#আমি_তোমাকে_ভালোবাসি,১৪,১৫
#লেখনীতে_সুরঞ্জীতা_সুর
#চর্তুদশ_পর্ব
২১.
সারাদিন কোন কাজই ছিলো না চন্দ্রার তারপরও ক্লান্ত লাগছে। কয়দিন আগেই রাশেদ চন্দ্রাকে মাস্টার্সে ভর্তি করিয়ে দিয়ে এসেছে। তাই পড়াশোনাও করতে হয় এখন। পড়তে বসেছিল সে কিন্তু উঠে পড়েছে। মাথা ভার হয়ে আছে মনে হচ্ছে জ্বর আসবে। শীত শীতও লাগছে। তাই ঘড়ির কাঁটা নয়টা পেরুতেই সে শুয়ে পড়লো। রাশেদ টিভি দেখছিল রাতের খাবারের জন্য চন্দ্রাকে ডাকতে এলে দেখে চন্দ্রা ঘুমাচ্ছে। ডাক দেওয়ার পর চোখ পিটপিট করে তাকালো। রক্তলাল হয়ে আছে তার চোখ। ক্লান্ত স্বরে বললো, আপনি আর টুকু খেয়ে নিন আমি পড়ে খাবো।
কেন কী হয়েছে তোমার?
কিছু না। ঘুম পাচ্ছে। আমি একটু ঘুমাবো।
খেয়ে নাও। আমি জানি পরে তুমি খাবে না।
প্লিজ রাশেদ জোর করবেন না।
আচ্ছা ঠিক আছে।
রাশেদ চলে গেল। টুকুকে নিয়ে খেয়ে তারপর চন্দ্রার জন্য অল্প খাবার নিয়ে এলো। ঘরে এসে চন্দ্রার গায়ে হাত দিলো। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। এতোটুকু সময়ে কী হয়ে গেল? এই তো দিব্যি ঘুরে বেড়ালো ঘরে। চা বানিয়ে রাশেদকে দিয়ে সে পড়তে বসেছিল। তাই রাশেদও একটু স্পেস দিতে টিভি দেখতে চলে গেছিলো। এই মেয়ে একটু আগে কীভাবে এতো স্বাভাবিক গলায় কথা বললো কীভাবে?
চন্দ্রাকে ডাকলো রাশেদ।
চন্দ্রা উঠো।
বললাম তো পরে খাবো খেয়ে নিন আপনি।
খেয়ে নিয়েছি।
তাহলে শুয়ে পড়ুন আমি রাতে উঠে খাবো তারপর পড়তে বসবো৷ এখন একটু ঘুমিয়ে নিই।
চন্দ্রা তোমার ভয়াবহ জ্বর। থার্মোমিটার দিয়ে মাপলে ১০৩° ডিগ্রির কাছাকাছি হবে আবার বেশিও হতে পারে। উঠো। খেয়ে ঔষধ খাবে তারপর শুয়ে পড়বে।
রাশেদ প্লিজ।
উঠো তুমি কোন কথা শুনছি না।
রাশেদ চন্দ্রাকে টেনে তুললো তারপর বসিয়ে দিলো । চন্দ্রা হেলে পড়ে যেতে নিলে আবার খপ করে ধরে ফেললো রাশেদ। রাশেদ চিন্তিত গলায় বললো, এতোটা জ্বর কীভাবে বাঁধালে বলো তো?
চন্দ্রা ঘোলা ঘোলা চোখে তাকালো। রাশেদের কথা শুনতে পারলো কিনা তা বোঝা গেল না। রাশেদ চন্দ্রার পাশে বসলো। তারপর জোর করে অল্প একটু খাইয়ে দিলো। তারপর ঔষধ দিলো। তারপর শুইয়ে দিলো। চন্দ্রার এই মুহূর্তে বাস্তব জগতে কোন জ্ঞান নেই তা রাশেদ বুঝতে পারলো। সে সব কিছু গুছিয়ে শুতে এলো। রাশেদেরও শরীর বেশি ভালো না। মাথার চোটটা একটু বেশিই লেগেছে বোধহয়। একটু পর পর চিনচিন ব্যাথা করে। চন্দ্রার দিকে ফিরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার চোখ লেগে এলো৷ চন্দ্রা জ্বরের ঘোরে উল্টোপাল্টা স্বপ্ন দেখছে। সে দেখছে একটা সরু টানেলের ভেতর দিয়ে হাঁটছে। হঠাৎ টানেলটা পাল্টে হয়ে গেল রেলস্টেশন। একটু পর পর ট্রেন আসছে আর তা চন্দ্রার গা ঘেঁষে চলে যাচ্ছে। চন্দ্রা যতই পাশে সরুক ট্রেন তার কাছে কীভাবে যেন চলে আসে? হঠাৎ করে আবার স্বপ্ন পাল্টে গেল। সে দেখলো রাশেদ ধবধবে সাদা কাপড় পড়ে বিছানায় শুয়ে আছে। অবিকল বারসাত যেভাবে শুয়ে ছিলো। মাথায় মোটা ব্যান্ডেজ সেখান থেকে রক্ত চুইয়ে পড়ছে। তারপর ঘটে গেল ওর খুব অপ্রিয় ঘটনা। সেই ঘরে চন্দ্রা ঢুকলো। তারপর বৃদ্ধ এক ডক্টর এলো। তার বলা প্রত্যেকটি কথা রাশেদ সম্পর্কে বলছে যা বারসাতের সময়ও বলেছিল। চন্দ্রা স্বপ্নে ছটফট করতে লাগলো।
কিছুক্ষণ পর রাশেদের ঘুম ভেঙে গেল মনে হচ্ছে গরম উনুনের পাশে শুয়ে আছে। চোখ মেলে দেখলো চন্দ্রা ছটফট করছে আর বিড়বিড় করছে। রাশেদ একটু মনযোগ দিয়ে শুনতে চেষ্টা করলো। কিন্তু বুঝতে পারলো না। সে আলতো স্বরে ডাকলো, চন্দ্রা।
চন্দ্রা ঘুমের ঘোরে ফুঁপিয়ে উঠলো।
কী হয়েছে?
সব কিছু আবার শেষ হয়ে যাবে রাশেদ।
কী শেষ হবে?
রাশেদও চলে যাবে।
রাশেদ হতভম্ব হয়ে গেল। সে চট করে নিজেকে সামলে বললো, কে বলেছে তোমায়?
ঐ যে ডক্টর বলছে। রাশেদ শুয়ে আছে ধবধবে সাদা বিছানায়। মাথায় ব্যান্ডেজ।
কে বলেছে এই যে আমি? তোমার পাশে।
কোথায় আমি দেখতে পাচ্ছি না কেন?
চোখ খোল দেখতে পাবে।
না।
বলেই চন্দ্রা ফোঁপাচ্ছে। রাশেদ নিজে থেকে এগিয়ে গেল। এই প্রথম সে নিজে থেকে চন্দ্রাকে জড়িয়ে ধরলো। চন্দ্রা শান্ত হয়ে গেল। মাত্র কয়েকঘন্টা আগের সেই স্পর্শটার সাথে সে পরিচিত হয়েছিল। এতোটুকু সময়ের মধ্যে কতটা আপন মনে হচ্ছে।
চন্দ্রা আমি তোমার পাশেই আছি। খুব কাছে। চোখ খোল তাহলেই দেখতে পাবে। আমি কোথাও যাচ্ছি না তোমাকে ছেড়ে। কখনোই যাব না। সৃষ্টিকর্তা ব্যতীত কারো সাধ্য নেই তোমার থেকে আমাকে আলাদা করার। এগুলো তোমার উত্তপ্ত মস্তিষ্কের কল্পনা মাত্র। শান্ত হও। কিছু হয়নি।
চন্দ্রা কী জ্বরের ঘোরে কিছু বুঝলো? হয়তো বুঝেছে না হলে সে একেবারে চুপ হয়ে গেলে কেন? রাশেদের শরীর মনে হচ্ছে পুড়ে যাচ্ছে। এতোটা উত্তাপ চন্দ্রা শরীর। চন্দ্রা রীতিমতো কাঁপছে থরথর করে। চন্দ্রাকে কাঁথায় মুড়িয়ে দিয়েছে রাশেদ। আজকের সকাল থেকে সে শুধু অবাকই হচ্ছে। চন্দ্রার প্রত্যেকটা ব্যবহার রাশেদকে অবাক করে তুলেছে। এটাই কী সেই চন্দ্রা যে দিনের পর দিন পেরিয়ে যেতো কিন্তু কথা বলতো না? ঘরের ফার্নিচার বলে মতো মনে হতো তাকে। চলন্ত ফার্নিচার যে নিঃশব্দে চলাফেরা করতো। রাশেদও তাকে তার মতো ছেড়ে দিতো। কারন তার বিশ্বাস ছিলো একদিন না একদিন ঠিক হয়ে যাবে সব। তবে কী আজকেই সেই দিন? এই যে এতো ব্যাকুলতা সব কী তার জন্য ছিল? যদি তাই হয় রাশেদের থেকে বেশি খুশি আজকে আর কেউ নেই।
কিছুক্ষণের মধ্যে ঘাম দিয়ে চন্দ্রার জ্বর নেমে গেল। রাশেদ উঠে ফুল স্পিডে ফ্যান ছেড়ে দিলো। চন্দ্রা হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে গেল। সচরাচর পরিপাটি হয়ে থাকা মেয়েটা তার জন্য এলোমেলো হয়ে গেল, জ্বর বাঁধালো, জ্ঞান হারালো। রাশেদের ভাবতেই ভালো লাগছে। যদিও তার ভালো লাগা উঠিত নয়। তার উচিত ভয়ংকর মন খারাপ করা। কিন্তু চন্দ্রার শরীর খারাপের উপলক্ষ সে সেটাই ভাবতেই তার মনে হচ্ছে সব ঠিক হয়ে যাবে। সুস্থ, সুন্দর একটা সংসার হবে তার। পাঁচ দশটা সংসারের মতোই সাধারন হবে সেই সংসার।
চন্দ্রার ঘুম ভাঙ্গলো বেশ বেলা করে। ঘড়ি না দেখেই সে বুঝতে পারলো বেশ বেলা হয়েছে। কারন ভোর থেকে সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত তাদের বারান্দায় রোদ থাকে। এখন তা নেই। চন্দ্রা পাশ ফিরে দেখলো রাশেদ উঠে গেছে। তার মাথা ঝিমঝিম করছে। বহু কষ্টে উঠে চোখে মুখে জল দিলো। যদিও তার ইচ্ছে করছে গোসল করে ফেলতে তবে এখনো শীত শীত করছে। তাই মাথার তালুতে একটু জল দিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হলো। ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখলো রাশেদ বসে বসে টিভি দেখছে।
চন্দ্রার দিকে চোখ যেতেই সে হেসে বললো, ম্যাডামের ঘুম ভাঙলো তবে।
হ্যাঁ। সরি দেরি হয়ে গেল।
কোন ব্যাপার না। জ্বর কমেছে?
হ্যাঁ।
খাওয়ার পর আবার ঔষধ খেয়ে নিয়ো।
আচ্ছা ঠিক আছে। একটু বসুন কিছু করে দেই খাননি মনে হয়ে তাই না?
না খাইনি। তোমার জন্য বসে আছি।
একটু সময় দিন কিছু বানিয়ে আনি। চা খেয়েছেন?
হ্যাঁ। এটা খেয়েছি। তোমাকে এখন আর কিছু করতে হবে না। খাবারের ব্যবস্থা হয়ে গেছে।
কীভাবে? আবার দোতলার চাচা খবার দিয়ে গিয়েছিলেন নাকি? চন্দ্রা অবাক হয়ে বললো।
জ্বি না ম্যাডাম। আপনার বর টুকিটাকি রান্না করতে পারে।
তাই নাকি কখনো শুনলাম না তো?
শুনতে চাওনি তাহলে বলবো কীভাবে? নিজের ঢোল তো নিজে পেটানো যায় না তাই না?
চন্দ্রা হাসলো তারপর বললো, এসবের দরকার ছিলো না রাশেদ। কেন করেছেন?
তোমার জ্বর ছিল। রাতে প্রলাপ বকছিলে। তাই অবস্থা দেখে তুমি কীভাবে ভাবলে আমি তোমাকে রান্নাঘরে যেতে দিবো?
প্রলাপ বকছিলাম সত্যি?
হ্যাঁ।
কী বলেছিলাম?
সেটা তো বলা যাবে না। সিক্রেট সিক্রেট। বলে রাশেদ মুখ টিপে হাসলো।
চলো খেয়ে নিই।
চলুন।
চন্দ্রা টেবিলে গিয়ে দেখলো আটার রুটি আর আলুভাজি করেছে রাশেদ। পার্ফেক্ট গোল হয়েছে। এতো গোল চন্দ্রাও করতে পারে না। রুটি পাতে নেওয়ার পর চন্দ্রা বুঝতে পারলো রাশেদ কোনকিছু দিয়ে কেটে রুটি গোল করেছে। সে মৃদু হাসলো। যদিও খাবারের কোন টেস্ট পাচ্ছে না তারপরও জোর করে খেয়ে নিলো। হঠাৎ করে চন্দ্রার ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছে। সেদিনের সেই লেকটায়। রাশেদকে বললে কী সে নিয়ে যাবে? অবশ্যই নিয়ে যাবে। রাশেদ কোন সময়ই চন্দ্রাকে না করে না কোন বিষয়ে। এটা রাশেদের সব থেকে বড় গুন। তার থেকেও বড় গুন হলো তার রাগ খুবই কম। বিয়ের এতো মাসেও রাশেদকে হাতে গোনা কয়েকদিন রাগ করতে দেখা গেছে। কোন সময় চন্দ্রাকে কিছু নিয়ে জোর করে না। চন্দ্রা মনে মনে ভাবে এতো সুন্দর মনের মানুষের সাথে সে প্রথম প্রথম কী ব্যবহারটাই না করতো? রাশেদ ঘরে থাকলে সহজে তার সামনে আসতো না। সে আর রাশেদ রুমে একসাথে থাকলে চন্দ্রা দূরে দূরে থাকতো। এমন নয় রাশেদ খেয়াল করে নি। সে খেয়াল করতো। কিন্তু কিছু বলতো না। মাঝে মাঝে রাশেদ নিজে থেকে কথা বলতে এলে হ্যাঁ না তে জবাব দিতো। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পুরোই পাল্টে গেছে। চন্দ্রা এখন কথা বলে রাশেদের সাথে। রাশেদের সুবিধা অসুবিধা জানতে চায়। রাশেদ ঘরে থাকলে তার ইচ্ছে করে রাশেদের পাশে পাশে থাকতে। তবে কী চন্দ্রা আবার নতুন করে ভালবেসে ফেলেছে রাশেদকে? এক জীবনে কী ভালোবাসা দুইবার আসে? কীভাবে সম্ভব তা? পরশু রাতের কথা মনে হলে চন্দ্রার এখনো বুক কেঁপে উঠে। রাশেদের জ্ঞান ফেরার পর যখন চন্দ্রা রাশেদকে জড়িয়ে কাঁদছিলো তখনের রাশেদের করা প্রশ্নটায় সে এক মুহূর্তের জন্য থমকে গিয়েছিল। সত্যিই তো এতোটা কবে ভালবাসলো সে? তারপরই তীব্রভাবে নিজেকে তিরস্কার করলো চন্দ্রা। না না এটা ভালেবাসা না। আমি চাই না এটা ভালোবাসা হোক। ভালবাসলেই যে সে হারিয়ে যাবে। দ্বিতীয়বার হারিয়ে ফেললে সে আর সহ্য করতে পারবে না। মরে যাবে একবারে মরে যাবে। ভালবাসতেই হবে এমন তো কোন কথা নেই। এই তো বেশ আছি। অনেক ভালো আছি। না চাইতেই অনেক কিছু পেয়েছি। যে বিয়ে, সংসারের কোন মানেই ছিল না তার কাছে আজকে তার মনে হয় এই ঘরের প্রত্যেক জিনিস তার। এই ঘরের প্রত্যেকটা জিনিস নিয়ে তার ছোট্ট সংসার তবে ভরা সংসার। ভালবাসাবিহীন এই সংসারে সে যে এতোটা সুখী তাই অনেক। আর কিচ্ছু চাই না জীবনে। আর কিচ্ছু না।
চন্দ্রাকে কী বুঝতে পেরেছিল যেটাকে সে ভালোবাসাবিহীন সংসার বলেছে সেটা আদোও তা নয়। এই সংসারের প্রতিটা জায়গায় আছে রাশেদের প্রগাঢ় ভালবাসা। চন্দ্রার অজান্তেই সে ভালবাসার প্রাচীর তুলে দিয়েছে চারপাশে। আচ্ছা চন্দ্রা কী এটাও বুঝতে পারছে না যে সে কী ভীষন তীব্রভাবে তার পাশে বসে থাকা মন দিয়ে রুটি আর আলুভাজি খাওয়া মানুষটার প্রেমে পড়েছে? এই মানুষটার যখন প্রতিদিন হসপিটালের যাওয়ার সময় হয় তখন কী চন্দ্রার মন খরাপ হয় না। একবারের জন্য কী মনে হয়ে এই মানুষটা যাতে না যায়। তার কাছে বসে থাকুক। এক মুহুর্তের জন্য মানুষটা যেন চোখের আড়াল না হয়। হয় সব হয় কিন্তু তা সে বুঝতে পারে না। এগুলো কী ভালোবাসা না? সত্যিই কী দ্বিতীয়বার কেউ প্রেমে পড়ে না? কী মনে হয়?
চলবে………
#আমি_তোমাকে_ভালোবাসি
#লেখনীতে_সুরঞ্জীতা_সুর
#পঞ্চোদশ_পর্ব
২২.
চন্দ্রা আর রাশেদ সেদিনের লেকে এসেছে। চন্দ্রার খুবই প্রিয় একটা জায়গা হয়ে গেছে এটা। রাশেদকে নিয়ে আসতে বললে রাশেদ কিছুক্ষন মানা করে বলে জ্বর নিয়ে যাওয়া যাবে না। কিন্তু চন্দ্রা নাছোড়বান্দা আজ না গেলে আবার কবে না কবে রাশেদ নিয়ে আসে ঠিক নেই। সে তো ছুটিই পায় না। আজকের দিনটা শুধু ছুটি কাল থেকে আবার সেই সারাদিন হসপিটালে। রাশেদ বাধ্য হয়ে নিয়ে এসেছে।
চন্দ্রা গান শুনবে?
হ্যাঁ। কে গাইবে?
আমি।
চন্দ্রা হেসে বললো, আপনার আর কত গুন আছে বলুন তো?
রাশেদ মাথা চুলকে বললো, সেভাবে বলতে গেলে পড়াশোনার বাইরে আমি কিছুই করতে পারি না।রান্নাটা নিজের তাগিদে শিখতে হয়েছে। আচ্ছা আজকে সকালে খাবার কেমন লেগেছে তোমার?
বুঝতে পারি নি। কোন টেস্টই পাইনি জ্বরের মুখে।
আচ্ছা তাহলে আরেকদিন খাওয়াবো।
ঠিক আছে। গান না শোনাবেন বললেন?
হ্যাঁ। শোনাবো। কী গান শুনবে?
আপনার ইচ্ছা।
ঠিক আছে। তুমি একটু ওইদিকে ঘুরে বসো। মানে মুখটা ওইদিকে ফিরিয়ে রাখো।
চন্দ্রা অবাক হয়ে বললো, কেন?
রাশেদ লজ্জা লজ্জা মুখে বললো, আমার লজ্জা লাগছে তোমার সামনে গাইতে।
চন্দ্রা হো হো করে হাসলো। অনেক দিন পর মন খুলে হাসলো চন্দ্রা। এই রকম বোকা বোকা কথায় কথায় না হেসে থাকা যায়। রাশেদ মুখ কাঁচুমাচু করে আসে রইলো। অতি কষ্টে চন্দ্রা হাসি থামালো।
তারপর বললো, সিরিয়াসলি?
হ্যাঁ। রাশেদের উত্তর।
আচ্ছা। তার আগে বাদাম এনে দিন। বাদাম খেতে ইচ্ছে করছে।
রাশেদ ঠোঙা ভরে চন্দ্রাকে বাদাম এনে দিলো। চন্দ্রা একটা বাদাম হাতে নিয়ে টিপ করে ফাটালো তারপর হাতের তালুতে নিয়ে লাল পাতলা খোসা না ছাড়িয়ে খেতে লাগলো। রাশেদ সেদিকে অপলক তাকিয়ে রইলো।
তারপর চন্দ্রা রাশেদের দিকে তাকিয়ে বললো, নিন শুরু করুন।
কী শুরু করবো?
গান।
ও আচ্ছা। করছি। তুমি কিন্তু এদিকে তাকাবে না। ঠিক আছে?
আচ্ছা বাবা ঠিক আছে।
রাশেদ গান ধরলো।
কী নামে ডেকে বলবো তোমাকে মন্দ করেছে আমাকে ওই দুটি চোখে……
চন্দ্রা কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো। তাকে দেখে যে কেউ বলবে সে বড়সড় একটা ধাক্কা খেয়েছে। রাশেদ এতো বাজে গান করবে সেটা জানলে সে কখনোই তাকে গান ধরতে দিতো না। চন্দ্রা আশেপাশে খেয়াল করলো কেউ তাদের লক্ষ করছে কিনা। উৎসুক কিছু জনতা অদ্ভুত চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। চন্দ্রা তাদের দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করলো। তারপর রাশেদের দিকে তাকালো। সাথে সাথেই রাশেদ গান বন্ধ করে দিলো।
তারপর বললো, তুমি তাকালে কেন? আমি বলেছি না তুমি তাকালে আমি লজ্জা পাবো।
চন্দ্রা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। রাশেদ খেয়াল করে বললো, কী হয়েছে চন্দ্রা? শরীর খারাপ করছে? চলো বাসায় যাই।
চন্দ্রার ঘোর ভাঙলো। সে রাশেদকে বললো, না আমি ঠিক আছি।
ও তাই বলো। আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম।
চন্দ্রা রাশেদের দিকে তাকিয়ে বললো, আপনি গান শিখেছিলেন কখনো?
রাশেদ দুঃখী দুঃখী গলায় বললো, না শিখতে পারি নি।
কেন?
গানের মাষ্টারটা একদম ভালো ছিলো না। বলে কি না, এই যে খোকা গান গাইতে হলে সাধনার প্রয়োজন হয় এটা ঠিক। তার থেকেও আরেকটা জিনিস দরকার হয় সেটা হলো সুর। যা তোমার নেই। আর হবেও না এটা আমি আমার অভিজ্ঞতায় বুঝতে পেরেছি। তার উপর তুমি শুরু করেছে অনেক বয়সে। তোমার দ্বারা হবে না। তুমিই বলো তুমি তো শুনেছো এতো বাজে গলা আমার?
চন্দ্রা কী বলবে বুঝতে না পেরে একটু হাসার চেষ্টা করলো। তারপর বললো, পরে আর টিচার রাখেন নি কেন?
আরে কী বলবো আর পরে মা বাবাকে বলেছিলাম রাখার জন্য উনারা আমার কথাই শুনলো না।
চন্দ্রাও বুঝতে পারলো কেন উনারা পরে আর টিচার রাখেন নি। রাশেদের মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল সেটা চন্দ্রা বুঝতে পারলো। সে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করলো।
রাশেদ?
বলো।
আপনি জিজ্ঞেস করছিলেন না আপনার গানের গলা আমার কাছে কেমন লেগেছে?
রাশেদ উৎসুক হয়ে বললো, হ্যাঁ।
ভালো লেগেছে। যদি টিচার রাখতেন আরো ভালো হতো।
সত্যি বলছো?
হ্যাঁ।
তাহলে আরেকটা শোনাই?
চন্দ্রার মুখ শুকিয়ে গেছে। এই মিছে প্রসংশা ওর উপর ভারি পড়বে তা সে ঘুনাক্ষরেও টের পায়নি। পেলে কখনোই বলতো না। তার উপর এখানে কয়েকজন রাশেদের গান শুনে হেসেছে যা চন্দ্রার একদম ভালো লাগে নি। তাই সে পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দিতে চাইলো। অন্য ভাবে কথাটা বললো।
সে বললো, এখন আর না। পরে শুনবো।
এই কথা যে কেউ শুনে বলে দিতে পারবে চন্দ্রা চাচ্ছে না গান শুনতে কিন্তু রাশেদ ….
তাহলে একটা কবিতা আবৃতি করে শোনাই?
চন্দ্রা অসহায় চোখে তাকালো। সেই অসহায় চোখ রাশেদ পড়তে পারলো না। অনুমতি দেওয়ার আগেই সে কবিতা শুরু করলো।
অচির বসন্ত হায় এল, গেল চলে–
এবার কিছু কি, কবি করেছ সঞ্চয়।
ভরেছ কি কল্পনার কনক-অঞ্চলে
চঞ্চলপবনক্লিষ্ট শ্যাম কিশলয়,
ক্লান্ত করবীর গুচ্ছ। তপ্ত রৌদ্র হতে
নিয়েছ কি গলাইয়া যৌবনের সুরা–
ঢেলেছ কি উচ্ছলিত তব ছন্দঃস্রোতে,
রেখেছ কি করি তারে অনন্তমধুরা।
এ বসন্তে প্রিয়া তব পূর্ণিমানিশীথে
নবমল্লিকার মালা জড়াইয়া কেশে
তোমার আকাঙক্ষাদীপ্ত অতৃপ্ত আঁখিতে
যে দৃষ্টি হানিয়াছিল একটি নিমেষে
সে কি রাখ নাই গেঁথে অক্ষয় সংগীতে।
সে কি গেছে পুষ্পচ্যুত সৌরভের দেশে।
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
চন্দ্রা দ্বিতীয়বার ধাক্কা খেলো। সে ধরেই নিয়েছিলো রাশেদের গানের মতো কবিতাও ভয়ংকর হবে। কিন্তু সে ভুল ছিলো। এতো আবেগ দিয়ে কবিতা আবৃতি বোধহয় খুব কম মানুষ করতে পারে। একটু আগে যারাই রাশেদের গান শুনে ব্যঙ্গাত্মক হাসি হাসছিলো এখন তারাই ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। হয়তো বোঝার চেষ্টা করছে একটু আগের গান গাওয়ার ছেলেটা রাশেদই ছিলো নাকি?
এটা কেমন লাগলো?
অসাধারণ।
সত্যি বলছো?
হ্যাঁ।
রাশেদ ছেলেমানুষের মতো খুশি হলো। হয়তো এই রকম প্রসংশামূলক কথা আর কারো কাছ থেকে শুনে নি।
থ্যাংক ইউ।
ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম।
চন্দ্রা চলো উঠা যাক। অনেক সময় তো হলো।
আরেকটু থাকি প্লিজ।
ঠিক আছে। আচ্ছা তুমি কী কিছু বলবে আমায়?
কেন?
মনে হচ্ছে অনেকক্ষণ ধরে কিছু বলার চেষ্টা করছো।
আপনার পর্যবেক্ষন বেশ ভালো।
এটা কী কমপ্লিমেন্ট ছিল?
যা আপনার মনে হয়।
তাহলে আমি কমপ্লিমেন্ট হিসেবেই নিলাম।
আচ্ছা।
এখন বলো কী বলবে ভাবছিলে?
তেমন কিছুই না।
বলো তো?
বললে আবার সিরিয়াস হয়ে যাবেন না তো?
সিরিয়াসলি। তুমি আমাকে লাষ্ট কবে সিরিয়াস দেখেছিলে বলো তো। আমি কিছু মনে করবো না। বলো তুমি।
ইয়ে মানে সেদিন হাসপাতালে আমরা যখন ছিলাম….
কালকে ভোরের কথা বলছো?
না তারও আগে।
বারাসাতের মা যেদিন মারা যায় সেদিনের কথা বলছো?
হ্যাঁ।
ওকে। মনে হয় আমি বুঝতে পারছি তুৃমি কী বলবে?
কী বলবো?
ওই দিন আমি ওমন বিহেভিয়ার করেছিলাম কেন?
কী করে বুঝলেন?
বোঝা যায়। প্রশ্নটা তুমি এতো পরে জিজ্ঞেস করবে সেটা বুঝি নি। আরো আগেই করবে ভেবেছিলাম।
তাহলে উত্তরটা নিজে থেকেই দিয়ে দিতেন। তাহলে আজ আর জিজ্ঞেস করতাম না।
রাশেদ হাসতে হাসতে বললো, আজ বলবো বলে তখন বলি নি।
আচ্ছা তাহলে এখন বলুন। সেদিন ওমন করেছিলেন কেন? ডাক্তাররা সাধারণত রোগীর ক্ষেত্রে মানবিক আবেগ দেখায় না, আমার তো মনে হয় থাকেই না। এর থেকেও সিরিয়াস কিছু উনারা দেখে অভ্যস্ত। আপনার ক্ষেত্রেও তাই।
ছোট্ট একটা জিনিস ভুল বললে। আমাদের আবেগ নেই এটা ভুল কথা। আমরাও মানুষ ভালো লাগা, খারাপ লাগা আমাদেরও হয়। কিন্তু এটা আমরা দেখাই না। তবে কিছু কিছু কেইস থাকে সেগুলো থেকে ইচ্ছে করলেই নিজেকে সরিয়ে আনা যায় না। সেদিনের ঘটনাটা সেই রকম একটা কেইস ছিলো।
শুধুই এতোটুকু।
হ্যাঁ।
আমি তা বিশ্বাস করি না। এর পেছনে অন্য কোন কারন আছে আমার মনে হচ্ছে।
ওয়েল, হ্যাঁ ছিলো।
কাকে খুঁজছিলেন বারসাতের মায়ের কাছে গিয়ে?
আমার ফুপুমনিকে।
আপনার ফুপু আছে?
ছিল। এখন নেই। মারা গেছেন চার বছর আগে।
সরি।
ইট’স ওকে।
কীভাবে মারা গিয়েছিলেন? উনার বাসা কোথায় ছিল?
ফুপুমনি আমাদের সাথেই থাকতো। বিয়ে হয়েছিল কিন্তু উনার হাসবেন্ডের সাথে বনিবনা হয়নি, শ্বশুড়বাড়ি লোকজনও অত্যাচার করতো। জানো ফুপুর একটা ছেলে ছিলো। ছেলেটা বাঁচেনি। তারপর পরই আরো অত্যাচার শুরু হয়। তখন আব্বু গিয়ে নিয়ে আসেন। সন্তান হারানোর ট্রমা থেকে বেরুতে আমাকে সবসময় রাখা হতো উনার কাছে। আমিও থাকতাম বেশি উনার কাছে। বলতে গেলে উনার নেওটা ছিলাম। আমাকেও খুব আদর করতো। ফুপুকেও আমি মা ডাকতাম।
এতটুকু বলে রাশেদ একটু থামলো। চন্দ্রা এর মাঝে একবারও একটা কথা বলেনি। একটু পর রাশেদ আবার নিজে থেকে বলতে লাগলো, আমি খুব ঘুরতে পছন্দ করতাম। একটু ছুটি পেলেই পাহাড়, সমুদ্রে চলে যেতাম।আমি মেডিকেলে পড়ার সময় ফুপুর কিডনিতে সমস্যা দেখা দেয়। ডক্টর বলেন দুটো কিডনিই নষ্ট। অসুস্থ ফুপুকে প্রায়ই সময়ই দেখতাম পানির জন্য ছটফট করতেন কিন্তু ডক্টরের কড়া নিষেধ ছিলো বেশি পানি খাওয়া যাবে না। একদিন খেতে বসে কাউকে না বলে তিনি পানি খেলেন। ব্যস যা হবার হয়ে গেল। হাসপাতালের ভর্তি করালেন অবস্থার অবনতির জন্য। তখন আমি ছিলাম বান্দরবান। ফুপু আমাকে দেখতে অস্থির হয়ে গেলেন। এতো দুর থেকে এতো তাড়াতাড়ি যদিও আসা সম্ভব নয়। তাই ভাবলেন ফোনে কথা বলিয়ে দিবেন। আমি যেখানে ছিলাম সেখানে নেটওয়ার্কও ছিলো না। আমাকে না দেখার আক্ষেপ নিয়ে ফুপু মারা গেলেন। সেদিন যখন বারসাতের আম্মুকে দেখলাম আমার কাছে মনে হলো আমার ফুপু মনে হয় আমাকে ডাকছে। নিজেকে সামলাতে পারিনি চন্দ্রা। তোমাকে সেদিন বলেছিলাম না। এই অভিনয়ের জন্য আমাকে অস্কার দেওয়া উচিত। বিশ্বাস করো ওই ঘটনার একটি ক্ষুদ্রাংশও অভিনয় ছিলো না। তুমি কী বিশ্বাস করেছো আমার কথা?
চন্দ্রা উত্তর দিলো, হ্যাঁ। করেছি।
চন্দ্রা সেদিনের পর থেকে আমি আর ঘুরতে যাই না। তোমাদের বাড়িতে যখন যাওয়ার কথা হয় ফুপু মারা যাওয়ার পর তখনই আমার ঢাকার বাইরে পা দেওয়া। সেদিনের অপরাধবোধ আমাকে আজও কুড়ে কুড়ে খায়। তাই বারসাতের মায়ের কাছে যাওয়া একমাত্র কারন নিজের অপরাধবোধ থেকে বের হয়ে আসা।
পেরেছেন বের হতে?
কিছুটা।
রাশেদ ওই ঘটনায় আপনার কোন দোষ ছিলো না। শুধু শুধু নিজেকে দোষ দিয়েছে, অপরাধী বানিয়েছেন এটা ঠিক না।
সবাই তাই বলেছে।
সবাই ঠিক বলেছে। আপনার অপরাধবোধ থাকা উচিতও না। নেক্সট আর কোন দিন এই রকম নিজেকে দোষ দিবেন না। আচ্ছা আমি বোধহয় আপনার মনটা খারাপ করে দিলাম তাই না?
না না আমার মন ঠিক আছে।
সেটা দেখাই যাচ্ছে। এটা নিন।
রাশেদ তাকিয়ে দেখলো ছোট্ট একটা বক্স চন্দ্রা তার সামনে ধরে আছে। রাশেদ অবাক হয়ে বললো, এটা কী?
শুভ জন্মদিন রাশেদ। জানি অনেক আগেই চলে গেছে। কিন্তু আমার কোন দোষ নেই। সেদিন আপনি সারাদিন বাসায় আসেন নি। তাই আমিও উইস করতে পারি নি। আর এটা এতো দিন রয়ে গেছিলো। আমারও মনে থাকতো না। আজ ফাইনালি সুযোগ পেলাম। হাতে ধরুন।
রাশেদ হাতে নিলো।
খুলে দেখুন।
রাশেদ খুব দ্রুত খুললো। সুন্দর একটা ঘড়ি চন্দ্রা তাকে উপহার দিয়েছে৷ রাশেদের চোখে মুখে খুশির ফোয়ারা। হঠাৎ অপ্রত্যাশিত কোন কিছু পাওয়ার আনন্দে যেমন হয়ে যায় মানুষের মুখ ঠিক সেইরকম।
সে ঘড়ি হাতে নিয়ে চন্দ্রার দিকে এগিয়ে দিলো, তারপর বললে, পড়িয়ে দাও।
চন্দ্রা হাতে নিয়ে তা পড়িয়ে দিলো। রাশেদ চন্দ্রাকে বললো, থ্যাংক ইউ।
পছন্দ হয়েছে? আমি আপনার পছন্দ জানি না তেমন।
খুব পছন্দ হয়েছে।
তাহলেই ভালো।
রাশেদ মৃদু হাসলো। চন্দ্রাও সাথে হাসলো। কিছুক্ষণ পর চন্দ্রা আবার বললো, রাশেদ আপনি খুব ভালো মনের একজন মানুষ। আপনার মতো মানুষ জীবনসঙ্গী হিসেবে পেলে প্রত্যেকটি মেয়ে ভাগ্যবতী হবে।
রাশেদ এবার জোরে হেসে ফেললো। তারপর হাসি হাসি মুখে বললো, একমিনিট তুমি কী ইনডিরেক্টলি নিজেকে বলতে চাইছো তুমি ভাগ্যবতী?
চন্দ্রা হেসে বললো, যা মনে করেন। এবার উঠা যাক। অনেকক্ষণ বসলাম।
চলো।
চলবে……….