বৃত্তের_অন্তরালে পর্ব_১৯(শেষ পর্ব)
#পলি_আনান
সন্ধ্যার আযান ভেসে আসছে নাহিয়ানের কানে। কিছুক্ষন আগেই তার জ্ঞান ফিরেছে।নিজের রুমে একা ঝিম মেরে বসে কি যেন ভাবছে!অতীত বর্তমান আর ভবিষ্যৎ সব কিছু মিলিয়ে ভাবতে গিতে একটাই সমাধান আর উওর পেয়েছে আর তা হলো;ওহিজান আছে তো আমি আছি ওহিজান নেই তো আমিও নেই।আমরা দুজন দুজনের পরিপূরক ওহিজানকে ছাড়া আমি শূন্য তাকে ছাড়া আমি অপূর্ণ কিন্তু এই অপূর্ণ জীবনেও পূর্ণতার একটি ঢাল আছে।আর সেই ঢাল ওয়াফী। ওই বাচ্চা টা তো আমাদেরি ভালোবাসার ফসল কিন্তু সব কিছুর উর্ধে আমার ওহিজান।
দুইহাত মুঠ করে মাথার চুল টেনে রুমের চারিপাশে ঘুরতে থাকে।কার্ভাডের সামনে গিয়ে ওজিহার একটি ওরনা গলায় প্যাচিয়ে নেয় আর মাতালের মতো ঘ্রাণ নিতে থাকে।ওজিহার শরীরের সেই মিষ্টি পবিত্র ঘ্রাণ ছড়িয়ে যায় নাহিয়ানের নাকে।ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ওজিহার রেশমি চুড়ি গুলোর দিকে কিছুক্ষন পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থাকে।আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে খুজতে থাকে এক ভালোবাসায় আবব্ধ সে।সামনে দাঁড়িয়ে আছে যে মানুষটি সেই মানুষটি নামে মাত্র নাহিয়ান কিন্তু তার অস্তিত্ব জুড়ে শুধুই তার ওহিজান।বেডের দিকে তাকাতেই ওজিহার মোবাইলটা চোখে পরে। মোবাইল হাতে তুলে নিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে থাকে সব কিছু।তার হাসিমাখা ছবি , নাহিয়ানের সাথে খুনশুটি করার মূহুর্তে গুলো সবকিছুই ক্যামেরায় বন্ধি।কিন্তু বন্ধি করে রাখতে পারলো না নাহিয়ান তার ওহিজানকে।
হঠাৎ নাহিয়ানের চোখে পরে ৩৪মিনিট ২৪ সেকেন্ড এর একটি রেকড।মোবাইলটা কানের সাথে লাগিয়ে শুনতে থাকে কি আছে সেই ৩৪ মিনিটের ভয়েজ রেকডে।মূহুর্তেই নাহিয়ানের চোখের রং পালটে যায়। লাল হয়ে যায় চোখ মুখ।নিজেকে নিজেই বিশ্বাস করা যেন আজ তার জন্য কঠিন হয়ে পরেছে।
মোবাইল হাতে নিয়ে ছুটে যায় নিচে সে।ইশরাক সহ পরিবারের সবাই সোফায় বসে টুক টাক কথা বলছে। নাহিয়ানকে ছুটতে দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়।ইশরাকের সামনে দাঁড়িয়ে নাহিয়ান ওজিহার ফোন এগিয়ে দেয় আর বলে,
“ব…ব..ব্বা দেখ এখানে এইসব কি রেকড করা আছে শোন!
” এটা তো বউ মার ফোন?
“হ্যা তোমার ধারনা ঠিক তুমি শোন।
ইশরাক হাত বাড়িয়ে ফোন টি নেয় এবং সাউন্ড বাড়িয়ে সেই ভয়েজ রেকড চালিয়ে দেয়।পাশ থেকে বাকিরাও শুনতে থাকে।এই রেকর্ড টি হলো সেই রেকড যেদিন ওজিহা তার চাচা লুকমানের পায়ে ধরে আকুতি করেছিল, সরকার বাড়ির প্রতিটি সদস্যর যেন কিছু না হয়।ওজিহার মা বাবার মৃত্যুর জন্য দায়ী তার চাচা লুকমান সব শিকারক্তি এই রেকডে আছে।সবাই সবার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে কি করা উচিত বা বলা উচিত কারো মাথায় ডুকছেনা।নাহিয়ান তার বাবার কাছ থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে অনন্য ফোল্ডারে খুজতে থাকে।তার চোখে অটো কল রেকডের একটি ফোল্ডার।তাড়াতাড়ি সেখান থেকে একের পর এক রেকড গুলো চালাতে শুরু করে।প্রতিটি কল রেকড সবার কাছে বিষের কাটাঁর মতো লাগছে।নাহিয়ানকে ছেড়ে দেওয়া,সরকার বাড়িকে মৃত্যুপুরি তৈরি করা সহ সব কিছুর হুমকি রেকড হয়ে আছে।
” আমি আগেই বলছে ওই লোক ভালো না। আমার ছেলের সম্পত্তির প্রতি লোভ আমি আগেই দেখেছি ওর চোখে তোরা আমার কথা বিশ্বাস করিস নি!(কেদে কেদেঁ তফুরা খাতুন)
“মা আমি যানবো কি করে লুকমান ওজিহার আপন চাচা আর তার মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে দিতে এতো ফাঁদ পেতেছে আমি এখন কি করবো কিছুই আমার মাথায় আসছেনা।(ইশরাক)
“কি করবে মানে পুলিশে দিবে। যার জন্য আমার সংসারের এই বেহাল দশা তাদের কে তো আমি শান্তিতে থাকতে দেবো না কিছুতেই না(আচঁলে মুখ ঘুজে কেদেঁ তাসলিমা।)
হঠাৎ করেই নাহিয়ান দাঁড়িয়ে যায়।ভাবতে থাকে ওজিহার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলোর বৃত্তান্ত।
আচ্ছা ওহিজানের তখন কেমন লেগেছিল যখন জানতে পেরেছে তার মা বাবা মৃত্যুর জন্য দায়ী তার আপন চাচা।তখন কেমন লেগেছিল তার?যখন আমায় ছেড়ে যাওয়ার জন্য তাকে একের পর এক শর্ত দেওয়া হয়েছিল।শেষ মূহুর্তটায় কেমন লেগেছিল যখন ওই কালো যাদুর বশে তার পবিত্র শরীরটা নিস্তেজ হয়ে গেছিলো।
” আমি ওই বাড়িতে যাবো।
নাহিয়ানের এমন কথায় বাধাঁ দিলো সবাই।সবার একটাই কথা যে মানুষ একের পর এক জীবন্ত তাজা প্রান নিতে পারে সে নরপশু কখনো নাহিয়ানকে ছাড়বেনা।একদিকে ওজিহার মৃত্যু অন্যদিকে ওজিহার ভালোবাসার অভাবে নাহিয়ান যেন কাঙাল হয়ে গেছে।কারো বাধাই তার কাছে এখন মূল্যহীন।সে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই তার সামনে দাঁড়িয়ে পরে তফুরা।
“তোকে কিছুতেই আমি একা ছাড়বোনা দাদুভাই।তুই আমাদের ঘরের বাতি তোকে আমরা এই মরন ফাদেঁ পড়তে দেবো না।
” দাদিজান সরে যাও আমি যবই আমার ওহিজানের সাথে কেন এমনটা করলো। তাদের যদি সম্পত্তি পাওয়ার থাকতো আমায় বলতো বাবাকে বলতো তবুও কেন আমার বুক খালি করলো।আমার সন্তানকে এতিম বানালো সেই সব কিছুর জবাব আমি চাই দাদিজান!(চিৎকার দিয়ে)
নাহিয়ানের প্রশ্নের উওর কেউ দিতে পারলোনা।সবাই কেদে যাচ্ছেঁ নিরবে।সে আবারো যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে পেছন থেকে তফুরা হাত চেপে ধরে,
“আমি ও যাবো তোর সাথে দাদুভাই।
” কিন্তু…..!
“কোন কিন্তু নয় চল!
….
পাঠান বাড়ি জুড়ে আজ হই হই অবস্থা। ওজিহার মৃত্যুর খবর পেয়ে গেছে তারা।এবার সরকার বাড়ির বউ হয়ে মনিরা ভাবতেই আনন্দের সাগরে ভাসছে লুকমান।নাহিয়ান আর তার দাদি আড়ালে পেছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করে।নাহিয়ানকে সবাই আগে থেকেই চেনে তাই কাজের লোক যারা দেখেছে তারা তেমন কিছু ভাবেনি।লুকমান, মনিরা আর তা মা মিলে আলোচনায় বসেছে।তাদের আলোচনার মূল বক্তব্য “কি করে ওয়াফীকে দূর করবে”
“দেখো পাপা আমি কিন্তু শশুড় শাশুড়ী ওই দাদি শাশুড়ি নিয়ে কোমড়ে কাপড় ঘুজে সংসার করতে পারবো না। আমি শুধু নাহিয়ানকে নিয়েই থাকবো।
” আরে দূর একবার বিয়েটা হতে দে বাকিটা আমি সামলে নেব।সব সম্পত্তি আমাদের নামে করে নিয়ে ওই বুড়ো বুড়িকে রাস্তায় গিয়ে নামাবো এটাই আমার প্লান।তুই কি বলিস?
“তুমি যা বলবে তাই হবে।
এতোক্ষন আড়ালে সব কথা শুনছিলো নাহিয়ান আর তফুরা। তাদের মাথায় যেন আগুন লেগে গেছে কি বলছে তারা?এতো লোভী একটা মানুষ কি করে হয়।সম্পত্তির জন্য সুখের সংসারে আগুন লাগাতে দুই বার ভাব্বেনা।
“তা আর কোন দিনো হবেনা।
পর্দার পাশ থেকে নাহিয়ানের কথায় চমকে যায় সবাই।পেছনে এসে তফুরা খাতুন ও দাঁড়ায়।
” নাহিয়ান বাবা তুমি কখন এসেছো?(অবাক হয়ে লুকমান)
“এসেছি আগেই আর তোদের সব কথা শুনে নিয়েছি।কে বিয়ে করবে তোর মেয়েকে?আমি তো না, কখনো না মরে গেলেও না!(অবজ্ঞার হাসি দিয়ে)
“ওর মতো খারাপ মেয়ে আর তোর পরিবার টাই খারাপ আমি কখনো আমার নাতিতের সাথে বিয়ে দেব না(তফুরা)
তফুরার কথায় দাত কিড়মিড় করে তাকায় লুকমান। কিন্তু সামনে বলে,
” কি বলছেন আপনি আমরা কি করেছি?
“কি করিস নি আমার বাড়ির বউ আর তার পুরো পরিবারটাকেই তুই খুন করেছিস।
” মিথ্যা অপবাদ দিবেন না আপনি।আপনি আমার বন্ধুর মা বলে ছেড়ে দিলাম।
“কি করতি তাহলে আমাকেও মেরে ফেলতি সেই কালা যাদুর প্রভাবে নাকি ছুরি ঢুকাবি?
তফুরা খাতুনকে উত্তেজিত হতে দেখে বিচলিত হয়ে যায় নাহিয়ান।হঠাৎ মুনিরা এসে তাকে জড়িয়ে ধরে।যত দূরে ঠেলে দিতে চাইছে তত গায়ের সাথে চিপকে লেগে যাচ্ছে।
“যা হওয়ার হয়েছে। এবার তুমি আর আমি এক হতে পারলেই হয়।ওই গাইয়াঁ স্বভাবের মেয়েটা মরেছে তাতে কি ওর বাচ্চাকে এতিম খানায় দিয়ে এসো!
মুনিরার কথা গুলো নাহিয়ানের শরীরে কাটার মতো বিধেঁছে।সে মনিরার গালে কসিয়ে দুইটা চড় দেয়,
” সে গাইয়া নয় সে পবিত্র। আমার বাচ্চা এতিম খানায় যাবেনা তার পরিচয় আছে এই নাহিয়ান সরকার তার বাবা।আমি মানুষ করবো তাকে।
“এই তুমি আমার মেয়ের গায়ে হাত দিলে কেন। ওই দুইটাকার মেয়ের জন্য আমার মেয়ের গায়ে হাত তুলেছো এটা কিছুতেই আমরা মেনে নিতে পারবো না।
নাজমার কথায় মুনিরা চোখ মুখ ফুলুয়ে আরেকটু নেকা করে কান্নার অভিনয় করলো।
” এতো কথা আমি শুনতে চাই না।আমার কাছে সব প্রমান আছে তুই কাকে কাকে মেরেছিস এবার তোর জেল হবে আমি নিশ্চিত।
“হা হা হা কোন দিন ও না।হ্যা সবাইকে আমি মেরেছি তা নিশ্চিত থাক। টাকা উপর দিয়ে হেটে আমি সব থানা থেকেই বেরিয়ে আসতে পারবো ওইসব নিয়ে আমি ভাবি না।
‘ভাবতে তোকে হবেনা আমার মৃত বউয়ের কসম কেটে বলছি তোর ফাসির ব্যবস্থা আমি করবই।
ঠিক তখনি পুলিশ নিয়ে বাড়িতে উপস্থিত হয় ইশরাক।
” বাবা পুলিশ এসেছে “মনিরার কথায় ঘাবড়ে যায় লুকমান।
“তোদের কাছে প্রমান কি আমি মেরেছি সবাইকে?(বাকা হেসে লুকমান)
“মনে আছে এই বাড়িতে ওজিহাকে বলা কথা গুলো সে সব কিছু রেকড করে রেখেছে তখন।আর আজ আমার হাতে সব প্রমান আছে তুই বাচবিনা নিশ্চিত থাক।
হঠাৎ মুনিরা তফুরা খাতুনের গলায় ছুরি চেপে ধরে।
” সাব্বাস,! সাব্বাস! এই না হলে আমার মেয়ে পুরাই বাপের মতো শুরু করেছে।তা বাবা নাহিয়ান সব প্রমান আমার হাতে দিয়ে দাও নাহলে বুঝতেই পারছো?
নাহিয়ান একবার তফুরার দিকে আরেক বার করে লুকমানের দিকে তাকাচ্ছে সে পুরো দোটানায় পরে গেছে কি করবে এখন।
“দাদুভাই দিস না কোন প্রমান দিস না তুই। আমার কিচ্ছু করতে পারবেনা তারা।
হঠাৎ রুমে পুলিশ প্রবেশ করায় ঘাবড়ে যায় লুকমান মুনিরা আর নাজমা।তিন দলের মাঝে তৈরি হয় দারুন দস্তা ধস্তি।এক পর্যায়ে নিজের অজান্তেই মনিরা তফুরা খাতুনের বুকে ছুরি টা দেবে দেয়। তৎক্ষণি মাটিতে লুটিয়ে পরে তফুরা।এভাবে শেষ হয় আরেকটি প্রাণ।দীর্ঘ ৬২ বছরের অবশেষে ইতিটানে তফুরা। সকলের মায়া ত্যাগ করে পাড়ি জমায় না ফেরার দেশে।
পুলিশ ধরে নিয়ে যায় মুনিরা, নাজমা,লুকমানকে।তাদের রিমান্ডে নেওয়া হলে বেরিয়ে আসে সকলের কাছে আরেকটি অজানা তথ্য। ওজিহার মৃত্যুর জন্য পরোক্ষ ভাবে দায়ী তার আপন মামা,মামি আর মামাতো বোন মারিয়া।ওজিহার রুম থেকে জমির দলিল গুলো যে মারিয়া সরিয়েছে তা স্বীকার করে মারিয়া নিজে।বিশ্বাস আর ভরসার হাত ওজিহার কাছে ছিল মাত্র একটি।আর সেটি হলো মামার হাত ছোট থেকেই মামাকে অন্ধ বিশ্বাস করতো।মামার বলা প্রতিটি কথা অক্ষরে অক্ষরে বিশ্বাস করতো।আর শেষ মূহুর্তে সেই মামাই ঠকিয়েছে তাকে।সামান্য সম্পত্তির জন্য কেড়ে নিয়েছে একটি নিষ্পাপ প্রান।
সবকিছু যানতে পেরে যখন ছিহ ছিহ রটিয়ে যায় তখন বেরিয়ে আসে আরেকটি অন্তরালের সত্য। প্রতিশোধের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে এসেছে এতো মাস মুহিবের ভেতর। শেষ পর্যায়ে সুযোগ বুঝে লুকমানের সাথে হাত মিলিলে ঝোপ বুঝে কোপ মারে সে।তাদের সাথে ডিল হয় ওজিহাকে মারার আগে এক রাতের জন্য ওজিহা তার।সেই সব সত্য মেনে নেয় লুকমান এবং ওজিহার মামা।সবটাই তাদের প্লান মোতাবেক চলছিল কিন্তু শেষে ওজিহা যখন নাহিয়ান কে ছাড়তে অস্বীকার যানায় তখন নতুন করে পরিকল্পনা আটঁতে থাকে সবাই মিলে।সব খেলা শেষে শুধু মাত্র ওজিহার একটা রেকডেই পালটে যায় দাবার গুটির চাল।
তফুরা খাতুনের মৃত্যু নাহিয়ানকে আরো দুর্বল করে দেয়।যখন সত্যটা যানতে পারে তখন সে মানসিক চাপে ভুগতে থাকে।টানা সাতমাস মানসিক অসুস্থ থাকে নাহিয়ান।নিজেকে অন্ধকারের একটি রুমে গুটিয়ে নেয়।সারাদিন মুখ দিয়ে বিড়বিড় করতে থাকে “আমার ওহিজান,আমার ওহিজান ফিরে এসো”। তিন থেকে চার বার আত্নহত্যাও করতে যায় কিন্তু ভাগ্যর জোরে বেচে যায়। বন্ধুদের সঙ্গ পর্যন্ত এড়িয়ে যেত।ইশরাক আর তাসলিমার চোখের জলও পালটে দেয়নি নাহিয়ানকে।ওয়াফীকে তখন তার অসহ্য লাগতো। ওয়াফীকে দেখলেই তেড়ে আসতো মারার জন্য। হঠাৎ একদিন তখন প্রায় ওয়াফীর একবছর হয়ে এসেছে।নাহিয়ান অন্ধকার রুমে বসে ওজিহার ওরনার ঘ্রাণ নিতে ব্যস্ত।তখন ওয়াফীকে নিয়ে রুমে প্রবেশ করে তাসলিমা।নাহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বুকটা খা খা করে উঠে তাসলিমার।দাড়ি চুল বড় হয়ে চেহারা অদ্ভুত হয়ে গেছে।গালের হাড় বেরিয়ে করুন অবস্থা।ওয়াফীকে দেখে চিৎকার করে উঠে নাহিয়ান.
” এই ছেলেকে এখানে কেন এনেছো?এই ছেলে অপয়া তোমরা আমার ওহিজানকে এনে দিতে পারো না। আমি কিচ্ছু যাইনা আমি শুধু ওহিজানকে চাই!
“একবার কোলে নে শুধু একবার। দেখ তোর আর ওজিহার ছেলে। কতো সুন্দর দেখতে! একদম পবিত্র মায়াবী ঠিক দেখতে তোর ওহিজানের মতো(আগ্রহ নিয়ে তাসলিমা)
নাহিয়ান একটু ভালো করে পরখ করে সত্যি ওয়াফী দেখতে তার মায়ের মতো।টানা টানা চোখ।গোলাপের পাপড়ির মতো ফুটন্ত মিষ্টি ঠোট।মুখখানায় মায়ায় বাধানো।নাহিয়ান দুই হাত বাড়িয়ে ওয়াফীকে কোলে তুলে নেয়।নাহিয়ানের গালের দাড়ি গুলো দুই হাতে মুঠ করে টেনে ওয়াফী তার মিষ্টি কন্ঠে ডেকে উঠে হৃদয় জাগানো সেই ডাক।
” ব্বাবা হ!! বাবা হ!বাবাহ!বাবা।
ওয়াফীর মুখে বাবা শব্দটি টনিকের মতো কাজ করে।নাহিয়ান খিলখিল করে হেসে উঠে বাচ্চাটাকে বুকে জড়িয়ে নেয় তারপর হুট করেই কেদে দেয়।
তারপর নিজেকে পরিপাটি করে। বাংলাদেশে থাকা ওজিহার এবং নিজেদের সম্পত্তি সহ সব কিছু এতিম খানায় দান করে। ইশরাক, তাসলিমা,আর ওয়াফীকে নিয়ে পাড়ি জমায় ইউএসএ।এদিকে জেলে বসে কর্মের ফল ভোগ করতে থাকে সেই কালপিটরা।
🍁🍁🍁বর্তমান🍁🍁🍁
অবাধ্য চোখের জলকে আটকে রেখে পুরো কথাটি বর্ণনা করে নাহিয়ান।ওয়াফী, তাসলিমা,ইশরাক সবাই কেদেঁই যাচ্ছে।পুরোনো দিনের ক্ষত যেন আবার তাজা হয়ে উঠেছে।
“এবার বুঝলেতো বাবা কেন তোমায় বিডিতে নিয়ে যাই না।আমাদের কোন আত্নীয় সজনের প্রয়োজন নেই আমরা শুধু আমাদেরকে নিয়েই বেচেঁ থাকবো।
ওয়াফী ছুটে গিয়ে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে। আর কাদতে কাদতে বলে,
” সরি বাবা আমি তোমায় কষ্ট দিয়েছি।আমায় মাফ করে দিও!
“দূর বোকা ছেলে একদিন তোমায় সব সত্যিটা যানতে হতো না হয় তুমি আজকেই যেনে গেলে।
” হুম!
“মা যাও ওয়াফী বাবাকে নিয়ে রুমে যাও।ঘুম পাড়িয়ে দাও অনেক রাত হয়ে গেছে(তাসলিমাকে উদ্দেশ্য করে)
রাতের আকাশে আজ আবারো পূর্ণিমার চাদের দেখা মিলেছে পরিবেশটা জ্বল জ্বল করছে চাঁদের মায়াবী আলোতে। নাহিয়ানের মনে পড়ে যায় সেই বিয়ের প্রথম রাতের কথা।দুজনে মিলে ছাদে বসে চন্দ্রবিলাসে ব্যস্ত ছিল।মনে পড়ে যায় হুট করে ওজিহার কপালে দেওয়া সেই উষ্ণ ভালোবাসার পরশ।চাঁদের দিকে তাকিয়ে নাহিয়ান বলতে থাকে কত শত কথা।
” যানো ওহিজান এই চাঁদটা প্রতি পূর্ণিমায় নিয়ম করে উঠে তার মায়াবী আলো ছড়িয়ে দেয় চারদিকে কিন্তু তোমাকে আর আপন করে পাই না।(দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে)একটি গাছ আমি খুব যত্ন করলাম। নিয়মিত পানি দিলাম যত্ন করলাম কিন্তু গাছটি ফল দেওয়ার সময় শুকিয়ে মরে গেলো। কতটা কষ্টের মাঝে আছি যানো ওহিজান।এখনো তোমায় অনুভব করি তোমার স্মৃতিগুলো আমি ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রেখেছি।আচ্ছা আল্লাহ যদি তোমায় নিয়েই যাবে তবে আরো কয়েক বছর আগে কেন এলে না। কেন এলেনা আমার জীবনে। তুমি প্রথম তুমি শেষ তোমাতে আমি পূর্ণ তুমি ছাড়া আমি শূন্য।
মনে আছে ওহিজান বিয়ের দিন রাতে প্রায় ছয় বছর পর তোমায় গান শুনাই।আর গান গাইনি কখনো। আজ যখন তোমার ছেলে আবারো সবটা মনে করিয়ে দিল আজ আবার তোমায় উদ্দেশ্য করে গান গাইবো।যানো ওহিজান এই কয়েক বছর কতোটা কস্ট ছিলাম তুমি যানো না।আমাদের ভালবাসার ফসলটা তুমি দেখলেনা।তোমার চাওয়াটাই পূর্ণ হয়েছে আমাদের ছেলে হয়েছে তুমি তা যানলে না আর ওহিজান তুমি শেষ মূহুর্তে যদি আমার সাথে একটু কথা বলতে একটু কথা বলার সুযোগ আল্লাহ দিতো তবে আমার কষ্ট টা কিছুটা হলেও কম হতো।
নাহিয়ান টি-টেবিল থেকে গিটারটি হাতে তুলে নেয় আর চোখ বন্ধ করে গানের জগৎতে পাড়ি জমায়। ভাবতে থাকে ওজিহার সাথে কাটানো সেই মূহুর্ত গুলো।
🥀🥀যদি থাকতে তুমি বাচঁতে আমার লাগতোনা কঠিন.. যদি থাকতে তুমি!যদি থাকতে তুমি কাটতো আমার দিন গুলো রঙিন..যদি থাকতে তুমি!যদি থাকতে তুমি সামনে তোমার এনে দিতাম সব যা যা চাইতে তুমি!তুমি বলার আগে বুঝতাম আমি যখন মন খারাপ করে থাকতে তুমি!এমন হবে কোন দিন আমি আগে ভাবি নি (২) যে আমায় ছাড়া বাচঁতো না সে কেন বিলিন।?
যদি থাকতে তুমি বাচঁতে আমার লাগতো না কঠিন। যদি থাকতে তুমি!
🥀আমার চোখে ভাসে শুধু তোমার ওই মুখ!কানে বাজে তোমার গলার স্বর।(২)তোমায় মনে পড়লে করি শুধু পাগলামি উঠে এই মাতাল মনে ঝড়… এমন কোন দিন আমি আগে ভাবিনি…….
সম্পূর্ণ গানটি শেষ করতে পারলোনা নাহিয়ান।তার আগেই আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে কেদে উঠে।”হে আল্লাহ আমি কি পাপ করেছিলাম।আমার সাথে কেন এমনটা করলে। আমার ভালোবাসার মানুষ গুলোকে কেন আমার থেকে দূরে নিয়ে যাও।আমি মৃত্যু চাই তাও তুমি দিলে না।অন্তরালে কি ওজিহা আমায় সত্যি ভালোবেসেছিল।যদি সত্যি ভালোবেসে থাকে তবে সবটা আমাকে যানাতো। সবকিছু আমার আড়ালে অন্তরালে রাখতো না।ওহিজান আমায় কেন কষ্ট দিলে ফিরে তো আর আসবেনা তবে তোমায় কোন দিন ভুলবো না।আমার জীবনের প্রথম ও শেষ ভালোবাসা তুমি।তোমায় তো ভুলবো না। মনের মনি কৌঠায় তোমায় যত্ন করে রেখে দিয়েছি।
নাহিয়ান চেয়ারে বসে সেই ডাইরিটা হাতে তুলে নেয়। ডাইরির একদম শেষ পৃষ্ঠায় লিখতে থাকে তার ওহিজানকে নিয়ে কিছু কথা…….
💞তোমাকে নিয়ে সবটাই রহস্য। রহস্যের জালে ফেসেঁ তোমার ভালোবাসায় পড়লাম।ভালোবাসার একটি বৃত্ত তৈরি করলাম।সেই বৃত্ত জুড়ে ছিল শুধু ভালোবাসা,যত্ন, মায়া,মোহ, সুখ! কিন্তু সবকিছুর অন্তরালে রয়ে যায় এক অপ্রিয় সত্য যা হয়ত বেচেঁ থাকলে তুমি নিজেই সহ্য করতে পারতে না।তোমার কলিজার মামু তোমায় ঠকিয়েছে এই কথা তুমি কিছুতেই মানতে পারতে না।হয়তো এতোদিনে ধুকে ধুকে মরতে।আর আমার অন্তরালে রেখে গেলে এতো গুলো মিথ্যা সম্পর্কের আসল চেহারা।তোমার অন্তরালে রয়ে গেল আমাদের ফুটফুটে একটি ছেলে হয়েছে!এতো গুলো বছর আমার অন্তরালে ছিল তোমায় কালা যাদুত বর্শে মারতে চেয়েছে সবাই।তারা সফল ও হয়েছে কিন্তু পাপ লোভ কখনো মানুষকে রেহায় দেয় না। তাদেত শাস্তি তারা এখনো ভোগ করছে।শুধু আমি হারালাম তোমায়।তোমাকে নিয়ে আমার সবটাই রহস্য লাগে ওহিজান তোমাকে এখনো আমি চিনলাম না বুঝলাম না হয়তো।
শত কিছু অন্তরালে থাকলেও বেচেঁ থাকবে আমাদের বৃত্তময় ভালোবাসা……!
টুপটাপ ডাইরির পাতা জুড়ে পড়তে থাকে নাহিয়ানের চোখের জল।ডাইরিটা বুকের সাথে চেপে ধরে কিছু সময় কাদতে থাকে।হঠাৎ পেছন থেকে ওয়াফী ডেকে উঠে আর দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে,
“বাবাহহহহহহ!
নাহিয়ান ওয়াফীকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,
” আই মিস ইউ ওহিজান।আই রিয়েলি মিস ইউ।আমাদের আবার দেখা হবে একসাথে আল্লাহর কাছে। (ফ্লাইং কিস ছুড়ে)
______সমাপ্ত_____
🥀গঠন মূলক মন্তব্য আশা করছি!
🥀খুব শীঘ্রই নতুন গল্প””You are mine “”নিয়ে আসবো “