বৃত্তের_অন্তরালে পর্ব_১৫

বৃত্তের_অন্তরালে পর্ব_১৫
#পলি_আনান

গাড়ি ছুটে চলছে সরু চিকন কাচাঁ মাটির রাস্তা দিয়ে।রাস্তার দুই ধারেই ঝোপ ঝাড় আর ছোট খাটো খাল।পিচ ঢালা রাস্তা পেরিয়ে পাঠান বাড়িতে যাওয়ার জন্য আবার কাচা রাস্তায় উঠতে হয়।গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে আছে নাহিয়ান আর তার পাশে বসে আছে ওজিহা। নাহিয়ানের মুখে বিরস ভাব।সে কিছুতেই ওজিহাকে নিয়ে এতো দূর আসতে রাজি হয় নি।ওজিহার ডেলিভারি ডেট এখনো প্রায় তিনমাস বাকি।এই মূহুর্তে বাড়ি থেকে বের হওয়াটাই সবচে বড় রিক্স।তবে ওজিহার মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ।এই গ্রামেই ওজিহার জন্ম এই গ্রামেই তার বাবার সব কিছু ছিল তার মায়ের ছিল ছোট্ট একটি সোনার সংসার। কিন্তু আচমকা এক ঝড়ে সব লন্ড ভন্ড করে দেয় সাজানো সংসার।তার যখন এক বছর বয়স সেই তখন এই গ্রাম ছেড়েছে সে, আর ফিরে তাকায় নি এই গ্রামে, ছায়া পর্যন্ত মাড়ায় নি সে।আজ আবারো তার বাবা মায়ের শেষ স্মৃতির স্থানে সে আছে, চোখ ফাটিয়ে কান্না আসছে তার। কিন্তু সে কাদবে না সে যদি এখন কাদে তবে নাহিয়ান হুলুস্থুল বাধিয়ে ছাড়বে।তাই সে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে আছে।
কয়েকদিন আগে লুকমান ওজিহা আর নাহিয়ানকে রিকুয়েষ্ট করে যায় কয়েক দিনের মধ্যে যেন ওজিহাকের নিয়ে তাদের গ্রাম থেকে ঘুরে আসে।নাহিয়ান কিছুতেই ওজিহাকে নিয়ে এই মূহুর্তে বের হবে না কিন্তু ইশরাক আর লুকমানের হাত জোর করা রিকুয়েষ্টএ সে শেষ পর্যন্ত রাজি না হয়ে পারলোনা।
ওজিহার স্মৃতির পট আরেকটু ঘন হয়ে আসে তার আচমকাই মনে পরে যায় তার বাবার বংশের নাম ছিল পাঠান বংশ আর এই গ্রামেই তাহলে কি সে তার বাবার বাড়িতেই যাচ্ছে।এদিকে মামু যে বলেছে তার চাচা তাকে খুজছে ওই লুকমান কে তার বড্ড পরিচিত মনে হয়েছে ইয়েস, লুকমানের চেহারা আর তার মৃত্য বাবার চেহারা হুবাহুব মিল।তার মানে লুকমানি তার চাচা।আচ্ছা লুকমান কি তাকে চিনে নিয়েছে তাই কি তাদের এতো জরুরি তলব করেছে।না আর ভাবতে পারছেনা চিন্তারা আরো জেকে বসেছে মাথায়।দুশ্চিন্তায় মাথাটা পিন পিনে ব্যথা অনুভব হচ্ছে, যদি সত্যি লুকমান তার চাচা হয় তবে নিশ্চই খারাপ কিছু ঘটবে তার সাথে।গলা ফাটিয়ে কান্না আসছে তার। ইচ্ছে করছে নাহিয়ানকে শক্ত করে একটু জড়িয়ে ধরতে।তার সকল, চাওয়া- পাওয়া,দুঃখে, কষ্টে বিষন্নতায়,দুশ্চিন্তার সবকিছু সারিয়ে যাওয়ার মেডিসিন নাহিয়ান।নাহিয়ানের বুকে মাথা রেখে একটি ঘুম দিলেই তার সব দুশ্চিন্তার অবসান ঘটে। মনের মাঝে সৃষ্টি হয় এক আলাদা শক্তি।
নাহিয়ানের দিকে একপলক তাকিয়ে ওজিহা প্রশ্ন করে,
“” কয়টা বাজে?
বাম হাতে থাকা ঘড়িটার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নাহিয়ান বলে,
“সকাল আটটা পনেঁর মেডাম।শরীর কি বেশি খারাপ লাগছে তোমার?
” না আমি ঠিক আছি।”
আরো কিছুক্ষন চুপ থেকে ওজিহা বলে,
“একটা কথা রাখবে?
” কি কথা ওহিজান?
“গাড়িটাকে এক পাশে সাইড করো!
” কেন তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে বলো কোথায় কষ্ট হচ্ছে(তাড়াহুড়ো করে)
“আরে না যা করতে বলছি তাই করো।
নাহিয়ান কিছুক্ষন পর সুযোগ বুঝে একটি যায়গায় গাড়ি পার্ক করে।
” এবার বলো ওহিজান কি হয়েছে তোমার।
“আপনি একটু আমার দিকটায় এগিয়ে আসুন তো!
ওজিহার এমন নির্লিপ্ত কথায় ভরকে নাহিয়ান।সে অবাক হয়ে ওজিহার কথামতো কিছুটা এগিয়ে আসে। ওজিহা হুট করেই নাহিয়ানের গলা জড়িয়ে
ওর বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে নেয়।নাহিয়ান মুচকি হেসে তার ওহিজানকে জড়িয়ে নেয়।
” ওহিজান কি হয়েছে তোমার?
“জানিনা!
“শরীর খারাপ লাগছে বলো আমায়.
” না।
“তবে কি হয়েছে হঠাৎ তোমার এইভাবে জড়িয়ে ধরলে যে!
” তোমাকে কি আজকাল জড়িয়ে ধরতে পারমিশন লাগবেনা কি।তুমি আমার! আমার সম্পত্তি! আমার যা ইচ্ছে আমি তোমায় নিয়ে তাই করবো।এতো কথা বলো কেন তুমি।
নাহিয়ান মুচকি হেসে ওজিহাকে আরো শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নেয়।বুকের ভেতরটায় বয়ে চলে এক প্রশান্তি।সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায় তার যদি ওজিহা একবার ছুয়ে দেয়।জীবনে যদি তার আর কিছু চাওয়ার থাকে তা হলো ওজিহাকে নিয়ে সুখে সংসার করা।সারাজীবন এইভাবে হাসি খুশিতে থাকা।
.
“আপনার কথা মতো ওই মেয়েকে এই বাড়িতে আসতে বলেছি, বাকি কাজ টা বলুন কি করতে হবে?
সামনে থাকা আলখাল্লার পরিহিত লোকটির দিকে তাকিয়ে বললেন লুকমান।
” এদিকে আয়!
লুকমান কান এগিয়ে নিলে সেই লোকটি লুকমানের কানের সামনে কি বিড়বিড় করতে থাকে। কথা শেষ হলেই দুজনে মিলে একটি বিশ্রি হাসি হাসে।
“যা শিখিয়ে দিলাম তাই কর।বাকি টা পরে দেখা যাবে।
” অবশ্যই এবার আমি আসি!
লুকমান সেই অন্ধকার রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
.
সূর্যের রশ্মি সরু হয়ে গাড়ির গ্লাস দিয়ে ডুকে ওজিহার চোখে পড়ছে।আর সেই অবাধ্য রশ্মিকে বাধা দিতে চাইছে নাহিয়ান কিন্তু কিছুতেই পারছে না। ওজিহার চোখে আলোর রশ্মি পরতেই পিটপিট করে চোখ খুলে নাহিয়ানের শরীরের সাথে সে লেপ্টে আছে আর তা দেখে ধরফর করে উঠে বসে।চারিদিকে একবার পরখ করে বলে,
“কয়টা বাজে আমি কখন ঘুমালাম?
“যখন শান্তিতে আমার বুকের মাঝে এসে টুপ করে লেপ্টে গেছো ঠিক তখন।আর এখন বাজে সকাল দশটা।
” কি!আমি এতো সময় ঘুমালাম।আপনি আমায় ডাকেননি কেন?
“আমার বুকে তোমাকে শান্তিতে ঘুমতে দেখলে আমার আর কিচ্ছু লাগেনা ওহিজান।ধুনিয়া উচ্ছন্নে যাক তুমি শুধু আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমোবে আমি তাই দেখব।
” হয়েছে এবার চলুন দেরি হয়ে যাচ্ছে আমাদের।
নাহিয়ান মুচকি হেসে গাড়ি চালাতে শুরু করে।
.
অবশেষে পাঠান বাড়ির দার প্রান্তে এসে পৌছে যায় তারা।ওজিহা বুকের ভেতরের কষ্টটাকে চাপা রেখে সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলে কিন্তু মনে মনে ঘৃণার আগুন জ্বলতে থাকে দাউ দাউ করে।
“আসতে কোন সমস্যা হয় নি তো বাবা?
” নানা আংকেল সব ঠিক ঠাক ছিল।
“আচ্ছা, এবার পরিচয় করিয়ে দি, আমার মেয়ে মনিরা আর আমার ওয়াইফ নাজমা।
কুশল বিনিময় পাট শেষ করে ওজিহা আর নাহিয়ানকে বিশ্রামের জন্য আলাদা রুমের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল। ওজিহা নিজের রুমে ঘুমিয়ে আছে তার পাশে নাহিয়ান মোবাইলে গেমস খেলছে।এমন সময় দরজায় নক করে মনিরা।
” আসবো নাহিয়ান?
“জি আসুন”
মনিরা ঘরে ডুকেই নাহিয়ানের পাশে ধপাস করে বসে পরে।সকাল থেকে নাহিয়ান বুঝে নিয়েছে মনিরা গায়ে পরা স্বভাবের মেয়ে।
“আমার একটা রিকুয়েষ্ট রাখবেন প্লিজ?
” জি বলুন কি রিকুয়েষ্ট (ওজিহার দিকে আরেকটু চেপে যায়)
“চলুন আমরা গ্রামটা ঘুরে দেখে আসি।
” সরি আমার ওয়াইফ অসুস্থ আমি এখন তাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারবোনা.।
“ও তো ঘুমচ্ছে চলো আমরা দুজন মিলে ঘুরে আসি”
“আমি যাবোনা আপনি যান। আর আমার এই মূহুর্তে কোথাও যেতে ইচ্ছে করছেনা।

” তা বল্লেতো হবেনা বাবা।
দরজার পাশ থেকে কারো কন্ঠ শুনে চমকে তাকায় নাহিয়ান আর মুনিরা।দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নাজমা।
“দেখোনা মাম্মি সে কিছুতেই আমার কথা শুনছেনা।
” নাহিয়ান মুনিরার সাথে ঘুরি এসো যাও আসার পর থেকেই এক রুমে পরে আছো।
“না আন্টি আমি ওহিজানকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।
” আরে ও তো এখন ঘুমোচ্ছে তুমি যাও আমি ওজিহাকে দেখবো তুমি চিন্তা করো না।
“না আন্টি আমি………
মুখের কথা শেষ হতে দিলো না তার আগেই মুনিরা নাহিয়ানের হাত চেপে ধরলো।
” আরে চলতো এতো বউ বউ করতে হবেনা।
মুনিরা নাহিয়ানের হাত চেপে দরজার বাইরে নিয়ে গেলো আর নাজমা ওজিহার দিকে তাকিয়ে একটি শয়তানি হাসি হাসলো।
চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here