#সম্মোহনী_সেই_মেয়েটি
#পর্বঃ২৫,২৬
#লেখিকাঃরাদিয়াহ_রাফা_রুহি
পর্বঃ২৫
নিশা সেই কখন থেকে জুনইদ আর অনিলাকে কল করেই যাচ্ছে।শান্তা বেগম ছটফট করছেন।উনার মনে কু ডাকছে।উনার মন বলছে খারাপ কিছু হয়েছে তার ছেলের সাথে।
মায়ের মন কখনো ভুল ইঙ্গিত দেই না।উনি জোর করে নিশাকে জুনইদ কে কল দিতে বলছেন।কিন্তু জুনইদ এর ফোন রিং হয়ে কেটে যাচ্ছে।জুনইদ ফোন ধরছে না দেখে শান্তা বেগম এর চিন্তা আরও বেড়ে গেলো। অনিলা একাধারে অনিলা আর জুনইদ কে ফোন করেই যাচ্ছে কিন্তু কেউই ফোন তুলছেই না।নিশা আবার তার ভাই কে ফোন করে কিন্তু ফোন তুলার নাম ও নেই।এতো বার ফোন দেওয়ার পরেও যখন ওরা কেউই রেসপন্স করছে না তখন নিশা ভাবে ভাইয়ার লোকেশন টা ট্র্যাস করলেই জানা যাবে।যেই ভাবা সেই কাজ সে লোকেশন ট্র্যাস করতেই সেটা একটা আন-নোন এড্রেসে দেখাই।নিশা বলে উঠলো,
“মা ভাইয়ার লোকেশন পেয়ে গেছি।”
নিশা একটা জায়গার নাম বলতেই শান্তা বেগম বললেন, “এটা তো এডভোকেট সৃজনের এড্রেস।তোর ভাইয়া এখন ওখানে কি করছে?এতক্ষণে তো চলে আসার কথা?কোনো বিপদ হলো না তো আবার!আচ্ছা ওই মেয়েটা কোথায় আছে ট্র্যাস করে দেখ তো?”
“সেটা পসিবল না মা।অনিলার জিপিআরএস
অন নেই।
এরপর ওরা আর সময় নষ্ট না করে ড্রাইভার আর নিশাকে সৃজনের বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন শান্তা।বাড়িটা খুজে পেতে বেশি দেরি হলো না ওদের।আর ওই বাড়ির সামনেই জুনইদ এর গাড়িটা পার্ক করা ছিলো।তাই নিশা সিউর হয়ে গেলো যে এটা সৃজনের বাড়ি।ওখানে পৌঁছেই সৃজনের বাড়ির বেল চাপলো নিশা।পরে খেয়াল করে দেখলো দরজা টা খোলাই আছে।ড্রাইভার সহ নিশা ভেতরে গেলো।ভেতরে ঢুকে নিশা যা দেখে তা নিশার বুক কেপে উঠলো।জুনইদ মেঝেতে উপর হয়ে পরে আছে আর মেঝে টা র’ক্তে ভেসে যাচ্ছে। নিশা চিৎকার করে উঠে ড্রাইভার কে বলে।জুনইদ কে ধরে তারাতাড়ি করে হসপিটালে চলে আসে।তারপর বাড়ির সবাইকে ইনফর্ম করে।
•
দুইঘন্টা পর।জুনইদের বাড়ির লোক আর অনিলার বাবা-মা বিষন্ন মুখে ক্যাবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।ডক্টর বলেছেন জুনইদের সেন্স ফিরতে মোটামুটি দুই ঘন্টা লাগবে প্রচুর ব্লিডিং হওয়াই আবার ব্লাড জোগার করতে হয়েছে জুনইদের জন্য।মাথা স্ট্যাচ করে ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। তবু তো জুনইদের জ্ঞান ফিরে আসবে তবে অনিলার তো এখনো কোনো খবরই নেই।অথচ জুনইদের কাছে পুরো ব্যাপার টা না জেনে ওরা কোনো স্ট্যাপ ও নিতে পারছে না।অতএব জুনইদের জ্ঞাম ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
অনিলার বাবা মা তো টেনশনে হা’র্ট এটাক হওয়ার জোগার।তাই কোনো মতে জুনইদের বাড়ির লোকজন উনাদের আশ্বস্ত করতে চাইলেন।দুজনেই কোনো মতে বুকে পাথর বেধে জুনইদের জ্ঞাম ফেরার অপেক্ষা করছেন।দুইঘন্টা পর জুনইদের জ্ঞান ফিরলে নার্স এসে জানাই।সবাই দেখা করতে গেলে জুনইদের প্রশ্নে সবার মাথায় আকাশ ভেঙে পরে।
“অনিলা কোথায়?ও আসে নি?ও ঠিক আছে তো।ও আমাকে তো এখানে অনিলাই এনেছে বোধহয়। ও কোথায়?বলো না তোমরা ও ঠিক আছে তো?”
জুনইদের এরকম পালটা প্রশ্নে সবাই যতটা না অবাক হয়েছে তার থেকে বেশি শকট হয়েছে।যেনো শেষ সম্বল টুকুও হারিয়ে গেলো।জুনইদের কথা শুনে কারোর মুখ দিয়ে কথা সরছে না আর।এবার অনিলার বাবা থাকতে না পেরে চেচিয়ে উঠে বললেন,
“তুমি এসব কি বলছো জুনইদ?ও তো তোমার সঙ্গেই বেরিয়েছিলো। অনিলা কোথায় সেটা তো তোমার জানার কথা।ও কোথায় এটা তুমি আমাদের বলবে?আমার মেয়ে কোথায় বলো?”
নার্স বলে উঠলেন, “প্লিজ আপনারা শান্ত হোন।প্রচুর ব্লা’ড লোসের কারণে উনি এখন প্রচুর উইক।এই সময় উনাকে এতো বেশি স্ট্রে’স দিলে উনার কিন্তু ক্ষ’তি হতে পারে!”
জুনইদ ব্যস্ত গলায় বললো,”আমার কিচ্ছু হয়নি!”
জুনইদ লাফিয়ে উঠে নিজের হাতের থেকে ব্লাডের কানেকশন টা টেনে খুলতে গেলে নার্স বাধা দিয়ে বলে উঠেন,”আপনি এরকম এক্সাইটেড হবেন না।আপনি এরকম এক্সাইটেড হলে আমরা কিন্তু আপনাকে ঘুমের ওষুধ দিতে বাধ্য হবো।
জুনইদ বোদ্ধ উম্মাদের মতো চিৎকার করে বলে উঠলো, “ইউ জাষ্ট সাট আ’প! দিস টাইম ইজ নট ফর স্লিপ।আই হ্যাভ টু ফাইন্ড অফ মাই ওয়াইফ।
শান্তা বেগম কাদতে কাদতে বললেন,”কি হয়েছিল আমাদের সবাইকে খুলে বল তো?”
“এখন ওতো সময় নেই মা।গাড়িতে যেতে যেতে বলবো।”
কথা শেষ করেই জুনইদ আবার উঠতে যায় তখন সেই নার্স টি আবার বলে উঠে,”দেখুন আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন।আপনি এই অবস্থায় কোথাও যেতে পারবেন না!”
আলিফ হোসেন বললেন, “তুমি এখন কোথায় যাবে শুনি?আমার মেয়েকে যদি না পায় তোমাকে আমি দেখে নেবো!”
মনিরা তার স্বামীকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন।মায়াবী কে কথাটা জানানো হয়নি।এখন মায়াবী সবে সবে কন্সিভ করেছে তাই মনিরা তার বড় মেয়েকে কিছুই বলেনি অনিলার ব্যাপারে।তিনি আঁচল চেপে কান্না করছেন।তার বাচ্চা মেয়েটার সাথেই কেন এমন টা হচ্ছে বার বার।ফুপিয়ে উঠলেন তিনি।আলিফ হোসেন এবার স্ত্রীকে শান্তনা দিতে চাইলেন।কিন্তু যেখানে তিনি নিজেই মেয়ের জন্য চিন্তিত।
প্লিজ বাবা আপনি মাকে সামলান।আমাদের এক্ষুনি এডভোকেট সৃজনের বাড়ি যেতে হবে।
জুনইদের কাকু বললেন,তোর কি মনে হয় জুনইদ আমরা ওখানে দেখিনি।ওখানে তুই একাই ছিলিস আর কেউ ছিলো না তোর পাশে।”
তাহলে অনিলা কোথায় গেলো।জুনইদ রাগে নিজের মাথার চুল নিজেই ছিড়ছে।জুনইদের মাথায় এমনিতেই ব্যথা তারপর টেনশনে মাথা ব্যাথা শুরু হয়েছে।
“আমার অনিলার যদি কিছু হয় আমি কাউকেই ছাড়বো না।যে বা যারা অনিলার সঙ্গে এরকম করেছে তাদের আমি ঠিক খুজে বের করবো।”
বাড়ির সবাই এবার পুলিশ কে ফোন করলো।ফোন করে তারাতাড়ি সার্চ অপারেশন চালাতে বলে।কিন্তু কোনো ক্লু ছাড়া এগোনো তো যায় না।তাই সৃজনের বাড়িতে হওয়া সব কিছু খুলে বলে জুনইদ।তারপর পুলিশ নিজের মতো করে ইনভেস্ট শুরু করেন।তাছাড়া অনিলার বাবাকে যারা এটাক করেছিলো তাদের সবাইকে আটক করেছেন।কেউই শিকার করেনি এক্সাক্টলি কে কন্সপিরেসি করে ওদের দিয়ে এসব করিয়েছে।শুধু পুলিশ জিজ্ঞাসা বাদ করে জানতে পারে ওদের লিডার কোনো মহিলা।পুলিশের এবার ধারণা হয় এদেরই কেউ অনিলাকে কিডনাপ করেছে।আলিফ হোসেনের মেয়ে যেহেতু।তাছাড়া কাল কেস টা কোটে উঠার কথা ছিলো আর আজকেই এরকম একটা দুর্ঘটনায় পুলিশের সন্দেহ তীব্র হয়।
এবার জুনইদ কে সামলানো মুশকিল হয়ে পরেছে।ও কিছুতেই বসে থাকতে চাইছে না।কিন্তু ও এতোটাই উইক হয়ে পরেছে যে হাটতে পর্যন্ত পারছে না।তাই ওঁকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পারিয়ে রাখা হলো।
সবাই এবার স্তব্ধ হয়ে গেছে।পুলিশের কথা অনুযায়ী আলিফ হোসেনের ই কোনো পুরনো শত্রু তার উপর বদলা নিতে তার মেয়েকে অপহরণ করেছে।আলিফ হোসেন তাই নিজেকেই দায় করছেন।হসপিটালের দেয়ালে
হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি।তাছাড়া জুনইদের মতো করে চেষ্টা চালাচ্ছেন।অনিলার বাবা মা একদম ভেঙে পরেছেন।তাই উনাকে রেখেই জুনইদের বাবা ও কাকু অনিলাকে খুজতে বেরিয়ে পরলেন।অনিলার বাবা অনেক করে বললেও রমিজ আহমেদ আর আলতাফ আহমেদ সঙ্গে নিতে চান নি।
বাকিরা সবাই বসে আছে কেউই বাড়ি যায়নি।জুনইদ এর মা তো কেদে চোখ মখ ফুলিয়ে ফেলেছেন।যতই তিনি অনিলাকে প্রথম দিকে একটা ব্যাপার নিয়ে অপছন্দ করেন না কেন।এখন তো করে না আর অপছন্দ।জুনইদ এর জন্য উনার যতটা না টেনশন হচ্ছে তার থেকে বেশি টেনশন করছেন অনিলার জন্য। কষ্ট পাচ্ছেন তিনি খুবই।নিশা কাদতে কাদতে ওর মাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে,
“মা দেখে নিও অনিলার কিছুই হবে না।আমার অনিলার মতো এরকম একটা নিষ্পাপ মেয়ের আল্লাহ কখনোই কোনো ক্ষতি হতে দেবেন না।”
শান্তা বললেন,”তাই যেনো হয়রে মা।আল্লাহর কাছে দোয়া চা।মেয়েটার যেনো কোনো ক্ষতি না হয়।
এদিকে তাহরিমার কোনো খবর নেই।কলেজ যাবে বলে বেরিয়ে গেছে তাই এসব কিছুর ই কোনো খবর দেওয়া হয়নি ওঁকে।সবার চিন্তা আর উত্তেজনার মধ্যেই আরও কয়েকঘন্টা অতিবাহিত হয়ে যায় কিন্তু অনিলার কোনো খবর পাওয়া যায় নি।পুলিশ ও তন্নতন্ন করে খুজেছে।তারপর আলিফ হোসেনের উপর এটাক কারীদের ও মুখ খুলতে পারেন নি।কিছুতেই ওরা ওদের লিডার এর নাম মুখেও আনবেই না।বাধ্য হয়েই পুলিশ সব কটা কে ইচ্ছে মতো মেরেছে।তারপর ও ওরা কেউই মুখ খুলে নি।জুনইদের বাবা কাকু মাঝ রাতে ক্লান্ত হয়ে ফিরেছেন।উনারাও সব জায়গায় খুজেও পান নি।রাতে সবাইকে হসপিটালে এলাউ করবেন না।তাই জুনইদের কাকু থেকে গেছেন শুধু।বাকিরা চলে গেছে।আর অনিলার বাবা মা আজকে জুনইদের বাড়িতে আছেন।
যদিও জুনইদের মা যাবেন না বলে জেদ ধরেছিলেন তবুও উনাকে আর বাকিদের ও সেফটির প্রয়োজন আছে তাই সবাই বাড়িতে চলে আসে।অনিলার মা পাগল প্রায় মেয়ের জন্য।এখন উনাকে সামালানো টাফ হয়ে গেছে।তাও নিশা এখন উনার পাশেই আছে।
আর তাহরিমা অনেক রাতে ফিরে বাড়িতে।ওকে দেখে সবার খুব ক্লান্ত মনে হচ্ছিলো।
•
ভোর বেলায় জুনইদের ঘুম ভেঙে যায়।খুব কড়া ডোজের ওষুধ বুঝতে পারে না সে কোথায় আছে।ভালো করে লক্ষ্য করে দেখে এটা হসপিটাল। আগের সব কথা মনে পরতেই উঠে বসে।দুর্বল শরীর টা নিয়েই হাতের থেকে স্যালাইনের লাইন খুলে কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে আস্তে আস্তে।বেরিয়েই দেখে বাইরে একটা সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে ওর কাকু।জুনইদ কে আসতে দেখেই আলতাফ আহমেদ উঠে দাঁড়ান।
জুনইদ দুর্বল কন্ঠে বললো,”কাকু তুমি এখনো ঘুমাও নি?”
উনি একদম চুপ করে আছেন।কারণ জুনইদ এর পরে যে কুয়েশ্চন টা করবে সেটার উত্তর জুনইদের কাকুর কাছে নেই।ইভেন কারোর ই কাছে নেই।শান্তনা দেওয়া ছাড়া আর কোনো ভাষায় নেই।
“কাকু তুমি চুপ করে আছো কেন কাকু।আমি কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম বলো তো?এখন ঠিক কটা বাজ?আর অনিলার কোনো খবর পেলে?”
উনি প্রতুত্তরে শুধু দু ফোটা চোখের জল ফেলেন।আর তাতেই জুনইদ উত্তর পেয়ে গেলো।
“আমার ই দোষ আমি আমার অনিলাকে দেখে রাখতে পারিনি।ওঁকে আমার কাছে রাখতে পারিনি কাকু।” জুনইদ শব্দ করে কেদে দিলোম
“শুধু শুধু নিজেকে দোষ দিস না বাবা।এখনো সকাল হয়নি।সকাল টা হতে দে আমরা ঠিক খুজে বের করবো।এখন ভোর চারটে বাজে।”
“একটা রাত পেরিয়ে গেলো কাকু অথচ
অনিলার কোনো খবর পেলাম না আমরা।আর নিজেকে সামলাতে পারছি না!”বলেই জুনইদ ওর কাকু কে ধরে বাচ্চাদের মতো কান্না করতে লাগলো।
#চলবে
আসসালামু আলাইকুম।নামাজ কায়েম করুন।
#সম্মোহনী_সেই_মেয়েটি
#পর্বঃ২৬
#লেখিকাঃরাদিয়াহ_রাফা_রুহি
জুনইদের ফোন বেজে উঠতেই ওর হুস হলো।জুনইদের ফোন টা ছিলো ওর কাকুর কাছে।তখনই উনি ফোন টা এগিয়ে দেন জুনইদের দিকে।
“দেখ তো বাবা কে ফোন করেছে?”
জুনইদ চোখের পানি মুছে ফোন টা হাতে নিয়ে দেখলো একটা আন-নোন-নাম্বার।সে ফোন টা রিসিভ করতেই একটা মেয়ের গম্ভীর ধারালো কন্ঠঃস্বর ভেসে এলো,
“অনিলার আশীক কেমন লাগছে এখন?”
“হু দ্যা হ্যাল আর ইউ বা’**র্ড?”
“কুল কুল!এখনো তো খবর শুনো নি।তাতেই এতো রাগ।এগুলো জমিয়ে রাখো!”
“অনিলাকে কোথায় রেখেছিস সেটা বল?আমার অনিলার যদি কিছু হয় না তাহলে আমি তোকে প্রা’নে মে’রে দেবো।”
মেয়েটি একটা অট্টহাসি দিয়ে বলে উঠলো,”তোমার অনিলাকে তুমি এসে নিয়ে যাও।এমনিতেও ওঁকে আমার আর প্রয়োজন নেই।তাছাড়া আমি তো রা’তে ছিলাম না তখন হইতো আমার লোকেরা ওঁকে একেবারে ছি’ড়ে’খুঁ’ড়ে খে’য়ে’ছে!আমার লোকেরা আবার একি জিনিস বার বার ব্যবহার করতে পছন্দ করে না।একটা এড্রেস পাঠিয়ে দিচ্ছি টেক্সট করে চলে আসো।এসে নিয়ে যাও তোমার পেয়ারের বউকে!ওহ থুড়ি এখন অবশ্য তোমার একার বউ রইলো না।”
ইউ ষ্টুপিড গার্ল আই’ল জাষ্ট কি’ল ইউ।I will ki’ll you today.If you have the courage, come to me.
“তুমি আমার নাগাল ও পাবে না।তোমার কি মনে হয় আমি এতো কাচা খেলোয়াড় নাকি?অবশ্য তোমার জন্য একটু খারাপ লাগছে আমার।বেচারি! দু দুবার বউ ধ’র্ষ’ন হয়েছে বলে কথা!”
“তোর আমার সঙ্গে কিসের শত্রুতা।কেন এমন করছিস?কে তুই?”
“তোমার সাথে আমার কোনো শত্রুতা নেই তো।যা ছিলো সেটা তো ওই অনিলার বাবার সঙ্গে!ওর বাবার জন্যই আজ আমার বাবা নেই।আর তার শাস্তিও আমি দিয়ে দিয়েছি।আমার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।বাই দ্যা ওয়ে আমি তোমাকে এতো কথা বলছি কেন।এড্রেস টা টেক্সট করছি এসে নিয়ে যাও!”বলেই মেয়েটি কল কেটে দিলো।
জুনইদ রাগে ফোন টা ছুড়ে মারতে চেয়েও মারে না।তখনই ওর ফোনে টেক্সট আসে।জুনইদ আর ওর কাকু মিলে টেক্সট করা এড্রেসে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে এলো হসপিটাল থেকে।এই অবস্থায় জুনইদ ড্রাইভ করলে নিশ্চিত এক্সিডেন্ট করবে।তাই আলতাফ আহমেদ ড্রাইভিং সীটে বসতে চাইলেন।কিন্তু জুনইদ তো কোনো কথায় শুনছে না।সে জোর করেই ড্রাইভ করছে সজোরে।এতো স্পীডে গাড়ি চালাচ্ছে যে জুনইদের কাকু রীতিমতো ভয় পাচ্ছেন।আবার কোনো অঘটন যেন না ঘটে যায়।
•
অনিলা চোখ খুলেই নিজেকে একটা অচেনা বেডরুমে আবিষ্কার করলো।মাথাটা বড্ড ব্যাথা করছে।অনিলা দুই হাত দিয়ে নিজের মাথা চেপে ধরে কি হয়েছিল মনে করার ভীষণ চেষ্টা করতে লাগলো।আগের কথা গুলো মনে পরতেই অনিলা চেচিয়ে জুনইদ কে ডাকলো,
“জুনইদ,জুনইদ, হোয়ার আর ইউ?জুনইদ তো আমার সাথেই ছিলো তাহলে এখন ও কোথায়?ওর কোনো বিপদ হয়নি তো!”
অনিলা হাতের ঘড়িটা দেখে নিলো।ভোর পাঁচ টা বাজে।চোখের কার্নিশ বেয়ে অশ্রুমালারা গড়িয়ে পরলো তার।দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলো।এটা কোন জায়গা বুঝতে পারছে না সে।েঅনিলা দেখলো দরজা টা খোলাই আছে।সে আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে যেতে চাইলো বাইরে।কিন্তু আবার ফিরে এসে সেখানে থাকা বিছানা দেখতে লাগলো।ও যে বিছানায় শুয়ে ছিলো সেই বিছানায় সাদা ধবধবে চাদর টা একেবারে টান টান অবস্থায় রয়েছে। শুধু ও যেখানে শুয়েছিলো সেখানে একটু ডেবে গেছে।এক্সাক্টলি কি হয়েছে ও বুঝতে পারছে না।এদিকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না ও।ওর মাথা টা ঘুরছে হইতো শরীর দুর্বল জন্যই এমন টা হচ্ছে।আবার কালকের কথা মনে হতেই নিজেকে পা থেকে মাথা অব্দি অবলোকন করলো সে।কিন্তু না সব তো ঠিকই আছে।ইন্টারনাল কোনো প্রব্লেমস হচ্ছে না ওর।তাহলে তাকে কেউ কেন এখানে এনেছে।আবার দরজা টাও খোলা।অনিলা আস্তে আস্তে বাইরে বেরিয়ে এলো সেখান থেকে।আর ভাবতে লাগলো তাকে যদি কারোর কিড’নাপ করার ই থাকে তবে এভাবে ছেড়ে রেখেছে কেন।সামনে এগোতে এগোতেই দেখলো জুনইদের গাড়ি এদিকেই আসছে।অনিলা তারাতাড়ি করে জুনইদের কাছে গিয়ে ওঁকে জড়িয়ে ধরলো।জুনইদ কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে অনিলা বলতে শুরু করলো,
“আপনি ঠিক আছেন তো জুনইদ?আপনার কিছু হয়নি তো?আমি তো অনেক ভয় পেয়ে গেছিলাম।আপনার মাথায় ব্যান্ডেজ কেন?”
“রিলেক্স অনিলা।আমি ঠিক আছি তুমি ঠিক আছো তো?তোমার কিছু করেনি তো ওই মেয়েটা?”
যেখানে জুনইদ অনিলাকে নিয়ে ভয় পাচ্ছিলো সেখানে অনিলার মুখে ওর জন্য এমন কথা শুনে আশ্চর্য হলো।জুনইদ আরও কিছু বলবে তার আগেই ওর কাকু ওঁকে আটকে দিয়ে বোঝালো যা বলার বাড়ি গিয়ে বলবে।এতক্ষণ পর যখন ও উপলব্ধি করলো তখন অনিলাকে ছেড়ে একটু সরে দাঁড়ালো।
“যা আলোচনা করার বাড়িতে গিয়ে করো।যাও গাড়িতে গিয়ে বসো।”
অনিলা আর জুনইদ আর কিছু না বলে গাড়িতে গিয়ে বসলো।জুনইদ অনিলাকে কিছু বলতে ভয় পাচ্ছে।ওই মেয়েটা যেগুলো বললো সেগুলো কি সত্যি।নাকি তাকে শুধুই আতংকিত করার জন্য বলেছে কথা গুলো।আর প্রতিনিয়ত নিজেকে দোষ দিয়ে যাচ্ছে যে ও অনিলাকে প্রটেক্ট করতে পারেনি।
অনিলা বাড়ি এসে দেখলো সবাই চিন্তিত মুখে বসে আছে।অনিলাকে সুস্থ অবস্থায় দেখে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।অনিলার মা এসে মেয়েকে জড়িয়ে ধরেই কান্না করে দিলেন।তিনি সারাটা রাত নির্ঘুম কাটিয়েছেন।মেয়ের বিপদে কি মা রা নিশ্চিন্তে থাকতে পারে।কান্না যেনো বাধ মানছে না।অনিলার বাবা ও এসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চোখের জল ফেলছেন।উপস্থিত সবাই চোখের জল ফেলছে।
নিশা এসে পরানের সই কে জাপ্টে ধরলো।দুই জনে যেনো একে অপরের প্রান।কেদে কেটে বুক ভাসাচ্ছে সে।তার বান্ধবীর সাথেই কেন বার বার এমন হচ্ছে।সে আল্লাহর কাছে কতই না প্রার্থনা করেছে।আল্লাহ তার কথা শুনেছেন।হাজার হাজার শুকরিয়া আদায় করলো।
জুনইদ কিভাবে অনিলাকে পেয়েছে সব কিছু খুলে বলে।জুনইদ যেটুকু বুঝতে পারলো অনিলার সঙ্গে বাজে এমন কিছু হয়নি।মেয়েটা হইতো শুধু মাত্র তাকে ভয় দেখাতেই এসব বলেছিলো।অনিলাকে রেস্ট নিতে হবে ভেবে সবাই ওঁকে ঘরে যেতে বলে।জুনইদ যাওয়ার আগে অনিলার জন্য গ’রম দু’ধ দিয়ে আসতে বলে নিশাকে।
কিছুক্ষনের মধ্যেই নিশা অনিলাকে গরম দু’ধ খাইয়ে চলে গেলো।নিশা বেরিয়ে যেতেই জুনইদ ঘরের দরজা টা বন্ধ করে দিলো।তারপর জানালার কাছে গিয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো।কিড’নাপিং এর ব্যাপারে অনিলার কাছে থেকে আগে জানতে চাই সে।কিন্তু কোথা থেকে শুরু করবে বুঝতে পারছে না।এক নিমিষেই যেনো সমস্ত মনোবল কেউ নিংড়ে নিয়েছে।কিন্তু জুনইদ এর এরকম অদ্ভুত আচরণ এর কারণ অনিলা বুঝতে পারছে না।তাই অনিলা জুনইদের পাশে গিয়ে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে। কিন্তু প্রতুত্তরে জুনইদ কোনো কথায় বলছে না।ওর কন্ঠ কেউ যেনো চেপে ধরে আছে।চাইলেও মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না।চোখ ফেটে জল আসতে চাইলো তার।অনিলা জুনইদের হাত টা ধরে তার দিকে ফিরিয়ে ওঁকে দেখে বুঝার চেষ্টা করলো।জুনইদ সামনের দিকে ঘুরেই জড়িয়ে ধরে কান্না বিজড়িত কন্ঠে বললো,
“আ’ম সো স্যরি অনিলা!আ’ম সো স্যরি!
” স্যরি কেন বলছেন?আর আপনার ভয়েস টা এরকম কেন লাগছে।আমি তো ঠিক আছি।দেখুন,তাকান আমার দিকে?”
জুমইদ তাকাতে তাকাতে বলে,”স্যরি বিকজ আই কুডন’ট প্রটেক্ট ইউ।আ’ম এন ইউসলেস থিংক।আ’ম আ’ লুজার!”
“জুনইদ প্লিজ শান্ত হোন!”ওঁকে জড়িয়ে ধরে অনিলা শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করলো,
“কে বলেছে আপনি ইউসলেস।বরং আমিই তো আপনার খেয়াল রাখতে পারিনি।আপনি কতটা আঘাত পেয়েছেন মাথায়!”
“না আমি তোমাকে রক্ষা করতে পারিনি।কি হয়েছিলো তোমার আমাকে বলো।আমি শুনতে চাই।”
অনিলা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,”সৃজনের বাড়িতে কেউ আমার মুখে রুমাল চেপে ধরেছিলো।তারপর কিছু মনেই নেই।আর সকালে চোখ খুলে আমি ওই বিল্ডিংয়ে শোয়া অবস্থায় ছিলাম।কাউকেই পাইনি আমি সেখানে।দরজাটাও খোলা ছিলো।কেউই কোনো ক্ষতি করেনি আমার।ইভেন সারারাত আমি ঘুমিয়েই ছিলাম কিছুই বুঝতে পারিনি!”
“তাহলে ওই ফোন কল টার কি হবে?”
অনিলা ভ্রু কুচকে বলে,”কোন ফোন কল জুনইদ? ”
“সকালে আমাকে একটা মেয়ে ফোন করেছিলো।”
“কোন মেয়ে?”
“জানি না।তবে কন্ঠঃস্বর টা পরিচিত মনে হয়েছে আমার।”
জুনইদ নিজের ফোনের রেকর্ডিং অন করে সব কিছু অনিলাকে শুনাই।রেকর্ড টা শুনে একেবারেই চমকে উঠে অনিলা।অনিলা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো।কয় কিছু হয়নি তো তার সাথে।জুনইদ কি বলবে বুঝতে পারছে না।অনিলা এমন পাগলের মতো বিহেভিয়ার করছে কেন।ওর কি আগের কথা গুলো মনে পরছে।না না ওঁকে অস্বাভাবিক কিছু করতে দেওয়া যাবে না।জুনইদ অনিলাকে নিজের কাছে এনে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,
শান্ত হও।আমরা ঠিক তাকে খুজে বের করবো।আমি ছেড়ে দেবো না ওই মেয়েকে।পাতাল থেকে হলেও ওঁকে আমি খুজে বের করবোই।”
অনিলা শান্ত হওয়ার চেষ্টা করলো।তবে একটা ব্যাপার অদ্ভুত লাগলো।তার বাবা আজকে একটা কথাও বলেনি।শুধুই চোখের পানি ফেলেছে।যেনো উনি জানতেন অনিলা আসবে এখন।উনার মুখে অবাক হওয়ার বা চিন্তার কোনো ছাপ দেখা যায়নি।অথচ অন্য সময় হলে তো তার বাবা তার জন্য চিন্তা করতেন অনেক।তাহলে কি তার বাবা জানতো যে সে সুস্থ আছে।
জুনইদ অনিলার দুই চিবুকে হাত রেখে মুখ টা একটু উচু করে অনিলাকে সমান তালে চুমু খেতে লাগলো।উম্মাদের মতো গালে কপালে ঠোঁ’টে চু’মু খেয়ে আবার শক্ত করে জ’ড়িয়ে ধরলো।চোখ দুটো লাল হয়ে আছে।হইতো একটু আগের কান্নার জন্য এমন টা হয়েছে।
অনিলা শক্ত করে জুনইদ কে জ’ড়ি’য়ে ধরে রাখলো।এমন ভাবে ওঁকে জ’ড়ি’য়ে ধরে আছে যেনো মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলেই বোধহয় হারিয়ে যাবে।জুনইদ কান্না করতে করতে বলে,
“আমি তোমাকে হাড়াতে চাই না অনিলা। কখনোই না।আমি আজীবন তোমাকে পাশে চাই।আমার মৃ’ত্যু ছাড়া কেউ তোমাকে আমার থেকে আলাদা করতে পারবে না।কেউ আলাদা করার চেষ্টা করলে আমি তাকে শেষ করে দেবো।শে’ষ করে দেবো আমি তাকে।আই লাভ ইউ সো মাচ সোনা!”
অনিলাও আপ্লূত হয়ে ভেজা কন্ঠে বললো, “আই লাভ ইউ জুনইদ!আই লাভ ইউ মোস্ট!”
“চিরটা কাল থেকো আমার এমনই করে কাছে
ডাকলে যেন কাছে এসো আমায় ভালোবেসে!”
#চলবে।
আসসালামু আলাইকুম।নামাজ কায়েম করুন।