#মেঘ_বসন্তের_মায়া💛,পর্বঃ০৫
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💛
বেশ কিছুক্ষণ পর আকাশের গাড়ি এসে থামলো এক বিশাল বড় বাড়ির সামনে। আচমকা গাড়ি থেমে যাওয়াতে তিথি আশেপাশে চোখ বুলালো একবার, সামনেই একটা বিশাল বড় বাড়ি দেখে চোখ বড় বড় হয়ে যায় তার বিশাল থ্রাইগ্লাস সমৃদ্ধ দু’তলা বাড়ি আকাশদের। আকাশের বাড়ি এই প্রথম দেখছে তিথি, হা হয়ে তাকিয়ে রইলো তিথি বাড়িটির দিকে। তিথির ভাবনার মাঝেই আকাশ আর গ্র্যান্ডমা দুজনেই গাড়ি থেকে নেমে যায় কিন্তু তিথি নামে নি তখনও। তিথিকে নামতে না দেখে বলে উঠল আকাশের গ্র্যান্ডমা,
‘ কি তিথি তুমি নামছো না কেন?’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে তিথি তার ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে সাথে আকাশও তাকায় তিথির দিকে। তিথি একবার গ্র্যান্ডমা আর একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে হতভম্ব কন্ঠে বলে উঠল,
‘ হুম না মানে?’
‘ এত কি ভাবছো বলো তো নেমে আসো আর এমনিতেও কিছুদিন পর এটাই তোমার বাড়ি হবে।’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে তিথি কি বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না। কিছুটা সংকোচ ফিল হচ্ছে তার। তিথির চোখমুখে চিন্তার ছাপ দেখে আকাশ নিজেও বলে উঠল,
‘ কি হলো তিথি তুমি গাড়ি থেকে বের হচ্ছো না কেন?গ্র্যান্ডমা তোমায় এত করে বলছে,তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসো?’
আকাশের কথা শুনে তিথিরও বুঝতে বাকি নেই আকাশ তাকে কি বোঝাতে চাচ্ছে। তিথিও হাল্কা হেঁসে বলে উঠল,
‘ হুম এই তো বের হচ্ছি গ্র্যান্ডমা।’
বলেই খুশি মনে গাড়ি থেকে বের হয় তিথি। এরই মধ্যে আকাশের বাড়ির ভিতর থেকে একজন মধ্যম বয়স্ক মহিলা আর একজন মধ্যম বয়স্ক লোক দৌঁড়ে এসে সামনে দাঁড়ালো আকাশের তারপর খুশি মনে বললো,
‘ আমমেরা চইলা আইছেন ম্যাডাম?’
উওরে মুচকি হেঁসে বললো আকাশের গ্র্যান্ডমা,
‘ হুম কেমন আছিস তোরা?’
‘ জ্বী ম্যাডাম ভালো আমনে?’
‘ হুম আমিও ভালো।’
‘ আমমের শরীর ঠিক আছে তো ম্যাডাম?’
‘ হুম।’
বলেই একে একে চললো সবাই বাড়ির ভিতরে।
____
বাড়ির ভিতরে ঢুকেই সবার আগে তিথি আকাশ চলে যায় গ্র্যান্ডমার রুমে। বিছানায় শুয়ে আছে রাশেদা বেগম আর ওনার পাশেই বসে আছে আকাশ অনেককিছু বলছে সে,আর অন্যদিকে তিথি ঘুরে ঘুরে গ্র্যান্ডমার রুম দেখছে বাড়িটার বাহির থেকে দেখতে যতটা না সুন্দর তার চেয়েও অনেক বেশি সুন্দর ভিতরটা। তিথিকে হাঁটতে দেখে বলে উঠল গ্র্যান্ডমা,
‘ তিথি?’
আচমকা গ্র্যান্ডমার কন্ঠ কানে আসতেই তিথির তার হাঁটা বন্ধ করে দিয়ে পিছনে এগিয়ে এসে গ্র্যান্ডমার পাশাপাশি কিছুটা দুরত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
‘ জ্বী বলুন গ্র্যান্ডমা।’
তিথির কথা শুনে রাশেদা বেগম একপলক তাকায় আকাশের দিকে। আকাশও তার গ্র্যান্ডমার চাহনী দেখে বলে উঠল,
‘ ঠিক আছে গ্র্যান্ডমা তোমরা কথা বলো আমি এক্ষুনি ফ্রেশ হয়ে আসছি।’
উওরে মাথা নাড়ায় গ্র্যান্ডমা। আকাশও গ্র্যান্ডমার মাথা নাড়ানো দেখে আর বেশিক্ষন না বসে থেকে একপলক তিথির দিকে তাকিয়ে থেকে চলে যায় সে। আকাশ যেতেই কিছুটা বিস্মিত হয় তিথি কারন সে বুঝতে পেরেছে গ্র্যান্ডমাই আকাশকে চলে যেতে বলেছে। তিথি কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো আকাশের যাওয়ার পানে এরই মধ্যে রাশেদা বেগম বলে উঠল,
‘ এখানে বসো তিথি।’
তিথিও ‘হ্যা’ বলে চটজলদি বসে পড়ে বিছানায় গ্র্যান্ডমার পাশ দিয়ে। তিথি বসতেই গ্র্যান্ডমা তিথির হাত ধরে বলে উঠল,
‘ তোমার আর আকাশের সম্পর্ক কতদিনের?’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে চোখ বড় বড় হয়ে যায় তিথির এখন কি বলবে সে,তিথি শুকনো ঢোক গিলে বললো,
‘ কতদিনে এই তো?’
‘ হুম,এই কয়দিন তো ঠিক ভাবে কিছু জানাই হয় নি তোমার কাছ থেকে।’
‘আজ কেন জানতে চাইছেন (মনে মনে)।’
তিথিকে চুপ থাকতে দেখে আবারো বলে উঠল গ্র্যান্ডমা,
‘ কি হলো তিথি কথা বলছো না কেন?’
তিথি আমতা আমতা করে বলে উঠল,
‘ জ্বী গ্র্যান্ডমা ২ বছর।’
‘ ওহ,কিন্তু তুুমি আগে কেন আসো নি আমাদের বাড়িতে?’
‘ কি বলুন তো গ্র্যান্ডমা আমি আসতে চেয়েছি কিন্তু আপনার নাতি আমায় কিছুতেই নিয়ে আসতে চায় নি শুধু বলেছে পড়ে নিয়ে যাবে তাই আর কি..
‘ ওহ,আসলে আকাশ না একটু ওইরকমই একটু রাগী টাইপের তুমি হয়তো জানো সবটাই..
উওরে শুকনো হাসে তিথি। কিছুটা হতাশ সে না জানি আবার কি প্রশ্ন করে বসে তাকে। তিথির ভাবনার মাঝে আবারো বলে উঠল গ্র্যান্ডমা,
‘ জানো তো তিথি ও যখন খুব ছোট তখন ওর বাবা একটা এক্সিডেন্টে মারা যায়, আর তখন থেকেই ওকে আমি কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি কখনো বাবা মা না থাকার কষ্টটা বুঝতে দেয়ই কিন্তু তারপরও আমি জানি ওর মনে বাবা মা না থাকার একটা ক্ষত সবসময় থাকে,তুমি কখনো ওকে কষ্ট দিও না তিথি সবসময় ওর সাথে ভালোভাবে সুখে শান্তিতে সংসার করো ও একটু রাগি এটা ঠিক কিন্তু এমনিতে ওর মনটা খুব ভালো। কিছুদিনের মধ্যেই তোমার সাথে ওর বিয়ে হয়ে যাবে তোমরা দুজন আজীবনের জন্য একসাথে থাকার প্রতিশ্রুতি নিবে, তোমার কাছে একটা অনুরোধ আমার আকাশকে কখনো কষ্ট দিও না আর ওকে কখনো ছেড়ে যেও না। তোমরা দুজন সবসময় ভালো থেকো। আমি তোমাদের সেই দোয়াই করি সবসময়।’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে হাল্কা খারাপ লাগে তিথির। তবে তেমন কিছু না বলে মুচকি হাসে সে। তারপর বলে,
‘ তুমি কোনো চিন্তা করো না গ্র্যান্ডমা।’
তিথির কথা শুনে হাসে রাশেদা বেগম। এরই মধ্যে তিথির ফোনটা বেজে উঠল উপরে রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারের নাম্বার দেখে কিছুটা হতভম্ব হয়ে বলে সে,
‘ বলছিলাম কি গ্র্যান্ডমা আমায় একটু যেতে হবে।’
‘ এখনই চলে যাবে।’
‘ আবার আসবো তো গ্র্যান্ডমা।’
‘ আচ্ছা।’
‘ তুমি টাইম মতো ঔষধগুলো খেয়ো কিন্তু আর কোনো সমস্যা হলেই আমায় কল করো আমি চলে আসবো।’
তিথির কথা শুনে মুচকি হেঁসে বললেন রাশেদা বেগম,
‘ আচ্ছা ঠিক আছে,কিন্তু কেনোকিছু না খেয়েই চলে যাবে তিথি?’
‘ আবার এসে খাবো গ্র্যান্ডমা আর এমনিতেও কিছুদিন পর তোমার সাথেই একসাথে বসে খাবার খাবো তো।’
তিথির কথা শুনে খুশি হয় রাশেদা বেগম। রাশেদা বেগমের হাসি দেখে বলে উঠল তিথি,
‘ তাহলে আমি আসছি গ্র্যান্ডমা। নিজের খেয়াল রেখো কিন্তু?’
বলেই একপ্রকার দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল তিথি। না জানি আজ তার জবটা গেল কিনা সে তো এক প্রকার ভুলেই গিয়েছিল ম্যানেজার তাকে দুপুর বারোটার মধ্যে রেস্টুরেন্টে থাকতে বলেছিল আর এখন ১২ঃ০৩ বাজে এখান থেকে পৌঁছাতে পৌঁছাতে তার প্রায় ২০ মিনিট সময় লাগনে ‘উফ টেনশনে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে তিথির’। হাজারো ভাবনা নিয়ে হতভম্ব হয়ে দৌড়াতে লাগলো তিথি। হঠাইই কি হলো পায়ে ছিলিপ কেটে পড়ে যেতে নেয় সে। সাথে সাথে ঘাবড়ে যায় তিথি,
আর সেই মুহূর্তেই গ্র্যান্ডমার রুমের দিকেই আসতে নিচ্ছিল আকাশ হঠাৎই তিথিকে পড়ে যেতে দেখে দৌড়ে গিয়ে ধরে বসে সে। কিছুক্ষনের জন্য হলেও আকাশ তিথি দুজনেই প্রায় স্তব্ধ হয়ে যায় তাকিয়ে থাকে দুজন দুজনের দিকে। হঠাৎই তিথির হুস আসতেই তাড়াতাড়ি ছাড়িয়ে নেয় সে নিজেকে আকাশের কাছ থেকে তারপর হতভম্ব কন্ঠ নিয়ে বলে,
‘ সরি বস আই এক্সট্রিমলি সরি আসলে একটু তাড়ায় আছি আরকি?’
বলেই দৌড়ে চলে যেতে নেয় তিথি। কিন্তু কিছুদূর এগিয়ে আবার কিছু একটা ভেবে আকাশের দিকে এগিয়ে এসে বলে সে,
‘ বস আপনি কিছু মনে না করলে আমি কি আপনার একটা গাড়ি ইউস করতে পারি।’
উওরে কিছুক্ষন ভেবে বলে আকাশ,
‘ ঠিক আছে কিন্তু কোথায় যাবে তুমি?’
‘ না মানে রেস্টুরেন্টে।’
‘ ওহ আচ্ছা ঠিক আছে আমি ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি ওই তোমায় পৌঁছে দেবে।’
‘ থ্যাংকু থ্যাংকু বস।’
বলেই আবারো দৌড়ে বেরিয়ে গেল তিথি বাড়ির ভিতর থেকে আকাশ কিছুক্ষন তিথির যাওয়ার পানে তাকিয়ে দেখে চলে যায় গ্র্যান্ডমার রুমের দিকে।’
____
মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে তিথি রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারের সামনে। কারন ওর এখানে আসতে আসতে প্রায় ১২ঃ৪০ বেজে গেছে। তিথিকে মাথা নিচু করে থাকতে দেখে রাগী কন্ঠে বলে উঠল ম্যানেজার,
‘ কয়টা বাজে তিথি?’
‘ জ্বী স্যার ১২ঃ৪২ pm।’
‘ তোমায় আমি কখন আসতে বলেছিলাম?’
এবারের কথা শুনে তিথি মাথা নিচু করেই বলে উঠল,
‘ আই এক্সট্রিমলি সরি স্যার আসলে আমি ভুলে গিয়েছিলাম ফের এমনটা আর হবে না।’
‘ ইদানীং তোমার হয়েছে কি তিথি,আজকাল তুমি ঠিক মতো কাজ করছো না,প্রতিদিনই দেরি করে আসো এমন কেন তুমি তো আগে এমন ছিলে না?’
‘ আসলে স্যার আমার এক পরিচিত মানুষ একটু অসুস্থ ছিল আজ তাকে হসপিটাল থেকে বাড়ি নেওয়া হয়েছে তাই আর কি।’
‘ এবারের মতো তোমায় কিছু বললাম না কিন্তু ফের যেন এমন না হয় তিথি।’
‘ ওকে স্যার।’
উওরে ম্যানেজার আর কিছু না বলে চলে যায় তিথির সামনে দিয়ে। ম্যানেজার যেতেই জোরে শ্বাস ফেলে তিথি।’
___
“দেখতে দেখতে কেটে এক সপ্তাহ। আর সময়ের সাথে সাথে আকাশ তিথির বিয়ের দিনও ঘনিয়ে এসেছে….
!
!
!
#চলবে…..