#মেঘ_বসন্তের_মায়া💛,পর্বঃ১৮,১৯
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💛
— পর্বঃ১৮
চোখ বন্ধ করে বসে আছে আকাশ পাশেই তিথি আকাশের কানের সামনে মুখ নিয়ে নীরব কন্ঠে বলে উঠল,
‘ চোখ খুলবেন না জাস্ট ফিল ইট মুক্ত ধবধবে সাদা আকাশ, আকাশের নিচেই চারপাশ জুড়ে বড় বড় গাছপালা,গাছের পাতাগুলো নড়ছে খুব সাথে চারপাশ দিয়ে ঘুরে ফিরে গায়ে এসে লাগছে মন মাতাল করা ঠান্ডা বাতাস সাথে পুকুরের মধ্যে থাকা মাছেদের কিছুক্ষন পর পর টুপটাপ শব্দ,পুকুরের মাঝে খেলে বেড়ানো সাদা হাঁসেদের মেলা,রঙিন শাপলা ফুল সাথে প্রকৃতি মাঝে থাকা মিষ্টি সুরের পাখিদের ডাক।
‘বউ কথা কও’ কেন ইউ ফিস দিস?’
এতটুকু বলে চুপ হয়ে যায় তিথি তারপর তাকিয়ে থাকে সে আকাশের মুখের দিকে। এক অদ্ভুত অনুভূতি নিয়েই তাকিয়ে থাকে তিথি আকাশের দিকে হয়তো আকাশের মুখশ্রী তাকে মায়ায় আটকাচ্ছে।
অন্যদিকে আকাশ সে যেন সত্যি সত্যি হারিয়ে গেছে প্রকৃতির মাঝে। খোলা আকাশ,মুক্ত বাতাস সাথে মুগ্ধ করা প্রকৃতি সবই যেন নজর কেঁড়েছে তাঁর। এভাবে কিছুক্ষন কাটানোর পর আস্তে আস্তে চোখ খুললো আকাশ। পাশ ফিরেই তিথিকে নিজের দিকে আনমনে তাকিয়ে থাকতে দেখে সেও মুগ্ধ নয়নে তাকালো তিথির মুখের দিকে হয়তো সেও আঁটকে গেছে কোনো এক ঘোরের মাঝে।
এমন সময় সেদিকেই হেঁটে আসছিল গ্র্যান্ডমা নাতি আর নাতবউকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আর এগোলেন না উনি কিছু একটা ভেবে নিজের ফোনে দূর থেকে দাঁড়িয়েই একটা ছবি তুলে নিলেন। মনে মনে প্রচন্ড খুশি সে। তারপর আর সামনে না গিয়ে পিছনেই ঘুরে গেলেন। আকাশের জন্য গ্র্যান্ডমার খুব টেনশন ছিল কিন্তু এখন সে নিশ্চিত। ভেবেই খুশি মনে এগিয়ে গেলেন সে বাড়ির অন্য সাইডে।’
গ্র্যান্ডমা যেতেই হঠাৎ পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে হুস আসলো আকাশ তিথির তাড়াতাড়ি তাঁরা নিজের চোখ সরিয়ে দু’দিকে ফিরে তাকালো। এক অজানা লজ্জা নামক জিনিস কাজ করছে দুজনের ভিতরেই।’
[ কিছু অল্প কথা সেটা হলো কাল ছোট্ট একটা মিসটেক হইছিল আমার সেটা হলো শিমুল ফুলের ঘ্রাণ হয় না কিন্তু আমি ভুলে ঘ্রাণ লিখেছিলাম আসলে শুরুতে আমি শিমুল ফুলের জায়গায় কাঠগোলাপ লিখেছিলাম কিন্তু পরে আবার সেটা কেটে শিমুুল ফুল দিয়েছিলাম কিন্তু শিমুল ফুলে যে ঘ্রাণ হয় না এটা মাথায় ছিল না কাল তাই ছোট্ট মিসটেক হয়েছিল আশা করি বুঝতে পেরেছো তোমরা]
_____
রাত_৮ঃ০০টা…
রুমের মধ্যে পায়চারি করছে আকাশ। কারন একটা মিসটেক হয়ে গেছে সেটা হলো আসার সময় মশার কয়েল আনতে ভুলে গেছে যার কারনে এখন মশার কামড় খেতে খেতে তার অবস্থা যাচ্ছে তাই। আকাশ ভুলেই গিয়েছিল গ্রামের বাড়িতে খুব মশা হয়। এখন কি করবে তাও বুঝতে পারছে না আকাশ যার কারনে এখন রুমের মধ্যে পায়চারি করছে আকাশ। এমন সময় হাতে কিছু নারকেলের শুঁকনো খোসা জ্বালিয়ে রুমে ঢুকলো তিথি। তিথি রুমে ঢুকতেই পুরো রুম ধোয়ায় ভরে গেল। সাথে সাথে আকাশ ধোয়ার তাপ সহ্য করতে না পেরে কাশতে শুরু করলো সাথে কিছুটা বিস্ময় ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো সে,
‘ এসব কি তিথি?’
‘ এগুলো নারকেলের খোসা স্যার।’
‘ হোয়াট?’
‘ নারকেলের খোসা।’
‘ এগুলো দিয়ে তুমি কি করছো?’ (কাশতে কাশতে)
‘ আরে স্যার টেনশন নিবেন না দেখবেন এখনই সব মশা গায়েব হয়ে যাবে।’
‘ মানে..?’
‘ মানে হলো আমার দাদীমাকে দেখেছি আমি৷
‘ কি দেখেছো?’
‘ ছোট বেলায় আমি যখন গ্রামে যেতাম তখন দেখেছি মশার উৎপাত কমানোর জন্য এগুলোকে ব্যবহার করতে।’
‘ আর ইউ ক্রেজি তিথি?’
‘ কেন স্যার?’
‘ এগুলো এক্ষুনি সরাও আমার কাছ থেকে।’
‘ কেন স্যার দেখবেন কিছুক্ষনের মধ্যেই সব মশা গায়েব হয়ে যাবে।’
‘ তোমায় এগুলো সরাতে বলছি আমি,এটা আমি জাস্ট নিতে পারছি না সরাও বলছি।’
পুরো কথা বলতে বলতে আর কাশতে কাশতে প্রায় আকাশের চোখে মুখে পানি জমে গেছে। আকাশের অবস্থা বুঝতে পেরে সাথে আকাশের রাগী কন্ঠ শুনে তিথিও আর বেশিক্ষণ ওখানে না দাঁড়িয়ে থেকে তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে গেল। তিথি বের হতেই আকাশ সস্থির নিশ্বাস ফেললো। কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যে সে বুঝতে পারলো সত্যি সত্যি মশার উৎপাত আগের তুলনায় কমে গিয়েছিল।’
____
রাত_৯ঃ৩০টা….
ডাইনিং টেবিলে বসে ডিনার করছে আকাশ তিথি আর গ্র্যান্ডমা। আর ওদের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে শিমুল সাথে ফুলটুসি ওরা হলো এই বাড়ি কেয়ার টেকার যখন থেকে আকাশ গ্র্যান্ডমা শহরে গিয়েছিল তখন থেকেই তাঁরা এই বাড়ি দেখা শোনা করে তবে ওরা বললে একটু ভুল হবে শিমুলের বাবা মা। আর এখন শিমুল আর শিমুলের স্ত্রী ফুলটুসি। গ্র্যান্ডমা ওদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে উঠল,
‘ কি হলো তোমরা দাঁড়িয়ে আছো কেন খেতে বসো?’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে ওঁরা দু’জনেই অবাক হয়ে বললো,
‘ আমরা এহিনে বমু?’
‘ হুম বসবে কি হবে বসো!’
উওরে ওঁরা আর কিছু না বলে বসলো টেবিলে। তারপর খেতে শুরু করলো। এরই মধ্যে গ্র্যান্ডমা বলে উঠল,
‘ শিমুল তোমাদের তো একটা ছেলে আছে ও কোথায়?’
‘ আসলে ম্যাডাম ওরে মাদ্রাসায় ভর্তি কইরা দিসি আর ও ওইহানেই থাইক্কাই পড়াশোনা করে।’
‘ ওহ খুব ভালো।’
উওরে আর কিছু না বলে শুকনো হাসলো শিমুল আর ফুলটুসি।’
___
রাতের আকাশের জোৎসা ভরা আলোর মাঝে ঝলমল করা তাঁরাদের ভিড়ে জানালার ধারে বসে আছে তিথি। কতক্ষণ আগেই তাঁরা ডিনার সেরে রুমে এসেছে। কিছুটা আনমনেই বসে আছে তিথি। অন্যদিকে গ্র্যান্ডমার রুমে বসে গ্র্যান্ডমার সাথে কিছুক্ষন গল্প গুজব করে গ্র্যান্ডমাকে ঘুমাতে বলে নিজের রুমে পা রাখে আকাশ। রুমে ঢুকেই তিথিকে জানালার ধারে মনমরা হয়ে বসে থাকতে দেখে বললো আকাশ,
‘ কি হলো তুমি এখানে বসে আছো কেন?’
আচমকা আকাশের কথা শুনে নিজের আনমনের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসলো তিথি তারপর বললো,
‘ হুম হ্যাঁ তেমন কিছু নয়।’
‘ আচ্ছা তোমার কি মনমরা হয়ে বসে থাকার রোগ আছে নাকি?’
আকাশের কথা শুনে তিথি কিছুটা অবাক হয়ে বললো,
‘ কি?’
‘ কি আবার কি যখন দেখি তখনই তুমি মনমরা হয়ে বসে থাকো।’
‘ আরে আমি মনমরা হয়ে বসে ছিলাম না তো এমনি বসে ছিলাম।’
‘ হুম বুঝেছি তোমায় একবার ডাক্তার দেখাতে হবে?’
‘ আপনার মাথা খারাপ হয়েছে কিসব বলছেন।’
‘ যাক ওসব বাদ দেও আগে বলো ঘুমাবে না?’
‘ হুম ঘুমাবো তো।’
আকাশ কিছুক্ষন চুপ থেকে কিছুটা বিষন্ন ভরা কন্ঠে বলে উঠল,
‘ তোমায় তো একটা কথা বলাই হয় নি তিথি?’
আকাশের কথা শুনে তিথি কিছুটা আগ্রহের স্বরে বলে উঠল,
‘ কি স্যার?’
তিথির কথা শুনে আকাশ আশেপাশে একবার তাকিয়ে এগিয়ে গেল তিথির দিকে তারপর জানালার বাহিরেও একবার চোখ বুলিয়ে নীরব কন্ঠে বললো,
‘ তুমি জানো এখানে ভূত আছে?’
আকাশের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে বললো তিথি,
‘ কি বলছেন স্যার?’
‘ সত্যি বলছি আমাদের বাড়ির দুটো বাড়ির পরই একটা মেয়ে কোনো কারণে আত্মহত্যা করেছিল আর তার আত্মার এই আশেপাশে ঘুরে বেড়ায়।’
‘ যা আপনি মিথ্যে বলছেন স্যার।’
‘ আরে সত্যি বলছি বিশ্বাস না হলে তুমি কাল গ্র্যান্ডমাকে জিজ্ঞেস করো।’
আকাশের এবারের কথা শুনে তিথি ভয়ে ভয়ে বলে উঠল,
‘ আপনি সত্যি বলছেন।’
‘ হুম তাই বলছি তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ো আর এই জানালাও বন্ধ করে ফেলো।’
আকাশের কথা শুনে ভয়ে শুঁকনো ঢোক গিলে বললো তিথি,
‘ কেন?’
‘ শুনেছি যে ঘরের জানালা খোলা থাকে সেখানে এসে মেয়েটা ভর করে আসলে তোমার মতো ওই মেয়েটাও জানালার ধারে বসতে ভালোবাসতো কিনা।’
আকাশের কথা শুনে ভয়ে আকাশের হাত ধরে ফেললো তিথি। তিথিকে ভয় পেতে আকাশ বলে উঠল,
‘ তুমি কি ভয় পাচ্ছো তিথি?’
সাথে সাথে তিথি আকাশের হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,
‘ কে বলেছে ভয় পাচ্ছি আমি এসবে ভয় পাই না।’
তিথির কথা শুনে আকাশ তিথির কানে কানে ফিসফিসিয়ে বললো,
‘ তাহলে কাঁপছো কেন?
সাথে সাথে ঘাবড়ে গিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো তিথি তারপর শক্ত গলায় বললো,
‘ কে বলেছে আমি কাঁপছি আমি কাঁপছি না চলুন গিয়ে ঘুমাই।
বলেই জানালার দিকে তাকালো তিথি সাথে সাথে গন্ধকারের মধ্যে কিছু একটা নড়তে দেখে আঁতকে উঠল সে চটজলদি কিছু না ভেবে জানালা আঁটকে দিলো তিথি। তিথির কান্ডে মনে মনে হাসলো আকাশ তবে কিছু বললো না। কিছু না বলেই আকাশ গিয়ে শুয়ে পড়লো বিছানায়। আকাশকে বিছানায় শুতে দেখে তিথি গিয়ে দাঁড়ালো আকাশের পাশ দিয়ে তারপর বললো,
‘ আমি কোথায় ঘুমাবো স্যার?’
জাস্ট শুয়ে ছিল আকাশ তাও তিথির কথা শুনে শোয়া থেকে উঠে বসলো সে তারপর বললো,
‘ এত বড় রুমে তুমি ঘুমানোর জায়গা পাচ্ছো না?’
‘ এত কথা না বলে বলুন না আমি কোথায় ঘুমাবো?’
তিথির কথা শুনে চারপাশে একবার চোখ বুলালো আকাশ হঠাৎই জানালার পাশ দিয়ে থাকা একটা ছোট্ট চকিকে দেখিয়ে বললো সে,
‘ তুমি ওইখানে ঘুমাও।’
আকাশের দেখানো জায়গা দেখে ভিতরে ভিতরে ঘাবড়ে গেল তিথি। ছোট বেলা থেকেই এই ভুতের ভিষণ ভয় তিথির। তিথিকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে উঠল আকাশ,
‘ কি হলো তিথি তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন যাও ওখানে গিয়ে ঘুমাও।’
বলেই বিছানায় শুয়ে পড়লো আকাশ। আকাশকে শুয়ে পড়তে দেখে তিথি বলে উঠল,
‘ আমি ওইখানে ঘুমাবো না স্যার।’
কিছুটা বিরক্ত নিয়ে আবারো উঠে বসলো আকাশ তারপর বললো,
‘ তুমি ভয় পাচ্ছো তিথি?’
‘ আপনার যা ভাবার আপনি ভাবুন স্যার কিন্তু আমি ওখানে ঘুমাতে পারবো না।’
‘ তাহলে তুমি কোথায় ঘুমাবে বলো?’
তিথি আশেপাশে তাকিয়ে তেমন কিছু না দেখে সাথে ভূতের কথা ভেবে ভয়ে ভয়ে বলে উঠল,
‘ আমি বিছানায় ঘুমাবো স্যার।’
‘ কি?’
‘ আপনার ‘কি’ এর উওর আমার জানা নেই আমি এখানে ঘুমাবে মানে এখানেই ঘুমাবো। আপনার ঘুমাতে ইচ্ছে করলে আপনি ঘুমান না হলে না ঘুমান।’
বলেই বিছানার মাঝখানে কোলবালিশ দিয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো তিথি। আর আকাশ জাস্ট হা হয়ে তাকিয়ে রইলো তিথির কান্ডে সে বুঝতে পেরেছে তিথি ভয় পেয়েছে। অতঃপর আকাশ কিছুক্ষন বসে থেকে নিজেও ঘুমিয়ে পড়লো বিছানার অন্য পাশ দিয়ে। কারন আর যাই হোক সে কখনোই নিচে অথবা ওই চকিতে ঘুমাবে না।’
মাঝরাতে আচমকা কিছুর শব্দ কানে আসতেই চমকে উঠলো তিথি। ভয়ে হাত পা কাঁপছে তাঁর তিথি ভয়ে কারণে বসা থেকে উঠে বসলো। ভয়ের কারনে খুব জোরে কান্না পাচ্ছে তাঁর কিন্তু তিথি এখন কি করবে ভেবেই আশেপাশে তাকালো সে। কেন যেন ওই মেয়েটার কথা ভাবতেই শরীর কাঁপছে তিথির। তিথি কিছুক্ষন বসে থেকে আবার শুয়ে পড়লো বিছানায়। হঠাৎই কুকুরের ডাক শুনে ভয়ে আত্মা কেঁপে উঠল তাঁর। তিথি ভয়ের কারণে তাঁদের মাঝখানে থাকা কোলবালিশটাকে সরিয়ে আকাশকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো।’
‘ভয়’ এমন একটা জিনিস এটা শুধুমাত্র সেই জানে যে এই ভয় নামক জিনিসে আক্রান্ত।’
অন্যদিকে আচমকা কেউ জড়িয়ে ধরায় কিছুটা চমকে উঠলো আকাশ। পাশেই চোখ খুলে তিথিকে কাঁপতে দেখে সে বুঝতে পেরেছে তিথি হয়তো তার কথা শুনে অনেক ভয় পেয়েছে। এখন আকাশের খারাপ লাগছে হয়তো তখন ওইসব বলে সত্যি ভুল করেছে সে। আকাশ বেশি কিছু না ভেবে সেও জড়িয়ে ধরলো তিথিকে। হয়তো এতে তিথির কাপুনী কিছুটা কমবে আর তিথি ভয়ে এতটাই কাঁপছে যে বিষয়টা বুঝতে পারে নি।’
___
পরেরদিন সকালে,
সূর্যের ফুড়ফুড়ে আলোতে ঘুম ভাঙলো আকাশের। চোখ খুলে পাশে তিথিকে না দেখে কিছুটা অবাক হয়ে উঠে বসলো সে হঠাৎই কিছু একটা ভেবে চটজলদি এক প্রকার দৌড়ে রুম থেকে বের হলো আকাশ।’….
!
!
!
#চলবে….
#মেঘ_বসন্তের_মায়া💛
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💛
— পর্বঃ১৯
হতভম্ব হয়ে এক প্রকার দৌড়ে বাড়ির ভিতর থেকে বের হয় আকাশ। তারপর চলে যায় সে বাড়ির পিছনের দিকে, এমন সময় গ্যান্ডমার সাথে কথা বলতে বলতে সামনের দিকে এগিয়ে আসতে ছিল তিথি। তিথি আর গ্র্যান্ডমাকে একসাথে দেখে আকাশের তো অবস্থা বেজায় খারাপ হয়তো সে যেটার ভয় পাচ্ছিস সেটা হয়ে গেছে। আকাশকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে বলে উঠল গ্র্যান্ডমা,
‘ কি হলো আকাশ এত তড়িঘড়ি করে যাচ্ছো কোথায়?’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে সটাং হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো আকাশ তারপর কিছুটা আমতা আমতা করে বললো,
‘ না মানে আসলে হয়েছি কি গ্র্যান্ডমা।’
‘ কি কখন থেকে আসলে না মানে করছো কিছু কি হয়েছে?’
‘ না গ্র্যান্ডমা কিছু হয়নি এমনি একটু আসছি আর কি।’
‘ হুম বুঝেছি।’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে কিছুটা অবাক হয়ে বললো,
‘ কি বুঝেছো গ্র্যান্ডমা?’
উওরে একবার তিথির দিকে আর একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন গ্র্যান্ডমা।
এমন সময় দূর থেকে শিমুল আসলো দৌড়ে গ্র্যান্ডমা আকাশ আর তিথির দিকে। তারপর বললো,
‘ গ্র্যান্ডমা গিয়ে দেখো তোমার সাথে কারা দেখা করতে এসেছে?’
শিমুলের কথা শুনে অবাক হয়ে বললো গ্র্যান্ডমা,
‘ আমার সাথে কারা এসেছে?’
‘ তুমি চলো আমার সাথে গেলেই দেখতে পাবে।’
উওরে আকাশের মুখের দিকে তাকায় গ্র্যান্ডমা। গ্র্যান্ডমাকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে বলে উঠল আকাশ,
‘ এত কি ভাবছো চলো।’
উওরে কিছু না বলেই বিস্ময় ভরা মুখ নিয়ে এগিয়ে গেল গ্র্যান্ডমা সাথে শিমুলও। গ্র্যান্ডমা আর শিমুলকে যেতে দেখে আকাশ চলে যায় তিথির সামনে। আকাশ কিছু বলার আগেই তিথি বলে উঠল,
‘ কাল আপনি আমায় মিথ্যে বলেছিলেন কেন?’
তিথির কথা শুনে নিজের মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে উঠল আকাশ,
‘ সরি আসলে আমি বুঝতে পারি তুমি এত ভয় পেয়ে যাবে।’
‘ 😒😒😒
‘ সরি।’
‘ আপনি জানেন কালকে আমি কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।’
‘ সরি বললাম তো।’
‘ ইট’স ওকে।’
বলেই আকাশ তিথি দুজনেও চললো বাড়ির ভিতরে।’
____
অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে গ্র্যান্ডমা সামনের তিনজন ব্যক্তির দিকে। চোখ দিয়ে অটোমেটিক পানি পড়ছে তাঁর। কারন সামনের তিনজন ব্যক্তি হলো গ্র্যান্ডমার ছোট বেলার সাথী শিউলি,শেফালি আর পার্বতী। অবাকের চেয়েও চরম অবাক গ্র্যান্ডমা সে ভাবতেই এমন কিছু হতে চলছিল তার সাথে। জাস্ট হা হয়ে তাকিয়ে রইলো গ্র্যান্ডমা ওদের দিকে। গ্র্যান্ডমাকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো শিউলি,
‘ কি হলো রদু এভাবে তাকিয়েই থাকবি নাকি আমাদের কাছেও আসবি?’
শিউলির কথা শুনে নিজের ইমোশনকে আর ধরতে পারলো না গ্র্যান্ডমা দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে তিন বন্ধুকে একসাথে জড়িয়ে ধরলেন,তারপর বললেন,
‘ তোরা,আমার তো বলে বিশ্বাসই হচ্ছে না তোরা আমার সামনে কতবছর পর তোদের দেখলাম।’
‘ আমরাও তো রদু ( শেফালী)
‘ তুই তো বুড়ি হয়ে গেছিস (পার্বতী)
উওরে ওদের ছেড়ে দিয়ে হাসিমাখা মুখ নিয়ে বললো গ্র্যান্ডমা,
‘ হুম আর তোরা তো এখনো জুয়ান আছো।’
উওরে তিনবন্ধু একসাথে হেঁসে উঠল। তারপর জুড়ে দিল চার বন্ধ গল্পের ঝুলি। হাসি, ঠাট্টার মধ্যে জমে উঠলো গ্র্যান্ডমাদের গল্পের আসর।’
অন্যদিকে দূর থেকেই গ্র্যান্ডমাকে এত আনন্দ আর খুশি হতে দেখে চরম খুশি আকাশ তিথি। আকাশ খুশি মনে বলে উঠল তিথিকে,
‘ থ্যাংক ইউ।’
উওরে একপলক আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো তিথি।’
দেখতে দেখতে কেটে গেল পুরো একসপ্তাহ। হাসি ঠাট্টা আনন্দের মাঝখানেই কেটে গেল পুরো একসপ্তাহ সাথে জমানো হলো কিছু নতুন স্মৃতি। আজ ঢাকার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাবে আকাশ তিথি আর গ্র্যান্ডমা।
গাড়ির সামনে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ আর অপেক্ষা করছে গ্র্যান্ডমা আর তিথির জন্য। এমন সময় বলতে না বলতে হাজির গ্র্যান্ডমা আর তিথি। কিছুদূর এগোতেই গ্র্যান্ডমা কাশতে শুরু করলো। ইদানীং গ্র্যান্ডমার কাশিটা আগের চেয়েও বেড়ে গেছে। বিষয়টার জন্য এতদিন ভালো লাগার মুহূর্ত দিয়ে কাটলেও খারাপ লাগাও চলেছে খুব। ছোট্ট দীর্ঘ শ্বাস ফেললো আকাশ,এরই মধ্যে আকাশের সামনে এসে হাজির হলো গ্র্যান্ডমা আর তিথি। তারপর আর কি তিনজনই একসাথে পাড়ি দিলো আবারো পুরোনো সেই বাড়ির উদ্দেশ্যে। আর ফেলে গেল কি সুন্দর অতীত।’
____
একটা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে সাথী হাতে রয়েছে তার কিছু খাবারের প্যাকেট সাধারণত খাবার ডেলিভারি করতেই সাথী এসে৷ দাঁড়িয়েছে এই বাড়ির সামনে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ডেলিভারির কাজে জয়েন হয়েছে সাথী। মোটামুটি ভালোই লাগছে তার এই কাজ করতে। কিন্তু এই মুহূর্তে বিরক্ত লাগছে সাথীর কারন বেশ কিছুক্ষন যাবৎই দাঁড়িয়ে আছে একটা বাড়ির সামনে সাথী, বেশ কয়েকবার কলিংবেলও বাজিয়েছে বাট ভিতর থেকে দরজা খোলার নাম নেই। কিছুটা বিরক্ত হয়ে জোরে দরজায় নক করলো সাথী সাথে সাথে দরজা আপনাআপনি খুলে গেল। এতে বেশ অবাকই হলো সাথী তারপর বেশি কিছু না ভেবে আস্তে আস্তে ঢুকলো বাড়ির ভিতরে। কিন্তু আশেপাশে কাউকেই দেখতে পেলো না সে। পুরো বাড়িটায় একবার চোখ বুলালো সাথী অল্প কিছুক্ষন যাওয়ার পর বিরক্তির চরম সীমানায় পৌঁছে গেল সাথী কারো পুরো বাড়িটাই ফাঁকা। আশেপাশে কাউকেই দেখতে পাচ্ছে না। সাথী বুঝতে পারছে না এখন কি করবে সে,একই তো অনেকটা দেরি হয়ে গেছে এরপর আরো দেরি হয়ে গেলে
‘ উফ!’ বিরক্ত লাগছে আমার আরে ভাই যদি বাড়িতেই না থাকো তাহলে খাবার অর্ডার করার কি ছিলো।’
এরই মধ্যে হাতে পায়ে কাঁদা মেখে ভিতরে ঢুকলো একটা ছেলে। ছেলেটিকে দেখেই চমকে উঠলো সাথী সাথে ভয়ে দুকদম পিছনে চলে গেল সে।
অন্যদিকে আচমকা কোনো মেয়েকে সামনে দেখে হৃদও বেশ চমকে উঠলো পরক্ষণেই মেয়েটার চেহারাটা চেনা লাগতেই অবাক হয়ে বললো সে,
‘ তুমি?’
‘তুমি’ শব্দটা শুনতেই সাথী যেন চমকে উঠলো সাথে তাকালো ছেলেটির মুখের দিকে। পরক্ষণেই হৃদকে দেখে দেখে অবাক হয়ে বললো,
‘ ডাক্তার আপনি,কিন্তু এমন অবস্থা কেন?’
‘ সেটা লম্বা কাহিনী তুমি বসো আমি এক্ষুনি আসছি।’
বলেই চটজলদি এগিয়ে যেতে লাগলো সাথে সাথে কাঁদায় পিছলে পড়ে যেতে নিল হৃদ। হৃদকে পড়ে যেতে সাথী দৌড়ে গিয়ে ধরলো। ঘটনা হুট করে করে হওয়াতে হৃদ সাথী দুজনেই চোখ বড় বড় করে তাকালো একে অপরের দিকে। আজ প্রায় একসপ্তাহ পর সাথী হৃদের দেখা। এমনিতে মেসেজে প্রায় কথা হয়।
মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে সাথী হৃদ একে অপরের দিকে। পরক্ষণেই দুজনের হুস আসতেই তাড়াতাড়ি সাথীকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো হৃদ তারপর বেশি কিছু না বলে চললো সে উপরে। আর সাথী নির্বিকার হয়ে তাকিয়ে রইলো হৃদের যাওয়ার পানে।’
____
পরন্ত বিকেলের পরন্ত আলোতে বসে আছে গ্র্যান্ডমা। জীবনে কত কিছু হলো সবই যেন আজ একে একে মনে পড়ছে তাঁর। এমনটা নয় গ্র্যান্ডমা জানে না তাঁর কি রোগ হয়েছে। সে তো এটা শুরু থেকেই জানতো গ্র্যান্ডমা এটাও জানে যখন তখন তার মৃত্যু ঘটতে পারে সময় যে একদমই নেই তাঁর। ছোট্ট দীর্ঘ শ্বাস ফেললো গ্র্যান্ডমা। জীবন তাকে অনেক কিছু দিয়েছে হাসি কান্না আনন্দ দুঃখ সব। আপাতত সেসব নিয়ে আফসোস করে না গ্র্যান্ডমা কারন জীবন তো এমনই হাসি কান্না মিলিয়েই। গ্র্যান্ডমার টেনশন ছিল সে চলে গেলে তার নাতিটাকে কে দেখবে কিন্তু এখন সে পুরোপুরি নিশ্চিত কারন তিথি আছে তো। আর তিথির ওপর পুরো বিশ্বাস আছে গ্র্যান্ডমার সে চলে গেলে ঠিক আকাশকে সামলে রাখতে পারবে তিথি। গ্র্যান্ডমার ভাবনার মাঝেই তার রুমে এসে হাজির তিথি। তিথিকে দেখে খুশি মনে বললো গ্র্যান্ডমা,
‘ তিথি এদিকে আসো বসো এখানে কি কথা ছিল তোমার সাথে?’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে তিথিও বেশি কিছু না ভেবে এগিয়ে গেল গ্র্যান্ডমার কাছে। তারপর গ্র্যান্ডমার পাশে বসে বললো সে,
‘ হুম বলো গ্র্যান্ডমা?’
তিথির কথা শুনে গ্র্যান্ডমা তিথির হাত ধরে নীরব কন্ঠে বললো,
‘ আমায় একটা কথা দিবে তিথি?’
হুট করে গ্র্যান্ডমার এমন নীরব কন্ঠ শুনে কিছুটা বিস্মিত ভরা কন্ঠ নিয়েই বললো তিথি,
‘ হুম বলো গ্র্যান্ডমা।’
গ্র্যান্ডমা কিছুক্ষন চুপ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,
‘ আমি বেশিদিন বাঁচবো না তিথি।’
হঠাৎই গ্র্যান্ডমার মুখে এমন কথা শুনে চমকে উঠলো তিথি কিছু বলবে তার আগেই গ্র্যান্ডমা বলে উঠল,
‘ জানো তো আকাশ যখন খুব ছোট তখন ওর বাবা মা মারা যায় তারপর আমি আর ওর গ্র্যান্ডফা মিলেই ওকে মানুষ করার সিদ্ধান্ত নেই কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আকাশের গ্র্যান্ডফাও আমাদের ছেড়ে চলে সত্যি বলতে সেইসব দিনগুলোর কথা ভাবলে আজও কষ্ট হয় যাক জানো তো আমার আকাশ খুব রাগী কিন্তু এমনিতে খুব ভালো। আমি জানি এতদিন তোমরা যা যা করেছো সবই আমায় খুশি করার জন্য সত্যি বলতে আমার এই কয়েকদিন জীবনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন কেটেছে এর জন্য তোমাদের অনেক ধন্যবাদ।
‘ তুমি এইভাবে কেন বলছো গ্র্যান্ডমা?’
‘ তোমার কাছে আমার একটা অনুরোধ তিথি কখনো আমার দাদাভাইকে ছেড়ে যেও। বর্তমানে ওর আপন বলতে শুধু তুমি আর আমি। আর আমি তো যখন তখন তোমাদের ছেড়ে চলে যেতে পারি তাই বলবো তিথি কখনো আমার দাদাভাই দাদাভাইকে ছেড়ে যেও না সবসময় তোমরা পাশাপাশি থেকো সাথে সুখে শান্তিতে জীবন কেটো। বলতে পারো এটাই আমার জীবনের শেষ ইচ্ছে।’
‘ গ্র্যান্ডমা…
আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই গ্র্যান্ডমা তিথির হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘ আমায় কথা দেও তিথি কখনো আমার দাদাভাইকে ছেড়ে যাবে না সবসময় ওর সাথেই থাকবে?’
গ্র্যান্ডমার এইভাবে অনুরোধের স্বরের কথা শুনে কি বলবে বুঝতে পারছে না তিথি,বার বার শুধু এগ্রিমেন্টের কথাই মনে পড়ছে তিথি। তিথিকে চুপ থাকতে দেখে বলে উঠল গ্র্যান্ডমা,
‘ কি হলো তিথি তুমি কথা বলছো না কেন?’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে চমকে উঠলো তিথি পরক্ষণেই নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে বলে গ্র্যান্ডমার হাত ধরেই বললো সে,
‘ আমি তোমায় কথা দিচ্ছি গ্র্যান্ডমা আমি কখনো তোমার দাদাভাইকে ছেড়ে যাবো না।’
উওরে যেন মনে শান্তি মিললো গ্র্যান্ডমার। খুশি হয়ে বললেন উনি,
‘ আমি খুব শান্তি পেলাম তিথি।’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে মুচকি হাসলো তিথি। কিন্তু ভিতরে ভিতরে তার খারাপ লাগছে।’
!
!
#চলবে…..