, হয়তো এখনো আছে কিন্তু মুনির তো ওকে কখনো ভালোবাসেনি I ও কিছুতেই মুনির এর দয়া নিতে পারবে না I ওকে আজকেই বলতে হবে বাড়ি ছেড়ে দিতে I
অবেলায় দীর্ঘ স্নানের পর অনিমার একটু শীত শীত করতে লাগলো I ঘরোয়া পোশাকের উপর একটা শাল জড়িয়ে নিয়ে ও নিচে নেমে এলো I এক কাপ গরম চা খাওয়া দরকার I
অনিমা নিচে নেমে ভুত দেখার মত চমকে উঠলো I ডাইনিং টেবিলে মুনির বসে আছে I ওর সামনে দু’কাপ ধূমায়িত চা I
– -এস অনিমা চা খাও
মুনির এমনভাবে ডাকলো যেন এটা ওর ই বাড়ি I অনিমা একজন অতিথি I অনিমা বুঝতে পারছে না মুনির কি করে ভেতরে এল I মেইন দরজা অনিমা বন্ধ করে রেখেছে I তবে কি বেসমেন্ট থেকে উপরে আসার দরজাটা খোলা ? অনিমা একটু জড়োসড়ো হয়ে গেল I ওর পরনে একেবারেই ঘরোয়া পোশাক I ফ্লোরাল লং স্কার্ট তার উপর ফিনফিনে সাদা শার্ট I ভেজা চুলগুলো দুপাশে ছড়ানো I এই পোষাকে ও কখনই কারো সামনে যায়না I অনিমা আচল দিয়ে মাথাটা ভালো করে ঢেকে সালটা গায়ে জড়িয়ে নিল I
-কয়েকটা ব্যাপার ক্লিয়ার হওয়া দরকার I মুনির কথা শুরু করলো
– আমি সামনের সপ্তাহের ফ্লাইট বুকিং দিচ্ছি I আমি চাই আমাদের বিয়েটা বাংলাদেশেই হোক I তুমি তোমার ব্যাংক লোন , অফিসিয়াল ছুটি সব ফাইভ উইক এর জন্য অ্যাপ্রুভ করে নাও I সেঁজুতির আর্ট ক্লাসে বলা হয়ে গেছে I স্কুলে ও কাল বলে দেবে I
অনিমা আকাশ থেকে পড়ল I সেঁজুতি এসব জানে?
-অবশ্যই জানে I ওর সঙ্গে কথা না বলেই আমি তোমাকে বলেছি ভাবছো ? তাছাড়া আমার বাসার সবাই সেজুতিকে সামনাসামনি দেখার জন্য অস্থির হয়ে আছে I সেঁজুতি ও খুব এক্সাইটেড I
অনিমা বিস্ময়ে কথা বলতে ভুলে গেল I খুব চেষ্টা করে কিছু একটা বলতে যাবে মুনির ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল
-তোমার পাসপোর্ট, তোমার আর সেঁজুতির একটা করে ফটো আইডি আমার লাগবে I সেঁজুতির পাসপোর্ট আমার কাছে আছে I তুমি কিছু বলতে চেয়েছিলে ? বল
অনিমার বিস্ময়ের ঘোর কেটে গেছে I ও তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল
-আমি কি তোমাকে একবারও বলেছি যে আমি এই বিয়েতে রাজি আছি ?
-না বলোনি তবে বলবে
-এতো কনফিডেন্স? কি ভাবো কি তুমি নিজেকে ?
মনির টের পায় অনিমার রাগ ধীরে ধীরে বাড়ছে I ওর গলা চড়ে যাচ্ছে
-কিছুই ভাবি না I তুমি রাজি হবে কারণ রাজি না হওয়া পর্যন্ত আমি এখান থেকে যাব না
অনিমা কাটাকাটা গলায় বলল
-তুমি কি প্রমাণ করতে চাও? মনির আহমেদ চৌধুরী একজন পরোপকারী ব্যক্তি ,এটা সবাই জানে নতুন করে প্রমাণ করার কোন প্রয়োজন নেই
-আমি কিছুই প্রমাণ করতে চাইছি না
-তবে কি চাইছো ? অনিমা গলা উঁচিয়ে বলল
-আমি শুধু তোমাদের দুজনকে এখান থেকে নিয়ে যেতে চাইছি I ফাইভ উইক পর তোমাদের রিটার্ন টিকেট করা থাকবে I তোমরা ফিরে আসবে I আমি হয়তো এখনই আসতে পারবো না
-তুমি অন্য বাড়ি দেখো মুনির I আমি আর তোমাকে এখানে দেখতে চাই না
মুনির হেসে ফেললো I বললো
-আমরা তো নেক্সট উইক এ চলেই যাচ্ছি I এই সাতদিনের জন্য তুমি আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেবে ? আচ্ছা শোনো পাসপোর্ট, ফটো আইডি ছাড়াও আমার আরো কিছু ডকুমেন্ট লাগবে I আমি তোমাকে জানাচ্ছি I
হঠাৎ করে অনিমার মাথায় রক্ত উঠে যায় I ও উঠে দাঁড়িয়ে গলা চড়িয়ে বলে
-তুমি আজ রাতেই এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে I বুঝেছ ?
মুনির শান্ত ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ালো তারপর বললো
-তোমাকে না নিয়ে আমি কোথাও যাবো না
অনিমা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে চিৎকার করে ওঠে
-তোমার এত সাহস হয় কি করে ? তুমি কি ভাবো নিজেকে ? আমার জীবনের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার তোমাকে কে দিয়েছে? বলতে বলতে অনিমা মনিরের শার্টের কলার খামচে ধরে I
মুনির কিছুই বলল না I নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টাও করল না I শান্ত চোখে অনিমার দিকে তাকিয়ে রইল I তারপর দুই হাতের করতলে ওর মুখটা ধরে ঠোঁটে একটা গভীর চুমু খেলো অনেকক্ষণ ধরে I
অনিমার সারা শরীর অবশ হয়ে আসছে I মনে হচ্ছে সময় থমকে গেছে I মুনির ওকে কতক্ষণ ধরে ছিল ও নিজেও জানে না I একসময় ও অনিমাকে ছেড়ে দিয়ে খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল
আমি আধা ঘন্টা পরে আসছি ডকুমেন্টগুলো টেবিলের উপর রেখে দিও I
তারপর ধীরে ধীরে দরজা খুলে বেরিয়ে গেল I
পর্ব 12.2
মুনির যখন হলে পৌঁছলো তখন গভীর রাত I ওর সারা শরীর ভেজা, দুই চোখ লাল I রুমে ঢুকে দেখল হাসিব তখনো ঘুমায়নি I
-আরে মামু তুমি কই ছিলা ? প্রোগ্রামের সব কাজ আমার উপর ফালাইয়া তুমি গায়ের I ওইদিকে অনিমা ও নাই I ওর গানের অ্যানাউন্সমেন্টর পরে দেখি সেও লাপাত্তা I
মুনির কোন জবাব দিল না চেয়ারের উপর থেকে টাওয়েল নিয়ে মাথা মুছতে লাগলো I
-এক মিনিট , তোরা দুইজন একলগে ছিলি নাকি ?
-হ্যাঁ
-কি ? তোরা একলগে ছিলি ? কস্ কি ? এইরকম রোমান্টিক ওয়েদারে একলগে কই ছিলা মামা ? সত্যি কইরা কতো চুম্মা টুম্মা খাইছোস নাকি ?
-ওফ হাসিব , কি যাচ্ছেতাই কথা বলিস
-তাইলে তুমি কওনা খুইলা
-অনিমার খুব মাথা ধরে ছিল I আমি ওকে বাসায় পৌঁছে দিই I বৃষ্টি নামল তাই ওদের বাসায় ওয়েট করতে হলো
-এতোক্ষন ওদের বাসায় ছিলি?
-না I বের হয়ে কিছু পাচ্ছিলাম না তাই হেঁটে আসতে হল
-অনিমা তোরে গান শুনাইছে ?
-কি?
-গান শুনাইছে কিনা ?
-হ্যাঁ
-কি গান ?
-রবীন্দ্র সংগীত
-কোনটা ?
-উফ ! এত কথা জানতে চাচ্ছিস কেন ?
-আরে ক না বেটা
‘ -‘এমনও দিনে তারে’
-আরে সাবাস তারপর?
-তারপর কি ?
-তুই কি করলি?
-আমি কি করবো?
-গান শুইনা তুই কি করলি ?
-আমি কি করবো চলে এসেছি
-আরে ধুর ! তুই একটা টিউবলাইট I
-মানে ?
-টিউবলাইট ও না I তুই একটা নষ্ট বাল্ব I এই গান শুইনা কেউ কিছু না বইলা পারে ? হুদাই মাইয়াটারে কষ্ট দিচ্ছস
-আমি ? আমি কষ্ট দিচ্ছি ? অনিমা কে? আমি?
-না তো কি ? তুই বুঝস না মাইয়াটা তোরে চায়
-অনিমা ? আমাকে ?
-হ রে ব্যাটা I ও হইল গানের মানুষ I ও তো তোরে গান দিয়াই প্রপোজ করব নাকি তোর মত 25 পাতার এসাইনমেন্ট লিখব ?
-তুই কি বলছিস আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা
-ও I কিছুই বুঝতেছ না ? ঠিক আছে তাহলে আমি তাহের ভাই এর সাথে কথা বইলা নেই যে আপনার লাইন ক্লিয়ার
-এখন এই তাহের ভাই টা আবার কে?
-ফোর্থ ইয়ার এর তাহের ভাই , আমারে ঐদিন জিজ্ঞেস করতেছিল অনিমার কেউ আছে নাকি I না থাকলে একটু সেটিং করে দিতেI আমি বলছি দেখেন বস ওই দিকে চোখ দিয়েন না ওইটা আমার বন্ধুর জিনিস I তা এখন যখন তুই ইন্টারেস্টেড না তাইলে…..
-হাসিব , তোকে আমি খুন করে ফেলবো
-আরে বাহ! তুমি নিজেও কিছু কইবানা অন্য কে ও কিছু করতে দিবা না তাইলে কেমনে হবে?
-কি বলবো ? তুই আমার অবস্থা দেখ I আমার নিজের একটা ঠিকানা নাই I এটলিস্ট একটা অবস্থানে তো আসতে হবে তা না হলে আমি কিভাবে ওর দায়িত্ব নেব?
-আরে! এখনই তোকে ওর দায়িত্ব নিতে কে বলছে ? তুই তোর মনের কথাটা ওরে বল I তুই ওরে চাস না?
-হ্যাঁ চাই, যেকোনো মূল্যে চাই
-এইতো লাইনে আসছো I কবে কবি ওরে?
-যত দ্রুত সম্ভব I হয়তো কালকেই
-গুড I কেমনে কবি কিছু ঠিক করছিস ?
-না I তোর কাছে কোন আইডিয়া থাকলে বল
-আমি কই কি সোজা গিয়া একটা চুমা দিয়া ফালা
-উফ ! হাসিব তোর মুখে কি কিছুই আটকায় না ?
-আচ্ছা আচ্ছা এর চেয়ে ও একটা ভালো আইডিয়া আছে
-চুপ I অনিমাকে নিয়ে আর একটা বাজে কথা বলবি তো নাক বরাবর ঘুষি খাবি
-আচ্ছা ! এখনই এই অবস্থা I আল্লাহ আমাদের উঠায় নাও I আমাদের আর কোন বেল নাই …
এইভাবে দুই বন্ধুর হাস্যরসে কখন রাত ভোর হয়ে যায় ওরা টেরও পায় না I পরদিন ভোর হতেই মুনির ক্লাসে চলে যায় আর অধীর আগ্রহে অনিমার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে কিন্তু অনিমা আসেনা I তারপর দিন না I তারপর দিন ও না I
চলবে…..
লেখনীতে
অনিমা হাসান