বৃত্তের_অন্তরালে পর্ব_১৪

বৃত্তের_অন্তরালে পর্ব_১৪
#পলি_আনান

দীর্ঘ চার বছর পর সরকার বাড়িতে পা রাখলেন ইশরাক সরকারের বন্ধু লুকমান।বিদেশের মাটিতে তারা একি সাথে পরিচিত হয়।এখন তাদের বন্ধুত্ব একটি ভালো অবস্থানে আছে।লুকমান নামি দামি একজন ব্যবসায়ী। গ্রামে শহরে তাদের জমিজামার কমতি নেই এক মেয়ে এবং সাথে ওয়াইফকে নিয়ে তার সংসার।হঠাৎ করেই তাকে এই বাড়িতে দেখতে পেয়ে অবাক হয়ে যায় ইশরাক তবে খুশি ও হয় বটে।
“কিরে কেমন আছিস কত দিন পর তোর সাথে দেখা,আমার তো মনে হয় ভুলেই গেছিস আমাকে”
কথাটা একটু অভিমানী শুরে বললো ইশরাক।
“আরে দূর তোদের কি ভুলা যায়। ছিলাম একটু কাজে ব্যস্ত ছিলাম।তা তোর ব্যবসার কি খবর?
” চলছে চলার মতো। তোর মেয়ে ভাবী ওদের আনিস নি কেন?
“কি দরকার শুধু শুধু এতো দূর জার্নি করে আসা।তোদের তো কতবার বলেছি চল একটু ঘুরে আয়।আমার এলাকা যদিও গ্রাম তবে আমার বাড়িতে ডুকলে মনে হবেনা তুই গ্রামে আছিস। ”
“তা তো আমি যানি।তা বাড়ির সবাই কেমন আছে?
” আছে তোদের দোয়ায় ভালই আছে।আমি তোদের কাছে এসেছি একটা বিশেষ আবদার নিয়ে!
“কি আবদার?
” তা নাহয় পরেই বলছি! আচ্ছা বাকিরা কোথায় নাহিয়ান কোথায়?
“তোকে তো আসল কথাই বলতে ভুলে গেছি! আমাদের নাহিয়ান বিয়ে করেছে সে বাবা হতে চলেছে!
ইশরাকের কথাটি লুকমানের কাছে বজ্রের ধ্বনির মতো লাগলো তিনি এসেছেন তার একমাত্র মেয়ের সাথে নাহিয়ানের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে কিন্তু এদিকে নাহিয়ান বিয়ে করে বাবা হতে চললো তিনি একটু খবরও পাননি।তাকে বাকরুদ্ধ দেখে ইশরাক ভ্রু যুগল কুচকে বলে,
” নাহিয়ানের বিয়ের কথা শুনে তোর এই হাল কেন তুই খুশি হোস নি”
ইশরাকের দিকে তিনি হাসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনে মনে বলেন,
“খুশি হওয়ার মতো কোন কথাই বলিস নি যে আমি খুশি হবো।তোর এই সম্পত্তি বিজনেসের উপর যখন আমার চোখ পড়েইছে তখন এইসব আমি আমার করেই নেব।সহজ পথ অবলম্বন করতে চেয়েছি কিন্তু পারলাম না বাকাঁ পথটাতে তবে এবার হাটবো।”
মুখে আরেকটু হাসি ফুটিয়ে সাময়ে বলে,
“খুশি হয়নি মানে খুশিতে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি।তা বউ মা কোথায়?
তফুরা খাতুন এতোক্ষন ইশরাক আর লুকমানের কথা গুলো সামনের সোফায় বসে শুনছিলেন। কিন্তু মুখে কোন কথা বলেনি কেননা তিনি ছিলেন নিরব দর্শক হিসেবে।আগে থেকেই তফুরা খাতুন লুকমানকে কানা চোখে দেখেন।লুকমানের লোভ লালসা স্পষ্ট বুঝাতে পারেন তিনি।তিনি ইশরাককে অনেক বার বারন করেছে লুকমানের সাথে মেলামেশা কমিয়ে দিতে কিন্তু বন্ধুত্বের খাতিরে তা আর মানা হয়নি।
তাসলিমা রান্নাঘর থেকে খাওয়ার ভর্তি ট্রেই নিয়ে হাজির হলেন।
” তা তোর ছেলের বউকে দেখছিনা যে সে কই?
“উপরেই আছে, দারা ডেকে পাঠাচ্ছি।
.
” ওহিজান কাদছো কেন, দেখ এখন আর তোমার সাথে খারাপ কিচ্ছু হবেনা দেখ তোমার সাথে এইযে তাবিজ আছেতো।আর আমিই তোমার সাথে আছি ওইটা পানি ছিল বাকি সব তোমার মনের ভুল”
“না আমার মনের ভুল না আমি দেখেছি তোমার বিশ্বাস হচ্ছেনা, ওই গ্লাসে রক্ত ছিল!
” দূর আচ্ছা ছিল আমি মেনে নিচ্ছি এখন তো আর নেই তাহলে এখন কান্না থামাও।তুমি কাদঁলে আমারো কষ্ট হয় ওহিজান প্লিজ কাদেনা।
ওজিহা মুখ চেপে কেদেঁই যাচ্ছে। এমন সময় রুমে ডুকেন তাসলিমা।ওজিহাকে কাদতে দেখে তিনি ঘাবড়ে যান,।
“কি হয়েছে ওজিহা কাদছো কেন তুমি?
ওজিহা মুখচেপে কেদেই যাচ্ছে, নাহিয়ান চোখ মুখ কুচকে বলে,
” ও না কি গ্লাসে পানির পরিবর্তে রক্ত দেখেছে তাই এমন কাদছেঁ কিন্তু আমি গিয়ে দেখি সেখানে পানি ছিল।
“এটা তোমার মনের ভুল মা কাদেনা নিচে আমাদের গেস্ট এসেছে তোমাকে দেখতে চাইছে। চলো দেখবে তোমার মন ভালো হয়ে যাবে।”
ওজিহা মাথা নেড়ে সায় দেয়।
নাহিয়ান ওজিহার মাথায় উড়না দিয়ে আসতে আসতে সিড়ি দিয়ে নামতে সাহায্য করে।

দূর থেকে নাহিয়ানের দিকে তীর্যক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে লুকমান।কয়েক বছর আগের নাহিয়ান আর বর্তমান নাহিয়ানকে দেখতে বেশ আলাদা। তবে সবচে বেশি অবাক হয় নাহিয়ানের পাশে মেয়েটিকে দেখে।ওজিহাকে দেখে তিনি যেন আকাশ থেকে পরলেন নিজের চোখকে পর্যন্ত বিশ্বাস হচ্ছেনা তার।এসির ঠান্ডা বাতাসেও তিনি ঘামছেন।যাকে মারার জন্য এতো কিছু,যাকে মারতে তিনি বছরের পর বছর অপেক্ষা করে আসছে সেই মেয়েকে হুট করে পেয়ে যাবে ভাবেননি তিনি।লুকমান চিনতে ভুল করেনি এই মেয়ে তার বড় ভাইয়ের মেয়ে ওজিহা।যাকে মারতে বছরের পর বছর সাধনা করে যাচ্ছেন।
ওজিহা সামনে থাকা ব্যক্তিটির দিকে তাকিয়ে কুশল বিনিময় করে, সাথে নাহিয়ান ও। লুকমান পুরো অভিনয়টা এমন ভাবে করছে ওজিহা তার ভাইয়ের মেয়ে তাদের বংশের সন্তান কিছুতেই প্রকাশ করছেনা।নাহিয়ান এগিয়ে এসে বলে,

“কেমন আছেন আংকেল?কতো দিন পর আপনাকে দেখলাম!
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।তা তোমার বউয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দাও আমায়”
“ওহ সিওর,ও হলো মিসেস ওজিহা সরকার আর ওজিহা (ওজিহার উদ্দেশ্য)উনি হলেন বাবা বিশ্বস্ত ভালো বন্ধু লুকমান।”
ওজিহা এতোক্ষন লুকমানের দিকে তাকিয়ে ছিল এই চেহারা এই চোখ নাক মুখ তার বড্ড চেনা কোথাও যেন মিল খুজে পাচ্ছে সে। কিন্তু কার সাথে মিল কার সাথে!নামটাও বেশ পরিচিত মনে হচ্ছে কিন্তু এই নাম কোথায় শুনেছে সে কিছুতেই মনে করতে পারছেনা।ওজিহাকে আর মনে করার সুযোগ না দিয়ে তফুরা খাতুন ওজিহাকে নিয়ে সরে আসে অন্যরুমে।

বেশ কিছুক্ষন থেকে লুকমান যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়।
“এবার তাহলে আমায় আসতে হবে দেরি হয়ে যাচ্ছে!
লুকমানের কথা শুনে অবাক হয় ইশরাক।
‘তুই চলে যাবি মানে তুই নাকি কোন বিশেষ কারনে এসেছিস!সেই বিশেষ কারন টা কি?
” তেমন কিছু না। আচ্ছা ভাবি আমি আসছি(তাসলিমা বেগমকে উদ্দেশ্য করে)তবে আমার একটা কথা আপনাদের রাখতে হবে!
“কি কথা ভাই? (তাসলিমা)
” ওজিহা ও নাহিয়ান দুইজনকেই আমাদের বাড়িতে বেড়াতে যেতে হবে এবং সেটা কিছু দিনের মধ্যেই৷।
“কিন্তু ওজিহার এখন শারিরীক অবস্থা তেমন ভালো না এখন তাকে নিয়ে কোথাও যাবেনা নাহিয়ান”
“এতো কথা আমি শুনতে চাই না ভাবী আমি যা বলছি তাই হবে না হলে আমি মনে কষ্ট পাবো!(মন খারাপ করে)
“আচ্ছা আমি নাহিয়ানকে বলবো। ভাবীকে নিয়ে একদিন বেড়াতে আসবেন কিন্তু!
” আরে আসবো আসবো সুযোগ পেলে ঠিক চলে আসবো আজ আসি তাহলে।”
লুকমান গাড়িতে উঠে মনে মনে বলে,
“আসতেতো আমাকে হবেই ;আমার উদ্দেশ্য পূর্ণ করতে আমাকে আবার আসতে হবেই!

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here